সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

বিশ্বের বটতলা সাহিত্যের প্রকৃতি

বিশ্বের বটতলা সাহিত্যের প্রকৃতি

কুন্তল রায়

জুলাই ২০, ২০২৪ ২৩৫ 2

(১)

বটতলার বই মানেই মধ্যবিত্ত বাঙালির কাছে এক ধরনের আদিরসাত্মক রচনার ছাপা, যেগুলো ছেলেমেয়েরা লুকিয়ে পড়তেন এক সময়ে। হতে পারে ‘বটতলা’ নামটি এসেছে কলকাতার মুদ্রণ যুগের প্রথম পর্বের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে, কিন্তু এই নামের সঙ্গে যে ধারণা, তার মধ্যে মিশে আছে উচ্চধারার সাহিত্যের তাচ্ছিল্যের ধারাবাহিকতা, প্রোপাগান্ডা, এমনকি প্রকাশক বা বিক্রেতার পাঠককে প্রলুব্ধ করার হাতছানি। বটতলার বই মানেই যে কেবল আদিরসাত্মক নয়,  তা বারবার উল্লেখ করা হয়ে আসছে সেই সুকুমার সেনের সময় থেকে। এমনকি প্যাট্রিক জে. কারনি তাঁর রচিত A History Of Erotic Literature–এ চার শতকের প্রধানত ইংরেজি ও ফরাসি আদিরসের যে সাহিত্যিক নিদর্শনের কথা উল্লেখ করেছেন, তাতে দেখা যায়, এক্ষেত্রে বটতলার ছাপার তুলনায় এলিট সাহিত্যের সংখ্যা অনেক বেশি। তবুও মধ্যবিত্ত বাঙালি পাঠকের কাছে বটতলার বিষয়গত চরিত্র সম্পর্কে ধারণার পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব হয়নি।

এই নিবেদনের বিষয় বাংলা নয়, বিশ্বের বটতলা। সারা পৃথিবীর অধিকাংশ স্থানে বটগাছতলা রয়েছে এমন দাবি না করা গেলেও বিভিন্ন ধরনের সস্তা ছাপার প্রচলন যে ছিল, এতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রায় পাঁচ শতক ধরে চলে আসা এই ছাপার রীতিতে অনেক ধরন, বৈপরীত্য ইত্যাদি থাকার কারণে একে সংজ্ঞায়িত করা কঠিন। তবে প্রচলিত ছাপা রীতির তুলনামূলক পার্থক্যের নিরিখে এর সামান্য লক্ষণগুলিকে উল্লেখ করা যেতে পারে—

•                এই ছাপাগুলিতে পৃষ্ঠা-সংখ্যা তুলনায় কম।

•                এই ছাপাগুলির অস্তিত্ব ক্ষণস্থায়ী।

•                কাগজ ও অন্যান্য ব্যায়ের ক্ষেত্রে আর্থিক সাশ্রয়ের চেষ্টা লক্ষ্য করা যায়।

•                এই ছাপায় লেখকের গুরুত্ব তুলনামূলকভাবে কম।

•                এই ছাপায় ছবি একটি প্রধানতম আকর্ষণের বিষয়।

•                এই ছাপার বিক্রির পদ্ধতি সাধারণ বইয়ের বিক্রির প্রক্রিয়া থেকে আলাদা।

পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে মুদ্রণ যুগের শুরুর সময় থেকেই এমন ধরনের ছাপা দেখতে পাওয়া যায় কেন? এর যে একটাই উত্তর হয়, তা নয়। বিচল হরফ বা মুভেবল টাইপ দিয়ে বড়ো বই তৈরি করতে গেলে বেশ খানিকটা সময় লাগে। তাই মাঝের সময়ে ভাঙাচোরা, থেবড়ে যাওয়া বা পুরোনো অক্ষরগুলি দিয়ে দুই-এক ফর্মার ছোটো লেখা ছাপানো গেলে ও তা দ্রুত বিক্রি হলে প্রকাশকের হাতে চটজলদি কিছু অর্থ আসে। সস্তা ছাপার শুরুর প্রক্রিয়াটা খানিকটা এরকম ছিল বলে ধারণা করা হয় এবং পরবর্তীতে ছাপার বৈচিত্র্য ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। এই ছাপার সৃষ্টির কারণ অনুসন্ধানে দ্বিতীয় একটি ধারণা রয়েছে। মনে করা হয়, শুরুর দিকের সস্তা ছাপা আসলে সামন্তযুগের টেক্সটকে পুঁজিবাদী সময়ের প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা একটি পণ্য। ইউরোপে ব্যালাড, গান এবং ক্যারলের প্রচলন অনেক প্রাচীন। বটতলার ছাপার মাধ্যমে তা হাতে লেখার পরিবর্তে মুদ্রিত রূপে প্রকাশ করা হয় ও সহজলভ্য হয়ে ওঠে। সারা পৃথিবীতে বটতলা-ধরনের ছাপা প্রকাশের কারণ হিসেবে আর একটি ব্যাখ্যা রয়েছে। ইতিহাসবিদরা মনে করেন জ্ঞানদীপ্তির সময় থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটে।  ফলে এই ধরনের কম দামের ছাপা স্বল্প শিক্ষিত মানুষের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

ছাপার ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বিশ্বের বটতলাকে যতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সাহিত্যের একটি অংশ হিসেবে ততটা প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। প্রকৃতপক্ষে ছাপা-সাহিত্য বলতে যেহেতু মূল ধারার এলিট পরম্পরাকেই বোঝানো হয় তাই তার সঙ্গে বটতলার ধরনের সাহিত্যরীতিকে মেলানো সম্ভব নয়। তাকে গুরুত্ব না দিয়ে তুলনায় ছাপার আকৃতিগত বৈশিষ্ট্য, মুদ্রণ মূল্যের তারতম্য, প্রাপ্ত লেখা থেকে সমাজে , বিক্রির পদ্ধতি ও প্রসার – ইত্যাদি নিয়ে অতীত গবেষণায় আগ্রহ দেখা গেছে। বটতলার বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করতে গিয়ে প্রায় প্রতি ক্ষেত্রে তুলনামূলক পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। এলিট সাহিত্যের সঙ্গে তার যতটুকু পার্থক্য, সেটাই যেন তার নিজস্বতা। সাহিত্যের চরিত্র অনুযায়ী ধরে নেওয়া হয় তা মৌখিক রীতিগুলির অক্ষরে প্রকাশ-মাত্র। তবে এই সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মুক্ত হতে পারলে বিশ্বের বটতলার সাহিত্যের অনেক বড়ো গুরুত্ব আবিষ্কার করা যেতে পারে। আমাদের পরিচিত ছাপা সাহিত্যের প্রবাহ যতটা স্থবির, সস্তা ছাপা তা নয়। যেহেতু একে বুঝতে ছাপার বস্তুগত রূপকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তাই আধুনিক ছাপারীতির আগমনে তা শেষ হয়ে এলেও প্রকাশভঙ্গী থেকে নবতর ছাপার জন্ম দিয়েছে। আজ যে সংবাদপত্র দেখতে পাওয়া যায় তার আদল দেখা গিয়েছিল আধুনিক যুগের শুরুর সময়ে খবর সংক্রান্ত এক ধরনের ব্রডসাইড ব্যালাডে। ইউরোপের প্রায় সমস্ত অঞ্চলে এই ধরনের ব্যালাড খুব জনপ্রিয় ছিল। অর্থাৎ আজকের প্রযুক্তি-নির্ভর অত্যন্ত দ্রুত ছাপা পণ্যগুলির আগমন সস্তা ছাপার ঐতিহ্য থেকে। আবার পঞ্জিকার মতো একবর্ষজীবী ছাপার (যদিও ইউরোপের সাহিত্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে পুরোনো পঞ্জিকা বহু বছর ব্যবহারের কথা জানা যায়) বৈশিষ্ট্য কেমন হবে তা ঠিক করে দেয় সস্তা ছাপা। পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ দেশে ছাপার আবির্ভাবের সময় থেকে পঞ্জিকার প্রচলন শুরু হয় এবং তা ছবি দিয়ে কিভাবে আকর্ষণীয় করা যায় তা বটতলার ছাপার পরীক্ষানিরীক্ষার ফসল। আবার এলিট সাহিত্য থেকেও সস্তা ছাপায় নানা বৈশিষ্ট্য অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ছাপার আকৃতিগত পরিবর্তনে প্রভাব ফেলতে না পারলেও সাহিত্যের ধরন প্রবেশ করেছে।

 (২)

কোনো একটি বিস্তৃত বিষয়কে সহজে বুঝতে গেলে তাকে সূক্ষ্ম পার্থক্যগুলির নিরিখে বিভাজিত করে বা শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমে বিভক্ত করলে তা সহজেই আলাদা একেকটি খণ্ডে নিজস্বতা নিয়ে স্বতন্ত্র অস্তিত্বের জানান দেয়। তবে প্রতি ধরনের বিভাজনের ক্ষেত্রে দ্রষ্টার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী একটি মানদণ্ডও তৈরি হয়। গত পাঁচ শতকে সারা বিশ্বে যে ধরনের সস্তা ছাপা মুদ্রিত হয়েছে তাকে নানাভাবে বিভাজিত করা হয়ে থাকে। আমাদের পরিচিত ধারার সাহিত্যকে ‘এলিট লিটারেচার’ নাম দিয়ে বাকি সস্তা দামের সাহিত্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পরিচিত নাম হলো ‘পপুলার লিটারেচার’। পরবর্তী একটি অংশে ‘পপুলার’ নামটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে; এখানে খুব সাধারণভাবে কয়েকটি কথা উল্লেখ করা হচ্ছে। এখানে প্রাথমিকভাবে দুটো প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা হবে। ছাপা সাহিত্যের গবেষকদের মনে ‘পপুলার’ শব্দটি এলো কেন? আর, এই নতুন পরিভাষা প্রয়োগের  ফলে এই ‘ইতর’ সাহিত্যের প্রতি কী ধরনের মানসিকতা তৈরি হয়েছিল?

তাহলে প্রথমেই যেটি বিবেচনা করতে হয়, সাহিত্য বলতে কেবল এলিট ও পপুলার – এই দ্বৈতসত্ত্বার উল্লেখ করা হয় কেন? যদি সাহিত্য বলতে একমাত্র ছাপা সাহিত্যকে মনে না করা হয় তবে মৌখিক সাহিত্য বা ওরাল লিটারেচারের বিশেষ ভূমিকাকেও স্বীকার করতে হবে। মৌখিক সাহিত্য ছাপার সূচনার, এমনকি লেখার যুগের অনেক আগে থেকেই মানব সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং ছাপার আগমনের বা বিস্তারের যুগেও মৌখিক সাহিত্যের অস্তিত্ব ও প্রয়োজনকে উপেক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তারপরেও সাহিত্য বলতে কেবল ‘এলিট’ এবং ‘পপুলার’- এই দুই ভাগে বিভক্ত করে দেখা দীর্ঘদিন ধরে চলে এসেছে এবং ‘জনপ্রিয় সাহিত্য’ নামের মধ্যে মৌখিক সাহিত্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি (বর্তমানে অবশ্য ‘ফোক লিটারেচার’ নামে এই বাকি অংশকে অন্তর্ভুক্ত করার নিদর্শন রয়েছে)। বব স্ক্রাইবনার এই বিভাজনের (তার ভাষায় two tear model) সমস্যাকে বুঝেছেন সাহিত্য-সমালোচকদের দার্শনিক পরিবর্তনের জায়গা থেকে। ‘পপুলার লিটারেচার’-এর ধারণা তৈরি হয়েছিল ‘পপুলার কালচার’ থেকে এবং এর মূল উৎস ১৯৭৮ সালে পিটার বার্কের রচিত Popular culture in early modern Europe গ্রন্থটি। উনিশ শতকের প্রথমার্ধে এই ধরনের সাহিত্যকে ‘জনপ্রিয়’ শব্দটি দিয়ে বোঝানোর তেমন একটা চল ছিল না। ইংরেজি ভাষায় একে ‘ট্রাশ লিটারেচার’ বা ইতর সাহিত্য বলা হতো। ট্রাশ শব্দে এই ধরনের ছাপার প্রতি হীনতা প্রকাশ পেলেও ছাপা সাহিত্যের প্রাথমিক শ্রেণিবিন্যাসের ক্ষেত্রে এইটি ব্যবহারে একটা সাযুজ্য ছিল অর্থাৎ এক ধরনের সাহিত্য যা কিনা ‘এলিট লিটারেচার’; তা গ্রহণীয় ও কৌলীন্যের প্রতীক ছিল এবং অপরভাগকে বর্জনীয় মনে করে ট্রাশ লিটারেচার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। যতদিন পর্যন্ত সাহিত্যে এলিট শ্রেণির পাঠ্যকে প্রাধান্য দেওয়ার রীতি বজায় ছিল, ততদিন এই প্রাথমিক বিভাজনে সাহিত্য সমালোচক বা সাহিত্যের ইতিহাসচর্চাকারীদের তেমন একটা সমস্যায় পড়তে হয়নি।

গোল বাধল গত শতকের ছয়ের দশক থেকে, উত্থান হল উত্তর-আধুনিকতাবাদের। লেসলি ফেডলার-এর মত জার্মান উত্তরাধুনিক দার্শনিকরা সাতের দশকের শুরুতেই উচ্চস্বরে দাবি জানালেন সাহিত্যের এই ‘উচ্চ-নিচ’ ভেদ কমিয়ে আনতে হবে; স্লোগান দিলেন ‘Cross the border – close the gap’. অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কিছু পরের সময় থেকে যে নতুন ইতিহাস-দর্শন আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপে দানা বাঁধতে থাকে, সেই কণ্ঠস্বর ক্রমশ প্রকট হতে থাকলো সাহিত্যের প্রচলিত ভাবনার বিরোধিতায়। কিন্তু সমস্যা দেখা গেল অন্যত্র। যদি জার্মানির সাহিত্যের বিভাজনের কথাই বলতে হয়, সেখানে ইতর সাহিত্যের প্রতিশব্দ সুন্ডলিতারার্তুর (Schundliteratur, আবর্জনা সাহিত্য) বা ট্রিভিয়াললিতারার্তুর (Trivialliteratur, নগণ্য সাহিত্য)-কে সরিয়ে পপুলার লিটারেচারের সমার্থক পপুলারলিতারার্তুর (Populärliteratur) বা উনতারহালতুনলিতারার্তুর (Unterhaltungsliteratur, বিনোদন সাহিত্য)-কে হয়তো বা পরিচিত করা গেল। কিন্তু ইংরেজিতে যাকে বলে ‘এলিট লিটারেচার’ সেই শব্দটির কোনো পরিবর্তন করা হলো না। ফলে পিটার বার্কের আমলে সাহিত্যের যে দুটি বিভাগ তৈরি হলো, তার একটি এলিট ও অপরটি সদ্যোজাত ‘পপুলার’ অর্থাৎ নামকরণের বৈশিষ্ট্যে কোনো সামঞ্জস্য থাকলো না। এই বর্গীকরণ দেখে স্বাভাবিক যে প্রশ্ন হতে পারে, এলিট সাহিত্য কি তাহলে জনপ্রিয় নয় বা কোনো সাহিত্য জনপ্রিয় হলে তাকে কি এলিট সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না, ইত্যাদি। আসলে নামকরণের সমস্যাটির ভেতরে লুকিয়ে আছে সাতের দশকের নবচিন্তার উদাসীনতা। তারা ক্রমশ ‘ট্রাশ’ থেকে ‘পপুলার’ সাহিত্যে উন্নীত করে সেই সমস্ত ‘ইতর’ সাহিত্যকে এলিটিস্ট গবেষণায় এনে মর্যাদা দিলেও এলিট সাহিত্যের জগতে এই নামটি বা এই সাহিত্য সম্বন্ধে ধারণা পরিবর্তনে বিশেষ একটা আগ্রহ দেখাননি। পুরোনো ছাপাগুলিকে গত চার দশকে যখনই নতুন করে মুদ্রণ বা সম্পাদনা করা হয়েছে, সেই নতুন ছাপাতে রচনার বাইরের দেহগঠনে অতীতের কোনো সস্তার বৈশিষ্ট্যই আর রাখা সম্ভব হয়নি।

ট্রাশ লিটারেচারের এই ‘পপুলার’ হয়ে ওঠাই সাতের দশকের একমাত্র প্রবণতা ছিল না। যখন সস্তা ছাপার মধ্যে সাহিত্যের ধারার পুনরাবিষ্কার করার প্রচেষ্টা চলছে, সেই সময় আরও কিছু নাম ব্যবহার করা শুরু হয়। লেসলি শেফার্ড ১৯৭৩ সালে একটি বই প্রকাশ করেন যার নাম ছিল History of Street Literature: The Story of Broadside Ballads, Chapbooks, Proclamations, News-sheets, Election Bills, Tracts, Pamphlets, Cocks, Catchpennies and Other Ephemera. ঠিক একই বছর রবার্ট কলিসন-ও একটি বই লিখেছিলেন The Story of Street Literature: Forerunner of the Popular Press নামে। বই দুটির বিষয়বস্তুর মধ্যে প্রবেশ না করেও কেবল নাম দুটিকে পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায় সত্তরের দশকের শুরুতে ‘পথ-সাহিত্য’ (Street Literature) শব্দটিকে ‘এলিট’ সাহিত্যের বিপরীত শব্দ হিসেবে ব্যবহারের আগ্রহ দেখা গিয়েছিল।  বলা যায়, বিভিন্ন ভাষায় ‘জনপ্রিয় সাহিত্য’ ও ‘পথ-সাহিত্য’ নাম দু’টির মাধ্যমে সাহিত্যের নানান বৈশিষ্ট্যকে সূচিত করার চেষ্টা হয়েছে। গত তিন শতকে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সস্তা ছাপা হয় ঝুড়ির মধ্যে সাজিয়ে বা ফেরিওয়ালার মাধ্যমে শহর, গ্রাম এমনকি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাট-বাজার বা জনসমাগম হয় এমন অঞ্চলে বিক্রির মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। পথে বিক্রি হওয়া এই সাহিত্য পুস্তিকাকে তাই ‘পথ-সাহিত্য’ নামে উল্লেখ করা হয়।

এলিট মান্য সাহিত্যের বাইরে ‘জনপ্রিয়’ এবং ‘স্ট্রিট’ ধারা ছাড়াও আরও দুটি-একটি শব্দ গুরুত্ব পেয়েছিল। এমন একটি পরিভাষা হলো ক্ষণস্থায়ী ছাপা (ephemeral)। এই ক্ষণস্থায়ী নাম দিয়ে বিশেষ এক ধরনের ছাপাকে সংরক্ষণ করা বহু আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। তাই জন লিউইস যখন ১৯৬২ সালে Printed Ephemera: The Changing Uses of Type and Letterforms in English and American Printing গ্রন্থটি রচনা করেন, তখন তার মাধ্যমে ‘ক্ষণস্থায়ী ছাপা’ শব্দটি পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞা পায় এমন ভাবার কারণ হয়তো নেই। তবে সস্তা ছাপাকে তার তাৎক্ষণিক চরিত্রের নিরিখে আলাদা করার কাজটি শুরু হয়ে গিয়েছিল বলে ধরে নেওয়া যেতেই পারে। এফেমেরা বলতে সাধারণত এমন ছাপাকে বোঝানো হয় যা সচরাচর বিক্রি হতো না, বিলি হতো। এছাড়া ‘থার্ড লিটারেচার’ শব্দটিও পরবর্তী ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে, তবে এটি পরিভাষা হিসেবে ততটা জনপ্রিয় বা বহুল ব্যবহৃত নয়।

(৩)

নয়ের দশক থেকে যখন ‘পপুলার লিটারেচার’ শব্দটি প্রায় এককভাবে ছড়িয়ে পড়ছে সেই সময় এই শব্দটির ব্যাখ্যা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। তার কারণ, সেই সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তিগত সংগ্রহ ও মহাফেজখানা থেকে যে সমস্ত পুরোনো ছাপা পাওয়া যাচ্ছিল বা আবিষ্কৃত হচ্ছিল এবং তা নিয়ে গবেষণা হচ্ছিল, তা খুব যে জনপ্রিয় ছিল, এমন নয়। বরং এর মুদ্রিত মূল্যের কথা মাথায় রেখে গবেষকদের কাছে সস্তা ছাপা (cheap print) নামটি বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হতে থাকে। এই যাবত যে সমস্ত নামগুলির উল্লেখ করা হলো (জনপ্রিয়, সস্তা, বর্জ্য, থার্ড এবং পথ-সাহিত্য) তা সবই গত শতকের গবেষক ও ভাষাতত্ত্ববিদদের দেওয়া বা তুলে আনা। নামগুলি এই ধারার ছাপার সময়ের পরবর্তী আমলে দেওয়া আর এর পেছনে অতীতের ক্ষণস্থায়ী ছাপাকে দেখার ভিন্নতাকে নির্ভর করে আলাদা নাম দেওয়া শুরু হয়েছিল।

দ্বিতীয়ভাগে এক ধরনের ব্যবহারিক নামের প্রচলন দেখা যেতে পারে, যা বহু আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। ‘কর্ডেল’ শব্দটি পর্তুগিজ ভাষা থেকে উৎপত্তি; corda শব্দের অর্থ দড়ি বা সুতো। দড়িতে ঝোলা এই সস্তা বই ‘লিতারেতুরা দে কর্ডেল’ নামে প্রসিদ্ধ, যাকে ইংরেজিতে ‘কর্ডেল লিটারেচার’ বলা হয়ে থাকে। পর্তুগালে এই নামের সূচনা হলেও ব্রাজিলে ‘কর্ডেল’ শব্দটির প্রসার সবচেয়ে বেশি। এই দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে বাজার বা গুরুত্বপূর্ণ পথের পাশে দড়ি বেঁধে তার মধ্যে বই রেখে বিক্রি করা হতো। দেখা যাচ্ছে, শব্দটির পরিচিতি কেবল পশ্চিম ইউরোপে নয়, লাতিন আমেরিকার নানা অঞ্চলে ছড়িয়েছিল। ব্রাজিলে কর্ডেল বলতে ব্রডশিট বা প্যাম্ফলেটের আকৃতির মত না হয়ে বরং ভাঁজ করা এক বা দুই ফর্মার বইকে বোঝানো হতো। এই নামটির মাধ্যমে ছাপার এক স্বতন্ত্র ধারা সূচিত হয়।

কর্ডেল সাহিত্য ছাড়া অপর যে শব্দটি পশ্চিম ইউরোপে খুবই পরিচিত তা হল কলপরেজ (colportage)। সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফ্রান্সে একশ্রেণির ফেরিওয়ালারা বাইবেল ও অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থ ফেরি করতেন। পরবর্তীকালে ধর্মীয় রচনার চাহিদা কমে যাওয়ায় তারা বিভিন্ন ধরনের সস্তা ছাপা বিক্রি করতে শুরু করেন, এদেরকেই ‘কলপর্তার’ বলা হতো। সেই থেকেই সস্তা ছাপা বোঝাতে ‘কলপরেজ’ নামটির উদ্ভব। কেবল ফ্রান্সই নয়, ইতালি এবং জার্মানির বেশ কিছু অঞ্চলে শব্দটির প্রচলন দেখা যায়।

ফ্লায়ার বা ফ্লাইশিট অপর এক ধরনের নাম, যা কিনা পশ্চিম ইউরোপে ব্যবহার হতে দেখা যায়। সাধারণত এক পৃষ্ঠায় ছাপা বিজ্ঞাপনকে ফ্লায়ার বলার চল রয়েছে। আর তুলনায় একটু বড় কাগজকে দুটি দিকেই ছাপিয়ে একটি ভাঁজ করে চার পৃষ্ঠা বা তার বেশি তল বের করলে তাকে প্যাম্ফলেট বলে। ফ্লায়ারকে লিফলেট, পোস্টার, হ্যান্ডবিল ইত্যাদিও বলা হতো।

বটতলার শ্রেণিবিন্যাস নানাভাবে করা হলেও সবচেয়ে প্রয়োজনীয় একটি কথা বাকি থেকে যায়, তা হলো এই ধরনের ছাপার ইতিহাস রচনার সময় কী নামে উল্লেখ করা হবে। বিশের শতকের সাতের দশক থেকে এই নিয়ে যে ধরনের বই প্রকাশিত হয়েছিল সেখানে কোনোএকটি ধরনের ছাপার আকৃতিগত বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন ধরুন, ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে চ্যাপবুক বা রাশিয়ার ক্ষেত্রে ল্যুবক। সাতের দশকের সেই আলোচনায় নির্দিষ্টভাবে চ্যাপবুকের আবির্ভাব, তার বিস্তার এবং তা ছাপানোর যুগ শেষ হয়ে যাওয়া – এই তিনটি পর্যায়কে দেখা হতো। সেই সময়ের লেখাগুলিতে অতীতের একটি নির্দিষ্ট কালের বিভিন্ন ধরনের ছাপার ব্যাখ্যা সচরাচর করা হতো না। এরপরে এমন একটা সময়ে এলো যখন আমরা আর কেবল চ্যাপবুকের উপর দৃষ্টিকে সীমাবদ্ধ রাখলাম না। যখন ‘পপুলার প্রিন্ট’-এর ধারণা এলো, তখন যত ধরনের ছাপা জনপ্রিয় হয়েছিল সেই সবগুলি গুরুত্ব পেল। যেমন রাশিয়ায় উনিশ শতকের শেষ দুই দশক থেকে পত্রিকায় (সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক) খুব জনপ্রিয় হতে থাকে। এর ফলে পপুলার প্রিন্টের আলোচনায় একে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। কিন্তু প্রযুক্তিগত দিক থেকে বিচার করা হোক বা সাহিত্যের চরিত্র, কোনো ক্ষেত্রেই ল্যুবকের সঙ্গে ম্যাগাজিনের কোনো মিল নেই। অথচ ‘জনপ্রিয় সাহিত্য’ নামের কারণে পত্রিকাদের কথা আসে। এই একই দ্বিধা রয়েছে সংবাদপত্র নিয়ে, যদিও প্রাত্যহিক সংবাদপত্রকে জনপ্রিয় ছাপার মধ্যে ধরা হয় না। কিন্তু জনপ্রিয়তার বিচারে তা একসময় প্রায় সব ধরনের বিক্রির ছাপাকে পেছনে ফেলে দেয়। অথচ একে আলাদা করে জনপ্রিয় ছাপা যেমন বলা যায়, সেই সঙ্গে সস্তা ছাপাও বলা যায়।

সস্তা বললে মূল্যের একটি মানদণ্ড তৈরি করতে হয়। কোনো পণ্য প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে তা আরও অধিক উৎপাদিত ও বেশি আকর্ষণীয় হবে এবং সস্তা হবে এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তাই আলাদা করে ‘সস্তা ছাপা’ নাম দিলে প্রতিটি সময়ের বিচারে সস্তার মানদন্ড ভাবতে হয়। ঐতিহাসিকরা সাধারণত কাঠের ব্লকে ছাপা ছবি ও সেই সংক্রান্ত ছাপাকে এই ধরনের পণ্য হিসেবে গ্রহণ করেন। কিন্তু সেই সময়ের এলিট শ্রেণির বই এর মধ্যেও কাঠের ব্লকের ছাপা ছবি দেখা যায়।

বিশ্বের বটতলার গবেষকদের একটি প্রবণতা রয়েছে নামের মাধ্যমে বিষয়ের সামান্যীকরণ ঘটানো অর্থাৎ এমন একটি বা দুটি শব্দ দিয়ে এই ধরনের ছাপাকে বোঝাতে হবে যাতে সেই ছাপার মূল বৈশিষ্ট্য সূচিত হয় – এই কারণে ক্রমশ এর নাম পরিবর্তন হয়ে চলেছে। একসময় ‘জনপ্রিয় ছাপা’ নামটি অধিক গ্রহণীয় ছিল, বর্তমানে ‘সস্তা ছাপা’ নামটি ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে এই ধরনের ছাপার যে সামান্যীকরণ হয় তার একটি বিপরীত প্রবাহ লক্ষ্য করা যায় আর তা হলো বিশেষীকরণ করা অর্থাৎ প্রতিটি নামকে আলাদা আলাদা করে বিবেচনা করা। একটু তলিয়ে দেখলে বোঝা যাবে যে তাতেও সমাধান সম্ভব নয়, কারণ বাংলার বটতলা সাহিত্যের মধ্যেই এমন নানা বৈচিত্র্য আছে (বিষয়, মূল্য, আকৃতি, পৃষ্ঠার পরিমাণ, লেখকের পরিচিতি ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে) যার কারণে মেনে নিতে হয় যে প্রতিটি বই বা ছাপা আলাদা এবং এর কিছু নিজস্বতা রয়েছে। ফলে সামান্যীকরণ বা বিশেষীকরণ- এই উভয় ক্ষেত্রে যে এক বা একাধিক বৈশিষ্ট্যকে গ্রহণ করা হবে তা নির্ভর করে গবেষকের নিজস্ব মেথডলজির ওপর। নামকরণের ক্ষেত্রে আলাদা সময়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এই ধরনের ছাপার ক্ষেত্রে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রকাশিত রচনাগুলিতে আঞ্চলিক নামের প্রাধান্য লক্ষ্য করা গেছে কারণ তখন এই ছাপাকে কোনো স্থানের আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য বলে মনে করা হতো। পরবর্তীকালে যখন তা জ্ঞানচর্চার বিষয়বস্তু হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল, তখন এর নামকরণের ভাগীদার হলেন ইতিহাসবিদ, ভাষাতাত্ত্বিক, সাহিত্য সমালোচক, গ্রন্থাগারিক আর সংগ্রাহকরা। তারা নিজস্ব ভাবনা অনুযায়ী এর প্রধান বৈশিষ্ট্যকে মাথায় রেখে নামকরণ করার চেষ্টা করলেন।

কোনো অঞ্চলের বিভিন্ন সময়ের ব্যবধানে সস্তা ছাপার মুদ্রণের পরিস্থিতির যেমন মিল দেখা যাবে, আবার কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন সাধারণ মানুষের গ্রাম থেকে শহরে আসার প্রক্রিয়া, সাক্ষরতার ক্রমবর্ধমান হার, লেখার বিষয়বস্তু, সাধারণ মানুষের আগ্রহ, মুদ্রণ প্রযুক্তি, ছাপা রচনার ওপর রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রভাব- ইত্যাদির মধ্যে পার্থক্যও আছে। আবার সস্তা ছাপা বিক্রির ক্ষেত্রে শহরের ও গ্রামের চিত্র একই রকম ছিল না। চ্যাপম্যান, পেডলাররা গ্রামের বাজার বা মেলায় এই ছাপা ফেরি করতেন আর ইউরোপের বিভিন্ন নামকরা শহরে অন্ধ মানুষের আয়ের উপায় ছিল ঝুড়িতে এই বই বিক্রি করা। আজ থেকে তিনশো বছর আগে ভেনিসের সেন্ট মার্ক্স স্কয়ারে যেতে পারলে আশেপাশে এমন বহু বই বিক্রেতা পাওয়া যেত। ছোটো রকমারি দোকানে, পুরোনো বইয়ের দোকানে এই বইগুলি বিক্রি হতো। তাই বিক্রির একটিমাত্র চ্যানেল ছিল এমন নয়। ফলে চাহিদা, বাজার, আগ্রহ ইত্যাদির পার্থক্য থাকায় ছাপার ধরনের পরিবর্তন হওয়াটাই স্বাভাবিক যা প্রকারান্তরে আঞ্চলিক নামে প্রভাব ফেলে।

পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলি ও অন্যান্য অঞ্চলের অংশের সস্তা ছাপার মধ্যে বিস্তার পার্থক্য রয়েছে। প্রথমত, পশ্চিম ইউরোপে সামগ্রিকভাবে সস্তা ছাপা শুরু হয় অনেক আগে। অপরদিকে এশিয়া, আফ্রিকায় ছাপাযন্ত্র প্রবেশ করে সর্বোচ্চ দুই শতক আগে। দ্বিতীয়ত, ইউরোপের বাইরে, বেশকিছু অঞ্চলে ছাপা সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা ঠিক ভাবে গড়ে ওঠেনি। যেমন, ঘানায় কোনো প্রতিষ্ঠিত প্রকাশক এই ধরনের ছাপা প্রকাশে আগ্রহী ছিলেন না। তাছাড়া আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে সস্তা ছাপার ক্ষেত্রে ইউরোপ ও অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার, নগরায়ন ও শিল্প বিপ্লবের প্রত্যক্ষ প্রভাবে অনেকটাই পার্থক্য ছিল। অ্যাডাম ফক্স আর একটি বিশেষ দিকের কথা উল্লেখ করেছেন। ঔপনিবেশিক প্রভাবে তৈরি ছাপাখানার টেক্সট এবং স্ট্রাকচার কেমন হবে তা শাসক শক্তির সাহিত্যের চরিত্র ও বই প্রকাশের ধরনের উপর নির্ভর করে। আবার পাঠক যেহেতু স্থানীয় সাধারণ মানুষ, তাই রচনার মধ্যে আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যগুলিও লক্ষ্য করা যায়। তিনি যেমন ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের সস্তা ছাপার পার্থক্যের দিকটি তুলে ধরেছেন।

সাহিত্যের কোনো সর্বকালীন পরিচিতি নেই – একসময় যে ‘গুপ্তকথা’ সকলের সামনে প্রকাশের যোগ্য ছিল না, সেই রচনাই যখন এলিট পাঠকের পরিচিত বই আকৃতিতে আসে তা রচনা ছাড়া বাকি সমস্ত বৈশিষ্ট্যকে হারায়। যদি ইউরোপের দিকে তাকানো যায় তবে দেখা যাবে, মধ্যযুগের যে রচনা উচ্চকোটির হাতে লেখা বই হিসেবে সীমিত গণ্ডির মধ্যে অবস্থান করতো তার একটি অংশ মুদ্রণ-বিপ্লবের পর শিভালরির সাহিত্যের সঙ্গে সস্তা ছাপায় সংযোজিত হয়। এবার এলিট সংরক্ষণ ও গবেষণার কালে তা প্রচলিত বইয়ের আকারে সংকলিত হতে দেখা যায়। অর্থাৎ ছাপার প্রকৃতিগত ভেদে এক লেখাই বিভিন্ন সময় ভিন্ন সমাজের জন্য আলাদা রূপ ধারণ করে। এই কারণে বিভিন্ন দেশের বটতলার সাহিত্যের ইতিহাসকে পর্যবেক্ষণ করা সামাজিক ও সাহিত্যের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

টীকা

১. Bob Scribner, Is A History Of Popular Culture Possible? History of European Ideas, Vol. IO, No. 2, 1989, p. 175.

২. Leslie Fiedler, Cross the Border—Close That Gap: Post-Modernism, Marcus Cunliffe (Ed.), American Literature since 1900, Barrie and Jenkins, 1975.

৩. প্রায় এক দশক পরে ১৯৮২ সালে, ডক্টর জয়ন্ত গোস্বামী পথ-সাহিত্য (Street Literature) এবং পথ-পুস্তিকা (Street Book) শব্দ দু’টি বাংলায় ব্যবহার করেন।

জয়ন্ত গোস্বামী, বাংলার পথ-সাহিত্য: পথ-পুস্তিকা, কমল পাবলিকেশনস, ১৯৮২

৪. Adam Fox, ‘Little Story Books’ and ‘Small Pamphlets’ in Edinburgh, 1680–1760: The Making of the Scottish Chapbook, The Scottish Historical Review, Volume XCII, 2: No. 235: October 2013, p. 208

তথ্যসূত্র

১. Roger Chartier, (ed.) The Culture of Print: Power and the Uses of Print in Early Modern Europe, Poliry Prcss, 1989.

২. Peter Burke, Popular Culture in Early Modern Europe, Harper Torchbooks, 1978.

৩. Joad Raymond, The Oxford History of Popular Print Culture: Cheap Print in Britain and Ireland to 1660, Vol. 1, Oxford University Press, 2011

মন্তব্য তালিকা - “বিশ্বের বটতলা সাহিত্যের প্রকৃতি”

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।