বাংলার কীর্তন গান
গৌরচন্দ্রিকা
কিছুদিন আগে ইতিহাস তথ্য ও তর্ক গ্রুপের এক সদস্য “দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ…” গানটির রচয়িতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। সে বিষয়ে খোঁজ করতে গিয়ে নিতান্তই সৌভাগ্যক্রমে সন্ধান পেলাম এক অন্য ভাবসাগরের। সেই সাগরের অফুরন্ত মণিমুক্তোর সামান্য কিছু অংশ পাঠকদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার উদ্দেশ্যেই এই লেখার অবতারণা। কীর্তন আমার অন্যতম প্রিয় সংগীত (অবশ্য অধুনা পাড়ায় পাড়ায় সংকীর্তনের নামে যে চিৎকার চলে, সেটি মোটেই কীর্তনের জনপ্রিয়তা বাড়াতে সহায়ক নয়)।
সাধারণ শ্রোতা কীর্তন গানের নানা উপকরণ যেমন খোল-করতালের ধ্বনি এবং সেই সঙ্গে সবাই মিলে একত্রিত হয়ে গান করাকেই কীর্তন বলে মনে করেন। তবে কীর্তনের নির্দিষ্ট সংজ্ঞা আছে। আছে প্রকারভেদ — আছে বিভিন্ন রস, বিভিন্ন ঘরানা ইত্যাদি। এই ছোট্ট পরিসরে সব কিছু হয়তো বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে না; তবে বাঙলার অন্যতম লোকসংস্কৃতি কীর্তন সম্পর্কে কিছু কথা এই নিবন্ধে আলোচনা করব।
কৃষ্ণ ভজন কীর্তন গান — গাহ নাম অবিরাম
কীর্তন শব্দের সাধারণ অর্থ কথন, বচন, বর্ণন, ঘোষণা । তবে কীর্তন শব্দটি একট বিশেষ অর্থে ব্যবহার করা হয়। শ্রীমদ্ভাগবতে একটি শ্লোকে এই অর্থের ঈঙ্গিত আছে।
বর্হাপীড়ং নটবরপুঃ কর্ণয়োঃ কণিকারং
বিভ্রদবাসঃ কনককপিশং বৈজয়ন্তীঞ্চ মালাম।
রন্ধান্ বেণোরধরসুধয়া পূরয়ন গোপবৃন্দৈঃ
বৃন্দরণ্যং স্বপদরমণং প্রাবিশদ গীতকীর্ত্তিঃ ॥ (শ্রীমন্তাগবতম, ১০।২১।৫)
[সুন্দর দেহ, মাথায় মযূরপুচ্ছের ভূষণ, কানে কার্ণিকার ফুল, সোনার মতে উজ্জ্বল পীতবাস পরণে, গলায় বৈজয়ন্তীমালা (পরিয়া) অধরে ন্যস্ত বেণু বাজাইতে বাজাইতে (শ্রীকৃষ্ণ) নিজ লীলাভূমি বৃন্দাবনে প্রবেশ করিলেন। তখন গোপীগণ চারিদিকে তাঁহার কীর্তি গান করিতেছিল।]
‘ভাগবতপুরাণে’ (১০।৩০।৪) আছে কৃষ্ণবিরহে সন্তপ্তা গোপীগণ সকলে মিলিত হয়ে উচ্চ স্বরে কৃষ্ণনাম করে গান গেয়েছিলেন (গায়ন্ত্য উচ্চেরমুমেব সংহতা)। ‘ব্রহ্মাণ্ডপুরাণে’ উচ্চৈঃস্বরে হরিনাম কীর্তনের নির্দেশ আছে (২।৬।৫৪-৬০ )।
কীর্তন কিন্তু একক সঙ্গীত হিসাবে করা যায়। অপরপক্ষে অনেকের সম্মিলিত প্রয়াসেও কীর্তন গান হতে পারে। বহুজনের সমবায়ে যে কীর্তন হয় তাকে বলে সংকীর্তন। অনেক লোকে একত্রিত হয়ে উচ্চ কণ্ঠে হরে কৃষ্ণ হরে রাম প্রভৃতি নাম কীর্তন কর্ররলে তাকে সংকীর্তন বলা হয়।
ঈশ্বর বা দেবতার নাম গান বা স্তুতিগান করার প্রথা ভারতীয় সংস্কৃতিতে খুব প্রাচীন। তবে নির্দিষ্ট ও নিয়মিত সাধন পদ্ধতি হিসাবে কীর্তনের প্রতিষ্ঠা সম্ভবত ভক্তিধর্ম প্রসারের সঙ্গে হয়েছিল। দাক্ষিণাত্যে এর সূচনা — তামিলনাডু ও কেরলের আড়:বার সন্তরা (আবির্ভাকাল আনুমানিক ষষ্ঠ থেকে নবম শতক) মন্দির ও অন্যান্য দেবস্থানে বিষ্ণু বা শ্রীকৃষ্ণের নামগুণ লীলা বিষয়ক গান গেয়ে উপাসনা করতেন। পরপর বারো জন আড়বার (ফলিত অর্থ ভগবতপ্রেমে নিমগ্ন মহাপ্রেমী ভক্ত) সন্তদের কুলুজি পাওয়া যায়। এঁরা ‘দিবাপ্রবন্ধম’ নামে তামিল ভাযায় চার হাজার অতি উৎকৃষ্ট এবং ভাবময় ভজন রচনা করেছিলেন।
চতুর্দশ শতক থেকে ষোড়শ শতক এই তিনশত বৎসর ভারতে ভক্তি ধর্মের জোয়ার এসেছিল। ভক্তি ধর্মের প্রভাবে সাঙ্গীতিক ভজন তথা কীর্তনের বিকাশ হয়। ভক্তিধর্ম জনমুখী, সাধারণ লোকের মনে এর প্রতি আকর্ষণ ছিল প্রবল। সাধারণের মধ্যে ভক্তি প্রচার ও সর্বসাধারণের ভক্তি সাধনার পক্ষে ভজন, কীর্তন খুবই উপযোগী। ভজন একক সঙ্গীত হলেও বহুলোকে এক জায়গায় বসে গান শোনে। সম্মেলক কীর্তনে উপস্থিত সকলেই যোগ দিতে পারে। ফলে ভজন কীর্তনে একই সময়ে বহু মানুষের মধ্যে উদ্দীপনা সঞ্চার করে। এইজন্যই ভক্তিধর্মের প্রচারকগণ সকলেই সাঙ্গীতিক সাধনার পথ অবলম্বন করেছিলেন।
চৈতন্যদেব ও সংকীর্তন
বাংলায় ভক্তিধর্মের ব্যাপক প্রসার হয় চৈতন্যদেবের (১৪৮৬ — ১৫৩৩) নেতৃত্বে । চৈতন্যদেবের প্রচার ও সাধনাও কীর্তননির্ভর৷ চৈতন্যদেবের অনুগামীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন কবি ও গায়ক ছিলেন। ভাগবতে (৭।৫।২৩-২৪) বিষ্ণু ভক্তি লাভের নয়টি উপায় নির্দেশ করা আছে: শ্রবণ, কীর্তন, স্মরণ, পদসেবন, অর্চন, বন্দন, দাস্যভাব, সখ্যভাব ও আত্মনিবেদন। তবে ভক্তিবাদী সন্তগণের কাছে কীর্তনই প্রধান অবলম্বন। কীর্তন বলতে ঈশ্বরের নামগুণলীলাযশোগান। সব বৈষ্ণব সন্ত ও সাধকদেরই বিশ্বাস যে নামকীর্তনই কলিযুগের সর্বোত্তম সাধনা। চৈতন্যদেবও বলেছেন ‘নাম-সঙ্কীর্তন কলৌ পরম উপায়’ (চৈতন্য চরিতামৃত ৩।২০)।
কীর্তন স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে সকলেই করতে পারে, কোনো বাধা নেই। ভক্তিধর্মের দিক দিয়ে কথাটা খুব দরকারী। ভক্তির ভাব সংক্রামক, কীর্তন তার বাহন। অনেকে বলেন নামগানের সাঙ্গীতিক দিকটা গৌণ, সেদিকে নজর দেওয়ার তেমন প্রয়োজন নেই। মনে ঐকান্তিক ভক্তি থাকলেই হল। সকলে অবশ্য এই মত মানেন না। ভিন্নদর্শীরা বলেন ভক্তি তো ভক্তর মনে থাকবেই – তবুও গানটা ভাল করে করতে হবে। গান হবে মৃদঙ্গ বা খোল, করতাল সহযোগে বিভিন্ন রাগরাগিণী ও তাল অনুসারে। গানে ভগবানের উপাসনা হয়, অতএব তা যথারীতি হওয়াই সঙ্গত।
সাধারণ শ্রোতা হিসাবে কীর্তনগানের নানা উপকরণ অর্থাৎ খোল-করতালের ধ্বনি আর সেইসঙ্গে সবে মিলে একসঙ্গে গান শুনেই তাকে কীর্তন বলে চিহ্নিত করে থাকে। তবে কীর্তনের আবার বিষয়ভিত্তিক বা প্রয়োগভিত্তিক কয়েকটি ধরন আছে; এগুলিকেই কীর্তনের শ্রেণী বলে অভিহিত করা হয়। প্রাথমিক আলোচনায় কীর্তনকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে — যার একটি হ’ল কথকতা কীর্তন বা “শুক কীর্তন” অপরটি হ’ল “নারদীয় কীর্তন’ বা কীর্তন গান। কীর্তন গানের প্রচলনসূত্রে যে-কয়টি শ্রেণীর সন্ধান পাওয়া যায় সেগুলো হলো,
১। বন্দনা কীর্তন ২। প্রার্থনা কীর্তন, ৩। আরতি কীর্তন, ৪। অধিবাস কীর্তন, ৫। পরবগান, ৬। সূচক কর্তন, ৭। নাম কীর্তন, ৮। পদাবলী কীর্তন এবং ৯। লীলা বা পালা কীর্তন।
এগুলি সবই একই সময়ে সৃষ্ট নয়। পদাবলী কীর্তন ও পরব গানের যে ধারা প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে, তাই পরে লীলাকীর্তনের রূপ পরিগ্রহ করেছে; পরবর্তী পর্যায়ে শ্রীচৈতন্যদেবের সূত্রে নামকীর্তনের রূপায়ণ এবং বৈষ্ণবীয় ভজনপ্রণালী সূত্রে বন্দনা, প্রার্থনা, আরতি ও অধিবাসের সূচনা হয়। সূচক গানও প্রাচীনকালের সৃষ্টি, তবে শ্রীচৈতন্যদেবের পার্ষদবৃন্দের সূচক ষোড়শ শতকেরই প্রকরণ। এদের মধ্যে প্রধান হলো, নাম কীর্তন ও লীলা বা পালা কীর্তন, যাদের বিষয়ে আমরা বিশদে আলোচনা করব।
শ্রীচৈতন্যদেবের প্রসঙ্গ বারংবার উঠে আসছে কারণ আগেই বলা হয়েছে বাঙলায় কীর্তন গান তথা ভক্তি ধর্মের প্রচার ও প্রসারে তিনি এক অগ্রণী ব্যক্তি। শুধু বাংলা নয়, সুদূর শ্রীক্ষেত্র বা পুরীতেও তিনি কীর্তন গানের প্রসার ঘটান। পুরীতে রথযাত্রার সময় রথাগ্রে নামকীর্তনের জন্য তিনি নিজ অনুগামীদের সাতটি সম্প্রদায়ে ভাগ করেন। এর বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় কৃষ্ণদাস কবিরাজ লিখিত চৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থে (২।১৩)।
সেই বর্ণনা অনুসারে, প্রত্যেক সম্প্রদায়ে একজন প্রধান গায়ক, একজন নর্তক, দুইজন মৃদঙ্গ বাদক ও পাঁচজন পালি গায়েন বা দোহার। মুখ্য চার সম্প্রদায়ের মূল গায়েন ছিলেন স্বরূপ দামোদর, শ্রীবাস পণ্ডিত, মুকুন্দ দত্ত ও গোবিন্দ ঘোষ। এঁদের সঙ্গে নর্তক ছিলেন যথাক্রমে অদ্বৈত আচার্য, নিত্যানন্দ, ছোট হরিদাস (হরিদাস ঠাকুর ছাড়া দ্বিজ, বড় ও ছোট অভিধায় পরিচিত তিনজন হরিদাসের অন্যতম) ও বক্রেশ্বর পণ্ডিত। স্বরূপের পাঁচজন পালি গায়ক দামোদর আচার্য, গোবিন্দ দত্ত, রাঘব পণ্ডিত গোবিন্দানন্দ ঠাকুর ও নারায়ণ (গুপ্ত বা পণ্ডিত)। শ্রীবাসের সঙ্গে পাল গায়ক ছিলেন গঙ্গাদাস পণ্ডিত, শ্রী্মান পণ্ডিত, শ্রীরাম পণ্ডিত, শুভানন্দ দ্বিজ ও হরিদাস। মুকুন্দর সঙ্গে শ্রীকান্ত সেন, বল্লাভ সেন, হরিদাস ঠাকুর এবং আর দুইজন। মাধব ঘোষ, বাসু ঘোষ, রাঘব (গোস্বামী ?), বিষ্ণুদাস (কবিন্দ্র বলে খ্যাত ) ও হরিদাস ছিলেন গোবিন্দ ঘোষের পালি গায়েন। অন্য তিন সম্প্রদায় কুলীনগ্রাম, শান্তিপুর ও শ্রীখণ্ডের। এই তিন সম্প্রদায়ের গায়কেরা অজ্ঞাত পারিচয়, শুধু নর্তকদের নাম পাওয়া যায়। কুলীনগ্রাম ও শান্তিপুরের নর্তক যথাক্রমে রামানন্দ বসু ও অদ্বৈতপুত্র অচ্যুতানন্দ। শ্রীখণ্ডের নর্তক দুজন, নরহরি সরকার ও তার ভাইপো রঘুনন্দন।
আর পঞ্চ জন দিল তার পালি গান।
দামোদর নারায়ণ দত্ত গোবিন্দ।
রাঘব-পণ্ডিত আর শ্রীগোবিন্দানন্দ ॥
অদ্বৈত আচার্য তাঁহা নৃত্য করিতে দিল।
শ্রীবাস প্রধান আর সম্প্রদায় কৈল॥
গঙ্গাদাস হরিদাস শ্রী্মান শুভানন্দ।
শ্রীরামপণ্ডিত তাহ! নাচে নিত্যানন্দ॥
বাসুদেব গোপীনাথ মুরারী যাঁহা গায়।
মুকুন্দ প্রধান কৈল আর সম্প্রদায়॥
শ্রীকান্ত বল্লভসেন আর দুই জন।
হরিদাস ঠাকুর তাঁহা করেন কীর্তন॥
গোবিন্দ-ঘোষ-প্রধান কৈল আর সম্প্রদায়।
হরিদাস বিপ্রদাস রাঘব যাঁহা গায়॥
মাধব বাসুদেব আর দুই সহোদর
নৃত্য করেন তাহা পণ্ডিত বক্রেশ্বর॥
কুলীনগ্রামের এক কীর্তনীয়া-সমাজ।
তাহ! নৃত্য করে রামানন্দ সত্যরাজ॥
শান্তিপুর-আচার্যের এক সম্প্রদায়।
অচ্যুতানন্দ নাচে তাহা আর সব গায়॥
খণ্ডের সম্প্রদায় করে অন্যত্র কীর্তন।
নরহরি নাচে তাঁহা শ্রীরঘুনন্দন॥
জগন্নাথ আগে চারি সম্প্রদায় গায়।
দুই পার্শ্বে দুই, পাছে এক সম্প্রদায়॥
কীর্তন কালে চৈতন্যদেব ভাববিহবল হয়ে পড়েন ও মাটিতে পড়ে যান; তাঁকে রক্ষা করার জন্য নিত্যানন্দ কয়েকজন ভক্তসহ তাঁকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকেন; আবার তাঁদের ঘিরে রাজা প্রতাপরুদ্রদেব নিজে কিছু অমাত্যসহ দ্বিতীয় বেষ্টনী তৈরি করেন।
নামগান
চৈতন্যদেব করেছিলেন মূলত নামকীর্তন যেটি নারদীয় কীর্তনের একটি ভাগ। নামকীর্তনে ভগবানের নাম গীত করা হয়, সুর দিয়ে ভগবানের নাম করলেই তা নামকীর্তন পদবাচ্য হয়। নব ভক্তির প্রধান সাধন হল নামকীর্তন, ‘নববিধা ভক্তি পূর্ণ হয় নাম হৈতে’। বৈষ্ণবদের মধ্য এই নামকীর্তনের যেমন প্রভাব দেখ যায় অন্য কোনও ধর্ম-সম্প্রদায়ের মধ্যে সেরকম নেই। বৈষ্ণবেরা মনে করেন যে, “কলিযুগে ধর্ম নামসংকীর্তন সার”। সংকীর্তন ও কীর্তন সমার্থক। উচ্চস্বরে হরিনাম করার নাম সংকীর্তন। নাম থেকেই প্রেম হয় এবং নাম করতে করতে ভক্ত কখনও কখনও বহির্জগতের সত্তা ভুলে যান। এরই নাম “আবেশ” অর্থাৎ ভাববিহবলতা। কীর্তন কালে চৈতন্যদেবের এটাই হত।
শাস্ত্রমতে আমাদের যে চারটি যুগের কথা বলা হয় — সত্য, ক্রেতা, দ্বাপর ও কলি, এই চার যুগের চারটি নাম আছে। এগুলি হ’ল-
১। সত্য যুগের নাম-
“নারায়ণ পরা বেদা নারায়ণ পরাক্ষরা।
নারায়ণ পরা মুক্তির্নারায়ণ পরা গতিঃ ॥”
২। ক্রেতা যুগের নাম-
“রামনারায়ণানম্ত মুকুন্দ মধুসূদন।
কৃষ্ণ কেশব কংসারে হরে বৈকুণ্ঠ বামন ॥”
৩। দ্বাপর যুগের নাম-
“হরে মুরারে মধুকৈটভারে
গোপাল গোবিন্দ মুকুন্দ সৌরে।
যজ্ঞেশ নারায়ণ কৃষ্ণ বিষ্ণো
নিরাশ্রয়ং মাং জগদীশ রক্ষ ॥”
৪। কলি যুগের নাম—
“হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ॥”
চৈতন্যদেবের ষুগেই আরও বিভিন্ন নাম কীর্তনের শুরু হয় । যেমন-
১। “রাম রাঘব রাম রাঘব রাম রাঘব রক্ষ মাম।
কৃষ্ণ কেশব কৃষ্ণ কেশব কৃষ্ণ কেশব পাহি মাম: ॥
২। “হরি হরয়ে নম কৃষ্ণ যাদবায় নমঃ ।
যাদবায় মাধবায় কেশবায় নমঃ ॥”
চৈতন্যোত্তর ষুগে যেসব নাম নানাভাবে ভক্তদের দ্বারা কীর্তিত হয়েছে সেগুলি হ’ল-
১। “জয় শচীনন্দন জয় গৌরহরি
বিষ্ণুপ্রিয়ার প্রাণনাথ নদীয়াবিহারী ॥”
২। “শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ
হরে কৃষ্ণ হরে রাম শ্রীরাধাগোবিন্দ্ |”
৩। “রাধে কৃষ্ণ গোবিন্দ শ্রীমধুসূদন
রামনারায়ণ হরে জয় জয় ৷”
অনেকে মনে করতে পারেন যে, নামসংকীর্তনে সংগীতের ভাগ অল্প। কারণ কোনও একটি নাম বা নামসমূহ উচ্চকণ্ঠে অধিকক্ষণ গান করলে তা ক্রমেই একঘেয়ে হয়ে পড়ে। কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে তা হয় না। এই নামগান বিভিন্ন রাগরাগিণীতে এবং ভিন্ন ভিন্ন ছন্দে বা তালে করা হয়। প্রভাতে ভৈরব, ভৈরবী, মধ্যাহ্নে বাগেশ্রী, সন্ধ্যায় পূরবী, ইমনকল্যাণ, রাত্রে বেহাগ এইরূপ পর্যায়ক্রমে নাম করা হয়। সুতরাং ভক্তগণের অবসাদ যাতে না আসতে পারে, তার জন্য নামকীর্তনে যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয়। নামসংকীর্তনে যে রাগরাগিণীর সমাবেশের কথা বলা হলো তা অনেকটা বৈঠকী বা হিন্দুস্থানী রীতির অনুগত। সুতরাং সুরজ্ঞ গায়ক ইচ্ছা করলে নামসংকীর্তনে যথেষ্ট নূতনত্ব ও মাধুর্য সঞ্চার করতে পারেন।
লীলা কীর্তন বনাম পদাবলী কীর্তন
লীলা কীর্তনের বিষয়ে আলোচনার আগে পদাবলী কীর্তনের ব্যাপারে কিছু কথা বলে নেওয়া দরকার। পদাবলী কীর্তনই হ’ল কীর্তনের প্রাচীনতম নিদর্শন। কীর্তন গানের জন্য উপযোগী করে প্রাচীন কালের কতিপয় বৈষ্ণব আচার্য কবি (মহাজন) কিছু কিছু কবিতা লিখেছেন। প্রত্যেকটি কবিতাই একটি করে পদ। তবে যে-সব পদ পদাবলী সংকলনে সংকলিত হয়েছে তার সবগুলি গান হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিল কিনা তার প্রমাণ নেই। তবে নানাবিধ গবেষণা-সূত্রে যে-সব সন্ধান পাওয়া গেছে তাতে বোঝা যায় এর সিংহভাগ কবিতাই ছিল প্রসিদ্ধ গান। এর প্রতিটি পদ একটি কীর্তন। এমন এক বা একাধিক মহাজনকৃত পদগানকেই বলা হয় “পদাবলী কীর্তন” । এক্ষেত্রে লীলা বিন্যাসের প্রয়োজন কম, গানটির উপস্থাপনই বড় কথা। এমনকি বিভিন্ন গানের মধ্যে প্রসঙ্গের মিল না থাকলেও ক্ষতি নেই। রেডিও, রেকর্ড, দূরদর্শন বা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যে গানগুলি সম্প্রচারিত হয় তা মূলত পদাবলী কীর্তন। পদাবলী কীর্তন মূলত পালা কীর্তনের অংশবিশেষ। অনেকগুলি পদকে সংকলিত করে ঘটনার নাটকীয় বর্ণনার উপস্থাপনকল্পে করা হয়–পালা কীর্তন বা লীলাকীর্তন। পদকীর্তন হ’ল কবি জয়দেবোত্তর যুগে প্রচলিত কীর্তনের প্রাচীনতম রূপ। এরই সংস্কারলব্ধ রূপটি হ’ল গড়াণহাটি গানের ধারা। ভিন্ন ভিন্ন গানের ভিন্ন ভিন্ন রূপ। পরপর সংযোজন করলেও স্বকীয় সত্তা নষ্ট হয় না। পালা কীর্তন পর্যায় প্রকরণের সময় গানগুলি যখন সংযোজন করা হয়, প্রতিটি গানের বৈশিষ্ট্যের যাথার্থরক্ষা করতে চেষ্টা করা হয়। তাই পদাবলী কীর্তনই হ’ল কীর্তনের প্রাচীনতম নিদর্শন।
কীর্তনের অন্তিম কিন্তু সর্বাপেক্ষা বৃহৎ ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ভাগ হল লীলাকীর্তন বা পালাকীর্তন। পালা শব্দটি যাত্রা বা নাটকের ক্ষেত্রে যে অর্থে ব্যবহৃত হয় কীর্তনের ক্ষেত্রেও অনেকটা তাই। বৃন্দাবনে প্রকটিত রাধা, কৃষ্ণ, সখা, সখী, গোপ, গোপী ইত্যাদি সকলের সঙ্গে বিলাসসূচক ঘটনাগুলিকেই লীলা বলে বর্ণিত করা হয়। প্রকৃতপক্ষে লীলা হ’ল ভগবতরূপের খেলা। শ্রীকৃষ্ণস্বরূপের লীলাপ্রসঙ্গ নানাভাবে বর্ণিত হয়েছে বিভিন্ন গ্রন্থে। এই লীলাসূত্রকে অবলম্বন করে নানাবিধ গান পালা বেঁধে গাওয়া হত বলে লীলাকীর্তন পালাগান নামেও পরিচিত। শ্রীজীব গোস্বামীর শিষ্য বিখ্যাত নরোত্তম দাস আয়োজিত খেতুরি মহোৎসবের পর বাঙ্গলায় গোস্বামী সিদ্ধান্তের সঙ্গে লীলাকীর্তনের খুব চলন হয়।
ষোড়শ শতকের অন্তিমভাগে ও সপ্তদশ শতকে গোবিন্দদাস, বলরামদাস (দ্বিতীয়.) জ্ঞানদাস, রায়শেখর, কবিরঞ্জন (ছোট) বিদ্যাপতি, বসন্ত রায়, কবিশেখর, অনম্তদাস (দুখিয়া), যদুনন্দন প্রমুখ বড় বড় মহাজন পদকতার আবির্ভাব হয়। নরোত্তম নিজেও ছিলেন উৎকৃষ্ট পদকর্তা। তাঁর সতীর্থ ও পরম সুহদ শ্রীনবাস আচার্যও কিছু সুন্দর পদ রচনা করেছিলেন। এই সব মহাজনদের পদ গোস্বামী রসতত্ত্ব অনুযায়ী লেখা। চৈতন্যপূর্ব মহাজন বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাস (যাঁর পদগান চৈতনাদেব শুনতেন এবং নিজেও করতেন) এবং মুরারি গুপ্ত, নরহরি সরকার, বাসু ঘোষ, বংশীবদন চাটুয্যে, নয়নানন্দ মিশ্র প্রমুখের কৃষ্ণলীলা বিষয়ে পদ ছিল। কৃষ্ণের ব্রজলীলা বিষয়ক বলে এইসব পদ গোস্বামী রসতত্ত্ব অনুযায়ী সাজান কঠিন হয়নি। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী পদসমূহ একত্রে ধরলে গোস্বামী শাস্ত্রের রসপর্যায় অনুযায়ী প্রত্যেকটি লীলা বিষয়েই বেশ কিছু পদ পাওয়া যায়। এক একটি লীলার পদসমূহ ঘটনা ক্রম অনুসারে সাজিয়ে বড় বড় পালাগান গাওয়া রেওয়াজ হয়ে উঠল।
গোস্বামী রসশাস্ত্র
লীলাকীর্তনকে রসকীর্তন নামে অভিহিত করা হয়। রস অর্থে যা আস্বাদন করা যায় অর্থাৎ যা চিন্তা করলে বা শুনলে হৃদয় আনন্দে আপ্লুত হয়, তার নাম রস। এক্ষেত্রে, রস অর্থে পারমার্থিক আস্বাদন, লক্ষ্য শ্রীকৃষ্ণ। এই কারণে লীলাকীর্তনের অন্য নাম রস কীর্তন।
লীলাকীর্তন গোস্বামী রসশাস্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, এই গোস্বামী রসশাস্ত্র সম্পর্কে কিছু না বললে লীলাকীর্তন বিষয়ে ঠিকঠাক জানা হয়না। গোস্বামী রসতত্বের মুখ্য গ্রন্থ রূপ গোস্বামীকৃত ‘উজ্জ্বলনীলমণি’। এতে রসপর্যায়, নায়ক-নায়িকা লক্ষণ ও তাদের ভাবের ব্যাখ্যা আছে। তাই উজ্জ্বল নীলমণি না পড়লে ভাল কীর্তনীয়া হওয়া যায় না এমনটাই বলা হয়ে থাকে৷ সঙ্গে গোস্বামীদের ভক্তিসিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত হওয়ার জন্য “ভক্তিরসামৃতসিন্ধু’ ও ‘ভক্তিসন্দর্ভ’ পাঠ করা প্রয়োজন। কীর্তনের বোদ্ধা হতে হলেও এই সব গ্রন্থ ভাল করে জানা থাকা দরকার। গোস্বামী শাস্ত্রমতে প্রধান রস চারটি: দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য এবং উজ্জ্বল বা মধুর। চার মুখ্য রসের মধ্যে উজ্জ্বল বা মধুর রসই কৃষ্ণের উপভোগের পক্ষে প্রশস্ততম কেনন৷ অন্য তিনটি রসই এর মধ্যে নিহিত আছে। তাই মধুর রসের গানই লীলাকীর্তনে বেশী শোনা যায়। উজ্জ্বলরস বিপ্রলব্ধ ও সম্ভোগ এই দুইভাগে বিভন্ত। গভীরভাবে অনুরক্ত নায়ক-নায়িকার অপূর্ণ মিলনাকাঙ্ক্ষা হতে যে অবস্থার উদ্ভব হয় তাই বিপ্রলব্ধ। পরস্পর মিলনের উল্লাস সম্ভোগ নামে অভিহিত। বিপ্রলব্ধের চারভাগ :- পূর্বরাগ, মান, প্রেমবৈচিত্র্য ও প্রবাস। সম্ভোগের ভাগ চারটি :- সংক্ষিপ্ত, সঙ্কীর্ণ, সম্পন্ন ও সমৃদ্ধিমান। এই আটটি রসের প্রতিটি আবার আটটি উপভাগে বিভক্ত। ফলে মধুর রসের মোট ভাগের সংখ্যা চৌষট্টি। এগুলোর প্রতিটির বিস্তারিত বর্ণনা আছে উজ্জ্বলনীলমণি গ্রন্থে, আমরা এখানে শুধু নামগুলি উল্লেখ করছি।
বিপ্রলব্ধ
পূর্বরাগ:- সাক্ষাৎ দর্শন, চিত্রপটে দর্শন, স্বপ্নে দর্শন, বন্দী বা ভাটমুখে গুণশ্রবণ, দৃতীমুখে শ্রবণ, সখীমুখে শ্রবণ, গুণিজনের গানে শ্রবণ, বংশীধ্বনি শ্রবণ।
মান:- সখীমুখে শ্রবণ, শুকমুখে শ্রবণ, মুরলীধ্বনি শ্রবণ, প্রতিপক্ষের দেহে ভোগচিহ্ন দর্শন, প্রিয়তমের অঙ্গে ভোগচিহ্ন দর্শন, গোত্রস্খলন, স্বপ্নে দর্শন, অন্য নায়িকার সঙ্গ দর্শন।
প্রেমবৈচিত্র্য:- শ্রীকৃষ্ণের প্রতি আক্ষেপ, নিজপ্রতি আক্ষেপ, সখীর প্রতি, দূতীর প্রতি, মুরলীপ্রতি, বিধাতার প্রতি, কন্দর্পের প্রতি এবং গুরুজনের প্রতি আক্ষেপ।
প্রবাস:- ভাবী (বিরহ), মথুরাগমন, দ্বারকাগমন, কালীয়দমন (অদর্শনে বিরহ), গোচারণজনিত বিরহ, নন্দমোক্ষণ, কার্যানুরোধে প্রবাস; রাসে অন্তর্ধান।
সম্ভোগ
সংক্ষিপ্ত:- বাল্যাবস্থায় মিলন, গোষ্ঠে গমন, গোদোহন, অকস্মাৎ চুম্বন, হস্তাকর্ষণ, বস্তাকর্ষণ, পথরোধ, রতিতোগ।
সঙ্কীর্ণ:- মহারাস, স্বয়ংদূতী, কুঞ্জলীলা, দানলীলা, বংশীচুরি, নৌকাবিলাস, মধুপান, সূর্যপূজা।
সম্পন্ন:- সুদূর দর্শন, ঝুলন, হোলি, প্রহেলিকা, পাশাখেলা, নতর্করাস, রসালস, কপটনিদ্রা।
সমৃদ্ধিমান্:- স্বপ্নে বিলাস, কুরুক্ষেত্র, ভাবোল্লাস, ব্রজাগমন, বিপরীত সম্ভোগ, ভোজনকৌতুক, একত্র নিদ্রা, স্বাধীনভর্তৃকা।
বলা প্রয়োজন এই প্রতিটি রসের আবার উপবিভাগ বর্তমান এবং নায়ক বা নায়িকা ভেদে অর্থাৎ লিঙ্গভেদে ভাব বা রস ভিন্ন প্রকার হয়। যেমন নায়কের ভাব হয় ধীরশান্ত আবার নায়িকা হতে পারে খণ্ডিতা বা প্রোষিতভর্তৃকা ইত্যাদি। তবে চৌষট্টি রসেরই লীলাগান হয় না, বিপ্রলব্ধের পূর্বরাগ, মান, প্রেমবৈচিত্র্য বা আক্ষেপানুরাগ ও প্রবাস এবং সম্ভোগের গোষ্ঠ, রাস, দানলীলা, নৌকাবিলাস, ঝুলন, হোলি প্রভৃতি প্রধান।
যে গানের কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম সেই গানের একটি কলি, “….. পথিক কয় ভেবোনা রে, ডুবে যাও রূপসাগরে…” উদ্ধৃত করেই বলি, যদিও কিছু না ভেবে রূপসাগরে ডুব দিতে বলা হয়েছে এবং ডুব দেবার জন্যই আমরা বেরিয়েছিলাম কিন্তু দেখলাম এক ডুবে এ সাগরের অফুরন্ত মণিমুক্তো সব তুলে আনা যাবে না।
কীর্তনের ঘরানা, তাল, বিভিন্ন অঙ্গ যথা:- আখর, তুক, কথা, ছুট ঝুমর, বিশিষ্ট পদকর্তা এবং প্রসিদ্ধ কীর্তনিয়াদের জীবন ও সাধনা, এমন আরও কত কথা যে এখনো বাকি রয়ে গেল তার ঠিক নেই। কিন্তু এই নিবন্ধের স্বল্প পরিসরে এত কিছু একেবারে বলে ফেলা সম্ভব নয়। কীর্তনের অকথিত বিষয়গুলি নিয়ে আবার অন্য কোনোদিন কথা বলা যাবে।
তথ্য সংগ্রহ ও সুত্র:-
- বাংলা কীর্তনের ইতিহাস – হিতেশরঞ্জন সান্যাল; কে পি বাগচী ২০১২
- বাংলার কীর্তন গান – ডঃ মৃগাঙ্কশেখর চক্রবর্তী; সাহিত্যলোক ১৯৯৮
- কীর্তন – খগেন্দ্রনাথ মিত্র; বিশ্বভারতী গ্রন্থালয় ১৩৫২ বঙ্গাব্দ।
- বাংলার কীর্তন ও কীর্তনীয়া – ডঃ হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়; পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ ২০১১।
উজ্জ্বলনীলমণি – রূপ গোস্বামী (হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত; ভা
এ বিষয়ে প্রায় কিছুই জানা ছিল না। এই গুরুত্বপূর্ণ লেখাটি পড়ে বাংলার কীর্তন গান সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম। লেখককে ধন্যবাদ জানাই।
ভালো লেখা।। তথ্য সমৃদ্ধ।
সংক্ষিপ্ত কিন্তু সুসংহত।
জন্মসূত্রে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই শুনেছি। আবার মনে থাকার মতো বয়সে ও কর্ণ কূহরে মাঝেই অষ্টপ্রহর ও প্রবেশ করেছে শ্রুতিমধুর পদাবলী। গুরু জনের সাথে আসরে ও বসতে হয়েছে। বিখ্যাত প্রায়
সমস্ত কীর্তনিয়াদের বাড়িতে ও আসতে দেখেছি।
কিছু জানতে পেরেছি তখন ই।
আপনার এই আলাপচারিতায় আশ্চর্য হয়ে দেখলাম কিছু ই জানা ছিল না। অসম্ভব মুগ্ধ হলাম কৃশাণু আপনার প্রাজ্ঞতায়।
লেখাটি দ্বীতিয় পর্বে প্রবেশ করুক, এই প্রার্থনা।