সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

সাম্রাজ্যবাদী জাপান ও রবীন্দ্রনাথ-রাসবিহারী বিতর্ক

সাম্রাজ্যবাদী জাপান ও রবীন্দ্রনাথ-রাসবিহারী বিতর্ক

শিবাশীষ বসু

আগস্ট ১৯, ২০২৩ ৫৬১ 5

১৯১৬ সালে জাপান গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। জাপানের সংস্কৃতিজগত দেখে অভিভূত হলেও জাপানীদের উগ্র জাতীয়তাবাদ কবিকে আশঙ্কিত করেছিল। তিনি দেখেছিলেন, কীভাবে প্রাচ্যের উদীয়মান শক্তি জাপানের মানসিকতায় পাশ্চাত্যে সাম্রাজ্যবাদের বিষ প্রবেশ করছিল। ১৯০৫ সালে রাশিয়াকে যুদ্ধে পরাজিত করবার পর ১৯১০ সালে কোরিয়া এবং ১৯১৪ সালের আগস্ট মাসে চীনের বেশ কিছুটা অঞ্চল দখল করে নিজের উপনিবেশ বানিয়ে নেয় জাপান। তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছে, সকলেরই দৃষ্টি ইউরোপে সীমাবদ্ধ। সাম্রাজ্য বিস্তারের আকাঙ্খায় এই সুযোগে জাপান চীনের কাছে একুশ দফা দাবী পেশ করে। জাপানের সাম্রাজ্যলিপ্সা দেখে বিরক্ত রবীন্দ্রনাথ ১২ই জুলাই ১৯১৫, অ্যান্ড্রুজকে লিখেছিলেন — “… I am almost sure that Japan has eyes upon India. She is hungry — she is munching Coria (sic), she has fastened her teeth upon China and it will be an evil day for India when Japan will have her opportunity. … But of all her misfortunes, coming of Japan into India will be the greatest if it ever occurs, for Japan is Asia and Europe combined — so we shall have a monster whose teeth are European and whose apparatus of digestion is Asiatic.” তাই পরের বছর জাপান ভ্রমণকালে ১১ই জুন ১৯১৬, টোকিও ইম্পেরিয়াল ইউনিভার্সিটি হলে বক্তৃতা দিতে তিনি সক্ষোভে জানালেন, “This political civilization is scientific, not human. It is powerful because it concentrates all its forces upon one purpose, like a millionaire acquiring money at the cost of his soul. It betrays its trust, it weaves its meshes of lies without shame, it enshrines gigantic idols of pride in the costly ceremonials of its worship, calling this patriotism.”

“এই রাষ্ট্রিক সভ্যতা বৈজ্ঞানিক, কিন্তু মানবিক নয়। এই সভ্যতা শক্তিধর, কারণ সে তার উদ্দেশ্যসাধনের জন্য তার সমস্ত শক্তি কেন্দ্রীভূত করে, ঠিক যেভাবে কোন লাখপতি তার আত্মা বিষর্জন দিয়ে অর্থ আহরণ করে। এই সভ্যতা নিজের আস্থা নষ্ট করে, নির্লজ্জভাবে মিথ্যার বেসাতি করে, নিজস্ব মন্দিরে লোভের বিশাল দেবতাদের মুর্তি প্রতিষ্ঠা করে এবং পূজার জন্য ব্যয়বহুল উৎসব-অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে গর্ব অনুভব করে, এরই নাম দেয় দেশপ্রেম।”

খবরের কাগজে রবীন্দ্রনাথের এই বক্তৃতার কথা পড়ে ফরাসি লেখক রোম্যাঁ রোলাঁ তাঁর ডায়রিতে লিখেছিলেন, “এই বক্তৃতাটি মানুষের ইতিহাসের একটি বাঁককে চিহ্নিত করেছে।” কেবলমাত্র একটি বক্তৃতাতেই ক্ষান্ত হননি কবি, আগ্রাসী জাতীয়তাবাদে আক্রান্ত জাপানের বিরুদ্ধে তাঁর জেহাদ প্রায় প্রতিটি বক্তৃতাতেই ফুটে বেরিয়েছিল।

শেষ পর্যন্ত ১৯৩৭ সালের জুলাই মাসে চীন আক্রমণ করে বসলো জাপান। চীনে জাপ-আক্রমণের সূচনাকাল থেকেই রবীন্দ্রনাথ জাপানকে তীব্রভাবে নিন্দা ও ভর্ৎসনা করে আসছিলেন। রবীন্দ্রনাথ এই সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কবির অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে ‘চীন-ভারত সাংস্কৃতিক সমিতি’র পরিচালক সাই ইউয়ান-পেই এবং চীনের জাতীয় সরকারের ‘বোর্ড আফ এক্সামিনেশনস’এর সভাপতি তাই চি-তাউ রবীন্দ্রনাথের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে শান্তিনিকেতনে অবস্থানকারী অধ্যাপক তান-এর কাছে টেলিগ্রাম পাঠান। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, ১৯৩৬ সাল নাগাদ চৈনিক অধ্যাপক তান ইউন-শান এবং ‘চীন-ভারত সাংস্কৃতিক সমিতি’র উদ্যোগে শান্তিনিকেতনে একটি চীনা-লাইব্রেরী গঠনের প্রচেষ্টা চলছিল। এই সঙ্ঘটির অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন চিয়াং কাই-শেক। এই উপলক্ষে তাঁরা চীন থেকে প্রায় ৮০ হাজার পুস্তক সংগ্রহ করে মে মাসের শেষের দিকে শান্তিনিকেতনে পাঠান। অধ্যাপক তান নিজেও ওই বছরের ১০ই জুলাই চীনাভবন নির্মাণের কাজ ত্বরান্বিত করবার জন্য শান্তিনিকেতনে এলেন। ১৯৩৭ সালের ১৪ই এপ্রিল বাংলা নববর্ষের দিন চীনা ভবনের উদ্বোধন হয়। প্রফেসর তান তখনও শান্তিনিকেতনেই অবস্থান করছিলেন। যাইহোক, চীনবাসীদের এই চরম দুর্দিনেও তাঁরা কবির জন্যে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে এই শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন  — এই কথা চিন্তা করে রবীন্দ্রনাথ গভীরভাবে বিচলিত হয়ে পড়েন। রোগশয্যা হতেই তিনি তাঁর চীনা বন্ধুদের উদ্দেশ্যে একটি বাণী প্রেরণ করলেন, যাতে তিনি লিখলেন, “আমার জন্য আপনাদের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা আমাকে আকুল করিয়া তুলিয়াছে, আমি আরোগ্যের পথে। দেশের এই জীবনমৃত্যুর সন্ধিস্থলেও যে, আমার চিন্তা আপনাদের মনে স্থান পায় ইহা বস্তুতঃই বিস্ময়কর। আপনাদের মহীয়সী জন্মভূমির উপর অন্যায় ও অযৌক্তিক আক্রমণের বিরুদ্ধে আপনারা যে অসীম সাহসিকতার সহিত বাধাদান করিতেছেন আমি মুক্তকণ্ঠে তাহার প্রশংসা করিতেছি এবং আপনাদের জয়কামনা করিতেছি। আপনাদের জয়ে ন্যায় ও মানবতা জয়যুক্ত হউক — জাপানেও আমার বিস্তর বন্ধুবান্ধব বিদ্যমান — জাপানের সাহসি সন্তানগণ তাহার শাসকগণ কর্তৃক ভ্রান্ত পথে পরিচালিত হইয়া প্রাচ্যের মহান আদর্শের অসম্মান করিতেছে দেখিয়া আমি অতি মাত্রায় বেদনা অনুভব করিতেছি। আজ আমাদিগকেই — যাহারা এতকাল তাহাদিগকে ভালবাসিয়া আসিয়াছি — তাহাদের কৃত অন্যায় সম্পর্কে তাহাদিগকে অবহিত করিবার জন্য এই সংগ্রামে তাহাদের পরাজয় কামনা করিতে হইতেছে।” দেখা যাচ্ছে যে, রবীন্দ্রনাথ এখানে স্পষ্ট পক্ষ অবলম্বন করেছেন, এবং সেটি দুর্বলের পক্ষ।

২১শে সেপ্টেম্বর মধ্যরাত্রী থেকে জাপানী বোমারু বিমানগুলি নানকিং ও ক্যান্টনের উপর অবিরত বোমাবর্ষণ করতে থাকে। ক্যান্টনের রাজপথগুলি হাজার হাজার নিরীহ নরনারী ও শিশুর মৃতদেহে ভরে উঠলো। এই হৃদয়বিদারক সংবাদে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো ভারতবর্ষেও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। কংগ্রেস সভাপতি জওহরলাল নেহেরু ২৬শে সেপ্টেম্বর দেশের সর্বত্র ‘চীন দিবস’ পালনের ডাক দিলেন। ওইদিন সারা ভারত জুড়ে চীনে জাপ আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন করা হল। বোম্বাই ও কলকাতায় জাপানী পণ্য বয়কটের দাবিতে মিছিল হল।

এই সময়েই সংবাদপত্রের একটি খবরে রবীন্দ্রনাথ প্রবল উত্তেজিত হয়ে পড়েন — জাপানের একদল সৈনিক যুদ্ধযাত্রার পূর্বে গৌতম বুদ্ধের মূর্তির সামনে প্রার্থনা করে যুদ্ধে জয় কামনা করছে। শান্তির প্রতীক গৌতম বুদ্ধের ভক্ত জাপানীদের এই নির্লজ্জ ভণ্ডামী আর বর্বরতা যেন সহ্য করতে পারছিলেন না তিনি। যুদ্ধবিরোধী রবীন্দ্রনাথ রচনা করলেন বিখ্যাত ‘বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি’ শিরোনামে এক অনবদ্য কবিতা যা ছাপা হল ‘প্রবাসী পত্রিকার মাঘ ১৩৪৪ সংখ্যায়।

“যুদ্ধের দামামা উঠল বেজে।

ওদের ঘাড় হল বাঁকা, চোখ হল রাঙা,

কিড়মিড় করতে লাগল দাঁত।

মানুষের কাঁচা মাংসে যমের ভোজ ভর্তি করতে

বেরোল দলে দলে।

সবার আগে চলল দয়াময় বুদ্ধের মন্দিরে

তাঁর পবিত্র আর্শীবাদের আশায়।

বেজে উঠল তূরী ভেরি গরগর শব্দে,

কেঁপে উঠল পৃথিবী।

ধূপ জ্বলল, ঘণ্টা বাজল,

প্রার্থনার রব উঠল আকাশে

‘করুণাময়, সফল হয় যেন কামনা’ —

কেননা, ওরা যে জাগাবে মর্মভেদী আর্তনাদ

অভ্রভেদ করে,

ছিঁড়ে ফেলবে ঘরে ঘরে ভালোবাসার বাঁধনসূত্র,

ধ্বজা তুলবে লুপ্ত পল্লীর ভস্মস্তূপে,

দেবে ধুলোয় লুটিয়ে বিদ্যানিকেতন,

দেবে চুরমার করে সুন্দরের আসনপীঠ।

তাই তো চলেছে ওরা দয়াময় বুদ্ধের নিতে আশীর্বাদ।

বেজে উঠলো তূরী ভেরি গরগর শব্দে,

কেঁপে উঠলো পৃথিবী।

ওরা হিসাব রাখবে মরে পড়ল কত মানুষ,

পঙ্গু হয়ে গেল কয়জনা।

তারি হাজার সংখ্যার তালে তালে

ঘা মারবে জয়ডঙ্কায়।

পিশাচের অট্টহাসি জাগিয়ে তুলবে

শিশু আর নারীদেহের ছেঁড়া টুকরোর ছড়াছড়িতে।

ওদের এই মাত্র নিবেদন, যেন বিশ্বজনের কানে পারে

মিথ্যামন্ত্র দিতে,

যেন বিষ পারে মিশিয়ে দিতে নিশ্বাসে।”

—পরে কবিতাটি পত্রপুট’ কাব্য সংকলনে স্থান পায়।

এইভাবে সমস্ত ভারতবর্ষে যখন চীনে জাপ-আক্রমণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন চলছে ঠিক সেই সময়ে অকস্মাৎ টোকিও থেকে ভারতের প্রবাসী বিপ্লবী রাসবিহারী বসু নেহেরু পরিচালিত ভারতের এই জাপ-বিরোধী আন্দোলন বন্ধ করবার অনুরোধ জানিয়ে রবীন্দ্রনাথকে তার করলেন — “ব্যবসায়ী, ছাত্র ও অন্যান্য যে সকল ভারতবাসী এখানে আছেন, তাঁহারা আপনাকে ভারতের স্বার্থের খাতিরে এবং জাপ-ভারত বন্ধুত্বের খাতিরে আপনাকে কংগ্রেসের ও পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর জাপ-বিরোধী ক্রিয়াকলাপে বাধা দিতে অনুরোধ করিতেছেন।” এইখানে বিপ্লবী রাসবিহারী বসু সম্বন্ধে কয়েকটি কথা বলবার আছে। ১৯১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পর রাসবিহারী পি. এন. ঠাকুর ছদ্মনামে কলকাতা থেকে জাপানী জাহাজ ‘শানুকি মারু’-তে চড়ে ভারত ত্যাগ করেন। কিছুদিন পর শ্রীমতী তোসিকো সোমা-কে বিয়ে করবার সূত্রে তিনি জাপানের নাগরিক রূপে পরিগণিত হলেন। রাসবিহারী বসুর বৈমাত্রেয় ভাই অধ্যাপক বিজনবিহারী বসু উল্লেখ করেছেন, “এই সময়ে হিন্দু মহাসভার সহায়তায় রাসবিহারীর সহিত ভারতের যোগ স্থাপিত হয়। ১৯৩৮ হইতে ১৯৪০ পর্যন্ত বীর সাভারকার ভারতে হিন্দু মহাসভার সভাপতি ছিলেন। ঠিক এই সময়ে রাসবিহারীও জাপানস্থিত হিন্দু-মহাসভার সভাপতিত্ব করেন। জাপান যুদ্ধে অবতরণ করিবার পূর্ব্ব পর্য্যন্ত উভয় দেশকর্ম্মীর মধ্যে ভাবের আদানপ্রদান ছিল। রাসবিহারীর একান্ত ইচ্ছা ছিল, জাপানে হিন্দু মন্দির স্থাপন করা।” বস্তুতঃ সাভারকার প্রমুখ হিন্দু মহাসভার নেতার সঙ্গে রাসবিহারীর ভালোরকম যোগাযোগ ছিল। সাম্রাজ্যবাদী জাপান পূর্ব এশিয়ায় তার নখদন্ত বিস্তার করলে রাসবিহারী এই ঘটনার সুযোগ গ্রহণের জন্য তৎপর হয়ে উঠলেন। অচিরেই তিনি ‘ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগ’ স্থাপন করে জাপানের পক্ষ নিয়ে ‘এশিয়া এশিয়াবাসীর’ ইত্যাদি দাবি তুললেন। ঐতিহাসিক উমা মুখার্জী লিখেছেন, “The spectacular military rise of Japan in the thirties and her entry into the Axis combination (1937) was a momentous development in world politics. The British imperialism all over the globe stood before a most menacing crisis from the Axis combination. In these international complications Rash Behari saw the future salvation of his mother¬ land. In his political psychology the enemies of Britain were the friends of India, no matter what their ideology or internal administration was. Never a doctrinaire or a fashionable philanthropist. Rash Behari was a hard-headed realist and could grasp the fundamentals of politics more clearly and precisely than many of his Indian compatriots. The promotion of the interests of his motherland was his principal concern and he did never allow foamy philosophisings or vague isms to get the upper hand in him. This explains the difference in his reaction to Japan’s undeclared war against China since July 7, 1937. Moved by humanitarian impulses many Indian leaders, then began to vehemently condemn Japan for her military action against China, but Rash Behari approached, the whole thing like a real-politiker and was very much distressed by the unpolitical anti-Japanese propaganda by Indians through press and platform, for he considered such propaganda highly inimical to the national interests of India. So he sent the following cable to Rabindra Nath Tagore: ‘Indian merchants, students, and residents here request you to prevent Congress and Pandit Nehru’s anti-Japanese activities for the sake of Indian interests and Indo-Japanese friendship.’”

রবীন্দ্রনাথ তখন শান্তিনিকেতনে। জাপানের সাম্রাজ্য লালসা ও বর্বরতার বিরুদ্ধে ভারতে যে বিক্ষোভ-আন্দোলন চলছিল তিনি তার পূর্ণ সমর্থন করছিলেন। এমন অবস্থায় রাসবিহারীর এই তার বার্তা পেয়ে তিনি প্রবলভাবে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে একটি চিঠিতে বেশ কঠোর ভাষায় জাপানের সাম্রাজ্য লালসার তীব্র সমালোচনা করে রাসবিহারীকে জানিয়ে দেন যে, ভারতের স্বতঃস্ফূর্ত ও ন্যায়সঙ্গত জাপ-বিরোধী আন্দোলনে তাঁর পূর্ণ সমর্থন আছে। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, “Your cable has caused me many restless hours. For, it hurts me very much to have to ignore your appeal. I wish you had asked for my co-operation in a cause against which my spirit did not protest. I know, in making this appeal, you counted on my great regard for the Japanese for I, along with the rest of Asia, did once admire and look up to Japan and did once fondly hope that in Japan Asia had at last discovered its challenge to the West, that Japan’s new strength would be consecrated in safeguarding the culture of the East against alien interests. But Japan has not taken long to betray that rising hope and repudiate all that seemed significant in her wonderful, and, to us symbolic, awakening, and has now become itself a worse menace to the defenceless peoples of the East. … Worst than its economic exploitation, worse indeed than its geographical aggression, in this daily perpetration of pitiless massacres and its unashamed championship of its inhumanity. Countries have been conquered before in history and seen in wider perspective. There is nothing very inhuman or shocking in a virile race overstepping the dilapidated fences built by the previous victories of an earlier race and until science had made man’s inhumanity so effective, such fighting like all life seemed only half cruel, all that is changed and today when one nation invades another its wrong is not only that of mere imperialist ambition but of human butchery, more indiscriminate than any plague and if the outraged conscience all over the world cries out against such a wrong, who am I to recall such righteous protest. … This protest has not been engineered by any single individual. It is as spontaneous and heartfelt as the admiration that the peoples of the East felt for Japan thirty years ago. I should be powerless to check it even if I dared to attempt it. You must, therefore, forgive me that I am unable to oblige you and believe me when I say that I have great sympathy with my countrymen in Japan as indeed I have with the Japanese themselves, but the cry that comes from China of broken hearts and broken heads and broken bones is far too piercing and awful.”

রবীন্দ্রনাথের নির্দেশে রাসবিহারীর তার বার্তাটি এবং তাঁর নিজের জবাবি পত্রটি ১১ই অক্টোবর শান্তিনিকেতন থেকে ইউনাইটেড প্রেসের মাধ্যমে প্রকাশ করা হল। 

রাসবিহারী কিন্তু ঘটনাটি ভালো মনে মেনে নেননি। নেপাল মজুমদার জানিয়েছেন, “বলা বাহুল্য, কবির এই পত্রে রাসবিহারীর ক্রোধ ও উষ্মা বাড়িয়াছিল বই কমে নাই। পরবর্তীকালে ভারতে তীব্র জাপ-বিরোধী আন্দোলন ও প্রচারের জন্য ক্ষিপ্ত হইয়া কাণ্ডজ্ঞান-বর্জিতের ন্যায় তিনি রবীন্দ্রনাথ, জওহরলাল, ও রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ ব্যক্তিদের তীব্র সমালোচনা করিয়া জাপান হতে বিবৃতি ও পত্রাদি লিখিতে থাকেন।” উমা মুখার্জীও জানিয়েছেন, “Rash Behari could not see eye to eye with Rabindra Nath, and himself began to work to counteract the evils of this Anti-Japanese propaganda by Indians by organizing meetings in Japan and advocating Indo-Japanese collaboration under the auspices of I.I.L. He organized a convention of Asian youths at Sankaido in Tokyo (October 28, 1937) and raised the slogans ‘Asia for Asians’, ‘Go Home White’ etc.” পরের বছর অর্থাৎ ১৯৩৮ সালের নভেম্বর মাসে, রাসবিহারী একটি ইস্তেহার জারি করলেন যাতে তিনি ভারতের পররাষ্ট্রনীতি সংশোধনের আহ্বান জানালেন। তিনি ভারতীয় নেতৃবৃন্দকে বৈদেশিক বিষয়ে বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে আবেদন জানিয়ে বললেন — “The Sudeten German problem ought to furnish the Congress leaders with sufficient intelligence to understand the present tendency of the world and make them revise their hitherto taken antagonistic stand in regard to the Fascist countries. For the last few years, especially after the outbreak of the Sino-Japanese conflict, it has almost become a fashion for some of the Congress leaders to attack and condemn and abuse the Fascist countries indiscriminately. They do not know what harm they do to the cause of Indian freedom by their unwise action. The other day Pandit Nehru during the course of his tour in Europe did irretrievable damage to the cause of India by his wild utterances against the totalitarian states. This was a most unwise action and it only served to create more enemies for India. Since the beginning of the Sino-Japanese conflict, a section of the Indians, particularly those belonging to the Congress, has persistently carried on anti-Japanese activities of various kinds. India’s foreign policy ought to be to make as many friends in the world as possible and to avoid creating enemies. Particularly they should follow the principle, ‘England’s enemies are our friends’. They fail to take cognisance of the fact that by creating enemies of the first class Powers in the world, they simply help the British and the prolongation of the British rule in India.” 

১৯৩৭ সালের নভেম্বর মাস এসে গেল। চীন-জাপান যুদ্ধের অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে। সাংহাই শহরের পতন আসন্ন। ইতিমধ্যে ৬ই নভেম্বর রোমে ঐতিহাসিক ‘ত্রিশক্তির চুক্তি’ সাক্ষরিত হল জার্মানি, ইতালি আর জাপানের মধ্যে। এই সময় চীনের ক্যান্টন থেকে ওখানকার ‘সিটি চেম্বার অফ কমার্স’-এর চেয়ারম্যান য়িং কিয়াং এবং ‘ওয়াই এম সি এ’-র প্রেসিডেন্ট টি টি হুন রবীন্দ্রনাথকে একটি চিঠিতে চীন সম্পর্কে তাঁর মহান ভূমিকার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং যুদ্ধের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্বন্ধে জানিয়ে লিখলেন, “জাপানের সমর নায়কগণ অসঙ্গতভাবে আমাদের দেশ আক্রমণ করিয়াছে এবং বেসামরিক ব্যক্তিদের উপর নৃশংসভাবে বোমাবর্ষিত হইতেছে। আপনি, পণ্ডিত জওহরলাল ও ভারতীয় জাতীয় মহাসভা জাপানের এই আচরণের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ করিতেছেন আমরা তাহা সংবাদপত্রে পাঠ করিয়াছি। আপনি যে ন্যায়প্রিয়তার পরিচয় দিয়াছেন তাহাতে আমরা মুগ্ধ হইয়াছি। আমরা এই পত্রের মারফত আমাদের সেই মনোভাব আপনাকে জানাইতেছি। আমরা আশা করি, আপনি পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুকে ও ভারতীয় জাতীয় মহাসভার সভ্যদিগকে আমাদের এই মনোভাব জ্ঞাপন করিবেন। আমরা বিশ্বাস করি যে, জাপানের বিরোধিতা করিয়া আমরা শুধু আমাদের দেশের নহে সমগ্র জগতের সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করিতেছি। সম্প্রতি জাপানী বোমা-বর্ষণকারীরা ক্যান্টনের এবং এই প্রদেশের (সাংহাই) শতশত গ্রামের নিরস্ত্র বেসামরিক ব্যক্তির মৃত্যু ঘটাইয়াছে। তাহা ছাড়া জাপানী সাবমেরিনগুলি বহুসংখ্যক মাছ ধরার পোত ও বাণিজ্য-পোত আটক করিয়াছে, পোড়াইয়াছে এবং ডুবাইয়া দিয়াছে। তাহারা অনেক সমুদ্রযাত্রীকে হত্যাও করিয়াছে। আমরা অনেক দুঃখ ভোগ করিয়াছি এবং ভবিষ্যতে হয়ত আরও করিব কিন্তু আমরা যদি জানি যে আমাদের প্রতি আপনাদের সহানুভূতি আছে, তাহা হইলে সেই দুঃখ সহ্য করা আমাদের পক্ষে সহজ হইবে। … চীন জাপানকে বাধা দিবে কিন্তু অর্থনীতির দিক দিয়া জাপানকে বয়কট করিতে হইলে ভারতবর্ষ ও অন্যান্য দেশের সহায়তা প্রয়োজন। জাপানের সমর নায়কগণ শুধু চীনের নহে — সমস্ত দেশের এমন কি জাপানেরও শত্রু।” রবীন্দ্রনাথের নির্দেশে পত্রটি ১০ই নভেম্বর বিভিন্ন খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়।

জাপানের হাতে ১৫ ডিসেম্বর নানকিং শহরের পতন হল। প্রায় তিন লক্ষ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করল জাপানী সৈন্যেরা। বৃহৎ শক্তিবর্গের নীরবতায় দৃশ্যত বিক্ষুব্ধ রবীন্দ্রনাথ ৭ই পৌষ অর্থাৎ ২২শে ডিসেম্বর শান্তিনিকেতনের এক প্রভাতী সভায় তীব্র ধিক্কার দিলেন, বক্তৃতাটি ‘প্রবাসী’ পত্রিকার মাঘ ১৩৪৪ সংখ্যায় ‘প্রলয়ের সৃষ্টি’ শিরোনামে প্রকাশিত হল — “উদ্দাম নিষ্ঠুরতা আজ ভীষণাকার মৃত্যুকে জাগিয়ে তুলেছে সমুদ্রের তীরে তীরে; দৈত্যরা জেগে উঠেছে মানুষের সমাজে, মানুষের প্রাণ যেন তাদের খেলার জিনিস। মানুষের ইতিহাসে এই দানবিকতাই কি শেষ কথা? মানুষের মধ্যে এই যে অসুর, এই কি সত্য? … আজ চীনে কত শিশু নারী, কত নিরপরাধ গ্রামের লোক দুর্গতিগ্রস্ত — যখন তার বর্ণনা পড়ি হৃৎকম্প উপস্থিত হয় ; আজ এই সঙ্গীতমুখর শান্ত প্রভাতে আমরা যখন উৎসবে যোগ দিয়েছি, এই মুহুর্তেই চীনে কত লোকের দেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হচ্ছে, পিতার কাছ থেকে পুত্রকে, মাতার কাছ থেকে সন্তানকে, ভাইয়ের কাছ থেকে ভাইকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে যাচ্ছে, যেন মানুষের কোনো মুল্য নাই — সে কথা চিন্তা করলেও ভয় হয়। অপরদিকে আছে আপন সাম্রাজ্যলোভী ভীরুর দল, তারা এই দানবের কোনো প্রতিবাদ করতে সাহস করে না। ক্ষীণ এরা, ইতিহাসে এদের সাক্ষর লুপ্ত। চীনকে যখন জাপান অপমান করেছে সিনেমার ভিতর দিয়ে, সাহিত্যের ভিতর দিয়ে — যেমন অপমান আমাদের দেশেও হয়ে থাকে — তখন এই প্রতাপশালীর দল কোনো বাধা দেয় নি বরং চীনকে দাবিয়ে দিয়েছে, বলেছে, চীনের চঞ্চল হবার কোনো অধিকার নেই। আমাদের দেশেও দেখি দুর্বলকে অবমাননার কোনও প্রতিকার নেই। তবুও একথা বলব, যারা আজ দুঃখ পাচ্ছে প্রাণবিসর্জন করছে, সৃষ্টি করছে তারাই। এই ছিন্নবিচ্ছিন্ন অপমানিত জাতিরাই নূতন যুগকে রচনা করছে। প্রতাপশালী ভীরুরা তাদের ঐশ্বর্যভারে নত, পাছে কোনো জায়গায় তাদের কোনো ক্ষতি হয় এই জন্য তারা দুর্বলের পক্ষে দাঁড়াল না — তবু হতাশ হব না; যারা পীড়িত হচ্ছে মৃত্যুকে বরণ করেই তারা নূতনকে সৃষ্টি করছে, যারা দুঃখ পেল তারাই ধন্য। যারা দস্যুবৃত্তি করছে, যারা মানুষের পথ আগলে আছে, মানুষের ইতিহাসে তারা সম্মানের যোগ্য নয়। এ-আশা দূরাশা নয় ; বিনাশের শক্তিই মানুষের ইতিহাসে শেষ কথা হতে পারে না, তাহলে মানুষ বাঁচত না। … এখনো তার মহত্ত্বের উৎস শুকোয়নি। মানুষের ইতিহাসের অন্তরে যদি মহতের কোনো স্থান না থাকত তবে মানুষের ইতিহাস এত অত্যাচার সহ্য করেও প্রাণশীল থাকত না। আজকের দিনে এই গভীর নৈরাশ্যের মধ্যে এই-ই মানুষের আশ্বাসবাণী। … চীনের প্রতি নিষ্ঠুর অত্যাচারে আজ আমাদের হৃদয় উৎপীড়িত, কিন্তু আমাদের কী করবার আছে, আমরা কী করতে পারি? আমরা অত্যাচারীকে নিন্দা করছি, কিন্তু বলা যেতে পারে, নিন্দা করে কী লাভ? এই দুঃখবোধ দ্বারা, দানবের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশ করে আমরাও সেই সৃষ্টির পক্ষে কাজ করছি ; এর শক্তি যতই ক্ষীণ হোক এও সৃষ্টির কাজ। আমদের অস্ত্র নেই কিন্তু আমাদের মন আছে ; আমরা লড়াই না করতে পারি ; কিন্তু এ-কথা যদি আমাদের মনে জাগ্রত রাখি যে অধর্মের দ্বারা আপাতত যতই উন্নতি হোক তার মূলে আছে বিনাশ, … আমাদের মেশিন-গান নেই কিন্তূ আমাদের চিন্তা আছে, তার মূল্য যতটুকুই হোক তাকে আমরা মহতের দিকে প্রয়োগ করব।”

আমরা দেখেছি, জাপানী সৈনিকদের বুদ্ধভক্তির ভণ্ডামীকে তীব্র কষাঘাত করে কিছুদিন আগেই একটি কবিতা লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯৩৮ সালের ৭ই জানুয়ারি আবার লিখলেন ‘বুদ্ধভক্তি’ কবিতাটি । বিষয়বস্তু ওই একই — শান্তির প্রতীক বুদ্ধকে নিয়ে জাপানীদের দ্বিচারিতা।

“হুংকৃত যুদ্ধের বাদ্য

সংগ্রহ করিবারে শমনের খাদ্য।

সাজিয়াছে ওরা সবে উৎকটদর্শন,

দন্তে দন্তে ওরা করিতেছে ঘর্ষণ,

হিংসার উষ্মায় দারুণ অধীর

সিদ্ধির বর চায় করুণানিধির —

ওরা তাই স্পর্ধায় চলে

বুদ্ধের মন্দিরতলে।

তূরী ভেরি বেজে ওঠে রোষে গরোগরো,

ধরাতল কেঁপে ওঠে ত্রাসে থরোথরো।

গর্জিয়া প্রার্থনা করে —

আর্তরোদন যেন জাগে ঘরে ঘরে।

আত্মীয়বন্ধন করি দিবে ছিন্ন,

গ্রামপল্লীর রবে ভস্মের চিহ্ন,

হানিবে শূন্য হতে বহ্নি-আঘাত,

বিদ্যার নিকেতন হবে ধূলিসাৎ —

বক্ষ ফুলায়ে বর যাচে

দয়াময় বুদ্ধের কাছে।

তূরী ভেরি বেজে ওঠে রোষে গরোগরো,

ধরাতল কেঁপে ওঠে ত্রাসে থরোথরো।

হত-আহতের গনি সংখ্যা

তালে তালে মন্দ্রিত হবে জয়ডঙ্কা।

নারীর শিশুর যত কাটা-ছেঁড়া অঙ্গ

জাগাবে অট্টহাসে পৈশাচী রঙ্গ,

মিথ্যায় কলুষিবে জনতার বিশ্বাস,

বিষবাষ্পের বাণে রোধি দিবে নিশ্বাস

মুষ্টি উঁচায়ে তাই চলে

বুদ্ধেরে নিতে নিজ দলে।

তূরী ভেরি বেজে ওঠে রোষে গরোগরো,

ধরাতল কেঁপে ওঠে ত্রাসে থরোথরো।”

কবিতাটি পরে ‘নবজাতক’ সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়। দুটি কবিতাতেই দেখা যায়, নাম না করে রবীন্দ্রনাথ জাপানের চীন আক্রমণের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। তবে দ্বিতীয় কবিতাটির শিরোনামের নিচে প্রদত্ত আছে একটি জ্ঞাপিকা। সেখানে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, “জাপানের কোনো কাগজে পড়েছি জাপানি সৈনিক যুদ্ধের সাফল্য কামনা করে বুদ্ধ-মন্দিরে পূজা দিতে গিয়েছিল। ওরা শক্তির বাণ মারছে চীনকে; ভক্তির বাণ বুদ্ধকে।”

আমরা দেখেছি, সাম্রাজ্যবাদীদের পররাজ্যের প্রতি লোলুপতার বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথ সারাজীবনই প্রতিবাদ করে এসেছেন। কিন্তু লেখক-শিল্পী-বুদ্ধিজীবী-সাংস্কৃতিক কর্মীদের এই প্রতিবাদের কার্যকারিতা সম্পর্কে তাঁর মধ্যেও মাঝেমধ্যে সন্দেহ জেগেছে — ভেবেছেন এ হল অক্ষম ও দুর্বলের প্রতিকারবিহীন নিষ্ফল কান্না! বোধহয় এইজন্যই অ্যানড্রুজকে তিনি লিখেছিলেন, “I keenly feel the absurdity of raising my voice against an act of unscrupulous and virulent imperialism of this kind when it is pitiably feeble against all cases that vitally concern ourselves.” হতাশ রবীন্দ্রনাথও একসময় এও ভেবেছিলেন শক্তির উন্মত্ততাকে শক্তি দিয়েই আটকাতে হবে। ফ্যাসিস্টদের বর্বরোচিত আচরণের উপযুক্ত জবাব যে পাল্টা আক্রমণ তা রবীন্দ্রনাথের মানসে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। তাই ‘প্রান্তিক’ কাব্য সংকলনে কবি লিখলেন,

“নাগিনীরা চারি দিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিশ্বাস,

শান্তির ললিত বাণী শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস —

বিদায় নেবার আগে তাই

ডাক দিয়ে যাই

দানবের সাথে যারা সংগ্রামের তরে

প্রস্তুত হতেছে ঘরে ঘরে।”

তথ্যসূত্র:

১) রবিজীবনী সপ্তম খণ্ড, প্রশান্তকুমার পাল

২) ন্যাশনালিজম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

৩) জাতীয়তাবাদ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অশোককুমার মুখোপাধ্যায় ও কৃত্যপ্রিয় ঘোষ অনুবাদিত

৪) রোম্যাঁ রোলাঁ : ভারতবর্ষ দিনপঞ্জি, অবন্তীকুমার সান্যাল অনুদিত

৫) ভারতের জাতীয়তা ও আন্তর্জাতিকতা এবং রবীন্দ্রনাথ চতুর্থ খণ্ড, নেপাল মজুমদার

৬) রবীন্দ্র রচনাবলী বিংশতি খণ্ড, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

৭) কর্ম্মবীর রাসবিহারী, বিজনবিহারী বসু

৮) টু গ্রেট ইন্ডিয়ান রেভলিউশনেরিজ, উমা মুখার্জী

৯) দি ইংলিশ রাইটিংস অফ রবীন্দ্রনাথ টেগোর তৃতীয় খণ্ড, শিশির কুমার দাস সম্পাদিত

১০) দি পলিটিক্যাল ফিলোসফিজ সিন্স ১৯০৫ দ্বিতীয় খণ্ড, বিনয় কুমার সরকার

১১) প্রবাসী মাঘ ১৩৪৪ সংখ্যা, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত

১২) রবীন্দ্র রচনাবলী চতুর্বিংশ খণ্ড, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

১৩) রবীন্দ্র রচনাবলী দ্বাবিংশ খণ্ড, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মন্তব্য তালিকা - “সাম্রাজ্যবাদী জাপান ও রবীন্দ্রনাথ-রাসবিহারী বিতর্ক”

  1. একাধিকবার পড়ে উপলব্ধির পথে নিয়ে যাবার জন্যে প্রয়োজনীয় লেখা। থ্যাংকস সো মাচ। একটা জিনিস জানতে ইচ্ছে করছে – এই সময়ে সুভাষ চন্দ্র বসু’র কোন মতামত ছিল কি? এ সময় তিনি দেশে, এবং কংগ্রেস সভাপতি। আর মোটামুটি এই সময়েই তাঁর এবং নেহরু’র উদ্যোগে চিনে ৫-সদস্যের ডাক্তার দল পাঠানো হয়।

    ভাল থাকবেন।

    1. ধন্যবাদ। এর আগে যদিও সুভাষচন্দ্র ফ্যাসিজমের পক্ষে তারিফ করে কিছু মন্তব্য করেছিলেন কিন্তু সম্ভবত ইউরোপে রোম্যাঁ রোলাঁর সঙ্গে মত-বিনিময়ের পর তাঁর মনোভাব কিছুটা হলেও পালটে যায়। অবশ্য এই সময়ে তাঁর কোনো বক্তব্য আমি এখনও পর্যন্ত পাইনি। পরবর্তীকালে তিনি আবার জার্মানি, ইতালি ও জাপানের সহায়তা নেন।

  2. প্রকৃতপক্ষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাজনীতিতে দুর্বল ছিলেন। তিনি জানতেন না কেন জাপান সাম্রাজ্যবাদী হয়েছিল? কে বা কারা তাকে সাম্রাজ্যবাদী করেছে? অথচ, ১৯০৫ সালে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যখন জাপান জয়ী রবীন্দ্রনাথ, নেহরু প্রমুখ কি উদ্বেল হননি? পরাধীন ভারত কি জাপানের মতো হতে পারে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেননি? আমার গভীর সন্দেহ যে, রবীন্দ্রনাথ আসলেই জাপানকে বুঝতে পেরেছিলেন কি না? তিনি তাৎক্ষণিকভাবে মনোগত অভিমত, মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে খুবই তরল ছিলেন। এবং খুব দ্রুত মত বদলাতেন, যা তাকে অনেক ক্ষেত্রে হালকা করে দিতে সহায়ক হতো।

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।