বৈদিক যজ্ঞের আহুতি
সহযজ্ঞাঃ প্রজাঃ সৃষ্ট্ব পুরোবাচ প্রজাপতিঃ।
অনেন প্রসবিষ্যধ্বমেষ বোহস্ত্বিষ্টকামধুক্।।১০।।
দেবান্ ভাবয়তানেন তে দেবা ভাবয়স্তু বঃ।
পরস্পরং ভাবয়ন্তঃ শ্রেয়ঃ পরমাবাস্প্যথ।।১১।।
ইষ্টান্ ভোগান্ হি বো দেবা দাস্যন্তে যজ্ঞভাবিতাঃ।
তৈর্দত্তানপ্রদায়ৈভ্যো যো ভুঙক্তে স্তেন এব সঃ।।১২।।
—শ্রীমদ্ভাগবত গীতা, তৃতীয় অধ্যায়, কর্মযোগ
সৃষ্টির প্রারম্ভে প্রজাপতি যজ্ঞের সহিত প্রজা সৃষ্টি করিয়া বলিয়াছিলেন -“তোমরা এই যজ্ঞদ্বারা উত্তরোত্তর বর্ধিত (সমৃদ্ধ) হও। এই যজ্ঞ তোমাদের অভীষ্টপ্রদ হোক (সমস্ত অভীষ্ট পূর্ণ করবে)।”১০।।
এই যজ্ঞদ্বারা তোমরা দেবগণকে সম্বর্ধনা (ঘৃতাহুতি প্রদানে) কর, সেই দেবগণও তোমাদিগকে সংবর্ধিত করুক (যজ্ঞ অনুষ্ঠানে প্রীত হয়ে দেবতারা প্রীতি সাধন করবেন)। এইরূপে পরস্পরের সম্বর্ধনা দ্বারা (তোমরা) পরম মঙ্গল লাভ করিবে। ১১।।
যেহেতু দেবগণ যজ্ঞাদিদ্বারা সংবর্ধিত হইয়া তোমাদিগকে অভীষ্ট ভোগ্যবস্তু প্রদান করেন, সুতরাং তাঁহাদিগের প্রদত্ত অন্নপানাদি যজ্ঞাদি দ্বারা তাঁহাদিগকে প্রদান না করিয়া যে ভোগ করে, সে নিশ্চয়ই চোর (দেবস্বাপহারী)। ১২।।
যজ্ঞ কী— বোঝাতে গীতার এই উক্তির তুলনা নেই। বৈদিক ধর্মাচরণ সম্পূর্ণভাবে যজ্ঞনির্ভর সেখানে আর কোনো পূজার অবকাশ তেমন নেই। ঋগ্বেদে বলেছে
“যাঁহারা পূৰ্ব্বকাল হইত যজ্ঞে দেবতাদিগের নিমন্ত্রণ করিতেন, তাঁহারা অতি মহৎ মহৎ কার্য সম্পাদপূৰ্ব্বক সকলে স্বতন্ত্রভাবে সদগতি লাভ করিয়াছেন। কিন্তু যাহারা যজ্ঞরূপ নৌকা আরোহণ করিতে পারে নাই, তাহারা কুকর্মান্বিত, তাহারা ঋণী রহিল, অর্থাৎ অঋণী হইতে পারে নাই এবং সেই অবস্থাতেই নিম্নগামী হইল। (১০.৪৪.৬) ইদানীন্তনকালে, যাহারা সে প্রকার দুৰ্ম্মতি, তাহারও তদ্রূপ অধোগামী হউক। তাহাদিগের রথে দুষ্ট অশ্ব যোজনা করা হইয়াছে, অর্থাৎ তাহাদিগের কী গতি হইবে, কিছুই স্থিরতা নাই। যাহারা পূর্বাবধি যজ্ঞাদি উপলক্ষে দান করিয়া থাকে, তাহারা এতাদৃশ ধামে উপনীত হয় যথায় অতি চমৎকার নানাবিধ ভোগের সামগ্রী প্রস্তুত আছে” (১০.৪৪.৭)।
বেদ পড়লে বুঝতে পারা যায় যে বৈদিকযুগের জীবন ব্যাপিয়া রয়েছে যজ্ঞ। একেই উপনিষদে আরও একটু দার্শনিকভাবে বলা হয়েছে যে সমগ্র মানবজীবনই এক যজ্ঞ।
দ্রব্য, দেব, আর ত্যাগ এই তিন নিয়ে যজ্ঞ। যজ্ঞের আহুতি হিসেবে অনেকরকম দ্রব্য বা হব্যের নাম পাওয়া যায় যেমন, ঘি, দুধ, দই, মধু, সোমরস পুরোডাশ নামক পিঠা, পশুমাংস, চরু বা পায়েস ইত্যাদি। যাঁদের উদ্দেশ্যে দ্রব্য অগ্নিতে দেওয়া হয় তাঁরা হলেন বিভিন্ন দেবতা যেমন ইন্দ্র, সোম, অগ্নি, সূর্য, মিত্র প্রভৃতি। বৈদিক যজ্ঞের মাধ্যমে এই অগ্নিই যজমানের আহুতি দেবলোক বা পিতৃলোকে পৌঁছে দেন। বৈদিক মতে উপাসনার অগ্নি দু প্রকার, গৃহ্য অগ্নি আর শ্রৌত অগ্নি। আহুতি মানে দেবতার খাদ্য আর নিজের প্রিয় বস্তু দেবতাকে দেওয়া। যজমান নিজেকে সমর্পন করছেন দেবতার কাছে। এই ত্যাগটাই সর্বোচ্চ। এখন মানুষ তো আর নিজেকে উৎসর্গ করতে পারে না, তাই নিষ্ক্রয়রূপে কিছু জিনিস আহুতি দেন অগ্নিতে এই বিশ্বাসে যে সেই দ্রব্য দেবতার কাছে পৌঁছে যাবে অগ্নির দ্বারা। যজ্ঞে কোন দেবতা কোন পশু ভালোবাসেন তারও নির্দেশ আছে। দেবতাকে তাই ডেকে আহুতি দেওয়া হয়— ‘অগ্নে ব্রীহি বৌষট’।
মহা প্লাবনের পর মনু পূর্ণাহুতি যজ্ঞ করেন। ঘি, দুধ, দই দিয়ে তিনি যখন আহুতি দেন তখন তার থেকে ইড়া দেবী আবির্ভূত হন। সুতরাং একদম আদিযজ্ঞের এক রূপ হল পাকযজ্ঞ, আর এই ইড়া দেবী বোধহয় গবাদি পশু সম্পর্কিত দেবী যার উৎপত্তি অনেক আগে, যখন মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে পশুকে গৃহপালিত করা শুরু করল, কারণ একে বলা হয়েছে আদি যজ্ঞ আবার যজ্ঞের সমস্ত উপকরণও ভীষণ সাদাসিধা, দুগ্ধজাত সব জিনিস। কৃষির সঙ্গে যুক্ত শস্যের ভূমিকাও আছে আহুতিতে। যজ্ঞের সময় পুরোডাশ নামে একরকম পিঠে বানিয়ে তা অর্পণ করতে হয়। তারপর বাকি পুরোডাশ যজমানকে আর ঋত্বিকদের খেতে হয় নয়ত যজ্ঞ সম্পূর্ণ হয় না। এখানে পুরোডাশের কিছু অংশতে ঘি মাখানো হয় আর এই অংশকেও বলে ইড়া। এই অংশ খাবার আগে ইড়া দেবীকে আহ্বান করা হয়। একে ইড়োপাহ্বান বলে। এই যজ্ঞ প্রকৃত অর্থে আগুনে দুগ্ধজাত দ্রব্যের আহুতি। তাহলে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে যে পূর্ব-বৈদিক সময়কালে গবাদি পশু পালনের সময় থেকে একটি আদি যজ্ঞের সূত্রপাত হয়েছিল আর এর অবশেষ এখনও বেদে রয়ে গেছে।
আদি যজ্ঞে আমরা দেখলাম যে খুব সহজপ্রাপ্ত দুগ্ধজাত জিনিসগুলি যেমন ঘি, দুধ, দই— এইসব শুধু আহুতিতে দেওয়া হয়েছে। গৃহী হোমের আহুতিতে দুধ দেওয়ার কথা বলা আছে। যজ্ঞ যত বড়ো হতে লাগলো তার আহুতির মাত্রাও বাড়তে লাগলো। সাধারণ মানুষ থেকে যখন রাজা-মহারাজা যজ্ঞে জড়িত হচ্ছে তখন আহুতির মানও স্বাভাবিক ভাবে বাড়তে থাকছে। তাই পশু, সোমরস থেকে আটার তৈরি পিঠাও এসে পড়ে আহুতির দ্রব্য হিসেবে। শতপথ ব্রাহ্মণে (১.২.৩.৬-৭) এই পরিবর্তনের একটা সুন্দর আখ্যান আছে।
“পুরুষং হ বৈ দেবাঃ । অগ্রে পশুমালেভিরে তস্যালব্ধস্য মেধোপচক্রাম সোঽশ্ব প্রবিবেশ তেঽশ্বমালভন্ত তস্যালব্ধস্য মেধোপচক্রাম স গাম প্রবিবেশ তে গম … সোঽভিম প্রবিবেশ তেঽভিমা … ম সোঽজম প্রবিবেশ তেজমালভন্ত তস্যালব্ধস্য মেধোপচক্রাম স ইমম পৃথিবীম প্রবিবেশ। তং খনন্তৈবান্বীষুতমন্ববিন্দংস্তাবিমউ ব্রীহিযবউ তস্মাদপ্যেতাবেতরহি খনন্ত ইবাইবানুবিন্দন্তি স যাবদ্বীর্যবদ্ধ বা অস্যৈতে সর্বে পশব আলব্ধাঃ স্যুস্তাবদ্বীর্যবদ্ধাস্য হবিরেব ভবতি য এবমেতদ্বেদাত্রো সা সম্পদ্যদাহুঃ পাঙ্ক্তঃ পশুরিতি”।।
প্রথমে দেবতারা যজ্ঞে উৎসর্গ করার জন্য মানুষকে চেয়েছিলেন। তখন যজ্ঞের সারাংশ মানুষের থেকে বেরিয়ে অশ্ব বা ঘোড়ার মধ্যে আশ্রয় নিল। অশ্বকে উৎসর্গ করতে গেলে আবার যজ্ঞের সারাংশ বেরিয়ে ষাঁড়ে প্রবেশ করে। একইভাবে ষাঁড় থেকে ভেড়া আর তার থেকে ছাগলে ঢোকে যজ্ঞের সারাংশ। ছাগলের পর বেশ মজার কাণ্ড ঘটে, এই সারাংশ প্রবেশ করে পৃথিবীর ভেতরে। সেই সারাংশ পাওয়া যায় শস্যে (গম আর বার্লি)। তাই শস্য দিয়ে তৈরি পুরোডাশ নামক পিঠা বা চরু আহুতিতেও সমান ফল লাভ হয় এবং এইভাবে এই উৎসর্গের মধ্যেও সেই সম্পূর্ণতা রয়েছে যাকে তারা ‘পঞ্চগুণ পশু বলি’ বলে।
উপরের ব্যাখ্যানটির কিন্তু ব্যাপক তাৎপর্য আছে। শতপথ ব্রাহ্মণ ছাড়া একই ব্যাখ্যান রয়েছে ঐতরেয় ব্রাহ্মণের ২য় পঞ্চিকার ৮ম খণ্ডে। অনেকেই বলেন যে যজ্ঞের আহুতির উপাদান পরিবর্তিত (focus shift) হতে শুরু করেছিল। অকারণে প্রাণীহত্যা বা গবাদি পশুর হত্যা বন্ধ করার জন্য এই আখ্যান, যাতে শস্যের তৈরি পিঠা আহুতিতেও একই ফল লাভের কথা বলা আছে। রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদি এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “সে সময়ে পশুবধে লোকের বিতৃষ্ণা জন্মিতেছিল, ইহা মনে করাই সঙ্গত” – যজ্ঞকথা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমার তা মনে হয় না। উত্তর-বৈদিক যুগেও অশ্বমেধ জাতীয় যজ্ঞের বোলবোলাওতো কিছু কম করা হয়নি। আসলে এটি একটা বিধানের মতো, যার যে রকম সাধ্য সে সেইরকম ভাবে যজ্ঞ করতে পারে। যিনি অশ্ব আহুতি দিতে পারেন তিনি অশ্ব দেবেন, যিনি ছাগল পারবেন তিনি তাই দেবেন, আবার যার সামর্থ কম তিনি যবের আটার পিঠা দিলেও দোষ নেই। পুণ্য কিন্তু সম পরিমাণ। আদতে কিন্তু যজ্ঞতে পশু উৎসর্গ করাই উদ্দেশ্য। ঐতরেয় ব্রাহ্মণে (২য় পঞ্চিকা, নবম খণ্ড) ও শতপথ ব্রাহ্মণ (১.২.৩.৮) এই নিয়ে বলছে যে—
যদা পিষ্টান্যথ লোমানি ভবন্তি । যদাপ আনয়ত্যথ ত্বগ্ভবতি যদা সম্যুত্যথ মাংসম ভবতি সংতত ইব হি স তরহি ভবতি সংততমিব হি মাংসম যদা শৃতোথাস্থি ভবতি দারুণ ইব হি স তরহি ভবতি দারুণমিত্যস্থ্যথ যদুদ্বাসযিষ্যন্নভিঘারয়তি তম মজ্জানং দধাতয়েষ সা সম্পদ্যদাহুঃ পাঙ্ক্তঃ পশুরিতি (শতপথ ব্রাহ্মণ, ১.২.৩.৮)
অর্থাৎ পুরোডাশ আহুতি দিলেও পশু উৎসর্গের সমান কর্ম হয় কারণ যে ধান বা যব থেকে ওই পুরোডাশ তৈরি হয় তার সঙ্গে যে খড় ছিল তা পশুর লোম, তাতে জল দিলে হয়ে যায় চামড়া, লেই বানালে তা হয়ে যায় পশুর মাংস, সেঁকে নিলে কঠিন হয়ে হাড় হয়ে যায়, তারপর ওর ওপর ঘি মাখালে মজ্জা পাওয়া যায়। শস্য বেছে যে ক্ষুদ বা ময়লা ফেলে দেওয়া হলো তা হলো পশুর রক্ত। এই হলো পাঁচমুখী পশুবলির রূপান্তর। তাহলে দেখুন পশুর জায়গায় এই শস্য দিয়ে কাজ চালানো হলো আর কি। পশুর আহুতির কথা যে শুধু ব্রাহ্মণে আছে তাই নয়, ঋগ্বেদের সংহিতার ১.১৬২-১৬৩ মন্ত্রে অশ্বের বলি থেকে শুরু করে তার মাংসের রান্না অবধি বিভিন্ন পর্যায়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ আছে।
যজ্ঞ মানেই যে শুধু পশু বলি বা সোম রস উৎসর্গ করা তাই কিন্তু নয়। সোম যাগ একটি বৃহৎ যজ্ঞ যার মধ্যে অশ্বমেধ, রাজসূয় ইত্যাদিও আসে। সোম যাগের যজ্ঞস্থলেই সোমলতা থেকে সোমরস তৈরি করা হতো। দুটি পাথরের ফলকে সোম বেটে জলে মিশিয়ে তারপর ভেড়ার লোমের ছাঁকনি দিয়ে তাকে ছেঁকে নেওয়া হতো। দুই স্তরযুক্ত পাত্রে এই ছাঁকার কাজ হতো আর তারপর সোমরস এসে পড়ত নিচের পাত্রে যাতে ঘি বা মধু থাকতো। সোমরস যে একরকমের উত্তেজক পানীয় তানিয়ে সন্দেহ নেই কারণ ঋগ্বেদের মন্ত্রেও (৯.৯৬.১৩, ৯.৯৬.২১ ইত্যাদি) একে মত্ততাজনক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন যজ্ঞের আহুতি ভিন্ন প্রকারের হতো। অষ্টকা নামে একরকমের যজ্ঞের কথা আছে, যার অনেক ভাগ। পৌষ পূর্ণিমার পরের অষ্টমীতে যে অষ্টকা যজ্ঞ হয় তা হলো মাংসাষ্টকা, এতে বপা বা পশুর পেটের মেদ আহুতি দিতে হয়। তেমন মাঘী পূর্ণিমার পরের অষ্টমীতে হয় শাকাষ্টকা, যাতে বিভিন্ন রকমের শাক আর চাল আহুতি দেওয়া হয়। নবযজ্ঞ আর আগ্রায়ণ অনেকটা আমাদের নবান্ন উৎসবের মতো, নতুন শস্যের পায়েস বা চরু বানিয়ে তা আহুতি দিতে হয়। দেবযজ্ঞ বা বৈশ্বদেব যজ্ঞে রান্না করা ভাত-তরকারি গৃহ্য অগ্নিতে আহুতি দিতে হয়। স্থালিপাক আর শ্রবণাকর্মতে পায়েস বা চরু দেওয়ার বিধান। অনেকেই বলেন যে বৈদিক পুজোর মতো ক্ষেত্রে ছানার প্রচলন ছিল না কারণ দুধ কেটে বা ছিন্ন করে ছানা তৈরি করা হয় তাই তা অপবিত্র। তাদের ধারণায় দুধ নষ্ট হয়ে গেলে ছানা উৎপন্ন হয়, আর তাই ছানাকে নষ্টদুধ হিসেবে হয়তো দেখা হতো কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হলো যে বরুনপ্রঘাস যজ্ঞে আমিক্ষার উল্লেখ আছে। প্রসঙ্গত বলি যে ছানার বৈদিক পরিভাষা হল আমিক্ষা। বরুনপ্রঘাস যজ্ঞে নয় রকমের হবিঃ দেওয়ার উল্লেখ আছে আর তার মধ্যে মরুৎ ও বরুণের জন্যে আমিক্ষা প্রদানের বিধি আছে (কৌষীতকি ব্রাহ্মণ ৫.৩)। সেইদিক দিয়ে দেখলে ছানাকে যে সবসময় অপবিত্র ভাবা হয় তাও ঠিক নয়। তাহলে আমরা দেখলাম যে ঘি, দুধ, দই, চরু বলে একরকমের পায়েস ছাড়া চাল, চাল/যব এর আটা দিয়ে প্রস্তুত পুরোডাশ বলে একরকমের পিঠা, পশুর মাংস, বপা, সোমরস আরও কত কী ব্যবহার হতো আহুতি দিতে।
আবার যখন বলা হচ্ছে যে যাগের পশু আসলে “নিষ্ক্রয়”, তা আসলে যজমানেরই প্রতিভূ। এই নিয়ে আবার একটা বিতর্ক আছে। যজ্ঞের আহুতি দেবার পর কিছুটা অংশ রাখা থাকে, একে হবিঃ বলে। যজমানকে আর ঋত্বিকদের হবিঃ খেতে হয়। আর এখানে একটি বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। যেহেতু যজমান নিজের বদলে পশু দিচ্ছেন সেক্ষেত্রে এই হবিঃ তো নরমাংসের সমান হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বৈদিক ঋষিরা কূটচাল দিয়ে এরও সমাধান করে রেখেছেন। ঐতরেয় ব্রাহ্মণে (২.৬.৩) এর উল্লেখ আছে। সেখানে বৃত্র বধের উল্লেখ করে বলা আছে যে অগ্নি আর সোমের সাহায্যে ইন্দ্র বধ করেছিলেন বৃত্রকে। তারপর খুশি হয়ে ইন্দ্র অগ্নি আর সোমকে বর দেন যে পশুযাগের পশু তাদের প্রতি যাবে। তাহলে পশু প্রসাদ হয়ে গেল আরকি। প্রসাদ তখন যজমানের ঊর্ধ্বে উঠে গেল আর সেই কারণে তা খাওয়া অশাস্ত্রীয় হবে না। এক বিধানে যজ্ঞের সার অংশও রইল আবার হবিঃ ভক্ষণও বৈধ হয়ে গেল। সাপও মরল অথচ লাঠিও ভাঙলো না।
এই প্রসঙ্গে আরেকটি বিষয় অবধারিত ভাবে আসবে, তা হলো নরবলি। মানুষকে কি আহুতি দেওয়া হতো – এটি একটা অতি সাধারণ প্রশ্ন। পুরুষমেধ নামে একটি সোম যাগের উল্লেখ পাওয়া যায়, তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণে (৩.৪) আর শতপথ ব্রাহ্মণে (৮.৬.১-২)। ঋগ্বেদে বলছে (১০.৯০.৭) – তং যজ্ঞং বর্হিষী প্রৌক্ষন পুরুষং জাতমগ্রত। তেন দেবা অযজন্ত সাধ্যা ঋষয়শ্চযে, অর্থাৎ যিনি সকলের অগ্রে জন্মেছিলেন সে পুরুষকে যজ্ঞীয় পশুস্বরূপে সে বহ্নিতে আহুতি দেওয়া হলো। দেবতারা, সাধ্যবর্গ এবং ঋষিগণ তার দ্বারা যজ্ঞ করলেন। শুক্লযজুর্বেদের ত্রিশ অধ্যায়েতেও এই বিশেষ যজ্ঞের কথা বলা হয়েছে যেখানে এক বা একাধিক পুরুষকে আহুতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বেশির ভাগ পণ্ডিতের মত এটি একটা প্রতীকী অনুষ্ঠান। ডি এম নাইপ বলেছেন,
“(there) is no inscriptional or other record that a purusua-medha was ever performed, leading some scholars to suggest it was simply invented to round out sacrificial possibilities”.
তবে বেদ লেখার আগে এই যজ্ঞের প্রথা ছিল মনে হয় কারণ শতপথ ব্রাহ্মণে (১৩.৬.২.১৯) বলছ—
যদি ব্রাহ্মণ এই পুরুষমেধ যজ্ঞ করেন তাহলে তিনি সবকিছু প্রাপ্ত হবেন। আপস্তম্ব শ্রৌত সূত্র বলছে (২০.২৪.২) যে ব্রাহ্মণ বা ক্ষত্রিয় কেউ এই যজ্ঞ করতে পারে। একমাত্র শাঙ্খায়ান শ্রৌত সূত্রে (১৬.১০-১৪) আর অথর্ব বেদের একমাত্র শ্রৌত সূত্র, বৈতান সূত্রে (১৭) পুরুষমেধের উল্লেখ আছে যদিও তার বিধান অশ্বমেধের মতোই। শাঙ্খায়ান শ্রৌত সূত্রে (১৬.১০.৪) এই যজ্ঞকে “সর্বমস্বমেধিকাম” উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে এর সমস্ত উপাচার অশ্বমেধের ন্যায়। বৈতান সূত্রে (৩৭.১০) বলেছে “পুরুষমেধধো অশ্বমেধাবৎ” (পুরুষমেধ অশ্বমেধের মতোই)। বলির পুরুষ অবশ্যই ব্রাহ্মণ অথবা ক্ষত্রিয় হওয়া উচিত আর তার দাম হবে ১০০০ গরু ও ১০০ ঘোড়ার সমান। অশ্বমেধের ঘোড়ার মতোই তাকে এক বছর ঘোরাতে হবে যার পাহারায় থাকবে ৪০০ উচ্চমানের সৈন্য। ফিরে আসার পরে অশ্বমেধ যজ্ঞের মতোই তার বলি দেওয়া হবে। অগ্নিচয়ন যজ্ঞে “চিতি” সাজাবার সময় শতপথ ব্রাহ্মণে উল্লেখিত পাঁচটি পশুর অর্থাৎ পুরুষ, ঘোড়া, ষাঁড়, ভেড়া আর মদ্দা ছাগলের বলি চড়াতে হয়। শতপথ ব্রাহ্মণ অনুযায়ী (৬.২.২.১৫) তা প্রথমে প্রজাপতির উদ্দেশ্যে, তারপর বাকিদের কিন্তু তখন খালি দুইটিই করা হতো, প্রজাপতি আর বায়ুর উদ্দেশ্যে। ঐতিহাসিক আস্ক পারপোলা তাঁর যুক্তি অনুযায়ী বলেছেন যে বলির জন্যে কিন্নরকে বেছে নেওয়া হতো আর তাই তিনি বলির পুরুষকে বাদক বলে উল্লেখ করেছেন (Based on the textual evidence, I propose that the human victim in Vedic sacrifices was a harp -playing bard -Roots of Hinduism by Asko Parpola)। কৌশাম্বীর খননে যে অগ্নিচয়ন যজ্ঞের নিদর্শন পাওয়া গেছে তার মধ্যে একাধিক নরকরোটি পাওয়া গেছে। একটা খোদাই করা ইটও পাওয়া গেছে যাতে বলির জন্যে বেঁধে রাখা মানুষের ছবি আছে।
মানুষকে যজ্ঞে আহুতি হিসেবে উৎসর্গ করা হতো কিনা সেই বিষয়ে ঐতরেয় ব্রাহ্মণে একটি জনপ্রিয় গল্প আছে। রাজা হরিশচন্দ্রের গল্প প্রায় সবাই জানেন। রাজার ১০০ রাণী ছিল কিন্তু কারোর কোলেও একটি পুত্রসন্তান আসেনি। নারদ রাজাকে বুদ্ধি দেন যে বরুণের অর্চনা করতে। বরুণের বরে তাঁর ছেলে হয় কিন্তু এই শর্তে যে ছেলে হলে তাকে দেবতার কাছে উৎসর্গ করতে হবে। রাজা হরিশ্চন্দ্র এই শর্তে রাজি হন। তাঁর ঘরে ছেলে হয় আর নাম রাখা হয় রোহিতাশ্ব। এবার বরুণ দেবতা সেই ছেলে চেয়ে বসেন। রাজা বিভিন্ন ছুতোনাতায় বিষয়টা পেছোতে লাগলেন। বরুণ তখন রাজার ওপর রেগে তাঁর পেটে প্রবেশ করলেন। রাজার পেট উঠলো ফুলে। এবার মঞ্চে ইন্দ্রের প্রবেশ। একবার রোহিতাশ্ব রাজি হয়েছিল উৎসর্গিত হতে কিন্তু ইন্দ্রের মন্ত্রণায় তাতেও পড়লো বাধা। ইন্দ্রের বুদ্ধিতে রোহিতাশ্ব পালাল, জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরতে লাগলো। জঙ্গলে তাঁর দেখা হল অজিগর্ত নামের ব্রাহ্মণের সঙ্গে। ঋষির তিন পুত্র— শুনঃপুচ্ছ, শুনঃশেপ আর শুনঃলাঙ্গুল। ব্রাহ্মণ ছিলেন খুব গরীব। রোহিতাশ্ব ভাবলো যে ব্রাহ্মণের এক পুত্রকে কিনে “নিষ্ক্রয়” রূপে আমার জায়গায় বরুণের কাছে উৎসর্গ করে দিই। অজিগর্ত বড়োছেলেকে ছাড়তে রাজি হলেন না আর তাঁর স্ত্রী ছোটোছেলেকে। শেষে ব্রাহ্মণ মেজছেলে শুনঃশেপকে একশো গরুর বিনিময়ে বিক্রি করে দিলেন। রোহিতাশ্ব শুনঃশেপকে নিয়ে ফিরলেন রাজা হরিশ্চন্দ্রের কাছে। বরুণ মেনেও নিলেন রোহিতাশ্বর বদলে শুনঃশেপকে গ্রহণ করতে। রাজা হরিশ্চন্দ্র তখন রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন করলেন এবং ঠিক হলো অভিষেকের দিন শুনঃশেপকে বলি দেওয়া হবে। সেই যজ্ঞে দিকপাল সব ঋষিরা ঋত্বিক হয়ে এসেছিলেন। হোতা ছিলেন বিশ্বামিত্র, অধ্বর্যূ হলেন জমদগ্নি, অয়াস্য ছিলেন উদ্গাতা আর যজ্ঞের ব্রহ্মার দ্বায়িত্ব ছিল বশিষ্ঠের ওপর। শুনঃশেপকে যখন যজ্ঞভূমিতে আনা হলো তখন কোনো ঋত্বিক তাকে যুপকাষ্ঠ অবধি আনতে রাজি হলেন না। তখন আরও একশ গরুর লোভে এগিয়ে এলেন শুনঃশেপ-র বাবা অজিগর্ত। যূপকাষ্ঠে বাঁধার পর তাকে বধ করার জন্য কোনো শমিতা পাওয়া গেল না। অজিগর্ত আবার রাজি হলেন আরো একশো গরুর বিনিময়ে শুনঃশেপকে বধ করতে। শুনঃশেপ তখন ঋগ্বেদের মন্ত্র আওড়াতে লাগলেন। তাঁর মন্ত্র আবৃত্তি শুনে বরুণ প্রসন্ন হলেন। তিনি শুনঃশেপকে মুক্ত করে দিলেন। এবার অজিগর্ত ছেলে শুনঃশেপকে ফিরিয়ে নিতে চাইলেন। বিশ্বামিত্র তখন বাধা দিলেন আর শুনঃশেপকে নিজের পুত্র হিসেবে গ্রহণ করলেন। এখানে রাজসূয় আর তাতে নরবলি আর নিষ্ক্রয় বিষয়টি বলা হলেও আদতে কিন্তু নরবলি হয়নি, এমনকী তা করতেও রাজি হয়নি কোনো ঋত্বিক। কিন্তু রাজসূয় যজ্ঞের সঙ্গে এর যোগ যে ছিল তা তো অস্বীকার করা যায় না। রামায়ণে এই একই কাহিনি আছে কিন্তু সেখানে রাজার নাম বদলে হয়ে যায় অম্বরীষ। যদিও দুজনের বংশ একই— ইক্ষাকু বংশ।
আগে শতপথ ব্রাহ্মণে আমরা দেখেছি যে কীভাবে যজ্ঞের সারাংশ মানুষের থেকে একের পর এক পাঁচটি পশুতে ঢুকে শেষে পৃথিবীর মধ্যে প্রবেশ করে। এতে লক্ষনীয় বিষয় হলো সব পশুর ওপরে কিন্তু মানুষের স্থান আছে। ওই শতপথ ব্রাহ্মণে আবার বলছে (৬.২.২.১৫) যে ঘোড়ার কেশর (ঘাড়ের লোম) আছে, শিং নেই কিন্তু খুর আছে। ওদিকে বাকি পশুদের শিং আছে আবার খুরও আছে। সেদিক দিয়ে মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ কারণ এর শিংও নেই আবার কেশরও (দাড়ি) আছে। এই যজ্ঞের দক্ষিণাও বিচিত্র, যজমানের ধনসম্পত্তির মধ্যে পূর্বদিকে যা কিছু আছে সব হোতা পাবেন, দক্ষিণদিকের সবকিছু ব্রহ্মার, পশ্চিমদিকের সবকিছু অধ্বর্যু পাবেন আর উত্তরদিকের যা কিছু আছে তা পাবেন উদ্গাতা এবং অন্যান্য ঋত্বিকরা (যদি কেউ থাকেন)। পুরুষমেধ যজ্ঞ শেষে যজমান সর্বস্ব দান করে বনবাসে যেতেন।
অনেকেই বিভিন্ন প্রাকবৈদিক প্রত্নক্ষেত্রে (পড়ুন সিন্ধু সভ্যতা) অগ্নি পূজার কুণ্ডে বিভিন্ন প্রাণীর কাটা হাড় (বিশেষত হরিণ) দেখে সেগুলিকে বৈদিক যজ্ঞের সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করেন। এই নিয়ে বিস্তারিতভাবে “সিন্ধু সভ্যতায় অগ্নিপূজা ও বৈদিক যজ্ঞ: একটি তুলনামূলক আলোচনা” বইতে লিখেছি তবুও একটি প্রসঙ্গ বলতে চাই যে, বৈদিক যজ্ঞে কোন কোন প্রাণী বলি দেওয়া যাবে তা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। আপনাদের মনে আছে যে সেখানে যজ্ঞের সারাংশ একটি প্রাণী থেকে শুরু করে আরেকটি প্রাণীর ভিতরে যেতে যেতে শেষে পৃথিবীতে ঢুকে শস্যের মধ্যে প্রবেশ করেছিল। এবারে যে যে প্রাণীগুলি বলি এড়িয়ে গেল তাদের কী দশা হয়েছিল সেটিও বলা আছে।
স যং পুরুষমালভন্ত। স কিম্পুরুষোঽভবদ্যাশ্বং চ গাং চ তৌ গৌরশ্চ গবয়শ্চাভবতাং যমবিমালভন্ত স উষ্ট্রোঽভবদ্যমজমালভন্ত স শরভোঽভবত্তস্মাদেতেষাং পশূনাং নাশিতব্যমপক্রান্তমেধা হৈতে পশবঃ (শতপথ ব্রাহ্মণ, ১.২.৩.৯)
“তারা যাকে অর্পণ করেছিল সেই পুরুষ হয়ে ওঠে কিম্পুরুষ। ঘোড়া এবং ষাঁড়, যা তারা বলি দিতে চেয়েছিল, তারা যথাক্রমে গৌর এবং বাইসনে পরিবর্তিত হয়েছিল। তারা যে ভেড়া বলি দিতে চেয়েছিল, তা উট হয়ে গেল। তারা যে ছাগল বলি দেবে ভেবেছিল, তা সরভ হয়ে গেল। এই কারণে এই পশুদের (মাংস) খাওয়া উচিত নয়, কারণ এই প্রাণীগুলি বলির সার (মেধ) থেকে বঞ্চিত (অশুদ্ধ)”।
অর্থাৎ যে মানুষটিকে বলিপ্রদত্ত করা হয়েছিল কিন্তু বলিদান করা হয়নি, সে কিম্পুরুষে (পৌরাণিক প্রাণী; কারোর মতে জংলী আদিবাসী, কেউ বলে বামন আবার কারোর মতে বানর বা ape) পরিণত হয়ে গিয়েছিলো। ঘোড়া আর ষাঁড় জংলী গৌর আর বাইসন রূপান্তরিত হয়ে যায়। ভেড়া পরিণত হয় উটে আর ছাগল হয়ে যায় সরভ (এক ধরণের পৌরাণিক হরিণ) এই প্রাণীগুলি যজ্ঞের সারাংশ পায়নি তাই এদের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ। সেই হিসেবে বন্যপশুর বলি যজ্ঞে হয় না আর হরিণ তো নৈব নৈব চ। এদিকে সিন্ধু সভ্যতার তথাকথিত যজ্ঞকুণ্ডে কিন্তু জংলী পশু বিশেষত হরিণের হার ও শিং বেশি পাওয়া যায় অর্থাৎ বৈদিক যজ্ঞের রীতি অনুযায়ী যা অসিদ্ধ।
তথ্যসুত্রঃ
১. ভট্টাচার্য দীপান, সিন্ধু সভ্যতার অগ্নিপূজা ও বৈদিক যজ্ঞঃ একটি তুলনামূলক আলোচনা
২. ভট্টাচার্য্য বিধুশেখর: শতপথ ব্রাহ্মণ
৩. ভট্টাচার্য হরিনারায়ণ: শাঙ্খায়ান ব্রাহ্মণ: ১৩৭৭
৪. বিদ্যাভূষণ অমূল্যচরণ: অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণ রচনাবলী (প্রথম খন্ড): ১৯৮২
৫. দত্ত রমেশচন্দ্র : ঋগ্বেদ সংহিতা (দুই খণ্ড): ১৩৫৮ (বাং)
৬. ত্রিবেদি রামেন্দ্রসুন্দর : রামেন্দ্র রচনাবলী পঞ্চম খন্ড: ঐতরেয় ব্রাহ্মণ
৭. ত্রিবেদি রামেন্দ্রসুন্দর : বেদ কথা যজ্ঞ কথা: ২০১৭
৮. চট্টোপাধ্যায় অমরকুমার: বৈদিক যজ্ঞ: ২০০৩
৯. চট্টোপাধ্যায় অমরকুমার: আশ্বলায়ন শ্রৌতসূত্র: দি এশিয়াটিক সোসাইটি
১০. ঘোষ জগদীশচন্দ্র: শ্রীমদ্ভাগবতগীতা
১১. গুপ্ত নলিনীকান্ত: বেদের পরিচয়: ১৯৬৬
১২. Knipe David M: Vedic Voices Intimate Narratives Of A Living Andhra Tradition: 2015
১৩. Gabre Richard: The Srautasutra of Apastamba: 1883
খুব ইন্টারেষ্টিং
তথ্য ভিত্তিক লেখা। নতুন ভাবে আলোকপাত। পড়ে ভালো লাগল।
দারুন লাগল।