সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

রাশিয়ায় মুদ্রণ শিল্পের আগমন

রাশিয়ায় মুদ্রণ শিল্পের আগমন

কুন্তল রায়

মার্চ ৩০, ২০২৪ ৩৩০ 3

শুরুর দিকের কথা

রাশিয়ায় ষোড়শ, এমনকি সপ্তদশ শতকেও বই বলতে হাতে লেখা বইয়ের কথাই ভাবা হতো। ষোড়শ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে রাশিয়ার গুটিকয়েক মানুষ  অনেক দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্যে দিয়ে হাতে লেখা বই থেকে ছাপানো বই গ্রহণ করেছিলেন। দিনটা ১৫৬৪ সালের ১৯ এপ্রিল, মস্কো প্রেস হাউজ থেকে প্রথম বই প্রকাশ পায়, তাই এই দিনটিকেই রাশিয়ার মুদ্রণ যুগের সূচনার দিন বলে ধরে নেওয়া হয় (আর কিছুদিন পরেই রাশিয়ায় ছাপার ৪৬০ বছর পালন করা হবে)। প্রথম ছাপা এই বইটি ছিল ধর্ম বিষয়ক। এটি ছাপিয়েছিলেন সে যুগের বিখ্যাত দুই বন্ধু, ইভান ফ্যুদরফ ও পিটর মিসতিলভেস্‌, এদেরকে রাশিয়ার মুদ্রণ জগতের প্রতীক বলে মনে করা হয় এবং তাঁদের তুলনা করা যেতে পারে একমাত্র ফ্রান্সিস্ স্কারিনা’র সঙ্গে; যাকে পূর্ব ইউরোপের ছাপাখানার জনক বলা হয়। বলতে গেলে সেই সময় হাতে লেখা বইয়ের ব্যবসা এতটাই জমজমাট ও জনপ্রিয় ছিল যে, ছাপা বইয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হওয়াটা খুব কঠিন ছিল।

জার্মানি, ফ্রান্স এবং ইতালিতে কাঠের ব্লক এবং ধাতব পাতে ছবি ছাপার সূচনা হয়েছিল পঞ্চদশ সাধারণ শতকে। প্রথমদিকে এই ধরনের ছাপার খুব একটা গুরুত্ব ছিল না। সাধারণত তাস ছাপাতে বা তীর্থযাত্রীদের জন্য চার্চ বিভিন্ন ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের ছবি তৈরি করে বিক্রি করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হতো। পঞ্চদশ শতকের শেষে জার্মান চিত্রকর আলবাখট ডুরখ-এর হাত ধরে ছাপার জগতে বিপুল পরিবর্তন আসে। কাঠের ব্লক ও ধাতব পাত– উভয়ের মাধ্যমে ছাপার ক্ষেত্রেই এসময় এক শৈল্পিক  মাত্রা যুক্ত হয়েছিল। একই সময়ে ছবির বইও খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, যেমন ছবিতে বাইবেল ছাপা হতে থাকে। এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো বিবলিয়া স্যাকরা জার্মানিকা; যা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৪৭৫-এ। ডুরখ এবং ল্যুকাস খ্রানা প্রমুখদের ছবির প্রচার করত স্বয়ং চার্চ। ষোড়শ ও সপ্তদশ সাধারণ শতক থেকে এই ধরনের মুদ্রিত ছবির বই রাশিয়ায় পাওয়া যায়। যদিও পঞ্চদশ শতকেই রাশিয়ার দুই মুদ্রক ইভান ফ্যুদরফ ও পিটর মিসতিলভেস্‌ পশ্চিম ইউরোপ থেকে ছাপার পদ্ধতি এখানে নিয়ে এসেছিলেন, যাদের কথা শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে। 

রাশিয়ার সঙ্গে ভেনিস বা ফ্লোরেন্সের মতো শহরের সঙ্গে বিক্ষিপ্তভাবে বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকলেও উত্তর জার্মানির বিভিন্ন শহরের সঙ্গে বর্তমান রাশিয়ার একেবারে পশ্চিমের দুইটি শহর ভেলিকি নোভগার্ড্‌ এবং স্কোভ-এর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এই সাম্রাজ্যের পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের বহু জ্ঞানী ও গুণী মানুষদের; বিশেষত চার্চের সঙ্গে সম্পৃক্ত উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে পোল্যান্ডের ক্যাথলিক শিক্ষা ব্যবস্থার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তবে যতদূর তথ্য প্রমাণ আছে তাতে ষোড়শ শতকের দ্বিতীয় ভাগের আগে পর্যন্ত রাশিয়ায় কাঠ বা ধাতুতে খোদাই করে ছাপা শুরু হয়নি। মস্কোতে প্রথম ছাপা হয়েছিল এমন নিদর্শন বলতে ১৫৬৪-এর ‘ লিউক দ্য ইভাঞ্জেলিস্ট’  গ্রন্থটি রয়েছে। এটিকে রাশিয়ার সবচেয়ে পুরনো মুদ্রিত বই বলে মনে করা হয়। কিন্তু এই বছরই রাশিয়ার জনগণ সেই প্রথম ছাপাখানাটিকে আগুন লাগিয়ে নষ্ট করে দিয়েছিল। কেন? এবার সেই ঘটনায় আসা যাক।

ছাপা বইয়ের আগমনের সঙ্গেই যে সেখানে হাতের লেখা বই শেষ হয়ে গেছিল, এমন নয়। প্রথম ‘ইভন দ্য টেরিবল’ রাশিয়ায় প্রথম মুদ্রণের জন্য ইভান ফ্যুদরফ ও পিটর মিসতিলভেস্‌কে পুরস্কৃত পর্যন্ত করেছিলেন। তিনি দেশে ছাপার প্রযুক্তি কেন আনতে চেয়েছিলেন তা নিয়ে অবশ্য বিভিন্ন মত রয়েছে। সাম্রাজ্য বিস্তারের একটি আবশ্যক শর্ত হলো-অধিকৃত অঞ্চলে রাজার নিজের ধর্মকে ছড়িয়ে দেওয়া। জার তাঁর দখল করা অঞ্চলের প্রতিষ্ঠিত চার্চগুলিতে বেশি সংখ্যক ধর্মীয় বই রাখার সহজ পদ্ধতি হিসেবে আধুনিক প্রযুক্তি অর্থাৎ ছাপাখানার ব্যবহার করেছিলেন। এর মাধ্যমে সম্ভবত তিনি চার্চের ধর্মীয় আধিপত্যের উপর ভাগ বসাতে চেয়েছিলেন। তাই ছাপাখানা প্রসারের মাধ্যমে তিনি নিজের স্বতন্ত্র কর্তৃত্ব বজায় রাখতে চেয়েছিলেন। সে যাই হোক, তবে রাজানুগ্রহ লাভ করেও যে মুদ্রকদের বিশেষ সুবিধা হয়েছিল এমনটা নয়। চার্চের রক্ষণশীলরা তাঁদের তৈরি করা রাশিয়ার প্রথম মুদ্রণ কারখানাটিতে আগুন লাগিয়ে সমস্ত বই পুড়িয়ে দিয়েছিল, কারণ তারা হাতে লেখা বইয়ের বাইরে অন্য গ্রন্থকে ধর্মের অপমান বলে গণ্য করত। সম্ভবত এতে চার্চের ধর্মগ্রন্থের উপর থেকে অধিকার চলে যাওয়ার আশঙ্কাও ছিল তাদের মনে। তাই শুধু আগুন লাগিয়েই তারা ক্ষান্ত ছিল না, বই ছাপার ‘ অপরাধে’ ইভান ফ্যুদরফ ও পিটর মিসতিলভেস্‌কে মস্কো থেকে চলে যাবার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর ফলে দুই বন্ধু নিজেদের পথ আলাদা করে নিতে বাধ্য হন এবং প্রাণ বাঁচানোর জন্য মস্কো থেকে বহু দূরে পলায়ন করেন। পিটর মিসতিলভেস্‌ লিথুয়ানিয়ার ভিলনিয়া শহরে চলে যান ও একটি ছাপাখানা তৈরি করেন। অন্যদিকে ইভান ফ্যুদরফ চলে আসেন ইউক্রেনে এবং সেখান থেকে ১৫৭৪-এ প্রকাশ করেন ‘ ল্যুভউ অ্যাপাসোলস্‌’

নামক এক গ্রন্থ।

মুদ্রণের প্রথম প্রচেষ্টাটি আঘাতপ্রাপ্ত হলেও আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারি, এখানেই রাশিয়ার ছাপার ইতিহাস শেষ হয়ে যায়নি। সেখানে মুদ্রণ শিল্পের আগমন ছিল অধিকাংশ মানুষের এতদিনের প্রচলিত অভ্যাস ও ধ্যানধারণার বিপরীত। কারণ স্লাভ ভাষায় হাতে লেখা বইকে ঈশ্বরের অপর এক রূপ কিংবা খৃষ্ট ধর্মের পবিত্র চিহ্ন বা ছবির মতো পবিত্র বলে মনে করা হত। খুব দামী অলংকরণের পাশাপাশি এগুলিকে অতি যত্ন করে সংরক্ষণ করা হতো, এমনকি সেগুলিকে পাঠ করার জন্য থাকত নির্দিষ্ট কিছু সুরও! এই বইগুলি কোনোভাবেই ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য দেওয়া হতো না, কারন এগুলিকে একান্তই চার্চের পবিত্র সম্পত্তি বলে মনে করা হতো। চার্চের সন্ন্যাসীরাই বই নকল করার অধিকারী ছিলেন। কখনও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে এই বইয়ের নকল করে দেওয়া হলে, এমন ব্যক্তিকেই দেওয়া হতো যাঁর সঙ্গে চার্চের ভালোরকম সম্পর্ক থাকত। সন্ন্যাসীরা সাধারণত অর্থ সাহায্যের বিনিময়ে বইয়ের নকল করে চার্চের পৃষ্ঠপোষকদের উপহার দিতেন।

ছাপার প্রসারে ধর্ম

শুনতে অবাক লাগলেও এটা সত্যি যে, যে ধর্মের কারণে রাশিয়ায় মুদ্রণ ব্যবস্থার প্রসার একসময় স্তব্ধ হয়ে গেলেও সেই ধর্ম সম্পর্কিত কারনেই এখানে ছাপার ব্যাপক বিস্তার হয়েছিল। মস্কোর অনিয়মিত বই মুদ্রণের সমকালেই বর্তমানের লিথুয়ানিয়া বা পোল্যান্ডের পূর্ব সীমানায় প্রায় স্বাধীন একটি অঞ্চলে স্থায়ীভাবে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৫৮০ সাধারণ অব্দ নাগাদ থেকে একদিকে জেসুইটদের মাধ্যমে রাশিয়ার রক্ষণশীলদের ধর্মান্তরিত হতে চাপ দেওয়া হচ্ছিল আর অন্যদিকে জেসুইটরা চেষ্টা করছিল আগের চার্চগুলিকে রুথেনিয়ান ইউনিয়াথ চার্চের অন্তর্গত করার জন্য। এই প্রচেষ্টার সঙ্গে লড়াই করতে রক্ষণশীলরা ‘ ভ্রাতৃসংঘ’ স্থাপন করেন এবং বিভিন্ন বিদ্যালয় আর ছাপাখানা স্থাপন করে তাঁদের ধর্মীয় শিক্ষা ও নীতি সাধারণ মানুষের মধ্যে বজায় রাখতে চেষ্টা করেন। অক্ষরের বই বা ব্যাকরণ গ্রন্থ ছাড়াও তাঁদের নিজস্ব প্রেস থেকে নানা ধর্মীয় গ্রন্থ আর ‘ পবিত্র ছবি’প্রকাশিত হতো। এই ভ্রাতৃসংঘের মূল লক্ষ ছিল ক্যাথলিকদের বিরোধিতা করা। অথচ শিক্ষার বিস্তার ও নিজেদের ধর্মীয় আদর্শকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তাঁরা যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন সেই পদ্ধতির মূল অংশটিই ছিল তাঁদের প্রধান বিরোধী পোলিশ ক্যাথলিক সংগঠন থেকে নেওয়া। এই ধর্মীয় দ্বৈরথে খুব সূক্ষ্ম পথে পশ্চিমের লাতিন ধর্মীয় মুদ্রণ সংস্কৃতি পূর্বের শ্লাভভুক্ত অঞ্চলগুলিতে প্রবেশ করে।

লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভেলনিয়াস ও ল্যুভউ শহর দুটি ছিল ভ্রাতৃসংঘের কার্যকলাপের প্রধান ক্ষেত্র। এরপর তা বর্তমান ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলের ছড়িয়ে পড়ে। ১৬৩২এ ভ্রাতৃসংঘ উচ্চতর শিক্ষার জন্য পূর্ব শ্লাভ অঞ্চলে কেইভান অ্যাকাডেমি স্থাপিত করে। এই কেইভান অ্যাকাডেমি থেকে শিক্ষালাভ করা মস্কোর আধুনিক যুগের প্রথম পর্যায়ের সন্ত ও পণ্ডিতরা ধর্মীয় লেখাপত্র, আচার-আচরণ ইত্যাদির সংস্কার সাধন করেন এবং ১৬৬৭ সাধারণ অব্দে নতুন চার্চ গঠন করে নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচিতি প্রতিষ্ঠা করে।

ক্যাথলিক ও রক্ষণশীলদের এই দ্বন্দ্বের এই সময়ে বহু বিখ্যাত ধর্মীয় রচনা লেখা আর ছাপা হয়েছিল। এই রচনার যে অংশগুলি অপেক্ষাকৃত বেশি প্রচার পেয়েছিল, সেগুলিকে তাঁরা ‘ জনপ্রিয়’ বলে মনে করতেন। এখন কারও মনে প্রশ্ন হতেই পারে যে একেই রাশিয়ার ‘ জনপ্রিয় মুদ্রণ ব্যবস্থা’র সূত্রপাত বলা যায় কিনা! উনিশ শতকের বিখ্যাত রুশ গবেষক রবিনস্কি এই পর্বের মুদ্রণের কিছু নিদর্শন তাঁর বিখ্যাত সংকলন গ্রন্থে রেখেছিলেন এবং বলেছিলেন যে দুই ধরনের সাহিত্যের বিপুল পার্থক্য সত্ত্বেও পরবর্তী সময়ের মস্কো-কেন্দ্রিক সস্তা মুদ্রণ শিল্পের পূর্বসূরি হিসেবে এই বইগুলিকে গ্রহণ করা যেতে পারে। যদিও রুশ সাহিত্যের এই সময়কার ঐতিহাসিকরা ধর্মীয় বইগুলিকে রাশিয়ার মূলস্রোতের জনপ্রিয় মুদ্রণ সমূহ থেকে আলাদা করে বিবেচনা করেন এবং এগুলিকে প্রধানত ইউক্রেনীয় মুদ্রণ রীতির অংশ বলে মনে করেন। 

কিয়েভ ও ল্যুভউ শহরের স্কুলগুলিতে এসময়কার কাগজে ছাপানো প্রতিকৃতি বা বা ‘পেপার আইকন’গুলিকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো বাইজেনটাইনের ছবির বৈশিষ্ট্য মেনে তৈরি করা প্রতিকৃতি যা কিনা ধাতবপাত বা কাঠের ব্লক তৈরি করে অপরিপক্ক ঢং-এ মধ্যযুগীয় রীতিতে ছাপানো হতো। এগুলি সাধারণত চার্চ বিক্রি করত আগত তীর্থযাত্রীদের কাছে। ১৬২০ থেকে এই ধরনের প্রচুর মুদ্রণের নিদর্শন পাওয়া যায় কেইভস্‌ প্রেস থেকে। ১৬১৬ থেকে ১৬৩২ সাধারণ অব্দ পর্যন্ত সময়কালে এই প্রেসটি পরিচালনা করতেন পাবলো বেরিয়ান্দা নামের এক ইউক্রেনিয়ান পণ্ডিত ব্যক্তি। ক্রাকভ শহরে পড়াশোনা সেরে কিয়েভ-এ আসার আগে তিনি বহুদিন ল্যুভউ শহরের ভ্রাতৃসংঘের প্রেসে ব্লক খোদাইকার ও মুদ্রক হিসেবে কাজ করেছিলেন। তবে বর্তমান গবেষকদের ধারণা অনুযায়ী ১৬১৬তে যখন তিনি কিয়েভ-এ আসেন তখন তার বয়স ৬৬। ১৬২৮-২৯ নাগাদ তাঁর বানানো ( অথবা তাঁর নির্দেশনায় অন্য কোনও মুদ্রণ কর্মী দ্বারা তৈরি) ১২ ব্লকের একটি মনোলগ বা একক নাটক প্রকাশিত হয়েছিল। তবে এই মনোলগে পাবলো বেরিয়ান্দা ছাড়াও  লিয়ন্তি জেমকা নামক অপর এক ব্যক্তির স্বাক্ষর পাওয়া যায়; যিনি এল.এম. আদ্যাক্ষরে সই করেছিলেন, যার অর্থ সম্ভবত ছিল লিয়ন্তি মোনাখ বা লিয়ন্তি সন্ত! সপ্তদশ শতকে কিয়েভ শহরে মুদ্রিত বইগুলি অত্যন্ত উচ্চমানের ছিল, যা সুন্দর সব ছবিতে সাজানো হতো এবং সে সব ছবিতে থাকত চিত্রকরদের নামও।

তবে মস্কোয় ছাপা সস্তা বইয়ের জগতে নিশ্চিতভাবে সবচেয়ে বেশি খোদাইয়ের কাজ করেছিলেন সন্ত ইল্লিয়া এবং হায়ারোমোন্যাক প্রকপি। তাঁরা পশ্চিমের বিচল হরফ ও কাঠের ব্লকে ছবি খোদাই পদ্ধতিকে অনুসরণ করেছিলেন, ফলে তাঁদের ছাপানো বাইবেলের ছবিকে অনেকটাই পশ্চিম ইউরোপীয় পুরোনো ছবির কাছাকাছি দেখতে লাগত। ১৬৩৭ থেকে ১৬৪৯ সাধারণ অব্দ পর্যন্ত ইল্লিয়া নিউ টেস্টামেন্টের জন্য ৫৪টি এবং ওল্ড টেস্টামেন্টের জন্য ১৩২টি ব্লক খোদাই করেন। এই দুরকম ব্লকই ‘ছবিতে বাইবেল’ বইটির জন্য তৈরি করা হয়েছিল। ১৬৪৬ থেকে ১৬৬২-এর মধ্যে ইল্লিয়া এবং প্রকপি  দুজনে মিলে একটি সিরিজ প্রিন্ট তৈরি করেন এবং ১৬৬০ নাগাদ ৪০টি কাঠের ব্লকের আরেকটি সিরিজ বা বুকলেট সম্পূর্ণ করেন। এই শেষ বুকলেটটি লিখিত ও মুদ্রিত হয়েছিল কেভস্‌ কিয়েভান মোনাস্টির সন্ন্যাসীদের নিয়ে। তাঁদের হাতে গড়া এই ব্লক পরবর্তী ৫০ বছর বা আরও বেশি সময় ধরে মস্কো মুদ্রণশিল্পে ব্যবহৃত হয়েছিল। গবেষক রবিনস্কি মনে করেন প্রকপি তাঁর কাজের ক্ষেত্রে জোহান পিসকেটর-এর বাইবেলকে অনুকরণ করেছিলেন।

সপ্তদশ শতাব্দীর শেষের দিকে চার্চের মাধ্যমে ইউরোপীয় তথা রুশ সন্তদের ছবি রাশিয়ায় বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করলেও ১৬৭৪-এ পেট্রিয়ার্ক জোয়াকিম একটি ডিগ্রির মাধ্যমে সব ধরনের সন্তদের ছবি ছাপানো এবং তা বিক্রি করাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। পেট্রিয়ার্কের অভিযোগ ছিল যে, বিদেশের ছবিগুলি প্রতিবাদী লুথিয়ান বা কেলভিন ধর্মীয় চিন্তার প্রভাবে প্রভাবান্বিত। ছবির সন্তদের পোশাকে যেমন প্রাচীনত্বের কোনো ছাপ নেই, তেমন অনুপস্থিত শিল্পের কোনোরকম সুক্ষ্মতাও। তিনি বলেন, সমসাময়িক পোষাক পরিহিত এই সব মোটাদাগের ছবি চার্চের বাইরে ব্যবসায়ীদের হাতে সস্তা দরে বিক্রি করা এবং সাধারণ মানুষের কুঁড়েঘর সমেত বিভিন্ন ধরনের দেওয়ালে কেবল সাজানোর জন্য লাগিয়ে রাখার মাধ্যমে যেহেতু মহান সন্তদের অপমান করা হচ্ছে এবং এই সস্তা ছাপানো ছবি বিক্রির ব্যবসার মাধ্যমে খৃষ্টধর্মের পবিত্রতাই আদতে কালিমালিপ্ত হচ্ছে; তাই অবিলম্বে এই সব ছবির বই ছাপানো নিষিদ্ধ হওয়া দরকার।

জোহান পিসকেটরের বাইবেলের একটি পৃষ্ঠা ( চিত্রঋণ – উইকিমিডিয়া)

শাসক মুদ্রণশিল্প 

এর মধ্যেই, ১৬৪০ নাগাদ জারের দুর্গের সিলভার প্যালেসের একটি অংশে তাঁর অস্ত্রাগারে ধাতব বর্ম তৈরির জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কর্মশালার ব্যবস্থা হয় । সপ্তদশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগ থেকে এখানে রাশিয়ার সবথেকে ভালো ধাতব শিল্পী এবং খোদাই শিল্পীরা যেমন লিয়ন্তি বুনিন, ত্রাখমেনস্কি প্রমূখের আগমন ঘটে। রবিনস্কি জানিয়েছেন যে, এঁদের দিয়ে বিখ্যাত সব ধাতব বর্মের কাজ হয়েছিল। সেই সঙ্গে ধাতব প্লেটে অক্ষর খোদাই করে এঁরা কিছু সংখ্যক ছাপার কাজও করেছিলেন, তবে সেই কাজ তেমন জনপ্রিয়তা লাভ করেনি।

লিয়ন্তি বুনিনের বইয়ের ১টি পৃষ্ঠার ছবি। (চিত্রঋণ – উইকিমিডিয়া)

লিয়ন্তি বুনিন সম্ভবত রাশিয়ায় প্রথম অক্ষরের বই প্রচলন করেছিলেন। মজার বিষয় হলো; এই বইয়ের প্রতিটি অক্ষর কিভাবে বর্মে খোদিত অক্ষর থেকে এসেছে সেটি যেমন তিনি দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন, তেমন অক্ষরশৈলীতেও এনেছিলেন বিভিন্ন বৈচিত্রময় ধরনকেও। 

জার প্রথম পিটার এবং তাঁর সৎবোন সোফিয়া তাঁদের শৈশবের প্রথম পাঠের সময় সিলভার প্যালেসে দেশি ও বিদেশী বিভিন্ন সন্তদের প্রতিকৃতির ছাপা দেখেছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন। প্রথম পিটারের ( শাসনকাল ১৬৮২ – ১৭২৫ সাধারণ অব্দ) সিংহাসনে আরোহণের সময় সিলভার প্যালেসের ধাতব শিক্ষালয়টিতে বিশৃঙ্খলা চলছিল। পিটার এই বিদ্যালয়টিকে নতুন করে শুরু করতে আগ্রহী ছিলেন এবং সেই মতো তাঁর প্রথম পশ্চিম ইউরোপ যাত্রার সময় তিনি ডাচ খোদাই শিল্পী অ্যাড্রিয়ান স্কুনবিক এবং পিটার পিকেয়ার্ট-কে রাশিয়ার নতুন প্রজন্মকে খোদাই শিল্পে প্রশিক্ষিত করার উদ্দেশ্যে দেশে নিয়ে এসেছিলেন। ১৬৯৭তে পিকেয়ার্টকে মস্কোর অস্ত্রাগারের প্রধান শিল্পী হিসেবে নিযুক্ত করা হয় আর স্কুনবিক ১৬৯৮তে নিযুক্ত হন রাজদরবারের প্রধান খোদাই শিল্পী হিসেবে। এরপর ১৭০৮-এ  পিটার ‘ দ্য গ্রেট মস্কো  প্রেস’ স্থাপন করেন। এই প্রেসে স্কুনবিক এবং পিকেয়ার্ট-এর দুই সুযোগ্য ছাত্র ইভান জুবভ ও ভাসিল্লি তমিলভ প্রধান শিল্পী হিসেবে নিযুক্ত হন। যদিও ১৭১৪ সাধারণ অব্দের পর থেকে পিকেয়ার্ট ও তাঁর দুই সহযোগী আলেক্সেই জুবভ এবং রাস্তোভসভ সম্মিলিতভাবে পিটার্সবার্গ প্রেসের দায়িত্ব লাভ করেছিলেন। 

প্রথম পিটারের জীবনকালে এই ধরনের মুদ্রণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল ছিল, তাই বাস্তবের প্রয়োজনেই সস্তা মুদ্রণ পদ্ধতি তার অস্তিত্বকে বিক্ষিপ্তভাবে টিকিয়ে রেখেছিল। রাজকার্যের প্রচারের প্রয়োজনে কোনো কোনো সময় এই সস্তা ছাপার ব্যবস্থাকে জারতন্ত্র স্বয়ং ব্যবহার করত। পিটারের মৃত্যুর কিছু পরে ১৭২৭-এ যখন পিটার্সবার্গ প্রেস বন্ধ করে দেওয়া হয় তখন সেখানকার খোদাই কারিগররা মস্কোতে চলে আসেন। মস্কোতে যাঁরা বাণিজ্যিকভাবে ছাপার কাজ করতেন, এই খোদাই কারিগররা তাঁদের জন্য ব্লক প্রস্তুত করতেন বলে জানা যায়। পিকেয়ার্ট এবং দুই জুবভ – ইভান ও আলেক্সেই – পিটার্সবার্গ প্রেস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। বস্তুতঃ দারিদ্রের কারণেই  ১৭৩২-এ পিকেয়ার্ট-এর মৃত্যু হয়। পিকেয়ার্ট এবং স্কুনবিক – এই দু’জন মিলে একসময় যে অসামান্য কাঠের ব্লকগুলি তৈরি করেছিলেন, সেগুলি বাস্তবিক অর্থে জলের দরে বিক্রি হয়ে গেছিল বিভিন্ন ব্যক্তিগত মালিকানার প্রেস মালিকদের কাছে। এই ব্লকগুলি পরবর্তী সময়ের মুদ্রণে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হতো। এইভাবে এক সময় যে মূল্যবান মুদ্রণশিল্পকে জার ইভন রাশিয়ায় নিয়ে এসেছিলেন, তা চার্চ ও উচ্চবিত্তের বেড়া ডিঙিয়ে পরবর্তীকালে সস্তা ছাপার মাধ্যমে বৃহত্তর নিম্নবিত্ত রুশ সমাজে ছড়িয়ে পড়েছিল। ফলে অষ্টাদশ শতকে এসে জনপ্রিয় ছাপা বলতে আমরা রাশিয়ার ক্ষেত্রে যা দেখতে পাই তার পথ সে দেশের ধর্ম ও শাসকরাই প্রস্তুত করেছিলেন। 

রাশিয়ার সমাজ ছাপার বিস্তার 

রাশিয়ার মানুষের মধ্যে মুদ্রিত বইয়ের গ্রহণযোগ্যতা একদিনে না আসলেও তা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ; অধিক উৎপাদন ও কম দামের  জোরে অধিকতর সংখ্যক ক্রয়ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষের কাছে সহজে পৌঁছে যাচ্ছিল। এই বিস্তার হাতে লেখা বইয়ের পক্ষে কখনওই সম্ভব ছিল না। যেহেতু হাতে লেখা গ্রন্থ আর ছাপা বই ছিল দুটি বিপরীত সংস্কৃতির বাহক, তাই এই দুই রীতির মধ্যে সংঘাত হওয়াও ছিল খুব স্বাভাবিক। হাতে লেখা বইয়ের জায়গায় মুদ্রিত বই আসায় বইয়ের ঘটেছিল একের পর এক নতুন এবং চিরস্থায়ী পরিবর্তন; প্রথমত চার্চের বই নকলের একচেটিয়া অধিকার শেষ হয়ে গেল। দ্বিতীয়ত, ধর্মীয় বই উৎপাদনের ক্ষেত্রে সংক্রান্ত চার্চের যে একচ্ছত্র অধিকার ছিল, তারও অবসান ঘটল। সবচেয়ে বড় কথা, চার্চের রচনাগুলি সম্বন্ধে যে আধা-বাস্তব আধ্যাত্মিক তত্ত্ব প্রচার করা হতো, সেই মিথও গেল ভেঙে। শুধু তাই নয়, মুদ্রিত বইয়ের বিষয়বস্তুতেও এল নানান বৈচিত্র, ফলে বই লিখন কেবল আর  ধর্মীয় সাহিত্যের মধ্যে আবদ্ধ রইল না। সপ্তদশ শতকের শেষ কয়েক দশকের মধ্যে রাশিয়ায় বই মুদ্রণ শিল্পের ব্যাপক বিস্তার ঘটে এবং মুদ্রিত বই শেষপর্যন্ত সমাজে আপন গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে। ক্রমে সস্তা এইসব বইয়ের জনপ্রিয়তা এতটাই বেশি হয়ে উঠেছিল যে  কিছুদিনের মধ্যেই ছাপা বই অত্যাবশ্যক পণ্য হিসেবে সরাসরি ছাপাখানা থেকে বইয়ের দোকানে, খোলাবাজারে, এমনকি মেলাতেও বিক্রি হতে শুরু করে। মজার ব্যাপার হলো, যে সমস্ত অভিজাত কিংবা অতি ধার্মিক মানুষ একসময় ছাপা বইকে ঘৃণা করত, তারাও ক্রমশ ছাপা বইয়ের ক্রেতা হয়ে উঠছিল।

সপ্তদশ শতক থেকে রাশিয়ায় দুটি বড়ো পরিবর্তন দেখা যায়, প্রথমটি যদি শিক্ষার বিস্তার হয়, তবে অপরটি ছিল নগরায়ন। নগরায়নের প্রসারের ফলে রুশ সমাজে শিক্ষাব্যবস্থার দ্রুত বিস্তার ঘটতে থাকে। শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে তাই ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয় বইপত্রেরও। এসময় শহরের বণিক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রায় ৯৬% আর গ্রামীন ভূস্বামীদের মধ্যে ৬৫% হারে সাক্ষরতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। নগরবাসীদের মধ্যে, বিশেষত কারিগর ও যন্ত্র সম্পর্কিত উৎপাদনব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের (রাশিয়ায় যাদের বলা হতো  meshchane) মধ্যে স্বাক্ষরের হার বৃদ্ধি পায় ৪০%। তবে শিক্ষার এই প্রসার সীমাবদ্ধ ছিল শুধু পুরুষদের মধ্যেই। উচ্চবিত্ত অভিজাত পরিবারের মহিলারা এই সময়ে কিছুটা লেখাপড়া শেখার সুযোগ হয়ত পেতেন, কিন্তু তেমন নিদর্শনও পাওয়া গেছে খুবই কম।

সপ্তদশ শতকের মধ্য থেকে শেষভাগ পর্যন্ত মস্কোতে যে ৪৮৪টি বই মুদ্রিত হয়েছিল, তার প্রতিটির জন্য ছাপা হয়েছিল ১২০০-২৪০০ কপি। এই পরিসংখ্যানটি থেকে সহজেই ক্রেতাদের মধ্যে মুদ্রিত বইয়ের জনপ্রিয়তা বুঝতে পারা যায়। যদিও এসব বইয়ের ৯৫% ছিল ধর্মীয় বিষয়ে। সপ্তদশ শতকে রাশিয়ায় ধর্মের বাইরে পার্থিব বিষয় নিয়ে মুদ্রিত বই খুব একটা পাওয়া যায় না। শিক্ষিত অভিজাতরা কেবল লাতিন ভাষাতেই বই পড়তেন এমন নয়; স্লাভ ভাষা এমনকি পোলিশ ভাষার বইও তাঁরা বাইরে থেকে আনিয়ে পড়তেন। 

সামন্ততন্ত্র থেকে ক্রমশ নগরায়ন হতে থাকায় সপ্তদশ শতকে রক্ষণশীল চার্চের বিরুদ্ধে যে বিদ্বেষ দেখা যায়, তার মূল উৎস কিন্তু ছিল ছাপা বই। এমনকি অন্যান্য দেশ থেকে এ ধরনের আসতে শুরু করলে রুশ চার্চ একসময় অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে নিজেদের ধর্মীয় বইগুলিতে যে পরিবর্তন এনেছিল সেটিও প্রকাশ্যে এসে পড়ে। এই কারনে মস্কো প্রশাসন ও প্যাট্রিয়ার্ক নিকন (১৬০৫ – ৮১ সাধারণ অব্দ) ঠিক করেন যে, গ্রিসের মাউন্ট ওথস্‌ থেকে অন্য প্রাচীন গ্রিক লেখাগুলির সঙ্গে রাশিয়ার চার্চের বইকে মিলিয়ে নেওয়া হবে। কিন্তু ১৬৫৫তে রক্ষণশীলরা এই প্রচেষ্টাকে মেনে নিতে অস্বীকার করে বিদ্রোহ করেছিল। দু’পক্ষের এই চাপান-উতোর চলেছিল প্রায় ১৬৭৬ পর্যন্ত। এই বছর রক্ষণশীলদের আন্দোলন বন্ধ হলেও তাঁদের সকলে যদিও সর্বতোভাবে দমে যাননি। এঁরা ‘সনাতনপন্থি’( starovery) বা ‘বিদ্বেষী’( raskol’niki ) অভিধায় প্রায় সমগ্র সপ্তদশ শতাব্দী জুড়ে নিজেদের শক্তিশালী অস্তিত্ব বজায় রেখেছিলেন। হাতে লেখা গ্রন্থের মাধ্যমে তো বটেই ‘শুদ্ধ’ মুদ্রণযন্ত্রে ছাপানো বইয়ের মাধ্যমেও এই গোষ্ঠীটি নিজেদের মতবাদকে তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেছিলেন। অন্যদিকে রাশিয়ার চার্চ কিন্তু বাস্তবসম্মত কারনে আধুনিক প্রযুক্তিতে ছাপানো প্রাচীন ধর্মীয় গ্রন্থসমূহের সংশোধিত রূপকে গ্রহণ করতে শুরু করেছিল।

জার সরকারও জনগণের মধ্যে রুশ চার্চের এই সংশোধিত বইগুলির প্রচার চাইছিল। জারতন্ত্রের এই উদ্যোগে এগিয়ে এসেছিলেন সেমিয়ন পলৎস্কি, যিনি একদিকে রাজ পরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন আর অন্যদিকে ছিলেন রক্ষণশীল ধারার ঘোর বিরোধী। তিনি গ্রন্থ রচনার ক্ষেত্রে  ইউরোপীয় ঘরানাকে অনুসরণ করেন এবং পুরোনো ছাপাখানাগুলিকে খোলার ব্যবস্থাও করেন। তাঁর উদ্যোগেই মস্কোতে ছাপাখানা সংক্রান্ত শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছিল। এছাড়াও জার প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৬৮৭-তে গ্রীকো-শ্লাভিক-ল্যাটিন বিদ্যাচর্চার একটি কেন্দ্রও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যেটি ছিল চার্চের হাত থেকে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে সরিয়ে নেওয়ার প্রথম ধাপ। এভাবেই ধর্মীয় রক্ষণশীলতার বিরোধীরা সমাজে মুদ্রিত বইয়ের প্রসারের মাধ্যমে চার্চের অপরিবর্তনীয় ধর্মচর্চার অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন; যার প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে শিক্ষাবিস্তারের প্রধান ধারক ও বাহক রূপে  রাশিয়ায় মুদ্রিত বইপত্র সময়ের সঙ্গে অপার জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।

সহায়ক রচনা

১. Jeffrey Brooks, When Russia Learned to Read: Literacy and Popular Literature, 1861–1917, Northwestern University Press, 2003.

২. Hanna Chuchvaha, Images, Words and Book Production In The Russian Empire, Steve Roud, David Atkinson, (সম্পা.) Cheap Print and the People: European Perspectives on Popular Literature, Cambridge Scholars Publishing, 2019.

৩. Farrell, Dianne E. The Origins of Russian Popular Prints and Their Social Milieu in the Early Eighteenth Century, Journal of Popular Culture; Bowling Green, Ohio Vol. 17, Iss. 1, (Summer 1983)

৪. Jason McElligott, Eve Patten, (সম্পা.) The Perils of Print Culture: Book, Print and Publishing History in Theory and Practice, Palgrave Macmillian, 2014.

৫. S. A. Klepikov, Russian Block Books of the Seventeenth and Eighteenth Centuries: The Papers of the Bibliographical Society of America, Vol. 65, No. 3, The University of Chicago Press, (Third Quarter, 1971), pp. 213-224.  

মন্তব্য তালিকা - “রাশিয়ায় মুদ্রণ শিল্পের আগমন”

  1. এসব বাদ দিয়ে বটতলার বইটা লিখলে একটা কাজের কাজ হত। ক’জন আগ্রহী হবেন এসব বিষয় নিয়ে? যদিও আপনার প্রকাশিতব্য বইয়েরই অংশ এগুলো।

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।