গণিকাবৃত্তি – প্রাচীন ভারত
গণিকাবৃত্তি বলতে কী বোঝায়, সেই সংজ্ঞাটি প্রথমেই দেওয়া প্রয়োজন। ‘নারী যখন অর্থ বা কোন মূল্যবান উপহারের বিনিময়ে পুরুষকে নিজের দেহ যৌনতা সম্পর্কিত ব্যাপারে দান করে, যেখানে ওই নারী-পুরুষের মধ্যে কোন ভালোবাসার সম্পর্ক থাকে না, থাকে কেবল দেহ বিষয়ক আর্থিক লেনদেন, তখন সেই নারীকেই গণিকা বলা হয় এবং আর্থিক ব্যাপারটি থাকায় এইধরনের কাজের সঙ্গে বৃত্তি কথাটি যুক্ত হয়’।
ভারতীয় সভ্যতায় সময়ের সাথে সাথে গণিকাদের শিক্ষা, শ্রেণীবিভাগ, জীবনযাপন, তাদের প্রতি রাষ্ট্রের ভূমিকা ইত্যাদি নানা বিষয়ের ক্রমপরিবর্তনশীলতা জড়িত।
বিভিন্ন যুগে গণিকা বৃত্তির উপস্থিতি—
সভ্যতার ঊষালগ্নে যখন মানব-মানবী পশু পাখির মতই একত্রে থাকত তখন তাদের মধ্যে যে যৌন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তা ছিল বাধাহীন। সামান্য পরে, একমাত্র নিজ উপজাতির বাইরে এই ধরনের সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে কিছু নিষেধাজ্ঞা আসে।
প্রায় ঐতিহাসিক হরপ্পা সভ্যতা সংক্রান্ত তথ্যাদির জন্য একমাত্র প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু এমন কোনো সাক্ষ্য পাওয়া যায়নি যা থেকে মনে করা যেতে পারে যে সেখানে গণিকাবৃত্তির প্রচলন ছিল। কয়েকটি Dancing girl মূর্তি পাওয়া গেছে বটে, কিন্তু তা থেকে কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসা যায় না।
বৈদিক যুগ– আর্যরা ছিল যাযাবর পশুপালক। এরা যখন যাযাবর বৃত্তি ত্যাগ করে খাদ্য উৎপাদনকারীতে পরিণত হল অর্থাৎ চাষবাস শিখলো তখন ফসল ফলানোর জন্য তাদের নিয়মিত বৃষ্টির দরকার হয়। কিন্তু এই বিষয়টিতে তাদের কিছু করার ছিল না। ফলে তারা অলৌকিক সত্তার অস্তিত্বে বিশ্বাসী হল, যাতে তাঁর কাছে প্রার্থনা জানালে কার্যসিদ্ধি হয়। এই অস্তিত্বের নামই দেবতা। এরপর প্রতিটি প্রাকৃতিক শক্তিকেই তারা দেবতার স্থান দিতে শুরু করে এবং ইন্দ্রকে দেবতাদের রাজা হিসাবে স্থির করে। ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে তারা যে যাগযজ্ঞের আয়োজন করত, তার শেষে অল্প মাত্রায় সোমরস পানের ব্যবস্থা থাকত এবং অনুমান করা যায় যে তার পরে নারী-পুরুষ উভয়ে স্বেচ্ছায় পরস্পর মিলিত হত। যে সমাজে তখন পর্যন্ত বিবাহ প্রথা চালু হয়নি সেখানে এই ধরনের মিলনকে বা সঙ্গী বেছে নেওয়াকে গণিকাবৃত্তি বলা চলে না। কিন্তু এরপর এল ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ভাবনা। উত্তরাধিকারের প্রশ্নও দেখা দিল। তখন পুরুষ তার নিজস্ব নারীকে বেছে নিল, যে কেবল তার সম্পত্তি এবং তারই পুত্রের জন্মদাত্রী হবে। এই পরস্পর-সংযুক্ত জীবনযাপন যে উৎসব বা বিধির মাধ্যমে স্বীকৃত হল, তারই নাম বিবাহ। কিন্তু ঋগ্বেদের মত প্রাচীন সাহিত্যেও গণিকাবাচক কয়েকটি শব্দ আমরা পাই। যেমন হস্রা, অগ্রূ, সাধারণী। তাছাড়া ঋগ্বেদে জার ও জারিনা শব্দ অনেক বার ব্যবহৃত হয়েছে। এটা ছিল বিবাহিত পুরুষ/নারীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক। একে অবৈধ সম্পর্ক বলা চলে, কিন্তু গণিকা পর্যায়ভুক্ত নয় এটি। যজুর্বেদে গণিকাবাচক সামান্যা ও সাধারণী শব্দ দুটি পাওয়া যায়।
পরবর্তী বৈদিক যুগ— অথর্ববেদে পুংশ্চলী শব্দটি রয়েছে। বেদের ব্রাহ্মণ অংশে ভিশ্যা নামক নারীর উল্লেখ আছে। এরা সম্ভবত বৈশ্য বণিকদের আনন্দদানকারী ছিল। এই থেকে ক্রমশ ‘বেশ্যা’ শব্দটির উৎপত্তি হয়। তবে তারা বৈশ্য ছাড়াও অন্যদেরও বিনোদনের উপকরণ হত।
মহাকাব্যে গণিকা— মহাভারতের অশ্বমেধ পর্ব, শান্তি পর্ব, মহাপ্রস্থানিক পর্ব ও আরো নানাস্থানে গণিকাবৃত্তির উল্লেখ আছে। রামায়ণের অযোধ্যাকাণ্ডে, বিলাস উপকরণের তালিকায় এদের উল্লেখ দেখা যায়। অর্থাৎ গণিকাবৃত্তি তখন সমাজে ভালোভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। অভিজাত ও ধনী ব্যক্তি কোনো উৎসবের আয়োজন করলে অনেক সময়ে গণিকাদের আমন্ত্রণ জানানো হত। এইসব অনুষ্ঠানে গণিকাদের একমাত্র লাল রংয়ের পোশাক পরতে হত, লাল পাথর দিয়ে তৈরি অলংকার পরতে হত। লাল রং মৃত্যুর দেবতা যমের দ্যোতক। লাল রঙের পোশাক, উপস্থিত অন্যান্যদের থেকে তাদের আলাদা করে দিত ও সেইসঙ্গে গণিকাগমনের বিষয়ে মানুষকে সাবধান থাকার বার্তাও দিত। মানুষ, দেবরাজ ইন্দ্রের যে ইন্দ্রপুরীর কল্পনা করত, সেখানকার বিশদ বিবরণ থেকে বিয়াল্লিশ জন অপ্সরার নাম পাওয়া যায়।
অর্থাৎ পৃথিবীর মত সেখানেও স্বর্গবেশ্যাদের উপস্থিতি আছে বলে তারা মনে করত। উর্বশী, রম্ভা, ঘৃতাচী প্রমুখ ছিল ওই অপ্সরাদের মধ্যেও বিশেষস্থানের অধিকারী এবং বলা বাহুল্য, এই স্বর্গীয় অপ্সরার চিন্তা এসেছে পৃথিবীর গণিকাদের সঙ্গে সাযুজ্য রাখতে।
ধর্মসূত্র ও স্মৃতিশাস্ত্রের যুগ– যাজ্ঞবল্ক্য স্মৃতি, পরাশর সংহিতা, বিষ্ণুপুরাণ ইত্যাদিতে গণিকার উল্লেখ আছে।
মহাজনপদ ও মৌর্য যুগ– ছয়’শো খৃষ্টপূর্বাব্দ থেকে পরবর্তী বেশ কয়েকটি শতক পর্যন্ত সময়কালকে প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে সমৃদ্ধ সময় বলা যেতে পারে। সাম্রাজ্য বিস্তারে, বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিরোধে, বাণিজ্যে এবং নূতনভাবে ধর্মীয় চিন্তায়– এই সময়কাল ছিল সর্বাপেক্ষা সম্ভাবনাময়। ধর্মের ক্ষেত্রে গৌতম বুদ্ধ এবং মহাবীর এক নতুন সাম্য চিন্তাধারা নিয়ে আসেন। এই সময়ে রাজাগণ (সেই বিম্বিসার থেকে শুরু করে অশোক পর্যন্ত) স্থাপন করেন বিশাল সাম্রাজ্য। গ্রিক আক্রমণ, হূন আক্রমণ ইত্যাদি বিদেশি আক্রমণও ঘটে এই সময়কালের মধ্যে। বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মগ্রন্থ এবং পুরাণ থেকে আমরা মগধ, অঙ্গ, কোশল, কাশি, বৈশালী সম্পর্কে বহু তথ্য পাই। জানা যায় চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সময় পাটলিপুত্র গণিকাবৃত্তির কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। মৌর্য যুগেই প্রথম রাষ্ট্র গণিকাদের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে ও নানা বিধি-নিয়ম স্থির করে দেয়। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে এই বিষয়ক একটি প্রকরণ আছে (পরে আলোচ্য।)।
গুপ্ত যুগ– গুপ্ত যুগে গণিকা প্রথা আরও বিকশিত হয়। এরা জনগণের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে নিজেদের প্রায় অপরিহার্য করে তোলে। এই সময়েই বাৎস্যায়ন রচনা করেন কামসূত্র। রচিত হয় ভরতের নাট্যশাস্ত্র। এই দুটি গ্ৰন্থে আদর্শ গণিকার লক্ষণগুলি তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিটি রাজকীয় উৎসবে তারা যোগ দিত। এমনকি রাজসভাতেও অনেক সময় উপস্থিত থাকতো। রাজা শিকারে গেলে বা যুদ্ধে গেলেও গণিকারা সহচরী হত। রাজা বা অভিজাত ব্যক্তিরা তাদের উদ্যানবাটীতে যে সমস্ত উৎসবের আয়োজন করতেন, সেখানে অবশ্যই তারা যোগদান করত ও সক্রিয় অংশ নিত। এমনকি এদের কেউ কেউ রাজার এতটাই ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠত যে গুপ্তচরের দায়িত্বও তাদের ওপর অর্পিত হত।
বাস্তবে, এই সময়কালে জলবাণিজ্য ও স্থলবাণিজ্য এতটাই প্রসারিত হয়েছিল যে রাজার তো বটেই, নাগরকদের হাতেও প্রচুর উদ্বৃত্তঅর্থ জমা হয়েছিল। ফলে একদিকে যেমন তারা আমোদপ্রমোদের ক্ষেত্রে মুক্তহস্ত হয়েছিল, অন্যদিকে এদের আকৃষ্ট করার জন্য গণিকারা নিজেদের বিভিন্ন কলায় পারঙ্গম করে তুলেছিল।
গণিকার প্রতিশব্দ ও তাদের শ্রেণীবিভাজন– যেসব সাহিত্যকীর্তি বা ধর্মীয় গ্ৰন্থের উল্লেখ করা হল, সেগুলি ছাড়াও জাতকে, বৌদ্ধ ও জৈন গ্ৰন্থে, তৎকালীন নাটকগুলিতে গণিকাবাচক বহু শব্দ ব্যবহৃত রয়েছে। প্রায় পঞ্চাশটি প্রতিশব্দ পাওয়া গেছে। যেমন— সাধারণী, সামান্যা, ব্রজয়িত্রী, মুহুর্তিকা, রূপদাসী, বর্ণদাসী, বেশ্যা, গামিনী, নগরশোভিনী, জনপদকল্যাণী (এরা হত ঐ জনপদের সবার ভোগ্যানারী), কুলটা, স্বৈরিণী, বারাঙ্গনা, বারস্ত্রী, বারবনিতা, স্বতন্ত্রা, রূপজীবা। শব্দরত্নাবলীতে পাওয়া যায় শালভঞ্জিকা, বর্বটী, কামরেখা, শূলা, ভণ্ডহাসিনী, বারবিলাসিনী ইত্যাদি প্রতিশব্দ। বৈশিকতন্ত্রে আছে বৃষলী, পাংশুলা, লঞ্জিকা, কুন্তা, রন্ডা। হেমচন্দ্রের অভিধানচিন্তামণিতে রয়েছে সাধারণু, পন্যাঙ্গনা। রাজনির্ঘন্ট অভিধানে আছে ভোগ্যা, স্মরবিথীকা। অমরকোষে বেশ্যা, গণিকা রূপাজীবা। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বলা হয়েছে পতিব্রতা হলো একপত্নী। স্বামী ছাড়া দ্বিতীয় পুরুষের প্রতি আসক্ত নারী কুলটা। তিনজনের প্রতি বৃষলী। চার থেকে ছয় জনের প্রতি হলে বেশ্যা। সাত আট জনে হলে যুঙ্গী। এর বেশিতে মহাবেশ্যা। জায়াপজীবি ও জায়াজীবি নামক পুরুষেরা স্ত্রীর অন্নে প্রতিপালিত হত এবং স্ত্রীর সেই উপার্জন আসত দেহ বিক্রয় করে। রক্ষিতা একজন পুরুষের কাছেই সমর্পিত হত। বিনিময়ে তার সব দায়িত্ব নিত ঐ পুরুষ।
সব গণিকাকে একপর্যায়ে ফেলা যায় না। বাস্তবে, এই যতগুলি নাম বলা হল, তাতে গণিকার স্থান ছিল সবার উপরে। তার নিচের স্তরে রূপজীবা। এর নিচে বেশ্যা। আর আরো নিচে বৃষলা, পুংশ্চলী প্রমুখ। এই গন্ডির বাইরে পরে থাকত অজস্র বৃদ্ধা, রূপহীনার দল। এদের কেউ কেউ গণিকালয়েই থেকে যেত কুট্টনী হিসেবে। তার কাজ ছিল যুবতী গণিকার স্বার্থরক্ষা ও তার দেখাশোনা করা। কিন্তু সবাই তো কুট্টনীর কাজ পেত না। তাই তাদের দুরাবস্থা ছিল অবর্ণনীয়।
দেবদাসী– এরা ছিল মন্দিরগণিকা। মন্দির পুরোহিতগণ সরকার থেকে প্রাপ্ত অর্থে এদের প্রতিপালন করতেন। এদের মূল কাজ ছিল মন্দিরের দেবতার সামনে নৃত্য করা। কিন্তু তার সঙ্গে আরেকটি কাজও তাদের করতে হত, তা হল পুরোহিতদের শয্যাসঙ্গিনী হওয়া।
এবার আমরা দেখব তৎকালীন রাষ্ট্রব্যবস্থা গণিকাদের জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল সেই বিষয়টি। এক্ষেত্রে মূল উপাদান অর্থশাস্ত্র। অর্থশাস্ত্রে একটি আলাদা প্রকরণই রয়েছে, যার নাম গণিকাধ্যক্ষ। অধ্যক্ষ বলতে মৌর্য শাসন ব্যবস্থার রাজকীয় আধিকারিককে বোঝায়। এই অধ্যায়ের প্রথমদিক রাজকুলের জন্য নির্বাচিত গণিকা সম্পর্কে তথ্য দেয়। কিন্তু বেশিরভাগ নিয়ম-কানুন এই শ্রেণীর সবার জন্যই প্রযুক্ত হত। বিশেষ করে দণ্ডবিধি সংক্রান্ত নিয়মগুলি।
বলা হয়েছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, গণিকাবংশে অথবা অ-গণিকাবংশে জন্ম নেওয়া রূপবতী যুবতীকে রাজকুলের গণিকা রূপে নির্বাচিত করবেন। ঐ যুবতীর নৃত্যগীত ও অন্যান্য কলায় পারদর্শিতা থাকবে। সেই নারীকে প্রতিবছরে ১০০০ পন বেতন দেওয়া হবে। কোন গণিকা যদি কাজ ছেড়ে চলে যায় বা মারা যায়, তাহলে তার কন্যা বা ভগিনী ওই কার্যভার গ্রহণ করবে এবং তার সম্পত্তিও সে পাবে অথবা গণিকার মাতা অনুরূপ কাউকে প্রতিগণিকা রূপে স্থাপন করবে। এর কোনটাই সম্ভব না হলে এই সম্পত্তি রাজার হস্তগত হবে। গণিকার সৌভাগ্য অনুযায়ী (এখানে সৌভাগ্য বলতে, গণিকার পুরুষ আকর্ষণের ক্ষমতা, সে ঐসব পুরুষদের কাছ থেকে কি পরিমাণ অলঙ্কার/উপহার পাচ্ছে, এইগুলি বোঝায়) ও পারদর্শিতা অনুযায়ী তাদের তিন ভাগে বিভক্ত করা হবে এবং তাদের পারিশ্রমিক সেই অনুযায়ী স্থির হবে। অর্থাৎ প্রতি বছরে কনিষ্ঠা ১০০০ পন, মধ্যমা ২০০০ এবং উত্তমা ৩০০০ পন বেতন পাবে। অধ্যক্ষ তাদের রাজছত্র, ভৃঙ্গার, ব্যজনী, শিবিকা, পীঠিকা ইত্যাদি বহনের কাজ দেবেন। যখন কোন গণিকা রূপযৌবন বিগতা হবে, অর্থাৎ বয়স্ক হয়ে পরবে তখন তাকে পরবর্তী গণিকাকে শিক্ষা দেবার কাজে নিযুক্ত করা যেতে পারে। (এই বাক্য থেকে বোঝা যায় যে সব বিগতযৌবনাকেই এরকম দায়িত্ব দেওয়া হত না)। গণিকা যদি রাজসেবা করা থেকে মুক্তি চায় তাহলে ২৪০০০ পন নিষ্ক্রয়মূল্য দিতে হবে। অধ্যক্ষ গণিকার ভোগ (ভোক্তার কাছ থেকে প্রাপ্ত ধন), দায় (মাতৃকুল থেকে আগত ধন), আয় (ভোগের অতিরিক্ত ধন), ব্যয় ও আয়তি (ভবিষ্যৎ সঞ্চয়)– এই সবকিছুই নিবন্ধপুস্তকে লিখে রাখবেন। তিনি গণিকার ব্যয়প্রবনতা নিবারণ করবেন। অলংকার, বস্ত্র বা অন্য কোনো দ্রব্য যদি সে বিক্রয় করে তাহলে তাকে দণ্ড দিতে হবে। এছাড়া, বাকপারুষ্য (কঠোর বা কুৎসিত বাক্য প্রয়োগ) এবং দণ্ডপারুষ্যের (কাউকে পদাঘাত করা) জন্য তাকে যথাক্রমে ২৪ ও ৪৮ পন দণ্ড দিতে হবে।
যদি কোনো পুরুষ গণিকাকে তার মতের বিরুদ্ধে স্বগৃহে বা অন্য কোথাও লুকিয়ে রাখে তবে তা হবে দণ্ডার্হ অপরাধ। গণিকার দেহে কোনো ক্ষত সৃষ্টি করলে পুরুষটিকে ১০০০ বা পরিস্থিতি বিচারে এর থেকেও অনেক বেশি দণ্ড দিতে হতে পারে। ছত্রভৃঙ্গার ইত্যাদি বহনকারীকে, গন্ধমাল্য প্রস্তুতকারীকে বা কোনো কুমারীকে আঘাত করলেও আঘাতকারীকে উচ্চদণ্ড দিতে হবে। অন্যদিকে গণিকা যদি অর্থগ্ৰহণের পর অর্থদাতাকে নিজ দেহ দিতে রাজী না হয়, তাহলে তাকে ভোগবেতনের আটগুণ অর্থ দণ্ড দিতে হবে। কোনো পুরুষকে হত্যা করলে, তাকে ঐ পুরুষের চিতাতেই দগ্ধ করা হবে।
এই একই বিধান নট, নর্তক, গায়ক, বাদক, চারণের স্ত্রীদের জন্য, ব্যভিচারিণীর জন্য, এমনকি জায়াজিবীদের স্ত্রীর প্রতিও, অনুরূপ অবস্থায় প্রযুক্ত হবে। বৃদ্ধা গণিকার জন্য সামান্য অর্থদানের কথাও অর্থশাস্ত্রে আছে। কিন্তু ক’জন ই বা সেই সুযোগ পেত?
গণিকার শিক্ষা— তাদের নানা বিদ্যায় পারদর্শী করার কথা অর্থশাস্ত্রে আছে। গণিকার জন্য নিযুক্ত করা হত আচার্যদের। তাঁরা পারিশ্রমিক পেতেন। গণিকা যখন গণিকালয়ে রাজকুলের গণিকা হিসেবে থাকবে, তখন তার শিক্ষার দায় রাষ্ট্রের। কিন্তু রূপজীবার ক্ষেত্রে শিক্ষার দায় তার নিজের, তার মায়ের অথবা তার গ্ৰাহকের। অবরুদ্ধার শিক্ষা সহ সকল ব্যয় বহন করবে তার পৃষ্ঠপোষক ব্যক্তি।
কামসূত্র অনুসারে গণিকার শিক্ষণীয় বিষয় ছিল চৌষট্টি প্রকার। একেই বলা হয় চৌষট্টি কলা। এগুলি হল— সংগীত, বাদ্য, নৃত্যকলা শিক্ষা, ভূর্জারিপত্রের তিলক রচনা, দেবমন্দিরে চাল ও ফুলের সাজ, আলপনা দেওয়া, বাসগৃহে পুষ্পসজ্জা রচনা, বস্ত্র ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ কুঙ্কুমে রাঙানো, গ্ৰীষ্মকালীন পুষ্পসজ্জা ও ভূমিসজ্জা, ঋতু অনুসারে শয্যা রচনা, জলতরঙ্গ নির্মাণ, জলক্রীড়া, সাঁতার ও জলে নিমজ্জমান ব্যক্তিকে বাঁচানো, বশীকরণ বা ঐধরনের অন্যান্য কাজের মন্ত্র জানা, পূজা ও শৃঙ্গার এই দুটি ব্যাপারের জন্য উপযুক্ত পুষ্পচয়ন, ফুলের মুকুট তৈরি করতে জানা, দেশ ও যুগের রীতি অনুযায়ী বস্ত্র অলংকার পরিধান, হাতির দাঁত ও শাঁখের কর্নাভরণ বানানো, চন্দন কর্পূর ও কস্তূরী দিয়ে নিজেকে সুশোভিত করা, নানাপ্রকার ধূপধুনা ও তেল দিয়ে সুগন্ধী প্রস্তুত করা, অলংকার তৈরি ও তা পরিধানের কলাকৌশল শেখা, ইন্দ্রজাল শিক্ষা, হাত-সাফাই জানা, রন্ধনবিদ্যা জানা, ফলের রস তৈরি করে তাই দিয়ে মদ প্রস্তুত করা, সূচিশিল্পে দক্ষতা, বাজিকরের খেলা শেখা, বীণা বাজানো, ধাঁধা সমাধান করা, তর্কে বিতর্কে কঠিন শব্দের প্রয়োগ জানা, সাহিত্যপাঠ, কাহিনী বা নাটকে শৃঙ্গার রসজ্ঞান, কাব্যরচনা, কাব্যপাঠ, সমস্যা সমাধান, বেত ও কুশের আসন, কেদারা ও চাটাই বুনতে জানা, কোনো বস্তু সঠিক ভাবে পরিষ্কার করা, ধাতু ও কাঠের দ্রব্য তৈরি করা, ছুতরের কাজ শেখা, বাস্তুবিদ্যার জ্ঞান থাকা, রত্নবিচার, ধাতু বিচার, মণিমাণিক্যের প্রয়োগ কৌশল জানা, পশুপাখি ধরার কৌশল জানা, ময়না ইত্যাদি পাখিকে বুলি শেখানো, মালিস ও কেশমর্দন, সাংকেতিক গুপ্ত ভাষা বলা, লেখা ও বোঝার জ্ঞান থাকা, অন্য প্রদেশের ভাষাজ্ঞান থাকা, ফুল দিয়ে রথ সাজানো, শুভাশুভ ভবিষ্যতকথন, বায়ুযান নির্মাণ, স্মরণশক্তি বাড়ানো, তর্কবিতর্কের জন্য পড়াশোনা করা, অন্যের পড়া বিষয় দ্রুত পুনরুক্তি করার ক্ষমতা, কাব্যরচনা, শব্দজ্ঞান, ছল করার মতো কন্ঠস্বর পাল্টানো, ঐ একই কাজে পোশাক পাল্টানো, রসশাস্ত্র ও অলংকার জ্ঞান, (এই অলংকার ভাষার সাথে যুক্ত), শরীরের খোলা অঙ্গ আবৃত করার জ্ঞান, জুয়া খেলা, পাশা খেলা, পুতুল ইত্যাদি খেলনা বানানো, আচার শাস্ত্রের জ্ঞান, অন্যান্য শাস্ত্রের জ্ঞান, ব্যায়াম করা, মৃগয়ায় দক্ষতা অর্জন করা। এগুলি লিখেছেন বাৎস্যায়ন। এ বাদেও গণিকার শিক্ষার তালিকায় আরো বিষয় ছিল। বৃহৎকল্পভাষ্য থেকে জানা যায়, অশ্ববিদ্যা হস্তিবিদ্যা, যুদ্ধবিদ্যা, শিবির সন্নিবেশ জ্ঞান ইত্যাদি থাকা বাঞ্ছনীয় ছিল।
বোঝাই যায় যে এতগুলো বিদ্যা আয়ত্ত করার ক্ষমতা খুব কম জনেরই থাকত। তাই যে যতটা পারে, বা যে কাজগুলি তার স্বাভাবিক দক্ষতা আছে, সে সেগুলোই শিখত। তবে নৃত্য গীতের শিক্ষা সকলেই নেবার চেষ্টা করত।
এই কারণেই গণিকাকুলে একটু নিম্নমানের যারা, তারা বৃত্তিগত কাজ করতো। রাজা বা ধনী বা অভিজাতের গৃহে নিজের শেখা বৃত্তিগত কায়িক পরিশ্রমের কাজ করে জীবন নির্বাহ করত। সৈরিন্ধ্রী, শিল্পকারিকা, কুম্ভদাসী, বর্ণদাসী, নটী, ক্ষুদ্রা, ভঞ্জিকা প্রমুখ ছিল এই পর্যায়ের। কিন্তু এরা প্রত্যেকেই গৃহস্বামী বা গৃহের অন্য পুরুষের ভোগ্যা ছিল।
প্রাচীনকাল থেকেই দান, দক্ষিণায়, যৌতুকে, যুদ্ধজয়ে, যজ্ঞে এমনকি শ্রাদ্ধানুষ্ঠানেও যেসব জিনিস দেওয়া হত তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল নারী। এর বহু উদাহরণ দেওয়া যায়। অল্প কয়েকটির উল্লেখ করছি এখানে। যুধিষ্ঠির অশ্বমেধ যজ্ঞ করেছিলেন তা আমরা জানি। ওই যজ্ঞে নিমন্ত্রিত হয়ে যত রাজা এসেছিলেন তারা সঙ্গে করে সুন্দরী নারীদের এনেছিলেন যজ্ঞানুষ্ঠানের উপহার দ্রব্য হিসাবে। অন্যদিকে যজ্ঞ শেষ হলে যুধিষ্ঠিরও ওই সব রাজাদের অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে নারী দান করেছিলেন। বিরাট রাজা অর্জুনের শৌর্যে প্রীত হয়ে পারিতোষিক হিসেবে দিয়েছিলেন বহু সুন্দরী নারী। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কর্ণ ঘোষণা করেছিলেন, যে অর্জুনকে চিনিয়ে দেবে তাকে একশত সুন্দরী নারী দান করা হবে। দ্রৌপদীর বিবাহে বহু সুন্দরী তরুণী যৌতুক হিসেবে তাঁর অনুগামী হয়েছিলেন। এই তালিকা বিশদ। আর এখান থেকেই বোঝা যায় যে কিভাবে সমাজে গণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল।
প্রথমত, যজ্ঞের পুরোহিতকে বেশ কিছু নারী দক্ষিণা হিসাবে দেওয়া হত। স্বভাবতই অতগুলি নারীর ভরণপোষণ পুরোহিতের পক্ষে সম্ভব হত না। কিছুদিন পরেই তিনি তাদের ত্যাগ করলে, বেশিরভাগ নারীই দাসী অথবা গণিকায় পরিণত হত।
দ্বিতীয়ত, যুদ্ধ জয়ের সময়ে জয়ী রাজা বিজিত পক্ষের নারীদের বন্দী হিসাবে নিজ রাজ্যে নিয়ে আসে। এই রীতি অনাদিকাল থেকে চলে আসছে। কিছু হাতবদলের পর এরাও গণিকাবৃত্তি নিতে বাধ্য হত।
তৃতীয়ত, নানা উপায় পুরুষগণ কোনো কুলকন্যাকে প্রলুব্ধ করে নিজের অনুকূলে নিয়ে আসত। স্বয়ং বাৎসায়ন এইরকম কাজের বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। এক্ষেত্রেও ওই নারীদের সমাজে বা নিজ গৃহে আর স্থান হত না। তখন তাদের সামনে একটি পথই খোলা থাকতো।
চতুর্থত, দুর্ভিক্ষজনিত অবস্থায় বা শুধু অর্থ উপার্জনের জন্যেই বাড়ির লোকেরাই নারী বিক্রয় করতো। এই ধরনের আচরণ যে কেবল দরিদ্র পরিবারের মানুষরাই করত তা নয়। ধনীগৃহেও এই ঘটনা বিরল ছিল না। কাশীর এক ধনী শ্রেষ্ঠীর কন্যা ছিল অসামান্য রূপবতী। ওই শ্রেষ্ঠী তার কন্যার এক রাত্রের যে মূল্য নিরূপণ করেন তা সমগ্র কাশী রাজ্যের রাজস্বের সমান। ফলে কোন প্রার্থী পাওয়া যায় না। তখন ওই কন্যা তার মূল্য অর্ধেক বলে ঘোষণা করে, এই থেকে তার নাম হয় অর্ধকাশী। সুতরাং অর্থলোভী নিষ্ঠুর পিতাও নিজ কন্যাকে গণিকাবৃত্তির দিকে ঠেলে দিত। তাছাড়া জায়াজিবী গণের কথা আগের পর্বে রয়েছে, যাদের স্ত্রীরা বাড়িতে থেকেই বেশ্যাবৃত্তি করত ও সেই উপার্জনে স্বামী-সংসারের খরচ চালাত।
পঞ্চমত, গণিকার কন্যারাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গণিকাবৃত্তি অবলম্বন করত।
সুতরাং নারী স্ব-ইচ্ছায়, স্বামী ব্যতীত অন্য পুরুষকে দেহদান করত — ব্যাপারটা এত সরল ছিল না বোধহয়। আর জেনেশুনে ভ্রষ্টাচারী হওয়ার সংখ্যা খুব বেশি ছিল না বলেই মনে হয়। কারণ তৎকালীন সাহিত্যে এমন উল্লেখ খুব বেশি চোখে পরে না।
গণিকার বিবাহের বিধানও ছিল। মৃচ্ছকটিক নাটক থেকে সেই কথা জানা যায়। এই নাটকের প্রধান চরিত্র হল গণিকা বসন্তসেনা। নাটকের শেষ অঙ্কে আমরা দেখি যে রাজা আর্যক, বসন্তসেনাকে কুলোবধূর মর্যাদা দিচ্ছেন এবং সে শাড়ির আঁচল দিয়ে অবগুণ্ঠন দিচ্ছে। অন্যদিকে এই নাটকে আর এক ভাবে বিবাহের পথ বলা আছে। বসন্তসেনার সহচরীকে তার প্রেমিক নিষ্ক্রিয়মূল্য দিয়ে বিবাহ করতে প্রস্তুত হয়েছিল। অতএব দুইভাবে গণিকা বিবাহিত হতে পারত। প্রথমত রাজার আদেশে, দ্বিতীয়ত নিষ্ক্রয়মূল্যের বিনিময়ে মুক্ত হবার পর।
গণিকা কী ধরনের প্রার্থী খুঁজবে তারও নির্দেশ আছে কামসূত্রে। তরুণ, ধনী, পারিবারিক দায়দায়িত্বহীন, উচ্চপদস্থ, শিক্ষিত, বাগ্মী, বন্ধুভাবাপন্ন, নারী সঙ্গকামী — এইসব লক্ষণযুক্ত পুরুষ গণিকার যোগ্য প্রার্থী।
গণিকালয়ে গণিকামাতা বা কুট্টনি হিসেবে নিযুক্ত গতযৌবনা গণিকার কাজ ছিল গণিকা যাতে প্রতারিত না হয়, তা দেখা। এই জন্য তারা যে যে কাজগুলো করত তা হল প্রার্থীকে বলা যে, কন্যা অসুস্থ পরিশ্রান্ত বা বিমর্ষ। অন্য কেউ আরো বেশি পারিশ্রমিক ও অলংকার দিতে রাজি আছে সে কথা জানানো, কিংবা কন্যার অভাব, ঋণ ও অসুবিধা উল্লেখ করা।
প্রাচীন ভারতে প্রসিদ্ধ গণিকাদের মধ্যে ছিল আম্রপালি, সালাবতি, সিরিমা, অর্ধকাশী প্রমুখ। এদের আর্থিক অবস্থা ছিল রীতিমত ভালো। এরা শহরের মধ্যেই বিশাল বিশাল বাড়ি তৈরি করাতেন নিজেদের বাসস্থান হিসেবে। যেমন সাতমহলা বাড়িতে থাকতেন মৃচ্ছকটিকের বসন্তসেনা। এদের উপার্জন ছিল প্রচুর। যেমন আম্রপালিকাকে একরাতের জন্য হাজার কার্ষাপন দিতে হত। এরা এতটাই ধনী ছিল যে, নিজের খরচে মঠ মন্দির বানাত, সশিষ্য বুদ্ধদেবকে মধ্যাহ্নভোজে আপ্যায়িত করত, বিশাল আম্রকানন দান করত, কূপ খনন করাত ইত্যাদি।
গণিকালয় স্থাপন করা হত শহরের দক্ষিণ দিকে। বাস্তুশাস্ত্র মতে দক্ষিণ দিকে শ্মশান থাকে। ঐ দিকটির সঙ্গে মৃত্যুর দেবতা যমের সম্পর্ক বেশ নিবিড়। গণিকা মরল কি বাঁচল, তাতে কিছু যায় আসে না, এইজন্যই কি ওরকম জায়গা গণিকালয়ের জন্য প্রশস্ত ছিল?
তবে শহরের মধ্যেও গণিকার বাসস্থান থাকত, যদি অবশ্য সে গণিকা বসন্তসেনার মতো ধনী ও রূপবতী হত। এছাড়া বাণিজ্য পথের ধারে ধারে ছিল গণিকালয়। দীর্ঘ বাণিজ্য যাত্রায় গৃহবিচ্ছিন্ন মানুষের চিত্তবিনোদন করত এই মুহূর্তিকারা। অবশ্য কোথাও কোথাও বিদেশী বণিকদের একটু বেশি অর্থ দিতে হত। তবে বাণিজ্যের এই তো রীতি। আর গণিকাবৃত্তি, সমাজের চাপিয়ে দেওয়া এক প্রকার ব্যবসাই। বিশেষ করে গণিকালয় নিয়মিত কর দিত রাষ্ট্রকে। একজন গণিকাকে তার আয়ের ২৫–৩০% রাজকর দিতে হত। সুতরাং সামান্য আয় বৃদ্ধির চেষ্টা করা অস্বাভাবিক ছিল না।
গণিকা প্রসঙ্গে তৎকালীন পুরুষ শাসিত সমাজের কিছু দ্বিচারিতার উদাহরণ না দিলে এই লেখা অসমাপ্ত থেকে যায়। গণিকাগমন পাপকাজ। এর জন্য সামান্য প্রায়শ্চিত্তের বিধান আছে। তা হল যাত্রারম্ভে যে সব শুভজিনিষ দেখার বিধি (বাছুরসহ গরু, অশ্ব, দক্ষিণাবর্ত শঙ্খ, পূর্ণ কুম্ভ ইত্যাদি), সেই তালিকায় গণিকার স্থান হয় কিভাবে? দুর্গাঠাকুর গড়ার সময়ে তার দুয়ারের মাটি অত্যাবশ্যক কি নিয়মে? যে পুরুষ নিজ স্ত্রীর গণিকাবৃত্তি দ্বারা প্রাপ্ত অর্থে জীবন নির্বাহ করে, সে সমাজচ্যুত হয় না, বিপরীতে, হয়তো একটি মাত্র ভুলের কারণে নারীর সামনে গৃহের কপাট বন্ধ হয়ে যায়। যে গণিকা তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টা অগণিত পুরুষের জৈবিক ও বৌদ্ধিক চাহিদা পূরণ করে এসেছে, বৃদ্ধাবস্থায় সমাজ আবর্জনা জ্ঞানে তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় কোন মানসিকতায়?
বর্তমানের চিত্রটাও এর থেকে খুব কিছু ভালো কি? সমাজ পালটায়নি। খোলস বদলেছে কেবল।
তথ্যসূত্র—
১. Kumkum Roy, Women in early Indian societies, Manohar, 2005
২. S. N. Sinha, N. K. Basu, History of prostitution in India, Volume 1, Cosmo, 1994
৩. সুকুমারী ভট্টাচার্য, প্রাচীন ভারতে নারী ও সমাজ, ন্যাশনাল বুক এজেন্সি, ২০১০
৪. সুকুমারী ভট্টাচার্য, প্রাচীন ভারত সমাজ ও সাহিত্য, আনন্দ পাবলিশার্স লিমিটেড, ২০০০
৫. অর্থশাস্ত্র
৬. বাৎস্যায়নের কামসূত্র।
অনবদ্য রচনা। পরিমিত পরিসরেও আবহমান কালের অনুপুঙ্খ আস্বাদ। চেতনার রঙে ঈশ্বর সৃষ্টি, পুরুষতান্ত্রিকতার বৈষম্য, পণ্যভোগ শেষ হলে তাকে আবর্জনার অনিশ্চয়তায় নিক্ষেপ, শ্রেণীবিভাগ, অর্থমূল্য, রাষ্ট্রীয় শাস্তিবিধান ও অন্যান্য সকল ঐতিহাসিক জিজ্ঞাসা সংক্ষিপ্ত ভাবে চমৎকার সংস্থিত হয়েছে। আমার কৃতজ্ঞতা 🙏
আবার পড়লাম, খুব ভালো লেখা
খুব ভালো লেখা