মেহেরগড়ের অলৌকিক যান ও নারী
॥॥ পর্ব-১॥॥
২০০৯ সালে ইতালীয় বিজ্ঞানী ম্যাসিমো ভিডালে (Massimo Vidale) একটি আমন্ত্রণ পান একজন প্রত্নতত্ত্বের সংগ্রাহকের কাছ থেকে। চোরাই পথে, মেহেরগড় থেকে সংগ্রহ করা একটি প্রত্ন সামগ্রীর আসল না নকল তা যাচাই করতে হবে, আর বলতে হবে সেটি আদতেই হরপ্পা-সভ্যতার আমলের কি না।
বিজ্ঞানী ভিডালে চোরাই চালানের ঘোর বিরোধী। তাই আমন্ত্রণ গ্রহণ করার কথা না থাকলেও প্রত্ন সামগ্রীর সংক্ষিপ্ত বিবরণ শুনে চমকে গেলেন। ঠিক করলেন, যাবেন, দেখবেন।
দুজন দক্ষ ফটোগ্রাফার-সহ সামান্য কয়েক ঘণ্টা থাকবেন ঠিক করেও থাকলেন পুরো দু’টো দিন। বুঝলেন দাবীমতো এটি হরপ্পা সভ্যতারই। মেহেরগড়ের কি না সেটা একেবারে সঠিক বলতে না পারলেও অনুমান করলেন মেহেরগড় বা কাছাকাছি এলাকারই কোথাও এটি ছিল।
চোরাই প্রত্ন সামগ্রীর এক বড় সমস্যা হল তা আসলে ঠিক কোথা থেকে এসেছে সেটা কখনো জানা যায় না। তার একটা আনুমানিক এলাকার কথাই জানা যায়। ফলে প্রত্নসামগ্রীর সঠিক মুল্যায়নও বেশ কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়ায়। যদিও সংগ্রাহক বলছেন যে এটি এসেছে মেহেরগড় থেকে, কিন্তু কোন প্রত্যক্ষ প্রমাণ না থাকায় তা মেনে নেওয়া কঠিন। কাজেই এর উৎসস্থান অনুমান করা হল কোয়েটা ভ্যালী, জোব ভ্যালী, বোলান পাস এলাকার কোনও এক জায়গায়, তা ছাড়াও সম্ভাব্য এলাকার মধ্যে থাকবে উত্তর, উত্তর-পশ্চিম আফগানিস্তান। চোরাই চালানের আরেক সমস্যা হল নকলের সমস্যা। যে প্রত্ন সামগ্রীটি চোরাই চালান হল সেটি নকলও হতেই পারে। তার জন্য দরকার অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে তার বয়স বের করা।
ঔপনিবেশিক আমল থেকেই চোরাই চালান ছাড়াও প্রচুর প্রত্নসামগ্রী চলে যায় এক দেশ থেকে আরেক দেশে আইনি পথেই। সাম্রাজ্যবাদীশক্তিগুলো তাদের ক্ষমতা বলে উপনিবেশের প্রত্নসামগ্রী নিজেদের দেশে নিয়ে যেত। বিজ্ঞানী ভিডালে ব্যাক্তিগতভাবে এর বিরোধী হলেও এটাও স্বীকার করেন, যে ঐ ঔপনিবেশিক শক্তির উদ্যোগেই এগুলোর মূল্যায়ন হয়েছে, হচ্ছে। আর সংগ্রহশালাগুলোতে সযত্নে সংরক্ষিত হচ্ছে, সাথে তার বিশ্লেষণ ও গবেষণা হচ্ছে।
ম্যাসিমো ভিডালে মেহেরগড়ের এই চোরাই সংগ্রহটি দেখে মানসিক দোটানায় পড়লেন। এই প্রত্নসামগ্রীটি এতটাই অনন্য যে এর কথা সবার জানা খুব দরকার, বিজ্ঞানী হিসাবে এটা ওনার নৈতিক কর্তব্য, সকলকে জানানো। কিন্তু এই নিয়ে পেপার প্রকাশ হলে এই চোরাই সামগ্রীটিরই দাম হয়ে যাবে আকাশ-ছোঁয়া। অর্থাৎ ঘুরপথে চোরাই চালানকে সাহায্য করা হল। শেষ পর্যন্ত তিনি এক অন্তরঙ্গ বন্ধুর পরামর্শ চাইলেন। বন্ধু মত দিলেন তথ্য প্রকাশের পক্ষে। এবার দরকার চোরাই সামগ্রীর বর্তমান মালিকের অনুমতি। সেটাও পাওয়া গেল।
এবার সবার আগে প্রত্নসামগ্রীর প্রকৃত বয়স জানা দরকার। মালিকের অনুমতি নিয়ে করা হল পরীক্ষা; করা হল সর্বাধুনিক থার্মো-ল্যুমিসেন্স পদ্ধতিতে। ভিডালের প্রাথমিক অনুমান ছিল সঠিক। ২৭০০ সাধারণ পূর্বাব্দে (BCE) তৈরী এটি। ম্যাসিমো ভিডালে লিখলেন। লিখলেন, ‘The Lady of the Spiked Throne’
॥॥ পর্ব-২॥॥
অলৌকিক যানের নারী ‘The Lady of the Spiked Throne’-এর বর্ণনাঃ
এটি ছিল টেরাকোটা, সযত্নে রঙ করা,পা মুড়ে বসা ষাঁড়ের আকৃতির নৌকা জাতীয় যান। নৌকার ছাউনির তলায়, সাতটি সূঁচালো অগ্রভাগ (অনেকটা সূর্যের আলোর ছটা যে ভাবে আঁকা হয়) দিয়ে সাজানো সিংহাসন। সিংহাসনের হাতল হিসাবে দুই পাশে দুটি দাঁড়ানো ষাঁড়। সিংহাসনে বসে একজন নগ্ন নারী। নারীর পা রাখা আছে ছোট নীচু জলচৌকিতে। দুই হাত ষাঁড়ের পিঠে। সিংহাসনের দুই পাশে দুইজন করে চারজন দেহরক্ষী বা সেবক। সামনে লম্বালম্বি ভাবে দুই ভাগে নীচু আসনে জোড়ায় জোড়ায় বসা নারী ও পুরুষ। বেশ ভুষায় সুসজ্জিত। দুই ভাগের মাঝখানে যাতায়তের পথ। পথের শেষে কয়েক ধাপ সিঁড়ি। সিঁড়ির উপর দাঁড়িয়ে সেবকরা। তাদের নজর সিংহাসনে বসে থাকা নারীর উপর।
এই যানটিকে বাইরের দিক থেকে দেখলে দেখা যাবে হাঁটু মুড়ে বসা ষাঁড়। অথচ বাকি সব কিছুতেই এটিকে নৌকা মনে হয়। এটি একেবারে অক্ষত অবস্থায় ছিল। শুধু সামনের ষাঁড়ের সিং-এর ছুঁচলো অংশ ভাঙ্গা ছিল। যা পরে রঙ মিলিয়ে আঠা দিয়ে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ম্যাসিমো ভিডালে তাই এর নামাকরণ করলেন কাউ-বোট।
কাউ-বোটের মাপ
১. টেরাকোটা। এটি লম্বায় ৫৭০ মিলিমিটার, চওড়ায় (সব চেয়ে চওড়া অংশে)২২০ মিলিমিটার। সব চেয়ে উঁচু অংশে ২১০ মিলিমিটার। সামনের ষাঁড়ের মুখটি ১০২ মিলিমিটার চওড়া। যাঁড়ের সামনের পা ১০০ মিলিমিটার আর পেছনের পা ৭৫ মিলিমিটার লম্বা।
দুই ভাগে বসা নারী পুরুষের মাপ একেবারে এক নয়। তবে লক্ষ্যণীয় হল সব সারিতেই মেয়েরা পুরুষদের চেয়ে খানিক লম্বা।
মাপঃ
১. নারী, লম্বা ১১৮ মিমি, বসার আসন ৪৮ মিমি
২. পুরুষ, লম্বা ১০২ মিমি, বসার আসন ৩৭ মিমি
৩. নারী, লম্বা ১১৪ মিমি, বসার আসন ৩৩ মিমি
৪. পুরুষ, লম্বা ১০০ মিমি, বসার আসন ৩০ মিমি
৫. নারী, লম্বা ১১০ মিমি, বসার আসন ৪৪ মিমি
৬. পুরুষ, লম্বা ৯৮ মিমি, বসার আসন ৩০ মিমি
৭. নারী, লম্বা ১২২ মিমি, বসার আসন ৩৯ মিমি
৮. পুরুষ, লম্বা ৯৫ মিমি, বসার আসন ৩৯ মিমি
নৌকার ছাউনির নীচে সিংহাসনে বসে কে এই নগ্ন নারী? অবশ্যই সাধারণা নন। দেবী? রানী? জানার উপায় নেই।
কেন তৈরী হয়েছিল এই শিল্পকলাটি? ধর্মীয় অনুষ্ঠান? রাজকীয় অনুষ্ঠানের স্মৃতি? জানার উপায় নেই। ম্যাসিমো ভিডালে শুধু জানেন গোটা সিন্ধু-হরপ্পা সভ্যতায় এটি অদ্বিতীয়।
॥॥ গঠন॥॥
গোটা শিল্পকর্মটি সযত্নে তৈরী। একে চারদিক থেকে সমান আঁচে আগুনে পোড়ানো হয়েছিল। গোটা শিল্পকর্মটির গঠন এমনই যে প্রথমেই চোখে পড়বে ষাঁড়ের মাথাটি। তারপরে ভেতরের দৃশ্যের সবটা মিলিয়ে মনে হবে এটি একটি শোভাযাত্রার দৃশ্য।
বাইরের দিকের গঠনে এটিকে একটি হাঁটু মুড়ে বসে থাকা ষাঁড়ের রূপ দেওয়া হয়েছে। পাশ থেকে দেখলে, ষাঁড়ের সামনের দুই পা পেছনের দিকে ভাঁজ করা আর পেছনের দুই পা সামনের দিকে ভাঁজ করা। পেছনের পায়ের থেকে সামনের পা লম্বায় খানিকটা বড়।
ষাঁড়ের পেছনের দিকে নৌকার ছই-এর মত করে তৈরী আছে ছাউনি। যার নীচে একটি উঁচু আসনে বসা সেই নগ্ন নারী। আসনের দুইপাশে হাতলের বদলে দুটি দাঁড়িয়ে থাকা ষাঁড়ের মূর্তি। এই দুই পাশের দুটো ষাঁড়ের উপর দুই হাত রেখে আছেন নারী। নারীর পা রাখা আছে একটি নীচু আসনে।
নারীর সিংহাসনের পেছনে আলোর ছটার মত করে বের করা আছে সাতটি সামনের দিকে ক্রমে সরু হয়ে যাওয়া লাঠির মত কিছু। এগুলোর পাঁচটি খাড়া আর দুটি আনুভূমিক,দেখলে সূর্যের রশ্মির ছটা বলে মনে হবে। সিংহাসনের দুই পাশে ছাউনির দেয়াল ঘেঁষে দুই দুই করে চারটি পুরুষ মুর্তি। যাদের চেহারা, দাঁড়ানোর ভঙ্গী, কম জায়গায় গুরুত্বহীন ভাবে চেপে রাখা, সাদামাটা পুরুষ চেহারায় তাদের সিংহাসনে বসা নারীর সেবক বলেই মনে হবে।
তারপরে খোলা অংশে দুই সারিতে একটু উঁচু সাধারণ বসার টুলের মত আসনে বসে আছে চারজন নারী চারজন পুরুষ। জোড়ায় জোড়ায়। মাঝখানে চওড়া যাতায়াতের পথ। যাতায়াতের পথের দুই পাশে নর-নারীরা বসে আছে। একজন পুরুষের পাশে রাস্তার ওপাশে একজন নারী। দুই দিকেই প্রথমে নারী।
এই আটজনকে পার হয়ে যানের সামনের দিকে এগোলে দেখা যাবে ষাঁড়ের কুঁজ যেখানে সেই অংশ ভেতরদিকে ফাঁপা। এই ত্রিভুজাকৃতি ফাঁপা অংশে তিনধাপ সিঁড়ি নীচের দিকে নেমে গেছে। সিঁড়ির ধাপ অসমান। সিঁড়ির গোড়াতে দুই পাশে দাঁড়িয়ে আরও দুইজন পুরুষ। তারা তাকিয়ে আছে সিংহাসনের দিকে।
চ্যাপ্টা কপাল, পাখীর ঠোঁটের মত সূঁচালো নাক আর গোল চোখ নিয়ে নারীদের চেহারায় একটা অতিপ্রাকৃত রূপ। সে তুলনায় পুরুষদের গঠন কিন্তু অনেক বেশি স্বাভাবিক। অবশ্য মেহেরগড়ে এই ধাঁচের অতিপ্রাকৃত নারী মূর্তি নতুন নয়। আগেও পাওয়া গেছে।
সবচেয়ে অদ্ভুত হল নারী পুরুষ সবার হাত সামনের দিকে বাড়ানো, খোলা হাতের পাতা নীচের দিকে। যদি এদের দাঁড় বাওয়া মাঝি ভাবতে হয় তাহলে তাদের হাতের অবস্থান এরকম হবার ছিল না। হাতের আঙুল মুষ্টিবদ্ধ হবার কথা। তবে কি তাদের হাতে ষাঁড়ের লাগাম? লাগাম হলে তা সবার হাতে থাকবে কেন? সামনের সারির একজন বা দুইজনের হাতে থাকার কথা।
মূর্তিগুলোর কিছু অংশ বিশেষ করে মাথা মুখ চোখ আলাদা করে হাতে বানানো, কিন্তু গোটা শরীর ছাঁচে বানানো। আবার সেবকদের বেলা কিন্তু পুরোটাই ছাঁচে বানানো। বোঝা যায় সেবকদের এই মূর্তি জনপ্রিয় ছিল। তাই শিল্পী ছাঁচ বানিয়ে রেখেছিল।
গোটা শিল্পকর্মটি হাতে তুলে ধরার জন্য পেছনের দিকে একটি হাতলও আছে। হাতলের রঙ কালো। আর হাতলটি বার বার ধরার ফলে খানিকটা ক্ষয়েও গেছে।
অনুমান করা যেতে পারে এটিকে পেছনের হাতল ধরে এদিক ওদিক নিয়ে যাওয়া হত, অথবা এখনকার প্রদীপ নিয়ে আরতি করার মতই আরতি করা হত, অন্য কোনও বিশেষ দেবতার উদ্দেশে।
গোটা শিল্পকর্মটি মাপলে দেখা যাবে ষাঁড়ের দুই হাঁটু থেকে তার কুঁজের উচ্চতা একটি প্রায় নিখুঁত সমবাহু ত্রিভুজ। দুই দিকে বের হওয়া ষাঁড়ের দুটো সিংকে বেশ শক্তিশালী নজরকাড়া রূপ দেওয়া হয়েছে।(সিং থেকে সিং এর বিস্তার ১৩৯ মিলিমিটার) পাশ থেকে দুটো সিং কে দেখলে দেখা যাবে সে দুটো একটু সামনের দিকে ঝোঁকানো। ফলে মনে হবে ষাঁড়টি তার মাথা একটু নীচের দিকে ঝুঁকিয়ে বসে আছে।
সামনে থেকে দেখলে ষাঁড়ের বলিষ্ঠ আকারই প্রথমে চোখে পড়বে। বলিষ্ঠ ষাঁড়টির চোখ এমন যে মনে হবে এটি বলিষ্ঠ কিন্তু শান্ত ও উপকারী। সেই আমলের দক্ষিণ এশিয়া থেকে মেসোপটেমিয়া জুড়ে ষাঁড়ই ছিল মানুষের সব চেয়ে বড় সাহায্যকারী জীব। সব বোঝা তো তারই ঘাড়ে। এই শিল্পকর্মটি যেন সর্বার্থে সেই কথাই বলছে।
পুরাতত্ত্ববিদ্ কেনয়ের, হরপ্পা সভ্যতায় ষাঁড়ের কথা কি বলেছেন একটি পড়ে নিঃ-
“the lord of animals and the anthropomorphic horned personage well known in the iconography of the first half the 3rd millennium BC….. Large horns could represent the power, strength, virility of the animal; by analogy whoever wore a headdress with a horn would possess similar attributes. The anthropomorphic figures with these headdresses may depict powerful hunters or shamans or even some form of water buffalo or cattle deity”.
কেনয়েরের শেষ কটি কথায় আমার মাথায় এসে গেল ‘মহিষাসুর’।
এই ষাঁড়ের নাকের ফুটো (৪০ মিলিমিটার) আর তাকে ঘিরে কয়েকটি ছোট ছোট ফুটো কিন্ত আঁচে পোড়ানোর আগেই করা হয়েছিল। এই যাঁড়ের মুখের গড়নের মাপজোকের সাথে মিল রেখে বলা যেতে পারে মেহেরগড়ে পাওয়া একটি সীলের ষাঁড়ের মুখের সাথে এর যথেষ্ট মিল আছে। ষাঁড়ের মুখে করা ছিদ্র আর কাটা দাগ ছাড়া আছে রঙ করা নানা দাগ। যা ষাঁড়ের মুখের বৈশিষ্টকে আরও ফুটিয়ে তুলেছে।
এখানে যানের আরোহীদের গড়ার জন্য ব্যবহার করা, একটি মানুষের শরীরের খানিক ছাঁচে ঢালা, খানিক হাতে বানানো, এই মিশ্র প্রক্রিয়া হরপ্পা সভ্যতায় আর দেখা যায় নি। এটা দেখে মনে হয় হয়ত খুব দ্রুত বানাতে হয়েছিল, বা একাধিক সাহায্যকারী কাজ করছিল। যেমন সেবকদের মধ্যে ছাউনির নীচের চারজনের তুলনায় সামনের দুজনকে অনেক ভালো ভাবে গড়া হয়েছে। কেন এই তাড়াহুড়ো? ধর্মানুষ্ঠানের দিন খুব কাছে এসে গেছে বলে? যদি তাই হয় তবে ধরতে হয় তাদের দিন গোনার ব্যবস্থা বেশ উন্নত ছিল। বা ছিল এখনকার মত পঞ্জিকা।
মাঝখানে বসা মূর্তিগুলো তাদের আসনে বসা অবস্থায় দেখলে মনে হবে খানিকটা পেছন দিকে হেলে আছে। ফলে অনেকটা আধুনিক দ্রুতগতি যানে বসা মানুষের মত লাগবে।
সিংহাসনে বসা নারীর শরীর বাকিদের চেয়ে ত্রিশ শতাংশ বড়। মাথা ছাউনির ছাদ ছুঁইছুঁই। খুব সামান্যই ফাঁক। আগুনে পোড়ানোর সময় ভাল তাপ নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা না থাকলে এমনটা বানানো কঠিন। সিংহাসনে বসা নারীর হাতও কিন্তু মাঝে বসা নারী পুরুষদের হাতের মতো সামনের দিকে বাড়ানো, হাতের পাতা নীচের দিকে। বাকি নারীদের মত এরও বুকে একটি কাপড়ের খণ্ড, যার নীচ থেকে বের হয়ে থাকবে স্তনবৃন্ত, এটুকু ছাড়া পুরো শরীর নগ্ন। এই নারীর মাথায় ওড়না জাতীয় কিছু আছে। যার ফাঁক থেকে মাথার লম্বা চুল বের হয়ে আছে, ডান দিকে তিন গোছা আর বাঁদিকে দুই গোছা। এর মাথা-মুখ অন্যদের মত হাতে বানানো হয় নি, বরং ছাঁচে গড়া হয়েছে। অর্থাৎ এই মাথা-মুখ ছিল জনপ্রিয়।
এই নারীর শরীরের আরেকটা বৈশিষ্ট্য হল এর বসার ভঙ্গী অন্যদের মত নয়। অনেকটা যেন বসা থেকে উঠে দাঁড়াবার আগের মুহূর্তের মত। নারীর শরীর আসনে দৃঢ় ভাবে না বসে বরং শুধু পা দুটো দিয়ে নীচের লাল রঙ করা জলচৌকিতে পুরো শরীরের ওজন রাখা। এটা আচমকা হয় নি, এটা ছাঁচে করা। ফলে বোঝাই যায় এই ভঙ্গী ভেবে-চিন্তে করা, বা চলতি প্রথানুযায়ী করা।
লেখক বিজ্ঞানী লেখেন যে মেহেরগড়ে এমন বহু নারী মূর্তি পাওয়া গেছে, যেগুলো ঠিক দাঁড়ানো নয়, অথচ কোনও কিছুর উপরে বসাও নয়, মাঝামাঝি।
উনি বলেন সম্ভবত এই নারী মূর্তি সবই এই রকম কোনও সিংহাসনে বা নীচু জলচৌকিতে বসানো ছিল। আসনটি ভেঙ্গে গেছে, বা আসন থেকে স্রেফ আলগা হয়ে গেছে। আসন আর মূর্তি আলাদা বানালে তা কোনও না কোনও সময়ে আলগা হয়েই যেতে পারে খুব সহজে।
মুখের গড়নে একটা শক্তিশালী বা প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের আভাস গড়ে তোলা হয়েছে চাপা ঠোঁট আর লজেন্সের মত বড় গোল চোখ দিয়ে। এমন মুখের গড়ন দেখা গেছে নৌশারোতে। চোখের আকার ঘিরে কাজল পরানোর মত করে কালো রঙ দেওয়া ছিল। এর মুখ আর শরীরে ছিল উজ্জ্বল লাল রঙ। (যদিও মাঝখানের সব নারীদেহের রঙ ছিল হলুদ)। মাথার ওড়না ধরনের ঢাকা আর তার ফাঁক থেকে বের হয়ে থাকা চুলের এই নমুনা পাওয়া গেছে মেহেরগড়ে ভাঙ্গা অবস্থায়। বর্তমানে আছে টোকিওর মেট্রোপলিটান মিউজিয়ামে। এর কপালে একটা লম্বা পাত মত ছিল। যার সঠিক অর্থ বোঝা যায় নি। যদিও এরকম পাত লাগানো দেখা গেছে মেহেরগড়ে, নৌশারোতে শিশুকে কোলে নেওয়া পুরুষ কপালেও। (Samzun 1992, রাখা আছে টোকিও মেট্রোপলিটান মিউজিয়ামে)।
সিংহাসনের নারীর মুখ এমন ভাবে আছে যে তার মুখ দেখতে হলে ঝুঁকে দেখতে হবে। অথবা হাতল ধরে উঁচু করলে, মাথার বরাবরের চেয়ে সামান্য উঁচু তবেই এই সিংহাসনের নারীর মুখ দেখা যাবে। যদি তেমন ভাবনা থেকে থাকে গড়ার সময়, তবে বলতেই হবে খুবই উচ্চস্তরের ভাবনা ছিল শিল্প ব্যবহারের বিষয়ে। ব্যবহারকারীর প্রয়োজনীয়-সুবিধা-ভিত্তিক গঠন।
সামনের দিকের ষাঁড়ের কুঁজের ভেতরের ফাঁপা অংশের মাপ লম্বায় ২১০ মিমি, চওড়ায় ১৮০ মিমি, উচ্চতা ২০০ মিমি। বাইরের দিকে যেটা ষাঁড়ের কুঁজ হবার কথা সেখানে কালো রঙ দিয়ে কয়েকটি খাঁজ দেখানো হয়েছে। যা দেখলে মনে হবে কোনও ছাউনির ফ্রেম এটা। এরই সামনের দিকে প্রজাপতির মত কোনও পতঙ্গের নমুনা, নক্সার উপরে আবার বেশ কিছু বিন্দু আছে। এই ধরনের নক্সার ব্যবহার দেখা গেছে পেরিয়ানো ঘুন্ডাই জোয়াব ভ্যালীতে (Fairservis.1959.) পাওয়া মাটির বাসনে।
পেছনের ছাউনির মত ছাউনির ব্যবহারের উদাহরণ দেখা গেছে তৃতীয় সহস্রাব্দের মেসোপটেমিয়ার স্থলযানের। আর দেখা গেছে তামায় গড়া (ছাঁচে গড়া) গরুর গাড়িতে, ছানু-দারোতে (Mackay 1943, Kenoyer, 1998), হরপ্পায়(Yule University 1985).
সিংহাসনের লম্বা খোঁচ, যেগুলো দেখলে আলোর রশ্মি মনে হবে সেগুলোর ব্যবহারও কিন্তু একেবারে অভিনব নয়। এরকম দেখা গেছে মেহেরগড়ে, নমুনা রাখা আছে টোকিও মেট্রোপলিটান মিউজিয়ামে (jarrige 1995 ), নৌশারোতেও পাওয়া গেছে (jarrige 1989, Samzun 1992).
সিংহাসনের মত কাঠের আসবাবের ছবি পাওয়া যায় হরপ্পা সভ্যতার সীলে আর মাটির বাসনের নক্সায়। দুই পাশের হাতলের জায়গায় দাঁড়ানো যাঁড়ের উপস্থিতি কিন্তু আর কোথাও নেই।
॥॥ রঙ আর নক্সা ॥॥
বাইরের দিকে পুরু করে লালচে-কমলা রঙ লাগানো ছিল। এই প্রাথমিক রঙের উপরে কালো রঙ দিয়ে লতাপাতা জীব জন্তু আর জ্যামিতিক নক্সা করা ছিল। তলার দিকে মসৃণ ছিল না, আর তাতে কাঁচা অবস্থায় আঙুলের চাপের দাগ ছিল।
গোটা শিল্পকর্মটি একেবারে অক্ষত অবস্থায় ছিল। শুধু সামনের ষাঁড়ের সিং-এর সূঁচালো অংশ একটু ভাঙ্গা ছিল, যেটা পরে রঙ মিলিয়ে জোড়া লাগানো হয়েছে।
এটি বানানোর সময় বাইরের অংশের রঙ লাগানোর পরে আঁচে রাখা হয়েছিল। কিন্তু ভেতরের পনেরটি মূর্তির গায়ে উজ্জ্বল লাল, হলুদ, নীলচে-কালো রঙের যে চিহ্ন দেখা গেছে সেগুলো সম্ভবত আঁচে পোড়ানোর পরে লাগানো হয়েছে।
ষাঁড়ের কপালের উপরের দিকে আঁকা আছে (সম্ভবত) সূর্যের প্রতীক। একটি মোটা রঙীন গোলাকৃতি ঘিরে সমান দূরত্বে অনেকগুলো ছোট বিন্দু আঁকা। সম্ভবত সূর্যের কিরণের ছটা বোঝাতে ব্যবহার হয়েছে।
কাছাকাছি ফৈজ মহম্মদ পুরাক্ষেত্রে এই ধরণের সূর্যের প্রতীক আঁকা দেখা গেছে মাটির বাসনে। এছাড়া, শহর-ই-শোক্তা পুরাক্ষেত্রে দেখা গেছে উল্টো V এঁকে তলায় একটি সোজা দাগ টেনে, তার নীচে ছোটছোট বিন্দু এঁকে সূর্য বোঝানো হয়েছে। কাজেই এই ছোট বিন্দুকে সূর্যের রশ্মির প্রতীক হিসাবে ব্যবহার এই সব এলাকায় বরাবরই ছিল বলে ভাবা যেতে পারে।
ষাঁড়ের চোখের উপরে মানুষের মত ভ্রূ আঁকা। দুই চোখের মাঝখানে কপালে ছোট ছোট বিন্দু দিয়ে আরেকটি ত্রিভুজ আঁকা। যেটা দেখলে মনে হবে বসে থাকা ষাঁড়ের দুই পাশের পা থেকে তার কুঁজ অবধি যে সমবাহু ত্রিভুজ তৈরী হয়েছে তারই প্রতিরূপ আঁকা হয়েছে কপালের বিন্দু দিয়ে ত্রিভুজে।
ষাঁড়ের বড় চোখের মণি ভরাট রঙ করা হয়েছে অনেকগুলো ছোট ছোট বিন্দু দিয়ে। ষাঁড়ের মুখটি পাশ থেকে দেখলে এমন কিছু রেখা আর বিন্দু আঁকা দেখা যাবে মনে হবে যে ষাঁড়ের মুখে চামড়ার নক্সা করা লাগাম পরানো আছে।
গলার কাছে করা নক্সা দেখে মনে হবে গলায় কোন গয়না পরানো আছে। আরো কিছু দাগ আঁকা আছে তবে সেগুলোকে ষাঁড়ের পেশীর বাহ্যিক রূপ দেবার চেষ্টা মনে করা যেতে পারে। এছাড়া আছে ষাঁড়ের গায়ে লতাপাতার নক্সা।
এই বিশেষ ধরনের লতাপতার নক্সাতে মাছের রূপের একটা আভাস থাকায় প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই নক্সাকে সাধারণত জলজ লতার নক্সা বলে ধরে নেন। এখানে ষাঁড়ের গায়ের দুই পাশে একই রকম নক্সা থাকায় বোঝা যায় এটা এলোমেলো খামখেয়ালি নক্সা ছিলো না, ছিলো বহুল প্রচলিত নক্সা। টোকিও মেট্রোপলিটান আর্ট মিউজিয়ামে সংরক্ষিত ২৭০০-২৮০০ সময়ের হরপ্পা সভ্যতার মাটির বাসনে এরকম নক্সা আছে।
দুই পাশের ঢেউ খেলানো দাগের নক্সা ষাঁড়ের গলা-বুক আর শরীরকে আলাদা করে রেখেছে। ষাঁড়ের খুর রঙ করা নেই, কিন্তু খুরের দুই ভাগ বোঝানোর জন্য গভীর খাঁজ কাটা দাগ ব্যবহার করা হয়েছে।
ষাঁড়ের বসা অবস্থায় দুই পায়ের ছোট বড় অংশ দেখে মনে হতে পারে শিল্পী এখানে ষাঁড়ের দৈহিক মাপজোকে ভুল করেছে। কিন্তু না, এই গোলমাল হরপ্পা সভ্যতার সীলেও দেখা গেছে। অর্থাৎ হতে পারে এই ভুল ঠিক ভুল নয়, এটাও একটা বিশেষ ধরণ, যা তারা বজায় রেখে ছিল বরাবর।
ষাঁড়ের পায়ে আঁকা আছে ফণা তোলা সাপ। একাধিক সাপ। এই সাপের নক্সা হরপ্পা সভ্যতার বাসনে আছে, কিন্তু খুব কম। কিন্তু তৃতীয় সহস্রাব্দের বালুচিস্তানের নাল,আঞ্জিরা, সিয়া দাম্ব এলাকায় কোবরার নক্সা ব্যবহারের নিদর্শন পাওয়া গেছে। এছাড়া ইরানেও কোবরার নক্সা ছিল। যেগুলো পাওয়া গেছে সিস্তান-বালুচিস্তানের কাছে জামুরিয়ান খাতের এলাকার একটি বড় কবর থেকে। ফলে অনুমান করা যেতে পারে সাপের নক্সা একটা বেশ বড় এলাকা জুড়েই জনপ্রিয় ছিল।
দুই পাশের ঢেউ খেলানো দাগের নক্সা। এই ঢেউ খেলানো দাগগুলোর মধ্যে, দুই পাশেই, আঁকা আছে চারটি ত্রিভুজ, যার কোন অর্থ ভিডালে বলে যাননি। আমার নিজের মনে হয়েছে দুই পাশের ঢেউ খেলানো নক্সা জলের ঢেউ বোঝাবার জন্য আর ত্রিভুজ হল নদীতে পাথরের উপস্থিতি।
সামনের দিকে, ষাঁড়ের মাথার পেছন দিকের ফাঁকা জায়গায় তিন ধাপ সিঁড়ি ছিল লাল রঙের। আবার সিংহাসনে বসা নারীর পাদানির রঙও ছিল লাল।
মাঝখানে বসা নারী-পুরুষদের গায়ের উপরের পোষাকের রঙ ছিল হলুদ। মাঝে মাঝে নীলচে কালো ব্যবহার হয়েছিল সম্ভবত পোষাকের ভাঁজ,খাঁজ বা কোন গয়না বোঝাবার জন্য। এসব রঙ প্রায় সবটাই উঠে গেছে তাই সঠিক বলা কঠিন। তবে কাছাকাছি নৌশারো কিছু পরের (২৬০০-২৫০০), মুর্তিগুলোতে দেখা গেছে উপরের পোষাকে হলুদ রঙ আর কোমরের নীচের পোষাকে গাঢ় বাদামী রঙ ব্যবহার করতো। এখানে পুরুষদের মাথার পাগড়ি ছিল লাল রঙের। নারীদের মাথার চুল কালো আর চোখ সম্ভবত কালো রঙে আঁকা ছিল। মাথার পাগড়িতে লাল রঙের আভাস দেখা গেছে। গায়ে ছিল হলুদ রঙ, তবে কাঁধের কাছে কালো রঙের বৃত্ত আঁকা ছিল।
সিংহাসনের রঙ ছিল হলদেটে-কমলা। ফলে তার উপরে লাল রঙের নারীর উপস্থিতি বেশ দৃষ্টি আকর্ষক রঙের ব্যবহার বলতেই হবে।
॥॥ পোষাক ॥॥
এই শিল্পকর্মে অনেক কিছুই জানা যায় আবার অনেক কিছু কল্পনা করাও যায়. যুক্তি সহযোগে। তবে সরাসরি যা বেশ পরিস্কার ভাবে জানা যায় তা হল ২৭০০ সাধারণ পূর্বাব্দের এই ভারতীয়দের পোষাক কেমন ছিল। জানা গেল সামাজিক বিভেদ ছিল। আর সেই বিভেদ তাদের পোষাকেই প্রকট ছিল।
সিংহাসনে বসা নারীর দুইপাশে দাঁড়ানো দুই জন করে সেবকের গলায় মালা জাতীয় গয়না, আর মাথায় পাগড়ি। পাগড়ি উপরদিকে কিছুটা উঁচু। (অনেকটা এখনকার বি.এস.এফ, এর আনুষ্ঠানিক ভাবে পরা পাগড়ির মত।)
এদের পরনের জামা রাজস্থানের গুজরাতের লোকনাচের পোষাকের মত কোমর থেকে নীচের দিকে মেয়েদের স্কার্টের মত ভাঁজ ভাঁজ কুর্তা জাতীয়। এখন এই পোষাকের সাথে পা চাপা পাজামা মত পরে, কিন্তু এখানে বানানো মূর্তির কোমরের নীচে কি ছিল বা আদৌ কিছু ছিল কি না বলা কঠিন।
আবার আসনে বসা পুরুষদের মাথার পাগড়ি অনেকটা চ্যাপ্টা। যানে উপস্থিত পুরুষরা যে দুই সামাজিক শ্রেণীতে বিভক্ত তা এই পোষাক দেখেই বোঝা যায়।
বিশেষ ভাবে লক্ষ্যণীয় নারীদের পোষাক। নারীদের মাথায় উঁচু করে পাগড়ি বাঁধা আছে, আর সেই পাগড়ির ফাঁক থেকে কপালের দুই পাশ দিয়ে লম্বা চুল বের হয়ে আছে।
সব চেয়ে অবাক করা বিষয় হল পুরুষরা পোষাক পরে আছে বটে কিন্তু সব নারীই নগ্ন। এই এতজন নগ্ন নারী, পোষাক পরা পুরুষদের সাথে এক অনুষ্ঠানে। এই বিশেষ বৈচিত্র্য বলে এটি আদতেই কোনও বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দৃশ্য, আর সম্ভভবত তা ছিল নারীদের অনুষ্ঠান।
অথবা এমনও হতে পারে নারীদের পোষাক শুধু রঙ দিয়ে বোঝানো হয়েছিল। এখন রঙ উঠে যাওয়ায় নগ্ন মনে হচ্ছে। অথবা নারীরা সত্যিই সর্বাঙ্গে রঙ মেখে ছিল। এখনকার বডি পেইন্টিং-এর মত।
বসে থাকা নারীদের বুকে এক খণ্ড চওড়া মসৃণ কাপড় বাঁধা আছে বলে বোঝা যায় বটে কিন্তু নারীদের স্তন বৃন্ত সেই বক্ষ বন্ধনীর বাইরে বের হয়ে থাকায় আমাদের পরিচিত নারী বক্ষ বন্ধনী একে বলা যাবে না। তবে এটাই হয়ত তখনকার স্টাইল ছিল এমনও হতে পারে। এই বক্ষ বন্ধনী বাদে নারীরা কিন্তু সম্পূর্ণ নগ্ন।
মাঝখানে বসা পুরুষদের গলায় গলাবন্ধের (Choker) মত কোন গয়না ছিল। যা খানিক নীচে নেমে এসে আধুনিক টাই-এর মত লাগছে। গলার গয়নায় যে ডিজাইন দেখা গেল তা অদ্ভুতভাবে দেখতে পুরুষাঙ্গের মত।
খুব কিছু অভিনব নয়। হরপ্পা সভ্যতার শহর নৌশারোতে (Nausharo) এমন পুরুষাঙ্গ গয়না পাওয়া গেছে সময় ২৬০০-২৫০০ BCE (Jarrige-1989 & 1993))।
পুরুষদের মাথার পাগড়ী আধুনিককালের পাঠানদের মত, আর ছিল লাল রঙের। মাথার চুল কাঁধ অবধি নেমে এসেছে। গায়ে মেয়েদের মতই হলুদ রঙ। হলুদের মধ্যে কিছু কালো ছিল, সম্ভবত পোষাকের খুঁটিনাটি বোঝাতে বা অন্য গয়না দেখাতে। এই হলুদের উপর কালো রঙের ব্যবহার দেখা গেছে নৌশারোতে (Samzun 1992)। নমুনা রাখা আছে টোকিওর মেট্রোপলিটান মিউজিয়ামে। নমুনাগুলো কিছুটা ভাঙ্গা আর ছড়িযে থাকা অবস্থায় পাওয়া যায়। সেগুলোতে কোমরের নীচের পোষাক বোঝাতে বাদামী রঙ ব্যবহার করা হয়েছে। চুল আর চোখ কালো।
সেবকদের গলায় মাঝে বসা পুরুষদের মতই গয়না। ছাঁচে বানানোয় পুরুষদের শরীরে গয়না পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে না, শুধু গলা ছাড়া। মাঝের পুরুষদের পাগড়ির ধরণ আলাদা। সেবকদের ঊর্ধ্বাংশের পোষাক রাজস্থানী লোক সংগীতের নর্তকের মত, উপরের অংশ গায়ের সাথে চাপা, কোমরের নীচ থেকে স্কুলের মেয়েদের স্কার্টের মত ভাঁজ ভাঁজ, ফোলা, একটু ত্রিভুজাকৃতি।
॥॥ আলোচনা-১॥॥
শিল্প কর্মের বিশ্লেষণঃ-
কাউ-বোট কি আসলেই বোট?
এই কাউ বোট, নৌকা না গাড়ি সেটা বেশ কঠিন প্রশ্ন।
দুটোরই পক্ষে বিপক্ষে কি আছে দেখা যাক।
১. জলযানঃ –সাধারণভাবে গঠনশৈলী আর নির্মিত দৃশ্য। স্থলযানঃ –ষাঁড় স্থলচর জীব
২. জলযানঃ – ষাঁড়ের মুখের ডিজাইনে নৌকার মুখ, এমন তো হয়ই। স্থলযানঃ – ষাঁড় তো স্থলযানের সামনে লাগবেই
৩. জলযানঃ – ষাঁড়ের বুকে জলজ লতাপাতার নক্সা। স্থলযানঃ – ষাঁড়ের মুখে লাগামের নক্সা।
৪. জলযানঃ – পেছনের ছাউনি। স্থলযানঃ – এমন ছাউনি স্থলযানেও থাকতে পারে।
৫. জলযানঃ – চাকা নেই। স্থলযানঃ – ষাঁড়ের পা চাকার প্রতীক ধরা যায়।
৬. জলযানঃ – পাশের নক্সা জলের ঢেউ এর মত। স্থলযানঃ – ষাঁড়ের গায়ে কোবরা সাপের নক্সা। (কোবরা স্থলচর।)
৭. জলযানঃ – দুইপাশে চারজন করে বসা লোক, এরা দাঁড় বাইছে। স্থলযানঃ –
দুইপাশে চারজন করে বসা লোকের হাতের ভঙ্গী দাঁড় চালাবার মত নয়।
৮. জলযানঃ – সুমেরিয়ান নক্সায় অনেকটা এরকম দৃশ্য আছে। স্থলযানঃ – সুমেরীয় প্রেক্ষাপট এখানে প্রযোজ্য নয়।
জলযান ভাবতে বসলেঃ-
দেখে ধারণা হতে পারে এটি বেশ বড়সড় কাঠের তক্তা দিয়ে তৈরী নৌকা, যা কোন বড় নদীতে বা হ্রদে ভাসমান থাকার কথা। প্রথম দেখায় এটিকে মনে হবে ষাঁড়ের মুখওয়ালা নৌকা। অনেকটা যেমন দেখি ময়ুরপঙ্খী নৌকার সামনের দিক ময়ূরের মত, সেই রকম। নীচের দিক চ্যাপ্টা হলেও নৌকা হতে পারে। আমরা সিন্ধু সভ্যতার সীলে এমন নৌকা আঁকা দেখেছি, আর এই রকম নীচের দিক চ্যাপ্টা নৌকা এখনও সিন্ধু প্রদেশে ব্যবহার হয়। কাজেই একে নৌকাই ভাবতে পারা যেত, কিন্তু মুশকিল হল নৌকা হলে তার দাঁড় হাল এসব থাকার কথা সে সব কিছুই নেই। যারা বসে আছে তাদের হাতে কোন দাঁড় নেই।
নৌকা ভাবতে গেলে প্রথমেই মাথায় আসবে হরপ্পা সভ্যতার গোড়ার দিকের তেমন কোন টেরোকোটা নৌকা একটি মাত্র পাওয়া গেছে শেরী খান, (তারকাই, বানু পাকিস্তান) যা কিনা চতুর্থ বা পঞ্চম সহস্রাব্দের (Khan et.al, 1988)।
এই স্থলযান আর জলযান বিতর্কে দেখা যাবে হরপ্পা সভ্যতায় জলযানের অস্তিত্বের একাধিক প্রমাণ আছে। একটি Steatite সীলে পরিস্কার দেখাচ্ছে নৌকা, একেবারে দাঁড় সহ (টোকিও মেট্রোপলিটান মিউজিয়াম)এছাড়াও একটি Prism-সীলেও নৌকা দেখা যাচ্ছে (টোকিও মেট্রোপলিটান মিউজিয়াম)। শেষেরটাতে দুটো চ্যাপ্টা নৌকা যার মাঝখানে আছে ছাউনি।
মুশকিল হল কোনটাই কিন্তু এই কাউ-বোটের চেহারাকে সমর্থন করে না। কত বড় হতে পারে এই কাউ-বোট। মাঝখানের বসার আসনগুলো পেছনের ছাউনি, সামনের খোন্দল সব মিলিয়ে কল্পনা করা যেতে পারে নৌকাটির বাস্তব আকার হওয়া উচিত প্রায় ৩০-৪০ ফুট লম্বা।(ম্যাসিমো ভিডালের বইতে লেখা আছে ৩০-৪০ মিটার)
অত আগে এত বড় নৌকা তৈরী হত? সম্ভব । হরপ্পা সভ্যতা এলাকায় ভালো কাঠের অভাব ছিলো না। সে নাহয় হলো। কথা হলো একখানা লম্বা জলযান চলার মত বড়সড় জলপথও তো চাই। তেমন বড় নদী কি আমাদের আগে বলা এই শিল্পকর্মের উৎসের সম্ভাব্য এলাকায় ছিল?
সিন্ধু নদীতে তো সব সময়ই সম্ভব, আর সিন্ধুর শাখা নদীতে বর্ষা কালে বা তার পরে পরে সম্ভব। এমনকি বর্যার জমা জলে তৈরী হওয়া জলাশয়ে ঐ বর্ষা আর তার পরে কিছুকাল এমন জলযান চলতেই পারে।
কিন্তু শিল্পকর্মের উৎস যদি কোয়েটা, জোব ভ্যালী, বোলান পাস এলাকা হয় তবে পাহাড়ী নদীতে সেটা হয়ত সম্ভব হবে না।
তা হলে ধরে নিতে হয় এই কাউ-বোট কোন নিয়মিত চলাচল করা জলযানের প্রতিরূপ নয়। এটি আসলে একটি কাল্পনিক জলযান।
স্থলযান ভাবতে বসলেঃ-
এটা নৌকা না হয়ে গরুর গাড়ী হতে পারে কি?
সমস্যা হল চাকা নেই। তা না হয় স্টাইল করে চাকা দেখানো হয় নি ভাবলাম। কিন্তু পনেরজন লোক বয়ে নেবার মত বড় গরুর গাড়ী কি তখন ছিল?
সিন্ধু সভ্যতার যা কিছু গাড়ি দেখা গেছে সীলে বা খেলনা হিসাবে, সবই দুই চাকার। চার চাকার কোন গাড়ি ছিলো না। চার চাকার গাড়ি না হলে অত লোক তো আঁটবে না।
প্রশ্ন উঠবে অত আগে অন্য কোথাও কি চার চাকার গাড়ি ছিল? লেখক ম্যাসিমো ভিডালে জানাচ্ছেন ছিল। টুরান এলাকার কুজিস্থানে চার চাকার গাড়ি ছিল, তবে সম্ভবত তা মাল বহনের কাজেই লাগত। মাল বহন আর মানুষ বহনে ফারাক কতটা ? গ্রামে গরুর গাড়িতে মাল বা যাত্রী বহন তো হতই।
ভিডালে লেখেনগোড়ায় সিন্ধু সভ্যতার গরুর গাড়ি (গরু বলতে আসলে ষাঁড় বুঝতে হবে) নিয়ে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল যে চাকাওয়ালা গাড়ি সিন্ধু সভ্যতায় এসেছে মধ্য এশিয়া থেকে। অনেক পরে কেনয়ের প্রথম প্রমাণ করে দেন চাকা এবং গাড়ি দুটোই সিন্ধু সভ্যতার লোকেদেরই নিজস্ব উদ্ভাবন। বাইরে থেকে আসে নি। সিন্ধু সভ্যতার লোকেরা শহর বানাবার জন্য ইঁটের বোঝা গরুর গাড়িতেই বহন করত। কাজেই ঐ লক্ষ লক্ষ ইঁট পরিবহনের জন্য নিজেদের প্রয়োজনেই উন্নত গাড়ি বানিয়েছিল।
অতএব মেহেরগড়ের এই Cow-Boat আসলেনৌকা না গাড়ি তা পরিস্কার হল না।
অতএব লেখক বিজ্ঞানী খানিক কল্পনার আশ্রয় নিলেন। বললেন কল্পনা করা যাক, এটি বর্তমান হিন্দু ধর্মে দেবতাদের জন্য যেমন রথ ব্যবহার হয়, (উনি এখানে অবশ্যই পুরীর জগন্নাথের রথের কথা বলেছেন) এটা তেমনই রথ ছিল দেবতার স্বর্গীয় যান হিসাবে। ষাঁড় শুধুই প্রতীক। ষাঁড়কে পবিত্র মনে করে স্বর্গীয় যানের বাহন হিসাবে দেখানো হয়েছে।
এখানে নিজেই প্রশ্নও তুলেছেন অত প্রাচীন কালের মানুষদের পক্ষে এতটা প্রতীকী ভাবনা সম্ভব ছিল কি না? কারণ এটি স্বর্গীয় রথ হলে শুধু সিংহাসন আর নারী মূর্তি যানে আরঢ়া থাকার কথা, খুব বেশি হলে চারজন সেবক। বাকি সারি বদ্ধ নারী পুরুষ যানে বসে অথচ তারা সবাই প্রতীক এতটা ভাবা হয়ত অনুচিত হবে।
আরেকটি অবধারিত প্রশ্ন সিংহাসনে আরূঢ়া নারী কে? এটি রথ ভাবলে নারী দেবী। কিন্তু নৌকা বা গরুর গাড়ি হলে, দেবীর মূর্তি,রাণী, গোষ্ঠী প্রধান, অথবা পুরোহিত।
সিংহাসনে বসা নারী আকারে সবার চেয়ে বড়, একমাত্র তার বসার আসন ছাউনির নিচে। আসনের দুই পাশে দুটি ষাঁড়, আর তার দুই পাশে দুই জন করে সেবকের উপস্থিতি ছাড়াও একেবারে সামনের দিকে আরও দুই জন, যারা এই নারীর দিকেই তাকিয়ে আছে। এই সবই পরিস্কার বলে দেয় এই নারী কোনও বিশেষ জন।
দেবী? দেবী ভাবাই যেতে পারে, কিন্তু অসুবিধা এই সিংহাসনে বসা নারীর গয়না অন্য নারীদের সাথে মিলে যায়। এমন কোনও অতি অসাধারণ বৈশিষ্ট্য নেই যাতে ভাবা যেতে পারে ইনি জাগতিক নারী নন।
রানী? গোটা যানে এমন ভাবে সবার অবস্থান যে একে রাণী ভাবা সম্ভব। রাজার বদলে রাণী ভাবতে হলে গোটা সমাজ ব্যবস্থাটাকেই পাল্টে ভাবতে হয়। ভাবতে হয়, সেই সমাজ এমন ছিল, যেখানে নারীই প্রধান শক্তি। এই যানটিতে নারীদের আকার পুরুষদের চেয়ে সব সময় বড়, সিংহাসনের দুই পাশে দুইজন সাধারণ বেশে দাঁড়ানো পুরুষে বোঝায় তারা সিংহাসনে আরূঢ়া নারীর সেবক। দুই সারিতে বসা নারী পুরুষের মধ্যে দুই পাশেই প্রথমে নারীর উপস্থিতি। এতসব কিছু শুধুই কাকতালীয় হতে পারে না। বরং এটা পরিস্কার ইঙ্গিত করে নারীর ক্ষমতায়নকে।
শুধু এখানেও একটি জিনিস খটকা জাগায়, রানীর বেশভুষা এত সাধারণ হবে কেন? বা তিনি নগ্ন কেন?
বাকী থাকে আর একটি সম্ভবনা, ইনি পুরোহিত। সেক্ষেত্রে এই সিংহাসনে বসা নারী নগ্ন থাকতেই পারেন. বিশেষ ধর্মাচরণের অঙ্গ হিসাবে।
ম্যাসিমো ভিডালে Cow-Boat এর ছাউনির সিংহাসনে বসা নারীকে দেবী বা রাণীর বদলে অনুমান করেন ইনি কোন বিশেষ ধর্ম সম্প্রদায়ের পুরোহিত।
প্রাচীন সমাজ ব্যবস্থায় নারী পুরোহিতের উপস্থিতির সম্ভাব্যতা যথেষ্ট।
সেক্ষেত্রে এই যান, এই সিংহাসনে আরূঢ়া নারী, আর সারিবদ্ধ নরনারী এরা সবাই মিলে এটি হতে পারে একটি প্রাচীন ধর্মাচরণের দৃশ্য। কখনো এমন একটি শোভাযাত্রা হয়েছিল। তারই দৃশ্য এই শিল্পকীর্তিটি। এমন দৃশ্যই ক্রমে প্রতীক হয়ে দাঁড়াবে পরবর্তী কয়েক প্রজন্মে। আর তারপরে সেই নির্মিত প্রতীকী দৃশ্য নিজেই ধর্মাচরণের অঙ্গ হয়ে উঠবে। এটিকে ঘিরেই গড়ে উঠবে বিশেষ ধর্মাচরণ। পেছনের বহুব্যবহৃত হাতল তেমনই ইঙ্গিত দেয়।
এবার প্রশ্ন উঠবে যদি এটি ধর্মাচরণ-প্রতীক হয় তবে মাত্র একটি কেন পাওয়া গেল। এমন তো আরও পাওয়ার কথা ছিল।
এমন যান আর কেন পাওয়া গেলো না? হতে পারে এমন আরো যান পাওয়া গেছে, আর তা বিদেশে চোরা চালান হয়ে গেছে। অথবা যানগুলো ভেঙ্গে গেছে। যান ভেঙ্গে গেলে তার টুকরো দেখে সেটি কোন যানের অংশ এমন বোঝা কঠিন। বিশেষ করে আগে যদি তেমন সম্ভবনার কথা পুরাতাত্ত্বিককের মাথায় না থাকে, তবে তিনি তা উপেক্ষা করতেই পারেন।
যেহেতু এই শিল্পকর্মে উপস্থিত পনেরটি মানব মানবীর মধ্যে নারীরা আকারে খানিকটা হলেও বড়, আর সিংহাসনে যিনি বসে আছেন তিনিও নারী, এর থেকে দুটি ধারণা অনুমান করা যায়।
১. মেহেরগড়ের সমাজ নারী প্রধান ছিল।
২. এই বিশেষ অনুষ্ঠানটি নারী প্রধান অনুষ্ঠান।
*****(ভারতে এখনও নানা এলাকায় এমন অনেক ধর্মাচরণ প্রচলিত আছে যা মূলত নারীদের উপস্থিতিতে নারীদের দ্বারাই অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পুরুষদের উপস্থিতি কেবলমাত্র সাহায্যকারী হিসাবে থাকে।)*****
তা হলে সিংহাসনে বসা নারীটি পুরোহিত?
নারী পুরোহিত কি ভারতীয় ঐতিহ্যের অঙ্গ? এটাও ভাবা দরকার। ভারতে ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতার গুরুত্ব সর্বাধিক।
কিছুকাল আগে নৌশারোতে পাওয়া এমনি পুতুলাকৃতি মূর্তির কথা ভাবা যেতে পারে। উজ্জ্বল রঙ, দেহের অনাবৃত অংশ, শোভন পোষাক আর গয়নার উপস্থিতি, চোখে কাজলের দাগ, এমনকি কপালের লাল টিপ, সবই আধুনিক হিন্দু নারীদের পরিচ্ছদ, আভূষণের ধারায় গড়া। সেই ব্রোঞ্জ যুগের প্রথম থেকে বর্তমান কাল অবধি নানা প্রতীকের নিরন্তর ব্যবহার এক ঐতিহ্যবাহী ধারাবাহিকতাই প্রমাণ করে। (Kenoyer:1998).
আরেকটি রহস্য ভাবনায় আসবে মেহেরগড়ের এত এত নারীমূর্তি, প্রায় সবাই আধ-বসা। কেন? হরপ্পা সভ্যতার এলাকায় টেরাকোটার চৌকি চেয়ার এসব পাওয়া গেছে, একক অবস্থায়। আবার যেসব পুতুলাকৃতি মূর্তি পাওয়া গেছে সেগুলো নিজে থেকে বা দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ানোর মত নয়। তাহলে কি ধরে নিতে হবে, সবাই চৌকি বা চেয়ারে বসা অবস্থায় থাকার কথা? শুধু আমরা পেয়েছি আলগা আলগা। যা কোনও না কোনও কারণে আসন থেকে আলগা হয়ে গেছে। বা পরে আসনে বসাবার কথা ভেবেই বানানো হয়েছে।
তবে কি আমাদের আলোচ্য অলৌকিক যান শিল্পকর্মের মত এমন শিল্পকর্ম নিয়মিত তৈরী হত? আর সেগুলোতে বসার উপযুক্ত করেই এই পুতুলাকৃতি মূর্তিগুলো তৈরী হত?
তা হলে কি আমরা ভাবতে পারি যে এই কয়েকজন মিলে যাত্রার শিল্পকর্মটি দেখেছি তা আসলেই একটি বিশেষ যাত্রা। হয়ত সে যাত্রা ঘন ঘন ঘটতো।
সে যাত্রা কি মৃতদের সৎকারের জন্য? তা হলে মৃতদেহ বা তার কোন প্রতীক কোথায়? নেই। কাজেই সে ভাবনা বাতিল করা যেতে পারে। একই ভাবে জন্ম বা বিবাহও বাতিল হবে। অবশিষ্ট থাকবে কেবল বিশেষ ধর্মানুষ্ঠান।
॥॥ আলোচনাঃ২॥॥
পুরো বিষয় আবার ফিরে দেখলে, দেখবো জলযান না স্থলযান সে রহস্যের সমাধান সত্যি কঠিন। দুই পক্ষেই কিছু অকাট্য যুক্তি, দুর্বলতাও আছে। অতএব আমাদের ধরে নিতে হবে এই শিল্পকর্মের শিল্পী জলযান বা স্থলযান কোনটাই সুনির্দিষ্ট ভাবে বোঝাতে চান নি, বা নিজেও ভাবেন নি। শিল্পীর উদ্দেশ্য এখানে শুধুই একটি যান সৃষ্টি। এটা একটা প্রতীকী ধারণা। কোন যথাযথ জাগতিক যান নয়। শুধুই একটি যান।
তা হলে এই যান কি লৌকিক না অলৌকিক, কি বোঝাতে সৃষ্টি হয়েছিল এই শিল্প। না এর কোন সরাসরি উত্তর নেই।
ধরা যাক এই যানটি একটি কল্পিত অলৌকিক যান। কোনও এক অজানা ধর্মাচরণের সাথে যার আছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। যদি এটি ধর্মাচরণ হয়ে থাকে তবে একটা বড় এলাকা জুড়ে তার প্রচলন ছিল, না তা একেবারেই স্থানীয় একক অনুষ্ঠান তার উত্তর খোঁজা যেতে পারে।
সেই খোঁজে দেখা যায় একটা বিশাল এলাকা জুড়ে শতাব্দী জোড়া কালে এমন যান পাওয়া না গেলেও যানের যাত্রীদের অনুরূপ অবয়ব তৈরী হয়ে চলেছিল। ফলে সাড়ে চার হাজার বৎসর পরে একাধিক পূর্ণরূপে অনুরূপ শিল্পের নিদর্শন না পাওয়া গেলেও তার অস্তিত্ব, কিছু অদলবদলসহ, ছিল এমনটা ভাবা যেতেই পারে।
যানের নির্মাণের আরেকটি বৈশিষ্ট্য আগে বলা হয় নি, তা হল যদি কল্পনা করা যায় সিংহাসন থেকে নারী নেমে এসে দুই সারি বসে থাকা নারীপুরুষের মাঝখান দিয়ে এগিয়ে ষাঁড়ের কুঁজের আধেক অংশে থাকা চারধাপ সিঁড়ি বেয়ে উঠে দাঁড়ায়, তবে সে ষাঁড়ের সামনে থাকা জনতাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বললে, তার কথা ষাঁড়ের ঐ কুঁজের ফোঁকরে প্রতিধ্বনিত হয়ে এক অলৌকিক জোরালো কণ্ঠস্বরের জন্ম দেবে।
সামনে দাঁড়ানো দুই সেবক আর চারধাপ সিঁড়ি নিশ্চয়ই অকারণে তৈরী হয় নি। এগুলোও কোন বিশেষ ঘটনা ঘটবার জন্য কল্পিত। আর সে ঘটনা হতে পারে সিংহাসনে বসা নারীর অলৌকিক জোরালো কণ্ঠের কথা বা গান ছড়িয়ে দেওয়া দূর থেকে অনেক দূরে সমবেত ভক্তদের মধ্যে।
সে কণ্ঠস্বর কার বলে মনে করবে সমবেত ভক্তরা?
অবশ্যই যানের সামনে থাকা বলশালী ষাঁড়ের।
সব মিলিয়ে যান যাত্রী আর বাহন, তিন একীভূত। এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে যাবে সববেত জনতার চেতনা। সামাজিক ধর্মীয় চেতনা।
॥॥ আলোচনা-৩ ॥॥
২৬০০-২৮০০ এই দুই শতাব্দী (অনেক সময় একাধিক পুরাক্ষেত্রকে জুড়ে বলা হয় কট-ডিজান কাল) সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সিন্ধু অববাহিকার সভ্যতা গড়ে ওঠায়। এই সময়কালের পুরাতাত্ত্বিক ক্ষেত্রগুলো দেখলে পরিস্কার বোঝা যায়, এই দুই শতাব্দী জুড়ে আস্তে আস্তে এই এলাকায় দুই বা তিনটি বিচ্ছিন্ন গ্রাম্য বা কিছুটা শহুরে বসতিগুলো একটা বড় এলাকায় নিজেদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করছিল। এটা কোনও খাপছাড়া অবস্থা ছিলো না। এটা গোটা অঞ্চলেই ঘটছিল, ঘটছিল ততদিন ধরে যতদিন না একটি বসতি অনেকটা উন্নতি ঘটিয়ে ফেলল। এর তখন অনেক সময় ছোট বসতিগুলো সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত হয়ে উন্নততর বসতিতে লোকের বসবাস বাড়তে থাকলো।
পরবর্তীকালে হরপ্পা সভ্যতার যে শহরগুলো আমরা দেখি তা এই ভাবেই গড়ে উঠছিল, আগেকার বসতিগুলোর উন্নতি ঘটিয়ে। তবে সব সময় না হলেও বেশিরভাগ সময়েই একেবারে আচমকা গড়ে উঠছিল ইঁট-মাটির দেওয়াল ঘেরা, প্রবেশে বাধা নিষেধ সহ কেল্লা। এই কেল্লা-কেন্দ্রীক ঘন বসতি এলাকাগুলো হয়ে দাঁড়ালো উৎপাদন কেন্দ্র। এই এলাকাগুলোতে কেন্দ্রীভূত হল নানা উৎপাদন আর তার বাণিজ্য।
গ্রামগুলোর অর্থনীতি এই নতুন করে আচমকা গড়ে ওঠা শহর থেকে আলাদা হয়ে নির্ভর করতে থাকলো তার উৎপাদিত ফসল গৃহপালিত পশুর মাংস, দুধ, এই সবের উপর।
নতুন করে গড়ে ওঠা এই দেওয়াল ঘেরা কেল্লা সমেত বসতিগুলো আরো কয়েক শতক ধরে বারবার ভাঙ্গাগড়া হচ্ছিল, একই জায়গায়, কোন স্থান পরিবর্তন না করেই। কিন্তু ২৫০০ নাগাদ দেখা গেল নতুন শহর গড়া হচ্ছে আগের বসতি শহরের পাশে।(Possehl 2002, Vidale:2005, 2010). একই জায়াগায় পুর্ণনির্মান নয়।বরং কোথাও পুরোন শহর হয়ে গেল ব্রাত্য। নতুন শহরের গঠনভঙ্গীতে বিশেষত্ব এলো। তার আকার জ্যামিতিক। উঁচু আর নীচু দুটি অংশে বিভক্ত। কেল্লার অবস্থান উঁচু অংশে।
এই নবীনতম শহরগুলোতেও কেল্লা দেখা গেল, আরো বেশি বড় করে আরো অনেক গৌরবান্বিত করে। কেল্লাকেই শহরের ক্ষমতার প্রতীক হিসাবে গড়া হতে থাকল। এবং সব গড়ে ওঠা প্রতিযোগী শহরগুলোও কেল্লাকেই তাদের ক্ষমতার আদত প্রতীক হিসাবে গড়েছিল।
শহরে উৎপাদন আর বাণিজ্য কেন্দ্রীভুত হবার ফলে এক শহরবাসী অভিজাত শ্রেণীর উদ্ভব হতে থাকল। এই অভিজাত শ্রেণীর সম্পদ আর লোকবল ব্যবহারের দক্ষতার উপরই নির্ভর করবে গড়ে উঠতে থাকা সভ্যতার রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ভবিষ্যত। তবে সবার আগে অভিজাতদের দরকার গড়ে ওঠা বসতির সব বাসিন্দাদের কাছে, তাদের কেল্লাই শক্তির ভর কেন্দ্র, এমন ধারণার গ্রহণযোগ্যতা।
যে কোন প্রতীকের ক্ষমতার বৃদ্ধি হবে তার বহুধা গ্রহণযোগ্যতার মাধ্যমে, ক্রমে একটি প্রতীক হয়ে দাঁড়াবে কেন্দ্রীয় প্রতীক। এই প্রতীকে বিশ্বাসযোগ্যতা গোড়া থেকে শুরু না হলে প্রতীক ঘিরে অভিজাত শ্রেণী বা শহুরে অর্থনীতির দানা বাঁধা, কিছুই সম্ভব ছিলো না।
ক্রমে দেখা যাবে আরো অনেক প্রতীকের সৃষ্টি, যেমন ষাঁড়ের শিং, বা বটপাতা যা এই সভ্যতার নানা নিদর্শনে বারবার ব্যবহার হয়ে আসছে, তারা সবই কোন না কোন প্রতীক। হয়ত তারা প্রাথমিক স্তরের কিন্তু তারাও সম্ভাবনাময়।
ঠিক আলোচ্য অলৌকিক যানের জনমানসে সম্ভাব্য ধর্মীয় প্রতীকী অবস্থানের মতো করেই শহরগুলো নিজেরাই প্রতীক হয়ে জনমানসে স্থান পেতে থাকলো। এমন একটা ভাবনা মনের মধ্যে উঁকি দিতেই পারে।
এই কাউ-বোট প্রতীক হিসাবে কতটা বহুল প্রচারিত ছিল আমরা জানি না। এটি স্থলযান না জলযান তাতেও কিছু যায় আসে না। এই কাউ-বোটের যাত্রীরা কে বা কারা বা কেন তারা একত্র হয়েছিল তার কোন খুঁটিনাটি বিবরণ আমরা বুঝতে পারি না। তবু এটাও ঠিক, এটিকে যদি আমরা বৃহত্তর অর্থে সামজ গঠন পর্বের অংশ হিসাবে দেখি তবে অনেক কিছুই বোধগম্য হবে। বোঝা যাবে কেন এটিকে চর্চাকারী গুরুত্বপূর্ণ বলে ভাবা হচ্ছে।
এই কাউ-বোট আমাদের বুঝতে সাহায্য করে কেমন করে সেই ২৭০০ সাধারণ পূর্বাব্দে, সমাজে ষাঁড় বা নারীকে প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করা শুরু হয়েছিল, আর সেই প্রতীক ঘিরে সমাজের ক্ষমতায়ন, শ্রেণীভেদ, আরম্ভ হয়ে গিয়েছিল। শুরু হয়েছিল লোকেদের একটি উদ্দেশ্যমূলক সমাবেশ, আর সেই সমাবেশকে উদ্দিষ্ট লক্ষ্যে নিয়োজিত করার প্রচেষ্টা।
যা আরেকটি তর্কের অবসানে সাহায্য করবে, যেখানে ভাবা হয়েছিল এই সভ্যতা কোন বহিরাগতদের দ্বারা গড়ে তোলা সভ্যতা ছিল। এই একটি শিল্পকর্ম এই অলৌকিক যান আমাদের বুঝতে সাহায্য করছে কেমন করে হরপ্পা সভ্যতার লোকেরাই তাদের জনবলকে বিশেষ উদ্দেশ্যে নিয়োজিত করতে শুরু করেছিল। সেই জন্য তাদের বাইরের থেকে কোন সাংগাঠনিক জ্ঞান আমদানী করতে হয় নি।
আর সেখানেই এই কাউ-বোটের গুরুত্ব। এটি বুঝতে সাহায্য করে কেমন করে স্থানীয় সমাজ প্রথমে প্রতীক ব্যবহার করতে শুরু করে। আর ক্রমে এই প্রতীক ঘিরেই বৃহত্তর জনসমাবেশ আর বৃহত্তর উদ্দেশ্যের দিকে পরিচালিত হতে দেখব মানব সমাজের এই অংশকে। যারা গড়ে তুলবে অতি দ্রুত এক উন্নত নগর সভ্যতা। তার জ্যামিতিক আকার, উঁচু নীচু দুই ভাগে বিভক্ত শহরের উঁচু জায়গায় কেল্লা নিয়ে শহর নিজেই একটি প্রতীকে পরিবর্তিত হয়ে গেল ভবিষ্যতে। আর সেই নগর প্রতীক ঘিরে জনমানসে সৃষ্টি হবে আর এক উদ্দেশ্য-নির্দ্দিষ্ট সমাজ গঠন প্রক্রিয়া। যে সমাজে্ যেমন থাকবে প্রতীক তেমনি থাকবে প্রতীক ঘিরে ক্ষমতায়ন আর শ্রেণী বিভেদ। ঠিক যেমনটি দেখতে পেলাম আমরা এই কাউ-বোটে।
তথ্যসূ্ত্র:
১. Massimo Vidale, The Lady of the Spiked Throne, The power of a lost ritual, Published in 2011
২. Photo Credit: By Sailko – Own work, CC BY 3.0, https://commons.wikimedia.org/w/index.php?curid=78156213
আমাদের ইতিহাসের অজানা তথ্য জানলাম। অনেক ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
সুন্দর সুন্দর বর্ণনা । ছবি দেখতে ইচ্ছে করে । বিশাল কল্পনার বিষয় ।
অসাধারণ সুন্দর লেখা। গভীর অথচ প্রাঞ্জল বিশ্লেষণ লেখাটির উজ্জ্বল অলঙ্কার। অপরূপ এক আলোক ধারায় উদ্ভাসিত এই উপস্থাপন। চোখের সামনে খুলে দেয় দূর অতীতের ভারতবর্ষের এক গৌরব ময় অধ্যায় যেখানে মানুষ সভ্যতার বিভিন্ন মাপকাঠিতে এগিয়ে ছিলো পুরোধায় এবং সামনের সারিতে ছিলো ক্ষমতায়িত নারীরা। উপস্থাপনার গুণে মন দিয়ে এবং হাত দিয়ে ছুঁতে পারছি মনে হল ঐ সময় বিন্দু টিকে। সেই দিক থেকে টাইম মেশিন এর কাজ করেছে এই লেখা। অজস্র সাধুবাদ এবং অভিনন্দন লেখককে।
It is a beautiful and enriching and unique presentation, graced with deep analysis and lucidity. It has been like a smooth and pleasant journey on a time machine, going through this wonderful piece of writing. It also brings forth a very significant aspect of all searches into history I.e establishing the continuity and relevance of the stream of time from one period to the other in a seamless manner. Cannot find enough words for praise and admiration. Deep regards to the author of this wonderful presentation.
অনেক ধন্যবাদ। এই প্রত্ন সামগ্রীটি একটি অনন্য সম্পদ। এর থেকে সহজেই কল্পনা করা যায় সমাজের সে সন্ধিক্ষণে তাদের কর্মকান্ডের ভাবনার। আমার কাছে এই ধই প্রত্নটি ধর্মানুষ্ঠান হলেও তা অন্য অর্থ বহন করে। এটি বলে দেয় তখন তারা কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে সমবেত হতে আর সেই উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ করতে সক্ষম হয়ে গেছে। সামাজিক উন্নতির পর্যায়ে এ এক বিশাল অগ্রগতি। উদ্দেশ্য সাধনে নিজেদের সংগঠিত করা, প্রয়োজনীয় জনবল একত্র করা, সম্পদ একত্র করা, এই সবই ঘটেছে। ঘটেছে কোন নেতৃত্বের মাধ্যমে। অর্থাৎ সমাজে নেতার অধীনে বিশেষ উদ্দেশ্য নিজেদের সংগঠিত করেছে। এখান থেকে শহর গঠন একটি পদক্ষেপ দুরে মাত্র।
দারুণ লেখা।
ধন্যবাদ।
অত্যন্ত উঁচু মানের লেখা। পড়ে মুগ্ধ হলাম। এই ধরনের লেখা ও যুক্তিনির্ভর আলোচনা যথেষ্ট কৃতিত্বের দাবী রাখে।
ধন্যবাদ।
এই লেখাটি এখানেই প্রথম পড়লাম। গ্রুপে এটি নিশ্চয়ই চোখ এড়িয়ে গেছিল। অসাধারণ সুন্দর এবং আমার সম্পূর্ণ অজানা একটি বিষয়ে লেখা। তুষার বাবু এই গ্রুপের সম্পদ। আমার কেবল একটাই দুঃখ, ওঁকে অনেক বলেও ওঁর মূল্যবান প্রবন্ধগুলো সংকলিত বই আকারে প্রকাশ করতে রাজী করতে পারছিনা। এই মূল্যবান লেখাগুলি যদি ছড়িয়ে ছিটিয়ে হারিয়ে যায় তার চেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার আর কিছু হবে না।
ধন্যবাদ। ফেসবুকে এই গ্রুপে নজর এড়িয়েই গেছে। আর ছাপার অক্ষরে, না সেরকম ভাবছি না। সবাই তো এখানেই পড়ে নিচ্ছেন। আর এখন এই ওয়েব সাইটে তো বরাবরর মত থেকে গেল।
একদিকে ভালো টেকনিকাল ডিটেল আর অন্যদিকে একটা টানটান কাহিনী। খুব ভালো লাগলো
ধন্যবাদ।
তুষারদা,
আপনার এই লেখাটা পড়লাম। আগেও এটা পড়েছি, তবে এবারের উপস্থাপনাটা অনিন্দ্য সুন্দর।
ধন্যবাদ।
ভীষন সুন্দর উপস্থাপনা। এই সময়ের সভ্যতা সম্পর্কে অনেক কিছুই আজ ও অজানা। তাই পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ আলোকিত করল।
ধন্যবাদ।
চমৎকার। যথারীতি।
তুষার বাবুর লেখা খুবই মূল্যবান।
আগেও যেন পড়েছি।
ধন্যবাদ। ফেসবুকে এই গ্রপে (ইতিহাস তথ্য ও তর্ক) পড়েছেন সম্ভবত। নতুবা আমার টাইম লাইনে।
এই অলৌকিক প্রত্নসামগ্রীটি এখন কোথায়? চোরাই সামগ্রীর মালিকের কাছেই কি? এ প্রশ্নের উত্তর অত্যন্ত জরুরি।
প্রত্ন সামগ্রীটি এখন চোরাই পথে কেনা মালিকের হাতেই আছে। কারন আইনত সেই মালিক।
অসাধারণ উপস্থাপনা। খুব যত্ন নিয়ে করা কাজ। ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ।
চমৎকার, আপনাকে ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
কী ভীষণ অবিশ্বাস্য।অথচ এটাই ইতিহাস।তুষারবাবু ইতিহাসের থ্রিলার লিখেনছেনমন ভরে গেল।
লেখাটা শেয়ার করা যেতে পারে কি?যদি যায়,তবে কিভাবে সম্ভব।
কারণ এই বিষয়টা আরো মানুষের জানা উচিত।
ধন্যবাদ। শেয়ার করার বিষয়ে অ্যাডমিন সাহায্য করতে পারবে। আমি নিজে এখনো ততটা সড়গড় হয়ে উঠিনি।
ধন্যবাদ। শেয়ার করার বিষয়ে অ্যাডমিন সাহায্য করতে পারবে। আমি নিজে এখনো ততটা সড়গড় হয়ে উঠিনি।
শেয়ার করার জন্য লিংক কপি পেস্ট আপাতত করা যেতে পারে
https://www.itihasadda.in/mehergarh/