সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

অধিকার অর্জনে উদ্বাস্তু বাঙালি নারীর প্রতিরোধ আন্দোলন:  প্রেক্ষিত পশ্চিমবঙ্গ (১৯৪৭-১৯৭৭)

অধিকার অর্জনে উদ্বাস্তু বাঙালি নারীর প্রতিরোধ আন্দোলন: প্রেক্ষিত পশ্চিমবঙ্গ (১৯৪৭-১৯৭৭)

পলাশ মণ্ডল

সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১ ১৬০৯ 0

পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারী জন্মসূত্রে পরিযায়ী। বাধ্যত বাস্তুহারা হওয়া মেয়েদের জন্য অপেক্ষা করে মানবাধিকারের প্রতিটি প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চনা। বিশ্বব্যাপী নারী অভিবাসনের ঘটনা ঘটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, পরিবেশ সঙ্কট, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার বাতাবরণে এবং অপহৃতা ,নির্যাতিতা হয়ে নারী এক পুরুষ হতে অন্য পুরুষের হাত বদল হয় পণ্যের ন্যায়। তাদের শরীর পুরুষের আগ্রাসনের শিকারে পরিণত হতে বাধ্য হয়।সাম্প্রতিক টালমাটাল বিশ্বে সমগ্র উৎপাটিত মানুষের অর্ধেকেরও বেশি নারী সম্প্রদায়। ২০০১ এর জনগণনা মতে, ৩০৯ মিলিয়ন অভিবাসনকারীর মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ২১৮ মিলিয়ন ও পুরুষ ৯১ মিলিয়ন। সারা বিশ্বে বাস্তুহারা রমণীদের ক্রমশ সংখ্যাবৃদ্ধি জাতিসংঘের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছে।উল্লেখ্য ১৯৭৫ সালে উদ্বাস্তু মেয়েদের সামগ্রিক উন্নতি বিধানে প্রথম আন্তর্জাতিক মহিলা বিশ্ব-সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় মেক্সিকোতে। এবং সালটিকে আন্তর্জাতিক নারী বর্ষ রূপে চিহ্নিত করা হয় ও সমগ্র বিশ্বের নারী সমতার ওপর গুরুত্ব আরোপিত হয়। আর এক্ষেত্রে উদ্বাস্তু মেয়েদের বিষয়টি সর্বাধিক প্রাধান্য পায়।

বহু দেশেই উদ্বাস্তু মেয়েরা নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হন। ভারতবর্ষ এর ব্যতিক্রম নন। ঊনিশশো সাতচল্লিশের বিভাজন উপমহাদেশে মানবিক বিপর্যয়ের সূচনা করে জন্ম দেয় উদ্বাসনের। আর এই দ্বিখণ্ডনের আবর্তে নারীর জীবন হয়ে ওঠে অধিক সংকটপূর্ণ।অসহায় মেয়েরা সব দেশেই সবকালেই নির্যাতনও অত্যাচারের শিকার। দাঙ্গা ও দেশবিভাগের সময়েও এর ব্যতিক্রম হয়নি । বাস্তুহারা নারীদের হাত বদল হয়েছে ভালবেসে, কখন বা বাধ্য হয়ে লুণ্ঠনকারী বা ত্রাণকর্তার ঘর করেছে। বিভাজন পূর্ববর্তী কিম্বা পরবর্তী সময়ে উভয় সম্প্রদায়ের ক্ষমতাবানরা মেয়েদের অপহরণ ও ধর্ষণ করে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্মান্তরিত, বিবাহ এমনকি যৌনদাসত্বে বাধ্য করে।পুরুষের উচিত চূড়ান্তভাবে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তরিক চেষ্টা করা। কেননা পশুর সমস্ত লক্ষণ আমাদের মধ্যে বিরাজমান। আমরা সর্বদাই নারীর মর্যাদা লুণ্ঠনে তৎপর।

পুরুষ-শাসিত সমাজে নারীর যে ভাবমূর্তি রচিত তা কখনো বিমূর্ত, কখনোও বিকৃত, কায়ার দিক থেকে সে যেন ভোগ্যবস্তু, ইন্দ্রিয় উত্তেজক এক সচল অস্তিত্ব। একাচারে আনন্দের উপাচার এবং পাপের উৎস। পিতৃতন্ত্র এই সব দলিল দাখিল করেছে শোষণ বিরোধী দ্রোহী নারীর সামনে দৈব বিধান হিসাবে।নারী নির্যাতন বা নারীর প্রতি সহিংসা বর্তমানে আর নতুন কোন শব্দ নয়। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে বহুল আলোচিত বিষয়। নারীবাদীরা জেন্ডার ভায়োলেন্স বলতে বুঝিয়েছেন –“Gender violence or violence against women includes any act involving use of force or coercion with an intent of perpetuation or promotion of hierarchical gender relations in all social structures such as family, work place or society.সামাজিক, সাংস্কৃতিক পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই নারী নির্যাতন বিদ্যমান।যার মূল কারণ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা। এতে ক্ষমতা পুরুষের হাতে কুক্ষিগত থাকে এবং নারীর অবস্থান হয় প্রান্তিক।

পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধ নারী নির্যাতনের উৎস। জনৈক বিশ্লেষক নারী নির্যাতনের কারণ সম্পর্কে বলেন—“The basic factor is prevalent patriarchal norms, values, tradition power relation between men and women an all social structure: family, community, work place and even in the state.

হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের পুরুষদের লালসার শিকারে পরিণত হয় নিরপরাধ মেয়েরা। তবে বাংলা ও পাঞ্জাবের ছিন্নমূল মেয়েদের নির্যাতনের চরিত্রগত ভিন্নতা লক্ষণীয়।৯ক দুই প্রদেশের গৃহহীন নারীর পুনর্বাসন কিংবা ত্রাণ প্রকল্পে পক্ষপাতদুষ্ট সরকারি দৃষ্টি ভঙ্গীর পরিচয় মেলে।৯খ পাঞ্জাবি উদ্বাস্তু মেয়েদের নানান সুযোগ সুবিধা প্রদান ছিল বাংলার তুলনায় অধিক।৯গ উল্লেখ্য বিভাজন লক্ষ লক্ষ হিন্দু, শিখ ও মুসলমান রমণীকে অনিশ্চিত জীবন পথে ঠেলে দেয়।৯ঘ

বাস্তুহারা সংকট ভারতবর্ষের পাশাপাশি অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গের আর্থ –সামাজিক পরিমণ্ডলকে সমস্যা সঙ্কুল করে তোলার সাথে সাথে বাঙালি নারীর জীবন মানসকে জটিল ও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে নামিয়ে দেয়।৯ঙ্ পশ্চিমবঙ্গ অভিবাসন সমস্যায় জর্জরিত হয়ে ওঠে।৯চ যা এপার বঙ্গের রাজনীতি , সমাজ, কিংবা অর্থনৈতিক সমস্যাকে ত্বরান্বিত করে তলে।৯ছ দেশভাগ জনিত হিংসা সন্ত্রাস, বাঙালি সংস্কৃতিতে এক বিপর্যয় নামিয়ে আনে। সামগ্রিকভাবে মূল্যবোধকে ধ্বস্ত করেছে।  ছিন্নমূল মানুষ যখন সীমান্ত পেরিয়ে অন্য দেশে নিরাপত্তার সন্ধানে চলে যায়, তখন তার একদিকে স্মৃতির মধ্যে থেকে যায় ছেড়ে আসা অতীত, অন্যদিকে বর্তমানে তাকে নতুন করে গড়ে তুলতে হয় জীবন।১০ 

ভারত ও পাকিস্তানের দেহভাগের মতই নারীকে ভাগ করার উন্মাদনায় মেতে উঠেছিল পুরুষ রাষ্ট্র-শক্তি। অন্য সব উদ্বাস্তুর সাধারণ দুঃখ কষ্টের অংশীদার হওয়ার সাথে সাথে মেয়েদের অতিরিক্ত দুর্দশার ভাগ নিতে হয়—তা হল নারীত্বের অবমাননা। আর এক্ষেত্রে “Words of their immediate community, is contingent upon how the politics of identity are played out, and how their resolution takes place between community and state.১১ ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারতবর্ষ এবং পাকিস্তান দুটি পৃথক রাষ্ট্ররূপে মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে। সীমানা কমিশন একটা খাড়া লাইন টেনেই ভাগ করে দেন ভারতভূমিকে। পরিণামে ক্ষত বিক্ষত হয় দেশ ; অগণন মানুষ এপার থেকে ওপারে চলে যান ; অসংখ্য মানুষ ওপারের ভিটেমাটি ছেড়ে আশ্রয়ের সন্ধানে এপারে চলে আসেন। নষ্ট হয় প্রায় দু লক্ষ মানুষের প্রাণ ; লাঞ্ছিত হন তার চেয়েও বেশি –সংখ্যক নারী; বাস্তুহারা হয়ে যান লক্ষ লক্ষ মানুষ। স্বাধীনোত্তর যুগে পশ্চিমবঙ্গে অর্থনৈতিক ও সমাজ জীবনে নানাবিধ সমস্যার সঙ্গে দেখা যায় উদ্বাস্তু সমস্যা।১২ 

দেশভাগের সাথে সাথে স্বাধীন ভারতবর্ষে উদ্বাস্তু সমস্যা প্রকটরূপে দেখা দেয়। দ্বিখণ্ডিত ভারতে এই সমস্যা সমগ্র উদ্বাস্তুদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুললেও ভারতীয় নারী সমাজের কাছে তা ছিল এক অভিশাপস্বরূপ।১৩ দেশভাগ বঙ্গীয় উদ্বাস্তু নারী সমাজকে এক গভীর সঙ্কটের গহ্বরে নিক্ষেপ করেছিল। নিজের গোষ্ঠী এবং সম্প্রদায়ের সম্মান ও প্রতাপ বজায় রাখতে মেয়েদের ওপরে আক্রমণ হয়েছে দুদিকের নবনির্মিত রাষ্ট্রযন্ত্রে, মেয়েদের প্রতিদিন, প্রতি-রাতের অসহনীয় দুঃখ ও লাঞ্ছনাকে উপেক্ষা করে তথাকথিত ‘নারীত্বের মূল্যকে অমান্য করে  পুরুষকেন্দ্রিক মতাদর্শের দিকে ঝুঁকেছিল। উদ্বাস্তু নারীদের অধিকাংশেরই চোখে দেশভাগ হল ধর্ষণ, অপহরণ কিংবা বলপূর্বক বিবাহের নামান্তর১৪ 

পরিসংখ্যান অনুযায়ী পঁচাত্তর হাজার থেকে একলক্ষ নারী দেশভাগের পর অন্য ধর্মের দ্বারা অপহৃত হয়েছিল “ to be raped and murdered, sold into prostitution, or forced into marriage “ এই অভিজ্ঞতা র‍্যাডক্লিফ লাইনের দু’পাশের মহিলাদের ক্ষেত্রে সমান ভাবে প্রযোজ্য । তাই একথা বলা যেতেই পারে যে, “Women were distributed in the same way that baskets of oranges or grapes are sold or gifted.” উদ্বাস্তু নারীরা যে শুধু অপরাপর ধর্মের পুরুষদের দ্বারাই লাঞ্ছিত হতেন তাই নয়-বহু ক্ষেত্রে নিজ ধর্মের লোকেরাও তাদের অসহায়তার সুযোগ নিত। আর তাদের আত্মীয় পরিজন এমনকি বাবা-মাও বহু ক্ষেত্রে ধর্ষিত হবার আগে স্বহস্তেই তাদের খুন করত, কারণ তাদের কাছে সম্মান ছিল জীবনের থেকেও দামি।১৫ 

বাপসি সিদ্ধা এ প্রসঙ্গে বলেন, Living object of whose soft bodies victors and loses alike went their wrath and enact fantastic vendaltas and celebrate victories ১৬ মহিলাদের ক্ষত বিক্ষত  মৃত শরীর গুলো যেন এক সম্প্রদায়ের ওপর অপর সম্প্রদায়ের বিজয়ের বার্তা বহন করেছিল। উভয় সম্প্রদায়েরই  নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের বিষয়গুলি যেন হারিয়ে গিয়েছিল, আর নারীরাও ছিল অসহায় অকথ্য পাশবিক নির্যাতনের শিকার। ১৭ সাতচল্লিশের দেশভাগ বাস্তুহারা অসহায় নিঃসঙ্গ নারীর জীবনে যে লাঞ্ছনা ও দুর্ভোগ এনেছিল তা অবর্ণনীয়। নারী জীবনে দেশভাগ একটি বিশেষ ঘটনা। শিশু কন্যা থেকে বয়স্কা কম বেশি প্রত্যেকেরই জীবনে বিভাজনের তীব্রতা কোন না কোনভাবে প্রভাব ফেলেছে।

১৯৪৭ এর স্বাধীনতা প্রাপ্তি ম্লান হয়ে যায় সাম্প্রদায়িক বিভাজনের আঘাতে। দুটি দেশের প্রায় এক কটি দশ লক্ষ মানুষকে  ভিটে ছাড়া হতে হয় ও প্রাণ বিসর্জন দেয় দশ লক্ষের বেশি । ১৮ বিভাজন পরবর্তী দেশত্যাগ সমস্ত উদ্বাস্তু জীবনে অপরিমেয় দুঃখ, লাঞ্ছনা, অসহায়তার অভিজ্ঞতা বহন করে আনলেও বিশেষভাবে মেয়েদের কাছে এর অভিঘাত ছিল অধিক গুরুতর। ক্ষমতা লোভী পুরুষদের নোংরা রাজনীতি ও হিংসায় সম্পূর্ণ নিরপরাধ নারীদের চরম মূল্য দিতে হয়, যা ছিল বাস্তবিক পক্ষে তাদের কাছে অকল্পনীয়। দেশবিভাগ জনিত বাতাবরণে নারীর অবস্থা ছিল অসহায়তম। অনিচ্ছুক নারীদেহকে ভোগ ও উৎপীড়ন করে পুরুষ। যুদ্ধ নারীর কাছে বেশি সর্বনাশের সূচক। পূর্ববাংলার বহু পরিবারেই মেয়েদের এপার বাংলায় পাঠিয়ে দেওয়া হলেও বহু নারীকেই বিভাজনের চরম মূল্য দিতে হয়েছিল। সে তুলনায় পশ্চিমবাংলার মুসলিম সম্প্রদায়ের মেয়েরা ততটা বিপন্ন হয়ে পড়েননি। ১৯ দেশভাগের সময় মূলত উদ্বাস্তু মেয়েদের ওপর ঘটা এই অত্যাচারের তীব্রতা নাৎসি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের অত্যাচারকেও হার মানিয়েছিল। ২০ 

নেহেরু বলেন, “Nearly the whole of India celebrated the coming of Independence but no so the unhappy land of the five rivers. in Punjab, both in the east and the west , there were disaster and sorrow. There was mass murder and arson and looting in many places and streams of refugees poured out from one place to another. আর এরই অনিবার্য  ফলস্বরূপ তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মেয়েদের  উপর—যাদের এক ও  একমাত্র অপরাধ ছিল তারা মেয়ে- One of the signature of the violence of 1947 was the large scale abduction and rape of women.  ধর্ষিত ক্ষতবিক্ষত মৃত নারী-শরীরগুলি ছিল দেশভাগ জনিত বিশৃঙ্খলার অন্যতম প্রমাণ। তবে শুধু অপহরণ বা ধর্ষণই নয়, মেয়েদের আরও নানাভাবে অসম্মানিত ও লাঞ্ছিত করা হত –“ Breast and noses are cut off, their bodies branded or tattooed with signs and symbols of ‘ other religion’ , pregnant were forcibly aborted and often women were made to strip naked and paraded through the street in town and cities.”এই অভিজ্ঞতা তা র‍্যাডক্লিফ লাইনের দুপাশের মহিলাদের হয়েছিল,- women were distributed in the same way that baskets of oranges or grapes are sold or gifted.

আবার অনেক ক্ষেত্রে নারীরা নিজেরাও অসম্মানিত হবার থেকে মৃত্যুবরণকে শ্রেয় মনে করত। এই ঘটনার প্রতিফলন দেখা যায় অমৃতা প্রীতমের “Pinjar’ নামক উপন্যাসে। পূর্বপাকিস্তান থেকে ভারতে, মূলত পশ্চিমবঙ্গে আসা নারীদের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যায়। জ্যোতির্ময়ী দেবী ও নিবেদিতা দেবীর রচনাতে তার উল্লেখ পাওয়া যায়। নিবেদিতা দেবী তার ‘নারীর কথা’ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছিলেন যে, “পূর্ববঙ্গীয় নারীগণকে তাদের জীবন, সতীত্ব, স্বামী ও সন্তানের জীবনের মাধ্যমে স্বাধীনতার মূল্য চোকাতে হয়েছিল। বিপুল পরিমাণে ধর্ষণ, অপহরণ ও বলপূর্বক বিবাহ ছিল আক্রমণকারীদের প্রধানতম অস্ত্র। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানি শুল্ক আধিকারিকগণ ও পশ্চিমবঙ্গের দিকে আসা মহিলাদের তল্লাসির নামে অসম্মানিত করত।২১ কংগ্রেস রাজনীতিবিদ চৈতরাম গিদোয়ানির ভাষায় – “কোনও যুদ্ধে কখনও মেয়েরা এত দুঃখ ভোগ করেনি, মেয়েদের খুন করে অঙ্গহানি, অত্যাচার করে ফেলে চলে যাওয়া হত। স্বাধীনতার পরে দিল্লি-বোম্বের গণিকালয়গুলো উদ্বাস্তু মেয়েদের দ্বারা পূর্ণ হয়ে উঠেছিল। নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে, অন্য লোকে তাদের ওপর যা করেছে তার পরিণামে তার পরিবার থেকে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। দুই রাষ্ট্রের সাম্প্রদায়িকতার বলি মেয়েদের যেমন হতে হয়েছিল তেমনি উদ্বাস্তু হয়ে সীমান্ত পার হওয়া থেকে শুরু করে পুনর্বাসন সবক্ষেত্রই চরম বঞ্চনার শিকার নারীরা।২২

দুই রাষ্ট্রের যৌথ উদ্যোগের বদলাবদলি খেলায় নারীরা হয়ে গিয়েছিল বাজারের পণ্যবস্তুতে।২৩ জ্যোতির্ময়ী দেবী তাঁর ‘এপার গঙ্গা ওপার গঙ্গা ‘ উপন্যাসে উদ্বাস্তু নারীদের শারীরিক নির্যাতন ও সম্মানহানি ছাড়াও সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিষয়টিকেও তুলে ধরে২৪ দেশভাগের অপর একটি দিক হল অপহৃত নারীদের পুনর্বাসন। সরকারের তরফ থেকে ১৯৫৭ র সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান ও ভারত থেকে মহিলা ও শিশুদের উদ্ধারের ব্যাবস্থা হলেও উদ্বাস্তু রমণীরা হাত বদল হয়েছে কখনো ভালোবেসে, আবার কখনো বাধ্য হয়ে লুণ্ঠনকারী বা ত্রাণকর্তার ঘর করেছে। ভারত ও পাকিস্তান দুই সরকার চেষ্টা করেও অপহৃত বা হারিয়ে যাওয়া মেয়েদের ফিরিয়ে আনার বা পুনর্বাসনের ব্যাপারে ততোখানি সাফল্য পাইনি।২৫ দেশভাগের পরে দলে দলে এপারে ওপারে  মানুষ পটবিচ্যূত হয়েছে, যেখানে মেয়েরা তথাকথিত পবিত্রতা ও সম্মান রেখেই সীমান্ত পার হতে পেরেছে সেখানেও তারা বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা পায়নি। এপারের লোকেরা এমনকি তার পরিবারের লোকেরা ধরেই নিয়েছে বিধর্মীরা সম্মানহানি করে তবেই তাদের ছেড়েছে।২৬ 

দেশবিভাগ উত্তর পশ্চিমবঙ্গের উদ্বাস্তু শিবির, শিয়ালদহ স্টেশন, জবরদখল কলোনি, সমস্ত যায়গায় দেখা যায় উদ্বাস্তুদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম–যার পুরোভাগে ছিল মেয়েরা। জীবনের তাগিদে উদ্বাস্তু মেয়েরা এমন সব পেশা বেছে নেয় যা আগে ভদ্র মেয়েদের উপযুক্ত মনে করা হতনা। সম্পূর্ণ নিরপরাধ মেয়েরা কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িকতার বলি হয়। ২৭ বিভাজিত ভারতবর্ষে মেয়েদের অবস্থা পূর্বের মতই দুঃখের ছিল তা বলাই বাহুল্য। তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্মান্তরিত, বিবাহ এমনকি যৌনও দাসত্বে পরিণত করে পুরুষ সমাজ। বিভাজন পরবর্তী সময়ে পাঞ্জাবে অপহৃত মেয়েদের পুনরুদ্ধার ও তাদের পরিবারে ফিরিয়ে আনার যে অভিযান চালানো হয়েছিল সরকারি পক্ষ থেকে তার তুলনায় বাংলার অবস্থা ছিলই তথৈবচ।২৮ 

দেশত্যাগের পথে ছিন্নমূল উদ্বাস্তু নারীদের শারীরিক হয়রানির অন্ত ছিলনা। সহযাত্রীদের এমনকি নিকট আত্মীয়ের কাছে তারা বোঝা হয়ে ওঠে। ২৯  স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ভারতের মেয়েদের জীবনে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বিশেষ গুরুত্ব দেন। প্রথম পঞ্চবার্ষিকীতে যেমন নারী কল্যাণমূলক কর্মসূচীকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল তেমনই দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ এই তিনটি পরিকল্পনাতেও মহিলা তৃণমূল স্তরের কল্যাণ ও মহিলামণ্ডলগুলিকে শক্তিশালী করার কথা বলা হলেও কার্যক্ষেত্রে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ১৯৫১ সালে ভারতে যেখানে নারী শিক্ষার হার ছিল ৮.৮৬ শতাংশ তা ২০০১ এ দাঁড়ায় ৫৩.১৬ শতাংশে । অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে সমগ্র ভারতবর্ষে যেখানে ৪৫ শতাংশের উপরে নারী নিমজ্জিত রয়েছে নিরক্ষরতার অন্ধকারে সেখানে পশ্চিমবঙ্গের মেয়েদের অবস্থা কেমন ছিল তা সহজেই অনুমেয়।৩০ 

নারীজীবনে দেশভাগ একটি বিশেষ ঘটনা। শিশু কন্যা থেকে বৃদ্ধা কমবেশি প্রত্যেকেরই জীবনে দেশভাগের তীব্রতা কোনও না কোনও ভাবে প্রভাব ফেলেছে।৩১ দেশত্যাগ করার সিদ্ধান্তের সঙ্গেই নারীদের অনেক ধরণের পরিস্থিতির মুখাপেক্ষী হতে হয়েছে। এবং তাঁদের সবচেয়ে বড় আঘাত পেতে হয়েছে প্রতিবেশীদের শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের কারণে। কেউ কেউ ধাক্কা সামলে উঠে বাঁচার চেষ্টা করেছেন, কেউবা আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ই প্রতিশোধ পূরণের জন্য ওপর সম্প্রদায়ের পরিবারের মেয়েদের উপর অত্যাচার করতে দ্বিধা করেনি।৩২ মেকি পুরুষ সুলভ বীরত্বের আস্তরণ দিয়ে দেশভাগের যন্ত্রণাকে মোড়া হয়েছে। বিভাজনের ও দাঙ্গার সময় দু দিক থেকেই মেয়েদের বিরুদ্ধে পরিচালিত দানবীয় হিংস্র তা কে নানা ভাবেই ঢেকে ঢুকে রাখা হয়েছিল। একটি ‘ প্রতিপক্ষ খাড়া করে তার ওপরেই চাপানো হয় হিংসাত্মক বলাৎকারের দায়। এর ফলে মেয়েদের নিজেদের ভালোমন্দর প্রশ্নটি সম্পূর্ণ উহ্য থেকে যায় এবং নিজেদের গোষ্ঠী আর বেরাদরির সম্মান রক্ষার জন্য নারীর ইজ্জতকে অটুট রাখার বিষয়টি  কঠিন সঙ্কটের মুখে নিমজ্জিত হয়। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়নি এমন নারীর সঙ্কট ছিল ভিন্ন প্রকৃতির। পূর্ববাংলার শান্ত গৃহকোণে ছিল যে নারীর বাস; সে দেশান্তরী হয়ে শিয়ালদহ স্টেশনে কিংবা ক্যাম্পে নির্বাসিত হওয়ার পর প্রধানত তিন ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হয়—অর্থনৈতিক, বাসস্থান, ও নারীর আব্রুর সমস্যা। ভারতবর্ষে নারী জীবনে পরিবর্তন তরান্বিত হয়েছিল বঙ্গ বিভাগ ও দেশভাগ জনিত কারণে ; যার ঢেও নারীর অন্দরমহলে এসে পড়ে প্রবলভাবে।

ভাঙ্গনের পর নারীর জীবন নতুন রূপে গড়ে ওঠে। পূর্ববঙ্গে ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে নারীর একটি নিজস্ব জগত ছিল অর্থাৎ সংসারের গণ্ডীর মধ্যেয় তার বিচরণ ছিল, বাইরের জগত একেবারেই অচেনা,অজানা। রোজগারের ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা, মতামত,বাইরে বেরিয়ে কাজে যাওয়ার বিষয়গুলি ছিল পারিবারিক সম্মানের অন্তরায়। তবে বর্ণগত ও অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ এমন পরিবারের মেয়েদেরই কেবলমাত্র শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল; এবং যৌথ পরিবারে অভ্যস্ত ছিল মেয়েরা। দেশ ছেড়ে আসা নারীর জীবন স্বাভাবিকভাবেই ছিল অস্থিতিশীল ও সিদ্ধান্তহীন, লাঞ্ছনা, দারিদ্র, হতাশা, নারীত্বের অসম্মানকে প্রকট করে তোলে।সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারীরা অত্যাচারিত হয় সর্বাধিক উভয় দেশেই।

উল্লেখ্য দেশভাগের পরিস্থিতি নারীকে সংসারের গণ্ডীকে অতিক্রম করতে শিখিয়েছে। বহু ছিন্নমূল রমণী নিজস্ব উদ্যোগে বাঁচার সংগ্রামে অবতীর্ণ হন।৩২কফলত একদিকে যেমন মেয়েদের শরীর মনের বিকাশ ঘটেছিল তেমনই অভাবনীয়ভাবে মেয়েদের সম্মুখে খুলে গিয়েছিল এক বৃহৎ জগৎ। উদ্বাস্তু নারীরা দ্রুত অধিক হারে লেখাপড়া শেখে এবং তাদের মধ্যে বেশিরভাগই বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত হয়। ফলে পশ্চিমবঙ্গের নগর সমাজে কর্মজীবী ভদ্রমহিলারা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তবে তারা যে মজুরি আয় করত তার ওপর তাদের কোন ও নিয়ন্ত্রণ ছিলনা। তাদের অবদান ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেলেও তাদের বেতন ছিল পরিবারের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অবস্থা ভালোও করার জন্য। কিন্তু তাদের নিজস্ব জীবন ধারার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তা কোনও ভাবে নিশ্চিতরূপে প্রতিষ্ঠিত ছিলনা। কারণ তারা শ্রমিকে পরিণত হয়।

তবু কিছু উদ্বাস্তু মহিলা বেতনভুক শ্রমিক হিসাবে যোগ দেওয়ায় অথবা শিক্ষালাভ করায় কিছুটা স্বাধীনতা ও সুযোগ সুবিধা পেতে শুরু করে। এসব অগ্রগতির ফলে বর্ণ হিন্দুদের সামাজিক চেতনায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখা যায়। শালীনতাপূর্ণ নারীরা ঐতিহ্যগতভাবে ‘অন্তঃপুরে আবদ্ধ থাকত। কিন্তু এখন তারা বাইরে এবং গুরুত্বপূর্ণ জগতে বেড়িয়ে পড়ে। ফলে মহিলাদের সম্পত্তি ও মর্যাদা সম্পর্কে হিন্দু মধ্যবিত্ত শ্রেণির চিন্তাধারায় অপরিবর্তনীয় পরিবর্তন দেখা দেয়।৩৩

দীর্ঘকাল বামপন্থী আন্দোলনের সহিত যুক্ত মণিকুন্তলা সেন স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে উদ্বাস্তু নারীদের এক জাগরণ দেখেছেন। তাঁর ভাষায়–পূর্ববাংলায় থেকে গেলে হয়তো মেয়েদের এই পরিবর্তনটা আসত না। দেশান্তরী নারী সময়ের দাবীকে সামনে রেখে দ্রুত নিজের বদল ঘটিয়েছে, পাশাপাশি বদলে দিয়েছে তার চারপাশের সমাজকে। জীবনসংগ্রামে উদ্বাস্তু মেয়েরা যেভাবে এগিয়ে এসেছিল, তাতে কেবল ঐ ছিন্নমূল মানুষরা পায়ের তলার মাটি খুঁজে পায়নি, সাধারণভাবে পশ্চিমবঙ্গের নারীমুক্তির পথ উন্মোচিত করেছিল।৩৪ জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর ‘বারো ঘর এক উঠান’ উপন্যাসে অসংখ্য নারী চরিত্রের সমাগম ঘটে এবং দেখা যায় বীথী, বকুল, কমলারা ঘরের গণ্ডী ছেড়ে শুঁড়ীখানায় কাজ করতে থাকে। অভাব দারিদ্র আর সীমাহীন সংকটকে সঙ্গী করেই উপন্যাসের রমণীরা এক উঠোনকেই বাস্তবতা হিসেবে মেনে নেয়।৩৫ ভারত কিংবা পাকিস্তান উভয় দেশেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মেয়েরা তাদের পরিবারের পুরুষদের অনাচার, কাপুরুষতা মেনে নিতে পারেনি। তারা ধিক্কার জানিয়েছে এই পাশবিকতাকে।

‘এপার গঙ্গা ওপার গঙ্গা’ উপন্যাসে সাকিনার মায়ের কণ্ঠে তাই শোনা যায়–“ তোমাদের দেশভাগ চাই, ঝগড়া করবে করো, আমাদের মেয়েদের মান ইজ্জত শরীর নিয়ে এ লাঞ্ছনা কেন ? একি তোমাদের ধর্মে বলে, কোরানে আছে কী ? তোমরা এত শিক্ষিত গাঁয়ের উকিল মোক্তার মাষ্টার কেউ কাউকে কিছু বলছেনা কেন ? ছিঃ ছিঃ নারীত্বের চরমতম অবমাননা।৩৬ উদ্বাস্তু জীবনের এই দুর্গতি ও অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই বাঙালি সমাজে নারীকে নবরূপে উত্থানের সুযোগ এনে দেয়, এবং এই নারী চিন্তা চেতনায় পূর্ববর্তী প্রজন্মের থেকে অন্যরকম। এই পরিবর্তন কেবল উদ্বাস্তু মেয়েদের ভিতরেই সীমাবদ্ধ থাকেনা, ছড়িয়ে পড়ে সমাজের বৃহত্তর ক্ষেত্রে ও। একথা অনস্বীকার্য যে নারীর এই পরিবর্তনের পিছনে দেশভাগ ছাড়াও বিশ্বযুদ্ধ, মন্বন্তর মধ্যবিত্ত জীবনের সামগ্রিক সংকট এবং চল্লিশের দশকের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রভাব ছিল সক্রিয়। তবে দেশভাগের ধাক্কায় তা আরও প্রবল হয়ে ওঠে। শিক্ষাকে হাতিয়ার করে বাঙালি উদ্বাস্তু নারী স্বয়ম্ভরতার দিকে ক্রমশ পা বাড়াতে শুরু করেছিল। বাস্তুচ্যুত পরিবারের মেয়েরা পরিস্থিতির চাপে পড়ে বাইরের জগতে পদার্পণ করে এবং শিক্ষার সাথে সাথে ফেরী, হকারী ওয়াডেন, কিংবা সেলাই কলকে হাতিয়ার করে স্বনির্ভর হবার চেষ্টা করে, পরে তা অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।৩৭ 

ব্যক্তিগত উদ্যোগেও উদ্বাস্তু মেয়েদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার প্রয়াসও দেখা যায় । ১৯৫৭ সালে অধ্যাপক অতীন্দ্রনাথ বোস দেখিয়েছিলেন- শিক্ষার প্রতি বাঙালি মেয়েদের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ কিভাবে প্রতিফলিত হয়েছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল পরীক্ষাগুলিতে। তাঁর ভাষায় –“It is one of the signs of the times that womens education advanced at a faster rate than men’s”.৩৮এহেন বাস্তুত্যাগী ছিন্নমূল বাঙালি উদ্বাস্তু বিশেষত মহিলাদের এদেশে তথা পশ্চিমবঙ্গে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার করলেও তা ছিল অপ্রতুল ও বিমাত্রিসুলভ। পাঞ্জাবের প্রাক্তন পুলিস কমিশনার এম এস রন ধাওয়া লিখেছেন-“ভস্মের ভিতর থেকে যেন রূপকথার ফিনিক্স পাখির মত নবজন্ম লাভ করেছেন উদ্বাস্তু পাঞ্জাবী চাষি’। পক্ষান্তরে পূর্ববাংলা থেকে আগত উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন মন্ত্রক শুধুই প্রতারণা করেছে, কেননা তারা অলস। পশ্চিম পাকিস্তানের উদ্বাস্তুরা যেখানে প্রশংসা পাই, সেখানে বাঙালি উদ্বাস্তুদের ভাগ্যে জোটে শুধুই বঞ্চনা।৩৯ 

১৯৬৭ সালে প্রকাশিত ‘ দি স্টোরি অফ রিহ্যাবিলিটেশন’ গ্রন্থে কেন্দ্রীয় পুনর্বাসন মন্ত্রক বলেন –“ পশ্চিমের বাস্তুত্যাগীরা প্রশংসনীয় উদ্যম প্রদর্শন করেছেন। সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়তে তারা প্রস্তুত ছিলেন এবং করেছেন ও তাই। কিন্তু পূর্বপাকিস্তানের উদ্বাস্তুরা তা করেননি। বিপুল সংখ্যায় তারা ভিড় করেছেন পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায়। অন্য রাজ্য যেতে তারা অনিচ্ছুক।৪০ লক্ষণীয়, পশ্চিম পাকিস্তানের উদ্বাস্তুদের মত বাঙালি উদ্বাস্তুদের ও যে পুনর্বাসনের প্রয়োজন রয়েছে, একথাটা স্বাধীনতার প্রথম আট নয় বৎসর অবধি ভারত সরকার আমলই দেয়নি। বাঙালি উদ্বাস্তুদের প্রতি ভারত সরকার যে নীতি অবলম্বন করেছিল তা যদি পশ্চিম পাকিস্তানের উদ্বাস্তুরা পেত তাহলে তারা সরকারের কাজকর্ম অচল করে দিত।৪১ যাইহোক ১৯৫১ সালে অনধিকার উচ্ছেদ আইন বলে পশ্চিমবঙ্গ সরকার জবর দখল করে বসবাসকারী পূর্ববঙ্গের উদ্বাস্তুদের পুনরায় বাস্তুহারা করার নীতি গ্রহণ করে বিভিন্ন ক্যাম্পের উদ্বাস্তুদের দণ্ডকারণ্যে পাঠানোর নীতি গ্রহণ করে।

কিন্তু কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের এই নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনমুখী হয় উদ্বাস্তুরা। এবং এই আন্দোলনে পুরুষের পাশাপাশি মেয়েরাও ঝাঁপিয়ে পড়ে। কলোনি জীবনের করুণ অবনতির মধ্যে নিজেদেরকে গুটিয়ে না রেখে পূর্ববঙ্গের এই ঘরকুনো নারীরা সময়মত নিজেদেরকে বাস্তবের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কলোনি উচ্ছেদ বিরোধী সংগ্রামে নিজেদেরকে নিয়োজিত করে। যেসব জমিতে জবর দখল কলোনি গড়ে উঠেছিল সেখানে জমির মালিকেরা পুলিস ও গুণ্ডার সাহায্যে হামলা করালে হাতা, খুন্তি, ঝাঁটা নিয়ে মেয়েরা প্রতিরোধ করতে সংঘবদ্ধভাবে লড়াই করেছে। আর পুরুষেরা প্রতিরোধে একত্রিত হয়েছে। ‘স্বরলিপি’ উপন্যাসে সাবিত্রী রায় এভাবে বর্ণনা দিয়েছেন-“ যেই কলোনি আক্রমণ করে ভাড়াটে গুণ্ডারা অমনি বিপদের সঙ্কেত হিসাবে মেয়েদের শাঁখ বেজে ওঠে ঘরে ঘরে, এক একটা কলোনি যেন সংগ্রামের দুর্গ হয়ে উঠেছিল। পুলিশ বা গুন্ডা বাহিনীরা কলোনি উচ্ছেদ করতে এলে পুরুষেরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হলেও কলোনির মেয়েরা দলবদ্ধভাবে সতর্ক পাহারায় থাকত।৪২ এই একই রকম বর্ণনা প্রফুল্ল চক্রবর্তীর গ্রন্থে পাওয়া যায়, যেখানে তিনি লিখছেন—“The women volunteers stood in the van against the assault of the police. Behind then stood the male volunteers, and the children brought up the rear.৪৩ 

১৯৫০ এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে উদ্বাস্তু কলোনিগুলি লাল দুর্গে পরিণত হয়। এই সময় বামপন্থী ও বিরোধী দলগুলি রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের পুনর্বাসন নীতি ও গুন্ডাবাহিনীর কলোনি উচ্ছেদের তীব্র বিরোধিতা করে আন্দোলন গড়ে তোলে। ইউ সি আর সির নেতাদের পরিচালনায় এই সময়ে বিভিন্ন ক্যাম্পে সত্যাগ্রহ শুরু হয়। ১৯৫৩ র জুলাই এ ট্রাম ভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন হয়। উল্লেখ্য এই রাজনীতির ছকের সাথে ও পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে উদ্বাস্তু মেয়েরা নিজেদেরকে ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পেরেছিল। পারিবারিক দায়দায়িত্বের পাশাপাশি অল্প বয়সী মেয়েদের আপদ বিপদ থেকে রক্ষা কিংবা পুলিশি অভিযানের সময় কলোনির তরুণদের আশ্রয় দেওয়ার কাজ করত তারাও ‘মেঘে ঢাকা তারার’ নিতার মা কিংবা অশোক মিত্রের ‘ক্যালকাটা ডায়েরীর’ সেই বৃদ্ধা আমাদের নজর কাড়ে কলোনি উচ্ছেদ বিরোধী কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে।৪৪ 

নিজেদের দাবিদাওয়া মেটাতে উদ্বাস্তু মেয়েরা সরকারের পুনর্বাসন নীতির বিরুদ্ধে কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলায় সভা মিছিল এমন কি সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন ও করতে থাকে। এবং এই প্রতিরোধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদের সামনে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার পথ সুগম হয়।৪৫ মহিলা আত্মরক্ষা সমিতির হাত ধরে কমিউনিস্ট দলের কাছেও চলে এসেছিল বহু মেয়ে। কমিউনিস্ট পার্টি মহিলা আত্মরক্ষা সমিতির মাধ্যমে উদ্বাস্তুদের বিশেষত মহিলাদের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রচার করে হিন্দু মহাসভাকে প্রতিহত করেন। অন্যদিকে শিক্ষা অর্জন, রাজনীতি চর্চা, ট্রেড ইউনিয়ন কার্যকলাপে অংশগ্রহণ উদ্বাস্তু মহিলাদের নিয়মানুবর্তী সংগঠিত জীবন গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। উদ্বাস্তু সংগঠন ইউ,সি আর,সি মহিলা উদ্বাস্তুদের কলোনি উচ্ছেদ বিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনে ও মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল –“Indeed it may not be an exaggeration to say that it was U.C.R.C which first brought women in such large numbers into the streets of Calcutta৪৬ 

নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে উদ্বাস্তু মেয়েরা জীবন পর্যন্ত বাজি ধরে প্রতিবাদ মুখর হয়েছিল। ১৯৪৯ সালের ২৭ শে এপ্রিল বাস্তুহীন নারীদের পুনর্বসতি সমস্যার সমাধান প্রসঙ্গে শ্রীমতী রামেশ্বরী নেহেরু তাঁর বক্তৃতায় বলেন-“পূর্বাপেক্ষা অনেক অধিক সংখ্যক নারী বর্তমানে জনসভায় অংশগ্রহণ করিতেছে দেখিয়া আমি আনন্দিত হইয়াছি বাস্তুহারাদের পুনর্বসতিই বর্তমানের সর্বপ্রধান সমস্যা। সরকার জনগণ ও বিভিন্ন প্রাদেশিক সরকারের নারী শাখা সমূহ এই অসহায় নারীদের পুনর্বসতির জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছেন, তথাপি প্রয়োজনের তুলনায় এই সাহায্য অকিঞ্চিৎকর বলিয়া প্রতীয়মান হইবে”৪৭ 

১৯৫৪ সালে বান্ধবগড় কলোনিতে মহিলা সমিতির এক সভা হয়, যাতে প্রায় দুই শতাধিক মহিলা উপস্থিত ছিলেন। শ্রীযুক্তা প্রেমলতা বসুর উপস্থিতিতে সভায় স্বর্ণলতা সরকার, রেণুকা সরকার তাঁদের বক্তব্যে সরকারের কলোনি উচ্ছেদ বিষয়ক নোটিশের তীব্র নিন্দা করেন এবং এই আদেশ রদ করার জন্য সংগ্রামের আহ্বান জানান।৪৮ ১৯৫৪ সালের ১০ আগস্ট কাশীপুর উদ্বাস্তু ট্রানজিট ক্যাম্পে বৃদ্ধা ননীবালা ভট্টাচার্য এগারো দিন যাবৎ বিভিন্ন অভাব অভিযোগের প্রতিকারের দাবীতে অনশন করেন।৪৯ ১৯৬১ সালের ২৪ নভেম্বর দুর্গা পুরে বর্ধমান জেলা উদ্বাস্তু পরিষদের পরিচালনায় দুর্গাপুর বিডিও অফিসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন, যার মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন শ্রীমতী নির্মলা বর্ধন।৫০ এরপর আবার ২৪ ডিসেম্বর মায়ারাণী নামক জনৈক মহিলার পরিচালনায় উদ্বাস্তুরা আইন অমান্য করেন।৫১ অন্যদিকে উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া, কোচবিহার জেলার তুফান গঞ্জে উদ্বাস্তুরা পুনর্বাসনের দাবীতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং দুইজন মহিলা গ্রেপ্তার হন। ৫২ হুগলী জেলার ভদ্রকালী উদ্বাস্তু শিবিরের মহিলারাও ১৯৫৬ সালের ৬ জুলাই কলকাতার ওয়েলিংটন স্কয়ার থেকে লরেন্স রোডে মিছিল করে নিজেদের দাবী আদায়ের জন্য।৫৩  আবার ১৯৬১ এর ১৩ ডিসেম্বর বর্ধমানের কাকসা ক্যাম্পে কলোনি উচ্ছেদ বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে এক সভা হয়, যাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন –শ্রীমতী সরস্বতী দাশ, শান্তি মৈত্র প্রমুখরা।৫৪ উদ্বাস্তু মহিলাদের কলোনি উচ্ছেদ বিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনের চিত্র তৎকালীন বাংলা উপন্যাসেও লক্ষ্য করা যায়। অমিয় ভূষণ মজুমদারের ‘নিরবাস’ উপন্যাসের মালতির কথা বলা যায়, যে দণ্ডকারণ্যে না যাবার জন্য ক্যাম্পের মানুষকে সংগঠিত করে। পরতাল উপন্যাসে কুপার্স ক্যাম্প সুপার বৈশাখী ব্যানাজী রেশনের পচা চাল খেতে বাধ্য করলে সমবেত ভাবে উদ্বাস্তু নারীরা তার প্রতিবাদ করে। রমেশচন্দ্র সেনের ‘পুব থেকে পশ্চিমে’ উপন্যাসে দেখা যায় কলোনি গঠনের সময় জমির মালিক পুলিশ এবং গুণ্ডাদের দিয়ে জমি উদ্ধার করতে চাইলে মহিলারা শাঁখ বাজিয়ে পাহারারত পুরুষদের সতর্ক করে দিয়েছে। আবার কলোনি থেকে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে তারাই কলকাতার রাজ পথে মিছিলে নেমেছে। সাবিত্রী রায় তাঁর স্বরলিপি উপন্যাসে দেখিয়েছেন-উদ্বাস্তু মেয়েরা কলোনি স্থাপন ও তার বিরুদ্ধে পুলিশি প্রতিরোধের মোকাবিলা করেছে। অনেকে আবার শিশু ক্রোড়ে নিয়ে প্রতিবাদে রাস্তায় বেরিয়েছে।

উল্লেখ্য পশ্চিমবঙ্গের উদ্বাস্তু মেয়েদের কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলার ক্যাম্প কলোনির প্রতিরোধ আন্দোলন দমন করতে সরকারি নির্মমতা উগ্ররূপ ধারণ করেছিল। দৃষ্টান্ত স্বরূপ ২৪ পরগনার ক্যানিং উত্তর ভাগের বেতবেড়ে ওয়ার্ক সাইট ক্যাম্পের কথা বলা যায়, যেখানে পুলিশ উদ্বাস্তু নরনারীর উপর চার রাউন্ড কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে ও নির্দয় ভাবে লাঠিচার্জ করে। অন্যদিকে ১৯৫৫ সালের ১৬ জুলাই হাবড়ায় উদ্বাস্তুরা বিভিন্ন দাবীতে মিছিল করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং এতে ২২ জন মহিলা আহত হন।শ্রমলক্ষ্মী কলোনির মেনকা সুন্দরী নামক জনৈক বৃদ্ধা ঘটনা স্থলেই অচেতন হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।৫৫ কংগ্রেসি সরকার অসহায় উদ্বাস্তু নরনারীর রক্ত ঝরায়, কিন্তু তাতেও উদ্বাস্তু নারীদের প্রতিরোধ আন্দোলনকে দমন করতে সক্ষম হয়নি।৫৬ 

তথ্যসূত্র:

১। যশোধরা বাগচী, পরিযায়ী নারী ও মানবাধিকার, সেতু প্রকাশনী , কলকাতা, জানুয়ারি, ২০১৪, পৃ-১০ 

২। SnehalFadnavis, Women Refugees in India—Problems and Perspectives, Dattsons, Nagpur, 2007, p-1 

৩। KasturiMitra, Status of Women Migrants from Bangladesh to West Bengal and Orissa During 1971-2001, PhD Thesis, Department of Economics, Jadavpur University, Kolkata, 2012, p-6 

৪। ঐ , প্রাগুক্ত, পৃ- ২  ও SandharaniMahapatra, Patterns and Determinents of Female Migration in India: Insights from Census, The Institute for Social and Economic Change , Bangalore, 2010, p-1

৫। ঐ , তদেব, পৃ-১৫ ও Navnita Chadha Behera, Gender, Conflict and Migration , Sage Publication, New Delhi, 2006,p-155 

৬। ডঃ গৌড় চন্দ্র ঘোষ, অভিজিৎ দত্ত , “স্বামী বিবেকানন্দ এবং নারী জাগরণ”, তাপস অধিকারী (সম্পা) শ্রুতি ( ষাণ্মাসিক পত্রিকা), শ্রুতি গবেষণা পরিষদ, দক্ষিণ দিনাজপুর , জুন, ২০১৬, পৃ-(৫০-৫১) 

৭। মাহমুদ সামসুল হক, ‘’নারীকোষ“, হাতে খড়ি প্রকাশন, ঢাকা, বাংলাদেশ , ২০০৫, পৃ-৯

৮। আলেয়া পারভিন, “নারী ও রাজনীতি”, অনিন্দ্য প্রকাশন,ঢাকা, বাংলাদেশ, প্রথম প্রকাশ, নভেম্বর, ২০০৭, পৃ-(১২০-১২৬)

৯। মোঃ আব্দুল মান্নান, সামসুন্নাহার খানম মেরী, “নারী ও রাজনীতি “, অবসর প্রকাশন, ঢাকা, বাংলাদেশ,প্রথম প্রকাশ , এপ্রিল, ২০০৬, পৃ-১২০-১২১

৯ক। U Bhaskar Rao, The Story of Rehabilitation, Government of India, 1967, p-78, P.C Joshi Archive, New Delhi

৯খ। Displaced Women and Children from Pakistan, Constitution and Function of the Women Section, File No-453/47, Public, Ministry Of Home Affairs, Government of India,1947, National Archive, New Delhi

৯গ। Uditi Sen, Citizen refugee—Forging the Indian Nation After Partition, Cambridge University Press, Newyork, 2018, p-201-204

৯ঘ। শামসুল ইসলাম , ভারত ভাগ বিরোধী মুসলিম জনমত, ( ভাষান্তর –চিররঞ্জন সেনগুপ্ত ) , কে পি বাগচী, কলকাতা, ২০১৯, পৃ-১৮ 

৯ঙ। UshaseeNandy, The Refugee Women in West Bengal and Its Influence on Bengali Culture, International Journal of Research in Engineering , Science and Mangement, Vol-2, issue-12, December,2019, p-581 

৯চ। Mukul Mukherjee, A Situational Analysis of Women and Girls in West Bengal, National Commission for Women, New Delhi,2004,p-1 

৯ছ। Suranjana Choudhury, Pangs on Being Unhomed: Engagaement with Displacement and Relocation in Selected Partition Narratives from Bengal, The NEHU Journal, vol-xii, no-1, January—june, 2004,p-1 

১০। সোমেন চক্রবর্তী, “উদ্বাস্তু  জীবন ও মানবাধিকার””, মুক্তমন প্রকাশন, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ , জানুয়ারি, ২০১৩, পৃ-৬৩

১১। Kudaisya, and Taj Young, “The After of the Partition in South Asia”, Routledge Publication, Delhi, 2004, P-22

১২। শৈলেশ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, জিন্না/পাকিস্তান–নতুন ভাবনা, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স, কোলকাতা, প্রথম প্রকাশ, চৈত্র, ১৩৯৪, পৃ-৩২৬ 

১৩। সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়,দেশভাগ দেশত্যাগ, অনুষটুপ প্রকাশন, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ, জানুয়ারি ১৯৯৪, পৃ- ১১

১৪। অভিজিৎ দাশগুপ্ত, বিস্থাপন ও নির্বাসন- ভারতে রাষ্ট্র–উদ্বাস্তু সম্পর্ক, কে,পি,বাগচি অ্যান্ড কোম্পানি, ২০১৮, কলকাতা, পৃ-১৯

১৫। যশোধরা বাগচী, নারী ও নারীর সমস্যা , অনুষ্টুপ, মার্চ , ২০১২, কলকাতা। পৃষ্ঠা –(১০৫-৭)

১৬। দোয়েল দে, উদ্বাস্তু নিপীড়নের কেন্দ্রে নারীর যৌনাঙ্গ: ভারত-পাক বিভাজন ১৯৪৭, (গাঙচিল পত্রিকা- শরণার্থী সংখ্যা ) , গাঙচিল , ২০১৭, কলকাতা , পৃষ্ঠা – (৪৪-৪৫)

১৭। ঐ , প্রাগুক্ত, পৃ- ৫৮

১৮। রামচন্দ্র গুহ , গাঁধি উত্তর ভারতবর্ষ , (অনুবাদ-আশীস লাহিড়ী), আনন্দ পাবলিশার্স ,নভেম্বর , ২০১২, পৃষ্ঠা –( ৮৪-৮৫ )

১৯। সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দেশভাগ- দেশত্যাগ , অনুষ্টুপ, জানুয়ারি , ১৯৯৪, কলকাতা , পৃ-৯৮

২০। সুবীর চৌধুরী ( সম্পাদিত), জ্যোতির্ময়ী দেবী রচনা সংকলন , দে’ জ , কলকাতা , নভেম্বর , ১৯৯১, পৃ-১১৫

২১। ত্রিদিব সন্তপা কুণ্ডু, বার্ধক্যে বাস্তু চ্যুতি – বাংলার দেশভাগ জনিত দুর্ভোগের একটি দিক , ইতিহাস অনুসন্ধান, কলকাতা, খণ্ড , ১৯ পৃষ্ঠা-৫৯৪

২২। জয়ন্তী বসু (সম্পা), রিকন্সট্রাকটিং দ্য বেঙ্গল পার্টিশন , সাম্য প্রকাশন , কলকাতা , ২০১৩, পৃ-১০১

২৩। ভি কে সাক্সেনা (সম্পা)দ্য পার্টি শন অফ বেঙ্গল, কনিস্ক পাবলিশিং হাউস, দিল্লী, ১৯৮৭।পৃ- ৫

২৪ । সেমন্তী ঘোষ (সম্পাদিত) দেশভাগ স্মৃতি আর স্তব্ধতা , গাঙচিল , কলকাতা , পৃষ্ঠা -৫৩

২৫। রিতু মেনন (সম্পাদিত), নো উইমেন্স ল্যান্ড, কালি ফর উইমেন, ২০০৮, নিউ দিল্লি , পৃষ্ঠা -১২-১৩

২৬। নিলেন্দু সেন গুপ্ত , বিধান চন্দ্র ও সমকাল, একুশ শতক , কলকাতা, পৃষ্ঠা -১২৫

২৭। ঝুমা সান্যাল, মেকিং অফ এ নিউ স্পেস- রিফিউজিস ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল , রত্না প্রকাশন , ২০০৩, কলকাতা , পৃষ্ঠা -১৭৪-৭৫

২৮। যশোধরা বাগচী ও শুভরঞ্জন দাশগুপ্ত (সম্পাদিত) দি ট্যমা এন্ড দি ট্যায়াম্প: জেন্ডার ইনইস্টার্ন ইন্ডিয়া ,স্ত্রী প্রকাশন, কোলকাতা, ২০০৩ , পৃষ্ঠা -৭৫-৭৭

২৯। জয়া চ্যাটার্জি, দেশভাগের অর্জন, বাংলা ও ভারত- ১৯৪৭-৬৭, মাওলা ব্রাদার্স, ফেব্রুয়ারী , ২০১৬, ঢাকা, পৃষ্ঠা – ( ১৫৯-১৬১) 

৩০। আশিস কুমার হীরা , বাংলা উপন্যাসে উদ্বাস্তু নারী , জলাক , কোলকাতা , ২০১৬, পৃষ্ঠা -১৩৭

৩১। জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী, বারো ঘর এক উঠান , দে‘জ পাবলিশিং , কোলকাতা , ১৩৬২, পৃষ্ঠা -৯ 

৩২। সুবীর রায় চৌধুরী (সম্পাদিত) জ্যোতির্ময়ী দেবীর রচনা সংকলন , দে’জ , কোলকাতা, ১৯৯১, পৃষ্ঠা -১৭

৩২ক। উদিতি সেন, প্রাগুক্ত, পৃ-২০৮

৩৩। আশিস কুমার হীরা , প্রাগুক্ত , পৃষ্ঠা -১৩৮

৩৪। অপূর্ব কুমার মুখোপাধ্যায় , বিতর্কিকা , প্রসঙ্গ- দেশভাগ , কোলকাতা , পৃষ্ঠা -৪৮-৫০

৩৫। সেমন্তী ঘোষ, প্রাগুক্ত , পৃষ্ঠা -৫৩

৩৬। অধীর বিশ্বাস (সম্পাদিত) গাঙচিল পত্রিকা , শরণার্থী সূচনা সংখ্যা , জুলাই , ২০১৭,  কোলকাতা , পৃ-৭৫-৭৭

৩৭। রণজিৎ রায় , ধ্বংসের পথে পশ্চিমবঙ্গ , শঙ্খ প্রকাশন , ১৯৭৭, মার্চ , কোলকাতা , পৃ-৯

৩৮। অশ্রু কুমার শিকদার , ভাঙা বাংলা ও বাংলা সাহিত্য , ২০০৫, দে ‘জ, কোলকাতা , পৃষ্ঠা – ১১

৩৯। প্রফুল্ল কুমার চক্রবর্তী , প্রান্তিক মানব , দীপ প্রকাশন , ২০১৩, কোলকাতা , পৃ – ১৯১

৪০। মনন কুমার মণ্ডল (সম্পাদিত) পার্টিশন সাহিত্য, দেশ কাল স্মৃতি , গাঙচিল , কোলকাতা , পৃষ্ঠা – ১৭২

৪১। ঐ ,  প্রাগুক্ত, পৃ-১৭৩ 

৪২। সুমন রায় , দেশবিভাগ ও নারী সমাজ , প্রসঙ্গ বাঙালি উদ্বাস্তু নারী , ইতিহাস অনুসন্ধান, খণ্ড , ২৩, পৃষ্ঠা -৭৬৭-৭০

৪৩। আনন্দবাজার পত্রিকা , ২৭ শে এপ্রিল , ১৯৪৯, পৃ-৪ 

৪৪। স্বাধীনতা , ১১ ই জানুয়ারি , ১৯৫৪, পৃষ্ঠা -৫

৪৫। স্বাধীনতা , ১০ ই আগস্ট , ১৯৫৪, পৃষ্ঠা -৪

৪৬। ঐ, ৫ ই ডিসেম্বর , ১৯৬১, পৃষ্ঠা -৩

৪৭। স্বাধীনতা , ২৪ শে ডিসেম্বর , ১৯৬১, পৃষ্ঠা – ৫

৪৮। আনন্দবাজার পত্রিকা , ২৪ শে ডিসেম্বর , ১৯৫৭, পৃষ্ঠা -৩

৪৯। স্বাধীনতা , ১৮ ই ডিসেম্বর , ১৯৬১, পৃষ্ঠা -৩

৫০। ঐ, ২০ শে ডিসেম্বর , ১৯৬১, পৃষ্ঠা – ৫

৫১। অশ্রু কুমার সিকদার , প্রাগুক্ত , পৃষ্ঠা – ৬১-৬৮

৫২। মহীতোস বিশ্বাস , পরতাল , এক বিংশ , ২০১২, কোলকাতা, পৃষ্ঠা- ৭৫

৫৩। রমেশ চন্দ্র সেন , পূব থেকে পশ্চিমে , ভারতী , ১৩৬৩ বঙ্গাব্দ, কোলকাতা , পৃষ্ঠা- ১১১

৫৪। ভাষা ও সংস্কৃতি ( পত্রিকা), ২০১৬, কোলকাতা , পৃষ্ঠা -৩৭০

৫৫। স্বাধীনতা , ৬ ই জুলাই , ১৯৫৫, পৃষ্ঠা- ৩

৫৬। আনন্দবাজার পত্রিকা , ২৬ শে অক্টোবর , ১৯৫৭, পৃষ্ঠা -৩

লেখক বর্তমানে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ পি. এইচ. ডি. গবেষক।

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।