মানুষের খাদ্যাভ্যাসের বিবর্তন – নতুন চিন্তাভাবনা
রুটি তো আপনি নিশ্চই খান। হাতে গড়া রুটি না খেলেও, রুটির বিভিন্ন জ্ঞাতিভাই যেমন পাঁউরুটি, বান রুটি, লুচি, পরোটা, পিৎজা – এইগুলো নিশ্চই হাজির থাকে আপনার প্লেটে। পরিজ আর স্টুও তো খান মাঝেমধ্যে। আর বিয়ার? না না বলতে হবে না। আমি জানি যে পল পোগবা’র মত আপনিও বিয়ার অপছন্দ করেন। শুধু বন্ধুবান্ধবদের কথা রাখতে গিয়ে মাঝে মধ্যে নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও ………
মানুষের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছে আমার একদমই ছিল না। কারণ আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি- কে কি খাবে বা খাবে না সেটা একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু তাও লিখতে হচ্ছে কারণ মানুষের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে একটা নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে আর আমার মনে হল এই বিতর্কটা আপনাদের গোচরে আনা দরকার। না না এই বিতর্কের বিষয়বস্তু এটা নয় যে এই সব খাদ্যপানীয় আমাদের নেওয়া উচিত কি উচিত নয়। বিতর্কের বিষয়বস্তু হল যে রুটি, পরিজ, স্টু আর বিয়ার মানুষের খাদ্য এবং পানীয় তালিকায় ঢুকেছিল কবে?
এই বিষয়ে এতদিন পণ্ডিতদের অভিমত ছিল যে, রুটি, পরিজ, স্টু আর বিয়ার মানুষের খাদ্য এবং পানীয় তালিকায় ঢুকেছিল নিওলিথিক যুগ থেকে। তার আগে মানুষ কৃষিকাজ জানতো না। বনের ফলমূল আর শিকার করা মাছ-মাংস দিয়ে পেট ভরাতো। নিওলিথিক যুগে মানুষ শিখলো কৃষিকাজ করতে। ঘরে তুলতে শুরু করলো কার্বোহাইড্রেট জাতীয় শস্য। সেই শস্য থেকেই বানাতে শুরু করলো এইসব খাদ্য এবং পানীয়।
মানুষের খাদ্যাভাসের বিবর্তন সম্পর্কে মোটামুটি এই হচ্ছে প্রচলিত ধারণা।
এই প্রচলিত ধারণা সম্পর্কে সাম্প্রতিক কালে প্রশ্ন তুলেছেন ‘লরা’। ‘লরা’ মানে বার্লিনের জার্মান আর্কেওলজিকাল ইন্সটিটিউটের গবেষিকা লরা দিএত্রিখ। তাঁর মতে ‘গোবেকলি তেপ’র অধিবাসীরা না কি কৃষিকাজ শেখার আগেই খেতে শুরু করে দিয়েছিল শস্যজাত খাদ্য এবং পানীয়।
গোবেকলি তেপে? কোথায় এই গোবেকলি তেপে? আজ্ঞে আজকের তুরস্কে। তা গোবেকলি তেপে নিয়ে গবেষকদের এত মাথাব্যথা কেন? গোবেকলি তেপে নিয়ে গবেষকদের উৎসাহের কারণ হল যে, গোবেকলি তেপেতেই পাওয়া গিয়েছে মানুষের তৈরী সবচেয়ে প্রাচীন উপাসনাগৃহের ধ্বংসাবশেষ যার বয়স হল আনুমানিক ১১,৬০০ বছর।
গত চার বছর ধরে এই গোবেকলি তেপে নিয়ে কাজকর্ম করে লরা বলছেন যে গোবেকলি তেপের এই উপাসনাগৃহ বানানেওয়ালারা নাকি পরিজ আর স্টু খেয়ে কাজে বেরত। কিন্তু তাঁরা তখনও কৃষিকাজ শেখেনি। তাহলে এই সব শস্যজাত খাদ্য বানিয়েছিল কি করে? বুনো শস্য দিয়ে। বনজঙ্গল থেকে তুলে আনতো বুনো শস্য। তারপর ঝাড়াই বাছাই করে সেই শস্য দিয়ে বানানো হত খাদ্য এবং পানীয়। লরা’র মতে এই বুনো শস্য ঝাড়াই বাছাইয়ের জন্য এক বড়সড় পরিকাঠামো গড়ে তুলেছিল সেই সময়কার গোবেকলি তেপের অধিবাসীরা।
লরার দাবি যদি স্বীকৃত হয় তাহলে মানুষের খাদ্যাভাসের বিবর্তন সম্পর্কে প্রচলিত ধ্যানধারণার পরিবর্তন হবে।
কিসের ভিত্তিতে এই দাবি করছেন লরা দিএত্রিখ? কী কী প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে গোবেকলি তেপে’তে? এই বিষয়ে কী ভাবছেন বা বলছেন অন্যান্য গবেষকরা?
মানুষে খাদ্যাভাসের বিবর্তন সম্পর্কিত নতুন ভাবনাচিন্তার হদিস পেতে চাইলে ক্লিক করুন নিচের দেওয়া লিংকে। জেনে নিন কি খেত আমাদের আদি পূর্বপুরুষরা আর কীভাবে হয়েছিল তাঁদের খাদ্যাভ্যাসের বিবর্তন।
– শান্তনু ভৌমিক