প্রাচীন যুগের ইন্দো-রোমান নৌবাণিজ্য
প্রাচীন ভারতের সাথে রোমানদের ব্যবসা-বাণিজ্যের শুরু হয়েছিল সাধারণ পূর্বাব্দের প্রথম শতকের শেষ দিকে। সম্রাট অগাস্টাস রোমের সিংহাসনে বসার পর (৩১ সাধারণ পূর্বাব্দ), ভারত তথা প্রাচ্য থেকে দুর্লভ এবং চমকপ্রদ পণ্য আমদানি করার বাণিজ্য-নীতি গ্রহণ করেন যার ফলে ইন্দো-রোমান বাণিজ্য বিকশিত হতে শুরু করে। দক্ষিণ ভারত এবং দাক্ষিণাত্যে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য করে এই ইন্দো-রোমান বাণিজ্যের প্রচুর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে — রোমান স্বর্ণমুদ্রা, রোমান মৃৎপাত্রের ভগ্নাবশেষ, রোমান দুই-হাতলযুক্ত পানপাত্রের ভগ্নাবশেষ, গ্লাস, ধাতব পদার্থ ইত্যাদি। এই ইন্দো-রোমান বাণিজ্য সম্পর্কে আমরা আরও জানতে পারি প্রাচীন তামিল সঙ্গম সাহিত্যের (আনুমানিক রচনাকাল সাধারণ পূর্বাব্দের প্রথম শতক থেকে সাধারণ অব্দের দ্বিতীয় শতক) বর্ণনা থেকে এবং সমসাময়িক (১০০ সাধারণ পূর্বাব্দ — ২০০ সাধারণ অব্দ) গ্রিক এবং রোমান লেখক এবং ভূগোলবিদ্, যেমন প্লিনিউস (প্লিনি), টোলেমাইওস (টলেমি), এবং স্ট্রাবোন (স্ট্রাবো)-এর লেখা থেকে এবং আনুমানিক ৭৫ সাধারণ অব্দে লেখা ‘পেরিপ্লাস অফ দ্য ইরিথ্রিয়ান সী’ (“পেরিপ্লাস”) গ্রন্থ থেকে।
ভারতের ইতিহাসের দিক থেকে এই সময়কালটি ছিল মৌর্য এবং গুপ্ত যুগের মধ্যবর্তী সময় যখন উত্তর এবং উত্তর পশ্চিম ভারতে রাজত্ব করতেন কুষাণরা, পশ্চিম ভারতে শক-ক্ষত্রপরা (এঁরা সম্ভবত কুষাণদের সামন্ত রাজা ছিলেন), মধ্য ভারত এবং দাক্ষিণাত্যে সাতবাহনরা, কলিঙ্গতে চেদিরা এবং সুদূর দক্ষিণে অর্থাৎ আজকের তামিলনাড়ু এবং কেরালাতে চোল, চেরা, পাণ্ডু এবং আরও কিছু স্থানীয় গোষ্ঠীপতি/দলপতি। এই সময়ে একটি দীর্ঘ সময়কাল ধরে (আনুমানিক ২০০ সাধারণ পূর্বাব্দ – আনুমানিক ২৫০ সাধারণ অব্দ), ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল স্থিতিশীল। এই সময়পর্বে সারা ভারতেই অনেক নতুন বৃত্তির উদ্ভব হয় এবং কারুশিল্পের বিকাশ ঘটে। ভারত জুড়ে নতুন শিল্প-বাণিজ্য কেন্দ্র, নগর এবং সুরক্ষিত অন্তর্দেশীয় বাণিজ্যপথ গড়ে ওঠে। তদানীন্তন ভারতের এই অভ্যন্তরীণ উদ্বর্তন এবং এই ইন্দো-রোমান বাণিজ্য ছিল পরস্পরের পরিপূরক।
এই ইন্দো-রোমান বাণিজ্যের একটি বৈশিষ্ট্য হল যে এর পুরোটাই হতো সমুদ্রপথে – দক্ষিণ ভারত এবং দাক্ষিণাত্যের সমুদ্র-বন্দরগুলি দিয়ে। সম্ভবত সেই কারণেই দক্ষিণ ভারতের তুলনায় উত্তর ভারতে প্রাচীন রোমান মুদ্রা বা অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন তেমন পাওয়া যায়নি, যদিও সাধারণ অব্দের দ্বিতীয় শতকে কুষাণ অধিকৃত উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতের সাথে রোমান সাম্রাজ্যের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য-সম্পর্ক ছিল। এর আগে গ্রিকদের সাথেও ভারতের নৌবাণিজ্য হতো, কিন্তু ইন্দো-রোমান নৌবাণিজ্যের তুলনায় তা ছিল খুবই নগণ্য। ৩০ সাধারণ পূর্বাব্দে মিশরের রোমান সাম্রাজ্যের অন্তৰ্ভুক্তি, রোমান ব্যবসায়ীদের কাছে সমুদ্রপথে প্রাচ্যের সাথে বাণিজ্য করার সম্ভাবনা উন্মুক্ত করে দেয়। এই সময় থেকে শুরু হয়ে যায় লোহিত সাগর থেকে রোমান ব্যবসায়ীদের প্রাচ্যের উদ্দেশে বার্ষিক সমুদ্রযাত্রা। এই সমুদ্রযাত্রায় নাবিকের কাজ করতেন গ্রিক এবং মিশরীয়রা যাদের মৌসুমি বায়ুর গতিবিধি সম্পর্কে সম্যক ধারণা ছিল। পেরিপ্লাস গ্রন্থে, সেই সময়কার ভারত মহাসাগর উপকূলবর্তী বিভিন্ন বন্দর, সেই সব বন্দরে পৌঁছনোর দিকনির্দেশ, বন্দরগুলির বাণিজ্য সম্ভাবনা এবং রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে সম্পর্কে বিস্তৃত বিবরণ পাওয়া যায় এবং পেরিপ্লাসে উল্লিখিত বন্দরগুলির অনেকগুলিই ছিল ভারতীয় উপকূলে।
তৎকালীন ভারতবর্ষের জন্যেও এই নৌবাণিজ্যের বিকাশ ছিল এক প্রয়োজনীয়তা। ইরান তখন ছিল পার্থিয়ান শাসনাধীন। পার্থিয়ানরা ভারত থেকে নিজেদের প্রয়োজনে লোহা এবং ইস্পাত আমদানি করলেও, ইরানের মধ্যে দিয়ে পাশ্চাত্যের সাথে ভারতীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করত। তাই তদানীন্তন ভারতের সাথে গ্রিক/রোমানদের এক সক্রিয় এবং সমৃদ্ধিশালী বাণিজ্য-সম্পর্ক স্থাপনের জন্য সমুদ্রপথই ছিল একমাত্র উপায়। সম্ভবত এই কারণে, সুদূর গান্ধার এবং পাণ্ডু রাজ্য থেকে রাজদূতরা নিয়মিত যেতেন সম্রাট অগাস্টাস-এর রাজসভায়, রোমানদের সাথে জোরদার সম্পর্ক গড়ে তুলতে।
পাশ্চাত্যের সাথে বাণিজ্যের জন্য সমুদ্রপথের এই প্রয়োজনীয়তা কিন্তু মৌর্য যুগেই অনুভূত হয়েছিল। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র থেকে জানা যায় যে মৌর্য যুগেও, মধ্য এশিয়ার সাথে স্থলপথে বাণিজ্যের তুলনায় ‘দক্ষিণাপথ’ দিয়ে বাণিজ্য সুরক্ষিত বলে বিবেচিত হতো। কিন্তু মৌর্য যুগে নৌবাণিজ্য খুব একটা বিকশিত হয়নি, যদিও মহারাষ্ট্র উপকূলের বন্দর সোপারাতে (বর্তমান মুম্বাইয়ের উত্তর-পশ্চিম শহরতলীর নালাসোপারা) সম্রাট অশোকের নির্দেশিকার ভগ্নাংশ পাওয়া গিয়েছে। মৌর্য যুগে নৌবাণিজ্যের বিকাশ না হওয়ার সম্ভাব্য কারণ ছিল সমুদ্রপথে বাণিজ্যের সুদীর্ঘ যাত্রাকাল।
পরবর্তীকালে এই সমস্যা দূর হয়ে যায় যখন নাবিকরা মৌসুমি হাওয়ার গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা গড়ে তোলেন এবং মৌসুমি হাওয়ার গতিকে কাজে লাগিয়ে লোহিত সাগর এবং আরব সাগর দিয়ে অনেক কম সময়ে ভারতের পশ্চিম উপকূলের বন্দরগুলিতে পৌঁছতে শুরু করেন। পেরিপ্লাসের বিবরণীর ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল যে হিপ্পালোস বলে এক নাবিক মৌসুমি হাওয়ার গতিবিধি আবিষ্কার করেছিলেন এবং তাই সেইসময় এই হাওয়াকে বলা হতো ‘হিপ্পালোসের হাওয়া’। পরবর্তীকালের গবেষণায় অবশ্য এই ধারণা ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। হেলেনীয় সময় থেকেই নাবিকরা মৌসুমি হাওয়ার দিক নির্দেশ সম্পর্কে সম্যক অবহিত ছিলেন বলে মনে করা হয়।
ইন্দো-রোমান বাণিজ্যের মাধ্যমে তদানীন্তন ভারতবর্ষ এবং রোমান সাম্রাজ্যের মধ্যে যেসব দ্রব্যের আদান-প্রদান হতো, তা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় পেরিপ্লাসে এবং সঙ্গম সাহিত্যে। পেরিপ্লাসের দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী – “Shops in these ports of trade carry full loads because of the volume and quantity of pepper and malabarthorn. They offer a market for: mainly a great amount of money, peridot (?) …….multicolored textiles; sulphide of antimony; coal; raw glass; copper; tin; lead; wine ……They also export : good supplies of fine-quality pearls; ivory; Chinese (silk) cloth; Gangetic nard; malabathron, brought here from the interior; all kind of transparent gems; diamonds; sapphires; tortoise shell….For those sailing here from Egypt, the right time to set out is around the month of July ….”.
পেরিপ্লাস এবং সঙ্গম সাহিত্যের বিবরণী থেকে মনে হয় যে রোমানদের কাছে যে দ্রব্যটির চাহিদা ছিল সর্বাধিক তা হল মরিচ। এই কারণে সংস্কৃতে মরিচকে বলা হয় ‘যবনপ্রিয়’। এছাড়া মালাবারথর্ন (malabarthorn) – মালাবার উপকূলের এক ধরণের দারুচিনিরও বিশেষ চাহিদা ছিল রোমানদের মধ্যে। সমসাময়িক চিনেও কেরালার পশ্চিমঘাট পর্বতমালার ঢালে উৎপাদিত মরিচের চাহিদা ছিল খুব।
এই ইন্দো-রোমান বাণিজ্যে ভারত ছিল রপ্তানিকারক এবং রোমান সাম্রাজ্য ছিল আমদানিকারক। ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য রোমানরা প্রদান করতেন স্বর্ণমুদ্রার (অরেউস) মাধ্যমে।এই কারণে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যে দক্ষিণ ভারত থেকে প্রচুর রোমান স্বর্ণমুদ্রা এবং বড় পদক পাওয়া গিয়েছে। তবে ভারতীয়রা এই রোমান স্বর্ণমুদ্রা ব্যবসাবাণিজ্যে বা বিনিময় প্রথার মাধ্যম হিসাবে কম ব্যবহার করতেন। তাঁরা এই স্বর্ণমুদ্রাগুলি জমিয়ে রাখতেন সম্পদ হিসাবে।
রোমান সাম্রাজ্য থেকে ভারতবর্ষে সেই সময় আমদানি করা হতো ওয়াইন, দুই হাতল যুক্ত পানপাত্র, মৃৎপাত্র ইত্যাদি। এইগুলির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল বোধয় রোমান ওয়াইন, অন্তত তামিল দেশে অর্থাৎ আজকের তামিলনাড়ু এবং কেরালাতে। সঙ্গম সাহিত্যের বর্ণনা আমাদের এই ধারণাই দেয়। রোমান ওয়াইন-এর প্রতি এই আকর্ষণের একটি চিত্র আমরা পাই সঙ্গম সাহিত্যের পুরাণানুরু সংকলনের এক কবিতায় – “the cool, sweet-selling wine, brought by the Yavanas, in beautiful ships and drunk daily from gold cups held by damsels who wore bright bracelets”। প্রসঙ্গত, ‘যবন’ শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘আয়োনিয়া’ (Ionia) থেকে। কিন্তু তদানীন্তন ভারতে গ্রিক এবং রোমান, দুই পক্ষকেই বোঝাতে যবন শব্দটি ব্যবহৃত হত।
উপরোক্ত পণ্যগুলি ছাড়াও, সঙ্গম সাহিত্য মতে, তখনকার তামিল দেশের রাজশক্তিগুলি বিশেষত পাণ্ডুরা অশ্ব আমদানি করতেন। সঙ্গম সাহিত্য থেকে আমরা আরও জানতে পারি যে তৎকালীন তামিল দেশের রাজাদের কাছে যবন সেনাদের খুব চাহিদা ছিল। তাঁরা নগর এবং প্রাসাদ প্রতিরক্ষার কাজে এবং ব্যক্তিগত দেহরক্ষী হিসাবে যবন সেনাদের নিয়োগ করতে পছন্দ করতেন। সঙ্গমোত্তর সাহিত্য শিলাপ্পাদিকরম-এর বিবরণী অনুযায়ী মাদুরাই শহরের প্রবেশদ্বার পাহারা দিতেন যবন সেনারা। এই সমস্ত যবন সেনাদের সম্পর্কে আরেকটি কবিতায় বলা হয়েছিল – “The valiant-eyed Yavanas whose bodies were strong and looked terrifying and who wore besides a coat a long piece of cloth hanging low and with many folds” .
সেই সময়কার ভারতীয় বন্দরগুলির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ছিল সঙ্গম সাহিত্যে উল্লিখিত ‘মুচিরিস’। টলেমির লেখা ‘জিওগ্রাফিয়া’ গ্রন্থে (লেখা হয়েছিল আনুমানিক ১৫০ সাধারণ অব্দের সময়) এবং পেরিপ্লাসে এর উল্লেখ আছে ‘মুজিরিস’ বলে। এই বন্দরটি ছিল মালাবার উপকূলে। বহুদিন ধরে এর হদিস না পাওয়া গেলেও, সাম্প্রতিক অতীতে কেরলের কদুঙ্গালুর দক্ষিণে ছোট গ্রাম পাত্তানামকে, যেখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য চালিয়ে বেশ কিছু ইটের কাঠামো পাওয়া গিয়েছে, অতীতের মুজিরিস/মুচিরি বলে অনেকটা নিশ্চয়তার সাথে চিহ্নিত করা হয়েছে। সঙ্গম সাহিত্যের আগানানুরু সংকলনের এক কবিতা থেকে আমরা মুচিরিস সম্পর্কে জানতে পারি – “the beautifully built ships of Yavanas came, agitating the white foams of Periyaru (river), with gold and returned with pepper, and Muchiri resounded with the noise”। টেবুলা পিউটিনজেরিআনা অনুযায়ী মুজিরিস-এ অগাস্টাস-এর মন্দির ছিল। সাম্প্রতিক অতীতে আবিষ্কৃত ভিয়েনা জাদুঘর প্যাপিরাস-এও মুজিরিস এবং আলেকজান্দ্রিয়ার মধ্যে নৌবাণিজ্য সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। এই লেখনীতে আলেকজান্দ্রিয়ার এক ব্যবসায়ীর কথা জানা যায় যিনি মুজিরিস-এ ঋণ নিয়ে মুজিরিস থেকে গাঙ্গেয় সুগন্ধি নিস্যন্দ, হাতির দাঁত, এবং কাপড়ের গাঁটরি আমদানি করেছিলেন।এই প্রসঙ্গে উল্লেখনীয় যে টেবুলা পিউটিনজেরিয়ানা (পিউটিনজার টেবিল, পিউটিনজার মানচিত্র) হচ্ছে রোমান সাম্রাজ্যের এবং এশিয়ার কিছু অঞ্চলের (পারস্য, ভারতবর্ষ) যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর একটি মানচিত্র।
পেরিপ্লাসের বিবরণ অনুযায়ী, মুচিরিস ছাড়া মালাবার উপকূলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলি ছিল নাউরা (কান্নুর), ট্যান্ডিস (সঙ্গম সাহিত্যে উল্লিখিত টোনডি, অধুনা পোন্নাই) এবং কোট্টায়ামের নিকটবর্তী নেলসিন্দা। সঙ্গম সাহিত্যের বর্ণনা অনুযায়ী তৎকালীন পাণ্ডু রাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ছিল সালিয়ুর এবং চেরা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ছিল বান্দার।
দাক্ষিণাত্যের সেই সময়কার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ছিল ক্যাম্বে উপসাগরের কূলবর্তী ভারুচ। টলেমির জিওগ্রাফিয়ায় এবং পেরিপ্লাসে ভারুচকে উল্লেখ করা হয়েছে বারিগাজা (বারকাচ্চা/ব্ৰাচ) বলে। এই ভারুচ দিয়ে যেমন সাতবাহন রাজত্বের পণ্য বিদেশে যেত, তেমনই রপ্তানি হতো শক এবং কুষাণ অধিকৃত অঞ্চলের পণ্যসামগ্রীও। ভারুচ তথা পশ্চিম উপকূলে পৌঁছনোর জন্য শক এবং কুষাণ রাজ্যের ব্যবসায়ীরা দুটি বাণিজ্যপথ ব্যবহার করতেন। মধ্য এশিয়ার সাথে কুষাণদের রাজধানী তক্ষশীলার সংযোগকারী বাণিজ্যপথটি, তক্ষশীলার পরে দু’টি বাণিজ্যপথে ভাগ হয়ে যেত। প্রথম বাণিজ্যপথটি ছিল দক্ষিণ অভিমুখী, তক্ষশীলা থেকে চলে আসত নিম্ন সিন্ধু অববাহিকায় এবং সেখান থেকে ভারুচ। দ্বিতীয় বাণিজ্যপথটি, যেটি ছিল প্রধান বাণিজ্যপথ (উত্তরাপথ), তক্ষশীলা থেকে আজকের পাঞ্জাবের মধ্যে দিয়ে এসে যমুনা পার হয়ে যেত। তারপর দক্ষিণমুখী হয়ে যমুনার ধার ধরে এই বাণিজ্যপথটি এসে পৌঁছাতো মথুরায় (মথুরা ছিল কুষাণদের দ্বিতীয় রাজধানী)। মথুরা থেকে এই বাণিজ্যপথটি মালবের উজ্জয়িনী হয়ে এসে পৌঁছাতো পশ্চিম উপকূলে। উজ্জয়িনীতে এই বাণিজ্যপথের সাথে মিলিত হতো প্রয়াগরাজের নিকটবর্তী কৌশাম্বী থেকে উদ্ভূত হওয়া আরেকটি বাণিজ্যপথ। পেরিপ্লাসের বিবরণ অনুযায়ী উজ্জয়িনী থেকে মালবাহী শকটের সুদীর্ঘ ক্যারাভানে ভারুচে আসত কুষাণ রাজ্যের এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের দুর্লভ এবং চমকপ্রদ পণ্যসামগ্রী – হিমালয়ের সুগন্ধি বৃক্ষ থেকে প্রস্তুত দামি মলম, জাফরান, হিমালয় থেকে প্রাপ্ত ভেষজ মূল, হাতির দাঁত, রজন, মসলিন এবং রেশম, রত্নপাথর, আবলুস কাঠ এবং সেগুন কাঠ। রেশম আসত চীন থেকে। ইরানে পার্থিয়ানরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায়, উত্তর আফগানিস্তান এবং ইরানের মধ্যে দিয়ে যাওয়া রেশম পথ ছেড়ে, ভারতের পশ্চিম উপকূলের বন্দর দিয়ে রেশম রপ্তানি করতে হতো চৈনিক ব্যবসায়ীদের।
পেরিপ্লাস থেকে আমরা আরও জানতে পারি যে নর্মদার মোহনা ছিল যথেষ্ট বিপদসংকুল – “where nothing can be observed with certainty”.। সেই জন্যে ভারুচের সমুদ্রগামী বাণিজ্যতরীগুলিকে নর্মদার মোহনায় নোঙ্গর করতে সাহায্য করার জন্য পথপ্রদর্শক নৌকার ব্যবস্থা ছিল।
দাক্ষিণাত্যের অন্য দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ছিল সোপারা এবং কালিয়েনা (অধুনা কল্যাণ)। দাক্ষিণাত্যের এই বন্দরগুলির সাথে অন্তর্দেশীয় নগর ও বাণিজ্যকেন্দ্রগুলির সংযোগ-রক্ষার জন্য গড়ে উঠেছিল একাধিক অন্তর্দেশীয় বাণিজ্যপথ যেগুলি যেত পশ্চিমঘাট পর্বতমালার গিরিবর্ত্ম দিয়ে। এই বাণিজ্যপথগুলি বরাবর বিভিন্ন স্থানে (যেমন নাসিক, ভাজা, কারলে, কানহেরি ইত্যাদি), পশ্চিমঘাট পর্বতমালার ঢালে গড়ে উঠেছিল অনেক বৌদ্ধ বিহার এবং চৈত্য। বাণিজ্যের কারণে সেই সময়কার ব্যবসায়ী এবং কারিগরদের দূরদূরান্তে ভ্রমণ করতে হত। এই সময় এঁদের পক্ষে বৈদিক/ব্রাহ্মণ্য ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চলা সম্ভব হতো না। সেই কারণে সেই সময়কার ব্যবসায়ী এবং কারিগরদের একটা বড় অংশ ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। মূলত এঁদেরই পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছিল এই বৌদ্ধ বিহার এবং চৈত্যগুলি যদিও বৌদ্ধ শ্রমণরা তৎকালীন শাসক সাতবাহনদেরও অনুদান পেয়েছিলেন। এই বৌদ্ধ বিহার/চৈত্যগুলির নিচে, পাহাড়ের পাদদেশে হত ব্যবসায়ীদের রাত্রিকালীন বিশ্রামাগার, বাজার, আস্তাবল ইত্যাদি।
সমসাময়িক করমণ্ডল উপকূলেও ছিল অনেকগুলি প্রসিদ্ধ বন্দর। এই বন্দরগুলির একটি, পদুকের (আজকের পুদুচ্চেরি) উল্লেখ আছে টলেমির জিওগ্রাফিয়ায় এবং পেরিপ্লাসে। এই উপকূলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ছিল কাবেরীপত্তনম। পূম্পুগার নামেও পরিচিত এই বন্দরটি ছিল কাবেরী নদীর মোহনায়, যেটিকে টলেমির লেখায় খাবেরিস এবং পেরিপ্লাসে কামারা বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। কাবেরিপত্তনম এখন একটি ছোট গ্রাম। এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য করে প্রাচীন ইটের কাঠামো পাওয়া গিয়েছে। মনে করা হয় যে এই ইটের কাঠামোটি ছিল একটি ঘাট যেখানে সমুদ্রতরী নোঙ্গর করত। করমণ্ডল উপকূলের সেই সময়কার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলি ছিল পালার নদীর মোহনায় বাসবসমুদ্রম, কুড্ডালোরের নিকটবর্তী কারাইক্কাডু এবং ভাইগাই নদীর মোহনায় আলাগানকুলাম।
এই বন্দরগুলি মূলত গড়ে উঠেছিল দক্ষিণ ভারতের সাথে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নৌবাণিজ্যের স্বার্থে। কিন্তু এইসব জায়গায় প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যে দুই হাতল যুক্ত রোমান পানপাত্র, গ্লাস, এবং ধাতব বস্তু (কাঁচামাল এবং শিল্পকর্ম), আমদানি করা মৃৎশিল্প (এরেনতাইন মাটির পাত্র) এবং রাউলেট নকশাকৃত স্থানীয় কালো মাটির পাত্র ইত্যাদি আবিষ্কৃত হয়েছে । আবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও তৎকালীন রোমান সাম্রাজ্যের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে – যেমন থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামে রোমান মুদ্রা, জাভানিজ সমাধিস্থলে ইন্দো-রোমান মৃৎপাত্র ইত্যাদি। এর থেকে মনে করা হয় যে সেই সময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথেও রোমানদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ঝঞ্ঝাসংকুল কেপ কোমোরিন পেরিয়ে সরাসরি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে যাওয়ার বদলে রোমানরা পছন্দ করতো ভারতের মাধ্যমে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সাথে ব্যবসা করতে। দক্ষিণপূর্ব এশিয়া থেকে রোমান সাম্রাজ্যের জন্য রপ্তানিকৃত পণ্য প্রথমে সমুদ্রপথে এসে পৌঁছাতো করমণ্ডল উপকূলে, সেখান থেকে স্থলপথে মালাবার উপকূলে এবং তারপর আবার সমুদ্রপথে অন্তিম গন্তব্যস্থলে। একইভাবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার জন্য রপ্তানিকৃত রোমান পণ্য প্রথমে এসে পৌঁছতো মালাবার উপকূলে। সেখান থেকে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা পেরিয়ে স্থলপথে সেই পণ্য এসে পৌঁছাতো করমণ্ডল উপকূলে এবং সেখান থেকে সমুদ্রপথে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। দক্ষিণপূর্ব এশিয়া থেকে রোমানরা লবঙ্গ, জায়ফল, রজন এবং রত্নপাথর আমদানি করতো। এ ছাড়া, ভারুচ দিয়ে যেমন চীন থেকে রেশম যেত রোমানদের কাছে, তেমনি এই পথেও চিন থেকে রোমান সাম্রাজ্যে রেশম যেত।
পেরিপ্লাস এবং সঙ্গম সাহিত্যের বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে সেই সময়কার নৌবাণিজ্যের চালিকাশক্তি ছিল রোমানরা। সম্ভবত সেই কারণে প্রচুর সংখ্যক রোমান ভারতীয় উপকূলে এলেও, সেইরকম ভাবে মিশরে বা অন্যান্য রোমান অধিকৃত অঞ্চলে যাননি । সাম্প্রতিক অতীতে অবশ্য লোহিত সাগরের কূলে তামিল-ব্রাহ্মী লিপিতে লেখা গ্রাফিতিযুক্ত সাধারণ অব্দের প্রথম শতকের পানপাত্রের ভাঙ্গা অংশ পাওয়া গিয়েছে যাতে উল্লিখিত আছে বেশ কয়েকটি তামিল ব্যক্তিনাম যেমন কানন, কাতান ইত্যাদি এবং ব্যবসায়ী সংগঠনের নাম যেমন করপুমন। এর থেকে বোঝা যায় কিছু ভারতীয়ও ব্যবসা করতে বিদেশে গিয়েছিলেন। তবে সার্বিকভাবে, ইন্দো-রোমান বাণিজ্য যে রোমানদের দ্বারা চালিত হতো, এই নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই।
ইন্দো-রোমান বাণিজ্যের সময় ভারতের কারুশিল্পের প্রভূত উন্নতি হয়েছিল। এই সময় অনেক নতুন পেশা উদ্ভূত হয়। প্রাক-মৌর্য যুগে লেখা ‘দীর্ঘনিকায়’তে উল্লেখ করা হয়েছিল ১২টি বৃত্তির। আর এই সময়কার লেখা গ্রন্থ ‘মহাবস্তু’ অনুযায়ী রাজগীরে ৩৬টি বৃত্তির কারিগর বাস করতেন এবং সেই তালিকাও ছিল অসম্পূর্ণ। ‘মিলিন্দপঞ্হ’ (মিলিন্দার প্রশ্ন) গ্রন্থে ৭৫টি বৃত্তির উল্লেখ রয়েছে যার মধ্যে ৬০টি বৃত্তি কারুশিল্প সম্বন্ধীয়। খনিবিদ্যা এবং ধাতুবিদ্যায় অনেক অগ্রগতি হয় এই সময়ে। বস্ত্র, পশমের বুনন, অস্ত্র এবং বিলাস-সামগ্রী নির্মাণের কৌশল রপ্ত করে নেন ভারতীয়রা। এক বিশেষ ধরণের বস্ত্র ‘সাতকা’ নির্মাণের কেন্দ্র হয়ে ওঠে মথুরা। দক্ষিণ ভারতে তিরুচিরাপল্লীর নিকটবর্তী উরাইযুর এবং পুদুচ্চেরির নিকটবর্তী আরকিমেডু গড়ে ওঠে তন্তুবস্ত্র, রঞ্জন এবং পুঁথি শিল্পের কেন্দ্র হিসাবে। উরাইযুর এবং আরকিমেডুতে প্রত্নতাত্ত্বিকরা পেয়েছেন প্রচুর পুঁতি এবং জলাধার, দেওয়াল, ভাণ্ডার, কারখানা ইত্যাদির ইটের কাঠামো। ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে এই জলাধারগুলো ব্যবহৃত হত বস্ত্র এবং পুঁথি রং করার জন্য। এই কাজের জন্য অনেক সময় রং এবং নকশার পরিকল্পনা আসত পাশ্চাত্য থেকে। কারুশিল্পের এই বিকাশ এবং বাণিজ্য বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষ বিশেষত ব্যবসায়ী এবং কারিগররা হয়ে উঠেছিল অপেক্ষাকৃত সচ্ছল। বৌদ্ধ বিহার এবং চৈত্য নির্মাণের জন্য ব্যবসায়ী এবং কারিগরদের অনুদান সাধারণ মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতার সাক্ষ্য দেয়।
কারুশিল্পের এই বিকাশ এবং তার ফলস্বরূপ স্বাচ্ছল্য প্রতিভাত হয়েছিল তদানীন্তন ভারতের নগরায়নে। গাঙ্গেয় অববাহিকায় এবং দাক্ষিণাত্যে গড়ে উঠেছিল অনেক নতুন নগর এবং শিল্পকেন্দ্র। পুরোনো নগরগুলি হয়ে উঠেছিল অধিকতর সমৃদ্ধিশালী। বস্তুত প্রাচীন ভারতে নগরায়নের গতি (Rate of Urbanisation) এই সময় ছিল সর্বাধিক।
প্রায় ২০০ বছর ধরে চলার পর এই ইন্দো-রোমান বাণিজ্য হয়ে যায় বন্ধ। ভারতীয় অর্থনীতির ওপর তার অভিঘাত ছিল নেতিবাচক। নগরায়নের গতি হয়ে যায় শ্লথ। অনেক জায়গায় শুরু হয় বিপরীত পরিযান- নগর থেকে গ্রামে। এমনকি পরবর্তী পর্যায়ে অর্থাৎ গুপ্ত যুগে যে সমস্ত নির্মাণকার্য হয়েছিল, মানের দিক থেকেও সেগুলো ছিল কুষাণ/সাতবাহনদের সময়কার নির্মাণের থেকে অনুন্নত। সাধারণ মানুষের পক্ষে আর বৌদ্ধ শ্রমণদের পৃষ্ঠপোষকতা করা সম্ভব হচ্ছিল না। ফলস্বরূপ দাক্ষিণাত্যের পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় বৌদ্ধ বিহার এবং চৈত্য নির্মাণের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তা বন্ধ হয়ে যায় পরবর্তী ৩০০ বছরের জন্য।
ইন্দো-রোমান বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার পিছনের কারণ হল রোমানদের বিপুল বাণিজ্য ঘাটতির (যদিও সেই সময় বাণিজ্য ঘাটতির কোন সংজ্ঞায়িত ধারণা ছিলনা )। এই বাণিজ্য ঘাটতি মেটাতে গিয়ে রোমানদের স্বর্ণসম্ভার ক্রমাগত কমতে থাকে কারণ রোমানরা মূল্য প্রদান করতো স্বর্ণমুদ্রায়। এই বিষয়টি প্রথম উত্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ প্লিনি (Plini the Elder) (২৩ সাধারণ অব্দ-৭৯ সাধারণ অব্দ) ৭৭ সাধারণ অব্দে ল্যাটিন ভাষায় লেখা তাঁর ন্যাচারালিস হিস্টোরিয়া গ্রন্থে। তাঁর মতে প্রাচ্য থেকে অপ্রয়োজনীয় বিলাসদ্রব্য ক্রয় করতে গিয়ে রোমান স্বর্ণভাণ্ডার সংকুচিত হয়ে যাচ্ছিল। পরবর্তীকালে, তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র, কনিষ্ঠ প্লিনিও (Pliny the Younger) (৬১/৬২ সাধারণ অব্দ — ১১৩ সাধারণ অব্দ) এই বিষয়টি তুলে ধরে রোমান নাগরিকদের তিরস্কার করে বলেন যে রোমানরা এমন একটি খাদ্যদ্রব্যের (মরিচ) জন্য স্বর্ণমুদ্রা ব্যয় করছেন যা না সুমিষ্ট, না সুস্বাদু। ১৭০ সাধারণ অব্দের পরে বিশ্বব্যাপী রোমান সাম্রাজ্য এক অর্থনৈতিক মন্দার সম্মুখীন হয়। সেই সময় রোমানদের পক্ষে বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে প্রাচ্য তথা ভারতের সাথে বাণিজ্য করা সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায় ইন্দো-রোমান নৌবাণিজ্য।
তথ্যসূত্র:
১) Noboru Karashima (Ed.), A concise history of South India – Issues & Interpretation, Oxford University Press, 2014.
২) R.S. Sharma, India’s Ancient Past, Oxford University Press, Seventh impression 2009.
৩) K. A. Nilakanta Sastri, The Illustrated History of South India, Oxford University Press, 2009.
৪) John Keay, India A History: From the Earliest Civilisation to the Boom of the Twenty-First Century, Harper Collins, 2010.
৫) https://www.geographyrealm.com/ptolemys-geographia/
৬) https://www.britannica.com/biography/Pliny-the-Elder
৭) https://www.britannica.com/biography/Pliny-the-Younger
অনবদ্য ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ
ধন্যবাদ
খুব সুন্দর,তথ্যসমৃদ্ধ পরিষ্কার লেখা।
দক্ষিণ ভারতের পশ্চিম ও পূর্বউপকূলের প্রধান বন্দর গুলির এবং তাদের আমদানিকৃত,রপ্তানিকৃত দ্রব্যগুলির বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া গেল।একটাই কথা,বাংলাদেশের কোন বন্দর কি ইন্দরোমান বাণিজ্যে কোন ভূমিকা পালন করত না
যদিও তাম্রলিপ্ত বন্দর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যে বেশ কিছু পুরনো রোমান দ্রব্যসামগ্রী পাওয়া গিয়েছে, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এইটা মনে হয় যে ইন্দো-রোমান বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তাম্রলিপ্ত বা বাংলার আন্যান্য বন্দরের খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলনা| তাম্রলিপ্ত বন্দর দিয়ে বাণিজ্য হত মূলত বার্মা (অধুনা মায়ানমার), শ্রীলংকা এবং দক্ষিণ ভারতের|
ধন্যবাদ। বোঝা গেলো।
তথ্যপূর্ণ লেখা
ধন্যবাদ
প্রাচীন ভারতের বাণিজ্য সম্পর্কে আনেকতথ্য জানা গেল। কয়েকটি জিজ্ঞাসা আছে।
১) সাধারণ আব্দ বলতে কি বোঝান হয়েছে?
২) ইতিহাসে দাক্ষিণাত্যে পাণ্ড্য বংশ পড়েছি, পাণ্ড্য আর পাণ্ডু কি সমার্থক?
৩) পশ্চিমঘাটের ঢালের চৈত্য বা বিহারগুলো কি অজন্তা-ইলরা ৯(ল এ ওকার কিছুতেই এলো না) ?
৪) স্কুলপাঠ্য ইতিহাস অনুসারে কুশান সর্বশ্রেষ্ঠ শক সম্রাট। কুশান কি কোন রাজবংশের নাম? লেখায় সেইরকম ইঙ্গিত।
৫) তাম্রলিপ্ত বন্দর কি তখনও মানচিত্রে আসেনি?
ধন্যবাদ| আপনার প্রশ্নগুলোর এক-এক করে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি – (১) সাধারণ অব্দ বলতে খ্রিষ্টাব্দকে বোঝান হয়েছে; (২) পাণ্ড্য এবং পাণ্ডু সমার্থক; (৩) অজন্তা এবং ইলোরা পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় আবস্থিত| কিন্তু ইলোরার গুহা স্থাপত্য তৈরি হয়েছিল অনেক পরে – সাধারণ অব্দের আসতাম শতকে| অজন্তার গুহা স্থাপত্য তৈরি হয়েছিল দুইটি পর্যায়ে| প্রথম পর্যায়টি, যেইটি তৈরি হয়েছিল সাতবাহনদের সময় সেইটি এই ইন্দো-রোমান বাণিজ্যের সময়কালের| ইন্দো-রোমান বাণিজ্যের সময় পশ্চিমঘাট পর্বতমালার যেসব জায়গায় গুহা বিহার/চৈত্য গড়ে উঠেছিল সেইগুলি হল নাসিক (পাণ্ডভেনি গুহা); পুনের নিকট ভাজা, কারলা এবং বেদসে; মুম্বাইয়ের কানহেরি গুহা ইত্যাদি; (৪) কুশান রাজবংশের নাম – সর্বপ্রসিদ্ধ সম্রাট ছিলেন কনিস্ক; এবং (৫) তাম্রলিপ্ত বন্দর ছিল সেই সময় কিন্তু ইন্দো-রোমান বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তাম্রলিপ্ত বন্দরের কোন প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিলনা| তাম্রলিপ্ত বন্দর দিয়ে বাণিজ্য হত মূলত বার্মা (অধুনা মায়ানমার), শ্রীলংকা এবং দক্ষিণ ভারতের|
আনেক ধন্যবাদ আমার কউতুহাল গুলি নিরসনের জন্য । আরও ভাল ভাল লেখা পড়ার আশায় রইলাম ।
ধন্যবাদ
তথ্যসমৃদ্ধ রচনা। উপকৃত হলাম।
ধন্যবাদ
Thank you
খুব ভাল লেখা।
ধন্যবাদ