সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

এক বিষ – তিন কন্যা : ত্রাতা অথবা সিরিয়াল কিলার তিন প্রজন্মের কাহিনী

এক বিষ – তিন কন্যা : ত্রাতা অথবা সিরিয়াল কিলার তিন প্রজন্মের কাহিনী

সুচেতনা মুখোপাধ্যায়

জানুয়ারি ২৮, ২০২৩ ৪৪৭ 0

কেউ বলে সে নাকি ছিল এক ঠোঁট আর মুখের দারুণ প্রসাধনী। কেউ বলে বা সে ব্যথাহরণ মলম। কখনো সে সাদা পাউডার বা কখনো বা রঙ, স্বাদ, গন্ধহীন তরল। ঠিক ধুলোর মত মিহি বা ঠিক জলের মতো টলটলে এই প্রসাধনী নিজের ঘরে তৈরি করে ১৬৩০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ সিসিলির রাজধানী পালেরমো শহরে বিক্কিরি করতেন জনৈকা তোফানিয়া ডি’আডেমো। স্বচ্ছ কাঁচের ছোট্ট এক শিশিতে ভরে চড়া দামে তা কিনে নিয়ে যেত ধনী অভিজাত ঘরের বিবাহিত মেয়ে-বউ। ঘরে তাঁদের জীবন কবে থেকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে স্বেচ্ছাচারী স্বামীরা বা কখনো সখনো নজরদার বাবা-দাদারা। সিসিলির ঘরে ঘরে, রান্নাঘর হোক বা স্নানঘর, যাবতীয় শিশিবোতলের পেছনে সযতনে সেই অত্যাচারিত মেয়েরা নাকি লুকিয়ে রাখতো এই তরল। আর সুযোগ বুঝে একদিন সবার অলক্ষ্যে এই তরলের ৫-৬ ফোঁটা বা পাউডারের ১চিমটে সেই মেয়ে-বউরা ঢেলে দিতো স্বামীর চা, স্যুপ বা ওয়াইনে…।

প্রথম ৫ ফোঁটায় দজ্জাল স্বামীটি কিছু ক্লান্তি, কিছু সর্দিজ্বর মতো বোধ করতেন দিন দুয়েক। পানীয়তে তরল মিশিয়ে দেওয়া বউটি একমনে সেবা করে চলতো তাকে। স্বামীটি একটু সামলে নিতে নিতেই তার গ্লাসে বা বাটিতে মেশানো হতো আরো ৫ ফোঁটা তরল। এবারের শারীরিক প্রতিক্রিয়া বহুগুণ বেশি! গলা-বুক-পেটে তীব্র জ্বালাযন্ত্রণা, জ্বর আর বমিতে শয্যাশায়ী গৃহকর্তাকে দেখে যাওয়ার জন্য একাধিক ডাক্তার ডাকতো স্ত্রীটি। ডাক্তারের পরীক্ষা নিরীক্ষায় ধরা পড়ত না অস্বাভাবিক কোন কিছুই। প্রচুর ওষুধ খাওয়া সত্ত্বেও অসুস্থতা বাড়তে থাকলে একসময় স্বামী বুঝতে পারতেন, কোন অজ্ঞাত অসুখে তাঁর শেষ সময় সমাগত প্রায়। নাওয়া-খাওয়া ভুলে সেবা করে চলা তাঁর চিরকালের অবহেলার স্ত্রীকে কাছে ডেকে বুঝিয়ে দিতেন ব্যবসা-সম্পত্তি-জমিজিরেত সহ মালিকানার যাবতীয় হিসেব।

এবার একদা দোর্দন্ডপ্রতাপ নিজের স্বামী আজীবনের অত্যাচার-অবহেলা আর প্রতারণার শেষ হিসেব বুঝে নেওয়ার সময় আসতো প্রতিশোধকামী স্ত্রীর। শেষবার পানীয়তে ঢালা বিষতরলের কয়েক ফোঁটা রোগীর বমি-ডায়রিয়া-ডিহাইড্রেশন আর পেটজ্বালাকে পৌঁছে দিত প্রায় অচেতন ডিলেরিয়াম অবস্থায়। সমস্ত চিকিৎসা ব্যর্থ করে ক’দিনের মধ্যেই মৃত্যু হতো লোকটির। পরিবারের কেউ এই হঠাৎ মৃত্যুকে সন্দেহ করে স্ত্রীটির দিকে আঙুল তুললে, শোকস্তব্ধ স্ত্রী কেঁদেকেটে নিজেই শহর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতো মৃত স্বামীর পোস্টমর্টেমের জন্যে। জীবিত অবস্থায় ডাক্তারি পরীক্ষা হোক বা মৃত্যুর পরের পোস্ট মর্টেম; মৃতের দেহে কোন অবস্থাতেই কোন অস্বাভাবিকতা পাওয়া যাবেনা, একথা মোটা টাকার বিনিময়ে তাঁর হাতে বিষ তুলে দেওয়ার আগেই যে নিশ্চিত করে দিয়েছেন তোফানিয়া ডি’আডেমো!

বড়জোর বছর এক-দুই! স্বামীর যাবতীয় সম্পত্তি ভোগ করে চলা স্বাধীন ধনবতী যুবতী বিধবাটি আবার নতুন সম্পর্কে জড়িয়েছে। এখন সে আর বছর কয়েক আগেকার ১৩-১৪ বছরের নরমসরম সদ্য কিশোরী বউটি নয়, যাকে বছরের পর বছর মুখ বুজে সয়ে যেতে হতো তাঁর প্রৌঢ় স্বামীর চাপিয়ে দেওয়া সমস্ত রকম অত্যাচার। বিবাহবিচ্ছেদের সুযোগ তো তার ছিলই না, এমনকি স্বামীর নাগাড়ে চালানো শারীরিক-মানসিক নির্যাতন আর লাম্পট্যের বিরুদ্ধে প্রশাসনে কোন অভিযোগ জানানোর অধিকার টুকুও তাকে দেয়নি সেকালের পুরুষতান্ত্রিক ধর্ম, সমাজ আর আইন। বাপের বাড়ি ফিরে যাওয়ার পথটুকুও খোলা থাকেনি তার জন্য। মুক্তিসম্ভাবনাহীন দাসবৎ এক বিবাহিত জীবনে কোন মেয়ে তখন বেশ ক’টি বাচ্চার মা, কেউ আবার সন্তানহীন। কতজন যাতনা সইতে না পেরে ততদিনে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে, বাকিরা আবার সোজা বা বাঁকা, যে পথেই হোক বিয়ে থেকে বেরোনোর পথ খুঁজছে হন্যে হয়ে। এরকমই এক সময়ে কোন পার্টি বা চার্চের উৎসবে হঠাৎ করেই তাঁদের আলাপ হতো সেই সব জায়গায় ঘুরতে থাকা তোফানিয়ার ডি’আডেমোর এজেন্টদের সঙ্গে।

আলাপ ঘনিষ্ঠ হতে সময় লাগতো না। মহিলাদের এক ঢিলে দুই পাখি মারার পথ দেখাতেন তোফানিয়ার বেতনভুক এজেন্টরাই। যাতনার বিয়ে থেকে মুক্তি আর স্বামীকে খুন করে তার সম্পত্তি হাতিয়ে নতুন করে স্বাধীন জীবন শুরু করার আশা নিয়ে অল্পদিনেই খোদ তোফানিয়ার কাছে হাজির হতেন পালেরমো শহরের অসহায় বিবাহিত মেয়েরা। তোফানিয়ার তৈরি বিষ যেমনি তীব্র, তেমনিই মোক্ষম। দিন দশেকের স্লো পয়জনিংয়ের ক’টা উদ্বেগময় দিন আর কখনো সখনো পোস্ট মর্টেমের উটকো ঝামেলা পার করে দিতে পারলেই কেল্লাফতে! দ্বিতীয় বা কপালে থাকলে তৃতীয়বারও বুঝেশুনে বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করে এখনকার পোড় খাওয়া খুনি যুবতীটি। প্রচুর নিজস্ব সম্পত্তি আর ধনবান আরেক স্বামী। তাদের সামনে এখন শুধুই আনন্দের ভবিষ্যৎ! 

আর্সেনিক গুঁড়ো করে তার সঙ্গে সীসা আর বেলেডোনা মিশিয়ে তোফানিয়া ডি’আডেমো তৈরি করতেন এক স্বাদ-গন্ধ-বর্ণহীন বিষ। চাহিদা মতো যা পাউডার বা তরল হিসেবে বানিয়ে দেওয়া হতো। চোখে পড়ার মতো এক ধাক্কায় নয়, বরং স্লো পয়জনিংয়ের মাধ্যমে শিকারকে খুন করতে এই বিষের জুড়ি ছিল না সেকালের ইউরোপে। যেকোন খাদ্য-পানীয়ে মিশিয়ে দেওয়ার সুবিধা, চোখে পড়ার মতো তৎক্ষণাৎ কোন বিকট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়ে মৃত্যু না হওয়া আর মৃতের দেহে বিষক্রিয়ার সামান্যতম কোন চিহ্ন না রয়ে যাওয়ার ত্রিফলা সুবিধাই এই বিষের প্রয়োগকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল ১৬ শতকের সিসিলি থেকে শুরু করে ১৮ শতকের গোটা ইউরোপের মহিলাদের মধ্যে।

পাঠক জানেন, সেকালের ইউরোপ জুড়ে রমরমা ছিল জ্যোতিষী, অ্যালকেমিস্ট আর ‘টোটকা’ ওষুধ বানিয়েদের। বিভিন্ন রাসায়নিকের সঙ্গে নানান ধাতু, খনিজ আর বাঁকাটেঁরা আজব সব প্ৰাকৃতিক উপাদান মিলিয়ে মিশিয়ে তাঁরা তাঁদের নিরীক্ষাগারে যেসব ‘চমৎকারী’ ওষুধপত্র-এমনকি বিষও তৈরি করতেন, দেশের রাজারানী থেকে আমজনতা – সকলের কাছেই সেসবের ছিল তুমুল জনপ্রিয়তা। রোগবালাই সারানো, ঝাড়ফুঁক, বশীকরণ, কালাজাদু থেকে খুন অবধি সমস্ত সু আর কু-কাজেই কাজে লাগতো এসব। তাই এগুলি বিক্রিও হতো চড়া দামে। মনে করা হয়, এমন কোন আলকেমিস্টের কাছ থেকেই তোফানিয়া ডি’আডেমো এই বিদ্যা আয়ত্ত করেছিলেন। তবে তোফানিয়ার কন্যা জুলিয়া তোফানার নাম অনুসারে যে বিষটি অ্যাকোয়া তোফানা নামে পরিচিত হয়, তা এখন স্পষ্টভাবে প্রমাণিত।

প্রাণহরণে অব্যর্থ অ্যাকোয়া তোফানার জনপ্রিয়তার ফলে এর উপাদানগুলো নিয়েও বাজারে ছিল নানা মিথ। চলতি ধারণা ছিল মূল উপাদান আর্সেনিক, সীসা আর বেলেডোনা ছাড়াও অ্যাকোয়া তোফানার মধ্যে মেশানো হয় টোডফ্ল্যাক্স আর স্ন্যাপড্রাগন ফুল, স্প্যানিশ ফ্লাই নামের পোকা, পেনিয়র্ট গাছের রস, এমনকি উন্মাদব্যক্তির লালা অবধি নানান উদ্ভট উপাদান।

লম্বা দু’শতক ধরে বিষদায়িনী তিনকন্যার নানান কীর্তিকলাপের কথা ইউরোপের আমআদমির মুখে- মিথে-গুজবে-গুঞ্জনে প্রবলভাবে ঘুরে ফিরে বেড়ালেও তাঁদের সঙ্গে প্রথম বাস্তবনিষ্ঠভাবে আমাদের পরিচয় করান, উনিশ শতকের দুই ইতালিয় গবেষক আলেসান্দ্রো আদেমোলো (‘ল্য মিস্ট্রি ডেল অ্যাকোয়া তোফানা’) আর সালভাতোর সালোমেন মারিনো (‘ল্য অ্যাকোয়া তোফানা’) ১৫-১৬ শতকের সিসিলি, নেপলস আর রোমের অপরাধজগৎ, অপরাধীদের বিচার তথা শাস্তিপ্রক্রিয়া সংক্রান্ত বিস্তর কাগজপত্র ঘেঁটে প্রমাণ করেন, ১৬ শতকীয় সিসিলিতে তোফানিয়া ডি’আডেমো আর ১৭ শতকের রোমে জুলিয়া তোফানা এবং জিরোনিমা স্পানার জোরালো অস্তিত্বকে।

সালোমেন মারিনোর খোঁজ আর ইতালীয় উদ্ভিদবিদ পাওলো বোকনের স্মৃতিকথা জানায়, ১৬৩২-এ গ্রেফতার হওয়া তোফানিয়া ডি’আডেমো নামের এক মাঝবয়সী মহিলা খুনিকে স্বাদগন্ধহীন এক তরল বিষ বিক্রির অপরাধে ১৬৩৩-এর ১২ জুলাই দিনের বেলা পালেরমো শহরের স্প্যানিশ ভাইসরয়, ফার্দিনান্দ আফান ডি রিবেরা’র প্রাসাদের ছাদ থেকে বস্তায় ভরে নীচে বড়রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে জনসমক্ষে হত্যা করা হয়েছিল। ডি’আডেমোর সহযোগী ফ্রান্সেসকা ল্য সার্দাকেও মৃত্যুদণ্ডই দেওয়া হয়েছিল, যদিও তা কার্যকর করা হয়েছিল জেলের ভিতর।

তোফানিয়ার ভয়ডরহীন চরিত্র, খুনের মতো অপরাধকে নীতিগতভাবে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা আর আক্ষেপের বদলে তাঁকে নিশ্চিতভাবে সেযুগের গোঁড়া পুরুষতান্ত্রিক ক্যাথলিক সমাজে এক বিপজ্জনক অস্তিত্ব বানিয়ে তুলেছিল। সাধারণ এক মহিলা হয়ে বিয়ের মত ধার্মিক প্রতিষ্ঠানকে সোজাসুজি প্রতিস্পর্ধা জানিয়ে এরকম বড়সড় হত্যাচক্র চালানোর বেপরোয়া দুঃসাহসকে ১৬ শতকের সিসিলি যে হজম করতে পারেনি, স্বয়ং শহর-প্রশাসকের উদ্যোগে তোফানিয়ার ভয়ানক হত্যাপদ্ধতি সেই সত্যকেই নির্দেশ করে নিশ্চিতভাবে। তাছাড়াও এই নিষ্ঠুরতা জনতাকে ভবিষ্যতে এরকম অপরাধ করা থেকে বিরত রাখার জন্য শাসকপক্ষ কর্তৃক প্রচ্ছন্ন হুমকি ছিল বলেই ধরা যায়।

তোফানিয়ার জবানিতে কোন বক্তব্য না পাওয়া গেলেও সার্দার বিচারকালীন জবানবন্দিতে জানা যায়, নিপীড়নের বিয়েতে বন্দি স্বামী কর্তৃক নির্যাতিতা স্ত্রীদের হাতে খুনি বিষ তুলে দিতে দ্বিধা তো করতেনই না তোফানিয়া বরং তিনি মনে করতেন সমাজ আর ধর্ম সোজা পথ না দিলে এমন ঘুরপথেই নিজেদের জন্য মুক্তি বয়ে আনা উচিত মেয়েদের। দাপুটে তোফানিয়ার এই ব্যতিক্রমী চরিত্রই প্রবাহিত হয়েছিল তাঁর মেয়ে জুলিয়ার মধ্যেও। জুলিয়ার সৎকন্যা জিরোনিমা অবশ্য শেষমেশ একখান স্বীকারোক্তিপত্রে সই করলেও আমৃত্যু তাঁর মনোভাব ছিল এমনই। গবেষকদের মতে, অপরাধের পথে হলেও যেহেতু অজস্র বিবাহিত মেয়েকে পরিবারের অত্যাচারী পুরুষটির কবল থেকে গোটা জীবনের মতো মুক্ত করতেন, তাই তাঁরা নিজেদের খুনি নয়, বরং দুঃখী মেয়েদের ত্রাতা বলে মনে করতেন। আর সেজন্যেই শেষ পর্যন্ত অনুশোচনাহীন রয়ে গেছিলেন তোফানিয়া-জুলিয়া-জিরোনিমা।

যাইহোক, তোফানিয়া ডি’আডেমোর শাস্তির কয়েকবছর পর পর্যন্ত সিসিলিতে বিষক্রিয়ায় লাগাতার মৃত্যুর ঘটনা প্রায় শোনাই যায়নি। কিন্তু ১৬৪৩-৪৫ নাগাদ পড়শি নেপলস শহরে আবার অল্প সময়ের ব্যবধানে একের পর এক ধনবান অভিজাত পুরুষের রহস্যজনক মৃত্যু ঘটতে থাকে। তবে সে বড় কোন পুলিশি ধরপাকড় হওয়ার আগেই বন্ধ হয়ে গেছিল তা। তারও ১০ বছর সবচেয়ে রোমেও শুরু হয় একইরকম ক্রমহত্যার ঘটনাক্রম। আর এর ঠিক বছর দুয়েক আগে থেকে অভিজাত সমাজের নানা ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণায় আমরা ঘোরাফেরা করতে দেখি জুলিয়া তোফানা নামের এক প্রভাবশালী জ্যোতিষীর নাম।

সিসিলিয়ান সংস্কৃতির পণ্ডিত আদেমোলো আর মারিনোর গবেষণা আলাদা সময়ের হলেও দুজনেই জানাচ্ছেন, এই জুলিয়া তোফানা আসলে ছিলেন তোফানিয়া ডি’আডেমোরই কন্যা। আসলে সেকালের সিসিলিয়ান রীতি অনুসারে মায়ের খৃষ্টান নামটি কিছু ব্যতিক্রমী হলে, সন্তানরা সেটিকে নিজেদের পদবি হিসেবে ব্যবহার করতেন। ঠিক এই কারণেই সিসিলির পালেরমো থেকে দক্ষিণের নেপলস, নেপলস থেকে রাজধানী রোম; নানা জায়গায় জ্যোতিষীর ছদ্মবেশে নিজের বিষ-ব্যবসা চালানোর সময় মা তোফানিয়া ডি আডেমোর নামকে তোফানা পদবিতে বদলে ব্যবহার করছিলেন তাঁর মেয়ে জুলিয়া।

মাঝ ১৬ শতকীয় রোমের কোর্টকাজের রেকর্ড আর অন্যতম সাক্ষী জিয়াসিনো গিগলি’র ব্যক্তিগত ডাইরির লেখাপত্তর উল্লেখ করে দুই গবেষক জানিয়েছেন, নেপলসে একটি খুনের ঘটনায় ধরা পড়ে যাওয়ার কিঞ্চিৎ আগে সপরিবারে পালিয়ে যান জুলিয়া তোফানা। ১৬৪০-এর দশকের শেষ দিকে পোপের রাজ্যের রাজধানী, সম্পদের শহর রোমের অভিজাত সমাজে আবার দেখা যায় তাঁকে। কয়েকবছর গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর রোমে এসে আবার জ্যোতিষশাস্ত্রের আড়ালে মানুষ খুনের ব্যবসা খুলে বসেন তিনি। তাঁর সঙ্গে সবসময় থাকতেন জিরোনিমা স্পানা (মতভেদে জিরোলামা স্পারা) নামের এক সদ্য তরুণীও। কি ছিল এই জিরোলামার আসল পরিচয়? আসলে সিসিলির যে ধনাঢ্য অভিজাত নিকোলো স্পানোর দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন জুলিয়া তোফানা, জিরোনিমা ছিলেন তাঁরই প্রথম স্ত্রীর কন্যা। অর্থাৎ জুলিয়া ছিলেন জিরোলামার সৎমা। সে যুগের প্রথা মত মাত্র ১৪বছর বয়সে জিরোনিমার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল এক লম্পট জুয়াড়ি অভিজাতর সঙ্গে।

সিসিলি হোক, নেপলস বা রোমপর্ব; জীবনের সমস্ত ওঠাপড়ায় একে অপরকে পাশে পেয়েছিলেন জুলিয়া আর জিরোলামা। নেপলস থেকে রোমে পালিয়ে আসার পর শুরুর কিছুদিন বিয়ের ঘটকালি আর জ্যোতিষীগিরি করে সৎপথে চলতে চেষ্টা করলেও নিজেদের জুয়াড়ি স্বামীদের নানান কুকীর্তির ফলে প্রবল আর্থিক সমস্যায় পড়েন এই দুজন। গরিবি সওয়া বা খেটে খাওয়া ধাতে ছিল না মা মেয়ে কারোরই। সঙ্গে জুড়েছিল চরিত্রের স্বাভাবিক অপরাধপ্রবণতাও। তাই জুলিয়া আর জিরোনিমা দ্রুত ফিরে গেলেন একোয়া তোফানা বিক্রির পেশাতেই।

দামী পোশাক-আসাক পরে অভিজাতদের পার্টিতে গিয়ে মহিলাদের ‘হাত গুনে’ ভবিষ্যৎ বলে দিয়ে বন্ধুত্ব পাতাতেন এঁরা। অল্পদিনের মধ্যে জুলিয়া-জিরোনিমার ‘সহৃদয় আচরণে’ সে বন্ধুত্ব এতটাই গভীর হতো যে অভিজাত মহিলারা যেমন জুড়িগাড়ি পাঠিয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে যেতেন তাঁদের, ঠিক তেমন করেই দুজনের কাছে হাট করে বলেও দিতেন ঘর-সংসারের সব দুঃখের কথা। যে দুঃখের কেন্দ্রে প্রায় সবসময়েই থাকতো মহিলাদের মুক্তিসম্ভাবনাহীন হতাশ বিবাহিত জীবন। হতাশার এই গর্তেই জুলিয়া-জিরোনিমাও বিষ বিক্রির টোপ ফেলতেন। এক সন্তুষ্ট ক্রেতার সূত্রে আরেক ক্রেতা, তারপর আরেক-আরো-আরো। চড়া দামে তোফানিয়া ডি আডেমো’র মস্তিষ্ক প্রসূত অ্যাকোয়া তোফানা বিষ বিকোত তাঁর মেয়ে জুলিয়ার দুই খুনি হাত দিয়ে।

জুলিয়ার দলে ছিলেন জিওভানা ডি গ্র্যান্ডিস এবং মারিয়া স্পিনোলা নামের দুই বিশ্বস্ত মহিলা, যাঁরা একোয়া তোফানা যেকোন বিষ তৈরিতেই তুখোড় দক্ষ ছিলেন, ছিলেন শহরতলিতে ও লাগোয়া গ্রামাঞ্চলে বিষ বিক্রির জন্য লরা ক্রিসপোল্টি আর গ্রাজিওসা ফারিনা নামের দুজন মহিলা এজেন্ট, ধর্মীয় চাপ সামলানোর জন্য শহরের মাঝখানে তৈরি আগনের নতুন গির্জার দুর্নীতিবাজ যাজক ফাদার জিরোলামো। আর বিষ যোগানের জন্য মোটা টাকার লোভে ফাদারের কেমিস্ট ছোটভাইও তাঁর বিষচক্রের কাজে জুটে গিয়েছিলেন।

রোম যেহেতু পোপের কারণে ধার্মিক ক্যাথলিকদের এক বড় কেন্দ্র ছিল, তাই এখানে সহজে একোয়া তোফানা বিক্রির জন্য জুলিয়া নিয়েছিলেন এক একদম অভিনব কৌশল। সেকালে বারি এলাকায় অবস্থিত সেন্ট নিকোলাসের সমাধি থেকে নিঃসৃত একরকমের অলৌকিক তেল সর্বরোগ-সর্ববেদনাহর হিসেবে জনপ্রিয় ছিল খুবই (সেকালের মানুষ বিশ্বাস করতেন ওই তেল নাকি সেন্ট নিকোলাসের সমাধিস্থ দেহের হাড় নিঃসৃত অলৌকিক তরল)। এই তেল ছোট ছোট সুদৃশ্য কাঁচের শিশিতে ভরে ‘মান্না ডি সেন্ট নিকোলাস’ নাম দিয়ে দেশজুড়ে যোগান দিতেন ও বিক্কিরি করতেন বারির দোকানদারেরা। ধুরন্ধর জুলিয়া জানতেন ধর্মের লেবেল লাগানো থাকলে রোম প্রশাসন কখনোই এই শিশিকে সন্দেহ করবে না তাই তিনি ‘মান্না’ বিক্রির ওই শিশি কিনে এনে তার মধ্যে অ্যাকোয়া তোফানা ঢেলে বিক্রি করতেন। নিজে বহিরাগত হলেও তাঁর দুই এজেন্ট ও ফাদার ছিলেন রোমের ভূমিপুত্র, যাঁদের সামাজিক যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে জুলিয়া ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলেছিলেন তাঁর রোমের ব্যবসাকে।

জুলিয়া তোফানার মত চরিত্রদের পরিণতি নিয়ে সমকাল হোক বা উত্তরকাল, নানান পরস্পরবিরোধী তত্ত্ব আর গল্পকথা ছড়িয়ে থাকাটাই স্বাভাবিক। আদেমোলো আর মারিনোর গবেষণা মতে তাই জুলিয়া তোফানার মৃত্যু ঘুমের মধ্যে ১৬৫১ সালে তাঁর বিছানাতে হলেও, অন্যান্য জনশ্রুতি নির্ভর সাক্ষ্য কিন্তু অন্য কথা বলছে।  ১৬৫০ নাগাদ রোমের পুলিশ বিভাগ শহরে চলতে থাকা বিষপ্রয়োগ জনিত মৃত্যুগুলোর তদন্ত শুরু করলে, শহরের একটি কনভেন্টে আশ্রয় নেন জুলিয়া। সেখান থেকেই শহরের কিছু অভিজাত মহিলা, কনভেন্টের দুর্নীতিগ্রস্ত নান, গির্জার যাজক আর নিজের পুরোনো সহযোগীদের নিয়ে তাঁর কারবার বেশ ক’বছর চালিয়েছিলেন তিনি। কথিত আছে, ১৬৫১-র ১৭ জানুয়ারিতে তাঁকে গ্রেফতার করে, রোম প্রশাসন জনসমক্ষে তাঁকে নিষ্ঠুরভাবে ফাঁসি দেয় আর রাতে তাঁর মৃতদেহটি ছুঁড়ে ফেলে দেয়, সেই কনভেন্টের আঙিনায়। আজ জুলিয়া তোফানার দেহাবশেষ রোমের সান্তা ডোরেশিয়া’র গির্জায় রাখা রয়েছে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, জুলিয়ার মৃত্যুর পর বছর দুয়েক চুপচাপ থাকার পর তাঁর ঘনিষ্ঠতম সঙ্গী জিরোনিমা স্পানা বিপুল আয়ের লোভে আবার মায়ের পুরোনো সঙ্গীদের নিয়ে অ্যাকোয়া তোফানা বিক্রির ব্যবসা আবার শুরু করেন। জুলিয়ার জীবদ্দশায় জিরোনিমা মূলত গাছগাছড়া থেকে তৈরি ওষুধ বিক্রি আর বিয়ের ঘটকালি করে আয় করলেও মায়ের থেকে অ্যাকোয়া তোফানা তৈরি আর বিক্রির পদ্ধতিগুলো শিখেছিলেন ভালোভাবেই। যেহেতু ব্যক্তিগত জীবনে নিজেরাও খারাপ বিয়ের মধ্যে আঁটকে ছিলেন, তাই অন্য মহিলাদের সঙ্গে সহমর্মিতা পোষণ করতেন জুলিয়া আর জিরোনিমা দুজনেই। তবে আশ্চর্যের কথা, স্বামী মারার মোক্ষম বিষ হাতের মুঠোয় থাকলেও এঁরা কিন্তু নিজেদের স্বামীদের খুন করেননি!

যেহেতু অ্যাকোয়া তোফানা অসুখী বিয়েতে বন্দি মহিলাদের জীবনে তাঁদের কাঙ্ক্ষিত মুক্তি এনে দিতো, তাই রোমের মহিলাদের মধ্যে গোপনে জুলিয়া আর জিরোনিমা ছিলেন ব্যাপক জনপ্রিয়। জিরোনিমার শেষতম ক্রেতাটি তাঁর এজেন্ট জিওভানা গ্রান্ডিসের কথা পুলিশকে ১৬৫৯ এর জানুয়ারি মাসে জানিয়ে না দিলে জিরোনিমা হয়ত কোনদিন ধরাই পড়তেন না। গ্রান্ডিসের কাছ থেকে ‘মান্না দ্য সেন্ট নিকোলাস’ অর্থাৎ আদতে ”অ্যাকোয়া তোফানা” ভরা এক শিশি কিনে খাবারে মিশিয়ে স্বামীকে দেওয়ার মুহূর্তে সেই মহিলাটি ভেঙে পড়ে তাঁর ষড়যন্ত্রের কথা স্বামীকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। নিজে বিস্তর মারধোর আর যাজকের কাছে অপরাধ স্বীকার করানোর পর যদিও প্রাণে বাঁচা স্বামীটি তাঁর স্ত্রীকে তুলে দিয়েছিলেন পুলিশের হাতে!

অন্যদিকে গবেষক ডেভিড স্টুয়ার্ট জানাচ্ছেন, জিরোনিমা ক্রমেই আগ্রাসী রকমের লোভী হয়ে উঠছিলেন। ফলে খুব একটা সাবধানতা না নিয়েই প্রচুর পরিমাণে অ্যাকোয়া তোফানা বিক্কিরি শুরু করেন তিনি। এদিকে ১৬৫৫-র পর থেকে বৃহত্তর রোমে প্রচুর সংখ্যক অল্পবয়সী মহিলার বিধবা হতে থাকার বিষয়টি নজরে আসছিল পোপ সপ্তম আলেকজান্ডারের। এই সংখ্যা এতটাই বেশি ছিল যে, উপহাস করে বলা হতো “রোমের রাস্তায় শুধু তরুণী বিধবার ভিড়”। অস্বাভাবিক হারে বিধবা বৃদ্ধির কারণ খুঁজতে সহযোগীদের নির্দেশ দেন পোপ। সক্রিয় হয় পুলিশ আর যাজকের দল, জনতাকে সতর্ক করার জন্য ধর্মভিত্তিক প্রচার শুরু হয়। হয়ত এ ধরণের প্রচারেই ভয় পেয়ে শেষ ক্রেতা নিজের দোষ স্বীকার করেছিলেন। এরপর জিজ্ঞাসাবাদ দ্রুত এগোতে থাকলে প্রথমে জিওভানা ডি গ্রান্ডিস। আর শেষমেশ রোম পুলিশ ক্রেতার ছদ্মবেশে মূলচক্রী জিরোনিমার কাছে পৌঁছায় আর ১৬৫৯ এর ২ ফেব্রুয়ারি তাঁকে হাতে নাতে গ্রেপ্তার করে।

জিরোনিমাকে জেরা করার দায়িত্ব পাওয়া রোমের সহকারী গভর্নর স্টেফানো ব্রাকি পরে লিখেছিলেন, এই অপরাধিনীটি ছিলেন ভীষণ চতুর আর আত্মবিশ্বাসী। জেরা পর্বের মাসগুলোর প্রায় পুরোটা জুড়েই তিনি কর্তৃপক্ষের সামনে অত্যন্ত শান্তভাবে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে চলেছিলেন। এমনকি তাঁর চক্রের সঙ্গীদের সামনে বসিয়ে মুখোমুখি জেরার সময়তেও তিনি এঁদের চিনতে অস্বীকার করেন ও নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করতে থাকেন। ব্রাকি লেখেন, অপরাধিনী বন্ধুত্বপূর্ণভাবে প্রতিটা সাধারণ প্রশ্নের জবাব দেন, নিজের পরিবার আর অতীত নিয়ে অনেক গল্প করেন কিন্তু খুনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেই সব অস্বীকার করেন…এমনকি যাজকদের কাছেও তিনি কিছু বলছেন না।

যেহেতু সেকালের রোমান আইন অনুসারে শাস্তিদানের আগে যাজকের কাছে অপরাধীর অপরাধস্বীকার একটি বাধ্যতামূলক প্রক্রিয়া ছিল, তাই জবানবন্দি না দেওয়ায় জিরোনিমাকে শাস্তি দেওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। শেষমেশ বিচার শুরু হওয়ার সাড়ে পাঁচ মাস পর, ২০ জুন জিরোনিমা এক দীর্ঘ স্বীকারোক্তি পত্রে সই করেন। “আমার মাথায় যত চুল আছে, আমি তার থেকেও বেশি মানুষকে ওই তরল দিয়েছি..”, সেখানে লিখেছিলেন এই খুনি। বলাই বাহুল্য এই স্বীকারোক্তির পর আর দেরি করেনি পোপের প্রশাসন। ১৬৫৯ সালের ৫ জুলাই তাঁর বাকি সহকারীদের সঙ্গে ফাঁসি দেওয়া হয় জিরোনিমা স্পানাকে। যদিও অ্যাকোয়া তোফানা প্রয়োগকারী এবং ধৃত প্রায় ৪০ জন মহিলার বিচারপর্ব আরো বছর খানেক চলছিল।

বিচারে সাধারণ মহিলাদের ফাঁসি হলেও, নিজেদের সামাজিক প্রতিপত্তির জোরে খুন করেও রেহাই পেয়ে গেছিলেন অভিজাতরা। যেমন ১৬৫৭ সালে অ্যাকোয়া তোফানার প্রয়োগে স্বামীকে খুন করলেও সেরির ডাচেস ডোনা আলডোব্রান্ডিনির কিন্তু সামান্যতম শাস্তি হয়নি।

তবে শেষে সত্যিই হতবাক লাগে যখন আদেমোলো আর মারিনোর গবেষণার ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি যে, দিদিমা-মা আর মেয়ে; এই তিনে মিলে তাঁদের ঘরোয়া বিষ অ্যাকোয়া তোফানার ঘায়ে ৩০ বছরে সম্ভবত ৬০০ অত্যাচারী স্বামী, এমনকি বাবা বা ভাইকেও কবরে পাঠিয়েছিলেন। সিরিয়াল কিলার তো এমন খুনিদেরই বলে। তাই না?

অ্যাকোয়া তোফানা দায়িনী তিনকন্যার এই গল্পে এক গোঁড়া রক্ষণশীল ক্যাথলিক সমাজে মেয়েদের ওপর পুরুষতন্ত্রের ঠেকেদারদের চোখরাঙানি, জীবনের নানারূপ অতল যাতনা সত্ত্বেও তাঁদের নিয়ত মুক্তিকামনা, অত্যাচারী স্বামীকে শাস্তি দেওয়ার আকুলতায় বিপথে হাঁটতে হাঁটতে অ্যাকোয়া তোফানার কাছে পৌঁছে যাওয়া, তিন প্রায় অপরাধবোধহীন পেশাদার মহিলা খুনি; সামাজিক প্রতিপত্তির বলে রক্ষা পেয়ে যাওয়া অভিজাত মহিলা; অর্থাৎ আমাদের চেনাজানা ক্রাইম থ্রিলারের প্রায় সমস্ত উপাদানই যেমন রয়েছে।

অব্যর্থ প্রাণঘাতী আসল বিষটির অস্তিত্ব আর না থাকলেও এর আর্সেনিকভিত্তিক উপকরণগুলো নকল করে বিষ বানাতেন পরবর্তী সময়ের অ্যালকেমিস্টরা কিন্তু বিক্রি করতেন বিষের আসল ব্র্যান্ড অ্যাকোয়া তোফানার লেবেলেই। আর সেজন্যেই তিনকন্যার মৃত্যুর পরের দুই শতক ধরে ইউরোপময় অ্যাকোয়া তোফানাকে নিয়ে গালগপ্প চলেছে নিরন্তর। সপ্তদশ আর অষ্টাদশ শতকের ইউরোপের অভিজাত সমাজের কেচ্ছা-কেলেঙ্কারিতে, নানা কুখ্যাত ক্রমহত্যাকাণ্ডে, এমনকি সুরকার মোজার্টের বিতর্কিত মৃত্যুর কারণ হিসেবেও বারবার উঠে এসেছে এই পুরোনো বিষ ও বিষদাত্রীদের নাম।

যেমন ১৬৫১-তে মৃত জুলিয়া তোফানার বা তার বিষের উল্লেখ পাওয়া যায় ১৭৩০ কিংবা ১৮১০এর কাগজপত্রেও আর লোকের মুখে মুখে ফেরে ফরাসি কবি জঁ দ্য লা ফোঁতেনের লেখা এক শ্লেষাত্মক ছড়া;

“লস্ট আ হ্যাঙ্কি?

হ্যাভ আ লাভার?

ইয়োর হাসবেন্ড লিভিং টু লং ফর ইয়োর টেস্ট

আ টায়ারসাম মাদার? আ জেলাস ওয়াইফ?

অফ ইউ গো টু দ্য সরসারেস?…”

……

আচ্ছা, পাঠকের কি মনে হচ্ছে, তোফানিয়া-জুলিয়া-জিরোনিমারা সত্যিই কি অসহায় মহিলাদের ত্রাতা ছিলেন, নাকি ছিলেন অর্থলোভী অপরাধী মাত্র? মতামতের অপেক্ষায় রইলাম!!

চারটি অন্যতম তথ্যসূত্রঃ—-

১) Aqua Tofana: slow-poisoning and husband-killing in 17th century Italy – Mike Dash/ www.mikedash.com

২) Toxicology in the Middle Ages and Renaissance – Philip Wexler

৩) Aqua Tofana – Mike Dash / www.academia.edu

৪) Giulia Tofana:Power & Poison – Deborah Swift

বর্তমানে শিক্ষকতার পেশায় নিযুক্ত লেখক ও প্রাবন্ধিক সুচেতনা মুখোপাধ্যায় অতীতের প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন। নারী ইতিহাস রচনা ও সমাজে তাদের অবদানকে উন্মিলিত করা তিনি নিজের ব্রতজ্ঞান করেন। তার রচিত ‘আলোর মেয়েদের গল্প’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি গ্রন্থ। নিয়মিত লেখালেখি, নারী আন্দোলন ও সামাজিক কাজে যুক্ত থাকা তার আগ্রহের বিষয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।