সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

পরমেশ্বর হে— প্রথম পর্ব

পরমেশ্বর হে— প্রথম পর্ব

অতীন দাস

আগস্ট ৩, ২০২৪ ২৮৫ 0

রানি পরমেশ্বরী

“আমি পরমেশ্বরী, পিতৃসূত্রে চিনা ঐতিহ্যের অধিকারী— চিনের ক্যান্টনের মানুষ। আমার পিতা জোহর রাজ্যের শাসক, প্রয়াত সুলতান ইস্কান্দার। আমি বর্তমান জোহর শাসক সুলতান ইব্রাহিম ইবনি আলমারহুম সুলতান ইস্কান্দারের বোন। আমার মা হাজা খালসম আব্দুল্লা একজন ব্রিটিশ মহিলা— যার পূর্বে নাম ছিল যোসেফাইন ট্রেভরো।”

জাতি, ধর্ম সংমিশ্রণের প্রকৃতিটি কি সঠিক ভাবে ধরা পরলো? আরও শুনুন—

ইস্কান্দার নামটি এসেছে আলেকজান্ডার (দ্য গ্রেট) থেকে। সপ্তদশ শতকের সেজারাহ মেলায়ু (রাজাদের বংশতালিকা) বা ‘মালয় অ্যানালস’ শুরু হয়েছে ম্যাসেডোনিয়ার আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট (ইস্কান্দার শাহ বা সেকেন্দার যালকারনাইন নামেও পরিচিত) দিয়ে। অনেকের মতে শাহ কথাটি এসেছে ইরানের রাজকীয় ফার্সি উপাধি থেকে।

পরমেশ্বরী বলে চলেন, “আমার স্বামী সুলতান আব্দুল্লাহ সুলতান আহমেদ শাহ আজ ১৬তম ইয়াং দি-পারতুয়ান অগং হিসেবে সিংহাসনে বসবেন। তাই আমি টুংকু আজিজ রাজা পারমাইসুরি (পরমেশ্বরী) অগং।”

এতক্ষণে বোঝা যাচ্ছে নিশ্চয়ই রাজা রানিদের ব্যবহৃত নানা উপাধির মধ্যে আছে পরমেশ্বর ও পরমেশ্বরী। মালয়েশিয়া উপদ্বীপের জোহর রাজ্যের প্রয়াত সুলতান আবু বকর ১৮৮৫ সালে ‘ওং আহ গিউ’ (Wong Ah Gew) নামে একজন ধনী চিনা ব্যবসায়ীর কন্যাকে সিঙ্গাপুরে বিয়ে করেন যিনি পরে সুলতানা ফতিমা নামে পরিচিত হন। এই ভাবে জোহর রাজবংশে চিনা রক্তের প্রবেশ হয় আর তাঁর উত্তরিধাকারী হলেন পরমেশ্বরী। ফতিমার পুত্র সন্তান ছিল না, তবে তাঁর দুই কন্যাকে জোহরের রাজ পরিবারে বিয়ে দেওয়া হয়। (সূত্র: দি স্ট্রেইটস টাইমস, সিঙ্গাপুর, ২৯/০৭/২০১৯)।

রাজা পরমেশ্বের বা অগং

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ, অজস্র শিলালিপি সহ অন্যান্য ব্যবহার্য সামগ্রী, পর্যটকদের বিবরণ ইত্যাদি। এ ছাড়াও আছে বিভিন্ন প্রাচীন গ্রন্থ যাতে নানান রাজকীয় দরবারের ঘটনাবলীর নথির সংকলন (ক্রনিকল) আছে। চিন শক্তিশালী প্রতিবেশী হওয়ায় তাদের দরবারে ছোটো ছোটো রাজ্যগুলি নিয়মিত বিবিধ মূল্যবান উপঢৌকন সহ প্রতিনিধি পাঠিয়ে আনুগত্য প্রকাশ ও বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য থাকত। চিনা সম্রাটরা প্রতিনিধি পাঠাতেন রাজ্যগুলিতে, সব মিলে চিনা দরবারের তথ্যসূত্র গুরুত্বপূর্ণ; অন্য কয়েকটি দেশেরও এই জাতীয় রাজকীয় বিবরণ পাওয়া যায়। আমরা এইসব সূত্রের দু’একটি এই নিবন্ধে ব্যবহার করব।

চিনা মিং ক্রনিকল (মিং শিলু) রেকর্ডে আছে, পরমেশ্বরের স্ত্রী সম্ভবত ‘পরমেশ্বরী’— এটি একটি উপাধি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি প্রকৃতপক্ষে মালয় ভাষায় ‘Permaisuri’ (‘রানি’) হিসেবে আজও ব্যবহৃত হয় (তাঁর কথাই আগে উল্লেখ করা হয়েছে)। ইংরেজিতে রানির সম্পূর্ণ উপাধি হল ‘কেবাওয়াহ দুলি ইয়াং মহামুলিয়া সেরি পাদুকা বাগিন্দা রাজা পেরমাইসুরি আগাং’ (বা অগং)। উল্লেখ্য যে ‘Agong’ বা প্রমিত মালয় ভাষায় Agung অর্থ ‘সর্বোচ্চ’। মালয়েশিয়ার সংবিধানের সরকারি ইংরাজি সংস্করণে Agong কথাটি অনুবাদ না করে বার বার ব্যবহার করা হয়েছে (যেমন ধারা ৩.২-৩.৫)। পরে আলোচনা করা যাবে ‘দুলি’ এবং ‘পাদুকা’ শব্দদ্বয় নিয়ে।

পরমেশ্বর উপাধিটি আজও মালয় রাজপরিবারের মধ্যে প্রচলিত। পরমেশ্বর আক্ষরিক অর্থে ‘সর্বোচ্চ প্রভু’। সাধারণত এই নাম হিন্দু দেবতা শিবের জন্য ব্যবহার করা হয়। খ্রি: চতুর্দশ শতাব্দীর জাভাতে সর্বোচ্চ দেবতাকে বলা হতো পরমেশ্বর বা ভাতরা গুরু— শিবের আদলে গড়া শিক্ষক, তপস্বী এবং উমার স্বামী। সর্বোচ্চ দেবতাকে কখনও কখনও দেব হিসেবেও বিবেচনা করা হতো। একই ভাবে রানিদের দেবী বলার চল ছিল। যেমন কম্বোডিয়ার রাজা প্রথম জয়বর্মণ পুরুষ উত্তরাধিকারী ছাড়াই মারা যান। ৭১৩ সালে দেশটি জয়াদেবী নামে এক রানির দ্বারা শাসিত হয়েছিল— তাঁর একটি শিলালিপি অ্যাংকরে পাওয়া গেছে। (সদেস, পৃ ৭২,৮৫, ১৯৭৫)

ভারতে গুপ্ত, চালুক্য, রাষ্ট্রকূট এবং প্রাচীন কর্ণাটকের এক গুরুত্বপূর্ণ রাজবংশ ‘পশ্চিম গঙ্গা’র পঞ্চম শতাব্দীর রাজারা ‘পরমেশ্বর’কে রাজকীয় উপাধি হিসেবে ব্যবহার করতেন। কিছু গবেষক মনে করেন, নামটি দিয়ে রাজাদের ঐশ্বরিক মর্যাদা দাবি করার চেষ্টা করা হয়েছে। উপাধিটি সাধারণত খ্রি: ত্রয়োদশ এবং চতুর্দশ শতাব্দীতে জাভানীয় রাজপরিবারের পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের দ্বারা ব্যবহৃত হতো। এই বিষয়ে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।

  • ‘পরমেশ্বরী ত্রিভুবন’ ছিলেন ত্রয়োদশ শতাব্দীর মালায়ু রাজ্য বিজয়ী ‘দিয়াহ বিজয়া কের্তনেগার’-এর জ্যেষ্ঠ কন্যা, তিনি মাজাপাহিতের প্রতিষ্ঠাতা কেরতারাজসা জয়বর্ধন-এর সহধর্মিণী হয়েছিলেন (সদেস, পৃ ২০১, ১৯৬৪)। এই মাজাপাহিত ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি জাভানীয় হিন্দু-বৌদ্ধ সাম্রাজ্য।
  • ১৪১১ সালে মালয়েশিয়ার শহর ও সমুদ্রবন্দর মলাক্কার শাসকের স্ত্রীকে পরমেশ্বরী বলা হতো, যেমন স্বামীকে বলা হতো পরমেশ্বর।
  • জাভার গুরুত্বপূর্ণ শাসক বিজয়রাজাসা “শ্রী মহারাজা রাজা পরমেশ্বর” উপাধি ধারণ করেছিলেন। তাঁকে আরও উপাধি দেওয়া হয়েছিল— ‘মহান প্রভু বর্ণময় পরমেশ্বর, যিনি মুক্ত হয়ে (জীবনাবসানে) বিষ্ণুর আবাসে সম্মানিত’। এই মরণোত্তর খেতাবগুলি সিঙ্গাপুর শাসনকারী পরমেশ্বরের সাথে প্রায় সমসাময়িক। সম্ভবত এই দুজনে একই ব্যক্তি।
  • মালাক্কার চতুর্থ সুলতান আবু সাহিদ শাহকেও ‘রাজা শ্রী পরমেশ্বর দেওয়া শাহ’ উপাধি দেওয়া হয়েছিল। (মিকসিক, পৃ ১৬৭, ১৬৮, ২০১৩)
  • দ্বিতীয় জয়বর্মণ (খ্রি: ৭৮০-৮০২) ছিলেন একজন শক্তিশালী খমের রাজা যিনি ‘জাভা’ নামে একটি রাজনৈতিক শিলালিপি থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, যা সম্ভবত ইন্দোনেশিয় দ্বীপপুঞ্জের জাভা দ্বীপকে নির্দেশ করে। তাঁকে কম্বোডিয়ার ইতিহাসে জাতীয় নায়ক হিসাবে স্মরণ করা হয়। তিনি মরণোত্তর ‘পরমেশ্বর’ উপাধি পেয়েছিলেন।

তোমার চরণ ধুলায়

ম্যাক্সওয়েল (১৮৮১) মালয় ভাষায় প্রচুর সংস্কৃত শব্দের উপস্থিতি লক্ষ্য করেন যেগুলি সরাসরি সংস্কৃত থেকে ধার করা। অবশ্য তাদের ভাব, উচ্চারণ কিঞ্চিৎ পরিবর্তিত হয়েছে। বেশির ভাগ বইয়ের ভাষায় এই শব্দের দেখা মেলে তবে কথ্য ভাষায় নয়। এর কারণ ইসলামের আগমনের পর আরবি ভাষার বন্যা বয়ে গেছিল। কিন্তু আরবের বর্ণমালা আসার আগে তারা কোন হরফ ব্যবহার করতেন তা নিশ্চিত জানা যায়নি। সম্ভবত বাতাক ভাষা বা তার কাছাকাছি ভাষার বর্ণমালা ব্যবহৃত হতো। বাতাক ভাষা অস্ট্রোনেশিয়ান ভাষার উপগোষ্ঠী যার সাহায্যে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা প্রদেশ এবং আশেপাশের অঞ্চলের বাতাক জনগণ কথা বলেন।

এই ধরনের সমস্যা দেখা যায় মালয়ে ‘সিরি’ সুত্রটিতে। বহু বছর মুখে মুখে চলে আসা কাহিনী আরবি অক্ষর এসে যাওয়ার পরে কিছুটা বিকৃত হয়ে লিখিত হলেও তাতে হিন্দু রাজা বা হিন্দু দেবতাদের চেনা যায়। একজন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি হওয়ায় ম্যাক্সওয়েল (১৮৮১) সিরি সূত্রের একটি পাতার চিত্র দিয়েছেন ।

মালয় ‘সিরি’ একটি নথী যার সুত্রগুলি নানা স্তরের পদাধিকারিদের শপথ গ্রহণ করার অনুষ্ঠানে সম্মিলিতভাবে পাঠ করা হতো। এই নথিটির একটি লিখিত রূপ প্রশাসনের এক কর্তাব্যক্তি ম্যাক্সওয়েল খুঁজে পান। (সূত্র- ম্যাক্সওয়েল লিখিত গবেষণা পত্রে ব্যবহৃত চিত্র, পৃ ৮২, ১৮৮১)

চিত্রে মালয় ও আরবি কথাগুলি বাঁকানো হরফে লেখা হয়েছে। উল্লিখিত রাজার নামের নিচে লাল রেখা চিহ্নিত (বর্তমান লেখক দাগ দিয়েছেন) করা হয়েছে। রাজার নাম শ্রী সুলতান-আল-আদিলুল্লা, তাঁর উপাধি বকতি কাবাওয়া দুলি পাদুকা। দুলি পাদুকা— এই শব্দ দুটি আসলে সংস্কৃত ধূলি পাদুকার বর্ণরূপ অর্থাৎ বাংলায় পায়ের ধুলো। মালয় ভাষায় এর অর্থ সম্মানিত ব্যক্তি (রাজ)। এই শব্দ দুটি আরও অনেক সুলতানের নামে দেখা যায়। এই ‘সিরি’র রক্ষক ও যারা পাঠ করতেন তাঁদের ‘বংশ মুনতা লুম্বু’ বলা হতো। গরুর মুখনিসৃত তরল থেকে উদ্ভূত এক দেবতা আশীর্বাদ করতেন এই উপকথায় বিশ্বাসের কারণে এরা গরুর মাংস, দুধ, ঘি খাদ্য হিসেবে এড়িয়ে চলতেন। (ম্যাক্সওয়েল, পৃ ৮৩, ১৮৮১)

মহারাজা আবু বকর ও সুলতানা ফতিমার খোঁজে

প্রথমে মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক গঠনটি নজরে রাখা সুবিধাজনক হবে। বর্তমান মালয়েশিয়া ফেডারেশানের সংবিধানে ঘোষিত ধর্ম হল ইসলাম, তবে অন্য ধর্ম পালনের অধিকার স্বীকৃত (ধারা নং ৩.১)। মালয়েশিয়ার দুটি অংশ— পূর্ব ও পশ্চিম। মালয়ের ১১টি রাজ্য ও ২টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল (যেমন রাজধানী কুয়ালা লামপুর) নিয়ে পশ্চিম মালয়েশিয়া এবং বোর্ণিও দ্বীপের ২টি রাজ্য ও বাকি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল নিয়ে গঠিত পূর্ব মালয়েশিয়া। রাষ্ট্রের মোট ১৩টি রাজ্যের  (স্থানীয় নাম নেগারি) ৯টি হল রাজতান্ত্রিক। এই রাজ্যগুলির মধ্যে আছে মলাক্কা, কেডা, জোহর, পেনাং ইত্যাদি।

আবু বকর (১৮৩৩-১৮৯৫) ছিলেন আধুনিক যুগে জোহরের প্রথম সুলতান। তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় পেগি লো লিখিত ‘মাই জোহর স্টোরিস’ থেকে। এখানে ২০২০ সালে তিনি জোহর-এর ফাতিমার বিস্তারিত খোঁজ দিয়েছেন, নিজে সরেজমিনে খতিয়ে দেখেছেন ননা তথ্য। তাঁর ব্লগে তিনি লিখেছেন – মহারাজা আবু বকর অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী যেমন চিনা, ভারতীয়, পঞ্জাবি এবং আরবদের জোহর-এ বসতি স্থাপনের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ।  এই নবাগতদেরকে অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি, প্রকৃতপক্ষে অতিথিদের স্বাগত জানানো হয়েছিল। (পেগি লো, ২০২০) যদিও বিভিন্ন ধরনের মানুষকে আহ্বান করা ঔপনিবেশিক প্রভুরা মূল্যহীন মনে করতেন, কারণ তাঁরা চাইতেন সস্তা শ্রমিক। মারোয়াহ (২০২০) লিখেছেন, ব্রিটিশদের জনগণের এই বৈচিত্র্য সম্পর্কে মত ছিল, ‘মালয়রা অলস, চিনাম্যানরা চোর এবং ভারতীয়রা মাতাল’। যদি সঠিকভাবে তত্ত্বাবধান করা হয় তবুও এরা প্রত্যেকেই তাঁর নিজের কাজের ক্ষেত্রে মজুরিতে সস্তা অথচ দক্ষ ছিলেন। 

পেগির মতে আবু বকর নবাগতদের তাদের নিজস্ব ধর্ম এবং ঐতিহ্য অনুশীলন করতে উৎসাহিত করেছিলেন, পেনাং-এর স্ট্রিট অফ হারমোনিতে ছড়িয়ে পড়ে গির্জা, মন্দির এবং মসজিদগুলি আক্ষরিক অর্থে একই রাস্তায় অবস্থিত ছিল, সমস্ত এখনও তাদের উত্তরাধিকার নিয়ে গর্বের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে!

আবু বকর প্রচলিত একে অপরের বিভিন্নতাকে গ্রহণ করার এবং জাতিগত সম্প্রীতিতে বসবাস করার এই ধারণাটি ছিল সেই নীতি যা জোহর-এ একটি ঐক্যবদ্ধ সম্প্রদায়ের বিকাশকে সাহায্য করে; একে ‘বঙ্গস জোহর’ নামে ডাকা হয়। এই ধারণাটি আজও অনেকটা জীবন্ত কারণ জোহর রাজপরিবারের উদাত্ত আহ্বান ‘ঐকমত্য বা সমঝোতা আশীর্বাদ নিয়ে আসে!’

মালয় এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় করার জন্য, আবু বকর আন্তঃসম্প্রদায় বিয়েকে উৎসাহিত করেছিলেন এবং মহারাজা তাঁর তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে পূর্বে উল্লেখ করা রেঙ্গিত-এর একটি ধনী পরিবারের একজন চিনা মহিলা ‘ওং আহ গিউ’-কে বিয়ে করেছিলেন, যিনি পরে নাম নিয়েছিলেন ফাতিমা আবদুল্লাহ।

আবু বকরকে সুলতান আলীর অনুসারীরা কেসাং এলাকার মালিকানার প্রস্তাব দেওয়ার পর মুয়ার জেলা তৈরি করা হয়েছিল। রাজা তাঁর সহধর্মিণী মহারানি ফাতিমার নামে জেলার রাজধানী ‘বন্দর মহারানি’ নামকরণ করে রানিকে সম্মানিত করেছিলেন। ১৮৮৬ সালে আবু বকরকে জোহর-এর সুলতানের মুকুট দেওয়া হলে মহারানি সুলতানাহ ফাতিমা উপাধিতে ভূষিত হন।

মজার ব্যাপার হল, রাজপরিবারের চিনা ঐতিহ্য সুলতানা ফাতিমার কৃতিত্ব ছিল না! প্রকৃত পক্ষে আবু বকরের দ্বিতীয় স্ত্রী, জুবেইদা আবদুল্লাহ (পূর্বনাম সিসিলিয় ক্যাথরিন ল্যাঞ্জ) মিশ্র বংশধারার কন্যা। তাঁর বাবা ছিলেন ডেনমার্কের অধিবাসী এবং মা ছিলেন চিনা। (পেগি হো, মাই জোহর স্টোরিস, ২০২০)

সিঙ্গাপুরে ইস্কান্দার শাহের সমাধি (ফটোগ্রাফ, সেরিল-অ্যান লো, ২০০৯)। মলাক্কার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচয়ে ইস্কান্দার শাহ মালয় অ্যানালে আরেকটি নামে পরিচিত শ্রী ত্রি বুয়ানা (ত্রি ভুবন- যিনি সাং উতামা, সাং নিলা উতামা এবং নিলাতনাম নামে পরিচিত)

সেজারাহ মেলায়ু 

সপ্তদশ শতকের সেজারাহ মেলায়ু (রাজাদের বংশতালিকা) বা মালয় অ্যানালস সিঙ্গাপুরবাসীদের কল্পনা এবং সম্মিলিত স্মৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এর প্রথম ছয়টি অধ্যায় সিঙ্গাপুরের উপর আলোকপাত করে। ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ শতাব্দীর শেষের দিকে সিঙ্গাপুরের বন্দর-রাজনীতির একটি পৌরাণিক বর্ণনা দেওয়া ছাড়াও সিঙ্গাপুরকে বৃহত্তর প্রাক-আধুনিক মালয় বিশ্বে স্থান দেয়।

সিঙ্গাপুর নামটি সম্ভবত এসেছে সিংহ থেকে যা ছিল চতুর্দশ শতকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বৌদ্ধ ধর্মের একটি শুভ প্রতীক। শ্রী ত্রি বুয়ানা (শ্রী ত্রি ভুবন-এর পরিবর্তিত স্থানীয় নাম) সম্পর্কে সেজারাহ মেলায়ু বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে তিনি বোধিসত্ত্বের অবতার হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন, সম্ভবত অবলোকিতেশ্বরের আমোঘপাস রূপে। তাই ইসলামপূর্ব মালয়দের উপর তাঁর শাসনের দাবিকে ন্যায্যতা দেয়। অবলোকিতেশ্বরের অবতার হিসেবে, তিনি একটি সিংহ মূর্তির সিংহাসনে উপবিষ্ট হতেন। ১৩-১৪ শতকের চিনা মূর্তিটি রৌপ্য ও ব্রোঞ্জে নির্মিত অবলোকিতেশ্বরের চিনা রূপ। (সূত্র- গুয়ানিনের এশিয়ান সভ্যতা জাদুঘরের সংগ্রহ, ডেরেক হেং, ২০২০)

যিনিই পরমেশ্বর তিনিই সেকেন্দার শাহ— আসলে পরমগুণ্ডা

পরমেশ্বর নামে সর্বাধিক পরিচিত রাজার দিকে এবারে দৃষ্টি দেওয়া যাক। ইনি পরমেশ্বর থেকে সেকেন্দার শাহ হলেন অর্থাৎ হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন, এর ফলে তাঁর রাজত্বের চরিত্র পরিবর্তিত হয়। বলা যায় শান্তিপূর্ণ ভাবে ইসলামের প্রসারের একটি উদাহরণ হিসেবে এই ব্যক্তিটি আলোচনায় এসে যান।

রাজার নামের পরিবর্তনে থেকে বোঝা যায় বল প্রয়োগ, প্রলোভন ছাড়া হিন্দু ধর্ম থেকে মুসলমান ধর্ম রাজ্যের গরিষ্ঠ অংশের মানুষ গ্রহণ করলেন। অবশ্য এভাবে কয়েক শত বছর আগে হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতিও গৃহীত হয়েছিল। ইসলাম ধর্মের প্রভাব বিস্তারে মশলা-বাণিজ্য বড় ভূমিকা নিয়েছিল। রমেশ চন্দ্র মজুমদার (১৯৪৪) এই পরিবর্তনের বর্ণনা দিয়েছেন (পৃষ্ঠা ৮৬-৯০)।

জাভার পালেমবাঙ্গের রাজা পরিমিসুর (পরমেশ্বর) যুদ্ধে লিপ্ত হয় অন্য এক রাজার সাথে। অবশেষে সন্ধির শর্ত অনুযায়ী পরমেশ্বর জাভার সেই রাজার কন্যাকে বিয়ে করেন, এবং রাজাকে কর দিতে স্বীকার করেন। অল্পদিন বাদে পরমেশ্বর শর্ত ভঙ্গ করলে রাজা আক্রমণ করলেন পালেম্‌বাঙ্গ রাজ্যকে, পরাজিত পরমেশ্বর স্ত্রী, পুত্র ও নিজের লোকজনদের নিয়ে সিংঘপুরে (সিঙ্গাপুর) পালিয়ে গেলেন।  

এই সময় সিঙ্গাপুর শ্যামদেশের অধীনে একটি সমৃদ্ধিশালী শহর ছিল। এখানকার শাসক পলাতক রাজাকে সাদর অভ্যর্থনা জানালেন। কিন্তু পরমেশ্বর তাঁর আশ্রয়দাতাকে হত্যা করে ঐ শহর অধিকার করলেন। এই খবর পেয়ে পালেমবাঙ্গ থেকে পুরোনো প্রজারা এখানে বসবাসের উদ্দেশে উপস্থিত হল। এদের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার হবে। এখানে তিনি পাঁচ বছর ছিলেন। এই পাঁচ বছর সিঙ্গাপুর প্রণালি দিয়ে যে সব জাহাজ যাতায়াত করত, নিজের নৌবহরের সাহায্যে সেগুলি লুট করাই তাঁর প্রধান কাজ হয়ে উঠল। এরপর সিঙ্গাপুরের নিহত শাসকের ভাই পটনির শাসক পরমেশ্বরকে আক্রমণ করলেন।

এই যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পরমেশ্বর মূয়র নদীর মোহনার কাছে পালিয়ে গেলেন। এখানে তখন অল্প সংখ্যক জেলেদের বসতি ছিল এবং তাঁরা পরমেশ্বরকে তাঁদের গ্রামে বসবাস করতে আমন্ত্রণ জানালেন। এই স্থানের জমি খুব উর্বরা এবং জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় সব রকম জিনিস উৎপন্ন হতো। খুশী হয়ে পরমেশ্বর তাঁর পরিবারবর্গ নিয়ে এখানে বাস করতে লাগলেন। জলদস্যুরা জল নেবার উদ্দেশ্যে এই বন্দরে আসত, তবে পরমেশ্বরের সাহায্য পেয়ে ও তাঁর আগ্রহে তাদের লুটের জিনিসপত্র বিক্রয়ের জন্য এখানে নিয়ে আসতে লাগল। এভাবে জায়গাটা একটি ব্যবসা কেন্দ্র হয়ে উঠল। পরমেশ্বর নতুন বসতির নামকরণ করলেন মলাকা। ক্রমশ পসে (সুমাত্রায় অবস্থিত) ও বাংলাদেশ থেকে বণিকরা ব্যবসার জন্য এখানে আসতে লাগল এবং এইস্থানের প্রাধান্য বেড়ে গেল।

অপর একটি বিবরণ অনুসারে পরমেশ্বর জাভার একজন সম্ভ্রান্ত লোক ছিলেন এবং ঐ দেশেরই রাজন্যাকে বিয়ে করেন। ১৪৬১ খ্রিস্টাব্দে জাভার অন্তবিপ্লবের সময় তিনি সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যান ও কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁর আশ্রয়দাতাকে হত্যা করেন। ১৪০২ বা ১৪০৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে ঐ স্থান থেকে বিতাড়ন করা হয়।

এই বিবরণ দুটির কোনটি সত্য তা বলা না গেলেও এই বিষয়ে সকলেই একমত যে ১৪০২ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি কোনো এক সময়ে তিনি মলক্কায় বসবাস আরম্ভ করেন এবং শ্যাম দেশের রাজাকে কর দিতে স্বীকৃত হন। ১৪০৩ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর রাজ্যে চিনদেশ থেকে দূত আসেন এবং দুই বছর পরে তিনি চিনে দূত পাঠান। ১৪১১ খ্রিস্টাব্দে স্বয়ং পরমেশ্বর সপরিবারে এবং মন্ত্রী পারিষদ সহ চিন দেশে যান। তাঁর দলে সবসুদ্ধ প্রায় ৪৫০ জন লোকলস্কর  ছিল। ১৪১৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি আর একবার সপরিবারে চিনে যান এবং তাঁর অনুরোধে চিন সম্রাট শ্যামদেশের রাজাকে আদেশ করেন তিনি যেন মলাক্কা বিজয়ের পরিকল্পনা না করেন।

পরমেশ্বর ‘পাই’র রাজার মেয়েকে বিয়ে করেন। এখানকার রাজা অল্পদিন আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ছিলেন এবং স্ত্রীর অনুরোধ বা শ্বশুরের প্ররোচনায় পরমেশ্বর এই ধর্ম গ্রহণ করেন। এই সময় থেকে তিনি সেকন্দর শাহ নাম গ্রহণ করেন। (রমেশ চন্দ্র, পৃ ৮৬-৯০, ১৯৪৪)

মালয় উপদ্বীপে রাজাদের নামের তালিকা

শ্রীমহারাজা ১৪৪৪ সালে পরলোক গমন করেন। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে রাজা কাশিম নামে পরিচিত হন। শ্রীমহারাজার কনিষ্ঠ পুত্রের নাম ছিল শ্রীপরমেশ্বর দেব শাহ। মালাই সম্প্রদায় ছিল তাঁর সমর্থক। শ্রীমহারাজার মৃত্যুর পর প্রথমে রাজা হন শ্রীপরমেশ্বর দেব শাহ। ১৪৪৫ সালে তিনিও চিনে প্রতিনিধি দল পাঠান। তুন আলির নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী গোষ্ঠী তাঁকে হত্যা করে রাজা কাশিমকে সিংহাসনে বসান। রাজা কাশিম সুলতান মুজাফফর শাহ নাম গ্রহণ করেন। ১৪৬-৫৯ সাল পর্যন্ত ছিল তাঁর রাজত্বকাল। তাঁর রাজত্বকালে মালাক্কা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ইসলামি সভ্যতাঁর প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়। এতদিন পর্যন্ত তামিল মুসলমান বণিক সম্প্রদায় উত্তর সুমাত্রাকে বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্ররূপে গণ্য করত। এখন থেকে মালাক্কা হল তাদের প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র। (রমেশ চন্দ্র, ১৯৪৪)

নানা কারণে সুলতান মুজাফফরের রাজত্বকাল গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, ইসলাম রাষ্ট্রীয় ধর্মরূপে স্বীকৃতি পেল এবং রাজার ধর্ম প্রজারা গ্রহণ করল। রাজা ছিলেন ধর্মগুরু ও রাষ্ট্রপ্রধান। রাজদরবারে তামিল মুসলমান গোষ্ঠী ছিল প্রভাবশালী। তবে ইসলাম ধর্ম প্রচারে বল প্রয়োগ করা হয়নি। সনাতন সমাজের রীতিনীতিকে আক্রমণ করা হয়নি। এসব কারণেই ইসলাম ধর্মের বিস্তার ছিল সহজ। (সেন, পৃ ৮৪, ১৯৫৯)

যাই হোক রাজাদের নামের তালিকাটি – বিশেষ করে পর্তুগীজ ও চৈনিকদের দেওয়া তালিকা তুলনা বিশেষ তথ্যজ্ঞাপক।

  • তালিকায় প্রথম নামটি সহজেই পরমেশ্বর (চৈনিক বিবরণে পাই-লি-মি-সু-রা, ১৪০৩- খ্রি: ১৪১৪) বলে চিনতে পারা যায়।
  • তৃতীয় এবং চতুর্থ চিনা নামগুলি হল শ্রী মহারাজা (শ্রী ম-হা-লা, ১৪২৪-১৪৪৫) এবং শ্রী পরমেশ্বরদেব শাহ (পা-মি-সি-ওয়া-র-তিউ-পা-শা, ১৪৪৫)।
  • পঞ্চম এবং ষষ্ঠ নাম মুজাফর শাহ (১৪৫৬) এবং মনসুর শাহ (১৪৫৯) বলে অনুমান করা যেতে পারে।
  • সপ্তম রাজা স্পষ্টতই মাহমুদ শাহ (১৫০৮)। খেয়াল করতে হবে বংশানুক্রমিক হিন্দু রাজাদের মধ্যেই মুসলমান রাজাদের নাম আছে। রাজবংশের মধ্যে থেকে রাজ্যের বিরাট এক ধর্মীয় পরিবর্তন হল।

চিনা বিবরণে দ্বিতীয় রাজার পরে দুটি হিন্দু নাম যুক্ত করা হয়েছে এবং আলাউদ্দীনের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আমরা দেখেছি, সেকান্দার শাহ ছিলেন মালাক্কার প্রথম শাসক যিনি একজন মুসলমান স্ত্রীকে বিয়ে করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এটা স্পষ্ট যে, তাঁর পুত্র মুহম্মদ মুজাফর শাহ সিংহাসনে আরোহণের আগে দুই হিন্দু রাজার উত্তরসূরি হয়েছিলেন, হয় তাঁর ভাই, অথবা তাঁর একজন হিন্দু স্ত্রীর পুত্র। তাদের নাম স্পষ্টতই পরবর্তী ইসলামিক ঐতিহ্যে বাদ দেওয়া হয়েছিল কারণ তারা হিন্দু ছিল।’ (রমেশ চন্দ্র, পৃ ৩৮৯-৩৯০, ইংরেজি বই)

*প্রচ্ছদ চিত্র পরিচিতি: সাং নিলা উতামা নি লাতনাম বা ত্রি ভূবন এবং নিলাতনাম নামে পরিচিত, মালয় ভাষ্যে সিঙ্গাপুরের প্রথম রাজা। (সূত্র ন্যাশানাল লাইব্রেরি বোর্ড, সিঙ্গাপুর)

তথ্যসূত্র

  1. রমেশ চন্দ্র মজুমদার, হিন্দু কলোনীস ইন দা ফার ইস্ট, জেনারেল প্রিন্টার্স এন্ড পাবলিশার্স, কলকাতা, (১৯৪৪); অনুবাদ- এস চৌধুরী- সুদূর প্রাচ্যে প্রাচীন হিন্দু উপনিবেশ, সম্বোধি পাবলিকেশানস প্রাইভেট লিমিটেড, কলিকাতা।
  2. আর সি মজুমদার, এন্সিয়েন্ট কলোনীস ইন দি ফার ইস্ট, ভল্যুম ১ চম্পা, দি পাঞ্জাব স্যান্সক্রিট বুক ডিপো, লাহোর, (১৯২৭)।
  3. দি স্ট্রেইটস টাইমস, সাক্ষাৎকার, সিঙ্গাপুর (২৯/০৭/২০১৯)। https://www.straitstimes.com/asia/se-asia/malaysian-queen-discusses-her-chinese-roots-and-lending-money-to-robert-kuok
  4. পেগি লো, মাই জোহর স্টোরিস- কয়েস্ট ফর ইনফো অন জোহর’স সুলতানা ফতিমা, ২৭/৮/২০২০। https://ppunlimited.blogspot.com/2020/08/quest-for-info-on-johors-sultanah.html
  5. ডেরেক হেং, সং নিলা, ন্যাশানাল আরকাইভস, সিঙ্গাপুর, (২০২০)। https://biblioasia.nlb.gov.sg/vol-16/issue-2/jul-sep-2020/sangnila/
  6. সেরিল-অ্যান লো, ন্যাশানাল লাইব্রেরি বোর্ড, সিঙ্গাপুর, (২০০৯)।
  7. আর মারোয়াহ, ভারত-থাইল্যান্ড সম্পর্ক পুনর্নির্মাণ: একটি বহুপাক্ষিক এবং দ্বিপাক্ষিক দৃষ্টিকোণ, ওয়ার্ল্ড সায়েন্টিফিক, ২০২০। https://www.worldscientific.com/doi/pdf/10.1142/9789811212048_0001
  8. ডব্লু ই ম্যাক্সওয়েল,এন অ্যাকাউন্ট অফ দি মালয় ‘সিরি’ এ স্যান্সক্রিট ফর্মূলা, দি জার্নাল অফ রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি অফ গ্রেট ব্রিটেন এন্ড আয়ারল্যান্ড, নিউ সিরিস, ১৩,১, (১৮৮১): ৮০-১০১।
  9. জর্জ সদেস, Les Etats hindouises d’lndochine et d’lndonesie (১৯৬৪), ইংরেজি অনুবাদ সুসান ব্রাউন, দি ইন্ডিয়ানাইসড স্টেট অফ সাউথ ইস্ট এশিয়া – ‘The Indianized States of Southeast Asia’, সম্পাদনা ওয়াল্টার আর ভেলা, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশানাল ইউনিভার্সিটি, ক্যানবেরা, ১৯৭৫।
পড়াশুনোর মধ্যে পড়াটা বেশি, শোনাটা কম, নিজেকে স্বশিক্ষিত বলেন। প্রথাগত শিক্ষা বিজ্ঞান শাখায় হলেও সমাজ সম্পর্কিত নানা বিষয়ে বহুদিন থেকে পড়ছেন। পেশাগত ভাবে শিক্ষকতা গ্রহণ করেছেন ত্রিশ বছর আগে।

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।