গান্ধিহত্যা ও কয়েকটি চিঠি
দিল্লির লাল কেল্লা আজ পর্যন্ত তিনটি ঐতিহাসিক বিচারের সাক্ষী৷ প্রথমটি ছিল দিল্লির শেষ স্বাধীন সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফরের বিচার, ১৮৫৭-এর মহাযুদ্ধ ব্যর্থ হওয়ার পর ব্রিটিশরা বন্দি সম্রাটের বিচার করেছিল। দ্বিতীয়টি, ১৯৪৫ সালে যুদ্ধবন্দি আজাদ হিন্দ ফৌজের বিচার। তৃতীয় ও শেষ বিচারটি ছিল নাথুরাম গোডসে সহ গান্ধিহত্যায় অভিযুক্ত ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার।
গান্ধিহত্যার ষড়যন্ত্রীদের বিচার শুরু হয় ১৯৪৮ সালের মে মাসে লাল কেল্লার বিশেষ আদালতে, বিচারক আত্মা চরণের এজলাসে। মে থেকে নভেম্বর, এই দীর্ঘ সময় ধরে ১৪৯ জন সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, ৪০৪টি নথি ও ৮০টি বস্তু তথ্যপ্রমাণ আদালতের পরীক্ষার জন্য পেশ করা হয়। ১৯৪৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জাস্টিস আত্মা চরণ এ বিচারের রায় শোনান, তাতে নাথুরাম গোডসে ও নারায়ণ আপ্তের ফাঁসির আদেশ হয়৷
এই রায়ের বিরুদ্ধে গোডসে ও তাঁর সঙ্গীরা পূর্ব পঞ্জাব হাইকোর্টে আপিল করেন। শৈল শহর সিমলায় তিন বিচারকের একটি বেঞ্চ মে মাসের ২ তারিখ থেকে অপরাধীদের আপিল শোনেন। নাথুরামের সাক্ষ্যদান ১২ মে সম্পন্ন হয় এবং ১৯৪৯ সালের ২২ জুন বেঞ্চ রায়দান করেন৷ নিম্ন আদালতের সবকটি রায় বহাল রাখা হয়, শুধুমাত্র ডা. দত্তাত্রেয় পারচুরে ও শঙ্কর কিস্তইয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়।
সিমলা আদালতে বিচারাধীন থাকাকালীন ও সাক্ষ্যদানের পাঁচদিন পরে অর্থাৎ ১৯৪৯ সালের ১৭ মে নাথুরাম গোডসের কাছে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধির তৃতীয় পুত্র রামদাস গান্ধির লেখা একটি চিঠি এসে পৌঁছয়৷ রামদাসের চিঠি শুরু হচ্ছে এইভাবে, “প্রিয় শ্রী নাথুরাম গোডসে, আমি নিশ্চিত, একদিন আপনি বুঝতে পারবেন, আপনি কেবলমাত্র আমার পিতার নশ্বর দেহটিকে স্তব্ধ করতে পেরেছেন, তার বেশি কিছু নয়। (I am sure, you will one day realise that you have only put an end to my father’s perishable body, nothing more. Because, not only in my case, but in the case of millions all over the world, the spirit of my father still rules over their heart).” রামদাস তাঁর চিঠিতে আদালতে গান্ধিজির বিরুদ্ধে আনা নাথুরামের নানা অভিযোগের খণ্ডন ও বিরোধিতা করেন। রামদাস এও জানান তিনি ইতিমধ্যেই ভারতের তৎকালীন বড়লাটের কাছে গোডসে ও নারায়ণ আপ্তের ফাঁসির শাস্তি মুকুবের আর্জি জানিয়েছেন।
রামদাসের এই চিঠি নাথুরামের সামনে তাঁর শাস্তি লঘু হওয়ার পক্ষে অতি ক্ষীণ হলেও এক আশার আলো জ্বেলে দেয়। ততদিনে নাথুরামের হিন্দুদের রক্ষাকর্তা হিসেবে বীর শহীদের মৃত্যুবরণ করার আকাঙ্ক্ষা উবে গেছে৷ তিনি আশা করেছিলেন, গান্ধিহত্যার পরে তাঁর স্বপক্ষে হিন্দুদের সমর্থনের ঝড় উঠবে কারণ ভারতবর্ষে হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে সবচেয়ে বড় পথের কাঁটাটিকে তিনি, একমাত্র তিনি, মাত্র তিনটি বুলেট খরচ করে উপড়ে ফেলেছেন৷ কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, সাধারণ স্বয়ংসেবকদের মধ্যে নাথুর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেলেও, নানা শাখায় সংঘ সদস্যদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করা হলেও, দেশজোড়া জনরোষের চাপে আরএসএস তাদের দীর্ঘদিনের অনুগত স্বয়ংসেবক নাথুরামকে রীতিমতো বিবৃতি দিয়ে পরিত্যাগ করল। আরএসএস জানালো নাথুরাম গোডসে দীর্ঘদিন আগে, ১৯৩৭ সালে হিন্দু মহাসভায় যোগদানের সময়েই সংঘের সদস্যপদ ত্যাগ করেছেন। অবশ্য পরবর্তীকালে তদন্তে এই ঘোষণা সর্বৈব মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছিল। গান্ধিহত্যার আগের মুহূর্ত অবধি আরএসএস, হিন্দু মহাসভা ও অন্যান্য হিন্দু সংগঠনগুলি প্রতিটি সভাসমিতিতে ও মুখপত্রে দেশভাগ ও দাঙ্গার ‘নায়ক’ গান্ধির বিরুদ্ধে লাগাতার বিষাক্ত বক্তব্য রাখছিল। বিড়লা হাউসে গান্ধিজির শেষতম অনশনের সময় রাস্তার জমায়েত থেকে মুহূর্মুহু স্লোগান উঠছিল- ‘বুডঢে কো মরনে দো’। অথচ সরসঙ্ঘচালক গোলওয়ালকর গান্ধিহত্যার পর গভীর শোকপ্রকাশ করে ১৩ দিনের জন্য দেশের সমস্ত শাখা বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করলেন। এমনকি হিন্দুরাষ্ট্রের অবিসংবাদী মার্গদর্শক বিনায়ক দামোদর সাভারকর পর্যন্ত তাঁর একান্ত অনুগত শিষ্য নাথুরামকে অস্পৃশ্যজ্ঞানে ত্যাগ করলেন। নাথুরাম যাঁকে কিশোর বয়স থেকেই পরম শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছেন, রাজনীতি করতে এসে আগাগোড়া তাঁরই নির্দেশিত পথে চলেছেন, সেই সাভারকর বিচার চলাকালীন বিচারকক্ষে বা জেলে একটিবারও নাথুর সঙ্গে কথা বলেননি বা তাঁর দিকে চোখ তুলে তাকাননি। এমনকি নাথুরাম যখন আদালতে তাঁর দীর্ঘ নয় ঘণ্টাব্যাপী বয়ানে গান্ধিহত্যার দায় পুরোপুরি নিজের কাঁধে নিয়ে সাভারকরসহ অন্যান্য সঙ্গীদের নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন, সাভারকর পাথরে খোদাই স্ফিংস-এর মতো ভাবলেশহীন দৃষ্টি নিয়ে অন্যত্র তাকিয়েছিলেন। দেখে বোঝার উপায় নেই, গোডসে সহ ষড়যন্ত্রকারী গোটা টিম ১৯৪৮ সালের জানুয়ারি মাস জুড়ে একাধিকবার বম্বের সাভারকর সদনে গিয়ে গৃহকর্তার সঙ্গে দেখা করেছে, সময় কাটিয়েছে, দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেছে। এমনকি, দুই মূল অপরাধী নাথুরাম ও নারায়ণ আপ্তে সাভারকরের সঙ্গে শেষ দেখা করেছিলেন ২৪ জানুয়ারি সকালে, অর্থাৎ গান্ধিহত্যার মাত্র ছ’দিন আগে। সেই সাভারকরের এহেন নিস্পৃহ আচরণ গোডসেকে খুব হতাশ ও দুঃখিত করেছিল, ষড়যন্ত্রের আরেক সঙ্গী দত্তাত্রেয় পারচুরের উকিল পি এল ইনামদারের কাছে তা তিনি স্বীকার করে গেছেন৷
এমত অবস্থায় রামদাস গান্ধীর চিঠি নাথুরামকে সামান্য হলেও আশার আলো দেখায়৷ ফাঁসি রদ না হলেও রামদাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ তাঁকে প্রার্থিত গৌরব এনে দিতে পারে, সম্ভবত এটাও ভেবেছিলেন নাথুরাম। ঠিক সেই সময় বিনোবা ভাবে, অসমের কংগ্রেস নেতা দেবেশ্বর শর্মা, গনেশ বাসুদেব মাভলঙ্কর প্রভৃতি গান্ধিবাদী ও সমাজসংস্কারকেরা গোডসে ও আপ্তের মৃত্যুদণ্ডের রদের পক্ষে প্রচার করছিলেন ও সাধারণভাবে চরমতম শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড বিলোপের পক্ষে জনমত তৈরি করছিলেন। রামদাসের চিঠি নাথুরামকে এই আন্দোলন নিজের সুবিধার্থে ব্যবহার করার অপ্রত্যাশিত সুযোগ এনে দিয়েছিল।
নাথুরাম রামদাসের চিঠির উত্তর দেন ৩ জুন। নাথুরাম প্রথমেই মহাত্মা গান্ধিকে হত্যা করার জন্য শোকপ্রকাশ করেন। পাশাপাশি, তিনি রামদাসকে অনুরোধ করেন জেলে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে, নাথুরাম তখন তাঁকে নিজের অবস্থান বুঝিয়ে বলবেন, বুঝিয়ে বলবেন কেন তিনি অনন্যোপায় হয় গান্ধিজিকে হত্যা করলেন। এমনকি তিনি এটাও লেখেন, “সবচেয়ে ভালো হয় রামদাসও যদি কয়েকজন প্রকৃত গান্ধিবাদীকে নিয়ে জেলে আসতে পারেন, যাঁরা শুধু ক্ষমতার লোভে রাজনীতি করেন না, এবং যাঁদের সঙ্গে আলোচনায় নাথুরাম নিজের কোনও গুরুতর ত্রুটিবিচ্যুতি খুঁজে বের করতে পারবেন।” (Anyway I must request you to see me and if possible with some prominent disciples of your father, particularly those who are not interested in power politics, and to bring to notice my most fatal mistake. Otherwise, I shall always feel that this show of mercy is nothing but an eyewash.)
নাথুরামের এই প্রত্যুত্তর ছিল রামদাসের ওপর সূক্ষ্মভাবে চাপ দেওয়ার চেষ্টা এবং তাঁর আইনজীবিদের তরফেও এ ছিল এক কুশলী চাল। বলাই বাহুল্য, নাথুরামের এই উত্তর ড্রাফট করে দেন তাঁর কুশলী আইনজীবীরা, ইনামদার ও এন ডি ডাঙ্গে। ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করতে না পারা নাথুরাম নিজে ভালো ইংরেজি জানতেন না, তিনি মারাঠিতেই বেশি স্বচ্ছন্দ ছিলেন।
রামদাস নাথুরামের এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং তিনি বিনোবা ভাবে ও কিশোরীলালকে সঙ্গে নিয়ে সিমলা জেলে নাথুরামের সঙ্গে দেখা করতে যেতে চান। তিনি এই মর্মে চিঠি লিখে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর অনুমতি প্রার্থনা করেন। নেহেরু এই সাক্ষাতের বিরুদ্ধে মত দেন কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য রামদাসের আবেদনটি উপপ্রধানমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের কাছে পাঠিয়ে দেন৷
১৬ই জুন পণ্ডিত নেহেরুকে চিঠির উত্তর দেন সর্দার প্যাটেল, যার অংশবিশেষ এইরকম: “I have now received the correspondence which has passed between Ramdas and Godse as also a copy of his letter to you. I adhere to my previous view that he should not see Godse. As it is, there is every likelihood of an attempt being made to treat him as a martyr. The discussion which Ramdas has proposed to have would invest the last days of Godse with a certain amount of glory. To me, it appears somewhat quixotic that any attempt should be made to convince a man who has done such a dastardly crime and takes pride in it.”
অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে বল্লভভাই প্যাটেল কোনওভাবে অপরাধী নাথুরামকে শহিদের গৌরব দিতে রাজি ছিলেন না৷ গান্ধিহত্যার পরিকল্পনা তাঁর একার সিদ্ধান্ত তাই এর দায়ও শুধুমাত্র তাঁরই, সম্মিলিতভাবে কোনও ষড়যন্ত্র করা হয়নি- আদালতে নাথুরাম আগাগোড়া এই মিথ্যা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছিলেন। রামদাস গান্ধিও সম্ভবত এই কথায় বিশ্বাস করেছিলেন এবং নাথুরামের হৃদয় পরিবর্তনের চেষ্টা করেছিলেন। তিনি অনুশোচনায় দগ্ধ নাথুরামকে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নাথুরাম এক মুহূর্তের জন্য নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করেননি। প্যাটেল অবশ্য গোডসের এই মিথ্যাচারে ভোলেননি। প্যাটেল এই সময়েই তৎকালীন গভর্নর জেনারেল রাজাজী বা চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারীকে লেখেন, “The two prisoners have not during the trial or subsequently expressed the least sign of regret or repentance although by age and education they were quite fitted to realise the enormity of their crime…. There is therefore to be no question but that the law must take its course in both these cases.”
রামদাস ও নাথুরামের মধ্যে পরে আরেকবার চিঠির আদানপ্রদান হয়েছিল। নাথুরাম আবার অনুরোধ করেছিলেন, আমার ফাঁসির একদিন আগে হলেও আপনি আসুন। কিন্তু রামদাস ও নাথুরামের কোনও দিন দেখা হয়নি।
ভারত তখনও একটি ব্রিটিশ ডোমিনিয়ন, অর্থাৎ ইংলণ্ডেশ্বরের অধীনে একটি দেশ, তাই শাস্তিদান বা মার্জনা করার সর্বোচ্চ অফিস ছিল ইংল্যান্ডের প্রিভি কাউন্সিল। নাথুরামসহ বাকি অপরাধীরা সকলে প্রিভি কাউন্সিলে আপিল করেন। গোডসের ইচ্ছা ছিল তিনি কোনওভাবে প্রিভি কাউন্সিলে নিজের বক্তব্য পেশ করার সুযোগ পেলে বৃহত্তর জনতার মনোযোগ পাবেন, এমনকি নিজেকে প্রকৃত দেশপ্রেমী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার আরেকটি সুযোগ পাবেন। ১৯৪৯ সালের ১২ অক্টোবর প্রাথমিক শুনানির দিনই প্রিভি কাউন্সিল এই আপিলের আবেদন প্রত্যাখান করে। ১৫ নভেম্বর, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ আম্বালা জেলে নাথুরাম গোডসে ও নারায়ণ দত্ত আপ্তেকে ফাঁসি দেওয়া হয়। ঘাড় ভেঙে আপ্তের তৎক্ষনাৎ মৃত্যু হয়। নাথুরাম ১৫ মিনিট ধরে যন্ত্রণা পেয়ে মারা যান। মৃত্যুদণ্ড গ্রহণ করার পূর্ব মুহূর্তে দুজনেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রার্থনা মন্ত্রের প্রথম চার লাইন আবৃত্তি করেন। নাথুরাম আমৃত্যু একজন স্বয়ংসেবক ছিলেন সেটা আরেকবার প্রতিষ্ঠা পেল। কিন্তু নারায়ণ আপ্তের জন্য এটাই ছিল তাঁর জীবনের প্রথম ও শেষবারের মতো আরএসএস-এর প্রার্থনা মন্ত্রোচ্চারণ, কারণ তিনি হিন্দু মহাসভার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও কখনও আরএসএস-এর সদস্য পদ নেননি।
নাথুরাম গোডসে তাঁর জীবৎকালে দেশপ্রেমী বীর শহিদের সম্মান পাননি। মৃত্যুর প্রায় সত্তর বছর পর থেকে তিনি ধীরে ও গোপনে রাষ্ট্রীয় পুনর্বাসন পেতে শুরু করেছেন। লাল কেল্লায় বিচার চলাকালীন নাথুরামের মতাদর্শের সমর্থকেরা বিচারক আত্মা চরণকে বেনামি চিঠি লিখে খুনের হুমকি দিত, তারাই এখন স্বনামে প্রতিষ্ঠিত। নাথুরামের মন্দির গড়ে উঠেছে এ দেশে। প্রতি বছর ৩০ ডিসেম্বর বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন গান্ধিহত্যার ঘটনাটি পুনরাভিনয় করে দেখায়, ঠিক যেমন প্রতিবছর দশেরায় দিল্লিতে রাবণ বধ উপযাপন করা হয়। আসলে যে সমস্ত সাম্প্রদায়িক ও বিচ্ছিন্নতাবাদী উপাদানগুলি সমাজে উপস্থিত থাকলেও প্রধানত অপ্রকাশ্য ছিল, শাসকের বদান্যতায় ও মেরুকরণের পরিবেশে তারা আড়াল ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। দুটি বিপরীতধর্মী মতাদর্শের লড়াই ১৯৪৭-এর আগে পরে চলছিল, পঁচাত্তর বছর পেরিয়ে আজও চলছে। কে জেতে, কে হারে – তার ওপর ভিত্তি করে ভারতবর্ষের আত্মাকে আমাদের আরও একবার চিনে নিতে হবে৷
তথ্যসূত্র
১. Dhirendra K. Jha, ‘Gandhi’s Assasin: The making of Nathuram Godse and his idea of India’, Penguin Random House, 2021.
২. Ashok Kumar Pandey, ‘Why They Killed Gandhi: Unmasking the Ideology and the Conspiracy’, Speaking Tiger, 2022.
৩. Appu Esthose Suresh and Priyanka Kotamraju, ‘The Murderer, The Monarch and The Fakir: A New Investigation of Mahatma Gandhi’s Assassination’, Harper Collins India, 2021.
৪. Tushar A. Gandhi, ‘Let’s Kill Gandhi: A Chronicle of His Last Days, The Conspiracy, A Murder, Investigation, Trials and The Kapur Commission’, Rupa Publications India, 2021.
৫. Nathuram Godse, ‘Why I Assasinated Mahatma Gandhi’, Surya Bharati Prakashan, 2021.
একটি অসাধারণ নিবন্ধ। এমন আরও অনেক লেখা এখন প্রয়োজন। যে গোয়েবলসিয় মিথ্যা প্রচারের শিকার আমরা তার থেকে মুক্তির পথ দেখাতে এই লেখাটি এক দিশারী বিশেষ। লেখক কে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই।
আন্তরিক ধন্যবাদ।
চমৎকার এবং সময়ের জন্য নিতান্ত প্রয়োজনীয় লেখা!
আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
খুব কোমল সুরে নিজের বক্তব্য পেশ করেছেন লেখক। গান্ধিহত্যা, নাথুরাম গোডসের ফাঁসির বিবরনের সঙ্গে সঙ্গে ভারতবাসীর প্রতি একটি আহ্বান যেন অনুরণিত হচ্ছে। যা অব্যক্ত, শুধু বোঝার জন্য।
প্ৰবন্ধটার শেষ অনুচ্ছেদটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সভারকর নথুকে ত্যাগ করলেন। আর এই “দেশদ্রোহী” প্যাটেলের মূর্তি বানাচ্ছেন মোদিজি।
এরা কদিন পরে একটা রুটিন করে ফেলবে। শনি রবি গান্ধীপুজো। সোম মঙ্গল প্যাটেলপুজো। বুধ বৃহস্পতি শুক্রবার নাথুরাম আর সাভার্করপুজো।
জনগণ চাঁদা দেবে, হাততালি দেবে। আদানি ঝেড়ে ফাঁক করবে।
চমৎকার প্রতিবেদন।
আজকের দিনে ভীষন প্রাসঙ্গিক।
অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ লেখা। সমৃদ্ধ হলাম।
প্রয়োজনীয় লেখা
মনে হলো শেষ পর্যন্ত বাঁচার চেষ্টাই করেছিলেন নাথুরাম। এমনকি হতে পারে না যে, তিনি গান্ধীহত্যায় মূল কারণ বা আদর্শটিকে হৃদয় দিয়ে হয়তো আত্মস্থ করতে পারেন নি। তখন বাংলা আর পঞ্জাব প্রদেশ জ্বলছে বিভৎস সাম্প্রদায়িক হিংসার আগুনে। বিচলিত জাতির পিতা ছুটে গেছেন দাঙ্গা থামাতে। ব্যর্থ হয়েছেন। চান নি ভারত ভাগ। চেয়েছিলেন দেশভাগ যদি হয়, তা যেন তাঁর মৃতদেহের ওপর দিয়েই হোক। অথচ রক্ত ক্ষয় নিবারণে দুটি পৃথক দেশ সৃষ্টি ছিলো অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। চেয়েছিলেন অহিংসার মন্ত্র প্রয়োগ ভারতভূমিকে ব্রিটিশ কবলমুক্ত করতে। আসলে বিশালতায় তিনি তাঁর নীতিকে মানুষের প্রাণের আগে বসিয়েছিলেন। অনেকের মতে “ আপনি আচরি ধর্ম” নিজের জীবনে ব্রাত্যই ছিলো। তাই নাথুরাম না বুঝেও ঠিক কাজ করেছিলেন।
অসাধারণ একটি প্রতিবেদন যা হিন্দুত্ববাদীদের মুখে ঝামা ঘষে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট! কিন্তু মুসকিল হল এঁরা ইতিহাস বিকৃত করেন, সত্যিটা মানতে চাননা!
গডসের বাঁচার থেকে এটা চেয়েছিল যাতে তাকে সবাই দেশদ্রোহী না ভেবে তার এই হত্যার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ কারণ টা সবার সামনে আসুক। তার এই কারণটা কোথায়ও গিয়ে সঠিক ছিল। আমরা স্বাধীনতা চড় খেয়ে নয় চড় মেরে পেয়েছি। আর জাতির এই চড় মারার অভ্যেস টা গান্ধীই ট্যাগ করিয়েছে, আর যার ফল ভোগ করছে ৩ টি দেশিই। আমরা নাম মাত্র স্বাধীন, আমরা এখন কারোর অধীনেই চলতে অভ্যস্ত।
ভারতকে নেহরু, প্যাটেল, আজাদেরা গণতান্ত্রিক সমাজবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন বলেই স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধী স্বয়ংসেবকেরা একাধিকবার ভারতের সর্বোচ্চ পদে বসার সুযোগ পেয়েছে। গান্ধীকে হত্যা করেও গান্ধীকে পৃথিবী থেকে মুছে ফেলা যায়নি, তার প্রমাণ কট্টর গান্ধীবিরোধী হয়েও দেশে, বিদেশে গান্ধীকে আশ্রয় করেই নিজেকে আড়াল করেন বর্তমান শাসক। চারিদিকে ভারতবিরোধী কর্মকাণ্ডকে জাতীয়তাবাদী বলে চালানোর চেষ্টা চলছে। অগণতান্ত্রিক উপায়ে বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠানকে দখল করে তার খোল নলচে পাল্টে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে ব্যস্ত সংঘ পরিবারের সদস্যরা। দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন করলেই লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থাকে। শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি এখনও মেরুদন্ড সোজা রেখে কাজ করছেন, তাই সাধারণ মানুষ ভরসা পায়। জয় ভারত।