স্বাধীন ভারতের সাধের ফিল্মস ডিভিশনের পঁচাত্তর বছর
ফিল্মস ডিভিশন নামে সরকারী প্রতিষ্ঠানটির স্বাধীন ভারতে জন্ম হয়েছিল আজ থেকে প্রায় পঁচাত্তর বছর আগে। এ বছরের এপ্রিল মাসেই এই প্রতিষ্ঠানটির পঁচাত্তর বছর পূর্তি উদযাপন করা যেত। অথচ সম্প্রতি ভারতীয় ফিল্মস ডিভিশন প্রতিষ্ঠানটি তার দীর্ঘদিনের স্বাতন্ত্র হারাল। গত ১লা জানুয়ারি NFDC (ন্যাশন্যাল ফিল্ম ডেভলপমেন্ট কর্পরেশন) র সঙ্গে মিশে গেল। একই সঙ্গে National Film Archive of India, Directorate of film festivals এবং Children’s Film Society-র মত প্রতিষ্ঠানকেও এই NFDC র আওতায় আনা হল। এক ছত্রছায়ায় থাকলে এই প্রতিষ্ঠানগুলি আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে বলে ভাবছেন অনেকে।
অথ ইতিহাস কথা
স্বাধীনতার পরপরই ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে নতুন সরকার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের একটি ফিল্ম ইউনিট গড়ে তুলেছিল, পরে ১৯৪৮ সালের এপ্রিলে, এই ইউনিট ‘ফিল্মস ডিভিশন’ নামে আত্মপ্রকাশ করে।
স্বাধীনতার আগে এমনিতেই ব্রিটিশসরকারের ‘ইনফর্মেশন ফিল্মস অফ ইন্ডিয়া’ ও ‘ইন্ডিয়ান নিউজ প্যারেড’ নামে দুটি প্রতিষ্ঠান ছিল। সেখান থেকে তারা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী তথ্যচিত্র তৈরি করত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি সামাল দিতে ১৯৪৬ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নতুন নিয়মানুযায়ী সরকারি বাজেটে চলচ্চিত্রের জন্য অনুদান কমিয়ে এক টাকায় আনা হলে তাদের হাতে তৈরি ‘ইনফর্মেশন ফিল্মস অফ ইন্ডিয়া’ ও ‘ইন্ডিয়ান নিউজ প্যারেড’ আর্থিক অবহেলার কারণে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এর ফলে কিছুদিন পরে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগষ্ট ভারতের ক্ষমতা হস্তান্তরের ঐতিহাসিক ঘটনা কোনও সরকারি ফিল্ম ইউনিট ক্যামেরাবন্দি করে উঠতে পারেনি।
স্বাধীনতার পরে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল স্বাধীন ভারতের জনগণের মধ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য ইনফর্মেশন ফিল্মস অফ ইন্ডিয়াকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়োজন অনুভব করলেন। সেই অনুভূতি থেকে পরিকল্পনা করলেন এমন একটি প্রতিষ্ঠানের যার মাধ্যমে নতুন সরকার দেশের সকল মানুষের কাছে দ্রুত পৌঁছোতে পারে। বিশেষ করে যারা লেখাপড়া জানেন না কিন্তু দেখতে ও শুনতে পারেন, তাদের কাছে পৌঁছতে চাইলেন স্বল্পদৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্রের মাধ্যম। মূলত নতুন সরকারের তত্ত্বাবধানে ‘ইন্ডিয়ান নিউজ প্যারেড’কে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে, ভিন্ন সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটাতে, দেশের উন্নয়নমূলক কর্মসূচিকে সকলের দৃষ্টিগোচর করতে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ে তুলতে, জাতীয় সংহতি রক্ষা করতে তথ্য ও বেতার মন্ত্রক থেকে ‘ফিল্মস ডিভিশন’-এর জন্ম হয়েছিল।
ফিল্মস ডিভিশন প্রতিষ্ঠা হবার সঙ্গে সঙ্গে ‘ইনফরমেশন ফিল্মস অফ ইন্ডিয়া’-র নাম বদলে রাখা হল ‘ডকুমেন্টারি ফিল্মস অফ ইন্ডিয়া’ এবং ‘ইন্ডিয়ান নিউজ প্যারেড’-এর নাম বদলে ‘ইন্ডিয়ান নিউজ রিভিউ’ নামকরণ করা হল। ‘ডকুমেন্টারি ফিল্মস অফ ইন্ডিয়া’ থেকে তথ্যচিত্র এবং ‘ইন্ডিয়ান নিউজ রিভিউ’ থেকে নিউজরিল তৈরি হতে লাগল। তথ্যচিত্র বিভাগের ডেপুটি কন্ট্রোলার পদে (পরে যে পদের নাম হয় চিফ প্রোডিউসর) যোগ দিলেন মোহন ভাবনানি আর নিউজরিলের জন্য চিফ প্রোডিউসর হিসাবে যোগ দিলেন সর্বোত্তম বাদামি। সিনিয়র ডিরেক্টরের পদে যোগ দিলেন কৃষ্ণগোপাল এবং এ. ভাস্কর রাও, ডিরেক্টরের পদে যোগ দিলেন এন. কে. পারালকার, কুমারসেন সামর্থ ও ওয়াধবানি। প্রথমে ফিল্মস ডিভিশনের অফিস ছিল বোম্বের বিখ্যাত সিনে ল্যাবরেটরিতে, তারপর ওয়ালকেশ্বরের হোয়াইটহাউজে, ভাড়াবাড়িতে। আরওপরে মোহন ভাবনানির প্রস্তাবে গোপালরাও দেশমুখ মার্গে ‘ফিল্মস ডিভিশন’-এর নতুন ঠিকানা হল।
ইন্ডিয়ান নিউজ প্যারেড
প্রথম দিকে ফিল্মস ডিভিশন পরিচালনার সর্বোচ্চ ‘কন্ট্রোলার’ পদে নিয়োজিত হতেন একজন আইএএস অফিসার। কিন্তু একজন দক্ষ আইএএস অফিসারের থেকেও বেশি প্রয়োজন ছিল শিল্প, সাহিত্য, সংগীত ও চলচ্চিত্র বিষয়ে বিশেষ অভিজ্ঞ ব্যক্তির। সেই কারণে ১৯৬৮ সাল থেকে ওই সর্বোচ্চ পদে একজন সিনিয়র ফিল্ম প্রফেশনালকে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। ওই পদের নাম বদলে রাখা হল চিফ প্রোডিউসর। এই চিফ প্রোডিউসরের পদে প্রথম নিযুক্ত হয়েছিলেন কে এল খাণ্ডপুর। ফিল্মস ডিভিশন যেহেতু সরকারি প্রতিষ্ঠান, তাই কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী হিসাবে সিনেমা সম্পাদনা, সাউন্ড রেকর্ডিং এবং প্রোজেকশনের জন্য কর্মী নিয়োগ করা হল। ফিল্মস ডিভিশন প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু যুবকের কর্মসংস্থান হল। ফিল্মস ডিভিশনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ চিফ প্রোডিউসর পদের ওপরেই নির্ভর করে আভ্যন্তরীণ অবস্থা ও উৎপাদন ব্যবস্থা। সৌভাগ্যক্রমে নিযুক্ত চিফ প্রোডিউসর ইউ এস ভাওনগরির সহানুভূতি, সহযোগিতা ও দূরদৃষ্টি দেশকে ভালো ছবি শুধু নয়, ভালো পরিচালকও উপহার দিয়েছে। উপহার দিয়েছে এস এন এস শাস্ত্রী, এম এফ হুসেন, কে এম চারি, জুল ভেলানি, ফ্রাংক মোরেস, সুখদেবের মতো পরিচালককে, যাঁদের অসংখ্য ছবি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার এনে দেশকে সমৃদ্ধ ও গর্বিত করেছে।
ফিল্মস ডিভিশন সাধারণত বিষয়ভিত্তিক ছবি করত, সেই কারণে এখানে কতগুলি নির্দিষ্ট বিভাগে ছবি তৈরি হত।
- ভারতীয় শিল্প, ভাস্কর্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক ছবি হত ‘Art And Experimental film’ বিভাগে।
- বিশিষ্ট ব্যক্তির জীবনের ওপর ভিত্তি করে ছবি হত ‘Biography and Personality film’ বিভাগে।
- সাধারণত কৃষিকাজের উন্নতির জন্য কিছু শিক্ষণীয় তথ্যচিত্র তৈরি হত ‘Educational and motivational film’ বিভাগে।
- কোনো দেশের রাষ্টীয় প্রধান বা বিশিষ্ট ব্যক্তির রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত ভ্রমণ নিয়ে ছবি তৈরি হয় ‘Visit film’বিভাগে। এই ধরনের ছবিকে রেকর্ড ফিল্ম বা আর্কাইভ ফিল্মও বলে।
- রপ্তানি ও পর্যটন বিষয়টির উপর নির্ভর করে তথ্যচিত্র তৈরি হত ‘Export and Tourist Promotional films’ বিভাগে।
- নিউজরিল, তথ্যচিত্র ছাড়াও দিল্লির ফিল্মস ডিভিশন অফিস থেকে প্রতি বছর Defence Ministry Films-এর পক্ষে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রক তথ্যচিত্র তৈরি করে।
ফিল্মস ডিভিশন থেকে তৈরি হওয়া প্রথম তিনটি ছবি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৪৯ সালের জুন মাসে—কাশ্মীর ক্যারিজ অন, ইন্ডিয়া ইন্ডিপেন্ডেন্ট, ইমারসন অফ গান্ধীজী। প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘের ছবি তৈরি হয়েছিল ১৯৫৫ সালে ‘মিত্রতা কি ইয়াত্রা’ নামে। তখন মূলত বড়ো বাঁধ নির্মাণ, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, স্টিল মিল, সমস্ত ফ্রন্টে সরকারি কাজ এবং দেশের ইতিহাস, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির ওপর ছবি তোলা শুরু হত। ধীরে ধীরে ছবি তৈরি, প্রদর্শন, আন্তর্জাতিক তথ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র নির্মাণ সব মিলিয়ে ফিল্মস ডিভিশনের বিপুল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছিল। সপ্তাহে দুই থেকে তিনটি নিউজরিল ও বছরে দুশোটির মতো তথ্যচিত্র তৈরি হত এখান থেকে। বর্তমানে তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া হিসাব অনুযায়ী ৬,৪৭৪টি তথ্যচিত্র ও ২,৮৪০টি নিউজরিল ও নিউজ ম্যাগাজিন রয়েছে।
নিউজরিল বুলেটিনগুলি প্রতিনিয়ত দেশে কী ঘটছে, জাতি গঠনে সরকারি উদ্যোগ, বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক সফর ও দেশের প্রতিনিধিদের সফর জনগণকে জানানোর জন্য প্রকাশ করে থাকে। ফিল্মস ডিভিশনের ছবি যেহেতু ভারতের প্রত্যেকটি নাগরিকের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য তৈরি হয়েছিল, তাই সেগুলি কয়েকটি আঞ্চলিক ভাষাতেও ভাষান্তর করা হত। ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশটি ছবি মোট পাঁচটি ভাষায় (ইংরাজি, হিন্দি, বাংলা, তামিল, তেলেগু) ভাষান্তর করা হয়ছিল। পরের দিকে সব ছবি মোট ষোলোটি আঞ্চলিক ভাষায় ভাষান্তর করা হত।
বহুজাতিক সংস্থার তথ্যচিত্র ও ফিল্মস ডিভিশনের ওপরে তার প্রভাব
পাঁচের দশকে সরকারি সংস্থা ‘ফিল্মস ডিভিশন’ ছাড়াও ভারতে বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থা যেমন টাটা, ডানলপ, আইটিসি, হিন্দুস্থান লিভার, ইউএসআই, টিসিএম, সেইল প্রভৃতি তথ্যচিত্র তৈরি করতে ধীরে ধীরে এগিয়ে এল। এর ফলে এদের সঙ্গে পাল্লা দিতে ফিল্মস ডিভিশনের তথ্যচিত্রগুলিও সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে লাগল।
ষাটের দশকে ফিল্মস ডিভিশন তথ্যচিত্রের উপর নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর ফলে বেশকিছু নতুন ধরনের ছবি আত্মপ্রকাশ করল। যেমন—এম এফ হুসেনের ‘Through the eyes of the painter’ (১৯৬৭), বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘গোল্ডেন বিয়ার’ জয়ী প্রতাপচন্দ্র শর্মার বিহারের দুর্ভিক্ষের ওপর নির্মিত ‘Frame work of Famine’ (১৯৬৭), এছাড়া টি এ আব্রাহাম এবং কে এস চারির ‘Face to Face’ (১৯৬৭) ছবিটিও উল্লেখযোগ্য। ফিল্মস ডিভিশনের প্রযোজনায় ওড়িশার মুয়ূরভঞ্জ জেলার নাদপুর গ্রামের কৃষি মজুরদের জীবন নিয়ে ছবি হয়েছে, ‘The house that Anand Build’, লালবাহাদুর শাস্ত্রীকে নিয়ে ধারাভাষ্য ছাড়া সংগীত-নির্ভর ছবি হয়েছে, ‘Homage to Lal Bahadur Shastri’, আবার জহরলাল নেহরুকে নিয়ে, ‘Homage to JawaharLal Nehru’, ‘Nehru Last Journey’-এর মতো ছবিও তৈরি হয়েছে। আরও কিছু পরিচালক স্বাধীনভাবে ছবি করেন, যেমন—মাধবনের ‘Radha Krishna’, শান্তি বর্মার ‘Khajuraho’, নীল গোখেলের ‘City of Joy’-এর মতো ছবিও তৈরি হয়েছিল।
ন্যাশনাল আর্কাইভে সিনেমা
সমাজের উন্নতিকল্পে, কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ দূর করতে তথ্যচিত্রকে বিপ্লবাত্মক কাজেও ব্যবহার করলেন কিছু পরিচালক। সমাজের বর্ণবিদ্বেষ জনজীবনে কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে তা দেখানো হল যে ক’টি ছবিতে লোকসান লালওয়ানির ‘They call me chamar’ ছবিটি তার মধ্যে একটি। শিক্ষা বিষয়ক ছবি—‘A Temple Of Learning’ (১৯৮১), ‘A Women’s University’ (১৯৭৬), ‘A.B.C. of A.R.P’ (১৯৪৫), ‘Parliament Library’ (২০০৬) প্রভৃতি। হরিসাধন দাশগুপ্ত, সত্যজিৎ রায়, চিদানন্দ দাশগুপ্ত-এর মতো বিশিষ্ট পরিচালকরা ছবি করেছেন। হরিসাধন দাশগুপ্তের ‘টেরাকোটার মন্দির’, সত্যজিৎ রায়ের ‘Rabindranath’, ‘Inner eye’, চিদানন্দ দাশগুপ্তের ‘Birju Maharaj’ ফিল্মস ডিভিশনের প্রযোজিত ছবি।
ফিল্মস ডিভিশনের উদ্দেশ্য
স্বাধীনভারতে গড়ে ওঠা ফিল্মস ডিভিশন ধীরে ধীরে বিশ্বের অন্যতম বড়ো তথ্যচিত্র নির্মাণ সংস্থাতে পরিণত হল। আর এই ‘Largest film producing Centre in the world’-এর কাজের সুবিধার জন্য দিল্লি, কলকাতা ও বেঙ্গালুরুতে Regional Office খোলা হল। কলকাতা ও বেঙ্গালুরুর আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে আটের দশকেই ফিল্মস ডিভিশনের নিজস্ব কিছু পরিচালক ও বাইরের পরিচালক এনে (‘Inhouse’ ও ‘Outhouse Director’) তাদের দিয়ে স্বল্প দৈর্ঘ্যের কাহিনি চিত্র নির্মাণ করে গ্রামে-গঞ্জে দেখানো শুরু হল। উদ্দেশ্য ছিল গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র অশিক্ষিত মানুষকে গল্পের মাধ্যমে সুশিক্ষা দান করা, মূল্যবোধ জাগানো। মূলত ‘ডিরেক্টর অফ ফিল্ড পাব্লিসিটি’র পক্ষ থেকে বেশ কিছু ছবি গ্রামে-গ্রামে ঘুরে ১৬মিমি প্রোজেকশনের মাধ্যমে দেখানো হত। ফিল্মস ডিভিশনের পূর্বাঞ্চলে দেখানো হত যে সমস্ত ছবি তার মধ্যে তপন সিনহার বাংলা ছবি ‘মানুষ’, সন্তোষ সিভানের খাসিয়া ভাষার ছবি ‘স্টোরি অফ টুবলু’ও বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়েছিল।
চলচ্চিত্রকে কেন্দ্র করে সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের উদ্যোগে আরও কিছু সংস্থা গড়ে উঠল মূলত ছবি তৈরি, ছবি প্রদর্শন ও প্রচারের উদ্দেশ্যে। শিশুদের জন্য ছবি তৈরি করার গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগে ১৯৫৫ সালের ১১ মে স্থাপিত হল ‘Children’s Film Society, India’। এই সংস্থার মূল উদ্দেশ্য হল শিশুদের দিয়ে ছবি, শিশু চরিত্র সমৃদ্ধ ছবি ও শিশুদের দেখার উপযোগী ছবি করা। এই সংস্থার প্রথম ছবি ছিল কিদার শর্মার ‘Jaldeep’ (১৯৫৬); এটি একটি অ্যাডভেঞ্চারের ছবি। শিশু চলচ্চিত্র সংস্থা থেকে নির্মিত বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছবি অপূর্বকিশোর বীর পরিচালিত ‘বাজা’ বা ‘Mouth Organ’, (২০০২)। ‘হেদা হোদা’ (The blind camel), অরভিন্দন পরিচালিত ‘কুম্মাট্টি’ (১৯৭৯) এবং মণিরত্নম পরিচালিত ‘অঞ্জলি’ (১৯৯০) বেশ প্রশংসিত ছবি।
চিলড্রেনস ফিল্ম সোসাইটি, ইন্ডিয়া
আরো কিছু কথা
বলাবাহুল্য আমাদের দেশের পরবর্তী প্রজন্মকে চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে পরিচয় করাতে সবচেয়ে প্রশংসিত উদ্যোগ ছিল এটি। প্রথমে এর অফিস ছিল ফিল্মস ডিভিশনের বিল্ডিংয়েই। এখনও পর্যন্ত বাচ্চাদের জন্য ১১৪টি কাহিনিচিত্র, ৫২টি তথ্যচিত্র ও ৪৫টি স্বল্প দৈর্ঘের ছবি তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৫৭ সালে শুরু হয় কার্টুন ফিল্ম ইউনিট। এই ইউনিট চালু করতে সাহায্য করেছিল ইন্দো-আমেরিকান টেকনিক্যাল কো-অপারেটিভ মিশন। এদিকে ছবি সংরক্ষণের জন্য যে প্রতিষ্ঠান ‘National Film Archive of India’ ১৯৬৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মহারাষ্ট্রের পুনেতে প্রতিষ্ঠিত হয়, সেখানে বিংশ শতাব্দির শুরু থেকে নির্মিত প্রায় সমস্ত ছবি, ভিডিও ক্যাসেট, ডিভিডি, চলচ্চিত্র সম্পর্কিত বই, স্টিল ফোটোগ্রাফি, প্রেস ক্লিপিংস, স্লাইড, অডিও সিডি, ডিস্ক, রেকর্ড সংরক্ষিত আছে।
কলকাতার ই এম বাইপাসের কাছে পঞ্চসায়রে, বেঙ্গালুরুতে করমঙ্গলার কেন্দ্রীয় সদনে ও তিরুবনন্তপুরমের চলচ্চিত্র কলাভবনে রয়েছে আঞ্চলিক কার্যালয়। বর্তমানে পুনেতে দ্বিতীয় অফিসটি রয়েছে দূরদর্শন কেন্দ্রের কাছে রামবাগ কলোনিতে। সারা দেশে ডিস্ট্রিবিউশন লাইব্রেরির প্রায় ২৫ জন সদস্য কাজ করে চলেছেন। মোট ছটি কেন্দ্রে সাপ্তাহিক, পাক্ষিক বা মাসিক ভিত্তিতে ছবি প্রদর্শন করা হয়। এখানে ৫০,০০০টি ফোটোগ্রাফ, ১০,০০০টির বেশি বই, ১০,০০০টির বেশি চলচ্চিত্র এবং ১০,০০০টির বেশি চিত্রনাট্য রয়েছে। আবার ছবির প্রচারের জন্য ১৯৭৩ সালে গড়ে তোলা হয়েছে ‘Directorate of Film Festival’।
ফিল্মস ডিভিশনের ছবিগুলির প্রচার ও প্রদর্শনের জন্য প্রথম দিকে দেশের সিনেমা হলগুলিতে স্বল্পদৈর্ঘের তথ্যচিত্র দেখানো বাধ্যতামূলক ছিল। এই প্রদর্শনের ফলে ভারত সরকার কিছু রাজস্বও পেত। ‘Director Of Field publicity’-এর তত্ত্বাবধানে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে গ্রামে-গ্রামে ঘুরে স্বল্প দৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র দেখানোর ব্যবস্থাও ছিল। কিন্তু ১৯৯৫ সালে সিনেমা হল মালিকরা নিউজরিল দেখাতে অস্বীকার করলে ‘Eastern India Motion Picture Association’ ও ফিল্মস ডিভিশনের আইনি দ্বন্দ্ব বাধে। শেষ পর্যন্ত ফিল্মস ডিভিশন জিতলেও সিনেমা হলে তথ্যচিত্র দেখানো আর সম্ভব হয়নি।
১৯৯০ সাল থেকে ফিল্মস ডিভিশন ও মহারাষ্ট্র সরকারের যৌথ উদ্যোগে ‘মুম্বাই আন্তর্জাতিক ফিল্মস ফেস্টিভ্যাল’ শুরু হয়েছিল বিশ্বের সমস্ত দেশের তথ্যচিত্র দেখা ও সে সম্পর্কে ভাবনাচিন্তার বিনিময় করার উদ্দেশ্য নিয়ে। এটিই ভারতের এমনকি দক্ষিন এশিয়ার সব থেকে বড়ো নন-ফিচারফিল্ম ফেস্টিভ্যাল হিসাবে পরিগণিত। এখানে অ্যানিমেশন, শর্ট ফিল্ম, ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত ও পুরস্কৃত হয়। শুধু তাই নয়, এই মহা উত্সবের মধ্যদিয়ে অর্থনৈতিক আদান-প্রদানের ভাবনা চিন্তারও অবকাশ থাকে। বলা যায় তথ্যচিত্র, শর্ট ফিল্ম ও অ্যানিমেশনের জন্য সহপ্রযোজনা এবং বিপণনের সম্ভাবনার অন্বেষণ করার প্ল্যাটফর্ম এটি। সেরা সিনেমাটোগ্রাফি, এডিটিং, সাউন্ড ডিজাইনের জন্যও পুরস্কারের ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে প্রমোদ পাতি স্পেশাল জুরি পুরস্কার, বেস্ট স্টুডেন্টস ফিল্ম এবং বেস্ট ডেবিউ ফিল্ম পুরস্কার। জল সংরক্ষণ ও জলবায়ু বিষয়ক সেরা ছবির জন্য একটি বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয় এই উত্সবে। এছাড়া ইন্ডিয়ান ডকুমেন্টারি প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশন এবং মহারাষ্ট্র সরকার দাদা সাহেব ফালকে চিত্রনগরীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পুরস্কার প্রদান করে।
ফিল্ম ক্লাবের প্রতিষ্ঠা
২০১২ সালে ফিল্মস ডিভিশনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়ে ফিল্ম ক্লাবের প্রতিষ্ঠা করেন। এই সময় ফিল্মস ডিভিশনের ডিরেক্টর জেনারেল ছিলেন ভি এস কুণ্ডু। ফিল্মস ডিভিশনের ভবনেই (আর আর থিয়েটার, ১০ম তলা, ফিল্মস ডিভিশন, ২৪ নম্বর পেডার রোড, মুম্বাই-২৬) ক্লাবের পক্ষ থেকে জনসাধারণের জন্য ছবি প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়। ফিল্মস ডিভিশনের আর্কাইভ থেকে সরবরাহ করা তথ্যচিত্র প্রতি শনিবার বিকেল চারটেই প্রদর্শিত হয়। প্রথম প্রদর্শিত হয়েছিল এন এস শাস্ত্রীর ‘I am 20’, অসীম আহালুওয়ালিয়ার ‘John and Jane’ ছবি।
শুধু প্রদর্শনই নয়, তথ্যচিত্র নিয়ে আলোচনাও হত এই ক্লাবে। সেই আলোচনায় চলচ্চিত্র পরিচালক, চলচ্চিত্রপ্রেমী, চলচ্চিত্র-শিক্ষার্থীরাও অংশ গ্রহণ করতে পারে। তথ্যচিত্র যেহেতু দর্শক মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে বা বাণিজ্যিক সাফল্যের উদ্দেশ্যে তৈরি হয় না, সেই কারণে ব্যবসায়ীরা যেমন আগ্রহ প্রকাশ করে না, তেমনি জনসাধরণের মধ্যে আগ্রহ জাগাতে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয় না। তাই ফিল্মস ডিভিশন থেকে তথ্যচিত্র প্রদর্শন ও তা নিয়ে আলোচনার অবকাশ রাখা হয় এই ক্লাবে। এই প্রদর্শনে ফিল্মস ডিভিশনের কোনও পরিচালক ইচ্ছে করলে তাঁর ছবির তালিকা থেকে পছন্দ মতো ছবি দেখানোর আবেদনও করতে পারে। এছাড়াও ফিল্মস ডিভিশন থেকে ওয়েব কাস্টিং এর পরিকল্পনাও করা হয় তখন থেকেই। ভিডিও পোর্টাল করারও পরিকল্পনা করা হয়। কিছুদিন আগেও ফিল্মস ডিভিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে নিয়মিত তথ্যচিত্র দেখানো হত। Filmsdivission.org এই লিংকে গিয়ে ছবি দেখা সম্ভব হত। ফিল্মস ডিভিশনের ফেসবুক পেজেও ছবি দেখার খবর দেওয়া হত।
২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতের তথ্যও সম্প্রচার মন্ত্রকের পক্ষ থেকে ফিল্মস ডিভিশনের ভারতীয় চলচ্চিত্রের জাতীয় জাদুঘরেরও উদ্বোধন করা হয়েছিল, যেটি মঙ্গলবার থেকে রবিবার জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হত। সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জাদুঘর এবং বিকেল ৪টে থেকে ৫টা পর্যন্ত চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হত।
বিগত দু’বছর ধরে বিশ্ব জুড়ে লকডাউন শুরু হলে অনলাইন ছবি প্রদর্শন শুরু করেছিল ফিল্মস ডিভিশন। ২০২০ সালের ২ মে আয়োজন করেছিল সত্যজিৎ রায়ের তথ্যচিত্রের অনলাইন প্রদর্শনের। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ডে উপলক্ষে ১৮ এপ্রিল (২০২১) ফিল্মস ডিভিশন অনলাইন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করেছিল। দু-দিন ধরে চলা এই অনুষ্ঠানে দেখানো হয়েছে মুশির আহমেদের ‘তাজমহল’, আদুর গোপালকৃষ্ণনের ‘চোলা হেরিটেজ’-এর মতো ছবি। প্রদর্শিত হয়েছে স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পরেও সমাজের এক জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে ছবি ‘Stop acid attack’।
আজকের আশঙ্কা
এতদসত্ত্বেও, সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ফিল্মস ডিভিশন আর চলতে পারছে না বলে অভিযোগ এনে বেশ কয়েকবার প্রতিষ্ঠানটিকে গুটিয়ে ফেলারও চেষ্টা করা হয়েছে। আশির ও নব্বইয়ের দশকে দু-বার ফিল্মস ডিভিশনের পূর্বাঞ্চলের আঞ্চলিক অফিস বন্ধ করে দেবার পরিকল্পনা হয়েছিল। প্রথমবার সত্যজিৎ রায়ের কড়া চিঠি কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত বদলে দেয় আর পরের বার শ্যাম বেনেগালের নেতৃত্বে গৌতম ঘোষ সহ ছ-জনের কমিটি আঞ্চলিক অফিসের পক্ষে সুপারিশ করলে শেষরক্ষা হয়।
তবে স্বাধীনতার পর যত দিন গেছে তত পরিবর্তিত হয়েছে ভারতের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা। তার সঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে চলেছে জনগণের জীবনযাত্রা। শুধুই জনগণের কাছে পৌঁছোনো নয়, পরিবর্তিত জীবনযাপনে, জনগণের চাহিদা পূরণে ফিল্মস ডিভিশনের ভূমিকা নেওয়া জরুরি হয়ে ওঠে। এখনও ফিল্মস ডিভিশনেরও নিজস্ব কোনও দূরদর্শন সম্প্রচারের ব্যবস্থা নেই। উদ্যোগ নেওয়া হয় না এখান থেকে উত্পাদিত ছবির ডিভিডি সংস্করণ ও বিক্রির। এখানকার বহু ছবি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাচ্ছে আর আর্কাইভে বন্দি হয়ে পড়ে থাকছে। এখানকার হাজার হাজার শিক্ষামূলক তথ্যচিত্র আর্কাইভে রাখা থাকলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেখানোর ব্যবস্থা করা হয় না। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেবার কোনও সরকারি উদ্যোগ নেওয়া হয় না। ‘ডিরেক্টর অবফিল্ড পাবলিসিটি’ সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার ফলে ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনব্যবস্থাও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে বহুদিন।
এমতাবস্থায় ফিল্মস ডিভিশনকে আরও সজীব করে তুলতে আঞ্চলিক অফিসগুলোতে (কলকাতা, নিউদিল্লি, তিরুবনন্তপুরম, বিজয়ওয়াড়া, হায়দ্রাবাদ, ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই) ছবি নির্মাণ ব্যবস্থা, নিজস্ব দূরদর্শন চ্যানেলে ছবি সম্প্রচার ও নিজস্ব চলচ্চিত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা বিশেষ প্রয়োজন।
এরই মধ্যে বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন পরিকল্পনা (বিমল জুলকার সভাপতিত্বে ফিল্ম মিডিয়া ইউনিটের যৌক্তিকতা এবং স্বায়ত্ব শাসিত সংস্থার পর্যালোচনা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ) অনুযায়ী Films Division, National Film Archive of India, Directorate of film festivalsএবং Children’s Film Society, India-কে National Film Development Corporation-এর সঙ্গে মিশে যাবার খবর আসে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভেদকর ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ঘোষণা করেন এনএফডিসি র ছত্রছায়ায় উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলির মাথাগোঁজার সিদ্ধান্তের কথা। এভাবে একাধিক প্রতিষ্ঠানকে একটি প্রতিষ্ঠানের রূপ দেবার সিদ্ধান্ত দেশের চলচ্চিত্রপ্রেমী ও চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বদের চিন্তিত করেছিল। চিন্তিত করেছিল প্রায় একশো পঁচিশ বছর ধরে নির্মিত ভারতের অসংখ্য ছবি সংরক্ষণের জন্য অপর্যাপ্ত ‘National Film Archive of India’-র পরিসর না বাড়িয়ে তাকে এন এফ ডি সির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার পরকল্পনা। এই চলচ্চিত্র সংরক্ষণ কেন্দ্রটিকে সংকুচিত না করে বরং প্রসারিত করে এর একাধিক আঞ্চলিক সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করেন তাঁরা।
কেন্দ্রীয় সরকারের এই নতুন পরিকল্পনা আশঙ্কা জাগিয়েছে বহু সরকারি পদের বিলুপ্তির সম্ভাবনা, তৈরি করেছে অসংখ্য কর্মচারীর কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হবার আশঙ্কা। তাই এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে দেশ জুড়ে কলাকুশলী, চলচ্চিত্র পরিচালক ও চলচ্চিত্র প্রেমীরা প্রতিবাদ করেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের কাছে প্রায় ১,৫০০ জনের স্বাক্ষর সহ চিঠিও দেন কিন্তু কোনো ফল হয় না। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী এই বছর ১লা জানুয়ারি থেকে Films Division, National Film Archive of India, Directorate of film festivals এবং Children’s Film Society স্বকীয়তা হারিয়ে NFDC এর সঙ্গে মিশে গেল। বছরের শুরুতে কাজ হারাল প্রায় ২০০ জন সরকারি কর্মচারি। তারা এখন থেকে অতিরিক্ত।
আগামী এপ্রিলে ফিল্মস ডিভিশনের পঁচাত্তর বছর পূর্ণ হত। দেশজুড়ে স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর উদযাপন করা হলেও ফিল্মস ডিভিশনের পঁচাত্তর বছর আর উদযাপন করার আগেই তাকে নিশ্চিহ্ন করা হল। যে ফিল্মস ডিভিশনের জন্ম হয়েছিল দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ে তুলতে, ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে, দেশের উন্নয়নমূলক কর্মসূচিকে সকলের দৃষ্টিগোচর করতে, সেই ফিল্মস ডিভিশন NFDC-র সঙ্গে মিশে তথ্যচিত্র নিয়ে সেদিনের যাবতীয় কর্মসূচি পালন করতে পারবে কিনা সে প্রশ্ন থেকেই গেলো!
তথ্যসূত্র-
১) কে জি দাশ, ফিল্মস ডিভিশন ও আমি, চলচ্চিত্রের নেপথ্য কথা, ওরিয়েন্ট বুক কোম্পানি, প্রথম সংস্করণ, পৃষ্ঠা ৫৬
২) Website of Films Division of India. WWW.films division.org
৩) Films Division Pays tribute to well Known film maker S. Sukhdev, 28/2/2021, Ministry of Information Broadcasting of India
৪) Show and tell: the Films Division’s new film club, by peter griffin, Forbes India, 14/4/2013
৫) Website of Films Division of India. WWW.films division.org
৬) Films Division has become redundant now, T S Nagabharana, 7thJanuary, Times of India..
৭) Joseph Joshy, Theatre of the absurd, The Indian express, 3rdjanuyary 2023