কাবাব কিসসা – কাবাবের ইতিহাস-ভূগোল-বর্তমান নিয়ে একখানা বই
(গ্রন্থের নামঃ কাবাব কিসসা; গ্রন্থের লেখকঃ নীলাঞ্জন হাজরা: প্রকাশ সালঃ ২০১৯ (প্রথম সংস্করণ) ISBN: 978-93-88432-18-4 প্রকাশক – ধানসিড়ি)
শ্রীরামচন্দ্র নিয়ে বিস্তর হইচইয়ের বাজারে সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো গ্রুপট্রুপ খুলে তামাম বাঙালি জাতির বাপ-চোদ্দপুরুষ উদ্ধার চলছে – দেশের প্রথমসারির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মেধাদীপ্ত কিছু ছাত্র সে প্রকল্পের মুখ্য হোতা – কলকাতার মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা বেহারি তরুণ ডাক্তার জানাচ্ছেন, কলকাতায় পড়তে আসার সময় তাঁর মা পইপই করে বাঙালিদের থেকে, বিশেষত বাঙালি মেয়েদের থেকে দূরে থাকতে বলেছেন।
এই বাঙালিবিদ্বেষ অবশ্য নতুন কোনো কথা নয়। আরো অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম, বাঙালিরা যে একেবারেই আগমার্কা হিন্দু নয়, এবং তারা যে জাতি হিসেবেই অ্যাজ-এ-হোল না ঘরকা না ঘাটকা, সে নিয়ে গোবলয়ের মেইন স্ট্রীম হিন্দুরা চিরকালই নিঃসন্দেহ। এ বিষয়ে আপনি যদি সংশয়াকুল হয়ে থাকেন, তাহলে একটু বোঝার চেষ্টা করুন – বেসিক এই কথাটুকু না মানলে কঠোর বাস্তবটা ধরতে পারবেন না, যে, মছলিখোর আমিষাশী বাঙালি ঠিক প্রপার হিন্দু নয়। কেননা, স্ট্যান্ডার্ড আগমার্কা হিন্দুরা আর যাই হোক মাছ-মাংস খাওয়ার মতো মহাপাতকের কাজ করে না। প্লাস, স্ট্যান্ডার্ড হিন্দু মাত্রেই ঘোর রামভক্ত – আশা করি, একথা মনে না করিয়ে দিলেও চলবে।
কিন্তু, এখন যদি কেউ বলতে আসেন, খাস বাল্মিকী রামায়ণে স্বয়ং শ্রীরামচন্দ্র মহানন্দে ঘোর নন-ভেজ ভোজনে লিপ্ত – প্রাণী পেলেই ছাড়ছেন না, কাবাব বানিয়ে খাচ্ছেন – তাহলে তাকে কী বলবেন??
নীলাঞ্জন হাজরা তাঁর কাবাব-কিসসা শুরুই করেছেন রামায়ণে কাবাবের ব্যাপার-স্যাপার দিয়ে — এমনকি সেখান থেকে রেসিপিও দিয়েছেন — একটু উদ্যোগী হলে শ্রীরামচন্দ্র যেমন খেতেন, আপনার পাতেও পড়তে পারে তা-ই – দুঃখ একটাই, স্রেফ ল্যাঙ্গুয়েজ বেরিয়ারের কারণে এমন আশ্চর্য বইখানা গোবলয়ের আগমার্কা হিন্দুরা পড়ে দেখতে পারবেন না।
কাবাব না হয় হল — কিন্তু, পুজোর বাজারে ঢালাও খ্যাঁটনের বিজ্ঞাপনে মাছ-মাংসের উল্লেখ থাকায় সমগ্র হিন্দুজাতির ধর্মীয় ভাবাবেগ আহত হতে পারে, এমন বিতর্কের ঠেলায় বিজ্ঞাপন তুলে নিয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হয় যে রামরাজত্বে, সেই মুহূর্তে এই প্রশ্নও সম্ভবত অপ্রাসঙ্গিক নয়, যে — নিরামিষভোজনের সাথে হিঁদুয়ানির এমন মাখামাখি এলো কোত্থেকে? মনুস্মৃতি?? লিখিত রামায়ণের আশেপাশের সময় গ্রন্থিত মনুস্মৃতিতে আমিষভোজন নিয়ে সার্বিক নিষেধাজ্ঞা নেই — রয়েছে কিছু নিয়মপালনের শলা। একদিকে যখন রামায়ণে ঢালাও মুর্গি-মাটন প্যাঁদাচ্ছেন জনগণ, তখন মনুভাই বিধিনিষেধ দিচ্ছেন – কেন? নীলাঞ্জন হাজরা সেই ব্যাপারটা নিয়ে দিব্যি একটা মজার সম্ভাবনার কথা ভেবেছেন – “তা হলে ব্রাহ্মণ-অব্রাহ্মণ উভয়েই যে মাংস খেতেই পারেন, শর্তগুলি মেনে, মনু তা দিব্যি মেনে নিচ্ছেন৷ এখন কথা হল, কোনও বিশেষ অভ্যাসের ওপর কখন কড়া শর্তাবলী চাপান হয়? সাধারণ জ্ঞান বলবে, যখন মানুষ সেটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করে ফেলে৷ রামায়ণে হরিণ থেকে ময়ূর হয়ে সজারুর মাংস পর্যন্ত তরিবৎ করে রান্নার যে বর্ণনা আছে, তা থেকে এ আন্দাজ করা কী খুব কঠিন যে মাংস খাওয়ার ব্যাপারটা হয়তো সত্যিই বেশ বাড়াবাড়ির জায়গায় চলে গিয়েছিল?”
সে যা-ই হোক, বইখানা পড়ুন। এ বই কাবাবের ইতিহাস – এবং, সরস, জিভে-জল-আনা ইতিহাস। রামায়ণ দিয়ে শুরু, সেখান থেকে প্রাচীন গ্রীস – সাম্প্রতিক গ্রীস থেকে শুরু করে যিশুখ্রিস্ট জন্মানোর ষোলশ বছর আগের ব্যাপার-স্যাপার — আর সেখান থেকে হালে অনলাইনে ঢালাও বিক্রি হওয়া বার্বিকিউ –
“আক্রোতিরি নামের সেই শহরে (নামটা আধুনিক অবিশ্যি) পাওয়া প্রত্নবস্তুর মধ্যে কাবাবের সিখ সাজানোর ব্যবস্থাসহ কুকুরের মুখওয়ালা যে উনুনটি পাওয়া গেছে তা থেকে সন্দেহের আর কোনও কারণই থাকতে পারে না যে আজ থেকে সাড়ে তিন হাজার বছর আগেও মিনোয়ান সভ্যতার শহুরে মানুষরা কাবাব-প্রিয়, এবং বিশেষ করে সিখ কাবাব-প্রিয় ছিলেন৷”
জাম্প কাট — ইরান — মাহী কাবাব — তারপরেই ওমর খৈয়াম — আর হ্যাঁ, শহর কলকাতার রেস্তোরাঁ নিয়েও – “যেমন এই যে সেদিন ‘Oudh 1590’ নামের হালফিলে খোলা রেস্তোরাঁয় আখতারিবাই ফয়েজাবাদি ওরফে বেগম আখতারের অমৃতনির্যাস কণ্ঠে মোমিন-দাগ-গালিবের গজল শুনতে শুনতে ‘অওধি সুগন্ধি মাহি’ নামের একটি কাবাব খেলুম, আর খেতে খেতে বুঝলুম এই কাবাবিকে (ফারসিতে যিনি কাবাব বানান তিনিই কাবাবি) আরও কিছুদিন হাত পাকাতে হবে জাত কাবাব পাকাতে গেলে৷ কারণ সে ‘সুগন্ধি মাহি’-র দশ গ্রাসের মধ্যে অন্তত তিন গ্রাস মুখে দিয়েই মালুম হল ছোটো এলাচ বাটা তাতে জমে আছে৷ অর্থাৎ কিনা জাত কাবাবের যেটা প্রথম শর্ত – মশলা এমন সমান ভাবে মিশে যাবে যে কখনও একটি গ্রাসেও কোনও বিশেষ মশলার জল দিয়ে কুলকুচু করলুম মনে হবে না, তাতে এই ১৫৯০-এর কাবাবি হড়কে গেছেন (আসলে এ রকমের নানা শর্ত উৎরাতে পারলেই খাস অওধ-এর ম্যাহ্যাল-ই-খুরাকপ্যাজি, যাকে উর্দুতে বলে বাওর্চিখানেহ্, তার বাওর্চি থেকে ‘রকাবদার’, যাঁরা ছাড়া অবধের নবাবের পাতে পড়া কোনও পদ রান্নার অধিকার কারও ছিলনা, সেই রকাবদার-এর পদে প্রমোশন পাওয়া যেত, যা করতে অনেকেরই এক জীবন কাভার হয়ে যেত হামেহাল৷ কয়েকবার ট্রাই করলেই বোঝা যেতে পারে কাবাব, রোস্ট, গ্রিল-এ এই সমান করে মশলা মেশানটা কি সাংঘাতিক চ্যালেঞ্জ !)৷”
সবই তো হল – কিন্তু মাথায় রাখুন, রামায়ণ কিম্বা মহাভারত – অথবা সেই গ্রীস – কাবাবের বর্ণনা মিললেও, কাবাব শব্দটি নেই। যে শব্দটি কানে এলেই আপনার হৃদয় এমন আকুলিবিকুলি করে ওঠে, সেই কাবাব শব্দটি এলো কোত্থেকে? কিতাব-অল-তবিখ নামক আশ্চর্য বইয়ের গল্পটাই বা কী? তার রেসিপির রহস্য ভেদ করে গভীর থেকে আরও গভীরে যাবেন কী করে? নাঃ, সবসময় কথায় কথায় উদ্ধৃতি দেব না – ইন ফ্যাক্ট, আর উদ্ধৃতিই দেব না পারতপক্ষে – খামচে খামচে উদ্ধৃতি দেওয়াও বড় ঝামেলা – বইটাই পড়ে ফেলুন বরং – তারচেয়ে আমি আরেকটু গল্প শুনে নিই – তন্দুরির গল্প – কে যেন একবার বলেছিল, ভারতের জাতীয় পাখি তন্দুরি চিকেন – সেই খাবারের গল্পটাও তো ঝামেলার – দিল্লির মোতিমহল দাবী করে থাকেন, তন্দুরির জন্মদাতা তাঁদের পূর্বসূরি কুন্দনলাল গুজরাল – খাস এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা সেকথায় সায় দিলেও নীলাঞ্জন হাজরা ঘোর সংশয়ে – তিনি তন্দুরের রেফারেন্স পেয়েছেন এক হাজার বছর আগের বইয়ে – আর তন্দুর উনানের সন্ধান দেখিয়েছেন চার হাজার তিনশ বছরের পুরোনো কালিবাঙ্গানে – এদেশেই প্রাক-হরপ্পা সংস্কৃতিতে।
ইতিহাস তো আছেই, মাঝেমধ্যে বিবিধ প্রসঙ্গে ইরান-তুর্কি যাতায়াতও আছে – ফিরে আসা আছে সাম্প্রতিক রাজনীতিতে – কাবাব আর রাজনীতি আর অর্থনীতির মিলেমিশে থাকা – জার্মান চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মার্কেলের কাবাবের দোকানে দাঁড়িয়ে হাস্যোজ্জ্বল মুখে ছবি তোলার রহস্য খুঁজতে গিয়ে তিনি জানান –
“মোক্ষম দক্ষিণপন্থী সংবাদপত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট র্জার্নাল জানাচ্ছে কেন – ২০১২ সালের হিসেব অনুযায়ী প্রতি বছর গড়ে ৭২ কোটি প্লেট দোনের কেবাপ বিক্রি হয় জার্মানিতে৷ ২০১২ সাল নাগাদ ইউরোপে দোনের কেবাপ শিল্পর বাৎসরিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল – ৩৫০ কোটি ইউরো৷ দু’ লক্ষ মানুষ সে সময় জীবীকা নির্বাহ করতেন এই কাবাব বেচে৷ এই হুহু-করে-বাড়তে থাকা শিল্পের শীর্ষে জার্মানি, যার পিছনে রয়েছেন জার্মানিতে এসে বসবাস করা ২৫ লক্ষ তুরস্কের মানুষ৷
কাজেই, দোনের কাবাব আজ শুধু জার্মানিতেই নয় অন্যান্য বহু দেশে, যেমন ফ্রান্সে বা ইউক্রেনে দেশ ছেড়ে জীবিকার সন্ধানে উন্নততর দেশে চলে যেতে বাধ্য হওয়া মানুষের ঢলের প্রতীক, ভিন্ন সংস্কৃতির মিলেমিশে যাওয়ার প্রতীক, দেশ ছাড়া মুসলমান মানুষের ক্রিশ্চান দুনিয়ায় মাথা তুলে টিকে থাকার প্রতীক৷ কাজেই দক্ষিণপন্থী হুঙ্কারের আর পাঁচটা লক্ষ্যের মধ্যে একটা লক্ষ্য এই দোনের কেবাপ-সংস্কৃতিও৷ আর মের্কেল মেমের ওই ছবির কোলাজ থেকেই স্পষ্ট সুযোগ পেলেই তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ফোটো-অপ করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন দোনের কেবাপ যা কিছুর প্রতীক তাঁর সপক্ষে দ্বিধাহীন ভাবে দাঁড়াতে প্রস্তুত তিনি৷ সালাম মের্কেল৷ সালাম দোনের কেবাপ, বিশ্বরাজনীতিতে কাবাবের এমন গুরুত্ব আর দ্বিতীয়টি দেখিনি !”
যাঃ, আবারও উদ্ধৃতি দেওয়া হয়ে গেল। কিন্তু, মোদ্দা কথাটা হল, রাজনীতির প্যাঁচ-পয়জার নিয়ে দীর্ঘক্ষণ সারমন না শুনিয়ে লেখক পরমুহূর্তেই ফিরে গিয়েছেন দোনের কাবাবের ইতিহাসে, তার প্রবল জনপ্রিয়তার ইতিহাসে – আর পরক্ষণেই গিয়েছেন ইরানে – মাহী কাবাবে – জানিয়েছেন জাফরান বিষয়ক কিছু আশ্চর্য তথ্য – আর এক লহমায় এসে পড়েছেন এশহরের ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের পাশে জারঞ্জ রেস্তোরাঁয় – সেখানকার চমৎকার কাবাবের বর্ণনায় – অতীতের নিজাম হোটেলে কৈশোর আর তারুণ্যের সন্ধিক্ষণে প্রথম গোমাংসভক্ষণের স্মৃতিতে – দক্ষ জাগলারের মতো নীলাঞ্জন হাজরা বর্তমান থেকে এক লহমায় ফিরে গিয়েছেন অতীতে – ইতিহাস-প্রত্নতত্ত্ব থেকে তুলে এনেছেন তথ্যপ্রমাণ – আপনার সামনে সাজিয়ে দিয়েছেন রেসিপি – অতীতের রেসিপির বর্তমান পুনর্নির্মাণ ঠিক কেমন করে সরল হতে পারে, সে নিয়ে গাইড করতে চেয়েছেন – আর পুরোটা জুড়ে আছে মজলিশি গল্প।
আবার দেখুন, কষা মাংস নিয়ে লালায়িত আপনি কষা শব্দের উৎপত্তি নিয়ে কখনও ভেবেছেন? এদিক-ওদিক কসা মাংস লেখা থাকলে, বানানের দুরবস্থা নিয়ে বিচলিত হয়েছেন – কিন্তু, কোনটা ঠিক? না, রহস্যভেদ করছি না এক্ষুণি। একটু হিন্ট দিই – রান্নার পাত্র থেকে আসতে পারে কি শব্দটা?
অতোমান রাজদরবার থেকে সিরিয়া – কোথাকার কাবাবের ইতিহাস নেই!! আর দিল্লীর দরবার – সুলতানি আমল, খাস আকবর – সেখান থেকে আওরঙ্গজেব। খোদ নিজামের হেঁসেলের রেসিপি। আর লক্ষ্ণৌ তো আছেই।
কাবাবের রকমফেরও তো চমকপ্রদ। মাইরি বলছি, এই বইয়ের আগে আমার ধারণা ছিল, কাবাব বলতে ঝলসানো মাংস – তাওয়ায় সেঁকে ওই সাম্মি কাবাব জাতীয় যে দু’চার প্রকার হয়, সে ওই ব্যতিক্রম মাত্র – আর এ তো সবাই জানে, ব্যতিক্রম নিয়মকেই প্রমাণ করে, তাই না! সেখানে কাবাবের একটি ভ্যারাইটি সেদ্ধ মাংস – সেদ্ধ মাংস, ভাবা যায়!!! আহ্, স্রেফ জলে সেদ্ধ স্যুপ-টাইপের কিছু বস্তুর কথা হচ্ছে না – রীতিমতো মশলা-টসলা দিয়ে জমিয়ে সেদ্ধ। মশলাও অজস্রপ্রকার – কখনও দুধে সেদ্ধ মাংস, কখনও বা সহযোগী ফুলের পাপড়ি। প্রাচীন গ্রন্থ থেকে হুবহু তুলে আনা রেসিপির কী কী মডিফিকেশন করা যেতে পারে, যাতে কিনা সহজতর পথে পুরো স্বাদটাই পাওয়া সম্ভব। কী লেখেননি নীলাঞ্জন হাজরা!!
শেষমেশ ফিরে আসা এই বাংলায় – বঙ্গদেশে – সেও আরেক আশ্চর্য অধ্যায় – রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের কাব্যে খাদ্যবর্ণন থেকে বিপ্রদাসের পাকপ্রণালী – এই রুদ্ধশ্বাস জার্নি, এই ইতিহাস-ভূগোল-রাজনীতি-সংস্কৃতি ওলটপালট করে ছেনে আনা এমন একখানা বই – নাঃ, ফুডবুক বললে এই বইয়ের পরিসরকে নেহাতই গণ্ডী টেনে ছোট করে দেওয়া হয়। অবশ্য, ফুডবুকই তো – খাবারের ইতিহাস আর সভ্যতার ইতিহাস তো সম্পৃক্ত – “বিস্বাদকে সুস্বাদু করতে বিভিন্ন কিছু মিশিয়ে পরীক্ষা আর কোনও প্রাণী করে কী? আমার জানা নেই৷ সে পথ দীর্ঘ৷ রক্তাক্ত৷ কারণ খাবার সুস্বাদু করতে মানুষ যে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ চালিয়েছে ইতিহাসে তার জুড়ি মেলা ভার৷ আমার মনে হয় মানুষ যদি সুস্বাদের পরোয়া না করত, তা হলে সভ্যতার ইতিহাস সম্পূর্ণ অন্য হত৷”
লেখা তো রয়েছেই, আর আগে যেকথা বললাম, রয়েছে রেসিপিও – এবং বিশেষভাবে যে কথাটা বলছি বারবার, সঙ্গে সেই রেসিপিকে যাকে বলে যুগোপযোগী করার নির্দেশিকাও – সাথে ছবি – চমৎকার ছাপা-বাঁধাই। মাঝেমধ্যে এমন একেকখানা বই লেখা হয়, মনে হয়, সবাইকে গিয়ে গিয়ে বলি, প্লীজ বইটা পড়ুন – ঝাঁকুনি দিয়ে বলি, জাস্ট পড়ে দেখুন – এও তেমনই।
বই তো বেশ কিছু পড়েছি। খারাপ-ভালো সবরকমই। খাবারদাবার নিয়েও বেশ কয়েকখানা পড়া হয়ে গেল। বিশ্বাস করুন, এরকম আর পড়িনি। কথাটা খুব ভেবেচিন্তে আর সিরিয়াসলি বললাম।
আক্ষেপ একটাই – বাংলা বইয়ের নাকি বিক্রি কমছে – অন্তত পশ্চিমবাংলায় তো বটেই – এমন গবেষণা আর মননের ফসল, এমন সরস লিখন – এমন বইও কি শেষমেশ উপযুক্ত সংখ্যায় পাঠক পাবে!!!