আইনজীবী সাধন গুপ্ত ও পশ্চিমবঙ্গে ভূমিসংস্কার আইন
বিশ শতক সমগ্র বিশ্বের ইতিহাসে এক অনন্য সময়। এই সময়ে একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক রাজনীতি ছিল উত্তাল তেমনি তার প্রভাব বিভিন্ন দেশ গুলির আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও দেখতে পাওয়া যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে জার সাম্রাজ্যবাদের পতন ঘটে, সোভিয়েত ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়। এই ঘটনা একদিকে যেমন বিশ্বের সর্বহারার শ্রেণী আন্দোলনে নতুন জোয়ার নিয়ে এল, তেমনি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা একাধিপত্যেও বেশ কিছুটা ঘা লাগল। রাশিয়ার বিপ্লব ভারতবর্ষের মতো পরাধীন দেশ গুলির চোখে ঔপনিবেশিক শক্তির করাল ছায়া থেকে মুক্তির এক নতুন স্বপ্ন বুনে দিচ্ছিল । দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ধনতন্ত্রের সংকট প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানে শেষ হল না, বিশ্বশান্তিও বেশি দিন স্থায়ী হল না। এক দশকের কিছু পরে ইউরোপে আবারও ফ্যাসিবাদের প্রচণ্ড হুঙ্কারে বৃহত্তর বিপদের অশনি সংকেত দেখা দিল। তার এক দশকের মধ্যে শুরু হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তবে এবার লড়াই সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আর ফ্যাসিবাদী শক্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রইল না। কিছুদিনের মধ্যেই সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত রাশিয়ার উপরেও ফ্যাসিবাদী আক্রমণ পরিলক্ষিত হল। তবে সমাজতন্ত্রের পক্ষে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের সমস্ত প্রগতিশীল দেশ গুলি একত্রিত হলে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ পরিণত হল জনযুদ্ধে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতির এই আবহে ভারতবর্ষে স্বাধীনতা আন্দোলনে জোয়ার এল। সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার অভিঘাতে এদেশের যুবসমাজ চাইছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি দেশ কুসংস্কার মুক্ত হবে, শিক্ষার আলোকে আলোকিত হবে। দেশের মানুষ, যারা দুঃখ দারিদ্র, শত বঞ্চনার শিকার, তারা মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এই রকম জীবনবোধে বিশ্বাসী এক স্মরণীয় ব্যক্তিত্বের নাম সাধন গুপ্ত, যিনি বিশ্বকবির কথায় “এই সব মূঢ় ম্লান মূক মুখে দিতে হবে ভাষা, ওই সব শ্রান্ত ক্লান্ত ভগ্ন বুকে ধ্বনিয়া তুলিতে হবে আশা” এই ব্রতে চিরজীবন ব্রতী ছিলেন।”
সাধন গুপ্তের জন্ম ১৯১৭ সালের ৭ই নভেম্বর, ঐতিহাসিক নভেম্বর বিপ্লবের দিনে। পিতা যোগেশ চন্দ্র গুপ্ত ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের নামজাদা ব্যারিস্টার ও জাতীয় কংগ্রেসের তৎকালীন নেতা, এতদসত্বেও পুত্র সাধন গুপ্ত বিপ্লবের তত্ত্বে আকৃষ্ট হন ও পরবর্তী কালে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। মাত্র দেড় বছর বয়সে গুটি বসন্তে আক্রান্ত হয়ে তিনি দৃষ্টি শক্তি হারান কিন্তু অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে কোন প্রতিবন্ধকতাকেই তিনি নিজের স্বপ্ন পূরণ ও কর্মদক্ষতা অর্জনের পথে বাধা সৃষ্টি করতে দেননি। এই বিষয়ে অবশ্যই তাঁর বাবা মা-এর অবদানও অনস্বীকার্য। অল্প বয়স থেকেই তাকে সাঁতার শেখানো হোক বা পড়াশুনো, কোন অবস্থাতেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে আলাদা করে না রেখে আর পাঁচটি শিশুর মতোই বড় করা হয়। মা ছেলেকে নিজ তত্বাবধানে ব্রেইল শিখিয়ে পড়তে শেখালেও তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় ক্যালকাটা ব্লাইন্ড স্কুলের হাত ধরে। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন নিয়ে পড়াশুনা করেন। উল্লেখ্য দৃষ্টিহীনতার কারণে আইন পেশাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে তাঁকে বহু বাধার সম্মুখীন হতে হয় কারণ এর আগে হাইকোর্টে কোন দৃষ্টি হীন ব্যক্তিকে আইন ব্যবসার সনদ দেওয়া হয়নি। তিনি তাঁর স্মৃতিচারণাতে লিখেছেন যে চিফ জাস্টিস ডার্বিশায়ার তাঁকে আইনপেশায় প্রবেশাধিকার দেন। এরপর সমস্ত শারীরিক প্রতিবন্ধকতাতে তুচ্ছ করে সাধন গুপ্ত আইনপেশায় সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছন যা সারা বিশ্বে আইন পেশায় এক অনন্য ঘটনা।
স্মৃতিচারণায় তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে আইনচর্চাকে কখনই তিনি পেশা হিসেবে গ্রহণ করেননি। মামলায় তাঁর প্রথম হাতেখড়ি বিনা বিচারে আটকে ১৯৪২ এ ‘ভারতছাড়ো’ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের হয়ে লড়ার সূত্রে। সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে এই মামলায় অর্থাৎ “এম্পেরর বনাম শিবনাথ ব্যানার্জী “ লড়াইয়ে তিনি ছিলেন প্রথম সারির সেনাপতি । ১৯৪৪ সালে তাঁর বিবাহ উপলক্ষে যোগেশ চন্দ্র গুপ্তকে কে লিখিত একটি চিঠিতে গান্ধীজী সেই প্রসঙ্গে লেখেন- “When I saw in the papers months ago a reference to a blind lawyer brilliantly arguing his case before the Federal Court, I never knew that you had the honour to own that lawyer as your son. May his marriage be a blessing to him and his future wife. I congratulate her on her choice.”. প্রসঙ্গত উল্লেখ্য তাঁর জীবন, জীবিকার ক্ষেত্রে সহধর্মিণী মঞ্জরী গুপ্তের অবদানও অনস্বীকার্য। কিছুটা পরিকল্পনাহীন ভাবেই বিশেষ করে স্বামীকে তার পেশায় সাহায্যের তাগিদেই মঞ্জরী দেবী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন নিয়ে পড়াশুনা করেন। একদিকে ৫ ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসার, স্বামীর কাজে সাহায্য, তার জন্য পড়াশুনো, এর পাশাপাশি বিভিন্ন সভা-সমিতিতে অংশগ্রহণ ও সেই সঙ্গে নিজের স্বাবলম্বী হওয়ার তাগিদে আইন চর্চা, সবটা মিলিয়ে চল্লিশের দশকেও তিনি যেন আজকের আধুনিকা নারী। তাঁর নিজের লেখা থেকে জানা যায় ১৯৪৬ সালে যখন মিঃ গুপ্ত বার ফাইনাল ক্লাস করতে ও পরীক্ষা দিতে লন্ডনে যান, যাত্রাপথে সারাক্ষণ বই পড়ে শোনানো ছিল তাঁর অন্যতম কাজ। তিনি এপ্রসঙ্গে লেখেন “বড়দিনের ছুটিতে কনটিনেন্ট ভ্রমণ কালে মিঃ গুপ্ত কে বই পড়ে শোনাচ্ছি, এমন সময় ট্রেনে এক ভদ্রলোক আমার হাত ধরে বললেন- “আর পড়ো না এবার বাইরের সৌন্দর্য দেখ”।
মিঃ গুপ্ত এর সঙ্গে পরিচয় প্রসঙ্গে তিনি লেখেন “বিয়ের আগে একদিন দেখা, ওদের সার্কাস অ্যাভিনিউ এর বাড়িতে আর সেখানেই সাধন গুপ্তর সঙ্গে প্রথম পরিচয় – তার গান শোনা ও তাস খেলা, খুব ভালো ব্রিজ খেলতেন- “আমিও খেলতাম। তাস খেলাটা জমল না কারণ আমাদের দুই পার্টনার মোটেই খেলছিলেন না। আমাকে খুঁটিয়ে দেখতেই ব্যস্ত ছিলেন। তাঁরা ছিলেন আমার ভবিষ্যতের শাশুড়ি আর ননদ”।
তিনি আরও বলেন গুপ্তের পরিবার ছিল বেশ বড়, ৩০ জন সদস্যের, বিশাল ব্যাপার। সারাক্ষণ হাসি, গল্প, গান। সাতগাঁয় গ্রামের বাড়িতে গেলে রোজ রাতে গানের আসর বসত , আসর মানেই আই পি টি এ এর গান। মিঃ গুপ্ত দরাজ গলায় গাইতেন- গ্রামের গরীব শ্রোতার দল তাতে মুগ্ধ হয়ে শুনত আর বলত “এতো আমাগো গান। পরানটা হিবরি দিয়া ওঠে”। একবার ১৯৪৯ সালে ময়দানে কমিউনিস্ট পার্টির একটা খুব বড় মিটিং হল, মিটিং এর প্রস্তুতি গোপনে। কমরেড গুপ্তের উপর আদেশ এল মিটিং এ বক্তৃতা না দেওয়ার, কদিনের চেষ্টায় তিনি একটা গান রচনা করে সুর দিয়ে ফেললেন। মিটিং এ এসে সেই গান গাইলে মানুষের মনে বক্তৃতার চেয়েও বেশি সাড়া ফেলল। এতটাই প্রতিভার অধিকারী ছিলেন তিনি। গ্রামের বাড়িতে অনেক সময় যাত্রা নির্দেশনার সাথে সাথে অভিনয় ও করতেন যার দ্বারা গ্রামের তথাকথিত ‘ছোটলোক’ থেকে শুরু করে ভদ্রসমাজ সকলেরই মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা হত। এই প্রাণচঞ্চল ব্যক্তিটি যে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জীবনে নিজের প্রতিভার মাধ্যমে সকলকে তাক লাগিয়ে দিতেন তা নয় বরং কর্মক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন সমান চৌকস।
তাঁর জীবনে সাধন গুপ্ত প্রথম ছিলেন কমিউনিস্ট ও বিভিন্ন বামপন্থী আন্দোলনের সংগঠক ও পরে আইনজীবী। ১৯২৯ সালে মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় সব বন্দীদের হয়ে কমরেড মুজফ্ফর আহমদকে আসামীর কাঠগড়া থেকে একটি জবানবন্দী দিতে বলা হলে কাকাবাবু এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন – কমিউনিস্টরা কি চান? শ্রমিক শ্রেণীর আন্তর্জাতিকতা বলতে কি বোঝায়? শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার বলতে কি বোঝায়? কৃষকদের মুক্তির অর্থ কি? – জমিদার মহাজনদের হাত থেকে, নানা বঞ্চনা থেকে কৃষকদের কিভাবে রক্ষা করতে হবে? আমাদের ছেলে মেয়েদের কি করে নানা ভাবে শিক্ষিত করে তুলতে হবে, মেয়েদের কিভাবে সংসারের কাজের বন্ধন থেকে মুক্ত করে বাইরের জগতে নিয়ে আসতে হবে, সামাজিক নানা দায়িত্বের কাজে থাকবে তারা। আনন্দের সঙ্গে সংসার, সমাজ, ও দেশের দায়িত্ব পালন করবে- বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে মৈত্রীর বন্ধন – আন্তর্জাতিক ভাবে শ্রমিক শ্রেণী ঐরূপ বিশ্ব গড়ে তুলবে- সব দেশই সুখে শান্তিতে থাকবে আমাদের দেশও সুখে শান্তিতে থাকবে- সর্বশেষে বলা হয়েছিল ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি এবং সমস্ত প্রগতিশীল সংগঠন এভাবেই বিশ্বকে ও নিজের নিজের দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে চায়। এই সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব দেশে দেশে শ্রমিক শ্রেণী সফল করে তুলবে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের নেতৃত্বে । — এই ভাবনা এই দম্পতির ব্যক্তিগত জীবনে সম্পৃক্ত ছিল। যদিও মঞ্জরী গুপ্তের কমিউনিস্ট পার্টিতে সক্রিয় ভাবে প্রবেশ ১৯৬৭ সালে কিন্তু সাধন গুপ্তের বি পি এস এফ এর প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তাঁর স্ত্রী হিসেবে পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। এ প্রসঙ্গে শ্রীমতি গুপ্ত লেখেন – “মিঃ গুপ্ত যখন বি পি এস এফ এর প্রেসিডেন্ট হন তখন সেই সূত্রে পার্টির মধ্যে আমার জায়গা হল প্রথমে মঞ্জু বৌদি অনেকপরে যখন পার্টিতে ঢুকলাম ১৯৬৭ সালে তখন আমি মঞ্জুদি”।
তিনি আরও বলেন- “ মিঃ গুপ্ত যতদিন ছাত্র ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন তাকে সারা বাংলায় বিভিন্ন কাজে ঘুরে বেরাতে হত। যুদ্ধটা যে জনযুদ্ধ সেটা বোঝানোই একটা কাজ ছিল।“ এপ্রসঙ্গে সাধন গুপ্ত তাঁর স্মৃতিকথায় বলেন – “একবার ট্রেনে যাবার সময় উপরের বার্থ থেকে একটি ১৭/১৮ বছরের ইংরেজ ছেলে বলছে- I want to go to my mummy, I want to see her করুণভাবে সে বলেই চলেছে কিন্তু তার সঙ্গে কোন কথা বলার বা সহানুভুতি দেখাবার উপায় নেই। এরা শুধু জানে কাউকে মারতে হবে নয়তো নিজেকে মরতে হবে । কেন যুদ্ধ ? কার সঙ্গে যুদ্ধ তারা কিছুই জানে না।“ অনেকটা জর্জ বানার্ড শ এর canon fodder গল্পের মত।
প্রসঙ্গত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ২ বছরের মধ্যেই ভারতে স্বাধীনতা আসলেও তা খুব একটা শান্তিপূর্ণ পথে আসেনি। ১৯৪৬ এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, জমির জন্য, ফসলের জন্য লড়াইয়ে নেমে পুলিশের গুলিতে কৃষকের মৃত্যু, পরবর্তী সময়ে কখনো খাদ্য আন্দোলনে নৃশংস লাঠি চালিয়ে কৃষক, ছাত্র, নারী হত্যা, জেলে কমরেডদের উপর পুলিশি অত্যাচার সাধন গুপ্তের বিপ্লবী মনে সাড়া জাগাতে থাকে। এপ্রসঙ্গে বলা দরকার কলকাতায় দাঙ্গার সময় পার্ক সার্কাসের বাড়িতে থাকলেও তাদের কোন অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়নি বরং পাড়ার মসজিদ ও সবার রক্ষণাবেক্ষণে তাঁরা দু দিন বেশ ভাল ভাবে কাটান ,পরে তাদের থিয়েটার রোডের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে বাড়ির আশে পাশে সেভাবে দাঙ্গার প্রভাব না থাকলেও আহত মানুষদের তাদের বাড়িতেই আশ্রয় দেওয়া হত। এই দরদী মনটা ছিল তাঁর পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত। মিসেস গুপ্তের লেখা থেকে জানা যায় যে মিঃ গুপ্তের সাতগাঁর গ্রামের বাড়িতে কিভাবে গ্রামের জাত বিচার ভেঙ্গে পুজোর তিন দিন গ্রামের সকলকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে “রান্নার ঠাকুরের সাথে সাথে নমশূদ্র ছেলে মেয়েরা জল তোলা, মশলা বাঁটার কাজে লাগল, জাত যাবার ভয়ে প্রথমে কেউ খেতে না চাইলেও শেষে বাবার (যোগেশ চন্দ্র গুপ্ত) কঠোরতায় সকলেই একত্রিত হয়ে উৎসবের আনন্দ ভোগ করত” এই উদার পরিবেশে বড় হওয়ার দরুন মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব, ভেদাভেদ তাদের পীড়ন মিঃ গুপ্তকে স্বাভাবিক ভাবেই ভাবাত যা তাকে কালক্রমে সক্রিয় রাজনীতিতে এসে মানুষের লড়াইতে সামিল হতে উদ্বুদ্ধ করে। মঞ্জরি গুপ্তের লেখা থেকে জানা যায় বাড়িতে সব সময় ছিল বিপ্লবের কবিতা , গান, সেই সঙ্গে মিটিং এ জর্জ বিশ্বাস, সলিল চৌধুরী মি গুপ্ত কে আরও প্রেরণা দান করে।
এই পরিস্থিতিতে ১৯৫২ সালে স্বাধীন ভারতের প্রথম লোকসভা নির্বাচন সংগঠিত হয়। ডাঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর বিরুদ্ধে দাড়িয়ে সাধন গুপ্ত নির্বাচনে হারলেও পরের বছর ডাঃ মুখার্জীর মৃত্যু হলে উপ নির্বাচনে ডাঃ রাধাবিনোদ পালের বিরুদ্ধে লড়াই করে দঃ পূঃ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে তিনি জয়যুক্ত হলেন। দিল্লিতে একাধারে লোকসভার কাজ অন্যদিকে আদালতের কাজ উভয় ক্ষেত্রেই সমদক্ষতার পরিচয় দেন। মিসেস গুপ্তের কথায় “ওনার কাজ ছিল পুঙ্খানুপুঙ্খ , উভয় জায়গাতেই খুব active, ১৯৬৩ সালে আইন পাশ করে মিঃ গুপ্ত কে assist করার দায়িত্ব নিলেও কাজটা খুব কঠিন কারণ তিনি মামলা গুলি নিজে পড়ে নিজেই সব ঠিক করতেন, এত দ্রুত কাজ করতেন যে কিছুই বুঝতাম না।“ এরপর ১৯৬৯ সালে সিপিআইএম প্রার্থী হিসেবে আবার সাধন গুপ্ত বিজয়ী হন। এছাড়াও সাধন গুপ্ত জীবনবীমা রেল সহ বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠনের সংগঠকও ছিলেন।
প্রকৃতপক্ষে এই কমিউনিস্ট আইনজীবীর মূল লক্ষ্য ছিল তার শ্রেণী চেতনাকে শানিত রেখে বিচার ব্যবস্থার প্রতি কোন মোহ সৃষ্টি না করে শ্রমিক কৃষকদের হয়ে বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করা। সে কারণেই শ্রমিক কৃষকদের বিরুদ্ধে কারখানা মালিক বা জমির মালিকদের হয়ে মামলা তিনি করতেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন আমরা সর্বত্র যে আন্দোলন করি সে আন্দোলনকে সফলতার রূপ দেয় আদালত ফলে আদালতে সঠিক ভাবে আন্দোলনের বার্তা পৌঁছে দেওয়া অত্যন্ত জরুরী, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক অর্থনৈতিক আন্দোলনকে সাফল্যে পৌঁছে দিতে পারে সমাজ সচেতন আইনজীবীরা। তাই ১৯৭৪ সালের ৮ ই মে ভারতে রেলওয়ে ধর্মঘট চলাকালীন সময়ে বহু কর্মচারীর চাকরি চলে গেলে তিনি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কোর্টে তাদের হয়ে লড়াই করেন। তবে যে বিষয়টির জন্য তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন তা হল ১৯৭৮ সালে অপারেশন বর্গার মামলার নিরসন।
এ বিষয়ে উল্লেখ করা প্রয়োজন ১৯৭৭ সালে রাজ্য প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণের পর বামফ্রন্ট সরকার উপলব্ধি করে যে গ্রামের সহায় সম্বল হীন কৃষক ও বর্গাদার/ভাগচাষীদের আইনগত অধিকার দানের মাধ্যমে তাদের স্বনির্ভর করে তুলতে না পারলে রাজ্যের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই উদ্দেশ্যে দীর্ঘ কালের কৃষক আন্দোলনের দাবী গুলিকে আংশিক স্বীকৃতি দিয়ে গ্রামীণ জনজীবনে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে বামফ্রন্ট সরকার তাদের ভূমিসংস্কারের কর্মসূচীকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করে। এক্ষেত্রে তাদের ভূমিসংস্কার কর্মসূচির প্রধান লক্ষ্য ছিল নির্বাচন পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী –
১) উদ্বৃত্ত ও বেনামী জমি অধিগ্রহণ করে ভূমিহীন গরীব চাষিদের মধ্যে বিনামূল্যে বণ্টন, জমির মালিকানা কেন্দ্রীকরণের সকল পদ্ধতির অবসান ঘটিয়ে বর্গাদার, ভূমিহীন খেতমজুরদের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা দানের উদ্দেশ্যে ভূমিসংস্কার আইন ১৯৫৬ এর আমূল পরিবর্তন।
২) চাষিদের দুর্দশার ভার লাঘব করার উদ্দেশ্যে তাদের সকল ঋণ মোকুব করা; সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে তাদের নতুন ঋণ প্রদান; নির্দিষ্ট সময় অন্তর ঋণের ব্যবস্থা করা ও সুদখোরদের বিরুদ্ধে নিবৃত্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ।
৩) পাঁচ একর পর্যন্ত জমির মালিকদের জমির খাজনা মোকুব করা; সেচ ও অসেচ এলাকার খাজনার পুননির্ধারণ এবং জমি উৎকর্ষের মূল্যায়নের ভিত্তিতে খাজনা হ্রাস।
৪)জমির মালিকের উপর বহুমুখী করের বিলোপ সাধন করে যুক্তি সঙ্গত ভিত্তিতে নির্ধারিত একমুখী কৃষি আয়কর প্রবর্তন।
৫) খেত মজুরদের সারা বছরের কাজ প্রদান এবং জীবন ধারণের উপযোগী মজুরি প্রদান; বর্তমান স্তর থেকে তাদের নূন্যতম মজুরি বৃদ্ধি ও তা সুনিশ্চিতকরণ।
৬) বিশেষভাবে গরীব ও ভূমিহীনদের যুক্তিসঙ্গত হারে ও অনুমোদনের ভিত্তিতে বীজ সার কৃষি যন্ত্র ইত্যাদির সরবরাহ
৭) সেচের কাজ ও প্রকল্পের উন্নতিসাধন
8) কৃষি সমবায়ে উৎসাহ দান।
তবে বামফ্রন্ট সরকারের ভূমিসংস্কার কর্মসূচির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল অপারেশন বর্গা। যদিও পশ্চিমবঙ্গ ভূমিসংস্কার আইনের ১৯৫৫, ৫০ (ই) বিভাগ অনুযায়ী ১৯৭৪ সালেই ভূমি স্বত্বলিপি তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায় কিন্তু ১৯৭৪-৭৭ এই তিন বছরে বর্গাদারদের নাম যথেষ্ট পরিমাণে রেকর্ড করা সম্ভব হয়নি। এর প্রধান কারণ ছিল – ক) বর্গাদারদের নিজস্ব অধিকার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব, খ) জমির মালিকদের ভয় ও তাদের উপর নির্ভরশীলতা, গ) নিজেদের সংগঠনের অভাব কিন্তু বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এলে তারা উপলব্ধি করে যে বর্গাদারদের নাম সেটেলমেন্ট রেকর্ডে নথিভুক্ত না হওয়ার ফলে তারা নানারকম আইনগত সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মন্ত্রী বিনয় চৌধুরী ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের ছোট বড় সব অফিসারদের নিয়ে ক্যাম্প করে বিষয়টির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বোঝান ও নাম নথিভুক্তির কাজ শুরু হয়।
এপ্রসঙ্গে বলা জরুরী যে ভূমি বিষয়ক ভাবনা চিন্তা যে শুধুমাত্র বামফ্রন্টের আমলেই হয়েছে তা নয়। যেহেতু জমির ন্যায্য ও যথাযথ অধিকার দানের মাধ্যমেই এই দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার সমাধান সম্ভব তাই প্রশাসনিক তরফে জমির মালিকানাকে নিয়ে চিন্তাভাবনা, সরকারি মহলে জমিনীতিতে একাধিক সংস্কার সাধনের প্রচেষ্টা একাধিক বার দেখা গিয়েছে তা সে ঔপনিবেশিক সরকার কর্তৃক হোক বা স্বাধীনতাত্তর পর্বে দেশীয় সরকার দ্বারা। তবে সরকার কর্তৃক যে সংস্কার আইনগুলির প্রণয়ন করা হয় তা অনেক ক্ষেত্রে খাতাকলমেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। এর অন্যতম কারণ ছিল বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতায় আসা রাজনৈতিক দল ও তার নেতৃবৃন্দের স্বার্থান্বেষী মনোভাব, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন ও জমিদার সহ একাধিক মধ্যস্বত্বভোগীদের আর্থ-রাজনৈতিক আধিপত্যে। এই সকল ত্রুটি ছাড়াও যে বিষয়টি সামগ্রিক পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তা হল জমিদার-জোতদারদের তরফে কৃত একাধিক সরকার বিরোধী ভূমি মামলা। ফলে বারংবার আইনি সংস্কার সত্ত্বেও ১৯৪৬ এ তেভাগা আন্দোলন প্রসূত স্লোগান “Land to the tillers” অর্থাৎ লাঙ্গল যার জমি তার বা ১৯৪০ এর ফ্লাউড কমিশন কর্তৃক চিরস্থায়ী প্রথা তথা জমিদারী অবলুপ্তি ও বর্গাদারদের প্রকৃত অধিকার দানের ভাবনা অনেকটাই অধরা থেকে যায়।
জাতিসঙ্ঘের সনদের আদলে তৈরি স্বাধীন ভারতের সংবিধানে Justice –Social Political Economic এর উল্লেখ করে শোষণ পীড়ন মুক্ত যে দেশ গঠনের সংগ্রাম শুরু হয়েছিল তারই প্রকাশ ঘটে নতুন নতুন আইন রচনার মাধ্যমে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ১৯৫০ এর বর্গাদার আইন। ১৯৫৩ সালের এস্টেট অ্যাকুইজিশন আইন (Estate Acquisition Act), বা ১৯৫৫ র ভূমি সংস্কার আইন (Land Reforms Act)।
ক্রমে বর্গা রেকর্ডের সংগ্রাম শুরু হয়। তবে নথিভুক্তির এই পথ এতটাও সহজ ছিল না। ৯ই অগাস্ট ১৯৭৮-র বিজ্ঞপ্তি ধরে কাজ শুরু হলে মামলায় কোর্ট রুম ভরে যেতে থাকল। সাধন গুপ্তের অন্যতম ল ক্লার্ক রঞ্জিত বাবুর কথায় ১৯৭৮ সালে কলকাতা হাইকোর্টে বহু অপারেশন বর্গার মামলায় সাধন গুপ্তই প্রথম আইনজীবী ছিলেন। তাকে সরকারের পক্ষ থেকে অ্যাডিশনাল অ্যাডভোকেট জেনারেলের পদে নিয়োগ করা হয়। তিনিই ছিলেন এই পদের প্রথম অধিকারী। তার সঙ্গে এই কাজে সহযোদ্ধা ছিলেন তাঁর স্ত্রী আইনজীবী মঞ্জরী গুপ্ত ও গণতান্ত্রিক আইনজীবী ফ্রন্টের ছেলেরা। মঞ্জরী গুপ্ত তাঁর স্মৃতিচারণায় উল্লেখ করেছেন – “একের পর এক petition এ injunction হয়ে যাচ্ছে, মামলার শুনানি না হলে বর্গাদাররা জমিতে ঢুকতে পারবে না , যা ছিল চাষিদের পক্ষে মানা একপ্রকার অসম্ভব। এই অবস্থায় সব চাষিদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হতে থাকে। গ্রেফতার করে বর্গাদারদের আনা হলে পার্টির ছেলে মেয়েরা তাদের জামিনে খালাস করছে। Contempt Application এর বিরুদ্ধে জবাব পেশ হচ্ছে। যার মূল কথা – জমি তারা চাষ করেছে এখন ফসল না পেলে তারা না খেতে পেয়ে মরবে। Contempt Application এর জবাবে এই রূপ Affidavit পেয়ে জজ সাহেব সেই চাষিকে ডেকে পাঠালেন trial on evidence এ অর্থাৎ জজ সাহেব প্রতিবাদীকে ডেকে জেরা করে বুঝবেন কথাটি তার না অপরের বানানো। সেই মত আমাদের এক মক্কেলকে ডেকে পাঠানো হল, বীরভূমের প্রত্যন্ত গাঁয়ের সেই চাষি কোর্টে দাড়িয়ে কথা বলতে পারবে কিনা ভাবতে থাকলে দেখা গেল কাঠগড়ায় দাড়িয়ে সে সপ্রতিভ হয়ে হুজুর বাহাদুরকে জবাব দিল। প্রশ্ন এল –“ তুমি কি আমার আদেশ বুঝতে পেরেছিলে? তুমি কি লেখাপড়া জানো?” তার উত্তরে জবাব এল – “না বটে, আদেশ বুঝতে পারছি, কৃষক বাবুরা বুঝায়ে দিচ্ছে” ।
প্রশ্ন এল “তবে আদেশ অমান্য করে জমিতে ঢুকলে কেন –
উত্তর:- না ঢুকলে ধান কাইটব কে? ধান বুনলাম আমি কাইটব কে?
হুজুর বাহাদুর মামলা খারিজ করলেন। একজনের পর একজন আসছে মামলা জিতে বেরিয়ে যাচ্ছে।
এরপর ৭/৮/৭৮ এর বিজ্ঞপ্তি নিয়ে হাজার হাজার মামলার একটি শুনানি আরম্ভ হল, শুনানি শেষে মাননীয় বিচারক সরকার পক্ষকে হারিয়ে রায় দিলেন – রায়ের সঙ্গে নির্দেশ দিলেন অবিলম্বে operation barga র কাজ বন্ধ করা হোক, আপিল ফাইল করলে দুই দিনে injunction application list এসে গেল ২২/১২ তারিখের আদেশটি স্থগিত রাখার আদেশ পেলাম “ ।
তিনি আরও বলেন “এই মামলা উপলক্ষে বহু বর্গাদার চাষিরা কলকাতা আসতেন, আমাদের থিয়েটার রোডের বাড়িতে প্রচুর জায়গা ও জল ছিল কাজেই ওখানে থাকতে অসুবিধা ছিল না, শুধু বাইরে খেয়ে আসতে হত। এক দিন একটা মজার ঘটনা ঘটল। আমি কোথাও যাবো বলে রেডি হয়ে বেরিয়েছি সঙ্গে যতীন (আমাদের ড্রাইভার) আছে, নীচে এসে দেখি বেঞ্চের উপর এক কৃষক বসে আছেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম – খাওয়া হয়ে গেছে? সে বেশ রাগত স্বরে জবাব দিল – তু খাতে দিছিস? বুঝলাম প্রশ্ন করাটা ঠিক হয়নি, যতীনকে পাঠিয়ে শিগগিরি ভাত চাপিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হল।“
বলা বাহুল্য বর্গা আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মূল যে মামলাটি হয় – ‘বিশ্বনাথ ঘোষ বনাম স্টেট’, রাতের পর রাত জেগে সাধন গুপ্ত ও তার আইনজীবী স্ত্রী মঞ্জরী গুপ্ত তার লড়াই করেন। দীর্ঘ লড়াই এর শেষে জয় বামপন্থী সরকারের ভূমিসংস্কার সংক্রান্ত এই নীতি আদালতে কার্যকর করতে সহায়ক হয়। বর্গা চাষিদের অধিকার রক্ষার এই লড়াইয়ে প্রায় ৬০ হাজারের ওপর মামলার তিনি নিরসন করেন।
উল্লেখ্য বর্গা মামলা অর্থাৎ বিশ্বনাথ ঘোষ বনাম স্টেট মামলায় সমস্ত বিষয়টির প্রাঞ্জল ব্যাখ্যা করে বর্গা রেকর্ড কিভাবে করতে হবে আদালত তার একটা দিক নির্দেশ করে দেয়- এপ্রসঙ্গে বলা বাহুল্য মাননীয় বিচারপতির তরফে সাধন গুপ্তের তোলা প্রতিটি point এর detail submission এর ওপর গুরুত্ব দানের প্রশংসা করা হয়। তিনি উল্লেখ করেন Learned advocate General submitted that it was not correct to state that Operation Barga was not justified by law. He urged that the idea was to record large number of bargadars, who according to him, had not been recorded so far as they were entitled under the law to be so recorded, with all the possible expedition Operation barga was a convenient phrase to describe the process and to impress the urgency of requirement particulary on the officials concerned. একই সঙ্গে সাধন গুপ্তের অন্যান্য একাধিক মামলার citation এর মাধ্যমে West Bengal Land reforms act 1955, West Bengal Land Reforms rules, 1965 বিচারের ওপর গুরুত্ব দেন। He urged that the recording may be either (a) by bringing up to date the records already prepared by incorporating changes including cultivation by bargadars or (b) by preparation of new records of rights. According to him, the situation was governed by S.50 and Rule 21 Clause € of section and Rule 21 (2) made special provision for recording of bargadars while Rule 21(1) also enabled Bargadars to be recorded in a proper case where there had been already an adjudication about his status by appropriate proceedings. রেকর্ডিং এর নিয়মে violation প্রসঙ্গে গুপ্ত বলেন said communication merely embodied certain decisions taken at workshop held 23rd of June and 24th of June 1978. The said communication has no legal and official effect. মাননীয় বিচারপতি এ বিষ্যে রায় দেন যে- If the said communication dated 5th of July 1978 contains any direction or communication on the recording of bargadars except in strict compliance with relevant statutary provisions or the rules framed thereunder the the concerned revenue officers will not only be free but it will be their duty to ignore the communication dated 5th of July 1978 and if recording of bargadars is done in accordance with the circular of 5th of July 1978, ignoring the relevant statutory provisions then the concerned officers would be acting illegally and would be guilty of violation of law. এই রূপ প্রতিটি অভিযোগের বিরুদ্ধে উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ সাপেক্ষে যুক্তি পরিবেশনের মাধ্যমে বর্গাদারদের পক্ষে মামলার নিরসন সম্ভব হয়। পরিশেষে বলা আবশ্যক মহামান্য আদালতের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয় যে বর্গাদারের অধিকার রেকর্ড করতে হবে নিশ্চয় কিন্তু তা হবে একেবারে আইন সঙ্গত ভাবে, আদালত নির্দেশ দেয় তাড়াহুড়ো করে বা এক সঙ্গে অনেকের নাম রেকর্ড করানো হলে বর্গাদাররা উৎসাহ পায় ঠিকই কিন্তু তাতে ক্ষেত্র বিশেষে অবিচার হওয়ার ভয়ও থেকে যায়।
পরবর্তী সময়ে এমনকি ১৯৯৬ সালে কোন পদেই আসীন না থাকলেও তিনি বেশ কিছু জমি মামলার (যা মূলত ছিল ভূমি সংস্কার আইনের জমি অধিগ্রহণের সমস্ত ধারা গুলিকে চ্যালেঞ্জ করে কৃত মামলা) দায়িত্বে ছিলেন মিঃ গুপ্ত নিজে। প্রতিটি ধারা ধরে ধরে বিচার হল, মঞ্জরী গুপ্ত র কথায় “অবশেষে যখন রায় বের হল তখন দেখা গেল জজ সাহেব প্রতিটি ধারা ধরে এমন বিচার করেছেন যে মনে হবে বিরুদ্ধে যাবে এই রায় কিন্তু প্রত্যেকটি ধারাতেই সরকার পক্ষকে জিতিয়ে দিয়েছেন। শুধুই উদ্বৃত্ত জমির জন্য যে ক্ষতিপূরণ ধার্য করা হয়েছিল সে ধারাটিতে তাকে নাকচ করা হয়। কোর্টের মতে এই ক্ষতিপূরণ ক্ষতিপূরণ না দেওয়ারই শামিল”।
প্রকৃতপক্ষে দৃষ্টিশক্তিহীন হয়েও অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও মানসিক দৃঢ়তার জোরে তিনি এক অনুকরণীয় জীবন পরবর্তী প্রজন্মের কাছে রেখে গেছেন, এককালে যিনি নানা সংগ্রামে ভারতের বিভিন্ন আদালতে ঘুরে কাজ করে বেড়িয়েছিলেন, সংগঠনের কাজ হোক কি পার্টির কাজ যেখানেই প্রয়োজন নিজে থেকে নিরলস ভাবে কাজ করেছেন। সেই মানুষটি তার জীবিতাবস্থায় যোগ্য সম্মান পাননি। মিসেস গুপ্ত অভিযোগের সুরে তাই লিখেছেন “এ কি তিনি নিজে অন্ধকারে আছেন বলে? আমার কেমন ধারনা তিনি প্রতিবন্ধী বলেই তাকে দূরে দীর্ঘকাল কোন কাজ না দিয়ে রাখতে পেরেছিলেন।“ তবে একথা অনস্বীকার্য যে যোদ্ধার স্বীকৃতি যুদ্ধতেই সীমাবদ্ধ। তাই তো কবি নজরুল লিখে গেছেন “বিদ্রোহী রণক্লান্ত আমি সেইদিন হব শান্ত.. যবে অত্যাচারের ভীম রণভুমে রণিবে না।“
তথ্যসূত্র
Basu S K, Bhattacharya, S,K Land Reforms in West Bengal : A Study on Implementation, Calcutta : Oxford Book Company,1983
Bhaumik, Sankar , Kumar , Tenancy Relation and Agrarian Development : A Study of West Bengal, New Delhi : Sage Publication , 1993
Cooper Adrienne , Sharecropping and Sharecroppers Struggle in Bengal 1930-1950, Calcutta : K P Bagchi & Co, 1988
Bandopadhyay D. Land Reform of West Bengal, Government of West Bengal, 1980
Ghose Tushar , Kanti , Operation Barga and Land Reforms (An Indian Experiment) Delhi : BR Publishing Corporation , 1986
Leiten , G K , Continuity and Change in Rural West Bengal , New Delhi : Sage Publication 1992
Mitra Sarada Charan, The Land Law of Bengal Calcutta: Thaker Spink & co Publication 1898
Mullick’s Commentaries on West Bengal Land Reforms Act 1955, Kolkata : Kamal Law House ( Ninth Edition ) 2015
গুপ্ত মঞ্জরী, ‘দেখা না দেখা কলকাতা’ রেনেসাঁ প্রকাশন ২০১৪
চট্টোপাধ্যায় বঙ্কিম চন্দ্র , ‘বঙ্গদেশের কৃষক কলকাতা’ পূর্বা প্রকাশন ১৮৯২
বামফ্রন্ট সরকার, মানুষই শেষ কথা, গণশক্তি কলকাতা ২০১১
Bandopadhyay, Nripen , ‘Operation Barga and Land Reforms Perspective in West Bengal : A Discursive Review’, Economic and Political Weekly . Vol.16 , No.25/26 (June 20-27,1981) PP.A38-A39+A41-A42
Chattopadhyay, Suhas, ‘Operation Barga : A Comment’ , Economic and Political Weekly Vol. 14 No. 49 ( Dec. 8 1979) PP.1749+1751
Dasgupta, Biplab, ‘Sharecropping in West Bengal during the Colonial Period’, Economic and Political Weekly . Vol 19 No.13 (Mar.31, 1984) PP. A2-A8
Dasgupta, Biplab , ‘Sharecropping in West Bengal : From Independence to Operation Barga’ in Economic and Political Weekly .Vol 19, No.26 (Jun 30, 1984) PP.A85-A87+A89-A96
Dutt, Kalyan, ‘Operation Barga : Gains and Constraints’ in Economic and Political Weekly Vol.16, No. 25/26 (Jun 20-27,1981) PP.A58-A60
Dutt, Kalyan, ‘Changes in Land Relations in West Bengal’ in Economic and Political Weekly Vol12 No.53 ( Dec 31 1977 ) pp A106- A107+A109-A110
Ghosh, Ratan , ‘Agrarian Programme of Left Front Government’ in Economic and Political Weekly .Vol. 16, No.25/26 (june 20-27, 1981)
Ghosh, Ratan and Nagraj K, ‘Land Reform in West Bengal’ in Social Scientist Vol 16, No.6/7 (Jan-Feb .1978)
Hanstad, Tim and Nielsen, Robin, ‘West Bengal’s Bargadars and Landownership’ in Economic and Political Weekly . Vol. 39, No.8 (Feb.21-27, 2004)
Hanstad, Tim , Brown , Jennifer, ‘Land Reform Law and Implementation in West Bengal : Lessons and Recommendations’, RDI Reports on Foreign Aid and Development , December 2001
Khasnabis, Ratan, ‘Operation Barga : Limits to Social Democratic Reformism’ in Economic and Political Weekly . Vol.16 No.25/26(Jun 20-27,1981)
Khasnabis Ratan , ‘Operation Barga : A Further Note’ in Economic and Political Weekly . Vol. 17, No.36 (Sep.4 1982)
গণশক্তি ২১ শে সেপ্টেম্বর ২০১৫
The Times of India, 21st sept 2015
Business Standerd 20th sept 2015
Frontline Oct 16 2015