ইতিহাসের বিভাজন ও জাক ল গফের অন্তিম ভাবনা
(গ্রন্থের নাম: মাস্ট উই ডিভাইড হিস্ট্রি ইনটু পিরিয়ডস? লেখক: জাক ল গফ; অনুবাদক: M.B. DeBevoise; প্রকাশক: কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস, নিউ ইয়র্ক; প্রকাশ সাল: ২০১৫)
২০২০ সালে ডোনাল্ড ব্লক্সহামের দুটো বই প্রকাশ হয়, যার একটি বেশ বিতর্ক তৈরি করে।১ ‘হোয়াই হিস্ট্রি? আ হিস্ট্রি’ গ্রন্থে তিনি দেখাতে চেয়েছেন একবিংশ শতকে আমাদের সাধারণের ইতিহাসের আলোচনার দিকগুলি কিভাবে ধীরে ধীরে পাল্টে যাচ্ছে। এই পাল্টে যাওয়াকে আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন ড্যানিয়েল উলফের মত বিখ্যাত ঐতিহাসিকরা।২ আমরা যারা অপেশাদার ইতিহাসচর্চা করি, তারা অতীতকে নির্দিষ্টভাবে দেখার বা বর্ণনা করার যে সমস্ত দিকগুলিতে আগ্রহ পাই তা ধীরে ধীরে পেশাদার ঐতিহাসিকের বিষয় নির্বাচনে কতটা প্রভাব বিস্তার করবে – তা অবশ্যই একটি গবেষণার বিষয়। আগামী সময়ের যে ধরনের আগাম লক্ষণ দেখা যায়, তাতে মনে হয় ইতিহাস একটা মৌলিক পরিবর্তনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। উলফ আমাদের সেসব পছন্দের বিষয়গুলোকে আট ভাগ করে উল্লেখ করেছেন। এগুলি হল- বিনোদন, স্মৃতিচারণ, নৈতিক (জাতীয়তাবাদী) শিক্ষা, অনুমানমূলক দর্শন, ভ্রমণ, আলাপচারিতা, মেথড বা পদ্ধতি এবং পরিচিতি।
এগুলো যে কেবল আমাদের ইতিহাস ভাবনার প্রাত্যহিক আগ্রহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তাই নয়, উলফের ভাষায় Bloomsbury, Palgrave, Routledge, Berghahn Books এমনকি university press-গুলিও যে ধারাবাহিক গ্রন্থ প্রকাশ করছে ও যাকে তারা ইতিহাসের গ্রন্থ বলেই পরিচিতি দিচ্ছে, তাতে সাধারণের আগ্রহের স্পষ্ট প্রভাব লক্ষ করার মত।
ব্লকসামের লেখা নিয়ে আলোচনা হয়তো ভবিষ্যতে আরও বেশি হবে, আজকে যে দিকপাল ফরাসি ঐতিহাসিকের কথা এখানে উল্লেখ করার তিনি হলেন জাক ল গফ। হঠাৎ তাঁর প্রসঙ্গে ব্লকসামের বইটার উল্লেখ কেন হল, তা আপনারা পরবর্তী অংশ পড়লেই বুঝতে পারবেন। তবে বইটিতে প্রবেশ করার আগে গফ সম্বন্ধে দু-চার কথা বলা একান্ত প্রয়োজন মনে করছি।
গফের সময় সম্পর্কে গভীর আগ্রহ সেই শৈশব থেকেই ছিল, তার কারণ তার জন্ম তারিখটি। এটি বেশ আকর্ষক, ১ জানুয়ারি, ১৯২৪ সাল। যখন তার জন্ম হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সবে শেষ হয়েছে। তার বাবা সে সময় চল্লিশোর্ধ একজন মানুষ, যিনি চাইলেই পুত্রের জন্মের তারিখ সামান্য পরিবর্তন করে আবশ্যিক সামরিক জীবনের কিছুটা সময় কমাতে পারতেন (যদিও নেপোলিয়নের সময় থেকে ফরাসি ক্যালেন্ডারে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছিল)। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে তিনি অত্যন্ত সৎ ছিলেন এবং গফ তাঁর পিতার সেই সততায় এতটাই প্রত্যয়ী ছিলেন যে সারাজীবন বারবার সেই সততার উল্লেখ করেছেন।৩ যাই হোক, এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে সময় এবং ইতিহাসের পট পরিবর্তনের প্রতি আগ্রহ সেই শৈশব থেকে তাঁর মধ্যে প্রবেশ করেছিল।
গফকে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন দিক থেকে ব্যাখ্যা করেন। তাঁর প্রধান পরিচয়, তিনি ছিলেন ফরাসি আনল স্কুলের একজন অন্যতম প্রধান মেধাবী ঐতিহাসিক। আনল স্কুলের ইতিহাস নিয়ে বলতে গেলে যেমন ব্রদেল বা লুসিয়ে ফেভেলের নাম প্রথমেই চলে আসে, তেমনই তাঁর নামও সমান মর্যাদায় উচ্চারিত হয়। শৈশবে তিনি যেমন সময় এবং তাঁর পার্থক্যকে নিজের জন্মতারিখ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছিলেন, ঠিক তেমনি শৈশবেই আরেকটি প্রভাব তাঁর মধ্যে গভীরভাবে পড়েছিল। তাঁর মা ছিলেন গোঁড়া ক্যাথলিক। তাই ছোটবেলা থেকেই তাঁকে বাইবেলের বিভিন্ন অংশ শোনানো হত, যা নিশ্চিতভাবেই পরবর্তীকালে তাঁকে মধ্যযুগের ইতিহাসের প্রতি আগ্রহ তৈরিতে অনুপ্রাণিত করেছিল। এখানে তাঁর আরেকটি পরিচয় দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ফরাসি ঐতিহাসিকদের একটা বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল। অধিকাংশ ঐতিহাসিকরা রেডিও, টেলিভিশন এমনকি পরবর্তীকালে কম্পিউটার আসার পরে এই সমস্ত আলাদা মিডিয়ায় ইতিহাস নিয়ে রীতিমতো পেশাদারী চর্চা করতেন ও সাধারণের মধ্যে ইতিহাসকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বৈদ্যুতিন গণমাধ্যমের মধ্যে দিয়ে। দৈনিক পত্রিকা অথবা সাপ্তাহিক বা মাসিক পত্রিকাগুলোতে এদের লেখা যতটা জনপ্রিয় ছিল, তার থেকে এগুলো কোন অংশে কম ছিল না। অর্থাৎ তারা ইতিহাসকে কেবল গবেষণা ও তার প্রকাশকে মলাটের ভেতর না রেখে তাকে সাধারণের কাছে আকর্ষক করে তোলেন। এই কাজেও গফ ছিলেন অগ্রগণ্য।
ইতিহাসকে কেবল শুষ্ক, তাত্ত্বিক আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সত্তরের দশক থেকে ফরাসি ঐতিহাসিকরা একদিকে যেমন এর দর্শনগত উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করেন, অন্যদিকে তাকে জনসমক্ষে সোশ্যাল স্টাডি হিসেবে তুলে আনার চেষ্টা করেন। স্বাভাবিকভাবে এই কাজে গফ সাধারণ মানুষের ইতিহাসের আগ্রহের বিষয়গুলিকে তার নিজস্ব গবেষণার বিষয়বস্তু হিসেবে ক্রমশ নিয়ে আসছিলেন। এই প্রবণতার ভালো-মন্দের দিক হয়তো বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়, তবে ইতিহাসকে ছড়িয়ে দেওয়ার এই প্রচেষ্টা নিশ্চিতভাবেই ফরাসি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক সমস্যাগুলিতে ইতিহাসকে অন্তর্ভুক্ত হতে সুযোগ করে দেয়। গফের আরেকটি পরিচয় এখানটায় দেওয়া প্রয়োজন তাঁকে হিস্টোরিক্যাল অ্যানথ্রোপলজি-র পুরোধা বলা হয়।৪ তবে একজন ইতিহাসের আগ্রহী ব্যক্তির কাছে তিনি যে কারণে সব থেকে বেশি ঈর্ষণীয় তা হল, দীর্ঘদিন ফ্রান্সে গবেষণা করার ফলে ৪০ থেকে ৮০র দশক পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেক প্রভাবশালী ফরাসি ইতিহাসবিদের সঙ্গে তাঁর সাহচর্য লাভ হয়েছে। তিনি ব্রদেলের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র ছিলেন।
এবার আসি এই গ্রন্থটির বিষয়ে আলোচনায়। বাংলায় ‘যুগ’ এবং ‘কাল’ – এই দুটো শব্দের একটি সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। ‘যুগ’ বলতে তার একটি সূচনা এবং অন্ত ভাগ রয়েছে। ‘কাল’ তুলনায় একটি বহমান ধারা। আমরা যদি ইংরেজি শব্দের দিকে তাকাই তাহলে ‘এজ’ এবং ‘পিরিয়ড’ – এই দুটো শব্দ দুটো আলাদা ব্যবহারের জায়গা খুঁজে নেয়। পিরিয়ড শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ períodos থেকে, যার অর্থ একটা পূর্ণ চক্রাকার সময়। একাদশ শতক থেকে ঊনবিংশ শতক পর্যন্ত পিরিয়ড বলতে যথেষ্ট পরিমাণ অতিবাহিত সময়ের একটি যোগফলকে বোঝানো হত, বিংশ শতকে periodization শব্দটি জনপ্রিয় হয়।
জাক ল গফ
গফ বইটির একেবারে শিরোনামেই সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন ইতিহাসকে কি পিরিয়ডে ভাগ করার প্রয়োজন আছে? এই গ্রন্থটি তার অন্যান্য গ্রন্থের মত তথ্যসমৃদ্ধ গবেষণাগ্রন্থ নয়, বরং তার জীবনের এই শেষ লেখাটি লিখেছিলেন ইতিহাসে মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করতে করতে, তিনি নিজেই তার উল্লেখ করেছেন। যুগ বিভাজনের প্রতি মানুষের প্রবণতা কেন দেখা যায়, বা সহজ করে বললে, আমরা যুগ বিভাজন করি কেন? অনেকগুলো কারণের প্রধান কারণ হতে পারে যে, আমরা নিজেদের সময়কে অতীতের সময় থেকে আলাদা করে ভাবতে চেষ্টা করি। যদি ধরে নিই ইতিহাস হল মানব জাতির ক্রমোন্নতির ধারা, তাহলে বাধ্যবাধকতা থাকে শিক্ষা, সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান, আইন, বিচার, নিরাপত্তা ইত্যাদিতে যুগের পর যুগ আমরা যে এগিয়ে চলেছি তা প্রমাণ করার। মানুষের সাফল্য কেবল নয়, ব্যর্থতা প্রকাশেও যুগ বিভাজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক অতীত যেমন হয়ে ওঠে উৎকর্ষের ‘স্বর্ণকাল’ আবার মধ্যযুগও ক্রমশ ‘অন্ধকারের’ রূপ নেয়। গফ তার গ্রন্থটির প্রথম তিনটি অধ্যায় আলোচনা করেছেন যথাক্রমে অতীত, মধ্য এবং আধুনিক কালের যুগ বিভাজন সম্পর্কে আমাদের গড়পড়তা নানান দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে।
ধরুন আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হল, হরপ্পা যুগের সময়কাল কত? আপনি উত্তর দেবেন ২৩০০ থেকে ১৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত। আমি যে সময়কাল লিখলাম তা আপনাদের বলায় কিছুটা পরিবর্তিত হতেই পারে। অর্থাৎ আপনি বলতে পারেন ২৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে শুরু হয়েছিল এবং শেষের সময়টাও আপনি খানিকটা পরিবর্তন করতে পারেন। কারণ এটা আমাদের কাছে অজানা একটা সময়, এর শুরু এবং শেষের কোন নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক দলিল নেই। এবার প্রশ্নটা যদি হয় একটা জানা-সময় নিয়ে। ধরুন জিজ্ঞাসা করছি, ভারতবর্ষে আদি মধ্যযুগের সময়কাল কখন? এর অধিকাংশ উত্তরই হবে ৬০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়। আন্দাজ করতে পারি, এই সময়কাল নিয়ে খুব বেশি মতপার্থক্য হবে না। গফ আমাদের এই মনস্তত্ত্বটাকেই উল্লেখ করেছেন। দেখুন, আমরা অজানা সময়ের ক্ষেত্রে শেষে দুটো শূন্য আছে এমন একটা সংখ্যাকে বেছে নিতে ভালোবাসি। শুধুমাত্র অজানা সব সময় কেন, জানা সময়ের ক্ষেত্রেও আমাদের তেমন একটি প্রবণতা আছে, যদি দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তর লক্ষ করেন তাহলে আপনারা নিজেরাই তা অনুধাবন করতে পারবেন। ৬০০ বা ১২০০ সাল বিশেষ কোন সূচক বা ঘটনায় পরিচিত নয়। ইউরোপের নবজাগরণের ইতিহাস রচনা শুরুর সময় থেকে যে ধারাবাহিকতা, তাকে এই উদাহরণের মাধ্যমে তিনি বর্ণনা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন লুসিয়ে ফেভের থেকে শুরু করে অন্যান্য যে সমস্ত ঐতিহাসিকরা বিংশ শতকের শুরুতে রেনেসাঁ নিয়ে লিখেছিলেন, তারা সময়কাল হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন ১৪০০ থেকে ১৬০০-এর মধ্যবর্তী সময়কে।
গফ প্রথমেই স্বীকার করেছেন যে এই গ্রন্থটির যুগবিভাজনের ইতিহাসকে ইউরোপীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা হয়েছে। স্থান বিশেষে যুগ বিভাজন কি পাল্টে যায়? বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে চতুর্থ অধ্যায়ে। ইতিহাসে যে প্রাচীন, মধ্য এবং আধুনিক বিভাজনের ধারাবাহিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, তা বাধাপ্রাপ্ত হয় রেনেসাঁর ইতিহাস চর্চার সূচনা থেকে। এই প্রবন্ধটিতে তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে মানুষের অতীত সম্পর্কে আগ্রহ, গবেষণা এবং প্রচার একটি নতুন যুগকে তৈরি করে। এই প্রক্রিয়ার দুটো পর্যায় রয়েছে। প্রথম পর্বে তাতে গবেষণার বিষয়বস্তু প্রকট থাকে আর দ্বিতীয় পর্বে তা সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক চিন্তায় অন্তর্ভুক্তির পর্যায় চলে। এই দ্বিতীয় পর্যায়ের সময়কে গফ অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছেন।
ভারতবর্ষের ইতিহাসে সময় বিভাজনের ক্ষেত্রেও নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু সবটাই সাধারণের স্বাভাবিক চিন্তার মধ্যে প্রবেশ করতে পারেনি। কিছুকাল আগে থেকে আমরা ‘আদি-মধ্যযুগ’ শব্দটি ব্যবহার করি। যুগ বিভাজনের একটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও রয়েছে, তবে সেই আলোচনা গফ ইউরোপের পরিব্যাপ্তির মধ্যে করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন একসময়ের রাজনৈতিক সাম্রাজ্যের হিসেব ধরে যে যুগ বিভাজন ছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ক্রমশ তা কিভাবে ও কেন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সময়ে পরিবর্তিত হল।
গফের সারা জীবনের আগ্রহ ও গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল ইউরোপের মধ্যযুগ। ফলত এই লেখায় মধ্যযুগকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হবে সেটা খুব স্বাভাবিক। শেষ তিনটি অধ্যায় তাই তিনি বিস্তৃতভাবে মধ্যযুগ সম্বন্ধে আলোচনা করেছেন। তিনি দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে কিভাবে ক্রমশ মধ্যযুগ ‘অন্ধকার যুগ’ হিসেবে প্রতিপন্ন হয়েছে। এর পেছনে কি ধরনের মনস্তত্ত্ব কাজ করেছিল। আর উপসংহারে তিনি দেখেছিলেন ইতিহাসের যুগ বিভাজনে বিশ্বায়নের প্রভাব কিভাবে আসছে।
প্রকৃত অর্থে এই গ্রন্থটির মধ্য দিয়ে তিনি যুগ বিভাজনের ধারাবাহিক মনস্তত্ত্বকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের ঐতিহাসিকদের রোম সাম্রাজ্যের ইতিহাস লিখতে গিয়ে সমসাময়িক সময়ের গভীর প্রভাব পড়ে। এই যুদ্ধে ফরাসি রাষ্ট্রটি অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে ইতিহাসকে দেখার ক্ষেত্রে হুইগপন্থী শক্তিশালী রাষ্ট্রের আদর্শ ক্রমশ ফিকে হতে থাকে। যদিও গত শতকের শুরু থেকেই ক্রমশ ইতিহাসকে কেবল রাজনৈতিক ঘটনার মধ্য দিয়ে নয় বরং তার সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটকে তুলে আনার মধ্যে দিয়ে নতুন ভাবে দেখা শুরু হয়, যে কারণে রেনেসাঁ হয়ে ওঠে একটি আলাদা যুগ। গফ দেখিয়েছেন এই নতুন যুগ হয়ে ওঠার পেছনের মনস্তত্ত্বকে।
আমরা শুরু করেছিলাম ব্লকসামের সদ্য প্রকাশিত একটি গ্রন্থ দিয়ে। গফ ২০১৩ সালেই দেখাতে চেয়েছিলেন বিশ্বায়নের মধ্যে দিয়ে কিভাবে আমাদের সাধারণের ইতিহাসের ধারণা ক্রমশ পাল্টে যাবে এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে যুগ বিভাজনেও সেই অনুযায়ী পরিবর্তন হতে থাকবে। যদিও তিনি সংশয়বাদী ছিলেন না, কিন্তু তার জীবনের অন্তিম সময়ে এই পরিবর্তনকে অনুভব করতে পেরেছিলেন যা আগামী দিনের সাধারণের বোধগম্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
তথ্যসূত্র
১. Donald Bloxham, ‘History and Morality’, Oxford, Oxford University Press, 2020.
২. Donald Bloxham, ‘Why History? A History’, Oxford, Oxford University Press, 2020.
৩. আগ্রহী পাঠক দেখতে পারেন https://reviews.history.ac.uk/review/2425
৪. Joëlle Rollo-Koster, Jacques Le Goff, Philip Daileader and Philip Whalen (ed.), ‘French Historians 1900–2000’, Blackwell Publishing Ltd., 2010, page – 371.
৫. https://en.wikipedia.org/wiki/Historical_anthropology