প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও ইন্দুপ্রকাশের একদিন
ভোরবেলা ওঠা ইন্দুপ্রকাশের অভ্যাস, আর সমুদ্রযাত্রায় তাঁর বরাবরই ঘুম ভালো হয় না। জাহাজের তৃতীয় শ্রেণির ছোট ঘরে তাঁর দম বন্ধ হয়ে আসে। অবশ্য এই লুসিটানিয়া জাহাজটি অত্যন্ত মনোরম, তার তৃতীয় শ্রেণির ব্যবস্থা অনেক জাহাজের দ্বিতীয় শ্রেণির সমান। ভাড়া বেশি, কিন্তু যুদ্ধের সময়ে অন্য উপায়ই বা কোথায়? অন্যদিন তিনি ভোরের আলো ফুটলেই গায়ে ডেকে গিয়ে সূর্যের প্রতীক্ষা করতেন। কিন্তু আজ বাইরে গাঢ় কুয়াশা, ডেকে ওঠার উপায় নেই। সে না থাক, কাল জাহাজ লিভারপুলে ভিড়বে, ডাঙায় নেমে ভালো করে হাত-পা খেলিয়ে নেবেন ইন্দু। তবে হার্ভার্ড থেকে পিএইচডি করে ইংল্যান্ডে গিয়ে কী জুটবে সেটা চিন্তার বিষয়। গোটা মার্কিন দেশটা দ্রুত উন্নতি করছে, হার্ভার্ডের পড়াশুনার মান অতিশয় ভালো, কিন্তু ইংল্যান্ডের অধ্যাপকেরা তাতে সন্তুষ্ট নন। তাঁদের ধারণা ইংলিশ চ্যানেলের এপারে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হল প্রথম শ্রেণির, আর চ্যানেলের ওপারে ফ্রান্স আর জার্মানিতে কয়েকটি দ্বিতীয় শ্রেণির বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এছাড়া ত্রিভুবনে বাকি সব দেশ হল অজ মুখ্যুদের দেশ।
কথাটা সত্যি নয়। ইন্দুর মনে পড়ে, রবীন্দ্রনাথ বুঝেছেন, হাতেকলমে বিদ্যাতে আমেরিকা এগিয়ে যাচ্ছে। তাই তিনি পুত্র রথীন্দ্রনাথকে জাপান হয়ে আমেরিকাতেই পাঠিয়েছেন। রথীন্দ্রনাথ আমেরিকায় ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অল্প কিছুদিন কৃষিবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন, সে সময়ে ইন্দু আসেননি এদেশে। তবে বছর-আড়াই আগে রবীন্দ্রনাথ পুত্র রথী আর পুত্রবধূ প্রতিমাকে নিয়ে ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে কয়েক মাস কাটিয়ে গেছিলেন, তখন সেখানে ইন্দু গিয়েছিলেন। অবশ্য সেবারে কবি বড় ব্যস্ত ছিলেন—মার্কিন ছাত্র আর কিছু সাহিত্যপ্রেমী কবির বেশ সমাদর করেছিল, একটা টেগোর সার্কেল পর্যন্ত বানিয়েছিল তারা। নেভাদা স্ট্রিটে লরেন্স সিমর-এর বাড়িতে তাদের আড্ডা ছিল, কবি সেখানে কবিতার ইংরেজি তর্জমা পাঠ করতেন আর নানারকম তত্ত্ব আলোচনা করতেন। অথচ সেই সময়ে দেশের গণ্যমান্যেরা কেউ রবীন্দ্রনাথকে তেমন পাত্তা দিত না। এর ক-মাস পরেই নোবেল প্রাইজ পেলেন কবি, তবে দেশের মানুষ তাঁর কদর বুঝল। এদিকে ইন্দু দেখেছেন, রথীন্দ্রও সহজে অন্য মানুষদের আকর্ষণ করতে পারেন। ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অল্পদিনই ছিলেন রথী, তার মধ্যেই সেখানে তিনি বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন— ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কসমোপলিটান ক্লাব আর এগ্রিকালচারাল ক্লাবের একজন মাথা হয়ে উঠেছিলেন তিনি।১ ইন্দু নিজে অবশ্য ঘরকুনো, পড়া আর কবিতা লেখার বাইরে বেশি কিছু করে উঠতে পারেন না। তবে বাংলার ছেলে এদেশে এসে বড়ো কিছু করছে দেখলে তাঁর বুকের ভেতরে আনন্দের ঝর্না বইতে থাকে।
তাছাড়া রবীন্দ্রনাথ ইন্দুপ্রকাশের বিশেষ শ্রদ্ধার পাত্র। রবীন্দ্রনাথ বঙ্গদেশের শ্রেষ্ঠ কবিই শুধু নন, তিনি একজন বড়ো মাপের মানুষ, শিক্ষাবিদ ও সমাজ-চিন্তক। ইন্দুপ্রকাশের পূজনীয় পিতৃদেব চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিদ্যাসাগরের জীবনী লিখেছেন, আর ইন্দুর ইচ্ছা তিনি রবীন্দ্রনাথের জীবনী লিখবেন। দীর্ঘজীবন লাভ করুন রবীন্দ্রনাথ। প্রবাসে থাকুন বা স্বদেশে, তাঁর কর্মকাণ্ডের দিকে নজর রাখেন ইন্দু। ত্রিশ বছর বয়স তাঁর, সুস্থ সবল শরীর, এখনও অন্তত বছর চল্লিশ তিনি অপেক্ষা করতে পারবেন। নবীন কবিদের উৎসাহ দিতে রবীন্দ্রনাথ সততই অকৃপণ— ইন্দুপ্রকাশকে ‘মানসী’ পত্রিকার সম্পাদকপদে বসানোর জন্য তিনিই সুপারিশ করেছিলেন।২ দেশে থাকার সময়ে কবির সেই সুপারিশের অমর্যাদা ইন্দু করেননি।
‘মানসী’ পত্রিকা (চিত্রঋণ “মানসী, মর্ম্মবাণী, মানসী ও মর্ম্মবাণী। দীপক সেনগুপ্ত। অবসর—তথ্য ও বিনোদনের ওয়েবসাইট, অগাস্ট ১৫, ২০১৭)
আজ জাহাজে এই কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে ইন্দুর হঠাৎ তাঁর আর এক প্রিয় কবি রজনীকান্তের কথা মনে পড়ে গেল। বড়ো কষ্ট পেয়েছেন তিনি শেষ অবস্থায়। একসময়ে রজনীর ভক্তিগীতি খুব টানত ইন্দুকে, পরে অবশ্য স্বদেশভক্তির গানই বেশি মনে দাগ কেটেছে। ইন্দু গুনগুন করে ওঠেন, “মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই/ দীন দুখিনি মা যে তোদের তার বেশি আর সাধ্য নাই”। তারপরে তাঁর মনে পড়ে যায় রজনীকান্তকে নিয়ে নিজের লেখা কবিতাটির কথা। আস্তে আস্তে আবৃত্তি করতে থাকেন,
গভীর ওংকারে যেথা সামগান ঝংকারিয়া উঠে,
সেথায় গাহিতে হবে এই লাজে গিয়াছিলে মরি।
মঙ্গলকিরণে দিব্য হর্ষে যবে প্রাণপদ্ম ফোটে—
মর্মকোষে, পদরেণু তব তায় রাখেন শ্রীহরি।
তুমি তা জানিতে কবি, গেয়েছিলে তাই সে সংগীত,
মর্ম-মলিনতাটুকু নিয়েছিল শরমে বিদায়।
তারপর সে কি গান! বিশ্ব-হিয়া স্পন্দনরহিত—
বিহ্বল, চেতনাহারা, যোগভক্তিপ্রেম-মদিরায়!
গাও কবি, বুক ভরে, কণ্ঠ চিরে গেয়ে যাও গান,
এ দুর্ভাগ্য-নীলনদে ভেসে যাও মিশর-মরাল
গানে দিক ছেয়ে ফেল, সংগীতেই পূর্ণ-অবস্থান—
তোমার এ কবিজন্ম; কভু যদি হও অন্তরাল,
বঙ্কিম নীলের গতি রাখে যদি লুকায়ে তোমারে,
তব্য গান গেও কবি—সুদূর সিন্ধুর পরপারে।৩,৪,৫,৬
‘মানসী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল এই কবিতাটি। তবে এখন ইন্দু আর এত প্রাচীন ঢঙে মধু-কবির আদলে কাব্য লেখেন না, রবীন্দ্রনাথ তাঁর রুচি বদলে দিয়েছেন। দেশ ছাড়ার পরেও তিনি মানসী-র কবি-লেখকদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখেছেন, কবিতাও পাঠিয়েছেন, তবে সেই নিবিড় বন্ধন আর নেই। সম্প্রতি ইন্দু দেশ থেকে বন্ধুদের চিঠিতে জেনেছেন, মানসী-র অর্থাভাব খুব তীব্র হয়েছে, হয়তো এবার উঠেই যাবে পত্রিকা। বন্ধুদের কেউ কেউ নাটোরের মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ রায়ের শরণাপন্ন হতে চান, তবে তিনি আবার ‘মর্ম্মবাণী’ পত্রিকা নিয়ে আছেন, সাহায্য করবেন কিনা বলা শক্ত।৭ ইন্দুপ্রকাশ নিজে এখন সাহায্য করার মতো অবস্থায় নেই, তাই এ নিয়ে কথা বাড়াননি।
আরেকটু পড়াশুনা চালানোর ইচ্ছে আছে ইন্দুর। ইউরোপে কদর পেতে গেলে হার্ভার্ডের ডিগ্রি যথেষ্ট নয়। ইংল্যান্ডে তাঁর খুড়ামহাশয় বহুদিন যাবৎ আছেন, তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, চালানোর মতো কিছু জুটে যাবে। অবশ্য ইউরোপের যুদ্ধ সব হিসেব ওলটপালোট করে দিয়েছে। কতদিন চলবে এই যুদ্ধ কে জানে। আমেরিকায় বসে যুদ্ধ নিয়ে তেমন কিছু বোঝা যায় না। সেখানে সাধারণ লোকেরা যুদ্ধ নিয়ে বিশেষ উৎসাহী হয়, তারা আমেরিকা দেশটি নিয়েই কেবল ভাবিত। ইন্দুর আশ্চর্য লাগে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অনেক আমেরিকান ভাবে ভারত দেশটা বুঝি ওখানকার নেটিভ ইন্ডিয়ানদের দেশ। আর আছে মার্কিনদের নানা হুজুগ। কখনও থিয়েটার, কখনও প্রেততত্ত্ব, কখনও মানুষের মাথা মেপে ক্রিমিনাল ধরার বাই। সম্প্রতি যোগ হয়েছে ঘর অন্ধকার করে মুভি দেখা—কতগুলো লোক দৌড়াচ্ছে, আর সেই ছবি তুলে কেমন করে পর্দায় ফেলে ওরা, তাই দেখে আর আমোদে প্রায় গড়াগড়ি দেয়। আর এত মদ খায় ওরা! বাবা আর ছেলে প্রতিযোগিতা করে মদ খাচ্ছে, মা গ্লাসে ঢেলে দিচ্ছে আর তিনজন মিলেই নাচছে—এ জিনিস ইন্দু দেশে থাকলে বিশ্বাসই করতেন না। গান আর নাচের প্রতি এদের ভারি টান, তবে ইউরোপের মতো ক্লাসিক গান এখানে তেমন চলে না। কিন্তু কাজের সময় আমেরিকানদের জুড়ি মেলা ভার, পৃথিবী ভুলে কাজ করে এরা।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন বলেছেন, ইউরোপের যুদ্ধে আমেরিকা থাকবে না। তাই সে দেশ এখনও যুদ্ধের বাইরে। কিন্তু ভারত? সে দেশে যুদ্ধ সরাসরি হচ্ছে না বটে, কিন্তু ইংরেজের যুদ্ধের রসদ জোগাতে ভারতবাসীর দু-মুঠো অন্ন পাওয়া দায় হয়ে উঠছে। ইন্দুপ্রকাশ সামান্য মানুষ, সেই ইংরেজদের দেশেই জীবিকার জন্য যাচ্ছেন, কিন্তু তাঁরও মন মাঝে-মধ্যে ক্রোধে ভরে ওঠে। তিনি শুনেছেন, ভারতীয় সৈনিকদের ইংরেজ ওপরওয়ালারা সুদূর বেলজিয়ামে জার্মানদের কামানের সামনে ঠেলে দিচ্ছেন। নতুন এলাকায় অভ্যস্ত হবার আগেই তাদের বেলজিয়ান আর ফরাসী সৈন্যের সঙ্গে সমানতালে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। তারা নাকি জার্মান আর ফরাসী সৈন্যের মধ্যে ফারাক করতে পারছে না, আর বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে। শিখ আর বালুচি পদাতিক সৈন্যরা দলে দলে মরছে। ইংরেজ সেনানায়কেরা তাদের সাহসের প্রশংসা করছেন, কিন্তু তাদের রক্ষা করতে পারছেন না।৮
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভারতীয় পদাতিক সেনাবাহিনী (চিত্রঋণ—শশী তারুর, Why the Indian soldiers of WW1 were forgotten, বিবিসি নিউজ, ২ জুলাই ২০১৫)
কংগ্রেসের নেতারা নাকি যুদ্ধে সেনা পাঠানোর পক্ষে, তবে যুদ্ধের পরে ভারতের মানুষকে খানিকটা অধিকার দিতে হবে—নেতারা যাকে বলছেন কনস্টিটিউশনাল রিফর্ম। স্বদেশী আন্দোলনের কথা মনে পড়ে ইন্দুপ্রকাশের। সেই ব্রিটিশ সরকার যুদ্ধে ভারতীয় সেপাইদের বীরত্ব দেখে ভারতের মানুষকে সম্মান করবে, এমন হতে পারে? ইন্দু রাজনীতির ঘোরপ্যাঁচ বুঝতে পারেন না।
জাহাজের গতি কমে। ইন্দু জানেন এটা স্বাভাবিক, এই কুয়াশার মধ্যে জোরে চালানো যায় না। হঠাৎ তীব্র শব্দে চকিত হয়ে ওঠেন তিনি। মুহূর্তের মধ্যে বোঝেন, কুয়াশার জন্য হর্ন বাজাচ্ছে। সাহেবরা দেরি করে ওঠে, তাই তারা ভারি বিরক্ত হয়। জাহাজের গতি কমতে থাকে। ইন্দুর মনে হয়, কুয়াশার মধ্যে কোনো বিপদ লুকিয়ে নেই তো? এই জাহাজটা এখন এমন একটা জায়গায় চলে এসেছে যেখানে জার্মানরা যুদ্ধ ঘোষণা করে রেখেছে। এই তো গত বছর ১৯১৪-র নভেম্বরে ব্রিটিশরা নর্থ সী-কে যুদ্ধের এলাকা ঘোষণা করে। জার্মানদের রসদ জোগান আটকে যায়। তারই পালটা হিসেবে এবছর ফেব্রুয়ারি মাসে জার্মান সরকার গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের চারদিকে সমুদ্রকে যুদ্ধ এলাকা বলে ঘোষণা করেছে, যাতে ব্রিটিশরা রসদ না পায়। তারা বলছে, আর সেখানকার সমুদ্রে যে কোনো ব্রিটিশ জাহাজকে তারা ডুবিয়ে দেবে। এটা নেহাত কথার কথা নয়, জার্মানদের ভালো সাবমেরিন আর টর্পেডো আছে।
ব্রিটেন ঘিরে জার্মানির সমুদ্রযুদ্ধের এলাকা (চিত্রঋণ উইকিমিডিয়া কমনস)
বেলা দশটা প্রায় বাজে, কুয়াশা কাটছে, কাটছে অজানা ভয়ও। ব্রেকফাস্টে বসলেন ইন্দুপ্রকাশ। আমেরিকা থেকে ছাড়লে কী হবে, লুসিটানিয়া পাক্কা ইংরেজ সাহেবি কেতায় চলে। কাল রাত্রে জাহাজ জুড়ে সীমেনস’ চ্যারিটি ফান্ড কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়, তাতে আদব-কায়দা মেনে চলা এক দুরূহ ব্যাপার। জাহাজের ক্যাপ্টেন থমাস টার্নার এমনিতে ভারি কেতাদুরস্ত মানুষ, কিন্তু কাল তাঁর কেতা রক্ষায় মন ছিল না, বেশ অন্যমনস্ক ছিলেন তিনি। আইরিশ সাগরে পড়েছে জাহাজ, জার্মানদের নিয়ে ক্যাপ্টেনের চিন্তার কারণ আছে। জাহাজ ছাড়ার আগের উদ্বেগের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে ইন্দুপ্রকাশের।
২৪ এপ্রিল লুসিটানিয়া লিভারপুল থেকে নিউ ইয়র্ক ফিরবার কথা। তারপরে সে পয়লা মে আবার রওনা দেবে নিউ ইয়র্ক থেকে লিভারপুল, ইন্দুপ্রকাশ টিকিট কাটবেন তাতে। তখন আমেরিকা-প্রবাসী কয়েকজন জার্মান ভাবলেন, ব্রিটেনের চারদিকে সমুদ্রে যুদ্ধ ঘোষণা করে রেখেছে জার্মানি, লুসিটানিয়াকে জার্মান নেভি ডুবিয়ে দিতে পারে। তাঁরা জার্মান দূতাবাসে গিয়ে বলেন, মহাশয়, কিছু একটা করুন। এই জাহাজে অনেক মার্কিন নাগরিক যাচ্ছেন, তাঁদের ওপর আক্রমণ হলে আমেরিকা সরকার মেনে নেবে না। জার্মান দূতাবাস সিদ্ধান্ত নেয়, পয়লা মে লুসিটানিয়া ছাড়ার আগেই তারা যাত্রীদের সতর্ক করবে। তারা ২২ এপ্রিল ১৯১৫ নিউইয়র্ক এবং অন্য নানা শহর থেকে প্রকাশিত ৫০টি আমেরিকান সংবাদপত্রে একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞাপন দেয়। তাতে লেখা ছিল,
বিজ্ঞপ্তি!
আটলান্টিক সমুদ্রযাত্রায় যাত্রা করতে ইচ্ছুক ভ্রমণকারীদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে জার্মানি এবং তার মিত্র বনাম গ্রেট ব্রিটেন এবং তার মিত্রদের মধ্যে যুদ্ধের অবস্থা বিরাজ করছে; যে যুদ্ধের অঞ্চলের মধ্যে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ সংলগ্ন সমুদ্র অন্তর্ভুক্ত। ইম্পেরিয়াল জার্মান সরকার কর্তৃক প্রদত্ত আনুষ্ঠানিক নোটিশ অনুসারে, সেই জলসীমার মধ্যে আসা গ্রেট ব্রিটেন বা তার মিত্রদের পতাকাবাহী জাহাজগুলি ধ্বংস করা হবে। গ্রেট ব্রিটেন ও তার মিত্রদের জাহাজে ভ্রমণকারী যাত্রীরা বা তার সহযোগীরা তাদের নিজ দায়িত্বে এই যুদ্ধক্ষেত্রে ভ্রমণ করবেন।
—ইম্পেরিয়াল জার্মান দূতাবাস, ওয়াশিংটন ডিসি ২২ এপ্রিল ১৯১৫।
লুসিটানিয়া ছাড়ার বিজ্ঞাপনের পাশে প্রকাশিত আমেরিকায় জার্মান দূতাবাসের সর্তকতাবার্তা (চিত্রঋণ উইকিমিডিয়া কমনস)
এই সতর্কতাটি লুসিটানিয়া লিভারপুল যাত্রার বিজ্ঞাপনের পাশেই ছাপা হয়। ইন্দুপ্রকাশ এবং অন্যান্য যাত্রীরা উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন, কিন্তু লুসিটানিয়ার তরফে বলা হয়, একে তো ব্রিটিশ নৌবহর জার্মানদের বোতলবন্দি করেই রেখেছে, তার ওপরে এই জাহাজের যা গতিবেগ তাতে জার্মান সাবমেরিন একে ধরতে পারবে না। কথাটা সত্যি। এই জাহাজ সবচেয়ে কম সময়ে আটলান্টিক মহাসমুদ্র পেরনোর জন্য বিখ্যাত ব্লু রিব্যান্ড পুরষ্কার জিতেছে।৯
যুদ্ধ বড়ো আজব ঞ্জিনিস। ইন্দুপ্রকাশ ব্রেকফাস্ট শেষ করে ভাবতে থাকেন। ২৮ জুন, ১৯১৪, মাত্র কয়েক মাস আগেকার কথা। যুগোস্লাভ জাতীয়তাবাদী গ্যাভ্রিলো প্রিন্সিপ আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দকে হত্যা করল। ফার্দিনান্দ ছিলেন অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী। প্রিন্সিপ এবং তার দলবলের উদ্দেশ্য ছিল যুগোস্লাভীয় সমস্ত মানুষকে একত্রিত করে অস্ট্রিয়ান শাসন থেকে যুগোস্লাভীয়দের মুক্ত করা, স্বাধীন দেশ স্থাপন করা। ইন্দু হত্যা সমর্থন করেন না, কিন্তু বিদেশীরা নিজেদের দেশকে দখল করলে পরাধীন মানুষের মনের অবস্থা অন্তর থেকে বোঝেন। তাঁর মনে হয় গ্যাভ্রিলো প্রিন্সিপদের সঙ্গে ক্ষুদিরাম কানাই চাকীর মিল আছে।
তবে ফার্দিনান্দ-হত্যার এত বড়ো প্রতিক্রিয়া ঘটবে সেটা কেউ ভাবেনি। অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্য ক্ষুদ্র সার্বিয়াকে এই হত্যার জন্য দায়ী করে ও তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। সার্বিয়া সাহায্যের জন্য রাশিয়ার কাছে আবেদন করল, রাশিয়া ফৌজ তৈরি করতে শুরু করল। তখন অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্য তার মিত্র জার্মানির কাছে সাহায্য চাইল, জার্মানি যুদ্ধে যুক্ত হল। তারপরে রাশিয়া ফ্রান্সের কাছে আবেদন করল, আর পুরনো মৈত্রীচুক্তি অনুসারে ফ্রান্স যুদ্ধ ঘোষণা করল। তারপর জার্মানি বেলজিয়ামের এলাকা দখল করলে ব্রিটেন জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে—তৈরি হয় রাশিয়া-ফ্রান্স-ব্রিটেন এলাইজ শক্তি। অন্যদিকে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি আর জার্মানির সঙ্গে চুক্তি থাকার ফলে প্রথমে ইতালি ও তার পরে তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্য যুদ্ধে যোগ দেয়—তৈরি হয় সেন্ট্রাল শক্তি।
ইন্দু জানেন, কাহিনিটি এতোটা সরল নয়। হ্যাবসবার্গ রাজপরিবার প্রায় চার শতাব্দী ধরে অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য শাসন করেছিল, কিন্তু তাদের মুঠি আলগা হচ্ছিল। ইউরোপের মাঝখানে বিশাল বহুজাতির ওপর শাসন করা অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের নানা শাসিত জাতিগুলোর অনেকেই আলাদা হতে চাইছে, এবং রাশিয়া ও অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো তাদের নানাভাবে উত্সাহিত করছে। রাশিয়া, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের অঘোষিত উদ্দেশ্য হল হ্যাবসবার্গ সাম্রাজ্য ভেঙে তাদের নিজস্ব সাম্রাজ্য বাড়ানো। অন্যদিকে, জার্মানির উদ্দেশ্য হল ব্রিটেন ফ্রান্সের এশিয়া-আফ্রিকার বিরাট সাম্রাজ্যগুলোতে ভাগ বসানো। ইতালিও সাম্রাজ্য চাইছে, কিন্তু তার সামরিক শক্তি দুর্বল, সে সুযোগের সন্ধানে যুদ্ধে যোগ দিয়েছে। এদিকে অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের মতো তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্যও ভেঙে পড়ছে, তার ওপরে ফ্রান্স ও ব্রিটেনের লোলুপ দৃষ্টি। এ যুদ্ধ কোথায় গিয়ে থামবে বোঝা যাচ্ছে না।
বাইরে কুয়াশা কেটেছে। জাহাজ এখন পূর্ণগতিতে ছুটে চলছে। ইন্দু ভাবেন, এবার ডেকে উঠবেন। আয়ারল্যান্ডের দক্ষিণ দিয়ে জাহাজ চলছে এখন। আইরিশ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কথা মনে পড়ে ইন্দুর। ছোট একটা দেশ, ইংরেজদের চাইতে এমনকি আর পৃথক, কিন্তু নিজেদের আলাদা সত্তা বজায় রাখতে প্রাণপনে লড়াই করছে। ভারত কি কখনও নিজেকে এক রেখে এইভাবে ব্রিটিশের সঙ্গে যুঝতে পারবে?
লাঞ্চের সময় হয়েছে। এখন রোদ উঠেছে, শান্ত সমুদ্র, সূর্যলোকে আয়নার মতো চকচক করছে। ধীরে সুস্থে খাবারের পর্ব চুকিয়ে ফেলে যাত্রীরা। জাহাজ দ্রুত চলছে, কালই লিভারপুলে পৌঁছাবেন তাঁরা। ইন্দুপ্রকাশের চোখদুটি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে আসে। জাহাজ হঠাৎ গতিপথ বদলায়, তন্দ্রার মধ্যে ইন্দুর মনে হয় তাঁর মাতৃদেবী যেন ডাকছেন, বলছেন, দুপুরে ঘুমোচ্ছিস, শরীর ঠিক আছে তো বাবা। জাহাজ আরেকবার বিপরীত দিকে ঘোরে, তন্দ্রারত ইন্দুপ্রকাশের মনে হয় তিনি যেন শৈশবে, মাতৃক্রোড়ে, মা তাঁকে নিয়ে দোল দিচ্ছেন আর গাইছেন, চাঁদের কপালে চাঁদ টি দিয়ে যা। অজান্তে ইন্দুর কপোল অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে।
অকস্মাৎ সমুদ্রের গর্জন ছাপিয়ে, জাহাজের ইঞ্জিনের গোঙানির মধ্যে দিয়ে মনুষ্যকণ্ঠের ভয়ানক চিৎকার ভেসে আসে। ইন্দুর তন্দ্রা ছিন্ন হয়ে যায়, চিৎকার-ধ্বনির মধ্যে একটি কথাই তাঁর চেতনায় আঘাত করে, “টর্পেডো”। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে প্রবল এক বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে জাহাজ। তারপরে যাত্রী আর কর্মীদের প্রবল আতঙ্কের হইচই ছাপিয়ে দ্বিতীয় এক বিস্ফোরণ—গোটা জাহাজটাই যেন টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।১০ ইন্দু দেখেন, দ্বিতীয় বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে ডেকের উপরে কালো জল, ধুলো আর জাহাজের টুকরোগুলো ফোয়ারার মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে। তারপরেই কালো ধোঁয়ায় চারদিক ছেয়ে যায়, ইন্দু ওদিকের কিছু আর দেখতে পান না। তিনি বোঝেন জাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেছে, এবং তার একদিক খুব দ্রুত কাত হয়ে পড়ছে। আতঙ্কিত যাত্রীরা ডেকের ওপর অন্ধ ইঁদুরের মতো ছোটাছুটি করছে, মাঝেমধ্যে চিৎকার ভেসে আসছে, “লাইফবোট”। ধোঁয়া একটু কমলে ইন্দু দেখেন, কিছু কর্মী জাহাজের গা থেকে লাইফবোট খোলার চেষ্টা করছে। সেদিকে দৌড়াতে থাকেন ইন্দু। কিন্তু লাইফবোট খোলা যায় না, সেটি কোনোভাবে আটকে গেছে।
জার্মান ইউ-বোট ইউ ২০ দ্বারা ১৯১৫ সালে লুসিটানিয়ার ডুবে যাওয়ার পেন্টিং (চিত্রঋণ উইকিমিডিয়া কমনস)
জাহাজের অন্যদিক থেকে কয়েকটা লাইফবোট নামে। সেদিকে যাবার কোনো উপায় নেই, জাহাজের ডেক হেলতে হেলতে প্রায় খাড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। চারিদিকে যাত্রীরা পাগলের মতো চেঁচাচ্ছে। কেউ প্রার্থনা করছে, কেউ জাহাজের কর্মীদের পা জড়িয়ে ধরছে, কেউ তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছে।
ইন্দু আস্তে আস্তে পিছলে যেতে থাকেন। তাঁর সামনে ধরে রাখার মতো কোনো অবলম্বন নেই। এবার ভাঙা জাহাজের মাঝখান দিয়ে জল উঠছে। তিনি রেলিঙের মতো কিছু একটা তাঁর হাতে ঠেকে, তিনি সেটি আঁকড়ে ধরেন। ক্রমে ঠাণ্ডা জল তাঁর চারদিকে ঘিরে ধরে, তাঁর শরীরের ওপর দিয়ে বয়ে যায়, মুখচোখ ভরে যায় নোনাজলে। সব ছেড়ে জলের মধ্যেই ঝাঁপিয়ে পড়তে চান ইন্দু, কিন্তু তাঁর চারিদিকে মৃত জাহাজ স্তূপ হয়ে চেপে বসে।
মা, মা গো, এত জল কেন!
টিকা ও তথ্যসূত্র
১. https://www.library.illinois.edu/slc/2017/05/07/rabindranath-tagore/
২. http://onushilon.org/publication/manoshimormobani.htm#%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%B8%E0%A7%80
৩. নলিনীরঞ্জন পণ্ডিত, “কান্তকবি রজনীকান্ত”, বেঙ্গল বুক কোম্পানি, সন ১৩২৮, পৃষ্ঠা ২৫৫-২৫৬। বইটির লেখক নলিনীরঞ্জন রজনীকান্তের উদ্দেশ্যে লিখিত ইন্দুপ্রকাশের এই কবিতাটি উদ্ধৃত করেছেন, এবং সেখানে টিকা দিয়েছেন, “সুহৃদ্বর ইন্দু ‘টাইটানিক’ জাহাজের সহিত সাগরজলে চির-অস্তমিত হইয়াছেন।” কথাটি ভুল।
৪. টাইটানিক ১৯১২ সালের এপ্রিলে ডুবে যায়। তার যাত্রীতালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে ইন্দুপ্রকাশের নাম নেই। পরে লুসিটানিয়া জাহাজের তৃতীয় শ্রেণির যাত্রীতালিকায় মিস্টার ইন্দুপ্রকাশ ব্যানার্জি (বন্দ্যোপাধ্যায়)-এর নাম খুঁজে পাওয়া গেল। https://www.rmslusitania.info/people/third-class/ দ্রষ্টব্য।
৫. লুসিটানিয়া জাহাজের তৃতীয় শ্রেণির যাত্রীতালিকায় বিবরণে দেখা যাচ্ছে ইন্দুপ্রকাশ ব্যানার্জি, ৩০ বছর বয়স, একজন ভারতীয় ব্রিটিশ প্রজা। তিনিই প্রথম ভারত থেকে এসে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করেন। লুসিটানিয়া বিপর্যয়ের আগে ইন্দুপ্রকাশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির প্রিন্সটনে বসবাস করছিলেন। ১৯১৫ সালের ৭মে লুসিটানিয়া টর্পেডোর আঘাতে ডুবে গেলে তিনি হারিয়ে গিয়েছিলেন। এই বিবরণ দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা সুমিত চন্দ। তিনি সম্পর্কে ইন্দুপ্রকাশ ব্যানার্জির নাতি (great-nephew)। https://www.rmslusitania.info/people/third-class/induprakash-bannerji/ দ্রষ্টব্য।
৬. লুসিটানিয়া ছিল একটি দ্রুতগামী ব্রিটিশ যাত্রীবাহী জাহাজ। আমেরিকার নিউ ইয়র্ক থেকে ইংল্যান্ডের লিভারপুল যাবার পথে ৭ মে, ১৯১৫ তারিখে জার্মান সাবমেরিন (ইউ-বোট) টর্পেডো দিয়ে লুসিটানিয়াকে ডুবিয়ে দিয়েছিল। জাহাজের ১৯৫৯ জন পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদের মধ্যে ১১৯৫ জন এতে মারা যায়। মৃতদের মধ্যে ১২৩ জন আমেরিকান নাগরিক ছিলেন। https://www.rmslusitania.info/ দ্রষ্টব্য।
৭. https://www.ub.uni-heidelberg.de/Englisch/fachinfo/suedasien/zeitschriften/bengali/manasi.html
৮. https://indianembassybrussels.gov.in/pdf/Indian_Army_Ypres.pdf
৯. ইন্দুপ্রকাশ দুটো কথা জানতেন না। এক, জ্বালানি বাঁচাতে লুসিটানিয়ার চারটে বয়লারঘরের মধ্যে একটা অকেজো করে রাখা হয়েছিল, ফলে তার গতিবেগ জার্মান সাবমেরিনের ধরাছোঁয়ার মধ্যে চলে আসে। দুই, ব্রিটিশরা নৌবহর হিসেবে জার্মানদের চাইতে শক্তিশালী হলেও, সাবমেরিন, বা তখনকার পরিভাষায় ইউ-বোট, প্রযুক্তিতে জার্মানরা এগিয়ে ছিল, এবং তারা এর আগেও ব্রিটিশ নৌবহরকে নাকানিচোবানি খাইয়েছে। https://www.history.com/this-day-in-history/german-submarine-sinks-lusitania দ্রষ্টব্য।
১০. লুসিটানিয়া যাত্রীবাহী জাহাজ, তাতে অস্ত্রশস্ত্র বহন করার নিয়ম নেই, কিন্তু আমেরিকা ও ব্রিটেনের যোগসাজশে লুসিটানিয়া যুদ্ধের অস্ত্র বহন করছিল। টর্পেডোর আঘাতে লুসিটানিয়ার গোলাবারুদে আগুন ধরে দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি ঘটে। যুদ্ধের নিয়ম অনুসারে, এই অস্ত্রবহনকারী জাহাজটি জার্মানির আক্রমণের বৈধ লক্ষ্য ছিল। জার্মানি সেই সময়েই একথা বলেছিল, কিন্তু ব্রিটিশ ও আমেরিকা একযোগে এই কথা অস্বীকার করে। এর দু-বছর পরে, ১৯১৭ সালের জানুয়ারিতে জার্মানরা সাবমেরিন যুদ্ধ আবার পুরোমাত্রায় শুরু করার ঘোষণা করে। তার কয়েকদিন পরে, জিমারম্যান টেলিগ্রাম প্রকাশ পায়। জার্মানির ফরেন সেক্রেটারি আর্থার জিমারম্যান এই টেলিগ্রামে মেক্সিকোকে জার্মানির পক্ষে যুদ্ধের প্রচেষ্টায় যোগদানের জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি মেক্সিকোকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, জার্মানি যুদ্ধে জিতলে অ্যারিজোনা, টেক্সাস এবং নিউ মেক্সিকো—এই অঞ্চলগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ছিনিয়ে নিয়ে মেক্সিকোতে ফিরিয়ে আনবে। ব্রিটিশ গুপ্তচর বিভাগ এই সাংকেতিক টেলিগ্রামটি পাঠ করে এবং উড্রো উইলসন প্রশাসনকে এর কপি পাঠায়। ১৯১৭-র মার্চ মাসে জিমারম্যান নিজে এই টেলিগ্রামের সত্যতা স্বীকার করেন। টেলিগ্রাম পাবার পরে মার্কিনরা জার্মানদের বিরুদ্ধে জার্মানির বিরুদ্ধে ৬ এপ্রিল ১৯১৭ তারিখে যুদ্ধ ঘোষণা করে। তখন আমেরিকার মানুষের মধ্যে যুদ্ধ-উন্মাদনা জাগানোর এক বড়ো অস্ত্র হয়ে উঠবে ‘নিরীহ যাত্রীবাহী’ জাহাজ লুসিটানিয়ার ওপর দু-বছর আগেকার ‘সভ্যতার শত্রু’ জার্মানির সাবমেরিন হামলা। https://www.britannica.com/technology/U-boat দ্রষ্টব্য।
অসাধারণ বললেও যেন কম বলা হয় ! সাহিত্য, সমাজ, ইতিহাস, রাজনীতি , আবেগ মিলেমিশে অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী একটি প্রবন্ধ পড়লাম। লেখক যেন সব প্রশংসার ঊর্ধে!
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, লিপিকা ঘোষ।
বেশ ভালো লাগল। জয়ন্ত বাবুর আগের লেখাগুলোর থেকে এটা একেবারেই ভিন্ন স্বাদের। লেখনীও বৈচিত্র্যময়। তবে লেখাটা আরেকটু বড় হলে ‘খেলত’ ভালো।
ধন্যবাদ সহস্রলোচন বাবু।
বড়ো না করাটা সচেতন সিদ্ধান্ত। ভুল কিনা জানি না। খুব ব্যক্তিগত জায়গা থেকে একটা বিশাল ঘটনা দেখা। তার মধ্যে জাতীয় ও ভাষা আইডেন্টি। ঘর বদল, ঘরে ফেরা না ফেরা।
ধন্যবাদ সহস্রলোচন বাবু।
বড়ো না করাটা সচেতন সিদ্ধান্ত। ভুল কিনা জানি না। খুব ব্যক্তিগত জায়গা থেকে একটা বিশাল ঘটনা দেখা। তার মধ্যে জাতীয় ও ভাষা আইডেন্টি। ঘর বদল, ঘরে ফেরা না ফেরা।
এক অনন্য রোমাঞ্চকর ইতিহাস, আপনার লেখার গুণে যেন আরো প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। খুব ভালো লাগলো।
ভালো লেখা। ইতিহাসের অজানা দিক – অন্তত আমার কাছে। তবে জিনিস, ঞ্জিনিস হয়ে গেছে।
এই কবির কথা প্রথম জানলাম। রচনাশৈলী অসাধারণ।
অজানা তথ্য। অসামান্য পরিবেশনা।
উচ্চমানের একটি লেখা, ব্যাপ্তিও বিশাল!
খুব সুন্দর তথ্য সমৃদ্ধ লেখা, শুভেচ্ছা 🙏
কোন কারণে এই অসাধারণ লেখা টি চোখ এড়িয়ে গেছে।
মনে হচ্ছে ইন্দুপ্রকাশ ব্যানার্জি মহাশয় সন্মন্ধে অবহিত ছিলাম না।
রচনা শৈলীর কুশলতা ও ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এর এই বর্ণনা শিহরণ জাগায়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতি এইভাবে ইংরেজ প্রশাসকদের
ছলনাময় আচরণ এর সম্মন্ধে ও বিশেষ কিছু জানা ছিল না।
প্রতিভাবান এক বাঙালি একাডেমিক মৃত্যুতে মন ব্যাথিত হলো।
সুন্দর একটি বিবরণ ও জাহাজ মাত্রার খুঁটিনাটি তুলে ধরার জন্য ও
আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।