আফ্রিকার বৃহত্তম জনবহুল দেশ নাইজেরিয়ার অতীতের কিছু কথা – ২
প্রাথমিক কথা
নাইজেরিয়ারইলে-ইফে (বা শুধু ইফে) শহর
৫০০ পূর্বাব্দে প্রতিষ্ঠিত ইয়োরুবাদের ইলে-ইফে বা ইফে শহর। ইয়োরুবা জাতির প্রাচীন রাজধানী। ১২০০ থেকে ১৪০০ সাধারণাব্দের ইফে বিখ্যাত ছিল ঢালাই তামা, পিতল, পাথর, আর টেরাকোটা মূর্তি বানাবার জন্য। শহরের বাসিন্দা জনগোষ্ঠী ইয়োরুবাদের বিশ্বাসে, তাদের উৎপত্তিস্থল ও ধর্মীয় পীঠস্থান এই ইফে। ইফে শহরে ইয়োরুবাদের মন্দির ও দেবতার সংখ্যা বলা হয় ২০১. এই খানে ২০১ মানে আসলেই ২০১ নয়, ২০০ র পরে ১ যোগ হল মানে দুইশতের বেশি তিন শতের কম। ইয়োরুবা ভাষায় ইফে শব্দের অর্থ হল বৃদ্ধি বা ছড়ানো। আর ইলে শব্দের অর্থ ঘর বা বাড়ি। দুয়ে মিলে ইলে-ইফে, বাড়তে থাকা বাড়ি। যা হয়ত ইয়োরুবাদের প্রাচীন আধিপত্যের রূপক, যা বলে তাদের শক্তি কেন্দ্র ইফে থেকে ক্রমবর্ধমান দখলীকৃত এলাকার কথা।
চিত্র – ১ ইলে-ইফে টেরাকোটা উনি বা ইফের রাজা ও রাজবংশের সদস্য, সৌজন্যেঃ Brooklyn Museum, ইলে-ইফে টেরাকোটা, সৌজন্যেঃ Afrikabeitilung Ethnological Museum, Berlin, (উইকি কমন্স)
১৯১১, জার্মান অভিযাত্রী লিও ফ্রবেনিয়াস প্লেটোর “আটলান্টিস” খুঁজে পেয়েছেন এমন একটা খবর বের হয় নিউ ইয়র্ক টাইমসে। জার্মানির আফ্রিকা অভিযাত্রী লিও ফ্রবেনিয়াস আফ্রিকার টোগো থেকে নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদদাতাকে খবরটি জানিয়ে বলেন আটলান্টিস কোন দ্বীপ নয়, এটি উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার একটি এলাকা। লিও ফ্রবেনিয়াসের সেই ‘আটলান্টিস’ আদতে ছিল বর্তমানের নাইজেরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমের ৫ লক্ষ জনসংখ্যার একটি মাঝারি আকারের শহর ‘ইফে’। ৩০ জানুয়ারি ফ্রবেনিয়াস নিউইয়র্ক টাইমসের বার্লিন সংবাদদাতাকে জানান তিনি একটি ব্রোঞ্জের মুখাবয়ব পেয়েছেন, যা তিনি মনে করেন নেপচুনের সমতুল গ্রীক সমুদ্র দেবতা পোসেইডনের। তার ধারনায় পোসেইডনের সাথে আথেনিয়ানদের আটলান্টিস আক্রমণের ঘটনা জড়িত। লিও ফ্রবেনিয়াসের মতে ‘নিগ্রো’দের দেশের মধ্যে এখন পেলেও, এই ভেতরে ফাঁপা ব্রোঞ্জের মুখাবয়বটি কখনোই ‘নিগ্রো’রা বানাতে পারে না। তাদের উপযুক্ত ব্রোঞ্জ ঢালাই জ্ঞান থাকতেই পারে না। আর এমন নিখুঁত শিল্প নৈপুণ্যও ‘নিগ্রো’দের থাকতে পারে না। এ কেবল আটলান্টিসের লোকেরাই পারে।
‘এই ভেতরে ফাঁপা ব্রোঞ্জের মুখাবয়বটি কখনোই ‘নিগ্রো’রা বানাতে পারে না। তাদের উপযুক্ত ব্রোঞ্জ ঢালাই জ্ঞান থাকতে পারে না, আর এমন নিখুঁত শিল্প নৈপুণ্যও ‘নিগ্রো’দের থাকতে পারে না’ — এমন ভাবনা এক সময় তেমন কিছু অভাবনীয় ছিল না। এটা সেই ‘আফ্রিকা একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ’ ধারণার ফলশ্রুতি। ‘অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশে’ যদি এমন কোন ঢালাই ধাতব মুখাবয়ব দেখানো হয় যার শিল্প নৈপুণ্য কেবল গ্রীক আর রোমান শিল্পকলার সাথেই তুলনীয়, তবে মনে হতেই পারে অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশে এইগুলো অন্য কেউ নিয়ে এসেছিল। আটলান্টিস পাওয়ার কাহিনি মানা গেল না, কেননা কাহিনির আটলান্টিস তো দ্বীপ। তখন ভাবা হল তবে কোনকালে গ্রীকরাই এখানে উপনিবেশ গড়েছিল। এগুলো যে স্থানীয়রা বানাতে পারে তা কখনো মাথায়ই আসবে না।
(ফ্রবেনিয়াস ব্যবহৃত ‘নিগ্রো’ শব্দটি বদল করলাম না। কারণ এতে ফ্রবেনিয়াসের বর্ণবিদ্বেষ প্রসূত অবজ্ঞাসূচক মনোভাব বোঝাযায়। মনে রাখতে হবে তখন এবং কিছুকাল আগেও কৃষ্ণবর্ণদের ‘নিগ্রো’ই বলা হত, এবং তা সবসময়ই ছিল অবজ্ঞাসূচক।)
লিও ফ্রবেনিয়াস তখন ৫৩ হাজার বর্গ কিলোমিটার জোড়া ২৫ লক্ষ অধিবাসী অধ্যুষিত আফ্রিকার জার্মান উপনিবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সেখানকার জাতি ও তাদের শিল্প নিয়ে গবেষণার কাজে এবং সেই উদ্দেশ্যেই তিনি ইফে শহরে খনন কাজ চালাচ্ছিলেন সেখানকার একটি পবিত্রস্থল বা মন্দির এলাকায়। লিও ফ্রবেনিয়াসের ‘আটলান্টিস’ আবিষ্কারের খবরে গ্রীক প্রত্ন-বিশেষজ্ঞ ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেমস রিগনাল হুইলারের নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া প্রতিক্রিয়া ছিল: ‘লিও ফ্রবেনিয়াস বলেছেন তিনি “আটলান্টিস” পেয়েছেন, তার মানে দাঁড়াল যে তিনি তেমনটাই ভেবেছেন। দুই দশটি কথার তথ্য থেকে কিছু অনুমান করা ঠিক হবে না। আজকাল তো সবাই আটলান্টিস খুঁজে বেড়াচ্ছে, অনেকেই পেয়ে গেছি এমনটাই ভাবছেনও—’
এখানে বলা দরকার যে লিও ফ্রবেনিয়াস যাকে ব্রোঞ্জের বলেছিলেন তা আসলে ছিল তামার।
চিত্র – ২ রাজা ওবলাফুনের মুখোশ: ১৩০০ সাধারণাব্দ। সৌজন্যে: উইকিকমন্স
ইফের প্রত্ন আবিষ্কারের ইতিহাস
১৯১১ তে জার্মান লিও ফ্রবেনিয়াস দেখেছিলেন কেবল একটি মুখাবয়ব। তা থেকে খুব বেশি কথা জানার নয়, জানাও যায়নি। পরে ১৯৩৮ সালে একটি বাড়ির ভিত বানাবার জন্য মাটি খুঁড়তেই বের হয়ে আসে একসাথে ১৩টি ধাতব মুখাবয়ব। তারপরেই শুরু হয় প্রত্নখনন আর ঐতিহাসিকদের খোঁজ খবর। তবে দুঃখের কথা প্রত্ন খননের কোন ছবি, স্কেচ বা ফিল্ড রিপোর্ট ইত্যাদি যথাযথ ভাবে নেই। অবশ্য খননকারী বিজ্ঞানীদের লেখা বইপত্রে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। যেখানে বাড়ির ভিত খুঁড়তে গিয়ে এগুলো পাওয়া যায়, তা ছিল প্রাচীন উনি (রাজা) রাজপ্রাসাদের এলাকার ভেতরে। সেই রাজপ্রাসাদের দেওয়ালের ধ্বংসাবশেষ এখনও দেখা যায়
কিন্তু প্রশ্ন এই মুখাবয়ব কেন তৈরি হয়েছিল? কাদের মুখাবয়ব এগুলো? দেবতা? রাজা? রাজ পরিবার? অথবা নেহাতই মুখোশ? এমন মুখোশ যা পরা হত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে? মুখাবয়বগুলোর শান্ত সমাহিত রূপ বলে এগুলো কোন গভীর আধ্যাত্মিক ভাবনার প্রকাশ। কিন্তু মুখে সোজা টানা দাগ বা ফুটো ফুটো করা কেন? দুটো ভিন্ন অনুমান, এই দাগগুলো ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত বা তখনকার প্রচলিত উল্কি বোঝানো হয়েছে। যে উল্কি ব্যবহার করতো শুধু রাজ পরিবার বা পুরোহিতরা। আরেকটি মত হল এগুলো হল মুখ ঢাকার ওড়না। এমন মুখ ঢাকার কারুকাজ করা স্বচ্ছ ওড়না অবশ্য এখনো ব্যবহার হয় এই এলাকায়।
প্রত্ন ইফে
জানা যায় ইফে শহরের বসতির প্রথম পর্যায় ছিল ৫০০ সাধারণ পূর্বাব্দ থেকে ৫০০ সাধারণাব্দ অবধি পুরো হাজার বৎসরের। ইফের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের ইতিহাস অবশ্য একদম ঘোলাটে, বিশেষ কিছু জানা যায় না। তবে ৯০০ সাধারনাব্দে এখানে লস্ট ওয়াক্স পদ্ধতিতে ব্রোঞ্জের ঢালাই কাজ শুরু হয়। এই কাজের জনক ইগবো-উকোও, ইয়োরুবাদের বিশ্বাসে ধাতু ঢালাই কাজের দেবতা।
প্রত্ন খননে ইফে শহরের যে চেহারা জানা গেছে তাতে দেখা যায় শহরে রাজপ্রাসাদ ছাড়াও বেশ কয়েকটি পাথরে বানানো বড়ো বড়ো বাড়ি ছিল। ছিল বেশ কয়েকটি মন্দির, কর্মশালা। সাধারণ লোকের বসবাসের বাড়ি মাটিরই ছিল। সেগুলো এখন আর বাড়ি হিসাবে পাওয়া সম্ভব না। তবে যা টুকরোটাকরা মাটির দেওয়াল দেখা গেছে তাতে দেখা গেছে দেওয়ালে পোড়ামাটির টুকরো গেঁথে মোজাইকের মত চেহারা আনার প্রচেষ্টা ছিল, যা বোঝায় গোটা সমাজেরই শিল্পপ্রীতি ছিল।
শহরের মাঝখানে রাজপ্রাসাদ। সব রাস্তার শুরু রাজপ্রাসাদ থেকে। রাস্তার বিন্যাস ছিল রাজপ্রাসাদকে কেন্দ্র করে, চাকা আর চাকার স্পোকের মত নক্সায়। শহরের বাইরে বের হয়ে যাওয়া মুল রাস্তাগুলো ছিল ত্রিশ ফুট চওড়া। সব রাস্তার একজন করে অধিপতি দেবতা ছিলেন। তবে ইফে শহরের সাধারণ এলাকার মধ্যেকার রাস্তার ছিল আন্দাজ ১৫ফুট চওড়া। শহরের প্রধান বাজার ছিল প্রাসাদের সামনে। কয়েকটি যাতায়াতের পথ বাঁধানো ছিল টেরোকোটা টালি দিয়ে। কিছু কিছু রাস্তায় জল কাদা না জমার জন্য, আর রাস্তা দেখতে সুন্দর করার জন্যও, পোড়া মাটির টুকরো, পাথরের টুকরো মিশিয়ে মোজাইক মত করা হয়েছিল। কয়েকটি ফাঁকা চত্বরে গোলাকার কোন স্থাপনা ছিল, যেগুলো আবার পোড়ামাটির বাসনের গলার গোলাকার অংশ দিয়ে সাজানো ছিল। প্রায় প্রতিটি বাড়ির নিজস্ব ঘেরা এলাকা থাকত। তাদের নিজস্ব নামও থাকত। অনেক প্রাচীন নাম এখনো ব্যবহার হয়। শহর ঘেরা ছিল দুটো দেওয়াল দিয়ে। একটা দেওয়াল ছিল বাসস্থান আর কর্মশালা ঘিরে। অন্যটি গোটা শহর ঘিরে। সেই দেওয়ালগুলোর ধ্বংসাবশেষ এখনও খানিক দেখা যায়।
ইফের প্রত্নদ্রব্যের মধ্যে পাওয়া গেছে পাথরের তৈরি কিছু টুকরো সম্ভবত যা কবরের উপরে দেবার জন্য হয়ত ব্যবহার হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে লোহার পেরেকের মত কিছু বসানো ছিল। পোড়া মাটির বাসনে থাকত রিলিফের কাজ, বেশির ভাগ সময়ে কানার দিকে। কিছু বেশ বড়ো মাটির বাসন পাওয়া গেছে যেগুলোর ঢাকনায় থাকত নানা জীবজন্তুর মুখের রিলিফ করা কাজ। কিছু পোড়ামাটির জীবজন্তু আর মানুষের মূর্তি পাওয়া গেছে ছোটো ছোটো আকারে। একটি মন্দিরে এই রকম মানুষের মূর্তিগুলোর সবই ছিল বিকলাঙ্গ মানুষের, আবার সেগুলোকে কবরও দেওয়া হয়েছিল। অনুমান করা হয় এগুলো হয়ত বিকলাঙ্গ মানুষদের ভালো হয়ে ওঠার কামনায় মন্দিরে দেওয়া। কিন্তু তা হলে কবর কেন দেবে? অনুমান করা যেতে পারে, যাদের পরিবারে কেউ বিকলাঙ্গ ছিল তারাই এগুলো মন্দিরে কবর দিয়েছিল এই কামনা করে যে বংশে আর যেন কোন বিকলাঙ্গ না জন্মায়। অথবা হয়ত তাদের ধারণায় বিকলাঙ্গরা অভিশপ্ত। তাদের পরবর্তীজীবন যেন সুখের হয় সেই কামনায় দেবতার মন্দিরে তাদের প্রতিরূপ কবর দেওয়া হল।
আরেকটি উল্লেখ যোগ্য প্রত্ন দ্রব্য ছিল গ্রানাইট পাথরের জলচৌকি। একটি মাত্র গ্রানাইট পাথরের টুকরা থেকে বানানো। সেই আমলে গ্রানাইট পাথর কাটা বা খোদাই করা প্রায় অসম্ভব কাজ ছিল। ফলে এটিকে বানাতে হয়েছিল ঘষে ঘষে পাথর ক্ষয় করে। সহজেই অনুমান করা যায় কি বিশাল সময় লেগেছিল এই কাজ করতে। এছাড়া পাওয়া গেছে কাঁচের পুঁতি,নানা বাসন ও টুকটাক জিনিষ।
চিত্র – ৩ ইফে রাজার প্রতীক মুখোশ সৌজন্যে: উইকি কমন্স
ইফে-র ইতিহাস
ইফের ইতিহাস জানার আগে জানতে হবে তাদের সৃষ্টিকথা। কারণ এখানে মানুষের তথা ইফের ইয়োরোবাদের সৃষ্টি কথার সাথে জড়িয়ে তালগোল পাকিয়ে আছে ইফে-র ইতিহাস। দুটোকে পুরো আলাদা করা অসম্ভব। ইফে শহরের জানা ইতিহাস ১২০০-১৪০০ সাধারণাব্দের হলেও প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্যের ভিত্তিতে এই ইফে শহরের প্রতিষ্ঠা ৫০০ সাধারণ পূর্বাব্দে। প্রাচীন তথ্য বলে ইয়োরুবা প্রধান ওডুডুয়া সৈন্যসামন্ত নিয়ে ইফে শহর আক্রমণ ও অধিকার করেন আগেকার বাসিন্দা ইগবো জাতিকে হটিয়ে। কাজেই ওডুডুয়াই কালক্রমে দৈব ভাবনায় হবেন ইয়োরবাদের সৃষ্টিকর্তা।
ইফে শহরের বর্তমান বাসিন্দা ইয়োরুবাদের বিশ্বাসে তাদের সৃষ্টিকথা
ইয়োরুবাদের প্রধান দেবতা ওলোডুমারে। তিনি ওবাতালাকে পৃথিবী সৃষ্টির জন্য আদেশ দেন। ওবাতালা সেই উদ্দেশ্য রওনা হলেন বটে কিন্তু পথের মাঝখানে তালের তাড়ির লোভে পড়ে সব গুবলেট হয়ে গেল। নেশায় মাতাল ওবাতালার থেকে সৃষ্টির দায়িত্ব ভার চলে গেল পরের ভাই ওডুডুয়ার কাছে। ওডুডুয়া একটা শিকলে ঝুলে আকাশ থেকে পৃথিবীতে নামতে নামতে একমুঠো মাটি ছিটিয়ে দিলেন উত্তাল সাগরের জলে। সেখানেই সৃষ্টি হল ইফের। এরপর ওডুডুয়া একটি বীজ পুঁতলেন, তার থেকে জন্ম হল ১৬টি শাখা সহ এক বিশাল গাছের। (এই ষোল শাখার গাছ আসলে ইয়োরুবাদের বিভিন্ন শাখা উপজাতি রূপক)
এদিকে নেশার খোয়ারি কাটার পরে ওবাতালা টের পেলেন ইতিমধ্যে কী ঘটে গেছে। তিনি মোটেই খুশি হলেন না। ফলে শুরু হল ওবাতালা আর ওডুডুয়ার মধ্যে এক অনন্তকালব্যাপী বিরোধ। এখনও সেই বিরোধ-অসন্তুষ্টি পালন করা হয় প্রতি বৎসর, অবশ্যই রূপক হিসাবে। যাই হোক ওবাতালা তো আর একেবারে আজেবাজে ছিলেন না, নেশাটুকু বাদ দিলে কাজের মানুষই ছিলেন। তাই এবার কাজে নেমে পড়লেন। মাটি দিয়ে সৃষ্টি করলেন ইয়োরুবা জাতির মানুষদের।
ওডুডুয়াই হলেন প্রথম ইয়োরুবা রাজা বা তাদের ভাষায় উনি। ওডুডুয়ার ছিল বেশ কয়েকজন পুত্র কন্যা। তারা নানা দিকে ছড়িয়ে পড়ল নিজের নিজের রাজত্ব স্থাপন করতে। রাজত্বগুলো হল ইলা, ওরাঙ্গুন, ওউ, কেতু, সাবে, এগবা, পোপো, ওয়ো। ওডুডুয়ার ছোট ছেলে ওরানমিয়ান। তিনি পিতার প্রধান মন্ত্রণাদাতা আর এডো জাতির ভালোমন্দের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। পরে এডোর লোকেদের অনুরোধেই তিনি তাদের প্রধান শাসক হন এবং স্থাপন করেন এডো সাম্রাজ্য। রাজধানী হল বেনিনে। সেই বেনিন বর্তমানে নাইজেরিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম শহর জনসংখ্যা প্রায় ১৮ লক্ষ (তবে বেনিন রিপাব্লিক বলে একটি আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র আছে। সেই বেনিন রাষ্ট্রের কথা হচ্ছে না। এই আলোচনার বেনিন নাইজেরিয়ার শহর বেনিন)। বেনিনে থাকার সময়ে ওরানমিয়ানের এক পুত্র সন্তান হয়; নাম ইওয়েকা। ইওয়েকা প্রতিষ্ঠা করলেন দ্বিতীয় এডো রাজবংশের। স্থাপন করলেন দীর্ঘস্থায়ী বেনিন সাম্রাজ্য। ইতিমধ্যে ওরানমিয়ান প্রতিষ্ঠা করলেন ওয়ো সাম্রাজ্য, যা ১৯০০ শতাব্দীতে পতনের আগে ছিল পশ্চিম আফ্রিকার অন্যতম শক্তিশালী সাম্রাজ্য।
এই জনপ্রিয় কাহিনিতে দেখা যাবে ইয়োরুবা জাতির সৃষ্টির কাল্পনিক কথা আর বাস্তবের রাজারা মিলে মিশে একাকার। এমনটাই হয়ত হবার কথা। প্রাচীন গোষ্ঠী প্রধানরাই কালক্রমে দেবতা হন, আবার তাঁরাই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতাও হন। না হলে রাজাদের দৈব ক্ষমতার প্রতিষ্ঠা যেমন হয় না, তেমনি দেবতাদের মহান কর্মেরও হিসেব পাওয়া ভার হয়।
লোককথায় ইতিহাস বিকৃত হবেই। এখানেও হয়েছে। ইকেডু গোষ্ঠীর আছে এক ভিন্ন মৌখিক ইতিহাস। তাতে বলা আছে ইফের অন্য এক কাহিনি, সাথে ইফের রাজাদের লম্বা তালিকা। সেখানে বলা হয় ইফের ৪৬তম রাজা ওবলাফুন-২য়। এঁর দুই পুরুষ আগে বা ৪৪তম ইফে রাজার আমলে শুরু হয় এক গৃহযুদ্ধ। গৃহযুদ্ধে ইফে শহর দুর্বল হয়ে পড়লে ওরানমিয়ান আক্রমণ করে শহর দখল করে। সেই গৃহযুদ্ধের মূলে ছিল ইফের লাভজনক ধাতুশিল্পের মালিকানা নিয়ে গোলমাল। বিবাদমান একপক্ষ ওরানমিয়ানকে ডেকে আনে। ওরানমিয়ান ইফে দখল করে ইফের প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন রাজবংশকে নির্বাসনে পাঠায়। পরে নির্বাসন থেকেই ইফের এক অংশের লোকেদের সক্রিয় সহযোগিতায় ওবলাফুন-২য় আবার ইফের দখল ফিরে পেতে সমর্থ হন।
ইফের প্রাচীন রাজবংশ, বা ওবলাফুনের রাজবংশকে বলা হয় ওবাতালার বংশ আর ওরানমিয়ানের বংশকে বলা যথাযথ ভাবেই বলা হয় ওডডুয়ার বংশ। এই দুই বংশের যুদ্ধেরই প্রতীকী অনুষ্ঠান এখনও পালন করা হয়। প্রসঙ্গত ইফে শহরে আছে ওবলাফুনের মন্দির। মনে করা হয় ওবাফুন-২য় প্রথমবারের মত নিজেকে উনি (রাজা-দেবতা) বলে ঘোষণা করেন এবং ধাতব মুকুট পরেন, যার মধ্যে বসানো থাকত কাঁচের পুঁতি।
ইফের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা
ইফের শাসন ব্যবস্থা নিয়ে বিশেষ কিছুই জানা যায় না। সম্ভবত ইফে ছিল নগররাষ্ট্র। ইফের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ সম্বন্ধেও সরাসরি কোন তথ্য পাওয়া কঠিন। তবে পারিপার্শ্বিক দেখে কিছুটা অনুমান করাই যায়। এই অঞ্চলের সাথে পশ্চিম আফ্রিকা, উত্তর আফ্রিকা আর আরবদের সাথে ৮ম-৯ম শতাব্দীতে লোহা, সোনা, কাঁচ আর লবণের ব্যবসা যে নিয়মিতই হতো তার একাধিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ইফের কাঁচ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক উৎপাদন
ইফে শহরের ব্যবসায়িক উৎপাদনের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল বিশেষ ধরনের কাঁচ। আরব লেখকদের লেখাতেও উল্লেখ আছে ইফের উৎপাদিত ইগবো-ওলোকুন কাঁচের। ইফে প্রত্ন খননে কাঁচের পুঁতি ছাডা়ও পাওয়া গেছে কাঁচের বাসন। সাধারণত নীল, সবুজ, নীলচে-সবুজ আর কালো রঙের ছাড়াও কিছু ছিল বাদামী, হলুদ, লাল রঙেরও কাঁচের বাসন। বাসনের আকার ১৮০ থেকে ৩০০ মি.মি. গোলাকার। কাঁচের উৎপাদন শুরু হয়েছিল আনুমানিক ১১শ শতাব্দীতে।
ইফের কাছেই ছিল খনিজ লোহা। লোহা গলানো বা লোহার জিনিষ বানানোতেও তারা দক্ষ ছিল। কাজেই নিত্য প্রয়োজনীয় নানা জিনিষ, বিশেষ করে গাছকাটা বা কৃষিকাজের দরকারি জিনিস তারা বানাতে পারতো অনুমান করাই যায়।
রপ্তানির জন্য ইফে’র ছিল হাতির দাঁত, কোলা-র দানা, সোনা আর কাঁচ। আমদানির মধ্যে প্রধান ছিল লবণ, তামা, পিতল আর অবশ্যই ধনী বা রাজপরিবারের শখের ও বিলাসিতার উপকরণ। খাদ্যে তারা স্বয়ংসম্পূর্ণই ছিল। ব্যবসায়ের অঙ্গ হিসাবে দাস বিক্রিও চলত বলেই অনুমান করা হয়। আসলে গোটা আফ্রিকা জুড়েই দাস ব্যবসা চলত। ছোটোখাটো রাজারা বা দলপতিরাও বন্দীদের বা সমাজের দুর্বলদের জোর করে বন্দী বানিয়ে বিক্রি করত দাস হিসাবে। দাস কেনাবেচা শুরু হয়েছিল নিজেদের মধ্যেই। তারপরের পর্যায়ে দাস রপ্তানি। মূলত আরব বণিকদের কাছে। আর এই দাস রপ্তানি ব্যবসাই পরে তাদের সর্বনাশ ডেকে আনে। ইয়োরোপ জানতে পারে এখানে আছে দাসবাজার। তারপরে ইয়োরোপীয়রা স্থানীয় রাজা ও দলপতিদের পাশে হঠিয়ে নিজেরাই জোর করে লোক ধরে নিয়ে যেত সুদূর ইয়োরোপ আর আমেরিকায় দাস হিসাবে।
ইফের তামা পিতলের ঢালাই শিল্পকর্ম হঠাৎ করে উধাও হয়নি বা বন্ধও হয়নি। তা চলে গেছে পাশের বেনিন শহরে। ১৫০০ অব্দে বেনিন হয়ে ওঠে সম্পদশালী, শক্তিশালী। ফলে অবনতির পথে এগুতে থাকা ইফের শিল্পীরা নতুন সাম্রাজ্যে চলে যায়। বেনিনে এখনো এই ঢালাইয়ের কাজ হয়। তবে এখন হয় মূলত পর্যটকদের চাহিদা পূরণের জন্য। ফলে কয়েকটি বাঁধাধরা ডিজাইনই নকল হতে থাকে। নতুন কিছু আর তৈরি হয় না।
নাইজেরিয়ার বেনিন শহর, বেনিন রাজ্য, বেনিন সাম্রাজ্য
(বেনিন রিপাব্লিক নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র আছে। এখানে সেই রাষ্ট্রের কথা নয়,বলা হচ্ছে নাইজেরিয়ার শহর বেনিনের কথা।)
চিত্র – ৪ বেনিন-দেওয়ালের তামার শিল্পকলাঃ সৌজন্যেঃ উইকি কমন্স
গোড়ার কথা
‘যখন লন্ডন ছিল চুরি আর হত্যার শহর, তখন গাণিতিক বিন্যাস আর চিনের প্রাচীরের চেয়েও দীর্ঘ (মাটির) প্রাচীর সহ বেনিন ছিল বিশ্বের অন্যতম সেরা পরিকল্পিত শহর। তাহলে এখন আর কিছুই নেই কেন?’
‘ভাবুন, এমন সমৃদ্ধ স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে একটা শহর ইংল্যান্ড, আমেরিকা, কানাডা, জার্মানি বা ভারতে যদি থাকত তবে সেটা হত পর্যটকদের মক্কা। আসত লক্ষ লক্ষ পর্যটক, আয় হতে পারত কোটি কোটি টাকা’ — এক বেনিনবাসীর এই কথাগুলোই হল বেনিন শহরের ইতিকথা।
নাইজেরিয়ার ইফে শহরের কথার পরে এবার তারই পাশের বেনিন শহরের কথা। কাছাকাছি দুটি শহর ঐতিহাসিকভাবেই একের সাথে অপর জড়িয়ে আছে। বেনিনের উত্থানে ইফের পতন দ্রুততর হয়ে গিয়েছিল। ইফের দক্ষলোকেরা চলে এসেছিল সমৃদ্ধতর বেনিনে। ইফে যেমন একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল বেনিনও ঠিক তেমনি একটি স্বাধীন রাজার রাজ্য ছিল। বর্তমানের বেনিন শহর ১৮ লক্ষ বাসিন্দা নিয়ে নাইজেরিয়ার এডো প্রদেশের রাজধানী। মোটামুটি একটি বড় শহর। গড়ে ৩৫ থেকে ২১ ডিগ্রী তাপমাত্রার শহরটি একটু গরম ঘেঁষা হলেও সাঙ্ঘাতিক গরমের জায়গা বলা যাবে না। বিমানবন্দর, বিশ্ববিদ্যালয়, সংগ্রহশালা নিয়ে জমজমাট শহর। শহরের বড় উৎসব ডিসেম্বরের শেষের নববর্ষের উৎসব। শহরে বাজারের দিন সপ্তাহে চারদিন, একিওবা, একেনাকা, আগবাডো আর একেন।
চিত্র – ৫ বেনিনের শিল্প নমুনাঃ সৌজন্যেঃ উইকি কমন্স
বেনিনের অতীত কথা
প্রথমে বেনিনের লোকেদের কথা। অবশ্যই লোকেদের প্রাচীন পরিচিতি শুনতে হবে তাদের লোককথায়। কারণ বেনিনের নিজস্ব কোন লিপি ছিল না। কাজেই কিছুই লেখা নেই। বেনিন নগরের বাসিন্দারা বিনি বলেই বেশি পরিচিত। তবে জাতির হিসাবে তারা হল এডো জাতি।
বেনিনবাসীরা নিজেদের পরিচিত দেয় এডো জাতি হিসাবে। জাতির সৃষ্টি কথায় আছে স্বর্গের দেবতা ওগিসোর হলেন তাদের প্রথম শাসক। তবে তখন এই দেশের নাম ছিল ইগোডোমিগোডো। ওগিসোর পুত্র ইরে। কিন্তু কাহিনির প্রথম অধ্যায় এখানেই শেষ। মাঝখানে আর কিছুই নেই। কেউ কিছু জানে না। এরপরে একেবারে একলাফে দ্বাদশ শতাব্দীতে।
দ্বাদশ শতাব্দীতে বেনিনে তৈরি হয় এক বিশাল প্রাসাদ। সেই প্রাসাদে শেষ রাজার পুত্র ছিলেন নিঃসন্তান। তাঁর স্ত্রী ষড়যন্ত্র করে তাকে হত্যার জন্য কিন্তু যারা হত্যা করবে তাদেরই একজন রাজকুমার একালাডেরহানকে অন্য জায়গায় পাচার করে দেয়। সেখানে এই রাজকুমার নতুন নাম নেন ইজোডুয়া এবং চলে যায় ইলে-ইফে নগরে। বেনিনের লোকেদের মতে ইজোডুয়াকেই ইফের লোকেরা বলে ওডুডুয়া। ওডুডুয়া তখন ইফের রাজা। তিনি আর বেনিনে ফিরলেন না। বদলে পাঠালেন ওরানমিয়ানকে। ওরানমিয়ান বেনিনের তখনকার স্থানীয় দলপতির সাহায্যে বেনিনের রাজাকে হঠিয়ে নিজে রাজা হলেন, বিয়ে করলেন এক স্থানীয় রমণীকে। কয়েক বৎসর বাদে তিনি এই নগর রাজ্যের নতুন নামাকরণ করলেন ইলে-ইবুনু। ইলে অর্থে দেশ, আর ইবুনু শব্দের অর্থ হল রাগ বা ক্রোধ। কোন অজানা কারণে তিনি বেনিনবাসীদের উপর রেগে ছিলেন। তাই এমন নামাকরণ। সেই রাগের বশেই তিনি সবাইকে ডেকে বলে দিলেন, অনেক হয়েছে, আমি আর তোমাদের রাজা হয়ে থাকবো না। এই ইবিনুকেই পর্তুগিজরা ষোড়শ শতাব্দীতে তাদের বিকৃত উচ্চারণে বলতে থাকে বেনিন। আর বেনিন নামটাই থেকে গেল।
ওরানমিয়ান বেনিন শহরের উপর রাগ করে ছেলের উপর রাজ্যের ভার দিয়ে চলে গেলেন নিজের ইফে নগরে। কিন্তু কিছুদিন বাদে দেখা গেল বেনিনের নতুন রাজা বোবা কালা হয়ে গেছেন। মনের দুঃখে তার মা তাকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেলেন। তখন বেনিনের লোকেরা আবার গিয়ে ধরল ইলে-ইফের রাজা হয়ে থাকা ওরানমিয়ানকে। ওরানমিয়ান তাদের কয়েকটি ‘ওমো আয়ো’ বীজ নিয়ে বোবা-কালা ছেলেকে খেলতে দিতে বললেন। সেই বীজ নিয়ে খেলতে খেলতে সাতদিনের মাথায় বোবা-কালা রাজপুত্র আবার কথা বলতে শুরু করলেন এবং নিজেকে ওয়োমিকা বলে ঘোষণা করে ফিরে এলেন বেনিনে। সিংহাসনে বসলেন। শুরু হল বেনিনের রাজবংশ। এরপর থেকে বেনিনের সব ওবা বা রাজাকেই সিংহাসনে বসার আগে সাতদিন সেই বোবা-কালা রাজপুত্রের মামাবাড়ি উসে-তে থেকে আসার বাঁধা নিয়ম হয়ে গেল। পঞ্চদশ শতাব্দীতে এই রাজবংশের দ্বাদশ রাজা মহান এওয়ারে (১৪৪০-১৪৭৩) বেনিন রাজত্ব নগরের সীমার বাইরে বহুদূর দেশে অবধি বিস্তারিত করলেন। বেনিনের ওবা (রাজা) তখন রাজা নন, হয়ে গেছেন সম্রাট। তবে বেনিনের ওবা দখলকরা এলাকা সরাসরি দখলে রাখতেন না। যে যেখানে রাজত্ব করছে করুক নিয়মিত কর দিলেই হবে। এই পদ্ধতি মেনে চলতেন। ফলে বহু জাতির বসবাসের এই সাম্রাজ্যে তেমন কোন সমস্যা ছিল না। কোথাও কোথাও নেহাত অযোগ্য কোন শাসক থাকলে সাময়িক ভাবে সম্রাট শাসক পাঠাতেন।
বেনিনের ইতিহাস তেমন কিছু প্রাচীন নয়। প্রথম পূর্ব শতাব্দী থেকে এখানে লোক বসবাস করতে শুরু করে। ৫০০ শতক নাগাদ এখানে কৃষিকাজ শুরু হয়। বেনিন নগরের এলাকা ছিল ঘন বনে ঢাকা। ফলে নগরবাসীর এমনিতেই একটা নিরাপত্তা ছিলই বরাবর। নানা প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর শহরের বড় সমস্যা ছিল সে-সে মাছি। বহু বন্য পশু শেষ হয়ে গেছে এই মাছির আক্রমণে। তবে গবাদিপশুর শরীরে কালক্রমে এর বিরুদ্ধে স্বাভাবিক প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল।
বেনিন ও বেনিনের প্রাচীর
বেনিনের প্রাচীর বেশ বিখ্যাত। বেনিনের প্রাচীর স্থানীয় ভাষায় ইয়া। এই মাটির প্রাচীর অনেক সময়ই পাশ থেকে মাটি কেটে তুলে তৈরি। ফলে প্রাচীর আর পরিখা একত্রে ভালো প্রতিরক্ষা দিত। শুধু বেনিন শহরের মধ্যেই এই প্রাচীর লম্বায় ১৫ কিলোমিটার। কিন্তু শুধু বেনিন শহরে তো না, এই প্রাচীর চলে গেছে শহর ছেড়ে গ্রামীণ এলাকাতেও। বলা হয় মোট ১৬ হাজার কিলোমিটার লম্বা ছিল এই প্রাচীর। যদিও পুরো প্রাচীর খনন করে মেপে দেখা হয়নি কখনো; তবু তার সত্যতাও অস্বীকার করা হয়নি। কমবেশি ১৬ হাজার কিলোমিটার প্রাচীরের অস্তিত্ব মেনে নেওয়া হয়েছে।
অনুমান এই বিশাল প্রাচীর তৈরি করতে হয়ত কয়েক’শ বৎসরে আনুমানিক ১৫ কোটি শ্রমদিবস লেগেছিল। তবে এই প্রাচীর সম্ভবত চিনের প্রাচীরের মত প্রতিরক্ষা প্রাচীর ছিল না। অনেকে ধারণা করেন এটা শুধুই সাম্রাজ্যের সীমানা বোঝাবার জন্য কাজে লাগত; তার বেশি কিছু নয়। বেনিন শহরের মধ্যে এই প্রাচীরের ভগ্নাবশেষ কোথাও কোথাও এখনো দেখা যায়। প্রাচীর তৈরি হবার সময় নিয়ে দ্বিমত আছে। একটি মত হল ১৪০০ অব্দে তৈরি হয়েছিল। আরেকটি মতে ৯০০-১০০০ শতাব্দীতে তৈরি হয়েছিল। সম্ভবত ঐ বিশাল প্রাচীর ৯০০ থেকে ১৪০০ অবধিই তৈরি হয়েছিল। টানা না হলেও খাপছাড়া ভাবে।
চিত্র – ৬ বেনিন শিল্পের নমুনাঃ সৌজন্যেঃ ব্রিটিশ মিউজিয়াম
বেনিন শহর ও রাজপ্রাসাদ
বেনিন শহরের রাজপ্রাসাদ ছিল মাটির। তবে তার দেওয়াল ছিল নানা ভাবে অলঙ্কৃত। দেওয়ালে মাইকা আর পাথরের টুকরো বসিয়ে তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হত। মাটি দিয়েই দেওয়ালে সৃষ্টি করা হত নানা জীবজন্তুর রূপ, তাছাড়া থাকত রাজপরিবারের আর অভিজাতদের মূর্তি চিত্রণ। দেওয়ালের বাইরের দিকে লাগান থাকত তামা পিতল আর ব্রোঞ্জের কাজ করা পাত। সেই পাতে দেখানো থাকত রাজ পরিবারের ও বেনিনের নানা উল্লেখযোগ্য গৌরবময় ঘটনার দৃশ্যাবলী। গোটা বেনিন শহর ছিল এগারটি অংশে বিভক্ত। প্রতি অংশেই ছোট করে রাজপ্রাসাদের অনুকরণে তৈরি হত প্রশাসনিক ভবন। সেই ভবনের দেওয়ালে থাকত তামা পিতলের কারুকাজ। গোটা শহরটাই মূলত বেনিন শিল্পীদের শিল্পকলায় ভরা ছিল। শহরের রাস্তা ছিল চওড়া, তার শাখা রাস্তা ছিল খানিক সরু থেকে খুব সরু। ঘরবাড়ি সারিবাঁধা। কিন্তু সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল, বেনিন শহরে রাত্রে রাস্তায় আলো জ্বলত। রাস্তায় রাস্তায় বিশেষ করে রাজপ্রাসেদের কাছের রাস্তায়, পামতেলে, জ্বালানো হত বাতি।
নরবলি
বেনিনে নরবলি প্রথা চালু ছিল বরাবর। লোহার দেবতার উদ্দেশ্যে নারীদের বলি দেওয় হত। মৃত্যু দেবতার উদ্দেশ্যে নরবলিতে একজন পুরুষ একজন নারী আর একটি করে ছাগল ভেড়া ও গরু বলি দেওয়া হত। রাজার পূর্বপুরুষদের স্মরণে অনুষ্ঠান হত প্রতি বৎসর। সেই উৎসব শেষে বারোজন বন্দিকে বলি দেওয়া হত। রাজার মৃত্যু হলে তার প্রিয় ভৃত্যদেরও বলি দেওয়া হত, যাতে রাজা পরকালে এদের নিয়মিত সেবা পেতে থাকেন।
রাজার কবর ও রাজ সিংহাসনের অধিকার
প্রথা ছিল রাজার মৃত্যু হলে তার বড়োছেলে পিতাকে কবর দেবে। এই কবর দেওয়ার কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন হলে তবেই রাজপুত্র সিংহাসনে বসতে পারবে। যদি কোন কারণে বড়ো ছেলে কবর না দিতে পারে, তবে যে ছেলে কবর দেবে, সেই রাজা হবে।
রাজপরিবারে মা ছেলের বিচ্ছেদ
ছেলে রাজা হলে মা রাজপ্রাসাদ ছেড়ে চলে যাবে বরাবরের মত। রাজমাতা তখন বেনিন শহরের বাইরের বিশেষ প্রাসাদে বাস করবে। রাজমাতার ক্ষমতা অনেক। আর তা বজায় থাকে বরাবর। কিন্তু পুত্রের সাথে কখনো দেখা করতে পারবেন না। কারণ রাজা হয়ে যাবার পর পুত্র হয়ে গেছেন দেবতার অংশ।
রাজা-দেবতা
বেনিনের রাজাকে দেবতা ভাবা হত। এই দেবত্ব বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য নিয়ম ছিল, রাজা ঘোষিত হবার পরে, রাজা কখনও বিশেষ কয়েকটি অনুষ্ঠানের সময় ছাড়া প্রাসাদের বাইরে যাবেন না। সাধারণ নাগরিক যদি কখনও আলোচনা করে, বা বিশ্বাস করে, যে রাজা সাধারণ মানুষের মত করেই স্নান করেন, খাবার খান, রাত্রে ঘুমান, তবে সেই নাগরিককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে এমন আইন ছিল বেনিনে।
বেনিন শিল্পকলা
বেনিন বিখ্যাত ছিল তার শিল্পকলার জন্য। বেনিন কারিগরেরা উচ্চমানের ব্রোঞ্জের, তামার, পিতলের মুখাবয়ব সৃষ্টি করত, যেগুলো স্বাভাবিক মানুষের হুবহু প্রতিকৃতি হতো। অনেক সময় মানুষের মুখ-মাথার মাপও হুবহু হত। লস্ট ওয়াক্স পদ্ধতিতে তৈরি, ভেতরে ফাঁপা, এগুলোর ছিল প্রচন্ড চাহিদা। তাছাড়া তৈরি হত ব্রোঞ্জের পাতে খোদাই করা নানা ঘটনার দৃশ্য। শুধু ব্রোঞ্জ নয়, কাঠ আর হাতির দাঁতেরও এমন শিল্প সৃষ্টিতে বেনিনের শিল্পীরা সুদক্ষ ছিল। বেনিনের ধাতুমিশ্রণ দক্ষতা, ঢালাই আর শিল্পকলা তখনকার ইউরোপের চেয়ে কোন অংশেই হীন ছিল না। দ্বাদশ শতাব্দীতেই বেনিনের রাজা শিল্পীদের শিল্পসৃষ্টির কাজে পৃষ্ঠপোষকতা করতেন পূর্ণমাত্রায়।
ইউরোপের সাথে যোগাযোগ
পশ্চিম আফ্রিকায় বেনিন ছিল এক বিরাট বাণিজ্যিক শক্তি। আর ইউরোপের সাথে যোগাযোগ অবশ্যই বেনিনের বাণিজ্যিক প্রভাবের দরুনই ঘটে। আনুমানিক পঞ্চদশ শতকে এই যোগাযোগ শুরু হয়। ইউরোপীয় পর্যটকদের প্রথমেই চোখ টানত বেনিনের অগাধ সম্পদ আর তাদের শিল্পকলা। তবে সবার আগে চোখে পড়ত, চোখ ধাঁধানো বিশাল শহরটি নিজে। ষোড়শ শতাব্দী থেকেই ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে বেনিনের সম্পদের কথা। বাড়তে তাকে ইউরোপীয়দের আনাগোনা।
১৬৯১, এক পর্তুগীজ ভ্রমণকারী লোরেঙ্কো পিন্টোর বর্ণনায়ঃ ‘বেনিন লিসবনের চেয়েও বড়। যতদূর চোখ যায় টানা সোজা সোজা রাস্তা চলে গেছে। বড়ো বড়ো বাড়ি। বিশেষ করে রাজপ্রাসাদ, যা বিপুল বৈভবে সমৃদ্ধ ও অলংকৃত। পরিশ্রমী নাগরিকদের শহর সম্পদশালী। শহরের প্রশাসন কঠোর। কোন চুরি নেই। শহরে বাসী নিজেদের এতটাই নিরাপদ ভাবেন যে তাদের ঘরের দরজাই থাকে না।’
১৬৯৯, ডাচ পর্যটক বেনিন নাগরিকদের চরিত্র বর্ণনা করেছিলেন এইভাবেঃ বেনিনের লোকেরা নম্র ভদ্র। তারা অপরের কাছ থেকেও অনুরূপ ব্যবহার আশা করে সব সময়। তবে ভয় দেখিয়ে বা জোর করে তাদের থেকে কিছু নেওয়া আর চাঁদকে পৃথিবীতে নামিয়ে আনা সমার্থক। ব্যবসার ব্যাপারে এরা খুব কড়া, বিন্দুমাত্র রেয়াত নেই কোন বিষয়ে।
একই সময়ের লন্ডনের বর্ণনা। ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ব্রুস হোলসিঙ্গারের ভাষায়ঃ ‘চুরি, পতিতাবৃত্তি, ঘুষ আর সমৃদ্ধ কালোবাজারি নিয়ে মধ্যযুগের শহরে ছিল ব্লেড চালাতে দক্ষ পকেটমারদের দ্বারা সাধারণের শোষণের উপযুক্ত শহর।’
১৪৮৫তে পর্তুগীজ পর্যটক আসে বেনিনে। পুরোটাই বাণিজ্যিক যোগাযোগ। ষোড়শ শতাব্দীতে বেনিন লিসবনে তাদের দূত পাঠিয়েছিল, আর লিসবন বেনিনে পাঠিয়েছিল খ্রিস্টান মিশনারি। লিসবন বেনিন থেকে কিনতো সোনা, ব্রোঞ্জের শিল্পকলা, হাতির দাঁত, পাম তেল, আর দাস। বেনিনের দাস ব্যবসার উৎস ছিল তার এলাকার বাইরের লোকেদের ধরে বিক্রি করা। বেশ ভালো লাভজনক ব্যবসা। বেনিন লিসবন থেকে কিনত বন্দুক আর ধাতু। পর্তুগালের সাথে যোগাযোগ বেশ গভীর ছিল অনুমান করা যায়, কারণ এখনো বেনিনে কিছু পরিবার পর্তুগীজ ভাষা বলতে পারে।
বাণিজ্যের ছলে ইংরেজ উপনিবেশের পত্তন
১৪০০ নাগাদ বেনিন সাম্রাজ্য তিন টুকরো হয়ে যায়। বেনিন বলতে থাকে মূলত বেনিন শহরটি আর লাগোয়া কিছু এলাকা। ১৮০০ থেকে বেনিনের অর্থনৈতিক অবনতি শুরু হয়। বেনিনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিই আসলে তার পতনের কারণ। পঞ্চদশ শতাব্দী থেকেই ব্যবসার বাড়বাড়ন্তের সময় রাজপরিবারে শুরু হয় লাভের বখরা নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব। দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে একাধিক সেনানায়ক, ক্ষমতাশালী প্রশাসক ও গোষ্ঠী প্রধানেরা।
বেনিনের ব্যবসা যেমন পর্তুগীজদের আকর্ষণ করেছিল, তেমনি করেছিল প্রতিদ্বন্দ্বী ইংরেজদেরও। ইংরেজরা বেনিনের রাজপরিবারের ও শহরের অভিজাতদের কোন্দলের সুযোগ নিতে এগিয়ে আসে। খেলাটা শুরু হয় সাধারণ ব্যবসায়িক প্রস্তাব নিয়ে। বেনিন রাজা ইংরেজদের উদ্দেশ্য নিয়ে গোড়া থেকেই সন্দিহান ছিলেন। ফলে গোড়াতে যোগাযোগ রাখতে অনিচ্ছাই প্রকাশ পেয়েছিল বেনিন রাজা বা ওবার ব্যবহারে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইংরেজরা বেনিনের সাথে বাণিজ্য বাড়াতে বাড়তি আগ্রহ দেখাতে শুরু করে। তাদের লক্ষ্য তখন বেনিনের রবার, পামতেল আর হাতির দাঁতের ব্যবসা হস্তগত করা। ইংরেজরা এই বাণিজ্য পুরোটাই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে আগ্রহী। কিন্তু বেনিন রাজা নিজের একচেটিয়া আধিপত্য ইংরেজদের হাতে তুলে দিতে উৎসাহী নন। ফলে ঝামেলা বাড়তেই থাকে। ১৮৮২, ৮৪, ৮৫ তে নানা বাণিজ্য চুক্তি হয় কিন্তু বিশেষ কোন ফল দেখা যায় না।
১৮৬২ তে ইংরেজ রাজদূত এবং রাজার প্রতিনিধি বার্টন বেনিন ভ্রমণের রিপোর্টে লেখেনঃ ‘বেনিন হল, মৃত্যুর দুর্গন্ধে ভরা, অযৌক্তিক বর্বরতার দেশ।’ এই কথা কটিই লন্ডনে বসে থাকা ইংরেজদের সব ভাবনাকে একপেশে করে রেখেছিল। ফলে প্রকৃত সমঝোতা হবার কোন সুযোগ কখনোই ছিল না। ব্রিটিশদের তখন লক্ষ্য বেনিনকে স্বাধীন দেশ থেকে ব্রিটিশ অধীনস্থ ও রক্ষিত দেশে বদলে দেওয়া। ১৮৯২ তে ব্রিটিশরা বেনিন রাজাকে দিয়ে একটি চুক্তিপত্র সই করিয়ে নেয়। ইংরেজ প্রতিনিধি গাওয়েল রাজা আর তার সেনাপতিকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে যে চুক্তিতে সই করায়, সেই চুক্তিতে বলা হয়েছিল যে ব্রিটিশদের বেনিন সাম্রাজ্যের নানা বিষয়ে আইনগত অধিকার থাকবে, কারণ বেনিন রাজা ব্রিটিশদের থেকে সক্রিয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা কামনা করেছেন। সেই চুক্তিতে এও ছিল যে, ইংরেজরা বেনিনকে সভ্যদেশে উন্নত করতে সাহায্য করবে। বেনিনবাসীকে সাহায্য করতেই ব্রিটেনের এই উদ্যোগ। যদিও লক্ষ্য ছিল বাণিজ্যের একচেটিয়া আধিপত্য অর্জন, চুক্তিতে কিন্তু সে কথার কোন উল্লেখ ছিল না। ব্রিটিশ প্রতিনিধি গাওয়েল স্বীকারও করেছিলেন যে বেনিন রাজা সহজে সই করতে চাননি।
১৮৯৭ সালের বেনিন সংঘাত, ধ্বংস ও পরাধীনতা
চুক্তি স্বাক্ষরের পর চুক্তির বক্তব্য প্রকাশ পেলে, বেনিনবাসী বুঝতে পারে ইংরেজদের অভিসন্ধি। ফলে রাজার অনুমতির অপেক্ষায় না থেকে বেনিন সেনাপ্রধানদের কয়েকজন নিজেরাই ব্যবস্থা নেবার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা বেনিনের দিকে এগুতে থাকা একটি ব্রিটিশ দলকে আক্রমণ করে সবাইকে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে ছিল আটজন ব্রিটিশ অসামরিক কর্মকর্তা। ঘটনায় প্রবল ভাবে ক্রুদ্ধ ইংরেজরা সিদ্ধান্ত নেয় প্রতিশোধের। এরপরেই ঘটে ব্রিটিশদের বেনিনকে ‘শাস্তিপ্রদান অভিযান’। ব্রিটিশ সামরিক বাহিনী বেনিন শহর অধিকার করে। গোটা শহরের সব গুঁড়িয়ে দিয়ে লুঠ করে রাজপ্রাসাদ। বেনিনের বিখ্যাত ব্রোঞ্জের শিল্পকলার সবটাই তুলে নিয়ে যায়। লুণ্ঠিত সম্পদের একটা অংশ ব্রিটিশ মিউজিয়ামে যায় বটে, তবে বেশিটাই বিক্রি করে দেয় লণ্ঠনরত সেনাবাহিনী। সব শেষে আগুন লাগিয়ে দেয় গোটা শহরে। বিশাল বেনিন শহর পুরো পুড়ে যায়।
তারপরে, পোড়া শহরের ধ্বংসাবশেষের উপর দাঁড়িয়ে শুরু হয় বেনিনে ব্রিটিশ শাসন। স্বাধীন বেনিন পরিবর্তিত হয়ে যায় ব্রিটিশ নাইজেরিয়ার অঙ্গ রাজ্যে।
বর্তমান বেনিন
১৯৬০ সালে নাইজেরিয়ার সাথেই অঙ্গরাজ্য হিসাবে বেনিনও স্বাধীনতা পায়। আজ বেনিন শহর ১৮ লক্ষ বাসিন্দার একটি আধুনিক শহর। বিশাল বিশাল বহুতল বাড়ি গড়ে উঠেছে। কিন্তু অতীতের বেনিনের কোন চিহ্ন কোথাও রক্ষা করা হয়নি। প্রাচীন শহরের বর্ণনা অনুযায়ী সেই শহরের ছবি বা মডেল তৈরি করা যেত। না, কিছুই করা হয়নি। শুধু কোথাও কোথাও প্রাচীন দেওয়ালের ভগ্নাংশ দেখা যায়। সেগুলোও ক্রমে সমান করে নতুন বহুতল অফিস মল বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠছে।
রাজ্য নেই, তবে রাজা আছে। বেনিনের রাজাকে এখনও সম্মান দেওয়া হয়। নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি অবশ্যই থাকতে হবে। বেনিন রাজা বেনিন প্রশাসনের বিশেষ পরামর্শদাতা।
তথ্যসূচী-
ILE-IFE:-
1. Archaeological investigations of early glass production at Igbo-Olokun, Ile-Ife Nigeria. By AbidemiBarbatundeBabalola. Rice University, August 2015
2. “German Discovers Atlantis in Africa”. The New York Times, Jan.13, 1911
3. Art in Ancient Life. By Suzanne PrestorBlier. African Art. Vol.45 No. 4, 2012
4. Ile Ife Nigeria (500 BCE): by Ken ChiedzoeEgu. In BLACK PAST March 15 2011.
5. Ile Ife Nigeria: Encyclopedia Britannica.
6. Ife: by Mark Cartwright. In World History Encyclopedia on 26 March 2019
7. Ife and Benin: BBC News.
8. The history of Ile-Ife, The ancient Yoruba kingdom with Africa’s most striking sculptures. : by BridgetBoakey. In Face to Face: Africa on 27 June 2018
10. Wikipedia.
BENIN:-
1. The Kingdom of Benin. _ National Geographic
2. The Kingdom of Benin. _ BITESIZE, BBC
3. The Kingdom of Benin. _ Khan Academy.
4. Benin City, the mighty medieval capital now lost without trace. Story of Cities, The Guardian.
5. Wikipedia.
6. Otherreports blogs and magazines & Newspaper.