সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

ইতিহাসে সাহিত্যে লোককথায় বাংলার প্রাচীন নাথধর্ম

ইতিহাসে সাহিত্যে লোককথায় বাংলার প্রাচীন নাথধর্ম

নবাঙ্কুর মজুমদার

ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৩ ১৩০৭ 7

লট নম্বর আট থেকে মুড়িগঙ্গা নদীপথে ভেসেলে চড়ে ভেসে চলেছি গঙ্গাসাগরের পথে। সামনেই মকর সংক্রান্তি। আর এই মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে সারা ভারত যেন একাকার হয়ে মিলেছে সাগর সঙ্গমে। নানা ভাষা নানা বেশ নানা পরিধান চাক্ষুষ করছি, ওদিকে লঞ্চ এগিয়ে চলেছে ভুট ভুট ভুট ভুট। জেটিঘাটে ভেসেলে কোথাও তিল ধারণের জায়গা নেই। লক্ষ মানুষের মিলনমেলা। শত বিপত্তি উপেক্ষা করে আসমুদ্র হিমাচল চলেছে গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নান করতে। চোখে মুখে তাদের অনন্ত উদ্দীপনা। আর আমরা চলেছি এইসব পুণ্যলোভাতুর মানুষের মিলনমেলায় ভারতের সনাতন সত্ত্বাকে জানতে, বুঝতে। আমরা মানে আমি আর শান্তনুদা। দুজনেরই টুকটাক মুখ আর কথা দুটোই চলছে। লঞ্চে বেশ ভিড়। হঠাৎ লঞ্চের বাঁদিকের জটলা থেকে শুনতে পেলুম অনেকটা পাঁচালি  ধরণে কেউ একজন গেয়ে চলেছে-

“একে একে গোর্খনাথে সর্ব্বপুরী চাএ।

অগরু চন্দন গন্ধ সর্ব্ব স্থানে পাএ।

গোর্খে বলে এহি রাজ্য অতি বড় ভোলা।

চারি কড়া কড়ি বিকাএ চন্দনের তোলা।।

কদলীর প্রজাএ পৈরে পাটের পাছড়া।

প্রতি ঘরে চালে দেখি সুবর্ণ কমরা।।

কার পোখরির পানি কেহ নাহি খাএ।

মণি মাণিক্য তারা রৌদ্রেতে শুখাএ”।।

বোঝার চেষ্টা করছিলুম, এ প্রাচীন বাংলা পদ কি কোনো মঙ্গল কাব্যের বলিরেখা না কি অন্য কোনো গুপ্তধনের হদিশ পেলুম? শান্তনুদার মনোভাব বোঝার জন্য ওঁর দিকে ফিরতেই আমাকে ফিসফিসিয়ে বললেন, এ তো গোরক্ষবিজয় কাব্য। নাথ ধর্মের যোগমাহাত্ম্যের কথা বলা আছে এতে।

ও হো! এবারে মনে পড়েছে। মীরজুমলা থেকে মুর্শিদকুলি খানের শাসনামলের মাঝের কোনো এক সময়ে এ কাব্যের রচনা কাল। তাই পদগুলো এতো প্রাচীনগন্ধী। গোরক্ষবিজয় গাইছে মানে এরা নাথযুগী। এদের যে একটু কাল্টিভেট করতে হচ্ছে শান্তনুদা!

উত্তম পুষ্কর্ণী দেখে সুনির্মল জল।

হংস চক্রবাক তাথে পঙ্কজ উৎপল।।

চারি পাড়ে নানা তরু পরম সুন্দর।

আম কাঠোয়াল আর গুয়া নারিকল।।

এ তো মনে হচ্ছে সেযুগের কোনো এক কদলী নামে জায়গার সমৃদ্ধির বর্ণনা চলছে। ধর্মসাহিত্যে সমাজজীবনের বেবাক জলছবি। তা কদলী নগরটা কোথায়?

শান্তনুদা বললেন, নাথ ধর্মের অন্যতম বিখ্যাত মানুষ মৎস্যেন্দ্রনাথের সাথে কদলী নগরের নাম জড়িত। ডঃ শহিদুল্লাহের মতে কদলীনগর সম্ভবত কাছাড়। উনি ‘পাগস্বামগোমবজানে’ নামে এক তিব্বতি পুথিতে কদলীর উল্লেখ থেকে বলেছেন, সেখানে যেতে হলে পথে নাকি গোপীচন্দ্রের রাজ্য পড়ত।

কাকতালীয় ব্যাপার হল, আজ কলকাতা থেকে আসার পথে আমরা নাথ ধর্ম নিয়েই আলোচনা করতে করতে আসছিলাম। শান্তনুদা মুম্বাইতে থাকলেও ইতিহাসের সন্ধানে সারা ভারতের আনাচ কানাচ ঘুরে বেড়ান। সেই সূত্রে এবারে গোরক্ষপুরে গিয়ে নাথদের অন্যতম পীঠস্থান গোরক্ষধাম দেখে কলকাতায় এসেছেন নাথধর্মের পবিত্রতম দিন মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগর দেখবেন বলে। ফলে প্রায় সারাদিনই দুই অধার্মিকের ধর্মালোচনা চলছিল। প্রাচীন বাংলায় উদ্ভূত হয়ে নাথধর্ম যে সর্বভারতীয় স্তরে বিস্তার লাভ করে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলার এক বিশিষ্ট যোগী সম্প্রদায় এরা। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নাথযোগী সম্প্রদায় সম্পর্কে নাথপন্থী কথাটা ব্যবহার করলেও এরা কৌল নামে পরিচিত ছিলেন। নাথ, যোগী ইত্যাদি শব্দগুলো পরবর্তীকালের সংযোজন। আসলে যোগধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত নাথ মতবাদকে ঘিরে যে বহু কাহিনী, উপকথা ইত্যাদি ছড়িয়ে আছে তার জাল ভেদ করে এদের উৎপত্তির ইতিহাস বের করা বেশ দুরূহ কাজ।

সুকুমার সেন পঞ্চানন মন্ডলের প্রকাশিত গোরক্ষবিজয়ের যে ভূমিকা লিখেছিলেন, তাতে দেখাচ্ছেন, এটা নিশ্চিত যে নাথধর্ম বাংলার মাটিতেই সৃষ্টি ও ক্রমবিকশিত হয়েছিল। ‘ইহার প্রাচীন সাহিত্য বাঙ্গালাতেই পাওয়া যায় এবং তাহারই মধ্যে ইহার প্রাচীনতর রূপটি প্রতিবিম্বিত হইয়াছে। বাঙ্গালাদেশের বাহিরের যোগী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যের ধারা যে বাঙ্গালাদেশ হইতে নিঃসৃত হইয়াছিল তাহারও প্রমাণ অবিরল নয়’।

আসলে নাথধর্ম যে বাংলার একেবারে নিজস্ব সম্পদ তা কিন্তু নয়। ভারতবর্ষে প্রাচীন কাল থেকে যোগ সাধনার যে সব ধারা চলে আসছে তার সাথে দেশের বিভিন্ন অংশের সাধন পদ্ধতি মিলে বাংলার মাটিতে এই বিশিষ্ট মতটি ফুলে ফেঁপে উঠেছিল।

আমি কিছুক্ষণ আগেই শান্তনুদাকে বলছিলাম  যে, আমার সবচেয়ে আশ্চর্য লাগে, নাথপন্থে শৈব ও বৌদ্ধ তন্ত্রের ছায়া, সহজিয়া মতের প্রভাবের পাশাপাশি আবার শিখ পন্থেও এর প্রভাব রয়েছে। কি অদ্ভুত আদানপ্রদান!

শুনে দাদা বললেন, আরেকটা ব্যাপার নজর করেছো, বাংলা ভাষায় নাথ সাহিত্যের একটা বড় অংশ কিন্তু মুসলিম লেখকদের হাতে লিখিত। এ উদাহরণ অন্য ধর্মে বিরল। সুকুর মহম্মদ, সৈয়দ মুসিদ, সেখ ফয়জুল্লা, ফকির সাহেবান প্রমুখের হাতে নাথ সাহিত্য বিকশিত হয়েছে। কিভাবে তা সম্ভব হল, সে আলোচনায় পরে আসছি, তার আগে বলে নিই, গোরক্ষপুর পীঠের প্রধান মোহন্ত তথা উত্তর প্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও কিন্তু এই নাথ সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু।

নাথযোগীদের দলটি গান থামিয়ে খানিক বিশ্রাম নিচ্ছে দেখে গুটি গুটি পায়ে আমরা দুজন হাজির হলুম তাদের দলের সমুখে। উদ্দেশ্য, নাথ ধর্ম নিয়ে এদের ভাবনা চিন্তাগুলো বোঝার চেষ্টা করা। আলাপ করে দেখলুম, দলে কয়েকজনের নাথ ধর্ম নিয়ে বেশ স্বচ্ছ ধারণা আছে। আমাদের দেখে তারা কিন্তু নিজেদের গুটিয়ে নিলেন না, বরং খোলামেলা আলোচনাতে তাদের বেশ স্বচ্ছন্দই লাগছিল। দলের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষটি বললেন, কৌলরা পরম তপস্বী ও সিদ্ধপুরুষ ছিলেন বলে এদের সিদ্ধ বলা হত। যোগীরা অনাদি বা শিব গোত্রীয়। উনি বললেন, বাংলার যোগীদের তিনটে শ্রেণি- যোগী, জাতযোগী ও সন্ন্যাসী যোগী। এককালে বঙ্গীয় যোগীদের অনেকেই তাঁতির কাজ করতো, কিন্তু তারা নাকি কাপড়ে ও সুতোয় ভাতের মাড় ব্যবহার করায় জাতিচ্যুত হয়, অন্য সম্প্রদায়ের তাঁতিরা খইয়ের মাড় ব্যবহার করতো। জাতযোগীরা ছিল ভবঘুরে ও সাপুড়ে। সন্ন্যাসী যোগীরা হলেন গোরক্ষপন্থী শৈব।

আপনাদের কোনো সাম্প্রদায়িক চিহ্ন আছে কি? –আমি জিজ্ঞেস করে বসি।

–আছে বৈকি। আমরা গোরক্ষনাথের শিষ্য পরম্পরা নাথ, যোগী, গোরক্ষনাথী, দর্শনী, কানফাটা, সিদ্ধ ইত্যাদি নানা নামে পরিচিত, কিন্তু সাধারণভাবে সবাই যোগী বলে। হঠযোগী, বজ্রযানী ও সহজযানী, ত্রিপুরা তান্ত্রিক, বীরাচারী, দত্তাত্রেয় শৈব, সহজিয়া, নববৈষ্ণব ইত্যাদি বিভিন্ন বৌদ্ধ-শৈব-বৈষ্ণব যোগী সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে আমাদের পার্থক্য বোঝাবার জন্য আমরা কানে ছিদ্র করে একধরণের কুণ্ডল ধারণ করি, এর নাম দর্শন। –এই বলে বৃদ্ধ মানুষটি তাঁর কান আমাদের দেখালেন।

–আচ্ছা, এজন্যই নাথদের অপর নাম দর্শনী। শান্তনুদা বলে ওঠেন।

–ঠিক তাই। দেখছেন তো, আমাদের দর্শন বা কুণ্ডলটা বেশ বড় হয়। কানের উপাস্থি ভেদ করে এটা ধারণ করা বিধি, তাই আমাদের অনেকে কানফাটা যোগী বলে। এই বলে হা হা করে হাসতে লাগলেন বৃদ্ধ মানুষটি।

এই অবসরে শান্তনুদা আমার কানে ফিসফিসিয়ে বললেন, যোগী আদিত্যনাথের দর্শন পরা কানের ছবি দর্শন করেছ কখনো?

আমি উত্তর দিলুম না।

বয়স্ক মানুষটি কিন্তু বলে চললেন—নাথযোগীরা দীক্ষার সময় কুণ্ডল ধারণ করেন, শ্রী মৎস্যেন্দ্রনাথ এই রীতি চালু করেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। এই কুণ্ডলের দর্শন নামটা কিন্তু শ্রদ্ধামূলক। এর অর্থ সাধকের আধার পরমাত্মা দর্শনের অনুকূল, অতএব তিনি দর্শন ধারণের অধিকারী বা দর্শনী।

সমস্ত যোগীরা তো কানফাটা যোগী নয়, তবে? –আমি মুখ ফসকে বলে ফেলে লজ্জা পাই, হয়তো এঁর সামনে কানফাটা শব্দটা উচ্চারণ করা আমার উচিত হয়নি।

ভদ্রলোক কোনোরকম বিরক্তি প্রকাশ না করে বললেন, গুরু গোবিন্দ সিংহের শিষ্য পরম্পরা ও দশনামী সম্প্রদায়ের ব্রহ্মগিরির গুদড়রাও কুণ্ডল ধারণ করেন। প্রবাদ আছে, স্বয়ং গোরক্ষনাথজী ব্রহ্মগিরিকে তাঁর কুণ্ডল বা দর্শন দান করেন, সেই থেকে এই সম্প্রদায় এক কানে কুণ্ডল ও অন্য কানে গোরক্ষ পদচিহ্ন যুক্ত তামার তক্তি ধারণ করেন। আর শুনবেন? বাঙালি হিন্দু যোগীদের মধ্যে যশোর ও উৎকলে বৈষ্ণব যোগীদের বড় আস্তানা ছিল। আর ছিল রংপুরে। কিন্তু দেশভাগের ফলে সেসব এখন ইতিহাস। বগুড়ার বৌদ্ধ যোগীরা ছিলেন কানফাটা সম্প্রদায়ের, আর আমরা কানফাটা হলেও কিন্তু শৈব। এই বলে আবার হাসতে লাগলেন।

আমার সব গুলিয়ে যাচ্ছিল। বৌদ্ধ, শৈব, বৈষ্ণব সব মিলেমিশে একাকার।

শান্তনুদা এবারে জিজ্ঞেস করে বসলেন, নাথ যোগীদের মধ্যে আর কি কি ভাগ আছে?

–ভাগ তো অনেক আছে। সব যে আমিও জানি না। তবে মচ্ছেন্দ্র যোগীরা গোরক্ষনাথজীর গুরু মৎস্যেন্দ্রনাথকে গুরু বলে মানেন, ভর্ত্তৃহরির শিষ্যরা ভর্ত্তৃহরি যোগী, শারঙ্গ নিয়ে যে যোগীরা শিব-শক্তির গান গেয়ে ভিক্ষা করে তারা শারঙ্গীহার। আবার এককালে যারা কাপাস আর পাটের সুতোর কাপড় বিক্রি করে বেড়াতো সেসব যোগীরা ছিল ডুরীহার। তুবড়ি বাজিয়ে অহিতুন্ডক বৃত্তি অবলম্বন যাদের জীবিকা ছিল তারা কানিপা যোগী –এছাড়া ভোপা, চন্দ্রভাট, অওঘর ইত্যাদি আরো অনেক যোগী সম্প্রদায় রয়েছে।

এবারে উনি নিজে থেকেই বলে চললেন, বাংলায় রচিত গোরক্ষবিজয়, মীনচেতন, ময়নামতীর পুথি, গোপীচন্দ্রের গান, ময়নামতীর গান, গোবিন্দচন্দ্রের গীত, ময়নামতীর গাথা, শূন্যপুরাণ ইত্যাদি বইতে স্বয়ং শিব থেকে মীননাথ, হাড়িপা, গোরক্ষ, কানুপা প্রমুখ সিদ্ধদের উৎপত্তির কাহিনী রয়েছে—এই বলে তিনি আবার চোখ বুজে সুর ধরলেন—

“তবে যদি পৃথিবীতে য়াইল হরগৌরি

মীননাথ হাড়িফাএ করন্ত চাকরি।

মীননাথের চাকরি করে জাতি গোরখাই।

হাড়িফার সেবা করে কানফা জোগাই”।।

বুঝলাম আর বিরক্ত করা উচিত হবে না, প্রণাম করে ধীরে ধীরে দুজনে ফিরে এলাম লঞ্চের উল্টোদিকে। ততক্ষণে আমাদের কচুবেড়িয়া জেটিঘাটে নামার সময় হয়ে গেছে, আর আলোচনার অবকাশ নেই, কিন্তু মাথার মধ্যে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

বাসে গঙ্গাসাগরে পৌঁছে আগে থেকে বুক করে রাখা ভারত সেবাশ্রমে কোনোমতে মাথাগোঁজার ঠাঁই টুকু পেলুম। খানিক বিশ্রাম নিয়ে দুজনে বেরুলুম চায়ের খোঁজে। উল্টোদিকেই একটা চায়ের দোকান। এই ঠাণ্ডায় ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে যখন শান্তনুদাকে শুধোলুম, নাথ ধর্মমতের শিকড় যে বাংলাতেই ছিল তার প্রমাণ কি?

শান্তনুদা চায়ের কাপে এক আরাম চুমুক দিয়ে বললেন, নাথেরা যে বাংলা বা পূর্ব ভারতের লোক তার প্রমাণ মীননাথের খাঁটি বাংলা পদ। পাশাপাশি দেখো, গোরক্ষপুর বিখ্যাত হলেও গোরক্ষনাথের লীলাক্ষেত্র বাংলাতেই বেশি ছিল। তাঁরই চেলা হাড়িপা ময়নামতীর গানের নায়ক। রাজা মানিকচন্দ্র ময়নামতীর স্বামী। সাবেক রংপুর অঞ্চলের যোগী সম্প্রদায় মানিকচাঁদের গীত গেয়ে বেড়াতেন। তারা মানিকচাঁদকে রংপুর নিবাসী ও রাজা ধর্মপালের ভাইরূপে বর্ণনা করেন। রংপুরের যোগীরা পাশুপত শৈব। তাঁরা গোরক্ষনাথকে আদিগুরু রূপে মান্য করেন ও নিজেদের কানফাটা বলে প্রচার করেন। দীনেশচন্দ্র সেনের মতে এদের গীতিকায় বৌদ্ধ প্রভাব স্পষ্ট।

–এটা বেশ ইন্টারেস্টিং ব্যাপার। অনেকের বিশ্বাস নাথেরা আসলে বৌদ্ধ ধর্মের অবশেষ থেকে এসেছেন। কথাটা কি ঠিক? –আমি শুধোই।

শান্তনুদা খানিকক্ষণ ভেবে নিয়ে বলেন, ভারতে যোগ সাধনার ঐতিহ্য বহু প্রাচীন। বৈদিক যুগ থেকে শুরু করে বৌদ্ধ যোগাচার, জৈন সাধন পদ্ধতি হয়ে আধুনিক ‘ইয়োগা’ পর্যন্ত তার ব্যাপ্তি। পতঞ্জলি প্রথম সমস্ত বিক্ষিপ্ত যোগপন্থাকে একসূত্রে বাঁধেন। ফলে নাথধর্ম শুধুমাত্র গুহ্য বৌদ্ধধর্মের দ্বারা প্রভাবিত নয়। বরং পূর্বভারতে, নেপালে, তিব্বতে নাথসিদ্ধাদের অনেক আচার বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের ক্রিয়াকলাপের সাথে মিশে যে সাদৃশ্য তৈরি করেছে তাতে উভয় কাহিনীর মধ্যে কিছুটা মিল লক্ষিত হয়। তবে ঐতিহ্য বলো আর কাহিনী উপকথা বলো, এসব ব্যাপারে নাথধর্ম প্রাচীন শৈব সম্প্রদায়ের কাছে ঋণী। নাথ সিদ্ধাচার্যদের তালিকায় প্রথমেই আসেন মহাযোগী শিব। গোরক্ষনাথ, মীননাথ, কানপা, হাড়িপা তাঁর শিষ্য। সমস্ত শৈবতীর্থই নাথ সম্প্রদায়ের পবিত্র তীর্থ।

চায়ের দোকানে আমরা আড্ডায় মশগুল থাকলেও পাশে যে এক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে আমাদের কথা শুনছিলেন তা আমরা খেয়াল করিনি। শান্তনুদা থামতেই সেই ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন আলাপ করার জন্য। নাম বললেন সৌরেন দেবনাথ। সৌরেনবাবু বললেন, গঙ্গাসাগরের মত জনসমুদ্রে এসে এমন বিষয়ে আলোচনা শুনতে পাব আশা করিনি, তাই আড়ি পাতছিলুম। আমিও আপনাদের আলোচনায় একটু যোগ দিই—বলে ঝোলা থেকে একটা বই বের করে পড়া শুরু করে দিলেন, বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের অষ্টম অধিবেশনে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মশাই নাথপন্থ নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছিলেন: ‘আমাদের দেশের সব যোগীদের উপাধি নাথ। তাঁহারা বলেন, “আমরা এদেশের রাজাদের গুরু ছিলাম, ব্রাহ্মণেরা আমাদের গুরুগিরি কাড়িয়া লইয়াছে”। তাই তাহারা এখন পৈতা লইয়া ব্রাহ্মণ হইবার চেষ্টায় আছেন। নাথপন্থ নামে এক প্রবল ধর্ম সম্প্রদায় বহুশত বৎসর ধরিয়া বাঙ্গালায় ও পূর্ব ভারতে প্রভুত্ব করিয়া গিয়াছে’।

এই দেখুন না, আমি নিজে দেবনাথ, যোগী সম্প্রদায়ের, আমাদের কিন্তু পৈতে হয়। আজকাল আমরা নিজেদের রুদ্রজ ব্রাহ্মণ বলি।

কিছুক্ষণ দম নিয়ে দেবনাথবাবু বলতে থাকেন, নাথপন্থে বৌদ্ধ ও শৈব যোগ নিয়ে কেমন ধোঁয়াশা দেখুন, নেপালের কোনো কোনো অঞ্চলে মৎস্যেন্দ্রনাথকে অবলোকিতেশ্বর বুদ্ধের সাথে অভিন্ন মনে করা হয়। কিন্তু মৎস্যেন্দ্রনাথ রচিত ‘কৌলজ্ঞাননির্ণয়’ পুথিটি, যেটা নেপালেই সযত্নে রক্ষিত আছে, তাতে কিন্তু বৌদ্ধধর্মের উল্লেখমাত্র নেই, বরং এটা হরপার্বতী সংবাদ আকারে লিখিত।

আমি বললুম, আসলে মৎস্যেন্দ্রনাথ, গোরক্ষনাথ প্রমুখ যে নাথ ধর্মের মূল সিদ্ধগণ, এদের সম্বন্ধে যেহেতু সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায় না, নানা ভাষার আখ্যান, উপকথা, ধর্মপ্রচারের কাহিনী আর অন্যান্য ধর্মমতের বইপত্রে নাথদের সম্পর্কে আলোচনা থেকে বিষয়টা সাজাতে হয়, তাই এ ধরণের ধোঁয়াশা থাকা স্বাভাবিক।

দেবনাথবাবু মাথা নেড়ে বললেন, এটা নিশ্চিত যে, গোরক্ষনাথ মৎস্যেন্দ্রনাথের শিষ্য। তাঁর জন্মস্থান নিয়ে খানিকটা বিতর্ক রয়েছে। উনি মোটামুটি নবম বা দশম শতাব্দীর লোক। মৎস্যেন্দ্রনাথ, মীননাথ, লুইপা—নানা জায়গায় নানা রকম নাম পাওয়া গেলেও এঁরা অভিন্ন ব্যক্তি। এটা ডঃ প্রবোধচন্দ্র বাগচি তাঁর লেখায় দেখিয়েছেন। জানা যাচ্ছে যে, মৎস্যেন্দ্রনাথের জন্মস্থান চন্দ্রদ্বীপ। চন্দ্রদ্বীপকে বর্তমান সুন্দরবন, বাখরগঞ্জ এলাকার কোনো অঞ্চলের সাথে এক করে দেখা হয়। লুইপা বা মীননাথের বাংলায় লেখা বেশ কিছু পদ পাওয়া গেছে। তাই ইনি বাঙালি বোঝা গেলেও গোরক্ষনাথ কিন্তু বাঙালি নন। তাঁর লেখা কোনো বাংলা পদ পাওয়া যায়নি, বরং প্রাচীন হিন্দি ও সংস্কৃত রচনা পাওয়া গেছে।

মৎস্যেন্দ্রনাথের শিষ্য গোরক্ষ বেশি প্রসিদ্ধ হলেও তাঁর অপর শিষ্য চৌরঙ্গীনাথও অখ্যাত নন। চৌরঙ্গীনাথের সাথে বিখ্যাত পাল বংশের একটা যোগসূত্রের আভাস পাওয়া গেলেও সেটা আজ আর প্রমাণ করা সহজ নয়।

শান্তনুদা দেবনাথবাবুর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন: এই চৌরঙ্গীনাথের নামেই কি কলকাতার চৌরঙ্গী অঞ্চলের নামকরণ? শুনেছি কালীঘাটের কালীমূর্তিও চৌরঙ্গীনাথের প্রতিষ্ঠিত?

দেবনাথবাবুর ঠোঁটের কোণে হাসি দেখা গেল। বললেন, নানা কিংবদন্তি, উপকথার মধ্যে সত্যি ইতিহাস লুকিয়ে থাকতেও পারে আবার বিকৃতও হয়ে যেতে পারে। আজ সেসব প্রমাণ করা কি সহজ কাজ? কিন্তু দমদমের কাছে গোরক্ষ বসলী ছাড়াও অবিভক্ত বাংলার নানা অঞ্চলে বেশ কিছু গোরক্ষ ক্ষেত্র আছে, ফলে এটা বোঝা যায় যে, বাংলায় একসময় নাথধর্মের প্রবল প্রভাব ছিল।

দমদমে গোরক্ষ বসলী? কখনো নাম শুনিনি তো? জায়গাটা কোথায় কোনো দমদমবাসীকে জিজ্ঞেস করতে হবে—আমি বললুম।

গল্প করতে করতে সন্ধ্যে হয়ে গেছে। সাগরমেলা চত্বরে ভিড় যথেষ্ট বেশি হলেও আলো ঝলমলে চওড়া রাস্তা ধরে হাটতে মন্দ লাগছে না। চারিদিকে বিকিকিনি হাকডাক চলছে, বিচিত্র ধরণের সাধুসন্তদের ছাউনিতে পুণ্যলোভী মানুষজন ভিড় করে আছে। একটা জমজমাট ব্যাপার। শান্তনুদা বললেন, মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নান প্রায় সব শ্রেণির হিন্দুদের বিধি, নাথদের তো প্রধান পর্ব এই মকর সংক্রান্তি। তাই নাথপন্থের বহু মানুষ কিন্তু আজ এই মেলা প্রাঙ্গণে উপস্থিত আছেন।

আচ্ছা শান্তনুদা, ভেসেলে আসতে আসতে আপনি বলেছিলেন, নাথ সাহিত্যের একটা বড় অংশ মুসলিম লেখকদের হাতে লেখা, সেটা কিভাবে সম্ভব হল?

–নাথধর্ম বহু প্রাচীন এক যোগধর্ম হওয়া সত্ত্বেও বহুবছর তা বাংলার নিজস্ব তন্ত্র ও যোগাচারের মধ্যে আবদ্ধ ছিল। এসময় নাথপন্থ বাংলার অন্যান্য সাহিত্যশাখা যেমন চর্যাপদ, বৈষ্ণব সাহিত্য ইত্যাদিকে প্রভাবিত করলেও নিজস্ব সাহিত্য ঐতিহ্য গড়ে তুলতে পারেনি। এর কারণ মনে হয়, সাম্প্রদায়িক গোপনীয়তা। নিজ সম্প্রদায়ের সাধনতত্ত্ব বাইরে যাতে প্রকাশ না হয়ে পড়ে এজন্য কৌলরা সচেষ্ট ছিলেন। কিন্তু নাথপন্থে বিশ্বাসী সাধারণ মানুষের মুখে মুখে ছড়া ও চারণগান আকারে একরকম মৌখিক নাথ সাহিত্য, উপকথা ইত্যাদি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এর মধ্যে প্রধান ছিল গোপীচাঁদ আর ময়নামতীর আখ্যান। ততদিনে বাংলার বাইরে নাথ যোগাচারের উপর ভিত্তি করে সাহিত্য রচনা শুরু হয়ে গেছে। এমনকি গোপীচাঁদের আখ্যান উত্তর থেকে পশ্চিম ভারতের এক বিশাল অঞ্চলের সাহিত্যে হাজিরা দিচ্ছে। তবে বাংলায় বঙ্গীয় রাজা গোপীচাঁদের গীত বা গোরক্ষবিজয়, ময়নামতীর গান ইত্যাদি আঠেরো শতকের আগে লেখার আকারে আসেইনি। এই সময়টা আবার নাথ সম্প্রদায়ের অবক্ষয়ের যুগ। ফলে নাথ সাহিত্য এইসময়ে যারা লিখছেন তাদের অনেকেই নাথ সম্প্রদায়ের বাইরের মানুষ, কেউবা মুসলমান। এঁরা নাথ ধর্মসাহিত্যের উদার মানবিক আবেদনের আকর্ষণে হয়তো বা একাজে হাত দিয়েছিলেন। তাই দেখি মীননাথ, গোরক্ষনাথ, হাড়িপা বা কানুপার অলৌকিক কাহিনীগুলোর আড়ালে সেযুগের সমাজ, পরিবেশ, মানুষের চিরন্তন সুখদুঃখ, আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি বারে বারে উঠে আসে এদের লেখায়।

আমি কিন্তু একটু বিতর্কিত ভাবনাও পেয়েছি প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘বাংলায় ধর্মসাহিত্য (লৌকিক)’ নামে বইতে। মুসলিম বিজয়ের পরে বাংলায় যে ধর্মান্তকরণ চলে তাতে বহু নাথ ধর্মাবলম্বী মানুষ মুসলিম হয়ে যান। কিন্তু ধর্ম গ্রহণ করলেই কি পূর্বস্মৃতি মুছে ফেলা যায়? ফলে বংশের পূর্বপুরুষের গীত বা রচিত উপাখ্যানগুলি বংশ সম্পত্তির মত উত্তরাধিকারীদের হাতে গেল। সুতরাং পূর্ববঙ্গে পাওয়া পুথির মুসলিম লেখকেরা আরব পারস্যের লোক নয়, এঁরা ছিলেন বাংলারই নাথযোগী জাতীয় লোকেদের বংশধর।

একটা বাচ্চা মেয়ে কোলাহল থেকে দূরে কতক হার দুলের পসরা নিয়ে বসে আছে একাকী, নিঃসঙ্গ। আর জনা কয়েক উত্তর ভারতীয় দেহাতি মহিলা মেয়েটির সাথে দরদাম করে চলেছেন চুটিয়ে। গহনার টান যে বড় টান। আর দূরে কোনো এক আখড়া থেকে ভেসে আসছে—

“ধর ধর যোগিনী অলঙ্কার ধর।

ইহারে পরিআ তুহ্মি চলি যাঅ ঘর।।

ঝুলিত ঢালিআ দিল অষ্ট অলঙ্কার।

অলঙ্কার পাইআ দেবী হরিষ অপার”।।

কথায় কথায় সমুদ্রের একেবারে কাছাকাছি চলে এসেছি। হাড়ে কাঁপন ধরানো নোনা হাওয়ার মধ্যে দেখলাম বহু মানুষ এই রাতেও সাগর সঙ্গমে ডুব দিচ্ছেন। হয়তো ঠিক এমনি করেই এদের পূর্বপুরুষ, আমার পূর্বপুরুষও জাগতিক পাপক্ষয়ের জন্য পুণ্যস্নাত হয়েছিলেন কোন সুদূর অতীতে। ভবিষ্যতেও হয়তো পুণ্যস্নানের তাগিদ তাড়িয়ে ফিরবে এদের উত্তরপুরুষদের। আর সমুদ্রমেখলায় ভেসে যাবে জাগতিক পাপ-তাপের সাথে সাথে কত না জানা কথা, কত অশ্রুতপূর্ব ইতিহাস। গোপীচাঁদ, ময়নামতীর মতো।   

তথ্যসূত্র:

১. শ্রী কল্যাণী মল্লিক- নাথ সম্প্রদায়ের ইতিহাস, দর্শন ও সাধনপ্রণালী- কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৪৬

২. আদিত্য কুমার লালা- বাংলার নাথধর্ম ও নাথ সাহিত্য- দে’জ পাবলিশিং, ২০১২

৩. প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়- বাংলার ধর্মসাহিত্য (লৌকিক)- ডি এম লাইব্রেরী, কলকাতা -১৩৮৮

৪. পঞ্চানন মণ্ডল- গোর্খ বিজয়- বিশ্বভারতী গবেষণা প্রকাশন বিভাগ,শান্তিনিকেতন- ১৯৯৭

মন্তব্য তালিকা - “ইতিহাসে সাহিত্যে লোককথায় বাংলার প্রাচীন নাথধর্ম”

  1. অসাধারণ লেখা। প্রশংসা করার ভাষা পাচ্ছি না। অনেক নতুন তথ্য এবং তথ‍্যসূত্র জানলাম। এধরনের লেখা এ বিষয়ে জানার আগ্রহটাও আরো বাড়িয়ে তোলে।

  2. ভালো লাগলো। শ্রীমতি ড. কল্যাণী মল্লিক ছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যা। ড. অসিত বন্দ্যোপধ্যায এর “বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস” গ্রন্থে ‘নাথ সাহিত্য’ নামে আলাদা একটি বিভাগ আছে।
    নাথ সম্প্রদায়ের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সাহিত্যিক প্রভাবকে কখনোই অস্বীকার করা যায় না। বাংলাভাষার আদিযুগের নিদর্শন ‘চর্যাপদ’, নাথ সম্প্রদায় দ্বারাই সমধিক লিখত। সেই আদি যুগের লেখার সূত্র ধরেই বর্তমান বাংলাভাষার প্রচলন। যেহেতু নাথেরা যোগ সাধনা করতেন সেহেতু সাধারণ মানুষ তাঁদেরকে অনেক উচ্চমার্গীয় বলে শুধুমাত্র ‘গুরু’ বলে শ্রদ্ধায় সরিয়ে রেখেছিল। নিজেদের জীবন যাত্রার সঙ্গে মেলাতে পারে নি। এই কারণেই নাথ ধর্ম, সম্প্রদায় আর তার রাজনৈতিক এবং সাহিত্যিক ইতিহাস আজ গবেষণার বিষয়।।

  3. নাথ সম্প্রদায় গোটা ভারতে ছড়িয়ে আছেন l এঁরা সাধক জাতি l বঙ্গের বৌদ্ধধর্মের যে বিবরণ তাতে, নাথ যোগ অবিচ্ছেদ্য, অথচ বঙ্গীয় গবেষক গণ, সচেতনভাবে নাথধর্মের দিকটা বেমালুম চেপে যান l কল্যাণী দেবী যে দলিল রেখে গেছেন, তা নাথসম্প্রদায়ের একটা বহুমূল্য সম্পদ l আপনাকে ধন্যবাদ, ভালো তুলে ধরেছেন l

  4. Liked the the brief on Nath Sampraday where last discourses by Mr Sharma on Kashmir Shaivism(Swaraj Paul lecture series) attracted my attention on Myatsendranarayan sailing boat to to reach Punjab and Kashmir, where I intergected few class that is not Southern Shaivites are also equally relevant having lived deep South with Lingayats. But having moved across India mixing with diverse migratory working class of various cast creed religion in 14 states made me to Contemplate pre Buddha 23 Tirthankars influence as great, otherwise how after almost 3000 yeras viz Adinath Jain temple is built by a Kshateiya King in 15 th Century at Khajuraho!? My history search on India having lived in 64 destinations made me to contemplate as this.

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।