সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

এশিয়ার শক্তিবিন্যাসে মুঘল বিদেশনীতির অবদান

এশিয়ার শক্তিবিন্যাসে মুঘল বিদেশনীতির অবদান

নবাঙ্কুর মজুমদার

জুন ১৭, ২০২৩ ৯৭০ 16

মাস আষ্টেক আগে দিল্লি থেকে একা ফিরছি। ট্রেনে। নিউ দিল্লি ষ্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে দেখি আমার কুপে পাঁচটা ছেলে-মেয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে। ছয় নম্বর সিটটা আমার। দেখে মনে মনে একটু আশঙ্কিতই হলাম। একুশ বাইশ বছরের এতগুলো বাচ্চা ছেলে-মেয়ে। হুল্লোড়ের চোটে আমার জার্নিটা মাটি না হয়! ট্রেন ছাড়তেই একটু গুছিয়ে বসে আলাপ করে জানলাম, এরা সবাই ইউপিএসসি-র প্রস্তুতির জন্য দিল্লির কোনও এক কোচিং সেন্টারে পড়াশুনো করে, কয়েকদিনের জন্য বাড়ি ফিরছে। ট্রেন গতি নিয়েছে। ওরা নিজেদের মধ্যে মশগুল দেখে আমিও একটা বই খুলে আরাম করে বসলাম। আমার এখনও মনে আছে, বইটা ছিল ‘মুঘল রিলেশনস উইথ পার্সিয়া’। কয়েকটা পাতা এগিয়েছি সবে। চোখ তুলে দেখি ওরা আমার বইটার দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে কথা বলছে।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কিছু বলবে?”

ওদের মধ্যে একটা মেয়ে, পরে নাম জেনেছিলাম, টুকুমনি ওঁরাও, আমাকে বলল, “কালই আমাদের ইতিহাস ক্লাসে মুঘল বিদেশ নীতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল, কিন্তু এই বইটা আমি পড়িনি। একটু দেখতে পারি?”

“নিশ্চয়ই।”

বইটা বেশ কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলো টুকু। উল্টোদিকের ছেলেটা ওর হাতের বইটার দিকে তাকিয়ে বলল, “মুঘল বিদেশ নীতির একটা বড় অংশ জুড়ে কিন্তু পারস্যের সাফাভিদরা ছিল।”

টুকু বই থেকে চোখ তুলে তাকালো। বলল, “শুধু সাফাভিদরা কেন? মুঘল বিদেশনীতি সবটা বুঝতে হলে সে যুগের এশিয়ার চারটে বড় শক্তি—ভারতের মুঘল, পারস্যের সাফাভিদ, পশ্চিম এশিয়ার অটোমান আর মধ্য এশিয়ার উজবেকদের পারস্পরিক বোঝাপড়ার ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে।”

এবারে বাকি সবাই দেখলাম নড়েচড়ে বসল।

টুকু বলল, “দ্যাখ সৃঞ্জয়, কূটনীতিই বল, আর বিদেশনীতিই বল, স্থায়ী বন্ধু বা শত্রু বলে যে কিছু হয় না, সংশ্লিষ্ট দেশের স্বার্থই যে শুধুমাত্র অগ্রাধিকার পায়, এই আপ্তবাক্য কিন্তু সেকালেও সমানভাবে প্রযোজ্য ছিল”।

কথা বলতে বলতে দেখলাম, মেয়েটি কাগজ কলম বের করে ফেলেছে। আমার ‘মুঘল রিলেশনস উইথ পার্সিয়া’র ওপর অবলীলায় তার কাগজটা রেখে খসখস করে লিখতে আরম্ভ করল টুকু। ওর মুখ আর হাত দুটোই সমান তালে চলছে দেখলাম। বাকিদের দিকে তাকিয়ে বলল, “যে চারটে তুর্কো-মোঙ্গল শক্তির নাম বললাম, তাদের আন্তঃসম্পর্ক বুঝতে হলে আগে অটোমান-সাফাভিদ আর মুঘল-অটোমান সম্পর্ক দুটো আলোচনা করা যাক।” বলতে বলতে কাগজে লিখে ফেলল, ‘অটোমান-সাফাভিদ সম্পর্ক’।

“অটোমান সুলতান প্রথম সেলিম সিরিয়া, মিশর থেকে শুরু করে মক্কা-মদিনা পর্যন্ত নিজের শাসনাধীনে নিয়ে আসেন। এরপর তিনি পাদশা-ই-ইসলাম আর খলিফা – ইসলামী ধর্মজগতের অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ দুটো উপাধি নিজেই হাসিল করে নেন। এতে অটোমানদের উচ্চাশার পারদ আরো চড়ে গেল। তাদের নজর পড়ল ইউরোপের উপর। কিন্তু ইউরোপে দৃষ্টি দেবার আগে পোর্তুগিজদের নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি ছিল। পোর্তুগিজরা পারস্য ও লেভ্যান্ট থেকে মশলা বাণিজ্য নিজেদের স্বার্থে সরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছিল। তাদের আটকাতে না পারলে অটোমানদের প্রচুর ব্যবসায়িক ক্ষতি হত”।

সৃঞ্জয় নামে ছেলেটি জিজ্ঞাসা করল, “লেভ্যান্ট মানে তো পূর্ব ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী অঞ্চল?”

“একদম ঠিক”, টুকু বলে।

“কিন্তু অটোমানদের এসব কাজের মধ্যে পারস্যের সাফাভিদরা কোথায়?” সৃঞ্জয় আবার জিজ্ঞেস করে।

“আছে, আছে”। টুকু বলে চলল —“এসব ডামাডোলের সুযোগে সাফাভিদরা আনাতোলিয়ায় শতাধিক ধর্মপ্রচারককে পাঠিয়ে সেসব অঞ্চলের তুর্কদের শিয়া সম্প্রদায়ে ধর্মান্তরিত করা শুরু করেছিল। আমাদের ভুললে চলবে না, অটোমানরা সুন্নি আর সাফাভিদরা ছিল শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমান। তো এসব ধর্মের সুড়সুড়ির পাশাপাশি ব্যবসায়িক স্বার্থও ছিল। বাগদাদ ও বসরা অঞ্চল, মানে আজকের ইরাক আর উত্তর ইরানের এরিভান ইত্যাদি যেসব জায়গায় প্রচুর রেশম উৎপাদন হত, সেসব জায়গা দখল করাকে কেন্দ্র করে অটোমান আর সাফাভিদদের মধ্যে লড়াই চলছিল। পরপর অনেকগুলো যুদ্ধের পর ১৫১৪ সালে অটোমান সুলতান সেলিম (১ম) সাফাভিদ শাসক শাহ ইসমাইলকে চলদিরনের যুদ্ধে হারিয়ে তাঁর তৎকালীন রাজধানী তাবরিজ সামান্য কিছুদিনের জন্য হলেও কেড়ে নেন। অটোমানদের হাতে যখন সাফাভিদরা নাকানিচোবানি খাচ্ছিল, তখনই আবার সুযোগ বুঝে উজবেকরা মধ্য এশিয়া থেকে সাফাভিদদের খেদিয়ে দেবার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল। ফলে দুদিকের সাঁড়াশি আক্রমণের চাপে সাফাভিদরা উদীয়মান মুঘল শক্তির সাথে হাত মেলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।”

এতক্ষণ জানালার ধারে মৌলি চুপ করে বসে টুকুর কথা শুনছিল। এবার টুকুকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করল, “দাঁড়া দাঁড়া, আমার কাছে কেমন যেন ধোঁয়াশা লাগছে, একটু ক্লিয়ার করে দে, তুই তো বললি ১৫১৪ সালে শাহ সেলিম শাহ ইসমাইলকে যুদ্ধে হারিয়েছিলেন। তখন মুঘল সাম্রাজ্য কোথায়?”

“আমি তো একবারও বলিনি যে, তক্ষুণি সাফাভিদরা মুঘলদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ফেলল! এই দুই ঘটনার মাঝে আমু দরিয়া আর সির দরিয়া দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। অটোমান সিংহাসনে সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট বসেছেন। বাবর সাইবানি খান (উজবেক)-এর কাছে হেরে ফারগানা আর সমরখন্দ পুনর্দখলের চেষ্টা ছেড়ে কাবুল দখল করে হিন্দুস্তান জয়ের স্বপ্ন দেখছেন। এ ব্যাপারে তিনি শাহ ইসমাইলের কাছ থেকে সাহায্যও পেয়েছিলেন। ১৫২৪ সালে শাহ ইসমাইল ফৌত হয়ে গেছেন আর পারস্যের তখৎ-এ শাহ তাহমাস্প (১ম)। কিছুদিনের মধ্যেই বাবর হিন্দুস্তান দখল করবেন। সাফাভিদ-মুঘল সম্পর্কটা কিন্তু রয়েই গিয়েছিল।”

“আচ্ছা, মুঘল-সাফাভিদ জটিল বিন্যাসে পরে ঢুকবো, আগে মুঘল-অটোমান সম্পর্কটা আমাদের কাছে খোলসা কর”— এক নিঃশ্বাসে সৃঞ্জয় বলে ফেলে।

অনেকক্ষণ ধরে চায়ের ক্ষিদে পাচ্ছে। এতক্ষণে চা ওয়ালাকে দেখে যেন ধড়ে প্রাণ এলো। এত মজাদার আলোচনা চা ছাড়া হয়? সবাইকে চা দিতে বললাম। কাপে একটা আরাম চুমুক দিয়ে দেখি ততক্ষণে টুকু চায়ের কাপটা বাঁ হাতে নিয়ে ডান হাতে কিছু লিখল। উঁকি মেরে দেখি লিখেছে, ‘মুঘল-অটোমান সম্পর্ক’।  

পেন রেখে চায়ের কাপটা ঠোঁটে ছুঁইয়ে সে শুরু করে, “চাঘতাই তুর্কি বাবর অটোমান তুর্কি সংস্কৃতির সাথে যথেষ্ট একাত্ম বোধ করতেন। কিন্তু সাইবানিদ উজবেকদের সাথে অটোমানদের মৈত্রী সম্বন্ধ তাঁর জন্য খুব একটা স্বস্তিদায়ক ছিল না। পরবর্তীকালের মুঘল সম্রাটরাও কিন্তু এ সম্বন্ধ নিয়ে যথেষ্ট সাবধানী ছিলেন। হুমায়ুন তাঁর নির্বাসন কালে পারস্যে থাকাকালীনও অটোমানদের সাহায্য চাননি। তবে দ্বিতীয়বার সিংহাসন ফিরে পেয়ে হুমায়ূনের দৃষ্টিভঙ্গির বদল ঘটে। এবারে তিনি স্থায়ীভাবে অটোমানদের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। অটোমান অ্যাডমিরাল সিদি আলি রেইসকে তাঁর যুদ্ধকৌশল ও সাহিত্যপ্রতিভার জন্য সম্মানিত করে মুঘল দরবারে উঁচু পদ দেন। এ সময় হুমায়ুন অটোমান সুলতান সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্টকে খলিফা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।”

“আচ্ছা, তখনকার দিনে কি দূতাবাস বা দূত বিনিময়ের কনসেপ্ট ছিল?”—সৃঞ্জয় জিজ্ঞেস করে।

সৃঞ্জয়ের পাশে বসা ভারবি বলে ওঠে, “এটার উত্তর আমি দিচ্ছি। সেকালে রাষ্ট্রদূতদের বলা হত সাফির বা এলাচি। তারা বাদশাহের চিঠির সাথে প্রচুর উপহার সামগ্রী, প্রতিনিধিমণ্ডল ইত্যাদি নিয়ে বৈদেশিক রাজদরবারে উপস্থিত হতেন। আজকের দিনের মত বিভিন্ন প্রোটোকল মেনে তাদের অভ্যর্থনা করা হত। সেযুগেও বডি ল্যাঙ্গোয়েজের গুরুত্ব ছিল। যেমন দ্যাখ, জাহাঙ্গির শাহ আব্বাসকে খান আলম নামে এক জবাবি দূত পাঠিয়েছিলেন, যাঁর সঙ্গে গেছিল ১২০০ লোক, প্রচুর ভারতীয় জীবজন্তু, অগাধ উপহার সামগ্রী ইত্যাদি। দরবারের উচ্চপদস্থ অভিজাতরা বাইরে বেরিয়ে এসে এদের অভ্যর্থনা করেন ও স্বয়ং শাহ আব্বাস খান আলমকে আলিঙ্গন করে ভাই বলে সম্বোধন করেছিলেন। তো যাই হোক, ঘনিষ্ট রাজশক্তিগুলির মধ্যে নিয়মিত দূত বিনিময় চলত, এমনকি স্থায়ী দূতাবাসও স্থাপন করা হত।”

টুকু এতক্ষণ ভারবির কথা শুনছিল। এবারে ও ওর নিজের কথার রেশ ধরে বলতে শুরু করে, “আকবরের সময় অটোমান-মুঘল সৌহার্দ্য আবার নষ্ট হয়। মধ্য এশিয়ায় আবদুল্লা খান উজবেকের উত্থান আর তাতে অটোমান সমর্থন আকবরকে সন্দিহান করে তুলছিল। কাছাকাছি সময়েই তিনি অটোমান খিলাফতের বিপরীতে গিয়ে নিজেকে ইসলামের সর্বোচ্চ ব্যাখ্যাকারী হিসেবে ঘোষণা করেন।”

সৃঞ্জয় সায় দিয়ে বলল, “এতে কিন্তু আখেরে মুঘল সাম্রাজ্যের ক্ষতি হয়েছিল। উজবেক প্রোপাগান্ডায় এবারে অটোমানরা বেশি করে ইন্ধন দিতে শুরু করে, ফলে উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে গোলমাল পাকিয়ে ওঠে। আবার ভারত থেকে মক্কা যাওয়ার পথে তীর্থযাত্রীদের উপর পোর্তুগিজ জলদস্যুদের উপদ্রব সামলাতেও অটোমানরা এগিয়ে আসার প্রয়োজন বোধ করেনি। পরবর্তীতে শাহজাহান ইস্তাম্বুলের সাথে নতুন করে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। কান্দাহার নিয়ে গণ্ডগোলের জেরে তিনি সাফাভিদদের বিরুদ্ধে সুন্নি সৌভ্রাতৃত্বের জাহাঙ্গিরী আদর্শকে নতুন করে বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টায় ছিলেন। তবে তাঁর মধ্য এশিয়া অভিযান এ আশায় জল ঢেলে দেয়। সম্পর্ক বিগড়ে যায়। এরপর শাহজাহান আমীর-আল-মুমিনিন উপাধি নিলে তা অটোমানদের খিলাফতের দাবিতে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ায় উভয়ের সম্পর্ক আরো জটিল হয়ে ওঠে।”

“অটোমান সুলতান মুরাদ (৪র্থ) সম্পর্কের শীতলতা কাটিয়ে শাহজাহানাবাদ-ইস্তাম্বুলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় ছিলেন। কারণ তাগিদটা তাঁর দিক থেকেও ছিল। শাহজাহানের রাজত্বকালের শেষ পর্যায়ে আবার কূটনৈতিক সম্পর্ক জোড়া লাগলেও অদ্ভুত ভাবে ঔরঙ্গজেব তা একেবারে নষ্ট করে দেন। সুলতান সুলেমান (২য়)-এর আবেদনেও তিনি সাড়া দেননি।”

মৌলি টুকুর মুখের কথাটা কেড়ে নিয়ে বলে ওঠে, “ভাবতে অবাক লাগে যখন দেখি, ঔরঙ্গজেব জলদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পেতে মাস্কাট-এর জলদস্যুদের সাথে চুক্তি করলেও অটোমানদের সাহায্য নেননি, যেটা অনেক বেশি কার্যকরী হতে পারতো। ঔরঙ্গজেব হয়তো অটোমানদের সাথে হাত মেলালে ভারতে ইউরোপীয়দের উচ্চাভিলাষকে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারতো। যদিও সবটাই সম্ভাবনার কথা।”

“ঠিকই”— টুকু বলে। “ফারুকশিয়রের সময়ে নাদির শাহের ভয়ে সম্পর্ক জোড়া লাগানোর একটা তাগিদ উভয় তরফেই ছিল। এরপর মুঘল গৌরব ধুলোয় মিশে যাওয়ায় বিদেশনীতিতেও তার প্রভাব পড়বে এটা স্বাভাবিক”।


“এবারে বাকি রইল মুঘল-সাফাভিদ আর মুঘল-উজবেক সম্বন্ধ নিয়ে কাটাছেঁড়া। তবেই তোমার শুরু করা এশিয়ার বিগ ফোরের বৃত্ত সম্পূর্ণ হবে। কিন্তু সেসব কাল সকালে। কটা বাজে খেয়াল আছে? অন্য কুপের যাত্রীরা এবারে আমাদের পেটাবে। খেয়ে দেয়ে তাড়াতাড়ি আলো নেভাও। তার আগে বাবা ও মা-গণ, আমার ‘মুঘল রিলেশনস উইথ পার্সিয়া’ বইটা ফেরত দাও তো বাপু, মানে মানে ব্যাগে ঢোকাই!”—আমার কথার ধরনে সবাই হেসে ওঠে। ট্রেন কানপুর ষ্টেশনে এসে দাঁড়িয়েছে।

পরদিন সকাল। ট্রেনের গতি ১০০ কিলোমিটার ছুঁইছুঁই। আর ঘন্টাখানেকের মধ্যেই ধানবাদ ঢুকবে। এরই মধ্যে সবাই জেগে উঠে বইয়ে মুখ গুঁজে যে যার বাংকে পড়ে রয়েছে। ধন্য এদের একাগ্রতা!  টুকুর সাথে চোখাচোখি হতেই সুপ্রভাত জানালো, কথায় কথায় বলল, ফরেন সার্ভিস জয়েন করতে চায়। সেজন্য আপ্রাণ খাটছে। বাকিরাও তাই। আমি ভাবছিলাম, এই বয়সের ছেলেমেয়ে, ফোন দেখছে না, গান শুনছে না, কোথাকার কোন মুঘল সাফাভিদ এদের ফরেন পলিসি নিয়ে বকবক করে যাচ্ছে। আজকের দিনেও এই ডেডিকেশন বেঁচে আছে তাহলে! ভারবি নামে ছেলেটির ডাকে সংবিৎ ফেরে। ইতিমধ্যে সবাই বাংক থেকে নেমে এসে গুছিয়ে বসেছে। ভারবি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে বসে, “কাল তো টুকুর কথা শুনেছি, আজ মুঘল-সাফাভিদ সম্পর্ক নিয়ে আপনি কিছু বলুন। আপনার মুঘল রিলেশনস উইথ পার্সিয়াই বলে দিচ্ছে এ ব্যাপারে আপনার ইন্টারেস্ট আছে।”

টুকুকে দেখলাম সঙ্গে সঙ্গে কালকের কাগজটা বের করে লিখল, ‘মুঘল-সাফাভিদ সম্পর্ক’।

আমি একটু বিব্রত বোধ করি। এখনকার পড়াশুনোর মধ্যে থাকা ছেলেমেয়ে সব। আমি তো অর্ধেক হয়তো ভুলেই গেছি। যাইহোক শুরু করি, “মুঘল, সাফাভিদ আর উজবেকদের একটা ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্ক আছে। কিছু মিস হলে ধরিয়ে দিও।”

“সাফাভিদ আর উজবেকরা খুরাসান দখল করতে বারে বারে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছিল। খুরাসান ও ট্রান্সঅক্সিয়ানা ভারত, রাশিয়া, অটোমান সাম্রাজ্য আর ভূমধ্যসাগরের সড়কপথ নিয়ন্ত্রণ করত। তাই সকলের নজর ছিল এই অঞ্চলগুলির উপর। এছাড়া শিয়া-সুন্নি ধর্মীয় বিবাদ তো ছিলই। অন্যদিকে কেবল কান্দাহার ছাড়া সাফাভিদ-মুঘল বিরোধের আর কোনও জায়গা ছিল না বলে আমরা দেখব, বারে বারে এই দুই শক্তি একত্রিত হচ্ছে। আবার এদের জোট বাঁধতে দেখলেই উজবেকদের রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক, তাই তারা কখনও অটোমান, কখনো মুঘলদের দলে টানতে চেষ্টা চালাত, তাতে সাম-দান-দণ্ড-ভেদ কিছুই বাদ রাখত না। কাল টুকুমনি সাফাভিদ-মুঘল মৈত্রী সম্পর্ক তৈরির ব্যাপারে পারস্যের দিক থেকে উদ্যোগ নেওয়ার কারণ আলোচনা করেছে। যদিও উজবেকরা অনেক চেষ্টা করেছিল অটোমান-উজবেক-মুঘল ত্রিশক্তি সুন্নিজোট তৈরি করার, কিন্তু শক্তির ভারসাম্য নষ্ট হওয়া আর পারস্যের সাথে বাণিজ্য হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে মুঘলরা তাতে সায় দেয়নি। একমাত্র সমস্যার জায়গা ছিল কান্দাহার। কান্দাহারের অবস্থান মুঘল আর সাফাভিদ উভয়ের অর্থনৈতিক আর ভূ-কৌশলগত লাভ-ক্ষতির জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।  

কান্দাহার আধা স্বাধীন তৈমুরীয় মীর্জারা শাসন করতো। ১৫২২ সালে উজবেকরা খুরাসান আক্রমণের চেষ্টা চালালে বাবর কাবুল থেকে গিয়ে কান্দাহার দখলে নেন। পারস্য দরবার তখন পরিস্থিতির চাপে কোনো আপত্তি জানায়নি। এরপর হুমায়ুন শেরশাহের কাছে হেরে শাহ তাহমাস্পের দরবারে আশ্রয় নিলে মোক্ষম সুযোগ এসে গেল। শাহ তাহমাস্প শর্ত দিলেন, হিন্দুস্তানের তখৎ দখল করে হুমায়ুন যেন ভাই কামরানের কাছ থেকে কান্দাহার ছিনিয়ে নিয়ে পারস্যকে দান করেন। হুমায়ুন জানতেন কান্দাহারের ভূ-কৌশলগত গুরুত্বের কথা। তাই দ্বিতীয় বার সিংহাসনে বসে তিনি নানা অজুহাতে সময় কিনতে থাকেন। এরপর হঠাৎ তাঁর মৃত্যু হলে ডামাডোলের সুযোগে পারস্যের শাহ কান্দাহার দখল করে নেন। আকবর নিজের শক্তি সংহত করতে ব্যস্ত থাকায় প্রথম দিকে গা না করলেও উজবেকরা যখন খুরাসান দখলে নিল, উত্তর পশ্চিম সীমান্তের নিরাপত্তার জন্য আকবরকে বাধ্য হয়ে কান্দাহার জয়ের কথা চিন্তা করতে হয়। অপরদিকে উজবেকরাও কান্দাহারের দিকে হাত বাড়াবার চেষ্টায় ছিল। পারসিক-উজবেক সাঁড়াশি আক্রমণের ভয়ে কান্দাহারের দুর্গাধীশ আকবরের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন। পারসিকদের ভয় ছিল পাছে কান্দাহার উজবেকদের দখলে যায়। তারা যখন দেখল, তা নিজেরা দখলে না নিতে পারলেও অপেক্ষাকৃত নিরাপদ মুঘলদের হাতে গেছে, তখন তারা আর আপত্তি করার জায়গায় ছিল না। এ পরিস্থিতিতেও ভারত পারসিক সম্পর্ক, ব্যবসা-বাণিজ্য, দূত ও উপহার বিনিময় ইত্যাদি মসৃণভাবে চলতে থাকায় আস্তে আস্তে পারস্পরিক বিশ্বাসের ভিত তৈরি হচ্ছিল। কান্দাহার নিয়ে পারসিকদের মনে কি ছিল তা আপাত ভাবে মুঘলদের পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না। শাহজাদা সেলিম, যিনি ভবিষ্যতে বাদশাহ জাহাঙ্গির হবেন—যখন আকবরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের রাস্তায় গেলেন, তখন সুযোগ কাজে লাগাতে শাহ আব্বাস দু-দুবার কান্দাহার দখলের ব্যর্থ প্রয়াস করেছিলেন। সুবিধা হল না দেখে, জাহাঙ্গির আগ্রার সিংহাসনে বসতেই শাহ আব্বাস অন্য পথ ধরলেন। তিনি প্রচুর উপঢৌকন সহ ভারতে ডিপ্লোম্যাটিক মিশন পাঠালেন ও জাহাঙ্গিরকে নিজের ভাই বলে সম্বোধন করলেন। ধীরে ধীরে পারস্পরিক সম্পর্ক নিবিড় হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য ফুলে ফেঁপে উঠছিল। বহু হিন্দু, জৈন বণিক, মুলতানি ব্যাপারিরা তেহরান, শিরাজ, ইস্পাহান প্রভৃতি শহরে বসতি গড়ে ব্যবসা করতে লাগলেন। তাঁদের এমনকি মন্দির তৈরি, মূর্তি পূজার অধিকার দেওয়া হল। জাহাঙ্গির ভেবে নিলেন, এতই যখন ঘনিষ্ঠতা, তখন পারসিকরা নিশ্চয়ই কান্দাহার আক্রমণের কথা চিন্তা করবে না। বিশ্বাসের পলকা জমি তৈরি হতে স্বাভাবিকভাবেই কান্দাহারের নিরাপত্তায় শিথিলতা আসছিল। সুযোগের অপেক্ষায় থাকা পারসিকরা ১৬২২ সালে ঝটিতি আক্রমণে কান্দাহার দখল করে নিল।”

এতক্ষণে টুকুমনি মন্তব্য করে, “হিন্দি চিনি ভাই ভাইয়ের প্রথম সংস্করণ তাহলে হিন্দি পারসি ভাই ভাই?”

“ইতিহাস পুনরাবৃত্ত হয় জানিস না?”—সৃঞ্জয় ফুট কাটে।

“শাহ আব্বাস কিন্তু জাহাঙ্গিরের তিক্ততা কমাতে চেষ্টার কসুর করেন নি, তবে হারানো বিশ্বাস আর ফিরে আসেনি। ইতিমধ্যে আবদুল্লা খানের মৃত্যু হলে শাহ আব্বাস খুরাসান জয় করে মুখ ঘুরিয়ে পশ্চিম দিকে গিয়ে তুরস্কের কাছ থেকে বাগদাদ পর্যন্ত ছিনিয়ে নিতে সমর্থ হন। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ালো, পারসিকদের বিরুদ্ধে সুন্নি শক্তিজোটের পুরোনো চিন্তা আবার নতুন করে শুরু করতে হল। কিন্তু পারসিক আক্রমণের ভয়ে বুখারা ও বালখের উজবেক শাসক ইমাম কুলি দুমুখো নীতি নিয়ে মুঘলদের বিরুদ্ধে শাহকে প্ররোচনা দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবার কাবুলের মুঘল এলাকায়ও বারে বারে উজবেক আক্রমণ শুরু হয়েছিল। শাহজাহান যখন দেখলেন, কেউ সুন্নি শক্তিজোটের ব্যাপারে সিরিয়াস নন, তিনি একলা চলো নীতি নিয়ে পারসিক শাসনকর্তা আলি মর্দান খানকে উৎকোচ দিয়ে কান্দাহার দখল করে নেন। মুঘল কূটনীতির সাময়িক জয় হলেও কয়েকবছরের মধ্যেই শঠে শাঠ্যং মন্ত্রে পারসিকরা পাকাপাকিভাবে কান্দাহারের দখল নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। হতচকিত শাহজাহান তাঁর শাহজাদাদের দিয়ে তিনটে অভিযান চালিয়েও কান্দাহারের নিয়ন্ত্রণ আর নিজেদের কাছে নিতে পারেননি। তবে ঔরঙ্গজেব পরবর্তীকালে কান্দাহার বিবাদ জিইয়ে না রেখে পারসিকদের সাথে মোটের উপর সুসম্পর্ক রেখে চলতে চেয়েছিলেন। নাদির শাহের পারস্য দখলের আগে পর্যন্ত এই বোঝাপড়া থেকে যায়।”

কয়েক ঘন্টার জার্নিতে কখন যে বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলোর মনন-চিন্তনের সঙ্গী হয়ে উঠেছি বুঝতে পারিনি। তখন থেকে লক্ষ্য করছি, টুকু কিন্তু টুকটুক করে কাগজে কিছু না কিছু লিখেই চলেছে। বললাম, “মুঘল-পারসিক সম্পর্কের একটা রূপরেখা তো পেলে, এবারে তোমাদের মধ্যে কেউ একজন শেষ ধাপ অর্থাৎ মুঘল-উজবেক রসায়ন নিয়ে কিছু বলো।”

টুকুমনি অনুভবকে বলল, “তুই বল না কেনে!” মুখ ফস্কে নিজের ভাষা বেরিয়ে যেতেই একটু লজ্জা পেল মনে হল। সামলে নিয়ে আবার বলল, “অনুভব তুই বল। পরশু ক্লাসে তো অনেক বকবক করছিলিস।”

বলতে বলতে টুকু তার কাগজে লিখে ফেলল, ‘মুঘল-উজবেক সম্পর্ক’।  

অনুভব হেসে বলল, “বেশ। আমারও প্র্যাক্টিস হবে’খন। শাহজাহানের বালখ অভিযানকে কিন্তু মুঘল বিদেশনীতির চূড়ান্ত সাফল্য আর চূড়ান্ত ব্যর্থতা দুভাবেই ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু ওটাতে যাবার আগে মোটের ওপর মুঘল-উজবেক সম্পর্কটা জানা জরুরি। ষোড়শ শতাব্দীর শেষদিকে আবদুল্লা খান উজবেকের উত্থান হয়। তিনি উজবেক খানাতের প্রধান হবার আগেই ১৫৭২-৭৩ সাল নাগাদ বালখ দখল করেন। এই বালখ আর বাদাখসান মুঘল উজবেক শক্তির মাঝে বাফারের কাজ করতো। উনি আকবরের কাছে মোট তিনবার কূটনৈতিক মিশন পাঠান। প্রথমবার সম্ভবত পারস্যের বিরুদ্ধে জোট প্রস্তাব আকবরকে দেওয়া হয়েছিল। আকবর সৌজন্যের সাথে সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। দ্বিতীয়বার শাহ তাহমাস্পের মৃত্যুর পর পারস্যে গোলযোগের সুযোগে আবদুল্লা খান আকবরকে প্রস্তাব পাঠান একযোগে দুদিক থেকে আক্রমণ করে পারস্য ভাগ করে নেওয়ার জন্য। তিনি আকবরকে এই সুযোগে কান্দাহার দখলেরও পরামর্শ দেন। তবে ত্রিশক্তি জোট প্রস্তাবে যে আকবর রাজি ছিলেন না তা তো টুকু গতকালই আমাদের জানিয়েছে।”

“আকবর উজবেকদের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সতর্ক ছিলেন, আবার মধ্য এশিয়ার রাজনীতিতে উৎসাহও দেখাচ্ছিলেন। বাদাখসানের তখৎ থেকে নাতির কাছে লাথি খেয়ে বিতাড়িত দাদু মীর্জা সুলেমানকে আকবর মুঘল দরবারে আশ্রয় দেন। কিছুদিনের মধ্যেই আবদুল্লা উজবেক বাদাখসান দখলে নিলে নাতিকেও দাদুর পিছু পিছু মুঘল দরবারে আশ্রয় নিতে হয়। এতদিনের বাফার অঞ্চল বালখ-বাদাখসান উজবেক দখলে যাওয়ায় মুঘল উজবেক সীমানা পাশাপাশি এসে যায়। এবারে আকবর সসৈন্যে সিন্ধু তীরে ঘাঁটি গাড়ায় আবদুল্লা খান তাঁর কাছে তৃতীয় বারের জন্য দূত পাঠান। এই দৌত্যের আসল উদ্দেশ্য ছিল, সাফাভিদদের বিরুদ্ধে তাঁর আসন্ন খুরাসান অভিযানে আকবরকে নিরপেক্ষ রাখা। দর কষাকষির জন্য এবারেও তিনি যৌথ আক্রমণের মৌখিক প্রস্তাব রাখেন। আকবর তো এ প্রস্তাব অনুমোদন করলেনই না, বরং তিনি পারসিকদের সাহায্য করার জন্য একদল মুঘল সৈন্য পাঠাবার পালটা প্রস্তাব দেন ও একাজে আবদুল্লা খানকে সহযোগিতার অনুরোধ জানান।”

“এসব কূটনীতির খেলা আর দূত চালাচালির মাঝেই খুরাসানের বেশিরভাগ অঞ্চল আবদুল্লা খানের হস্তগত হয়। তা দেখে আকবর তাঁর দূত হাকিম হুমানকে আবদুল্লা খানের কাছে পাঠিয়ে হিন্দুকুশ পর্বতমালাকে উভয়ের প্রাকৃতিক সীমানা হিসাবে মেনে নিতে অনুরোধ করলেন। এটা ছিল দু দলের কাছেই উইন উইন সিচুয়েশন। এর মাধ্যমে মুঘলরা বালখ ও বাদাখসানের মায়া ত্যাগ করবে, আবার উজবেকরা কাবুল কান্দাহারের দিকে নজর দেবে না, এই ছিল প্রস্তাবের নির্যাস। আকবর উজবেকদের নিয়ে এতোটাই সিরিয়াস ছিলেন যে, ১৫৮৪ সাল থেকে ১৫৯৮ সাল অর্থাৎ আবদুল্লা উজবেকের মৃত্যু পর্যন্ত তিনি লাহোরে থেকে গিয়েছিলেন। কিন্তু আবদুল্লার মৃত্যুর পর উজবেক খানাত কয়েকটি যুদ্ধবাজ অঞ্চলে ভাগ হয়ে যায়, ফলে মুঘল সীমান্তের নিরাপত্তাও নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।”

“আবদুল্লা খানের মৃত্যু মধ্য এশিয়ায় ইমাম কুলির রাস্তা পরিষ্কার করে দিয়েছিল। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সাইবানিদ না হয়েও ইমাম কুলি নিজেকে বুখারা ও বালখের স্বাধীন শাসক রূপে ঘোষণা করেন। কিন্তু এরপরে তিনি জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করে বসলেন। ইমাম কুলি বুখারা নিজের হাতে রেখে ছোট ভাই নজর মহম্মদকে বালখ ও বাদাখসানের শাসক পদে বসিয়ে দিলেন। এইসব ভাগাভাগি আপাতত মুঘলদের খানিকটা স্বস্তি দিয়েছিল। ইতিমধ্যে সাফাভিদ-মুঘল মৈত্রী চরমে ওঠায় উজবেকরা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তাই তারা আজকের ভাষায় ট্র্যাক টু ডিপ্লোম্যাসি শুরু করে। ইমাম কুলির মা এবং নূরজাহানের মধ্যে উপহার ও দূত বিনিময় হতে থাকে।”

এবারে টুকু মৌলিকে উদ্দেশ্য করে বলে, “দেখেছিস মৌলি, শুধু মুঘল হারেমই সুযোগ পেলে সিংহাসনকে নিয়ন্ত্রণ করতো না, উজবেক হারেমেও মহিলা রাজনীতিবিদের অভাব ছিল না।”

অনুভব আবার শুরু করে, “ইতিমধ্যে জাহাঙ্গিরের অতিরিক্ত মদ্যপান জনিত অসুস্থতা ও নূরজাহান চক্রের খবরে বিভ্রান্ত হয়ে উজবেকরা অন্য খেলা খেলছিল। তারা এবার পারস্যের শাহের কাছে মিত্রতা প্রস্তাব পাঠালো। অন্যদিকে ইমাম কুলির সেনাপতি ইয়ালিংটোশ মুঘল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বাজিয়ে দেখার জন্য কাবুল আক্রমণ করলেন। হেরে গিয়ে তিনি হাজারা ও আফগানদের মধ্যে বিদ্রোহ সৃষ্টির চেষ্টা করলেন। তাতেও খুব একটা সুবিধা হল না। মুঘলদের তাড়া খেয়ে এবারে তিনি খানিকটা এগিয়ে গজনি আক্রমণ করে বসলেন। এখানেও হারের মুখ দেখায় উজবেকদের মুঘল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্বন্ধে ধারণা পালটে যায়। আবার তারা মিত্রতা প্রস্তাব পাঠায়। উজবেকদের এই দোলাচল ও সুযোগসন্ধানী নীতি মুঘলরা ভাল করেই বুঝে গিয়েছিল। তাই যখন জাহাঙ্গিরের মৃত্যুর সুযোগে নজর মহম্মদ কাবুল আক্রমণ করেছিলেন, জবাবি হামলায় মুঘলরা কাবুলের সাথে সাথে বামিয়ানও দখল করে নেয়।”

“১৬৩৯ সালে ইমাম কুলি অন্ধ হয়ে গেলে নজর মহম্মদ দাদার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে সমগ্র উজবেক সাম্রাজ্য গ্রাস করেন। ফলে ইমাম কুলি পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। তবে এ সুখ নজর মহম্মদের বেশিদিন সইলো না। তাঁর খারিজম জয়ের ব্যস্ততার সুযোগে নিজের ছেলে বাপের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বুখারা দখল করে নিল। নজর মহম্মদের হাতে তখন শুধু বালখ। তাও যে কোনও সময়ে ছেলে কেড়ে নিতে পারে এই ভয়ে তিনি শাহজাহানের সাহায্য প্রার্থনা করলেন।”

“শাহজাহান এই সুযোগটুকুর অপেক্ষায় ছিলেন। শাহজাদা মুরাদের নেতৃত্বে এক সুবিশাল বাহিনী পাঠানো হল নজর মহম্মদকে সাহায্যের অছিলায়। তিনি নিজে অভিযান সফল করার জন্য লাহোর থেকে কাবুল চলে এলেন। শাহজাহান মুরাদকে পইপই করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন উজবেক জাত্যাভিমানের কথা। নজর মহম্মদ আনুগত্য দেখালেই যেন তাকে বালখের ব্যাপারে সহায়তা দেওয়া হয় এবং সুযোগ এলেই যেন নজর মহম্মদের হয়ে সমরখন্দ ও বুখারা জয়ের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু শাহজাদা মুরাদের অত ধৈর্য কোথায়? তিনি বালখে পৌঁছে কোনরকম অনুমতি নেওয়া তো দূরে থাক, নজর মহম্মদের সাথে যোগাযোগ পর্যন্ত না করে সসৈন্যে একেবারে দূর্গে ঢুকে পড়লেন। নজর মহম্মদ তখন দুর্গের ভেতরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, তাঁকে একরকম তাড়িয়ে দিয়ে মুরাদ দুর্গের দখল নেন। আগের সব পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে মুঘল বাহিনীকে পুরো বালখের দখল নিতে হয়। মুরাদের ভুলে তৈরি হওয়া এই বিব্রতকর পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুললেন নজর মহম্মদের ছেলে আবদুল আজিজ। তিনি ট্রান্সঅক্সিয়ানার উজবেক জনতাকে খেপিয়ে দিয়ে এক বিশাল বাহিনী নিয়ে মুঘলদের ঘিরে ফেলেন। মাথামোটা শাহজাদা এবারে ফিরে আসার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। স্বয়ং মুরাদের এই অবস্থা দেখে বেশিরভাগ মনসবদাররাও ফিরে আসার অনুমতি চাইলেন। এক ভয়ংকর পরিস্থিতি। শাহজাহান মুরাদের উপর প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে ঔরঙ্গজেব ও আমির-উল-উমারা আলি মরদান খানকে পাঠালেন। রণনিপুণ ঔরঙ্গজেব আমু দরিয়ার তীরে পৌঁছেই বুঝতে পারলেন তার ভাই কি গোলমালটাই না পাকিয়েছে। তিনি পরিস্থিতি বুঝে আমু দরিয়া পার না হয়ে এপারে বিশেষ বিশেষ জায়গায় সেনা সমাবেশ করলেন। গোলন্দাজ বাহিনীর নেতৃত্ব রইল তাঁর নিজের হাতে। এখন শুধু চুপচাপ বসে থাকা। এবারে আবদুল আজিজ আমু দরিয়া পার হয়ে বালখের দিকে এগোতেই মুঘল গোলন্দাজদের মুখোমুখি হলেন। একপেশে যুদ্ধে মুঘল বাহিনীর সামনে উজবেক সেনা দাঁড়াতেই পারলো না। বহির্ভারতে মুঘল সেনা বিপুল জয়ের স্বাদ পেল। তবে শাহজাহানের মনের মণিকোঠায় পূর্বপুরুষের ভূমি সমরখন্দ ও বুখারা জয়ের ইচ্ছা থাকলেও বাস্তববাদী ঔরঙ্গজেব বুঝতে পারলেন স্থানীয় মানুষের প্রতিরোধে তা সম্ভব নয়। এদিকে আবার রুক্ষ আবহাওয়ার জন্য মুঘল-রাজপুত মনসবদারেরা বালখে থাকতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে চলেছিলেন। সবদিক ভেবে শাহজাহান সেনা ফিরিয়ে আনা মনস্থ করলেন। কিন্তু তার আগে নজর মহম্মদ এসে যেন ঔরঙ্গজেবের কাছে আনুগত্য দেখায় এরকম অলীক দিবাস্বপ্নের শর্ত জুড়ে দেওয়া হল। ইতিমধ্যে শীতকাল এসে যাওয়ায় এবং রসদে টান পড়ায় মুঘল বাহিনী বালখকে অরক্ষিত ফেলে রেখে চলে আসতে বাধ্য হলো। এই হল শাহজাহানের মধ্য এশিয়া অভিযানের গল্প।”

এতক্ষণ হাঁ করে সকলে কথাগুলো গিলছিল। এবারে সৃঞ্জয় প্রশ্ন করলো, “তাহলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে মধ্য এশিয়া অভিযান পুরোপুরি ব্যর্থ হল?”

অনুভব টানা অনেকক্ষণ কথা বলে হাঁপিয়ে উঠেছে। তাই ওর হয়ে আমি উত্তর দিলাম, “পুরোপুরি ব্যর্থ ঠিক বলা যায় না। উজবেকরা কিন্তু মুঘল বাহিনীকে সরাসরি পরাজিত করতে পারেনি। জনরোষে আর রুক্ষ আবহাওয়ায় ফিরে আসতে বাধ্য হলেও উজবেক সাম্রাজ্য কিন্তু একেবারে ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছিল। আর তাই পরবর্তী ১০০ বছর কাবুল অঞ্চল বা মূল ভারতীয় ভূখণ্ড নিরাপদ ছিল। এটাকে কম প্রাপ্তি বলা যাবে না। তবে মধ্য এশিয়ার মরু অঞ্চল দখল করে অর্থনৈতিক লাভ কখনই হতো না সেটা শাহজাহান দেরিতে হলেও বুঝেছিলেন। কিন্তু এই নিস্ফলা অভিযানে মুঘল রাজকোষ খালি হওয়ার যোগাড় হয়েছিল।”

টুকু অনেকক্ষণ ধরে উসখুস করছে দেখে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “কিছু বলবে? ট্রেন কিন্তু আর ঘন্টাখানেকের মধ্যেই ঢুকে যাবে।”

টুকুমনি বলল, “শুরুটা কাল যখন আমি করেছিলাম, শেষটাও আমিই করি। বিগ ফোরের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে এত এত আলোচনা যে আমরা করলাম, তাতে দেখা যাচ্ছে বিদেশনীতিই বল, আর কূটনৈতিক সম্পর্কই বল, সবটাই নির্ভর করতো শাসকের চিন্তাভাবনার উপর। রিয়েল পলিটিক তাতে কতটা থাকত তা তর্কসাপেক্ষ, তবে দেশের প্রতিরক্ষা আর বাণিজ্য স্বার্থ যে পুরোদস্তুর ভাবা হতো তা তো দেখাই যাচ্ছে।”

আমার সেই অবিস্মরণীয় রেলযাত্রার পর অনেকগুলো মাস কেটে গেছে। এক ছুটির দুপুরে বইপত্র ঝাড়পোঁছ করতে গিয়ে একটা কাগজ খুঁজে পেলাম। খুলে দেখি ট্রেনের সেই টুকুমনির লেখা কাগজখানা। বালখ, বাদাখসান ইত্যাদি অঞ্চলের আজকের অবস্থান, রাজবংশাবলি… কথার ফাঁকে ফাঁকে সে অনেক কিছুই লিখেছিল। দেখতে পেয়ে আমি তার কাছ থেকে কাগজটা চেয়ে নিয়েছিলাম, ওদের সাথে কাটানো সময়ের স্মারক হিসেবে। আসলে সময় স্মৃতিকে ফিকে করে দেয়। তাই স্মারকের প্রয়োজন পড়ে। এলোমেলো ভাবে অনেক কথাই মনে আসছিল। হঠাৎ মুঠোফোনের শব্দে চমক ভাঙে। অচেনা নম্বর। ধরতেই ওপার থেকে ভেসে আসে এক উচ্ছসিত মেয়েলি গলা।

“হ্যালো, আমি টুকু বলছি। টুকুমনি ওঁরাও। চিনতে পারছেন? আমি পেয়ে গেছি। পেয়ে গেছি আমি। ইউপিএসসি। ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিস জয়েন করছি। অনুভবও পেয়েছে। ওর আইপিএস। খুশির খবরটা আপনাকে না জানিয়ে থাকতে পারলাম না! হ্যালো, হ্যালো! আপনি শুনতে পাচ্ছেন?”

আনন্দে আমার হাত অবশ হয়ে আসছে। ফোনটা পড়ে না যায়! চোখের কোনাটা চিকচিক করে উঠলো। শুভেচ্ছা জানাতে চাইলাম, কিন্তু মুখ দিয়ে শব্দ বেরোলো না। আবলুশ কালো ছিপছিপে মেয়েটার মুখ আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। আনন্দে উত্তেজনায় টুকুমনি কত কথা বলে চলেছে, কিছুই আমার কানে ঢুকছে না। শুধু কানের কাছে বেজে চলেছে কয়েকমাস আগে ওদের মুখ থেকে শোনা মুঘল, সাফাভিদ, উজবেক, রিয়েল পলিটিক, বিদেশনীতি…                            

বি. দ্র. টুকুমনির টুকরো কাগজের কিছু টুকরো-তথ্য সাথে জুড়ে দিলাম, যদি কারও কাজে লাগে —

  • বালখ—বর্তমান উত্তর আফগানিস্তান
  • বাদাখসান—বর্তমান উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তান, পূর্ব তাজিকিস্তানের গোরনো-বাদাখসান স্বশাসিত অঞ্চল, তাক্সকোরগান তাজিক স্বশাসিত অঞ্চল (চিন)
  • খুরাসান—বর্তমান উত্তর-পূর্ব ইরান, দক্ষিণ তুর্কমেনিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম আফগানিস্তান
  • বুখারা—বর্তমান দক্ষিণ-মধ্য উজবেকিস্তানের শহর
  • সমরখন্দ—জারাফশান নদীর তীরে বর্তমানে উত্তর-পূর্ব উজবেকিস্তানের শহর
  • ট্রান্সঅক্সিয়ানা—বর্তমান পূর্ব উজবেকিস্তান, পশ্চিম তাজিকিস্তান, দক্ষিণ কাজাখস্তানের একাংশ, তুর্কমেনিস্তানের কিছু অংশ এবং দক্ষিণ কিরঘিজস্তান। ভৌগোলিকভাবে দক্ষিণে আমু দরিয়া বা অক্ষু নদী ও উত্তরে সির দরিয়ার মধ্যবর্তী অঞ্চল।

তথ্যসূত্র

  1. Riazul Islam, ‘Indo-Persian Relations: A Study of the Diplomatic Relations between the Mughals and Iran’; Teheran: The Iranian Cultural Foundation, 1971.
  • A. Rahim, ‘Mughal Relations with Persia’; Islamic Culture, Hyderabad, 1934.
  • Satish Chandra, ‘Medieval India: From Sultanate to the Mughals Part – II’; Har-Anand Publications, 2005.
  • Umer Hameed, Usman Hameed, Saima Umer, ‘A Study of Relations between Mughal India and the Ottoman Empire: 1556-1748’;

[https://jhss-uok.com/index.php/JHSS/article/download/107/97]

মন্তব্য তালিকা - “এশিয়ার শক্তিবিন্যাসে মুঘল বিদেশনীতির অবদান”

  1. খুব ভালো লেখা। কিন্তু মোঘল যুগ নিয়েই তো পড়াশুনো করতে পারবে না টুকুমণিরা। প্রশ্নও আসবে না তাই নিয়ে। কেমন হবে ব্যাপারটা?

    1. সে তো ছোটরা পড়াশুনো করতে পারবে না। টুকুমনিরা যে বড়, অ্যাডাল্ট। ওরা ঠিক ব্যবস্থা করে নেবে! হাহাহাহা!
      পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।।

  2. অসাধারণ বললে কম বলা হবে। তার আগে “অতি” বসাতে হবে, তাও একটা নয় চার-পাঁচটা।
    কেন আমার দ্বারা ইতিহাস পড়া হয়নি সেটা বুঝলাম। আর শখের ইতিহাস পাঠক এবং সিরিয়াস ইতিহাসবিদের মধ্যে পার্থক্য কোথায় সেটাও শিখলাম। সঙ্গে এও জানলাম যে অত্যন্ত জটিল কঠিন বিষয়কে কিভাবে হালকা চালে গল্পের আকারে সহজ করে বলা যায়। জনপ্রিয় ইতিহাস ধারায় এবার একটা বই আশা করছি।
    নিতান্তই অদ্ভুত সমাপতন বলতে হবে, বাংলা সনের উৎপত্তির ইতিহাস বিষয়ে খোঁজ করতে করতে সেদিন হঠাৎই একটা বই পেলাম অর ব্লেইন এর ইন দ‍্য মিরর অব পার্সিয়ান কিংস। সেটা উল্টেপাল্টে দেখতে দেখতে ঠিক এই মুঘলদের বৈদেশিক সম্পর্ক আর পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ে আরো পড়াশোনার কথাই ভাবছিলাম। আর তারমধ‍্যেই পেয়ে গেলাম এরকম একটা পথনির্দেশ।

    অনেক ধন্যবাদ এই সুন্দর লেখাটার জন্য।

    1. এমন উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় যে আত্মবিশ্বাস বাড়ে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ধন্যবাদ নিরন্তর।
      আপনার মত বহুমুখী বিষয়ে আগ্রহী গ্রন্থকীট পাঠক যে কোনো মানের লেখকের জন্য শ্লাঘার বিষয়, আর আমার মত তুচ্ছ লেখালেখি করা লোকের জন্য তো বটেই।
      সিরিয়াস ইতিহাস লেখক তো অনেকে রয়েছেন, অগাধ তাঁদের জ্ঞান, অ্যাকাডেমিক আলোচনার জন্য পাঠক তাঁদের লেখা না পড়ে আমার মত অখ্যাত মানুষের লেখা পড়বেন কেন? তাই সে পথে না গিয়ে চেষ্টা করি ইতিহাসের যেকোনো বিষয়বস্তু সাধারণের কাছে বোধগম্য ফর্ম্যাটে উপস্থাপন করতে। এও তেমনই এক প্রচেষ্টা আর কি!

  3. ইতিহাস যখন ধারাবাহিক ও প্রবন্ধ আকারে বলা হয়, তার একটা নিজস্ব স্বাদ আছে। আবার সেই কথাগুলোই যখন কেটে গল্পের আকারে বলা হয় তার আলাদা স্বাদ।

    আসলে এই লেখার দুটো দিক, সাহিত্যগত ও ইতিহাসের। ইতিহাসের অংশটা বলতে পারি না, কারণ এ আমাদের পরিচিত অংশের কথা নয়, কিন্তু বলার ঢং এমন, যা অন্তত পোর্টালের মত মিশ্রপাঠের জায়গায় অনেকটাই আরামদায়ক।

    কি নিয়ে লিখছি-র সঙ্গে আর একটা বিষয় মাঝে মাঝে ভাবতে হয়, কার জন্য লিখছি, তখন এই ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষাগুলো খুব ভালো লাগে।

    নবাঙ্কুর বাবুর কাছে এমন আরও এক্সপেরিমেন্ট আশা করি।

    1. আপনার মত মানুষের প্রশংসা বাক্য এ ধরণের পরীক্ষা নিরীক্ষার সাহস বাড়িয়ে তোলে।
      সত্যিই তাই, কি নিয়ে লিখছি-র পাশাপাশি কাদের জন্য লিখছি ভাবনাটাও মাথায় এসে যায় আজকাল। আবারও পুরোনো কথার পুনরাবৃত্তি করি, ইতিহাসের লোক নন, কিন্তু ইতিহাস ভালবাসেন, এমন মানুষদের মনে সিরিয়াস অ্যাকাডেমিক লেখার চাইতে একটু হালকা চালের লেখা বেশি আগ্রহ জাগায় বলে মনে হয়। আবার ছাত্রছাত্রিদের জন্যও হয়তো এ ধরণের লেখা একেবারে অনুপযোগী নয়। তাই এই ধরণের প্রচেষ্টা করে চলি নিরন্তর।
      ধন্যবাদ অহর্নিশ।

  4. এ ধরণের একটি উপস্থাপনা মধ্যযুগের প্রাচ্য
    ও কিছু পাশ্চাত্যের দেশগুলোর কূটনৈতিক সম্পর্ক এর ইতিহাস এর জন্যে মানসিক ভাবে তৈরি ছিলাম না। আমার মতো সাধারণ পাঠকের কাছে এটি একটি পররাষ্ট্র বিষয়ক অসাধারণ লেখা।প্রান্জল ভাবে লেখা এই প্রবন্ধটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত কোরল।

  5. এশিয়ার শক্তিবিন্যাসে মুঘল বিদেশনীতির অবদান শীর্ষক লেখাটি ইতিহাসের ছাত্রদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাস নিয়ে আগ্রহী বুদ্ধা পাঠকদের কাছেও সমান গুরুত্ব পাবে। লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ এই লেখার জন্য। লেখাটি পড়ে নিজেকে যথেষ্ট সমৃদ্ধ করে নিতে পারলাম।

  6. এশিয়ার শক্তিবিন্যাসে মুঘল বিদেশনীতির অবদান শীর্ষক লেখাটি ইতিহাসের ছাত্রদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাস নিয়ে আগ্রহী বুদ্ধা পাঠকদের কাছেও সমান গুরুত্ব পাবে। লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ এই লেখার জন্য। লেখাটি পড়ে নিজেকে যথেষ্ট সমৃদ্ধ করে নিতে পারলাম।

  7. এশিয়ার শক্তিবিন্যাসে মুঘল বিদেশনীতির অবদান শীর্ষক লেখাটি ইতিহাসের ছাত্রদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাস নিয়ে আগ্রহী বুদ্ধা পাঠকদের কাছেও সমান গুরুত্ব পাবে। লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ এই লেখার জন্য। লেখাটি পড়ে নিজেকে যথেষ্ট সমৃদ্ধ করে নিতে পারলাম।

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।