জন্মকাল বদলাতে চলেছে ভেনিসের – সৌজন্যে স্কুবা ডাইভার
স্কুবা ডাইভিং করার উদ্দেশ্য বলতে আমরা বুঝি গভীর জলের তলায় ‘মেরিন লাইফ’এর সাথে সময় কাটানো। স্কুবা ডাইভারের সারা শরীর ঢাকা থাকবে অদ্ভুত এক পোশাকে, পিঠে থাকবে অক্সিজেন সিলিন্ডার, সেখান থেকে নল দিয়ে অক্সিজেন আসবে মুখে, পায়ে থাকবে সুইমফিন আর তাই নিয়ে স্কুবা ডাইভার অতল জলের তলায় ধীরে ধীরে সাঁতরাতে থাকবে নাম না জানা গুল্ম, মাছ ও আরও কত কি প্রাণী আর উদ্ভিদের মধ্যে দিয়ে। স্কুবা ডাইভিং বললেই এই ছবিটা আমাদের মনের পর্দায় ভেসে ওঠে।
কিন্তু কপালের ফেরে কখনও কখনও এই স্কুবা ডাইভাররাও প্রত্নতত্ত্ববিদ হয়ে ওঠেন। ‘মেরিন লাইফ’ দেখার চক্করে জলের তলায় গিয়ে সেখানে খুঁজে পান ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষের। আর তার ঠেলায় ডাঙায় বসে থাকা ঐতিহাসিকদের আবার নতুন করে লিখতে হয় ইতিহাস। আর ঠিক এই গোছেরই একটা ব্যাপার হয়েছে ভেনিসে যার ফলে ভেনিসের বয়স কয়েক’শ বছর বাড়ার পথে।
ভেনিসের স্কুবা ডাইভাররা এই ‘কান্ড’টি অবশ্য আজ ঘটাননি। ঘটিয়েছিলেন আজ থেকে প্রায় তিরিশ-চল্লিশ বছর আগে – বিংশ শতকের আশি’র দশকে। ভেনিস লেগুনে স্কুবা ডাইভিং করতে করতে জলের তলায় কিছু পুরনো কাঠামো খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁরা। তবে তাঁরা তো ঐতিহাসিক বা প্রত্নতত্ত্ববিদ ছিলেন না, ছিলেন স্কুবা ডাইভার। তাই নিজেদের এই আবিষ্কার নিয়ে বেশি মাথা ঘামাননি। ধরে নিয়েছিলেন যে ওই কাঠামোগুলো ছিল লেগুনে নামার ধাপ, যা তৈরী করা হয়েছিল অতীতে।
ব্যাপারটা এখানেই ধামাচাপা পড়ে যেত যদি না আসরে অবতীর্ণ হতেন ভেনিসের ইনস্টিটিউট অফ মেরিন সায়েন্স (ইসমার)-এর গবেষক ফানতিনা মাদ্রীকার্ডো। তিনি প্রথমে কথা বলেন সেই সব স্কুবা ডাইভার’দের সাথে যাঁরা আবিষ্কার করেছিলেন লেগুনের জলের তলার কাঠামো। তারপর নিজের সহকর্মীদের নিয়ে কাজে নেমে কাঠামোর আসল ইতিহাস জানতে। নেন সরকারি সহায়তাও ইতিহাস উদ্ধারের এই কর্মযজ্ঞে। কাজকম্মো শেষ হওয়ার পর, গত সপ্তাহে, এই পুরো বিষয় নিয়ে এক গবেষণাপত্র বের করেন সায়েন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালে।
সেই গবেষণাপত্রে ফানতিনা মাদ্রীকার্ডো দাবি করেছেন যে যখন রোমান সাম্রাজ্যের ভেনিসের ল্যান্ডস্কেপ আর আজকের ভেনিসের ল্যান্ডস্কেপ অনেকটাই আলাদা। তখনকার সমুদ্রপৃষ্ঠ আজকের সমুদ্রপৃষ্ঠর তুলনায় প্রায় ২ মিটার নিচে ছিল। সেই সময় আজকের দিনের চিয়োগ্গিয়া শহর থেকে প্রাচীন শহর আল্টিনামে যাওয়ার জন্য রাস্তা ছিল ভেনেতো অঞ্চল দিয়ে। সেই রাস্তা আজ চলে গিয়েছে জলের তলায়। আর স্কুবা ডাইভাররা ভেনিস লেগুনের জলের তলায় যেইসব কাঠামো খুঁজে পেয়েছেন সেগুলি ছিল চিয়োগ্গিয়া আর আল্টিনামের সংযোগকারী রাস্তার দু’পাশের ঘরবাড়ি।
এই নতুন ঐতিহাসিক প্রাপ্তিযোগের চক্করে, ভেনিস আগের থেকে বয়স্ক হতে চলেছে। এতদিন পর্যন্ত মনে করা হতো যে ভেনিসের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল আজ থেকে ঠিক ষোল’শ বছর আগে – ৪২১ সাধারণ অব্দের ২৫শে মার্চে। এখন মনে করা হচ্ছে যে ঐদিনে ভেনিস শহরের আনুষ্ঠানিক গোড়াপত্তন হলেও, ভেনিস অঞ্চলে লোক বসবাস করতে শুরু করেছিল তার ও কয়েক’শ বছর আগে থেকে।
ভেনিসের এই ‘ভ্যানিশ’ হয়ে যাওয়া রাস্তা এবং তা নিয়ে গবেষকদের বিশ্লেষণসহ মতামত বিস্তারে জানতে চাইলে ক্লিক করুন নিচের লিংকে।
– শান্তনু ভৌমিক