
গোপীবল্লভপুরের শ্যামানন্দী বৈষ্ণবধর্ম এবং লৌকিক বিশ্বাসের সহাবস্থান ও বিবর্তন
পূর্বকথা
দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত বাংলার কাশীপুর, আজ থেকে প্রায় চারশ বছর আগে সুবর্ণরেখা নদীর কোলে ঘন অরণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। অস্ট্রো-এশিয়াটিক জনগোষ্ঠী এবং দ্রাবিড় ভাষাভাষী মানুষের সহাবস্থান আর মিশ্রণে গড়ে ওঠা আরণ্যক গ্রামীণ সভ্যতা কিন্তু এই চারশ বছর আগেও শুধুই আরণ্যক ছিল না। এই দক্ষিণ–পশ্চিম সীমান্ত বাংলা হাজার হাজার বছর ধরে বারবার রূপান্তরিত হয়েছে নতুন নতুন বিশ্বাসের টানাপোড়েনে। এখানে এসেছেন জৈনরা, পরবর্তীতে বৌদ্ধরা। ফলে লৌকিক ধর্মের সঙ্গে মিশেছে জৈন ও বৌদ্ধ ধর্ম। গুপ্ত যুগে যখন তথাকথিত ব্রাহ্মণ্য ধর্ম তার সর্বগ্রাসী রূপ নিয়ে দেখা দিল তখন এই অঞ্চলও সেই আঁচ থেকে বাইরে ছিল না। এদিকে এই অঞ্চলের আদি অধিবাসীদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণে তথাকথিত সনাতন ধর্মের আওতায় এসেছেন কিংবা আসতে বাধ্য হয়েছেন।
আদিবাসী সমাজ থেকে বর্ণহিন্দু ক্ষত্রিয় শাসক
সেই সমাজ তথাকথিত সনাতন ধর্মের আওতায় চতুর্বর্ণে বিভক্ত সমাজে তাঁদের উঁচু স্থান ছেড়ে দিল না। স্বভাবতই তাঁদের স্থান হয়েছে এই ধর্মের নীচু স্থানে। তাঁরা নিম্নবর্ণ হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছেন। অথচ একটু তলিয়ে দেখলে আমরা বুঝতে পারি এই ধর্ম, বর্ণ, জাত আসলে নিয়ম ও অনুশাসনের অভ্যন্তরে একটি বাহ্যিক খোলস মাত্র। বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা বলে তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষ উচ্চবর্ণের মানুষে পরিণত হয়েছেন আবার উল্টোটাও যে হয়নি তাও নয়। আসলে জাতপাত ছোঁয়াছুঁয়ির অনুশাসন যত দৃঢ় হয়েছে ততই মানুষ আরও বেশিভাবে চেয়েছে তথাকথিত নিম্নবর্ণ থেকে নিজেকে উচ্চবর্ণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। দরিদ্র অসহায় মানুষের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি ঠিকই, কিন্তু অর্থবান মানুষ তা পেরেছে। শুধু অর্থবান নয়, বারাবার এই অসাধ্য সাধন করেছে সাহসী ও শারীরীক ভাবে ক্ষমতাবান মানুষও। কূটনৈতিক বুদ্ধির সাহায্যে দৈহিক ক্ষমতার জোরে তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষ অর্থবান হয়ে ছিনিয়ে নিয়েছে উচ্চবর্ণের অধিকার। বর্ণহিন্দু ক্ষত্রিয় হয়ে রাজ্য শাসন করেছে। প্রাসঙ্গিক ভাবে চোখ রাখা যাক রামশরণ শর্মার ‘ভারতের সামন্ততন্ত্র’-এর একটি অংশে—
‘… রাজার প্রদত্ত ৫৩৩-৪ এর একটি দলিল নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে ধর্মনিরপেক্ষ গৃহস্থকে স্বাধীনভাবে ভোগ করার জন্যও ভূমিদান করা হত। এই দলিলে দেখা যায় যে পুলিন্দভট্ট নামক একজন আদিবাসী সর্দারকে রাজস্বসম্বন্ধীয় এবং প্রশাসনিক ক্ষমতাসহ দুটি গ্রামের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছিল’।১
এই ঘটনাটি গুপ্ত যুগের। এখানে উল্লিখিত রাজস্বসম্বন্ধীয় এবং প্রশাসনিক ক্ষমতালাভ প্রমাণ করে এই আদিবাসী সর্দারের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের শাসক হয়ে ওঠার বিষয়টি। বোঝা যায়, ক্ষমতা, শাসকের আস্থা অর্জন কিংবা অর্থের সাহায্যে তথাকথিত অন্যান্য নিম্নবর্ণের মতোই আদিবাসী সমাজ বর্ণহিন্দু ক্ষত্রিয় শাসকে পরিণত হয়েছে। এই পরিবর্তন আধুনিক যুগ পর্যন্ত বজায় থেকেছে। দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত বাংলা এর ব্যতিক্রম নয়। ফলে এই অঞ্চলে ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন অব্রাহ্মণ পুরোহিত। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণেই লৌকিক দেব-দেবীও ‘বর্ণহিন্দু’র ঐতিহ্যে তাঁর অব্রাহ্মণ পুরোহিত নিয়েই একাত্ম হয়েছেন। এই দিকটা খেয়াল করলে বুঝতে পারব এই অঞ্চলের সাঁওতাল, মুণ্ডা, লোধা এবং ক্রমশ হিন্দু ধর্মের ছত্রছায়ায় এসে পড়া ভূমিজ/ ভুঁইয়া সহ অন্যান্য তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষ কীভাবে বৈষ্ণব ধর্মকে গ্রহণ করেছিলেন তাঁদের লৌকিক দেব-দেবীর পূজা উপাচারে।
অতীতের কাশীপুর বর্তমানের গোপীবল্লভপুর হয়ে ওঠার আগে জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মের স্পর্শ পেয়েছে। তাই গোপীবল্লভপুর থেকে মাত্র ত্রিশ কিলোমিটার দূরে কালুয়া ষাঁড়ের থান আর থানের কূর্মাকৃতি ঢিবি বৌদ্ধ ধর্মের ধর্মদেবতার কথা মনে করিয়ে দেয়। অবশ্য আমরা জানি অনেক সময় লৌকিক দেব-দেবীকে আপন করে নিয়েছে বৌদ্ধ ধর্মের তান্ত্রিকতা। তান্ত্রিক দেব-দেবীদের সঙ্গে মিশে গেছে লৌকিক দেব-দেবী। আসলে সুদূর অতীতে ধর্ম বিস্তারের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাসকে মর্যাদা দিয়েই নিজস্ব ধর্মের নবরূপ গড়ে তুলেছিলেন তাঁরা। এর পেছনে কাজ করেছিল কূটনৈতিক বুদ্ধি। এছাড়া বলতে পারি মিলেমিশে একাত্ম হয়ে যাওয়াটাও ছিল অরণ্যময় কঠোর জীবনে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে টিকে থাকার প্রয়াস।
আমরা অতীতের দিকে তাকালে দেখব, বারবার ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে এই স্থানটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। যাঁরা তথাকথিত নিম্নবর্ণের তাঁদের সঙ্গে সহজেই একাত্ম হওয়া সম্ভবপর হয়েছে বলেই কি? হ্যাঁ, এটা অবশ্যই একটা বড়ো কারণ। বৈদিক/ ব্রাহ্মণ্য ধর্মের আগ্রাসী বিস্তার, ক্ষমতার আস্ফালন, অর্থ ও শক্তির বলে এক বর্ণ থেকে আরেক বর্ণে উত্তরণ অর্থাৎ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনের ভেতর এই অঞ্চলের অস্ট্রো-এশিয়াটিক জনগোষ্ঠীর মানুষদের থেকে যাঁরা এলেন এই বৃহত্তর ‘ধর্মের’ আওতায়, তাঁরা অচ্ছুৎ হয়েই রইলেন—পুরানো অবস্থানে ফিরতে চাইলেও ফেরা সম্ভব ছিল না। নিম্নবর্ণের আওতায় এসে ধর্মীয় অনুশাসনের ভেতর স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষগুলো মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েছিলেন। বিষয়টিকে কাজে লাগিয়েছিলেন দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত বাংলায় জৈন ও পরবর্তীতে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করতে আসা মানুষেরা। আনুমানিক নবম খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত কিন্ত এই ধারা বজায় থেকেছে।
জৈন ধর্মের দেব-দেবীরা আর লৌকিক উপাচার মিশেছে এখানকার সংস্কৃতিতে। বর্তমান গোপীবল্লভপুরের সুবর্ণরেখা নদীর তীরে হাটচালায় রয়েছে পুরানো এক শিবমন্দির৷ স্থানীয় মতানুসারে এই মন্দিরটি পাঁচশত বছরেরও বেশি পুরানো—মন্দিরটি যেহেতু রাধাগোবিন্দজীউর মন্দিরের পূর্ববর্তী, তাই তা হতেও পারে, তবে নির্মাণ সময় কালের গর্ভে বিলীন। তাছাড়া বর্তমানে প্রাচীনত্বের উপর আধুনিকতার ছাপ পড়েছে, মন্দিরের গায়ে সিমেন্ট এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে টাইলস। এই পূর্বমুখী আটচালা শিবমন্দিরের গর্ভগৃহের প্রবেশ পথের উত্তর দেয়ালে ক্লোরাইট পাথরের তৈরি প্রাচীনতম জৈন পুরাকীর্তির নিদর্শন তীর্থঙ্কর শন্তিনাথের মূর্তি রয়েছে।২
শিবমন্দিরে যেখানে শিব রয়েছেন, সেই গর্ভগৃহের বাইরে ডানদিকের দেয়ালে মিশে থাকা কালো কালো পাথরের মূর্তিটি বেশ বড়ো। ষোড়শ তীর্থঙ্কর শান্তিনাথের মূর্তিটি পদ্মের উপর দাঁড়িয়ে। পদ্মের নীচে বেদিতে রয়েছে মৃগ। গোপীবল্লভপুর অঞ্চলে জৈন মঠ-মন্দির এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে এই প্রাপ্ত মূর্তি থেকে এটা বোঝা যায় সুবর্ণরেখা নদীর দক্ষিণ তীরের এই অঞ্চল জৈন প্রভাবমুক্ত ছিল না। নদীর উত্তর তীরে রোহিনীর কাছে কিয়ারচাঁদে জৈনধর্মকেন্দ্র ছিল। সেখান থেকে বহু মূর্তি বিভিন্ন স্থানে স্থানান্তরিত হয়েছে বা নদী গর্ভ থেকে উদ্ধার হয়েছে। সে যাই হোক না কেন, এ কথা তো বলাই যায় গোপীবল্লভপুরে জৈন মঠ যদি গড়ে না উঠেও থাকে পার্শ্ববর্তী স্থানের প্রভাব নিশ্চয়ই পড়েছিল। এই প্রসঙ্গে বলতে পারি, এই অঞ্চলে রামের আধিক্যের কথা। এমনকি এখানে রাধাগোবিন্দ জীউর মন্দিরে রয়েছে আনুমানিক পাঁচ’শ/ছয়’শ বছরের পুরানো মাকড়া পাথরের তৈরি হনুমান মূর্তি। আমরা জৈন রামায়নের কথা জানি, জৈন ধর্মের বিবর্তিত রূপ কি এই অঞ্চলে রামকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল? পদ্মের উপর দাঁড়িয়ে থাকা জৈন তীর্থঙ্কর, তাছাড়া জৈন সাহিত্যে রামকে পদ্ম বলা এসবই কি পরবর্তীতে বিষ্ণু উপাসনার পথকে প্রশস্ত করেছিল? রাম ও বিষ্ণুর একাত্মতার কথা এই প্রসঙ্গে বলা যায়। তবে এর পেছনের কারণটি কিন্তু গূঢ়। যে ধর্মই এখানে প্রভাব বিস্তার করে থাকুক না কেন সবই কিন্তু লৌকিকধর্মবিশ্বাস, আচার-সংস্কারের সঙ্গে মিশে গেছে। তাই সপ্তদশ শতাব্দীতে (১৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে শ্রীপাট গোপীবল্লভপুর গড়ে ওঠে) বৈষ্ণব তীর্থস্থান গড়ে ওঠার আগেই এই অঞ্চলের প্রস্তুতি ক্ষেত্র তৈরি হয়ে গিয়েছিল।

ষোড়শ তীর্থঙ্কর শান্তিনাথের মূর্তি

শিবমন্দিরের গর্ভগৃহে শিব
এই লোকবিশ্বাসের সূত্র ধরেই আমরা চোখ রাখতে পারি সুহৃদকুমার ভৌমিকের লেখা একটি অংশে—
‘সাঁওতালদের মধ্যে ধারু ও কারুর যে-ধারণা আছে, তাহা আসিয়াছে মূলত ধর্ম ও কর্ম হইতে। উপজাতি সমাজে ধরম বা ধারু ধর্মের প্রতীক। পরবর্তীকালে এই ধর্মের ধারণা ভগবান বুদ্ধের সহিত একাকার হইয়া যায়। আর করম নিষ্কাম কর্ম বা কৃষিকর্মের প্রতীক, পরবর্তী কালে যুক্ত হইয়া যায় শ্রীকৃষ্ণের সহিত।’৩
এর থেকে বলতে পারি এই স্থানের আদি অধিবাসীদের কাছে কৃষ্ণ অত্যন্ত আপনজন। এবার আরেকটি অংশ দেখে নেওয়া যাক—
‘শ্রীকৃষ্ণের বিষয়ে বিচিত্র কাহিনী ঝাড়খণ্ডের উপজাতি তথা অসুরদের মধ্যে তৈয়ারি হইয়াছিল। শ্রীকৃষ্ণের আড়বাঁশি, উজ্জ্বল রঙিন পোশাক ও ময়ূরপালকের চূড়া এখানকার আদিবাসীদের কাছে মোটেই নূতন নহে। যাঁহারা ঝাড়খণ্ড অঞ্চলে, বিশেষ করিয়া পুরুলিয়ার মধ্য দিয়া প্রবাহিত বিস্তৃত যমুনা নদীর তীরে বাগাল বা রাখালদের দেখিয়াছেন, তাঁহারা সহজেই ইহা অনুভব করিতে পারিবেন। এক কথায় ঝাড়খণ্ডের সহিত শ্রীকৃষ্ণ বিষয়ক ধারণার সম্পর্ক গভীর। আর সেই উত্তরাধিকারসূত্রে শ্রীচৈতন্য প্রবেশ করিয়াছিলেন ঝারিখণ্ডে। এই সত্য উপলব্ধি করিয়াই বহু পূর্বে চূড়ামণি দাস গৌরাঙ্গবিজয় কাব্যে এই বিষয়ে আভাস দিয়া গিয়াছেন।’৪
মনে হয় ঠিক সেকারণেই এই দক্ষিন-পশ্চিম সীমান্ত বাংলার বেশীরভাগ লোকদেব-দেবীদের কাহিনির সঙ্গে বাগাল (রাখাল)-এর যোগ পাওয়া যায়। এই অঞ্চলের মানুষদের সঙ্গে কৃষ্ণের একাত্মতা এবং পরবর্তীতে চৈতন্য প্রবর্তিত বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাব বিস্তারের একটা দিক আমরা দেখতে পাচ্ছি। তবে শুধু এটাই একমাত্র ব্যাপার নয়। কাশীপুরের গুপ্ত বৃন্দাবন শ্রীপাট গোপীবল্লভপুর হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সামাজিক, আর্থ-রাজনৈতিক কারণও বড়ো হয়ে উঠেছিল।
এই অঞ্চলের মুণ্ডা, সাঁওতাল, লোধা, ভূমিজ মানুষেরা অরণ্য জীবনে শিকার এবং কৃষিভিত্তিক জীবন নিয়ে নিজেদের মতো ছিলেন। তাঁদের লোকদেবতার থানে কৃষির উৎসব দেখতে পাওয়া যায়। সে দেবী মনসাকে কেন্দ্র করে হওয়া ‘ডাক সংক্রান্তি’ই হোক কিংবা গ্রামদেবী বড়ামবুড়ির থানে মকর (নবান্ন) উৎসর্গ করাই হোক—এসব কিছুর মধ্যে শিকারের সঙ্গে কৃষির একাত্মীকরণ চিহ্নিত হচ্ছিল। আসলে লৌকিক দেব-দেবী বহন করছেন আমাদের আদিম ঐতিহ্যকে। আবার এই দেব-দেবীদের স্বরূপ বিশ্লেষণে শিকার জীবন থেকে পশু পালনকারী জীবন আর পরবর্তীতে কৃষিজীবনের ক্রমবিবর্তনের ছাপটিকেও অনুধাবন করা যায়। এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়েও বলা যায় লোকদেব-দেবীদের ‘থানে’ পশুবলি এক পবিত্র উৎসব, যা আদিম অবস্থানের পরম্পরাকে চিহ্নিত করে। অপরদিকে কৃষিজীবনের ছাপ বহন করে চলেছে লৌকিক দেব-দেবীদের থানে মকর সংক্রান্তি বা তার পরেরদিন হওয়া বিশেষ পুজো।
যাইহোক বলিপ্রথা ভয়াবহতার নির্দশণ। নরবলি যে হতো না তাও নয়। দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলের দেবী রঙ্কিণীর তো প্রতিদিন একটি করে পুরুষ নৈবেদ্যের প্রয়োজন ছিল (এই দেবী প্রসঙ্গে আরব্য রজনীর কাহিনি মনে পড়ে যায়)। এরই মধ্যে ক্ষমতার আগ্রাসন, রাজত্ব বৃদ্ধি ছিল। ধর্মীয় অনুশাসনের বাড়াবাড়ি ছিল। একটা বিস্তীর্ণ অঞ্চল, ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে যা গুরুত্বপূর্ণ স্বভাবতই রাজনৈতিক পালাবদলের ক্ষেত্রে তার আলাদা গুরুত্ব থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
এই অঞ্চলের ভয়াবহতার মধ্যে প্রকৃতির একাত্মতা আছে। আরণ্যক জীবনে ধামসা মাদলের তালে প্রেম উপজীব্য। ফুলের ‘পরব’ বাহা সাঁওতালদের ফুলের উৎসব। বাহা শব্দের অর্থই হল ফুল। এই উৎসবটি ইংরেজি ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে হয়। অবশ্য এই উৎসবের সঙ্গে রোগমুক্তির কামনা রয়েছে; তবে আনন্দ আর শান্তি বিলিয়ে দেওয়াও এর উদ্দেশ্য। ফুল যে ভালোবাসারই প্রতীক; দোল উৎসবও কিন্তু ফুলের রঙে রঙিন হওয়ার উৎসব।
রং আরণ্যক জীবনে মিশে থাকেই বলে গোপীবল্লভপুরের রাধারানি আর গোবিন্দ আজও প্রতিদিন এক এক রঙের পোশাক পরেন, সেই রঙের ব্যঞ্জনা নিয়ে। বাহা পরবে মেতে থাকা মানুষগুলো ভালোবাসার দোল উৎসবের দেবতা কৃষ্ণকে আপন করবেন এটাই তো স্বাভাবিক।
শ্যামানন্দী বৈষ্ণবধর্ম
ফিরে যাই অতীতে। চৈতন্যদেব এই অঞ্চলে প্রেমনাম বিতরণ করতে চেয়েছিলেন। তবে চৈতন্যদেবের মৃতুর পরে চৈতন্য প্রবর্তিত বৈষ্ণব ধর্মেও আবার ব্রাহ্মণ্য অনুশাসন প্রবল হয়ে উঠেছিল। ধর্মীয় অনুশাসনের ভয়াবহতার ভেতর দাঁড়িয়ে চৈতন্য প্রবর্তিত যে ধর্ম জাত-পাত ছোঁয়াছুঁয়ির বিরুদ্ধে বলেছিল, সবার মধ্যে কৃষ্ণপ্রেম ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিল, সেই ধর্মই নিজস্ব বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের ভেতর জন্মগত বর্ণভেদ স্থাপন করল।
চৈতন্যদেবের তিরোধান হয় ১৫৩৪-এ। তাঁর মৃত্যুর পরেই বৈষ্ণবদের মধ্যেও জন্মসূত্রে ব্রাহ্মণদের ভেতর ব্রাহ্মণত্বের প্রভুত্ববোধ প্রবল হয়ে ওঠে। বৈষ্ণব ধর্মের রাধাকৃষ্ণের প্রেম সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা বলেছিল কিন্তু সেই ধর্মের ভেতর এই অবক্ষয় চৈতন্যদেবের অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ঝাড়খণ্ড, দক্ষিন-পশ্চিম সীমান্ত বাংলার অঞ্চলে চৈতন্যদেবের তিরোধানের পরে শ্রীজীব গোস্বামীর শিষ্য শ্রীনিবাস, নরোত্তম ঠাকুর এবং শ্যামানন্দ গোস্বামীরা বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। বৈষ্ণবীয় ব্রাহ্মণদের জাতপাতের অহংকার এইসব মানুষদের মধ্যে ছিল না। এই সময় গোপীবল্লভপুরে বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে তাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন শ্যামানন্দ প্রভু।
শ্যামানন্দ ছিলেন অব্রাহ্মণ সদগোপ। সেইসময়ে উড়িষ্যার অন্তর্গত বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরের কাছে ধারান্দা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। স্বভাবতই ব্রাহ্মণ্যত্বের অহংকারকে যেমন তিনি পছন্দ করতেন না, তেমনই শ্যামানন্দ অব্রাহ্মণ হওয়ায় বৈষ্ণবীয় ব্রাহ্মণরা শ্যামানন্দকে পছন্দ করতেন না। ফলে শ্যামানন্দী সম্প্রদায়ের মধ্যেও ব্রাহ্মণ বিরোধী মনোভাব গড়ে উঠেছিল। তবে শ্যামানন্দ ছিলেন যথেষ্ট প্রভাবশালী। একদিকে প্রভাবশালী, অপরদিকে অব্রাহ্মণ—ফলে মেদিনীপুর, সিংভূম, ময়ুরভঞ্জ প্রভৃতি অঞ্চলের আদিবাসীদের শ্যামানন্দ প্রভু সহজেই কাছে টেনে নিতে পেরেছিলেন। বিশেষত এই অঞ্চলে ব্রাহ্মণ্য অনুশাসনের আওতায় এসে পড়া তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষেরা শ্যামানন্দী বৈষ্ণবীয় ধর্মের ভেতর নিজেদের সমর্পণ করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে সহযোগী ছিলেন শ্রীলরসিকানন্দ প্রভু। তিনি ছিলেন প্রভু শ্যামানন্দের প্রধান শিষ্য। ১৬৩০ খ্রিস্টাব্দে কাশীপুর শ্রীপাট গোপীবল্লভপুরে পরিণত হয়। এই সময় এখানে রাধাগোবিন্দজীউর বিগ্রহের জন্যে মন্দির স্থাপিত হয়।৫
শ্যামানন্দী সম্প্রদায়ের সঙ্গে রাধার যোগ বেশি। বর্তমান সময়ের পূজারী রামযাদব গোস্বামী এই সম্পর্কিত প্রচলিত কাহিনি শোনালেন। আর এই একই কথাই আমরা অবশ্য জানতে পারি বিষ্ণুপদ দাসের লেখা থেকেও।
কী সেই কাহিনি? দেখে নেওয়া যাক—
সেই সুদূর অতীতে বৃন্দাবনে শ্রীজীব গোস্বামীর কাছে অধ্যয়ন করছিলেন শ্যামানন্দ প্রভু। তখনও তাঁর নাম দুঃখী কৃষ্ণদাস। একদিন ঝাড়ু দেওয়ার সময় কুড়িয়ে পেলেন সোনার নূপুর। গোলক বৈকুন্ঠ থেকে রাধারানি ললিতাসখিকে পাঠালেন, তিনি এসে বললেন, ‘বৌমার নূপুর পড়ে গেছে তা ফেরত দাও।’ শ্যামানন্দ নিজে পরিয়ে দিতে চাইলেন। তা তো আর সহজ কাজ নয়। রাধাকুণ্ডে স্নান করে, রাধামন্ত্র জপ করে তিনি নারীরূপ পেলেন সেই সময়টুকুর জন্যে। নাম হলো কনকমঞ্জুরী। এই রূপে বৈকুন্ঠে গিয়ে রাধাদেবীকে নূপুর পরিয়ে দিলেন। এরপর দুঃখী কৃষ্ণদাস শ্যামার আনন্দরূপে শ্যামানন্দ নাম পেলেন। তাঁর কপালে রাধার পদচিহ্ন মধ্যে নূপুরবিন্দু সমন্বিত তিলক চিহ্ন অঙ্কিত হল। শ্যামানন্দের গুরু শ্রীহৃদয় চৈতন্য যখন শুনলেন তাঁর শিষ্য তাঁর দেওয়া তিলক মুছে ফেলেছেন এবং নতুন তিলক ধারণ করেছেন, তখন তিনিরেগে গেলেন। বৃন্দাবনে এসে শ্যামানন্দের কপাল থেকে নতুন তিলক মুছে দিতে চাইলেন। যত মুছতে যান তত নির্গত হয় আগুনের ঝলক। অবশেষে দৈববাণী হল, স্বয়ং রাধারানি দিয়েছেন যে তিলক তা মোছে কার সাধ্য! ভুল বুঝতে পারলেন শ্রীহৃদয় চৈতন্য। দেবী রাধা তাঁকে মহোৎসব করার দণ্ড দিলেন। শ্যামানন্দ গুরুর দণ্ড নিজেই গ্রহণ করলেন। শুরু হলো ‘দণ্ড মহোৎসব’। জৈষ্ঠ্যমাসের শুক্লা পঞ্চমীতে শুরু হয়ে এই মহোৎসব শেষ হয় দ্বাদশদিন পরে পূর্ণিমাতে। এই বারোদিন ধরে সাধু-সন্ন্যাসী, বৈষ্ণবদের সেবা ও সাধারণ মানুষসহ সবাইকে অন্নভোগ খাওয়ানো হয়।
এবার আসা যাক, এই অলৌকিক গল্পের আড়ালে থাকা লৌকিক কথায়। শ্যামানন্দের রাধাতিলক পরা শ্যামানন্দী সম্প্রদায়ের আলাদা হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা মাত্র। শ্রীহৃদয় চৈতন্যের থেকে বাধা পাওয়া এবং জয়লাভ করা আদপে অব্রাহ্মণ বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের প্রভাব বৃদ্ধির সূচনা ছাড়া আর কী হতে পারে।
লৌকিক কাহিনি অনুযায়ী গোপীবল্লভপুরের লৌকিক দেবী রঙ্কিণীও কিন্তু রাধারূপেই শ্যামানন্দ প্রভুর কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছেন। তিনি শ্যামানন্দপ্রভুর সঙ্গে প্রেমের দীক্ষা নিয়ে সেদিনের কাশীপুরে এসেছিলেন। বৈষ্ণবীরূপে প্রতিষ্ঠিতা হয়েছিলেন। তিনি এখানে সেবিকাও। কথিত আছে বহুযুগ আগে, কোনো বিশেষ পুজোর সময় (রাধাগোবিন্দজীউর?) রঙ্কিনীমায়ের কাছে রাতের বেলা রেখে আসা শালপাতা আর খাচী (কাঠি) দিয়ে মা নিজেই তৈরি করে রাখতেন পুজোর জন্যে প্রয়োজনীয় শালপাতার ঠোঙা।
মনে রাখতে হবে রাধা আর লক্ষ্মী কিন্তু একাত্ম হয়েছেন লৌকিক চেতনায়। সে কারণেই দক্ষিন-পশ্চিম সীমান্ত বাংলায় শিকারের সঙ্গে কৃষিকে আপন করে নেওয়া আদিঅধিবাসীদের কাছে শসনদেবী লক্ষ্মীর প্রতিভূ রাধার গ্রহণযোগ্যতা বেশি। দোল, জন্মাষ্টমী সহ বিভিন্ন উৎসবের সঙ্গে এখানে পালিত হয় রাধাষ্টমী।
রাধগোবিন্দের ভোগ ও আঞ্চলিকতার প্রভাব
এই গোপীবল্লভপুরের রাধাগোবিন্দ জীউর মন্দিরের রাধগোবিন্দের ভোগের ক্ষেত্রেও রয়েছে আঞ্চলিকতার ছাপ। বৈশাখ জৈষ্ঠ্য মাসে রাধাগোবিন্দকে অন্যান্য ভোগের সঙ্গে পাখাল (পান্তা ভাত) নিবেদন করা হয়। এই পান্তা ভাত কীভাবে তৈরি করা হয় জানালেন পূজারী। আতপ চালের অন্ন, দই, জিরে গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো ও আদাবাটা সহযোগে এই বিশেষ পান্তা ভাত প্রস্তুত করা হয়। শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল এও যেন এক সাধারণ জনগণের সঙ্গে এক হওয়ার উপায়। ঈশ্বর-ঈশ্বরীকে নিবেদিত ভোগে, শ্রমজীবী মানুষের পাখাল বা পান্তা যেন বুঝিয়ে দিয়ে যাচ্ছে এই ধর্ম তাঁদের। ঠিক একই ভাবে শীতকালে চিতই পিঠার সঙ্গে সাধারণ মানুষের গুড় পিঠে বা আসকে পিঠে ও মহাপিঠা গ্রহণ করেন রাধাগোবিন্দজীউ। পৌষ ও মাঘ মাসে অন্ন ভোগের সঙ্গে গ্রহণ করেন খিচুড়ি ভোগ। রাধাগোবিন্দজীউর একটি বিশেষ মিষ্টান্ন ভোগ আছে, মগধ আর মিহিদানা সহযোগে এই মিষ্টান্ন তৈরি করা হয়। এইসব ভোগের কথা শুনতে শুনতে আবারও বুঝতে পারছিলাম ধর্ম প্রচার যখন একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে ধর্ম বিপ্লবের রূপ নেয়, তখন রাজনীতির প্রয়োজন হয়ে পড়ে বৈকি। ঠিক সেকারণেই রসিকানন্দ প্রভু ১৬৩০খ্রিষ্টাব্দে যখন শ্রীপাট গোপীবল্লভপুর গড়ে তুলছিলেন তখন দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত বাংলার আদিবাসী জনগণের খাদ্য থেকে দেব-দেবীদের নিয়ে এসেছিলেন নব বৈষ্ণব ধর্মের আওতায়।
বিষ্ণুপদ দাসের লেখা থেকে জানতে পারি—
‘শ্রীচৈতন্যের তিরোধানের পরবর্তী প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে ব্রাহ্মণ বংশীয় নবদ্বীপ গোস্বামীগণ নব-বৈষ্ণব ধর্মের গুরুরূপে একচেটিয়া অধিকার দাবী করতেন। তাঁরা শ্রীচৈতন্য, অদ্বৈতাচার্য, নিত্যানন্দ প্রমুখ নব-বৈষ্ণব আন্দোলনের নেতৃবর্গের পরিবারের সঙ্গে আত্মীয়তার সূত্রে যুক্ত ছিলেন বলে সহজেই এই ধর্মের গুরু বলে স্বীকৃত হয়েছিলেন। শ্রীবৃন্দাবনের ষড়গোস্বামীদের অন্যতম গোপালভট্টের হরিভক্তিবিলাস গ্রন্থে একমাত্র ব্রাহ্মণের গুরুপদে অধিষ্ঠিত হওয়ার অধিকারের কথা বলা হয়েছিল। নরোত্তম ঠাকুর এবং শ্রীল শ্যামানন্দের নিজ নিজ সম্প্রদায়ের গুরুপদে অধিষ্ঠানকে এই বিধানের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ বলা যায়।’৬
বিত্ত-বৈভব ও ধর্ম
আগেই বলেছি, শ্যামানন্দ প্রভু ছিলেন জাতিতে সদগোপ অর্থাৎ অব্রাহ্মণ। তাঁর শিষ্য শ্রীপাট গোপীবল্লভপুরের এবং রাধাগোবিন্দ জীউর মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম মহান্ত রসিকানন্দ প্রভুও ছিলেন জাতিতে করণ, অব্রাহ্মণ। স্বভাবতই এই ধর্মের ভেতর চৈতন্যের আদর্শকে বজায় রেখে এই বৃহত্তর ধর্ম প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা খুব একটা সহজ কাজ ছিল না। তবে এক্ষেত্রে আরও একটা দিক মনে রাখা দরকার রসিকানন্দ প্রভু ছিলেন রোহিনীর জমিদার অচ্যুতানন্দ পট্টনায়েকের পুত্র। শ্রীগোপীজনবল্লভদাসের লেখা শ্রীশ্রীরসিকমঙ্গল কাব্যে অচ্যুতানন্দ পট্টনায়কের বিত্ত-বৈভবের সম্পর্কে জানা যায়। ফলে ক্ষমতার সঙ্গে তাঁর অর্থের জোরও ছিল।
ময়ুরভঞ্জের রাজার সঙ্গে সুসম্পর্ক শুধু নয় আজও গোপীবল্লভপুরের মহান্তদের বংশপরম্পরায় গুরুবংশরূপে সম্মান দিয়ে থাকেন উড়িষ্যার রাজপরিবার। উড়িষ্যার নবাব, মুঘল সরকারের কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক শাসককর্তাদের কাছ থেকে সনন্দ এবং পরোয়ানা সহ নানা ধরণের সুযোগ সুবিধে পেয়েছিলেন তাঁরা। ৭
পরবর্তীতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গেও মহান্ত পরিবারের সুসম্পর্ক ছিল। বর্তমান ষোড়শ গাদীশ্বর মহান্ত কৃষ্ণকেশবানন্দ দেবগোস্বামী প্রভু জানান মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে প্রতি বছর উপঢৌকন বা সেলামি আসত, ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা জানিয়ে যাতে সুরক্ষিত ও সমৃদ্ধশালী থাকে মুঘল সাম্রাজ্য। তিনি বলেন, শ্রীপাট গোপীবল্লভপুরের শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দজীউর জমি ছিল প্রায় পঁচিশ হাজার একর মতো।
শ্যামানন্দ প্রভু এবং রসিকানন্দ প্রভুর এইভাবে প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করা সম্ভবপর হয়েছিল সাধারণ মানুষের তাঁদের প্রতি ভক্তির জন্য এবং নব-বৈষ্ণব ধর্মের আওতায় এসে তাঁদের পাশে থাকার জন্য।
রাধাগোবিন্দ জীউর মন্দির
১৬৩০ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হওয়া রাধাগোবিন্দ জীউর মন্দিরটি গড়ে ওঠে ওড়িশা রীতিতে। কাশীপুরের নাম রসিকানন্দ প্রভু তাঁর গৃহদেবতা গোপীবল্লভের নাম অনুসারে রাখেন গোপীবল্লভপুর। একশ বছর আগে পুরানো মন্দিরটি পুনরায় নতুন করে গড়া হয়েছে। তারাপদ সাঁতরার মতে মন্দিরটি অষ্টাদশ শতকে নির্মিত হয়েছে। এই মন্দিরটি একরত্ন, পূর্বমুখী। মন্দিরের প্রবেশ দ্বারের তোরণের উপরে পঞ্চরত্ন মন্দিরের মতো নহবতখানা রয়েছে। এছাড়া প্রবেশ দ্বারের পার্শ্বে উপরের দিকে রয়েছে কন্ঠে মুণ্ডমালা সমন্বিত কালী মূর্তি। রাধাগোবিন্দের মন্দিরের কালী মুর্তিটি কিন্তু বৌদ্ধ তান্ত্রিকতার কথা মনে করিয়ে দেয়। মন্দিরের দেওয়ালে রয়েছে বিষ্ণু, বরাহ, নৃসিংহ এবং নবগ্রহ ফলক। এখানে বিষ্ণুর ত্রিবিক্রম অবতারের মূর্তিও দেখতে পাচ্ছি। শিব দুর্গার যুগ্ম মূর্তিও রয়েছে। এই মন্দির গাত্রে মনসা মূর্তিও রয়েছে। অবশ্য আমি মনসা মূর্তি চিনতে পারিনি। কেননা বেশীরভাগ মূর্তিই সাদা রং করার ফলে এবং প্রাচীনত্ত্বের কারণে বোঝা যাচ্ছিল না। তারাপদ সাঁতরার লেখা থেকে এই মনসা মূর্তির কথা জানতে পারি।
মনসা দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত বাংলার আদি অধিবাসীদের কাছে কিন্তু শুধু সাপের দেবী নন। তিনি দেবী জগৎগৌরী—শস্যের দেবী। কৃষিজীবি মানুষের তিনি পরম আরাধ্যা। রাধাগোবিন্দ জীউর মন্দিরে দেবী মনসার উপস্থিতি আদি অধিবাসীদের আপন করে নেওয়ার আরও এক প্রচেষ্টা।

মন্দিরের বাইরের দেয়ালের কালীমূর্তি
এই মন্দিরের ভেতর প্রাঙ্গনে রয়েছে বহু শত বছরের প্রাচীন মন্দিরের দ্বার। তার গায়ে রয়েছে ক্ষয়প্রাপ্ত সম্ভবত সিংহবাহিনী এক দেবী মূর্তি। এছাড়াও প্রাচীন কিছু কারুকাজ চোখে পড়ে। কী ছিল এখানে? কোনো মন্দিরই তো? সেই উত্তর লুকিয়ে আছে অতীতের পাতায়।

সম্ভবত সিংহবাহিনী এক দেবী মূর্তি

বহু শত বছরের প্রাচীন মন্দিরের দ্বার?
রাধাগোবিন্দজীউর মন্দিরের ভেতরে থাকা আগে উল্লিখিত সম্ভবত পাঁচ-ছয়শ বছরের পুরানো মাকড়া পাথরের তৈরি হনুমান মূর্তিটি ছাড়াও রয়েছে সম্ভবত পাঁচ-ছয়শ বছরের পুরানো মাকড়া পাথরের একটি গনেশ মূর্তি।
মন্দিরের ভেতর চাতালে একটি মাটিতে গাঁথা ছোটো কামান রয়েছে। এই কামান মন্দিরের প্রয়োজনে রয়েছে এটা বিশ্বাস করা সম্ভব নয়। তবে এই কামানের পেছনে কি লুকিয়ে রয়েছে অন্য কোনো ইতিহাস? যদিও বর্তমান পূজারী জানালেন এই কামানে বারুদ দিয়ে আওয়াজ করা হয় সন্ধ্যা আরতির সময়।

কামান
মন্দিরের বাইরের চাতালে রয়েছে তুলসী মঞ্চ। তাঁর গায়ে দুটি মূর্তি রয়েছে। এছাড়াও পাশেই রয়েছে রাসমঞ্চ, দোলমঞ্চ।
আরও একটি বহু প্রাচীন গনেশ মূর্তি দেখেছি মহান্তদের সমাধি ক্ষেত্রে যাওয়ার রাস্তায় গাছ তলায়।
অধিকারী বনাম রুদালী
এবারে আসি এক অদ্ভুত প্রথার কথায়। শ্রীগোপীজনবল্লভদাস, যিনি শ্রীশ্রীরসিকামঙ্গল লিখেছিলেন, তিনিও ছিলেন শ্যামানন্দ প্রভুর আদি বাসস্থান খড়্গপুরের কাছে ধারেন্দা গ্রামের বাসিন্দা। জাতিতে সদগোপ এই মানুষটি ছিলেন রসিকানন্দ প্রভুর সতীর্থ। রসিকানন্দের সঙ্গেই গোপীবল্লভপুরে আসেন। তাঁর বংশধরেরা মন্দিরের ‘টহলিয়া’ বা সহায়করূপে সেবার অধিকার পান। তাঁদের উপাধি হয় ‘অধিকারী’। এতটা অব্দি বোঝা গেল কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে যে, মহান্ত পরিবারে কারুর মৃত্যু হলে তাঁদের হয়ে অশৌচ পালন করেন এই ‘অধিকারী’রাই। এমনকি আপনজনের মৃতদেহ স্পর্শ করেন না মহান্ত পরিবারের কেউ। এই ব্যাপারটার সঙ্গে কেমন যেন রুদালীর মিল রয়েছে না? কাঁদার জন্যে লোক ভাড়ার করার মতো আপনজনের অশৌচ পালন করছেন অন্য পরিবারের অন্য কেউ! শুধু তাই নয়, মহান্ত পরিবারে বিবাহের নিয়মও ওঁদের হয়ে পালন করেন এই অধিকারীরাই।
বর্তমান অধিকারী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করি। দিলীপ অধিকারী জানান, আজ প্রায় সাড়ে তিনশ বছর ধরে এই নিয়ম চলে আসছে। তিনি বলেন, অশৌচ পালন করলে মহান্ত বাড়ির কেউ ঠাকুর দালানে যেতে পারবেন না বলেই, তাঁরা নিয়ম মানেন না, মৃতদেহ স্পর্শ করেন না। দশদিনের ঘাট কাজের দিন অধিকারী বাড়ির যিনি অগ্নিকর্তা তাঁর সঙ্গে ঘাটে যান মহান্ত পরিবারের মানুষেরা। এরপর লোক খাওয়ানো বা অন্যান্য কাজগুলো করেন। সময়ের নিয়মে অতীতের মতো জনসংখ্যা বৃদ্ধি কমেছে, বর্তমানে তাঁদের বংশে দুজন উত্তর পুরুষ আছেন। প্রায় সাড়ে তিনশ বছরেরও বেশি এই প্রথা ভবিষ্যতে পালন করার মতো আর কেউ থাকবে কি না জানা নেই।
তিনি বলছিলেন, রাধাগোবিন্দজীউর মন্দিরের সব কাজের অধিকারী বলেই তাঁরা ‘অধিকারী’ পদবী পেয়েছেন।
মৃত্যুর ক্ষেত্রে ঠাকুরদালানে যেতে পারবেন না বা পুজোর কাজে ব্যাঘাত ঘটবে এটা মেনে নিলেও বিবাহের ক্ষেত্রে তো এ কথা খাটে না।
কেন এই নিয়ম?
জমিদার থেকে মহান্ত বা ধর্মীয় মহাপ্রভু হয়ে ওঠার পরেও এরই ভেতর কি সুপ্ত থেকে গেছে শত শত বছরের অতীত কোনো রাজাচার? না কি ঘটেছিল অন্য কোনো ঘটনা যার জন্যে অধিকারী বংশের উপর বর্তে ছিল এই বড়ো দায়িত্ব? আজ আর জানার উপায় নেই। এমনকি বর্তমান অধিকারীরা শ্রীশ্রী গোপীজনবল্লভদাসের নামও জানেন না। অতীত এখানে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে নদীর পাড়ে ওড়িশা রীতিতে তৈরি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সমাধিগুলোর মতোই।

সমাধি
শেষের কথা
এই শ্যামানন্দী বৈষ্ণব ধর্ম একদিন এই অঞ্চলের মুণ্ডা, সাঁওতাল লোধা ভূমিজ/ভূঁইয়াদের বৈষ্ণবীয় ধর্মের ছত্রছায়ায় এনেছিল। সুবর্ণরেখা নদীতে মুণ্ডা সাঁওতালদের বাৎসরিক শ্রাদ্ধ, যাকে তাঁরা দামোদর বলেন, সেই কাজ করতে যাওয়ার আগে তাঁরা একদিন এই ঠাকুরবাড়ি অর্থাৎ রাধাগোবিন্দ জীউর মন্দিরে প্রণাম করে যেতেন। দিয়ে যেতেন ভেট। তাঁদের ‘ঠাকুরবাড়ি গঙ্গা সিনান হরিবোল হরিবোল’ আওয়াজে ধ্বনিত হতো চারিদিক। আদি প্রেমের সঙ্গে যে বৈষ্ণবীয় প্রেমের রং এসে মিশেছিল সেদিন, সেই অহিংসার প্রেমমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে তাঁদের দেব–দেবীর থান নিরামিষ নৈবেদ্যে আর ভালোবাসার আনন্দে পরিপূর্ণ হয়েছিল। দক্ষিণ–পশ্চিম সীমান্ত বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে রাজা আর জমিদাররাও ভয়াবহ বলিপ্রথা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলেন নব-বৈষ্ণব ধর্মের আওতায় এসে।
গোপীবল্লভপুরের এই মন্দিরে যারা পুজো করেন তাঁরা মহান্তের কাছে দীক্ষা নিলেও জন্মসুত্রে উত্তর প্রদেশের ব্রাহ্মণ (তাঁদের আদি পদবী দুবে, বর্তমানে গোস্বামী), তবুও অব্রাহ্মণ শ্যামানন্দী সম্প্রদায় দূর করেছিলেন জাতপাত, ধর্ম-বর্ণের অনুশাসন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কালের নিয়মে প্রভুত্ব এবং উচ্চবিত্ত-নিম্নবিত্তের তকমা নিয়ে একসময় এখানেও এই বৈষ্ণবধর্ম মানুষের থেকে বড়ো হয়ে উঠেছে। এসেছে ধর্মীয় অনুশাসন। স্বভাবতই, সাধারণ মানুষ সামাজিক নিয়মেই আবার সরেছে এই নির্দিষ্ট ধর্মীয় অনুশাসনের আওতা থেকে দূরে। বিবর্তিত সমাজ বৈষ্ণবীয় ধর্মের অবক্ষয়কে প্রত্যক্ষ করেছে। রুজি আর রোজগারের প্রয়োজনে সামাজিক জীবনচর্যার দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং পরবর্তীতে নকশাল আন্দোলন এখানকার আদিবাসী মানুষদের জীবন সম্পর্কে নতুন ভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। আবার আরেকদিকে দারিদ্র্য এবং আধুনিক সমাজের বঞ্চনা তাঁদের নিজেদের আদি ধর্মবিশ্বাসের বলি প্রথার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। শুধু মুণ্ডা, সাঁওতাল, লোধা, ভূমিজ/ভুঁইয়ারাই নন, এই অঞ্চলের তথাকথিত বর্ণহিন্দুরাও অব্রাহ্মণ পুরোহিতের হাত ধরেই ফিরেছেন মানতের নামে ভয়াবহ বলিপ্রথার কাছে।
গোপীবল্লভপুরে আজও গ্রামদেবী বড়ামবুড়ি, দেবী রঙ্কিণী কিংবা দেবী মনসা বৈষ্ণবী, গ্রহণ করেন নিরামিষ নৈবেদ্য কিন্তু মাত্র ত্রিশ/বত্রিশ কিলোমিটার দূরে কালুয়া ষাঁড়ের থানে মঙ্গল শনিবার মানতের বলির আর্ত চিত্কারে কেঁপে উঠতে হয়। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন থানে বিশেষ পুজোয়, উৎসবে নিরীহ প্রাণীর হাহাকার ধ্বনিত হয়। নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি বড়ো হয়ে ওঠে মানতের হাত ধরে। লৌকিক দেব-দেবীর কাছে মদ আর মাংসের নৈবেদ্য দানের মধ্য দিয়ে তাঁরা আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন আদি প্রথার কাছে। শুধু সুবর্ণরেখা নদী লিখে রেখেছে চৈতন্য প্রবর্তিত অহিংসার প্রেমময় বাণী, শ্যামানন্দ আর রসিকানন্দ প্রভুর জাতপাত আর বলির হিংসা দূর করার বৈষ্ণবীয় লড়াইয়ের কথকতা।
প্রচ্ছদ চিত্র পরিচিতি: রাধাগোবিন্দজীউর মন্দির (গোপীবল্লভপুর)
তথ্যসূত্র
১) রামশরণ শর্মা, ভারতের সামন্ততন্ত্র, কে পি বাগচী অ্যাণ্ড কোম্পানী, দ্বিতীয় মুদ্রণ, ১৩ (২০১৯)
২) তারাপদ সাঁতরা রচনা সংগ্রহ, তৃতীয় খণ্ড, রাঢ় প্রকাশন, ৪৭৪-৪৭৫ (২০২৩)
৩) সুহৃদকুমার ভৌমিক, ঝাড়খণ্ডে মহাপ্রভু, মনফকিরা পরিমার্জিত সংস্করণ, ২৭ (২০১৪)
৪) সুহৃদকুমার ভৌমিক, ২১
৫) বিষ্ণুপদ দাস, মেদিনীপুরঃ ইতিহাস ও সংস্কৃতির বিবর্তন, দ্বিতীয় খণ্ড, শ্রীচৈতন্যোত্তর বৈষ্ণব ধর্ম ও শ্রীপাট গোপীবল্লভপুর, সাহিত্যলোক ১৬২ (১৯৯৮)
৬) বিষ্ণুপদ দাস, ৩৭২
৭) বিষ্ণুপদ দাস, ৩৮৫
সহায়ক গ্রন্থাবলী
১) সুধীরকুমার করণ, সীমান্তবাংলার লোকযান, আশাদীপ (২০১৩)
২) মেদিনীপুরঃইতিহাস ও সংস্কৃতির বিবর্তন, ষষ্ঠ খণ্ড, সাহিত্যলোক, (২০১৪)
৩) বঙ্গের ভূপ্রকৃতি ও জৈনধর্ম, সংকলন, সম্পাদনা ও টীকা দীপঙ্কর পাড়ুই, খড়ি, (২০২২)
৪) ড শ্রীবিনয়তোষ ভট্টাচার্য, বৌদ্ধদের দেব-দেবী, ড রমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও ড সুমনপাল ভিক্ষু সম্পাদিত, মহাবোধি বুক এজেন্সি, রিপ্রিন্ট (২০১৫)
৫) রমাকান্ত চক্রবর্তী, বাঙালির ধর্ম সমাজ ও সংস্কৃতি, সুবর্ণরেখা (২০০২)
৬) রমাকান্ত চক্রবর্তী, বঙ্গে বৈষ্ণব ধর্ম, আনন্দ, অষ্টম মুদ্রণ (২০২২)
৭) ড ক্ষুদিরাম দাস, বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ, দে’জ পাবলিশিং, পুনর্মুদ্রণ (২০২২)
৮) বঙ্কিমচন্দ্র মাইতি, দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত বাংলার লোকায়ত সংস্কৃতি, অরিন্দম’স প্রকাশনী, দ্বিতীয় প্রকাশ (২০২৪)
৯) সুব্রতকুমার মুখোপাধ্যায়, সুশীলকুমার বর্মণ, ঝাড়গ্রাম জেলা প্রত্ন-পরিক্রমা, মনফকিরা, দ্বিতীয় মুদ্রণ (২০২১)
১০) বাংলার লোকসংস্কৃতির বিশ্বকোষ, সম্পাদক ড দুলাল চৌধুরী, আকাদেমি অব ফোকলোর, (২০০৪)
১১) মধুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাগিতিহাস-ভারতবর্ষে পরিযান ও জাতিগোষ্ঠী গঠন, গাঙচিল, (২০২১)
কৃতজ্ঞতা স্বীকার
সোমা রাউৎ ও সোমা সাহু (অধ্যাপক সুবর্ণরেখা মহাবিদ্যালয়, গোপীবল্লভপুর)
গোবিন্দ গোস্বামী (ছাত্র সুবর্ণরেখা মহাবিদ্যালয়, গোপীবল্লভপুর)
অসাধারণ লেখা। লেখনীর প্রতিটি ছত্রে ছত্রে ক্ষুরধার যুক্তি। ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতির এক অভিনব তথ্য সমৃদ্ধ আলোচনা। আগামীর সুধী পাঠক ও গবেষকদের গবেষণা কার্যে অনুপ্রেরণা যোগাবে। খুব খুব ভালো লাগলো। এগিয়ে চলো। আগামীর অনুসন্ধানে।
অসাধারণ লেখা। লেখনীর প্রতিটি ছত্রে ছত্রে ক্ষুরধার যুক্তি। ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতির এক অভিনব তথ্য সমৃদ্ধ আলোচনা। আগামীর সুধী পাঠক ও গবেষকদের গবেষণা কার্যে অনুপ্রেরণা যোগাবে। খুব খুব ভালো লাগলো। এগিয়ে চলো। আগামীর অনুসন্ধানে।
অসাধারণ লেগেছে, খুব সহজ সরল ভাষায় ইতিহাসকে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরা হয়েছে যা পরবর্তি প্রজন্মকে আমদাদের সংস্কৃতি ও ইতিহাস কে জানতে সাহায্য করবে l
গোপীবল্লভপুরের উৎকৃষ্ট, মিশ্র-সংস্কৃতির হাত ধরে ধর্মীয় দর্শন, অধ্যাত্মিকবোধ ও ধর্মাচরণে সিক্ত সমাজচেতনার ধারাকে চেনা যায় এই প্রবন্ধে। গবেষণা মানে শুধু জ্ঞানের অন্বেষণ নয়, জ্ঞানের নির্মাণ-ও বটে– এই কথা বার বার উপলব্ধি করা যায় এই তথ্যসমৃদ্ধ প্রবন্ধের পাঠে। ঋদ্ধ হলাম…
অসাধারণ লেখা। সহজ সরল ভাষায় তথ্য সমৃদ্ধির সমন্বয়ে এক অনবদ্য গবেষণা মূলক রচনা। এগিয়ে চল।