সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

আক্কাদ সম্রাট সারগন

আক্কাদ সম্রাট সারগন

তুষার মুখার্জী

সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৩ ৫৭২ 4

“ইউফ্রেটিস নদীর পাড়ের শহর আজ়ুপিরানু। সেখানে আমার মা ছিলেন মন্দিরের উচ্চস্তরের পুরোহিত। বাবার কথা আমার জানা নেই। বাবার জ্ঞাতিগোষ্ঠীরা পাহাড়কেই বেশি পছন্দ করত। মা আমাকে গোপনে তাঁর গর্ভে ধারণ করেছিলেন। লুকোনো অবস্থায় আমার জন্ম দেন। মা জলনিরোধক ঘন আলকাতরা মাখা নলখাগড়ার এক ঝুড়িতে আমাকে রেখে, ঢাকনা বন্ধ করে, সে ঝুড়ি ভাসিয়ে দেন নদীতে। নদীর জল ঝুড়িতে ঢোকেনি। নদীর জলে ভেসে ভেসে আমি চলে আসি আক্কির কাছে। জল সেচ করার কর্মী আক্কি আমাকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে নিজের ছেলের মত করে বড়ো করেন। তারপরে আমাকে বাগানের মালির কাজে লাগিয়ে দেন। বাগানে কাজ করতে করতে আমি দেবী ইশতারের আশীর্বাদ ধন্য হই। আর তারপরে আমি চার ও … বৎসর রাজত্ব করতে থাকি।…” সম্রাটের রাজকীয় মোহর লাগানো, মাটির তালে, কিউনিফর্ম লিপিতে লেখা, ভাঙা টুকরোর এই অংশের মুল অনুবাদ করেছেন ইতিহাসবেত্তা সুসান বাওয়ার।

এই সারগনের কাহিনি কিছুটা হলেও হতে পারত মহাভারতের কর্ণের। কর্ণের সাথে মিল একটু অস্বাভাবিক ভাবেই বেশি। এই মিলের কারণ বোধহয় ভীষণ ভাবে নাটকীয় এই কাহিনিটি লোকের মুখে মুখে ঘুরত। আর ছড়িয়ে পড়েছিল প্রাচীন ব্যবসায়ীদের মারফৎ। এ কাহিনি ঠাঁই পেয়েছে গ্রীক ভাষায়, ঠাঁই পেয়েছে বাইবেলেও।

সম্রাট সারগন। বলা হয় মানব সভ্যতার প্রথম সম্রাট। তবে ‘সারগন’ নাম নয়। উপাধি মাত্র। সারগন মানে প্রকৃত রাজা বা আইনসঙ্গত রাজা। এর সাথে যোগ হয় তাঁর রাজত্বের বা বলা ভালো অধীনস্থ জাতি দুটির নাম। ফলে মানব ইতিহাসের এই প্রথম সম্রাটের নাম হল “সুমের ও আক্কাদের সারগন”। প্রবল জনপ্রিয় এই পদবি পরেও মেসোপটেমিয়ায় বেশ কয়েকজন ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু আজকের আলোচনায় থাকছেন প্রকৃত সারগন। মহান আক্কাদ সারগন।


প্রত্নবিজ্ঞানীদের কাছে এতগুলো সারগনের ইতিহাস তালগোল পাকিয়ে যায় বলে প্রথম সারগনের নাম দেওয়া হল ‘সারগন দি আক্কাদ’। পরবর্তী বহু প্রজন্মের উপর সারগনের প্রভাব আর গুরুত্ব বোঝার জন্য ইতিহাসবিদ পল ক্রিওয়াজেককে উল্লেখ করছি, “আক্কাদ সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা মহান আক্কাদ সারগন, মৃত্যুর ১৫০০ বৎসর পরেও, পরবর্তী মেসোপটেমিয়ার সব রাজা, সম্রাটের জন্য পিতৃপ্রতিম দেবতার মত শ্রদ্ধেয় ছিলেন। যদিও তিনি আসলে কোথাকার লোক, বা তাঁর আসল নাম কি সেটাই সঠিক কেউ জানে না।” সারগনের জন্মের সঠিক বৎসর জানা যায় না। তবে তাঁর রাজত্ব কাল আনুমানিক সাধারণ পূর্বাব্দ ২৩৩৪ বা ২৩৪০ থেকে ২২৮৪-র মধ্যে। তিনি ঠিক কত বৎসর রাজত্ব করেছিলেন তা নিয়েও কিছু গোলমাল আছে। ৩৭, ৪০, ৪৪, ৫৫ বৎসর, এই রকম আলাদা আলাদা অনুমান চলে আসছে।

সারগনের ছবি বলে যা সাধারণত দেখা যায় সেটি সম্ভবত তাঁর পৌত্র নারাম সিন-এর। তারপরেও প্রশ্ন সারগনের প্রকৃত নাম কি। কারণ সারগন হল একটি পদবি মাত্র। সারগন নামের প্রকৃত উচ্চারণ সাররু-উকিন অথবা সাররু-কেন। এছাড়া কিউনিফর্ম লিপিতে তাঁর নামের আরও বিভিন্ন উচ্চারণ পাওয়া যায়, যথা লুগাল-উ-কিন, সার-রু-গেন, সার-রু-কি-ইন, সার-রু-উম-কি-ইন। সারগন নামটি এসেছে হিব্রু বাইবেলের উল্লেখ থেকে। হিব্রু বাইবেলের লেখা থেকেই সারগনের তৈরি তাঁর সাম্রাজ্যের রাজধানী আগাদে নগরকে বলা শুরু হল আক্কাদ। এর থেকেই জাতিটিরও নাম হল আক্কাদ।

মানব সভ্যতার প্রথম সম্রাট

একেবারে নামগোত্রহীন সাধারণ আক্কাদ শ্রমিক কেমন করে হয়ে গেলেন মানব সভ্যতার প্রথম সম্রাট? মেসোপটেমিয়া শুধু নয় গোটা মানব সভ্যতারই প্রথম সম্রাট, জাতিতে আক্কাদ, সারগন তাঁর জন্মকাহিনি নিজে লিখে রেখে গেছেন। অবশ্য নিজে লিখেছেন বলতে বুঝতে হবে তাঁর একান্ত বিশ্বাসভাজন লিপিকার তাঁর কথাগুলো লিপিবদ্ধ করেছেন আর সম্রাট তার উপরে রাজকীয় সিলমোহর দিয়েছেন। সেকালে যাঁরা লিখতেন তাদের লম্বা সময় লেখার স্কুলে কাটাতে হত। রাজাদের ছোটো থেকেই শরীর চর্চা আর যুদ্ধ অভ্যাসে ব্যস্ত থাকতে হত বলে সাধারণত কোন রাজাই লেখাপড়া জানতেন না। সম্ভবত একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন আসিরীয় সম্রাট আসুরবানিপাল। তিনি লিখতে পড়তে শিখেছিলেন কারণ গোড়াতে তিনি রাজা হবেন না এমনটাই ঠিক ছিল।

সারগনের আত্মজীবনী লেখা মাটির ট্যাবলেটটি পুরোটা পাওয়া যায় নি। যেটুকু পাঠযোগ্য ছিল সেটুকুই উপরে লেখা হল। এই লেখা থেকে জানতে পারি সারগনের মা ছিলেন এক মন্দিরের প্রধান বা উচ্চ পর্যায়ের পুরোহিত। অন্তত সম্রাট সারগন তাই লিখে গেছেন। কিন্তু সুমের শহরে একজন প্রধান পুরোহিত হতেন অগাধ ক্ষমতার অধিকারী, প্রকৃতপক্ষে তিনিই হতেন সেই নগর রাজ্যের প্রধান প্রশাসক। সুমের সমাজে নারীদের ক্ষমতাও যথেষ্টই ছিল। তা ছাড়া সন্তানের জন্ম সুমের সমাজে ছিল প্রবল ভাবে কাঙ্ক্ষিত। সে ক্ষেত্রে লোকলজ্জার ভয়ে নিজের সন্তানকে নদীতে ভাসিয়ে দেবার কথা নয়। তাই অনেকে সন্দেহ করেন আসলে হয়তো তিনি ছিলেন মন্দিরের পবিত্র গণিকাদের একজন। তবে আরেকটি সম্ভাবনাও থাকছে। সুমের ধর্মীয় প্রথানুযায়ী প্রধান পুরোহিতদের দেবতার সাথে বিবাহ হত। তাই মহিলা প্রধান পুরোহিতদের সন্তান ধারণ না করাই দস্তুর ছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় সারগনের কন্যা এনহেদুয়ান্নাও এই প্রথানুযায়ী ছিলেন চন্দ্রদেবতা নান্নার পত্নী। আর তাই আমরা এনহেদুয়ান্নার কোন সন্তানের কথা পাই না। যাই হোক, সারগনের মাতা প্রধান পুরোহিত হলেও তিনি মানবী, ঘটনাচক্রে গর্ভবতী হতেই পারেন। হলে, সেটা তখন এক বিশাল সমস্যায় দাঁড়াবে। ফলে, এমনও হতে পারে, সারগনের মাতা প্রধান পুরোহিত যখন গর্ভবতী হলেন, তখন তা গোপন রাখা ছাড়া সম্ভবত আর কোন পথ খোলা ছিল না। আর তাই সন্তানের জন্মের পরেই তাকে জলে ভাসিয়ে দিতে বাধ্য হন। জলে ভাসিয়ে দিলেও সন্তানের প্রাণরক্ষার জন্য ঘন করে আলকাতরা মাখিয়ে জলনিরোধক ঝুড়িতেই শিশু সন্তানকে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন।

ইউফ্রেটিস নদীতে সেই ভাসমান ঝুড়ির ভেতর থেকে উদ্ধার করে বাড়িতে এনে পুত্রের মত পালন করেন আক্কি নামে এক জল সিঞ্চনকর্মী, হয়তো কিশ শহরের সুমের রাজা উর-জাবাবা বাগানের সিঞ্চন কর্মী। সেখানে বড়ো হতে হতেই দরিদ্র আক্কি তাঁর পালিত পুত্র সারগনকে লাগিয়ে দেন বাগানের কাজে। সারগন লিখেছেন তারপরে তিনি দেবী ইশতারের (সুমেরদের দেবী ইনান্না) আশীর্বাদ পেয়ে রাজা হয়ে যান।

সারগনের রাজা হবার বিচিত্র কাহিনি

 
এই রাজা হবার কাহিনি লেখা যত সহজ, ঘটনাটি ঘটা তত সহজ না। এর পেছনে ছিল ঘটনার ঘনঘটা। সারগনের রাজা হবার বা কিশ শহরের ক্ষমতা হাতবদলের কাহিনি পাওয়া গেছে কিউনিফর্ম ট্যাবলেটে, নিপ্পুর শহরে। এই কাহিনিতে স্বপ্ন দেখার কয়েকটি কাহিনি জানা যাবে। সুমেরদের কাছে স্বপ্ন শুধু স্বপ্ন ছিলো না, প্রতিটি স্বপ্ন তাদের কাছে ছিলো বিশাল অর্থবহ। তারা বিশ্বাস করত স্বপ্ন তাদের ভবিষ্যতের কথা আগাম বলে দিচ্ছে। এই সব স্বপ্নের প্রতীকী অর্থ আলাদা বুঝিয়ে, ব্যাখ্যা করে, বলে দেবার বিশেষ ক্ষমতা আছে, এমন লোকেরা প্রায় দেবতার মর্যাদা ভোগ করতেন সুমের সমাজে।

সেই কাহিনি (শহর কিশ, রাজা উর-জ়াবাবা):

…একদিন দুপুরের পরে রাজা উর-জ়াবাবা নিজের ঘরে শুয়ে আছেন। তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ঘুমের মধ্যে একটা স্বপ্ন দেখলেন। কিন্তু স্বপ্নে দেখা বিষয় বস্তু গোপন রাখলেন। সারগন রোজকার মত রাজপ্রাসাদের সরবরাহ নিয়ে এসেছেন। রাজা উর-জ়াবাবা সারগনকে তার মদ্য পরিবেশক পদে নিযুক্ত করেছেন। (এই মদ্য পরিবেশক সব সময় হবে রাজার অতি বিশ্বস্ত। কারণ তা না হলে সে যে কোন সময় পানীয়ের সাথে বিষ মিশিয়ে রাজাকে হত্যা করতে পারে। ফলে রাজার বিশ্বস্ততম হিসবে তার গুরুত্ব রাজার পরেই।)।

রাজার প্রথম স্বপ্ন দেখার পাঁচের দ্বিগুণ (তখন দশ গোনা হত না) দিনের পরেই উর-জ়াবাবা আবার একটি স্বপ্ন দেখলেন। সে স্বপ্ন দেখে তিনি এতটাই ভয় পেলেন যে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়াতেই প্রস্রাব করে দিলেন। আর আতঙ্কিত চোখে রাজা দেখলেন তিনি যে প্রস্রাব করেছেন, তা কেবল রক্ত আর পুঁজ। রাজা ভয়ে আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে গেলেন। সেই সময়ে সারগনও নিজের শয্যায় শুয়েছিলেন। তিনিও স্বপ্ন দেখলেন। তিনি স্বপ্নে দেখলেন দেবী ইনান্না রাজা উর-জ়াবাবাকে একটি রক্তের নদীতে ডুবিয়ে দিচ্ছেন। বীভৎস সেই স্বপ্ন দেখে সারগন ঘুমের মধ্যেই আর্তনাদ করে উঠলেন। উর-জাবাবা সারগনের আর্তনাদ শুনেছিলেন। পরদিন তিনি সারগনকে ডেকে জানতে চাইলেন, “তুমি কাল রাতে কোন স্বপ্ন দেখেছ?” সারগন, “দেখেছি। শুনুন সে বীভৎস স্বপ্নের কথা। আমি দেখলাম একজন তরুণী, আকাশ ছোঁয়া তাঁর উচ্চতা, আর পৃথিবী জোড়া দেহ, তিনি নগর প্রাচীরের ভিতের মতই দৃঢ় স্থির। দেখলাম তিনি আপনাকে এক বিশাল নদীতে ডুবিয়ে দিচ্ছেন। সে নদী রক্তের নদী।” রাজা সে স্বপ্নের কথা শুনে আবার আতঙ্কিত হলেন। তিনি নিজের ভাবতে লাগলেন কি করা যেতে পারে। পরামর্শ দাতাদের ডেকে কথা বললেন। তারপরে ডেকে পাঠালেন তাঁর প্রধান কারিগর বেলিস-টিকালকে। “বেলিস-টিকাল মন দিয়ে শোন, আমার একটি আদেশ তোমাকে পালন করতে হবে। সারগন একটি ব্রোঞ্জের আয়না নিয়ে যাবে তোমার কাছে ই-সিকিল প্রাসাদে। তুমি সেই আয়না আর সারগন দুজনকেই তোমার গলন্ত ধাতুর পাত্রে ফেলে দেবে।” বেলিস-টিকাল রাজার আদেশ মত ই-সিকিল প্রাসাদে গলন্ত ধাতুর বিরাট পাত্র প্রস্তুত করে রাখলেন। রাজা উর-জ়াবাবা সারগনকে ডেকে বললেন, “তুমি এই ব্রোঞ্জের আয়নাটি ই-সিকিল প্রাসাদে বেলিস-টিকালকে পৌঁছে দাও।” সারগন রাজার আদেশানুযায়ী সেই আয়না নিয়ে ই-সিকিল প্রাসাদের দিকে রওনা দিলেন। কিন্তু দেবী ইনান্না মাঝ পথে সারগনকে উপদেশ দিলেন, “না সারগন, তুমি ই-সিকিল প্রাসাদে ঢুকবে না। তোমার রক্ত অপবিত্র হয়ে আছে।” সারগন তখন আর ই-সিকিল প্রাসাদের ভেতরে না ঢুকে দরজায় দাঁড়িয়েই বেলিস-টিকালকে ব্রোঞ্জের আয়নাটি দিয়ে দিলেন। ফলে বেলিস-টিকাল শুধু আয়নাটিই গলন্ত ধাতুর পাত্রে ফেলতে পারলেন। সারগন নিরাপদেই ফিরে গেলেন। পরবর্তী পাঁচের দ্বিগুণ দিনে সারগন সুস্থ শরীরে প্রাসাদে ফিরে এলে রাজা ভয়ানক ভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন। ভয়ে দিশেহারা হলেও রাজা কাউকে কিছু বললেন না। নিজের ভয় নিজের মধ্যেই গোপন রাখলেন।


ঊরুকের সুমের রাজা লুগাল-জ়াগেসি প্রথম সুমের রাজা যিনি একাধিক সুমের নগর-রাজ্য  দখলে আনেন। তাঁর নজর এবার তখনকার সুমেরীয় ধর্ম ভাবনার অন্যতম প্রধান নগর-রাজ্য কিশের উপর। এই কিশের রাজাই হলেন সারগনের নিয়োগকর্তা উর-জ়াবাবা। লুগাল-জ়াগেসি সম্ভবত কিশ আক্রমণ করবেন না এমন কোন আশার কথা শুনিয়েছিলেন উর-জ়াবাবাকে। তবু উর-জ়াবাবা কিছুটা আতঙ্কেই দিন কাটাচ্ছিলেন।  আতঙ্কিত রাজা সবাইকে সন্দেহ করছেন। এবং দেখা গেল তাঁর আতঙ্কটাই ছিল সত্যি। অথবা তিনিই সত্যি করে তুললেন সারগনকে নিয়ে ভুল চাল খেলে? বোঝা একটু ভার। রাজা উর-জ়াবাবা ঊম্মার রাজা লুগাল-জ়াগেসি কে একটি চিঠি লিখলেন। সেই চিঠি নিয়ে সারগনকে যেতে বললেন লুগাল-জ়াগেসির কাছে। চিঠিতে তিনি লিখলেন লুগাল-জ়াগেসি যেন এই চিঠি পাওয়া মাত্র সারগনকে হত্যা করেন।

চিঠি তখন লেখা হত মাটির তালে তাই মনে হবে সে চিঠিতো সারগন পড়েই ফেলবেন। না, ততদিনে সুমেররা চিঠির খাম আবিষ্কার করে ফেলেছে। মাটির তালে লেখা চিঠি মাটি দিয়ে বানানো একটি মোড়কের ভেতরে পুরে মাটির সিল মোহর দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হত।

উপরের কাহিনিতে দেখা যাবে স্বপ্নের কথা শুনে রাজা উর-জ়াবাবা সারগনকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। তার কারণ রাজা সন্দেহ করেন সারগনের স্বপ্নের অর্থ হল দেবী ইনান্না সারগনের সাহায্য নিয়ে উর-জ়াবাবাকে হত্যা করবেন। সারগনকে হত্যার প্রথম চেষ্টা ব্যর্থ হল। যদিও কাহিনি বলছে দেবী ইনান্না তাঁকে হত্যাকারীর প্রাসাদে প্রবেশ করতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন। আমরা সেই ঘটনাকে ধরতে পারি সারগন কোন গুপ্তচর মারফত খবর পেয়েছিলেন। ফলে সারগনের প্রাণ রক্ষা হল। এবার রাজা আরেক মতলব করলেন। তিনি সারগনকে হত্যার জন্য লুগাল জাগেসিকে ব্যবহার করবেন। এর পেছনে সম্ভাব্য কারণ, নিজ রাজ্যে সারগনকে হত্যা করলে রাজ্যের অভিজাতরা বা পুরোহিতরা বিরূপ হতে পারেন। সেই পরিকল্পনা করেই তিনি সারগনের হাত দিয়ে লুগাল জাগেসির কাছে সারগনেরই হত্যার আদেশ পাঠান। কিন্তু কিশের পরিকল্পনা এবারও সফল হল না। লুগাল-জ়াগেসি কিশ দখলের সুযোগ খুঁজছিলেন। কাজেই, কিশের রাজার চিঠি পেয়ে বুঝলেন কিশের রাজার বিশ্বস্ত সহচর আসলে রাজার অবিশ্বস্ত। তিনি ঝটপট সারগনের সাথেই হাত মেলালেন। তারপরে উর-জ়াবাবা যা ভয় পাচ্ছিলেন, ঠিক তাই হল। সারগন লুগাল-জ়াগেসির সাথে মিলে তাঁকে সিংহাসন চ্যুত করলেন। উর-জ়াবাবা পালিয়ে প্রাণ বাঁচালেন। তারপরে যা সাধারণত হয়, তাই হল। সারগন এবার লুগাল-জ়াগেসিকে সরিয়ে নিজের ক্ষমতার বিস্তার শুরু করলেন। লুগাল-জ়াগেসি আর সারগন, এই দুই বন্ধুর বিবাদের পেছনের কাহিনির সবটা খুব পরিস্কার নয়। কারণ প্রায় রূপকথার নায়ক সারগনকে ঘিরে নানা কাহিনিই চালু হয়েছিল। এর মধ্যে একটি হল সারগন লুগাল-জ়াগেসির স্ত্রীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। যাই হোক, যে ভাবেই হোক, মোট কথা হল সারগন আর লুগাল-জ়াগেসি যত দ্রুত বন্ধু হয়েছিলেন ততটাই দ্রুত শত্রুও হয়ে গেলেন। লুগাল-জ়াগেসি চললেন সারগনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে। কিন্তু পরাজিত হলেন। সারগন পরাজিত লুগাল-জ়াগেসিকে শেকলে বেঁধে নিয়ে গেলেন নিপ্পুর শহরের এনলিল দেবের মন্দিরে। সারগন লুগাল-জ়াগেসির গলায় দড়ি বেঁধে মন্দির চত্বরে ঘোরালেন। প্রমাণিত হল এনলিল দেব লুগাল-জাগেসিকে রক্ষা করছেন না।

সুমের ও আক্কাদের রাজা সারগন

সারগনের রাজত্বের আগে এই মোসোপটেমিয়াতে বহিরাগত আক্কাদরা কখনও শাসন ক্ষমতায় আসেনি। তারা মোটামুটি ভুস্বামী পর্যায়ের ছিল কোথাও কোথাও। আক্কাদরা ঠিক কবে মেসোপটেমিয়াতে ঢুকেছিল তাও জানা নেই। কিন্তু সারগন ক্ষমতায় আসার আগে থেকে আক্কাদ আর সুমেররা অনেক জায়গায় পাশাপাশি বসবাস করেছে। কোন লড়াই ঝগড়া হয়নি। কারণ ধর্মভীরু সুমেরদের দেবতাদেরই আক্কাদরা নিজেদের দেবতা বলে মেনে নিয়েছিল। তাই আক্কাদদের মেনে নিতে সুমেরদের কোন মানসিক বাধা আসে নি।

সারগন হলেন সুমের ও আক্কাদের রাজা। এই আক্কাদ নগরের নাম আবার এসেছে সারগনের প্রতিষ্ঠিত আগাদে নগরের নাম থেকে। এই আগাদে নগর, যা পরে উচ্চারণ বিকৃত হয়ে আক্কাদ হয়ে যায়। এই নগর থেকেই আফ্রো-এশিয়াটিক জাতিটির নাম হয়ে যায় আক্কাদ জাতি। তবে আগাদে নগরের কোন পুরাতাত্বিক ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়নি। এমনি ঠিক কোথায় ছিল তাও জানা যায়নি। তবু আগাদে নগরের প্রতিষ্ঠাতা সারগনকে ‘সারগন অফ আক্কাদ’ বললে একই সঙ্গে তিনি যে জাতিতে আক্কাদ ছিলেন সেটাও বোঝানো হয়ে যায়। কিন্তু একটা ছোট সমস্যা হল সারগন যে জাতিতে আক্কাদই ছিলেন তার তো কোন পাকা প্রমাণ নেই। তাঁর বাবা কে ছিলেন সেটা সম্রাট নিজেই বলে গেছেন যে তিনি জানেন না। মা-ই বা সঠিক কে ছিলেন তাও তো অনুমান ভিত্তিক। শুধু বলেছেন পদমর্যাদা আর শহরের নাম। তবুও বিশেষ কিছু কারণে অনুমান করা হয় তিনি জাতিতে আক্কাদ ছিলেন। এমন অনুমানের পিছনে একটি কারণ হল তাঁর নেওয়া নাম সেমিটিক শব্দ। আক্কাদরা তো জাতিতে সেমিটিকই ছিল। আর তাঁর নেওয়া আরও একটি সিদ্ধান্ত থেকেও বোঝা যায় তিনি জাতিতে আক্কাদ ছিলেন। তিনি সিংহাসনে বসেই সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁর সাম্রাজ্যের রাজভাষা হবে আক্কাদ। দক্ষিণ মেসোপটেমিয়ার সংখ্যাগুরু সুমেরদের ভাষা সীমিত থাকবে তাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায়। কারণ সুমের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা যথেষ্ট উচ্চ স্তরের ছিল। তাছাড়া সুমের ভাষা বজায় রাখার কারণ ছিল আক্কাদদের সে ব্যাপারে খুব কিছু আগ্রহ তখনও ছিল না, তাছাড়া আগে থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চারত সুমের ভাষা বাতিল করা সম্ভব ছিল না।

আর সম্রাটের ঘোষণা অনুযায়ী সুমের ভাষা থাকবে মন্দিরের পুজাপাঠে। (আমাদের সংস্কৃত যেমন এই কারণেই দেবভাষা অভিধা পেয়েছিল)। সুমের ভাষাকে এটুকু ছাড় দেবার কারণ ছিল, গোটা মেসোপটেমিয়াতে পুরোহিতরাই ছিল ক্ষমতার মুল অধিকারী। (সুমের পুরোহিতরা কিন্তু আমাদের এখনকার পুরোহিতদের মত নয়। বরং বলা যেতে পারে এখনকার বাবা-যোগী-মহান্ত-মন্ত্রি-শিল্পপতির যোগফল)। পুজাপাঠে সুমের ভাষা অব্যহত রাখার আরও কারণ ছিল। সুমেররা ছিল তীব্র ভাবে ধার্মিক ও ধর্মভীরু। এদিকে আক্কাদদের আগে থেকে ধর্ম বা দেব-দেবতার খুব বিশেষ কোন বালাই ছিল না। ফলে আক্কাদরা সুমের দেবতাদেরই আরাধনা করতো। সব মিলিয়ে সারগন ধর্ম নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা না করা হয়ত যুক্তিযুক্ত মনে করলেন।(মনে করুন ভারতে ব্রিটিশ শাসনকালে নেওয়া সিদ্ধান্তের কথা।)। অথবা এমনও হতে পারে, সারগন নিজেই গভীর ভাবে বিশ্বাস করতেন তাঁর আরাধ্যা দেবী ইশতারের (ইনান্না) মহিমাকে। হয়তো তখনও আক্কাদ ভাষায় দেবীর আরাধনা বন্দনা স্তোত্র রচিত হয় নি। তাই দেবী বোধ্য সুমের ভাষায়, দেবীর আরাধনাকে ধরে রাখলেন।

এনহেদুয়ান্না ও ইনান্না

সম্রাট সারগন নিজে ছিলেন দেবী ইশতারের পরম ভক্ত। দেবী ইশতার হলেন সুমের ভাষায় দেবী ইনান্না, আক্কাদ ভাষায় ইশতার। প্রেম, ভালবাসা, যৌনতা, উর্বরতা, আকাশের দেবী, আর যুদ্ধের দেবী ইশতার ছিলেন মেসোপটেমিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী দেবী। তাঁর প্রতীক শুকতারা বা ভেনাস। শুধু মেসোপটেমিয়াই নয় ইশতার কালে কালে রূপ বদলে হয়ে যান গ্রিকদের আফ্রোদিতি, রোমানদের ভেনাস। আর ব্যাবিলনের ইশতার গেট তো প্রাচীন পৃথিবীর সপ্তম বিস্ময়ের একটি (এখন আছে বার্লিন মিউজিয়ামে)। সারগনের কন্যা এনহেদুয়ান্না পৃথিবীর প্রথম মহিলা কবি বলে স্বীকৃত (যাঁর একাধিক কাব্যগ্রন্থ লিখিত ভাবে প্রকাশিত হয়েছে তাঁরই জীবদ্দশায়)। তিনি লিখে রেখে গেছেন একাধিক কাব্য গ্রন্থ (আজ থেকে সাড়ে চার হাজার বৎসর আগে লেখা), যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ইনান্নার মহিমা নিয়ে লেখা কাব্য গ্রন্থগুলি। এনহেদুয়ান্নাই প্রথম কবি, যিনি ধর্মকে খুব চতুর ভাবে কাজে লাগালেন পিতার সাম্রাজ্য বিস্তারের গুণগানে। বা এখনকার ভাষায় রাজনৈতিক প্রচারে। তারই সাথে সম্রাট কন্যা কবি এনহেদুয়ান্না আক্কাদ ভাষায় দেবদেবীর বন্দনা, প্রার্থনা লিখতে শুরু করে দিলেন। ফলে পরবর্তীকালে আস্তে আস্তে সব সুমের দেবদেবীর নাম আক্কাদ ভাষায় বদলে গেল। এমনকি দেবদেবীর মহিমা বর্ণনাতেও আক্কাদ ভাষা থেকে আক্কাদ বিশ্বাসও ঢুকে গেলে। দেবদেবীদের কিছু কিছু করে চরিত্রও পাল্টে যেতে লাগল। আধুনিক ভাষায় সফ্টপাওয়ারের চুড়ান্ত ব্যবহার করে ছাড়লেন এনহেদুয়ান্না।


আক্কাদ ভাষার উত্থান ও সুমের ভাষার পতন


সারগনের আক্কাদ ভাষাকে রাজকীয় ভাষা করাতে প্রথমে সবারই ভাল হল। সমগ্র মেসোপটেমিয়া দোভাষী হয়ে উঠল। সুমেরদের দৈনন্দিন কাজকর্মে সুবিধা হল। কিন্তু পরিণতি হল দুঃখজনক। সারগনের রাজত্বের পাঁচ-সাত’শ-হাজার বৎসরের মধ্যেই পৃথিবীর বুক থেকে বরাবরের মত মুছে গেল মানব সভ্যতার জনক সুমের জাতি। কারণ ভাষা না থাকলে জাতির স্বতন্ত্র পরিচয় আর থাকে না। সবাই ভুলে গেল মানব জাতির প্রথম লিখিত ভাষা, সুমের ভাষা। কারণ খুঁজলে সহজেই বোঝা যাবে রাজকীয় ভাষা আক্কাদ হওয়ায় সুমেররা আক্কাদ ভাষাই শিখে নিলেন। তখন সুমের ভাষা শিখে কি হবে কোন কাজেই তো লাগে না। মন্দিরের বন্দনা, অর্থ না বুঝেও মুখস্থ বললেই হবে। অর্থ দেবতারাই বুঝে নেবেন। আমরা যেমন সংস্কৃত মন্ত্র পাঠ করি।

সারগন তখন ৩৪টি শহরের অধিপতি। গোড়ায় কিন্তু সুমেররা বিশেষ করে অর্থনৈতিক ভাবে দুঃস্থ শ্রেণির সুমেররা সারগনকে বেশ পছন্দ করত। কারণ সারগনের অতি সাধারণ দরিদ্র অতীত। অতি সাধারণ মজুর সম্রাট হয়েছেন। তাই দরিদ্র সুমেররা আশা করতো সম্রাট সারগন তাদের দুরবস্থার অবস্থা বুঝে সুরাহা করবেন। কিন্তু ততদিনে অতীতের মজুর সারগন তো সম্রাট হয়ে গেছেন। এখন তো তিনি সব কিছু দেখবেন সম্রাটের দৃষ্টিকোণ থেকে। সবার আগে তাঁকে নিজের সিংহাসন সুরক্ষিত রাখতে হবে। এই সিংহাসন যেন বংশপরম্পরায় তাঁর বংশের অধিকারে থাকে তা সুনিশ্চিত করতে হবে। আর সীমানা বাড়াতে হবে। আরও আরও বেশি এলাকা দখল করতে হবে।


সারগন কয়েকটি বিশেষ কাজ করেন যা আগে কেউ করেননি

সারগন মানব সমাজের প্রথম সম্রাট। এই প্রথম সম্রাটের থেকে মানব সমাজ শুধুই যুদ্ধ করে বৃহত্তর দখলদারি শিখল না, প্রকৃতপক্ষে এমন আরও অনেক কিছুই সারগন দিয়ে গেছেন যা মানব সমাজের চিরন্তন সম্পদ হয়ে গেছে। পিতামাতা পরিত্যক্ত এক শ্রমিকের ঘরে বড় হয়ে ওঠা সারগনের সামান্য রাজত্বকালে যে অনেক কিছুই তিনি মানব সভ্যতায় প্রথমবারের মত প্রয়োগ করলেন, তার অনেক কিছুই এখনো দেশ শাসন কার্যে অপরিহার্য।  

এক ঝলকে, সারগন শুরু করেন – প্রথম কেন্দ্রীয় ভাবে শাসিত বহুজাতিক সাম্রাজ্য; সাম্রাজ্যের নিজস্ব পৃথক রাজধানী শহর নির্মাণ; বংশানুক্রমিক শাসন; প্রশাসনিক দায়িত্বে স্বজাতি বিশেষ করে স্ব-পরিবারকে প্রাধান্য দেওয়া; রাজত্বের গোটা এলাকায় স্বজাতির একক রাজ ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ; বাণিজ্য-প্রশাসন আর বিদ্যাচর্চা-আরাধনার জন্য দুটি ভিন্ন ভাষার প্রয়োগ; শাসনে ধর্মের প্রত্যক্ষ প্রভাবকে বিচ্ছিন্ন রেখেও, রাজত্বের প্রভাব বিস্তারে ধর্মের প্রভাবকে ব্যবহার করা; দীঘর্স্থায়ী পরিবর্তনের জন্য সাংস্কৃতিক প্রভাবের প্রয়োগ এবং অনিয়মিত ভাড়াটে সেনাকে নিয়মিত বেতনভোগী সেনাতে বদলে দেওয়া। তিনি আর শুরু করেছিলেন প্রথম ডাক ব্যবস্থা।
 

সারগন নিজের কন্যাকে ঊর নগরের চন্দ্রদেব নান্নাদেবের মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের পদে বসালেন। এই পদাধিকারবলে সম্রাটকন্যা হলেন সুমেরদের অন্যতম সমৃদ্ধ আর ধর্মীয় কোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ ঊর শহরের প্রধান প্রশাসক। এই পদে আসীন হলে মন্দিরের দেবতাকে বিয়ে করতে হবে এমন নিয়ম ছিল। তাই সম্রাটের কন্যার বিয়ে হল সুমেরদের চন্দ্রের দেবতা নান্নার সাথে। অবশ্যই এটি একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান মাত্র। তবু এই বিয়ের ফলে সম্রাটকন্যা আর কাউকে বিয়ে করতে পারবেন না (ভারতে দেবদাসী প্রথার কথা আমরা জানি)। এই পদাধিকার বলে এনহেদুয়ান্না সুমের পুরোহিতদের রাজা পদে কোন ব্যক্তিকে নির্বাচনের ক্ষমতার প্রয়োগ করার প্রথাটি গোড়া থেকে কেটে দিলেন। পুরোহিতদের অনুমোদনের কোন তোয়াক্কা না করে সারগন বৎসরের পর বৎসর রাজত্ব করে গেলেন। আর তারপরে তাঁর বংশধরেরা হয়ে গেলেন সম্রাট। পুরোহিতদের কোন অনুমোদনের আর দরকার থাকল না। এতটাই সহজে সারগন প্রথম বংশানুক্রমিক সিংহাসনের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করলেন।

সারগন নিজে একটি রাজধানী শহর গড়লেন। আগেকার কোন সুমের রাজা এমন করেন নি। সবাই আগের গড়া শহরেই রাজত্ব করেছেন। সম্ভব হলে সেই শহরের জিগুরাত (সুমের মন্দির কমপ্লেক্স, যেখানে মন্দির ছাড়াও পুরোহিতদের আবাস, ব্যবসার কেন্দ্র সব গড়ে উঠত ঐ জিগুরাতকে কেন্দ্র করে)কে বড় করতেন বা অন্য দেবতার ভক্ত হলে আরেকটি জিগুরাত বানাতেন। একেবারে আনকোরা নতুন নগর কেউ বানাতেন না। সারগন প্রথম এই কাজটি করতে গিয়ে রাজধানী হিসাবে আনকোরা নতুন নগর গড়ে ফেললেন। সাথে গড়েন দুটি জিগুরাত। দেবী ইশতারের আর দেবতা জ়াবাবার। এই নতুন রাজধানীর নাম রাখা হল আগেদে। কিন্তু যেহেতু হিব্রু বাইবেলে সেটা লেখা ছিল আক্কাদ বলে তাই ইউরোপীয় প্রত্নবিদরা নগরটির নাম আক্কাদই রেখে দেন। ঘটনা হল আগাদে শহর যদিও প্রায় একশো বৎসর টিকে ছিল তবু আজও তার বাস্তব অস্তিত্ব অজানা রয়ে গেছে। ধারণা করা হয় গুতি জাতির আক্রমণে নগরটি ধ্বংস হয়। তবে অজস্র কাহিনির জন্মদাতা মেসোপটেমিয়াতে এই নগর ধ্বংসেরও এক কাহিনি প্রচলিত আছে। ‘আগাদের অভিশাপ’ কাহিনিতে বলা হয় সারগনের পৌত্র নারাম-সিন দেবতার অপমান করে অভিশাপ ডেকে আনেন নগরের উপর। সেই অভিশাপে নগরের সমস্ত পানীয় জল লবণাক্ত হয়ে যায়। ফলে নগর পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

সারগন প্রথম একটি ভাষাকে রাজভাষা ঘোষণা করলেন। যদিও সে ভাষা স্থানীয়দের ভাষা ছিল না তবু সেটা করলেন। করলেন আক্কাদদের অধিকার দৃঢ় করার জন্য। এবং না জেনে হলেও তিনিই প্রথম, একটি জাতির পরিচিতি কি করে সম্পূর্ণ ভাবে মুছে দিতে হয় সে পদ্ধতি শেখালেন।

সাম্রাজ্য গঠনের কাজে তাঁর বিজয় অভিযান উত্তর মেসোপটেমিয়া তার পূর্বের জাগ্রোস আর পশ্চিমের সিরিয়ায় সামরিক অভিযান চালান। দক্ষিণে এলাম অবধি। পারস্য উপসাগরের দিলমুনেও তাঁর উপস্থিতি ছিল। তাঁর নিজের কথায়, “যে রাজারা নিজেকে আমার সমকক্ষ মনে করে তারা আমি যে সব এলাকায় গেছি সেই সব এলাকায় যাবার সাহস দেখাক আগে।” এই সারগনের আমলে ও তাঁর পুত্রের আমলে সিন্ধু সভ্যতার সাথে যোগাযোগের উল্লেখ পাওয়া যায়। সারগনের আমলে সিন্ধু সভ্যতার তথা মেলুহার পণ্যের সম্ভার নিয়ে জলযান ভিড়ত আগাদে নগরে। আবার সারগনের পুত্র রিমুশের আমলের লেখায় পাওয়া যায় তিনি শত্রু পক্ষের ১৬ হাজার সেনাকে হত্যা করেন। সেই মৃতদের মধ্যে ছিল মেলুহার সেনাদলও।

সারগন প্রথম একটি কেন্দ্রীয় নগরে বসে বহুজাতিক বহু নগর-রাজ্য এলাকা শাসন শুরু করলেন। সারগন প্রথম শাসনের জন্য স্বজাতির প্রতিভুদের সাম্রাজ্যের প্রতিটি শহরে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ করলেন। সারগনের আমলেই প্রথম ডাক ব্যবস্থা চালু হয়। সম্রাট ও স্থানীয় প্রশাসকদের মধ্যে যথাযথ সংবাদ আদানপ্রদানের জন্য বহুজাতিক বহুবিস্তৃত সাম্রাজ্যে ডাক ব্যবস্থা ছাড়া শাসন ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা অসম্ভব ছিল।

সারগনের সামরিক শক্তির উৎস

সারগন সম্রাট হলেন। অতি সাধারণ শ্রমিক একেবারে এক লাফে সম্রাট তো হতে পারেন না। মাঝে অনেক ধাপ পার হতে হয়। সারগনকেও পার হতে হয়েছে। সুমের কাহিনি থেকে জানা গেল তিনি লুগাল-জ়াগেসির সাথে হাত মিলিয়ে উর-জ়াবাবাকে সরিয়ে রাজা হন। কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যাবে খুব সামান্য কিছুকালের মধ্যেই লুগাল-জ়াগেসির সাথে বন্ধুত্ব শেষ করে যুদ্ধ করছেন ও পরাজিত করেছেন। সারগন লুগাল-জ়াগেসির সেনার সাথে যুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় সৈন্য পেলেন কোথা থেকে? বা তারও আগে লুগাল-জ়াগেসি সারগনের সাথে হাত মেলাবেন কেন যদি সারগন উর-জ়াবাবার একজন কর্মচারী মাত্র ছিলেন? অথবা তারও আগে সামান্য একজন শ্রমিক কি করে রাজার বিশিষ্ট কর্মচারী হলেন? যার পদমর্যাদা রাজার পরেই? এখানে অনেকেই ধারণা করেন সারগনের নিজের একটি সৈন্য বাহিনী ছিল। তখন সেনাদের প্রায় সকলেই ছিল ভাড়াটে সেনা। কাজেই টাকা থাকলে মোটামুটি একদল সেনা জোগাড় করে ফেলা কঠিন না। কিন্তু সাধারণ শ্রমিক সারগনের তো টাকাও থাকার কথা না। তাই অনুমান করা হল, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের মধ্যে নিজের জনপ্রিয়তা আর নেতৃত্ব দেওয়ার সহজাত গুনে তিনি একদল গুণমুগ্ধ শ্রমিক নিয়ে শ্রমিক সংগঠনকে একটি সেনাদলেই বদলে দিলেন। বলা যেতে পারে এক জঙ্গী শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে তাকে রূপ দেন সেনাদলের আর তিনি হয়ে ওঠেন সেনা প্রধান। সম্ভবত এই জঙ্গী ইউনিয়নের অবিরত বিক্ষোভের হাত থেকে রেহাই পেতেই রাজা উর-জ়াবাবা সারগনকে প্রায় রাজ মর্যাদা সম্পন্ন পদটিতে বসান। আর তারপরে সারগন এই জঙ্গী শ্রমিক-সেনাদলের নেতা হবার দৌলতেই লুগাল-জ়াগেসির বন্ধুত্ব পেয়ে যান। কারণ কিশের বিক্ষুব্ধ লোকদের পেলে কিশ জয় সহজ হবে। হলও তাই। কিন্তু বুদ্ধিমান লুগাল-জ়াগেসি সারগনকে কিশ থেকে সরিয়ে দিলেন ঊরে। সারগন ঊরে গেলেন। সাথে থাকল তাঁর নিজস্ব সেনার দল। ঊরের প্রধান হিসাবে সারগনের অর্থের অভাব আর নেই। তিনি সেনাদল বাড়ানোতে মন দিলেন। লুগাল-জ়াগেসি বিপদ বুঝে কিশ থেকে গিয়ে সারগনকে আক্রমণ করলেন। কিন্তু পরাজিত হলেন। এখান থেকে আমরা দুটো জিনিস বুঝতে পারি। সারগনের সেনাদল গঠন আর পরিচালনায় এমন একটা সহজাত দক্ষতা ছিল যা তখনকার আর কারওর মধ্যে ছিল না। ক্রমে সেটাই পরিষ্কার ভাবে দেখা গেল। সারগনের সাংগঠনিক, প্রশাসনিক দক্ষতার সাথে ছিল বিশেষ রণকুশলতা। তিনি ভাড়াটে সৈন্যের একাংশকে বেতনভোগী সেনা দলে বদলে দিলেন।

সারগন তার সেনা দলকে তখনকার চলতি প্রথা মত একত্র করে যুদ্ধে নামতেন না। তাঁর সেনা বাহিনী ছিল খানিক আলগা আলগা একাধিক দলের ছোট ছোট অংশে ভাগ করা। প্রতিটি দলের দক্ষতার মাত্রা ভিন্ন। তাদের যুদ্ধাস্ত্রও ভিন্ন। ফলে এর প্রতিটি অংশ হত অনেক বেশি চলমান, আর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় পারদর্শী। তারা, টুকরো টুকরো দল জুড়ে গড়া একটা সেনাবাহিনী, কেবল একজন প্রধান সেনানায়কের মুখ চেয়ে বসে থাকত না। এই রকম আলগা দলের সব কটা অংশকে নিয়ে একটা স্থির লক্ষ্যে পৌঁছোনোর দক্ষতা সম্ভবত সারগন অর্জন করেছিলেন প্রথম জীবনের বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের নেতৃত্ব দিতে গিয়েই। যখন তাঁর শ্রমিকদল ছিল শহরের নানা এলাকা থেকে আসা ছোট ছোট দল। সম্ভবত তারা বহুজাতিকও ছিল। সারগনের এই রণকৌশল এতটাই কার্যকরী হয়েছিল যে তা আলেজান্ডারের আমল অবধি চলেছিল মেসোপটেমিয়া জুড়ে।

উপরে লেখা বিক্ষুব্ধ শ্রমিক শব্দে ভ্রূ কুঁচকে যেতে পারে। কারণ অত হাজার বৎসর আগে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদলের থাকার সম্ভাবনা কতটা? বিশেষ করে যখন মেসোপটেমিয়াতে দাস ব্যবস্থাও ছিল। কিন্তু ঘটনা হল শ্রমিক অসন্তোষ মেসোপটেমিয়ায় নতুন কিছু না। সুমেরদের একটি কাহিনি, আত্রাহাসিসের উপাখ্যানে শ্রমিক বিক্ষোভ ও আন্দোলনের কথা খুবই পরিষ্কার করে বর্ণনা করা আছে। যেখানে শ্রমিকরা (নিম্ন শ্রেণির দেবতা) বিশ্রামহীন শ্রমের থেকে রেহাই পেতে, বিশ্রামের দাবিতে, শ্লোগান দেওয়া থেকে ঘেরাও করা, আগুন লাগানো সব করেছে, আর মালিকের (সুমের দেব পরিবার) সামনে দাঁড়িয়ে সমস্ত শ্রমিক এক বগ্গা হয়ে বলেছে: “আমাদের কেউ নেতা নেই, আমরা সবাই এই করেছি। শাস্তি দিতে হল সবাইকে দাও। আর এই শেষ। আমরা আর কাজই করব না।” (যা নেই সুমেরদের তা নেই মানব সমাজে। আজও। এমনি এমনি এদের মানব সভ্যতার জনক বলা হয় না।)

আসলে সুমেরদের বেশির ভাগ কৃষিজমি মন্দিরের পুরোহিতদের অধিকারে থাকলেও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার বোধ তাদের সমাজ স্বীকার করে নিয়েছিল। কিন্তু তার বাইরে এক বিশাল সংখ্যার সুমের মানুষেরা ছিল হত দরিদ্র শ্রমজীবী। অভিজাত শ্রেণি আর মন্দিরের হাতে কেন্দ্রীভূত সম্পদের দরুন গড়ে ওঠা এই অর্থনৈতিক অসাম্য থেকেই সামাজিক ক্ষুব্ধতার সুত্রপাত। এই আর্থিক অসাম্যের ফলে অনেক সুমেরই চরম দারিদ্র্যের হাত থেকে রেহাই পেতে নিজেদের দাস বলে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হত। যদিও সেই দাসদের অধিকার ছিল নিজে আলাদা রোজগার করে বিক্রির টাকা শোধ করে নিজেদের মুক্ত করার, তবুও ক্ষোভ তো থাকবেই।

 
সারগন পুত্র রিমুশ (মেট্রোপলিটান মিউজিয়াম অফ আর্টে সংরক্ষিত)

সারগনে ফিরে আসি। সারগনের প্রধান স্ত্রী ছিলেন তাসলুলতুম। সারগনের সন্তানরা হলেন এনহেদুয়ান্না, রিমুশ, মানিসতুসু, সু-এনলিল(ইবারুম), আবাইস-তাকাল। এর মধ্যে এনহেদুয়ান্নাকে সারগনের কন্যা বলে সবাই মানতে নারাজ। কারণ হল সারগনের মত এনহেদুয়ান্নাও কোন নাম নয়. উপাধি মাত্র। সারগনের পরে সিংহাসনে বসেন রিমুশ। রিমুশ নিপুণ শাসক ও রণকুশল ছিলেন। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে তাঁর মৃত্যু হয় কয়েক বৎসর পরেই। অনেকে দায়ী করেন সিংহাসনের অধিকার নিয়ে রাজপ্রাসাদে বিদ্রোহ। তারপরে সিংহাসনে বসেন রিমুশের ভাই মানিসতুসু, মানিসতুসুর পরে সিংহাসনে বসেন মানিসতুসুর পুত্র নারাম-সিন। পুরোহিতদের হস্তক্ষেপহীন উত্তরাধিকার সূত্রে রাজত্বের প্রথা চালু হয়ে যায়।

এই বংশানুক্রমিক রাজত্বের প্রথার পেছনে আছে একাধিক নগর-রাজ্যের একত্রীকরণের ভেতরেই। একাধিক নগর-রাজ্যের ছিল একাধিক দেবতার মন্দির আর তাঁদের পুরোহিতকুল। এরা সকলে একমত হয়ে একজন শাসক নির্বাচন করে ফেলবে এমন কোন সম্ভাবনা ছিলই না। তারও আগে একাধিক নগর রাজ্যকে যে একত্রে শাসন করা সম্ভব সেটাই তো সুমেরদের জানা ছিল না। সারগন সম্ভবত লুগাল-জ়াগেসির থেকে এই ধারণার প্রথম আভাস পেয়ে নিজের চিন্তাভাবনা এক ভিন্ন স্তরে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। লুগাল-জ়াগেসিকে পরাজিত করার পরে, এক লপ্তে অনেকগুলো শহর-রাজ্যের দখল পেয়ে গেলেন সারগন। ক্ষমতা পেয়ে তিনি প্রতিটি নগর-রাজ্যে বিশ্বাসভাজন আক্কাদ প্রশাসক নিয়োগ করলেন। রাখলেন আক্কাদ সেনাবাহিনী। এই ঘটনাগুলো সুমের অভিজাত সম্প্রদায় ভালো মনে হয়তো নিল না, কারণ ক্ষমতা চলে যাওয়া কারওরই পছন্দ না। কিন্তু মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না, সম্রাটের নিয়ম নীতি অমান্যকারীদের কঠোরতম সাজা দেবার জন্য প্রতিটি নগরে রয়েছে আক্কাদ বাহিনী। সাধারণ লোকেরা, যারা সারগনের বিজয়কে স্বাগত জানিয়েছিল, অনেকটা আধুনিক শ্রমিক নেতার মত মনে করে, তাদেরই একজন মনে করে, তারা হতবাক বিস্ময়ে দেখল নিজভুমে পরবাসী হয়ে গেছে।

সারগন ছিলেন প্রখর বুদ্ধির আদ্যোপান্ত আগ্রাসী মানুষ। তিনি মেসোপটেমিয়া নগর-রাজ্যগুলোর শাসন ক্ষমতায় স্থায়ী অবস্থানের জন্য মেয়েকে করে দিলেন মন্দিরের প্রধান পুরোহিত, যা সুমের পুরোহিতদের একচেটিয়া আধিপত্যে ভাঙন ধরাবে। তার পরে মনোযোগ দিলেন রাজ্যের সীমা বিস্তারে। কতটা এসেছিল সারগনের অধিকারে? একটা সহজ বিবরণ আছে সারগনের সাম্রাজ্যের সীমা নিয়ে ‘উপরে সাগর নীচে সাগর’। উপরে ভুমধ্য সাগর নীচে পারস্য উপসাগর। ধারণা করা হয় সারগন বর্তমান সাইপ্রাসও দখল করেছিলেন। দখলে ছিল লেবানন আর তুরস্কের খানিক অংশ। তাঁর দখলে ছিল এলাম, আনাতোলিয়ার অংশ বিশেষ, দিলমুন মাগান। রাজ্যগুলো জয়ের পরে সারগন মন দিলেন প্রকৃত সাম্রাজ্যে গঠনের নানা উন্নয়নমুলক কাজে। গড়ে তুললেন নিজের রাজধানী শহর আগাদে। তৈরি করলেন রাস্তাঘাট। সেচ ব্যবস্থা ছাড়া মেসোপটেমিয়া অচল তাই তার উন্নতির কাজ তো হবেই। আক্কাদদের আমলেই গড়ে ওঠে ডাক ব্যবস্থা। বিশাল সাম্রাজ্যে যোগাযোগ রাখার জন্যই এর দরকার হয়ে পড়েছিল। সে ডাকে চিঠি যেত, তবে তা অবশ্যই সেই মাটির তালে কিউনিফর্ম লিপিতে লেখা। এখানে মুশকিল হয়ে গেল। গোপন বার্তা আর গোপন থাকছে না। সমাধানও বের হয়ে এলো। মাটির তালের লেখা চিঠির উপর আলগা আরেকটি মাটির আস্তরণ বা মাটির একটি বাক্সের মত পাত্রে ঢোকানো হল মাটির তালে লেখা চিঠি। এই বাক্সের মত মাটির মোড়কটিই বোধহয় বর্তমানের খামের জন্মদাতা (কল্পনা করলাম)। মাটির মোড়ক না ভেঙ্গে ভেতরে রাখা চিঠি বের করা যাবে না। তাই গোপন কথাটি গোপনই থেকে গেল।


আরও পরে আক্কাদ সাম্রাজ্যের ভিত মজবুত হবার সাথে তাল মিলিয়ে আক্কাদ শিল্পকলা সাহিত্য রচনায় দেখা যেতে লাগলো উন্নতি। খেয়াল রাখব, ততদিনে সুমের ভাষা লুপ্তপ্রায়। তাই এমনও হতে পারে সেই সুমেররাই আক্কাদ সাহিত্য রচনা করছে। রচনা যেই করুক ভাষা তো আক্কাদ। উন্নতি তো আক্কাদ ভাষারই। আরেকটি কাজ সারগনের আমল থেকেই শুরু হয়। নিয়মিত সৈন্যদল রাখা। একটি ট্যাবলেটের লেখায় জানা গেল, “৫৪০০ সেনা প্রতিদিন রাজার সামনে খাবার খেতেন।” যদিও এটা বর্তমানের বেতনভোগী নিয়মিত সেনা বাহিনীর সাথে তুলনীয় না, তবু বলতেই হয় সেই আমলের প্রচলিত প্রথায় এটা ছিল এক বিশাল পরিবর্তন। কিন্তু ঐ, যার উত্থান হয় তার পতনও হয়। আক্কাদ সাম্রাজ্যেরও পতন একদিন হল। সারগনের জীবনকালেও তার সাম্রাজ্যে একেবারে সব শান্ত ছিল এমন কিন্তু মোটেই নয়। নানা দিকে সুমের রাজাদের বিদ্রোহ লেগেই ছিল।

সারগনের জীবনীর অংশ

“আমার ৫৫ বৎসরের বৃদ্ধ বয়সে, প্রতিটি ভূখণ্ড আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করতে থাকে। তারা আগাদে শহরে আমাকে আটকেও রাখে। কিন্তু এই বৃদ্ধ সিংহ এখনও তার সব নখদন্ত হারায় নি। যুদ্ধে তাদের পরাস্ত করলাম। ছিন্নভিন্ন করে ধ্বংস করে দিলাম তাদের বিশাল সেনা বাহিনী।”

শীর্ষক চিত্র পরিচিতি

সারগন জন্ম কাহিনি লেখা ট্যাবলেট (চিত্র সৌজন্য: উইকি কমন্স)

তথ্যসূত্র

  1. Ancient History Encyclopedia_Sargon of Akkad.
  • Electronic Text Corpus of Sumerian Literature.
  • Stephen Bertman, ‘Handbook to Life in Ancient Mesopotamia’, 2003.  
  • Wikipedia.

মন্তব্য তালিকা - “আক্কাদ সম্রাট সারগন”

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।