সাগর দৌড় বা টি রেস – দ্বিতীয় পর্ব
এরিয়েল
জাহাজটিকে ঘিরে তুমুল কর্মব্যস্ততা আর উত্তেজনা। দলে দলে চিন দেশীয় শ্রমিক দক্ষ হাতে হাজারে হাজারে কাঠের বাক্স এনে জাহাজে তুলছে। সুসংবদ্ধভাবে, ইঞ্চিমাত্র জায়গার অপচয় না করে, সাজিয়ে ফেলছে ফটাফট জাহাজের খোলে, এখানে ওখানে। এমনকী স্বয়ং ক্যাপ্টেন জন কি-র ঘরখানাও ঠাসা ওই বাক্সে। বাক্স ভর্তি চা; ১৮৬৬ সালের মে মাসের সেরা চিন দেশীয় চা!
চিনই তখন একমাত্র দেশ যেখান থেকে সারা পৃথিবীর চায়ের যোগান যায়। আর এই জাহাজখানা, যার নাম এরিয়েল, এ হলো এই মরশুমের ‘হট ফেভারিট’। চারপাশের খবরে কান পাতলে মনে হচ্ছে এ বছরের চা-দৌড়ে এই এরিয়েল-ই জিতবে। ঝকঝকে নতুন জাহাজ। এ বছরেই তার প্রথম ভাগ নেওয়া সাগর দৌড়ে। সমস্ত জাহাজী মানুষের চোখে সে সেরা সুন্দরী। তার গঠন কাঠামো, মাস্তুল, পাল, মোটা মোটা দড়ি, ঝকমকে পেতলের কলকব্জা— সবই একেবারে যেমনটি হতে হয় সেরকম। বাতাসের সংস্পর্শে আসা মাত্র সেই রাজহংসী জাহাজ তরতর করে দৌড়ায় জলের ওপর দিয়ে। ক্যাপ্টেন জন কি-এর স্মৃতিচারণায় ধরা আছে তার সেই ছবি। সর্বমোট ছাব্বিশ হাজার স্কোয়ার ফুট সাদা ক্যানভাসের পাল, নাবিকদের সযত্ন হাতে পালিশ করা ঝকঝকে মাস্তুল, মোটা মোটা দীর্ঘ দড়ি সমুদ্রযাত্রার জন্যে তৈরি করে গুছিয়ে রাখা যথাস্থানে— সব কাজ এগোচ্ছে প্রবল গতিতে। ইউরোপীয় নাবিকদের চড়া গলার বাহারি ভাষার শব্দের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে চায়ের বাক্স গোছাতে ব্যস্ত চিনা শ্রমিকদের নিজেদের ভাষা আর পিডগিন ইংরেজি— সব মিলিয়ে সে এক হয় হৈ হৈ ব্যাপার! যার ফলশ্রুতি, বারো হাজারেরও বেশি চায়ের বাক্স জাহাজে তুলে গুছিয়ে রাখার কাজ শেষ হয়ে গেল মাত্র চারদিনে। বাক্সগুলোর মধ্যে বারো লক্ষ ত্রিশ হাজার ন’শো পাউন্ড চা! সে মরশুমের সেরা চা। টন প্রতি সাত পাউন্ডে সেই চা পেয়েছেন ক্যাপ্টেন কি সাহেব।
অবশ্য, প্রাচ্যের মিন নদীর তীরের এই প্যাগোডা নোঙ্গরখানায় সে বছরের সবচেয়ে সমাদৃত জাহাজ এরিয়েল ছাড়াও রয়েছে সমুদ্র দৌড়ে অংশীদার আরও বেশ কয়েকটি জাহাজ। প্যাগোডা নোঙ্গরখানাটা ঠিক ফুচাও বন্দরের নিচে, ফুচাও থেকে মিন নদী বেয়ে পূর্ব চিন সমুদ্রে যাবার পথে। ১৮৬৬ সালের সেই মে মাসে বাষ্পচালিত জাহাজ তখনও তৈরি নয় এই দৌড়ে ভাগ নিতে। তাই বিশাল বিশাল পালতোলা জাহাজগুলো সমুদ্র স্রোতের গতিপথ আর বাতাসের গতিপথের সমীকরণের ওপর ভর করে দৌড়োবে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। মিন নদী থেকে পূর্ব চিন ও দক্ষিণ চিন সমুদ্র পার হয়ে, ভারত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে, আফ্রিকার নিচের উত্তমাশা অন্তরীপ বা কেপ অফ গুড হোপের সুবিশাল ঢেউ, ঝড়, ঝঞ্ঝার উত্তাল আবহাওয়া পেরিয়ে, অতলান্তিক মহাসাগর বেয়ে, ইংলিশ চ্যানেল পার করে তারা পৌঁছাবে লন্ডন বন্দরে। অর্থাৎ এই পৃথিবীর প্রায় তিন চতুর্থাংশ পার করতে গিয়ে তারা আপ্রাণ চেষ্টা করবে এই সমুদ্র দৌড়ে প্রথম হবার, যাতে তাদের জাহাজের চা সবচেয়ে বেশি দাম পায় সেখানকার বাজারে আর তারা পুরস্কার হিসেবে পায় চায়ের দামের ওপর দশ শতাংশ মূল্যের পুরস্কার। কিন্তু, এই বিশাল সমুদ্র পথ দাঁতে দাঁত চেপে সবার আগে পার করবার চেষ্টার মধ্যে কি কেবল পুরস্কারের লোভই ছিল? যে পথে ছড়ানো অথৈ জলরাশি, উত্তাল-উদ্দাম ঝড়, সুবিশাল ঢেউয়ের ধাক্কা, এমনকী নিষ্ঠুর এবং ভয়াবহ জলদস্যু দলও! না বোধহয়। এ হয়তো ছিল এক মর্যাদার লড়াই, এক রকমের বাহাদুরি যার শেষে রুপোলি রেখার মতো উঁকি দিত অর্থ পুরস্কারের আশা।
সেই খেলায় ভাগিদার হবার জন্যে ১৮৬৬ সালের মে মাসের শেষে প্যাগোডা নোঙ্গরখানায় হাজির কয়েকটি ঝাঁ চকচকে জাহাজ। তারা শুধুমাত্র চা ভর্তি করে নিয়ে রওনা দেবে দূর সমুদ্রে। তাদের মধ্যে সব থেকে নতুন এরিয়েল, এডা আর চায়নাম্যান। তিনটিই তার আগের বছর, মানে ১৮৬৫ সালের তৈরি। তাছাড়াও আছে সমুদ্র দৌড়ে বিখ্যাত সব জাহাজ, যেমন – ফায়ারি ক্রস। বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে চার বার সেই জয়ী— ১৮৬১, ১৮৬২, ১৮৬৩ আর ১৮৬৫-এর চা দৌড়ে জয়ী অভিজ্ঞ জাহাজ। আছে ১৮৬৪ সালের বিজেতা সেরিকা, ছিপছিপে তাইপিং আর তাইসিং এবং আরও অনেকে। এই প্রতিটি জাহাজের দায়িত্বে একজন করে অত্যন্ত দক্ষ, বুদ্ধিমান, অভিজ্ঞ ক্যাপ্টেন যিনি সমুদ্র স্রোতের গতিপথ, হাওয়ার গতিপথ, এই বিশাল জলপথের সম্ভাব্য বিপদ এবং স্নায়ুর লড়াইতে পারদর্শী।
ক্যাপ্টেনদের প্রত্যেকের আগামী তিন-সাড়ে তিন মাস অর্থাৎ নিজেরদের জাহাজ শেষ বন্দরে পৌঁছানো অবধি, ডেকের ওপরেই কাটবে রাতদিন। কখন কোন মাস্তুলের কোন পাল কতটা তুলতে বা নামাতে হবে, খুলতে হবে বা গোটাতে হবে, কখন বাতাসের সবটুকু সুবিধা নেবার জন্যে জাহাজের দুপাশের দুটো লম্বা মাস্তুল আর তাদের গায়ের সাদা পাল খুলে দিতে হবে— তাতে তাকে দেখাবে যেন পাখা মেলা রাজহংসী— কখন আবার সেগুলো ঝটিতে গোটাতে হবে যাতে হাওয়ার ধাক্কায় জাহাজ তার ভারসাম্য না হারায়, কখন জাহাজের খোলের বা ডেকের ওপরে ভারি জিনিসগুলো নাবিকদের দিয়ে কতটা সরাতে হবে যাতে বাতাসের দাক্ষিণ্য নিতে গিয়ে কোনও বিপদ না ঘটে— ক্রমাগত এই সব সিদ্ধান্ত সঠিক ভাবে নিতে পারলে তবেই এবং কেবলমাত্র তবেই এই বিশাল দুর্গম পথ পেরিয়ে জাহাজভর্তি মরশুমি চা পাতা তার গুণমান অক্ষত রেখে পৌঁছাতে পারবে ব্রিটেনের বন্দরে।
চূড়ান্ত অনিশ্চয়তামাখা দুর্গম সমুদ্র দৌড়ের এই জাহাজগুলোর ওপর, অবধারিতভাবেই, বাজী ধরত প্রচুর মানুষ। বুকিদের ব্যস্ততার সীমা থাকত না। চায়ের বাজার এবং বাজী ধরিয়েদের বাজারের যৌথ চাপ এবং ইউরোপীয় চা কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে চিনের চা ব্যবসায়ীদের বোঝাপড়ার কারণে মরশুমের সেরা চা-পাতার বাক্সগুলো সর্বপ্রথম উঠতো সে মরশুমের ‘ফেভারিট’ জাহাজগুলোয়।
১৮৬৬ সালের মে মাসেও তাই হল। সবার আগে চা বাক্স তোলার কাজ শেষ হয়ে গেল এরিয়েল-এর। ক্যাপ্টেন জন কি সিদ্ধান্ত নিলেন এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে শুরু থেকেই দৌড়ে এগিয়ে থাকতে হবে। ২৮ মে, ১৮৬৬ বিকাল পাঁচটার সময় নোঙ্গর তুললো এরিয়েল। যেহেতু নদীতে বাতাস বা স্রোতের ওপর নির্ভর করতে গেলে মূল্যবান সময় নষ্ট হতে পারে, তাই প্রথা অনুযায়ী তাকে টেনে নিয়ে নদী বেয়ে সমুদ্রের দিকে চলল ‘আইল্যান্ড কুইন’ নামের এক প্যাডল স্টীমার। আর গণ্ডগোলটা হল যাত্রা শুরু হবার কিছুক্ষণের মধ্যেই। সঠিক স্রোত না থাকার কারণে মিন নদীর চর পার করতে পারল না এরিয়েল। ভাঁটার মধ্যে মালভর্তি এরিয়েলকে বার করে নিয়ে যাবার ক্ষমতা ‘আইল্যান্ড কুইনের’ ছিল না। অগত্যা সেদিন রাতের মতো সেখানেই দাঁড়িয়ে পরের জোয়ারের অপেক্ষা করতে হল।
সেই সন্ধেতেই, ফায়ারি ক্রস— এরিয়েলের ক্যাপ্টেন, নাবিক, সকলের চোখের সামনে দিয়ে তাদের পাশ কাটিয়ে পূর্ব চিন সমদ্রের দিকে এগিয়ে গেল। তার কপালে যে প্যাডল বোট জুটেছিল সে ছিল আইল্যান্ড কুইনের থেকে জোরালো। আর তার প্রায় বারো ঘন্টা পরে, পরের দিন সকালে যখন ক্যাপ্টেন কি আপ্রাণ চেষ্টা করছেন এরিয়েলকে সেই চর পার করাবার তখন আরও দুই প্রতিদ্বন্দ্বী— সেরিকা আর তাইপিং চলে গেল তার পাশ দিয়ে!
১৮৬৬-এর চা দৌড়
দীর্ঘ এই দৌড়ের বিভিন্ন সময়ের খবর ছড়ানো রয়েছে জাহাজগুলোর লগ-বুকে, বিভিন্ন বাতিঘরের পুরোনো হয়ে যাওয়া দলিলে। তাদের প্রত্যেকের প্রতিদিন-রাত্রির অবস্থান, গতি, চারপাশের আবহাওয়া ইত্যাদি নানান বিষয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং বিস্তারিত বিবরণ ধরে রাখা আছে এই সব কাগজপত্রে। যেমন, ২ জুন তাইপিং এবং এরিয়েল একে অপরকে দেখতে পাচ্ছে দূর সমুদ্রের বুকে। এক সপ্তাহ বাদে তারা আবার একে অপরের দেখা পেলো, তাইপিং সংকেত পাঠালো যে একদিন আগেই সে ফায়ারি ক্রসকে পেরিয়েছে। কিন্তু ফায়ারি ক্রস-এর ক্যাপ্টেন রবিনসন বিগত পাঁচ বছরের দৌড়ে চার বার বিজয়ী। তিনি থোড়াই সহজে হাল ছাড়বার পাত্র! আর তাই-ই, জাভা আর সুমাত্রার মাঝে এন্জের বাতিঘরের রেকর্ড বলছে সর্বপ্রথম, ১৮ জুন বেলা বারোটায়, সেই জায়গা পেরোলো ফায়ারি ক্রস। বিশে জুন সকাল সাতটায় পেরোলো এরিয়েল আর তার কিছুক্ষণ পরে বেলা একটায় পেরোলো তাইপিং। তারপর একে একে বাকিরা।
পুরো পথই চলতে লাগলো এই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, বিশাল সমুদ্রের বুকে তারা একে অপরকে দেখতে পাক বা না পাক!
আফ্রিকার নিচে উত্তমশা অন্তরীপ পৌঁছাতে পৌঁছাতে দেখা যাচ্ছে এরিয়েল মাত্র দু ঘন্টা পেছনে রয়েছে ফায়ারি ক্রস-এর থেকে। তারপর অতলান্তিক মহাসমুদ্রে ঢুকে এই সবক’টা জাহাজই, নিজেদের অজান্তে, দ্রুত একে অপরের খুব কাছাকাছি চলে আসতে লাগলো। আগস্টের নয় থেকে সতেরো তারিখ একটানা টালমাটাল ঝোড়ো আবহাওয়ার মধ্যে তাইপিং আর ফায়ারি ক্রস একে অপরকে দূর থেকে দেখতে পাচ্ছিলো ক্রমাগত। এরিয়েল তখন, অনেকটা পশ্চিমে, ভালো আবহাওয়ায় পালে সঠিক বাতাস পেয়ে সবার থেকে এগিয়ে যাচ্ছে তরতর করে।
যার ফলে ইংলিশ চ্যানেলে সবার আগে ঢুকলো এরিয়েল! তার খানিকটা পেছনেই তাইপিং। ফায়ারি ক্রস বেচারা, পালে সঠিক হাওয়া না পাবার কারণে, বেশ খানিকটা পেছনে। ইংলিশ চ্যানেলে ঢুকে পশ্চিমা বাতাসে সবক’টা বিশাল পাল তিনদিকে উড়িয়ে তরতর করে উড়তে লাগলো এরিয়েল, ঠিক পেছনেই একই ভঙ্গিতে তাড়া করে আসছে তাইপিং। আরও পেছনে সেরিকা আর ফায়ারি ক্রস।
এরিয়েল, ঠিক পেছনেই একই ভঙ্গিতে তাড়া করে আসছে তাইপিং
জাহাজের নাবিক, ক্যাপ্টেন সবার মধ্যে তখন চূড়ান্ত উত্তেজনা! এই দীর্ঘ দৌড়ের ফলাফল কী, বিজেতা কে, তা ঠিক হতে চলেছে শিগগিরই। ওদিকে বুকিদের ব্যস্ততার কথাটাও একবার ভাবুন! প্রতিটা বাতিঘর থেকে ক্রমাগত খবর আসছে কাছের ডাকঘরে। সেইখান থেকে আগুনের মতো ছড়াচ্ছে সেই খবর। প্রচুর, প্রচুর পাউন্ডের বাজির খেলা চলছে জাহাজগুলোকে ঘিরে। জাহাজের মালিকদের, তাদের কর্মচারী আর এজেন্টদের শিরদাঁড়া উত্তেজনায় খাড়া।
আর এর মধ্যে দিয়েই, ৫ সেপ্টেম্বর ডানজেনেস সবার আগে পৌঁছে এরিয়েল, তখনকার নিয়মানুযায়ী, সর্বপ্রথম নীল আলোর রকেট জ্বেলে সংকেত পাঠালো জাহাজ টেমস নদীতে নিয়ে যাবার জন্যে পাইলট পাঠাতে। তার কিছুক্ষণ পরেই একই সংকেত পাঠালো তাইপিং।
পরের দিন, অর্থাৎ ৬ সেপ্টেম্বর, ১৮৬৬ (অর্থাৎ যাত্রা শুরুর নিরানব্বই দিনের মাথায়) কেন্ট উপকূলের ডাউন্স বাতিঘরের কাগজ বলছে – এরিয়েল পৌঁছলো সকাল আটটায়। তার দশ মিনিটের মাথায় সকাল আটটা দশে তাইপিং, বেলা বারোটায় সেরিকা।
এবং এখন থেকেই শুরু এই দৌড় ঘিরে বিতর্কের। কারণ? জাহাজগুলোর পাল তুলে নিজস্ব দৌড় এখানেই শেষ। কেন্টের এই ডাউন্স থেকে লন্ডন বন্দরের ডকে জাহাজগুলোকে টেনে ঢোকাতো একেকটা টাগ। অর্থাৎ জাহাজের ক্যাপ্টেন আর নাবিকদের তখন আর জাহাজের চলন নিয়ে কিছু করবার নেই, ডকে ঢোকার অপেক্ষা করা ছাড়া। জাহাগুলোর আসল দৌড় তাই এখানেই শেষ এবং সেই অর্থে এই দৌড়ে প্রথম জাহাজ সে বছর এরিয়েল।
কিন্তু দৌড় তো আক্ষরিক অর্থে শেষ হবে এক বন্দরের ডক থেকে আরেক বন্দরের ডকে পৌঁছলে তবেই। এবং ঠিক এই বিন্দুতে এসে বেচারা এরিয়েল আরও একবার ভাগ্যের সহায়তা থেকে বঞ্চিত হলো। সেই ৬ সেপ্টেম্বর, ১৮৬৬, এরিয়েলের টাগ যখন তাকে তার সামগ্রী নাবানোর জন্যে নির্ধারিত লন্ডন ডকে ঢোকালো, তাইপিংকে তার পঁচিশ মিনিট আগেই টাগ পৌঁছে দিয়েছে তার জন্যে নির্ধারিত গ্রেভস এন্ড ডকে।
এবং মজাটা হলো, ইংলিশ চ্যানেল জুড়ে এই দুই জাহাজের তুমুল হাড্ডাহাড্ডি দৌড় আর তাই নিয়ে শহরবাসীর চূড়ান্ত উন্মাদনা ইত্যাদি মিলিয়ে যে চিত্র, তাতে করে এই দুই জাহাজের মালিকেরা অযথা স্নায়ুর যুদ্ধের মধ্যে না থেকে ইতিমধ্যেই নিজেদের ভেতর চুক্তি করে নিয়েছেন যে বিজেতা যেই হোক না কেন, পুরস্কারের অর্থমূল্য দুজনের মধ্যে ভাগাভাগি হবে। ওদিকে জাহাজের নাবিক আর ক্যাপ্টেনদের কাছে এই সিদ্ধান্তের কোনও খবর নেই। তাদের তাই আবেগ, উন্মাদনা সবই তখনও কেন্দ্রীভূত – কে আগে ডকে ঢুকতে পারবে তার ওপর।
আর এইভাবেই শেষ হলো ১৮৬৬ সালের সেই প্রবল উন্মাদনা ভরা সাগর দৌড় বা টি রেস। ব্রিটেনের জাহাজী জগতে চিরকালের মতো একটা বিতর্ক বা প্রশ্নচিহ্ন ঝুলিয়ে রেখে। ১৮৬৬ সালের পর আর কখনও মরশুমের প্রথম চা নিয়ে সর্বপ্রথম পৌঁছানোর অর্থ-পুরস্কার দেওয়া হয়নি। এর কিছুদিনের মধ্যেই, ১৮৭২ সালে খুলে গেলো সুয়েজ ক্যানেল, যা এই দীর্ঘ যাত্রাপথকে অনেকটাই ছোট করে দিলো। শুধু তাই নয়, বাষ্পচালিত জাহাজ আস্তে আস্তে দখল নিলো সমুদ্র বাণিজ্যের। পালতোলা জাহাজেরা জায়গা ছেড়ে দিতে শুরু করলো তাদের।
প্রথম পর্বের লিঙ্ক: https://www.itihasadda.in/tea-race-on-the-ocean/
তথ্যসূত্র:
১. https://archive.org/details/AllAboutTeaV1/page/97/mode/2up2.
২. https://www.smithsonianmag.com/history/the-great-tea-race-of-1866-8209465/
৩. https://blog.nationalarchives.gov.uk/the-great-tea-race-of-1866/4.
৪. https://en.wikipedia.org/wiki/Great_Tea_Race_of_1866
৫. https://shippingwondersoftheworld.com/ariel.html
Visited each of these pages last on 10.03.2024
অসাধারণ, অনবদ্য এবং তথ্যনির্ভর এক টানটান ধারাবিবরণী। দারুন ……..
টি রেসের টানটান উত্তেজনা …দারুণ উপভোগ করলাম।
দারুণ লাগলো।
দারুণ হচ্ঋে। টানটান উত্তেজনা বেশ বুঝতে পারছি। 🙂
দারুণ হচ্ছে। টানটান উত্তেজনা বেশ বুঝতে পারছি। 🙂
তথ্যসমৃদ্ধ অনবদ্য এ লেখা।এক নিঃশ্বাসে পড়তে পড়তে কখন যেন নিজেও বাজী ধরে “এরিয়েল” জাহাজ টায় উঠে পড়েছিলাম।
সুন্দর টান টান লেখা । পড়তে পড়তে কখন যেন এরিযেলের ক্যাপ্টেন কি সাহেবের সঙ্গে একাত্ম হয়ে চা দৌড়ের প্রতিযোগীতায় নেমে পড়েছিলাম । খুব ভালো লাগলো ।
উফ্ টানটান উত্তেজনার মধ্যে ২য় পর্বটি শেষ করলাম… মনে হচ্ছিল আমিও যেন ঐ এরিয়েল জাহাজের এক যাত্রী
অসাধারণ লিখেছিস একই সঙ্গে ঐতিহাসিক তথ্য আর চা দৌড়ের টানটান উত্তেজনার মধ্যে সময় থেমে গিয়েছিল ।
আরও অনেক অনেক এইরকম অসাধারণ লেখার আশায় রইলাম 🥰🥰🥰🥰❤️❤️❤️❤️
তথ্যসমৃদ্ধ স্বাদু পরিবেশন।নাটকীয় টানটান উত্তেজনার আঁচে চায়ের জল গরম হলো।
খুব ভাল ।