মৌলবাদ ও পরিচিতি সত্তা
ভূমিকা
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে আমেরিকায় খ্রিস্টধর্মে মৌলবাদের ধারণা প্রথম উঠে আসে; পরবর্তীকালে অন্যান্য সংস্কৃতিতে তা ছড়িয়ে পড়ে।
আধুনিকতার কিছু দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিক্রিয়া সঞ্জাত হল মৌলবাদ। আধুনিকতা (মডার্নিসম)এর বিপরীত শব্দ হল মৌলবাদ (ফান্ডামেন্টালিসম)। নিজেদের অবস্থান বোঝাতে কথাটি প্রথম ব্যবহার করে আমেরিকান কিছু খ্রিস্টান গ্রুপ। এই অবস্থানটি ছিল, তাদের মতে, আধুনিক বিজ্ঞান ও ধর্মতত্ত্বসমূহের থেকে বিযুক্ত; অধার্মিক প্রবণতাগুলির বিপরীতে। তাদের মতে খ্রিস্টীয় মতবাদের সবচেয়ে বড় শত্রু ছিল ডারউইনের বিবর্তনবাদ এবং আধুনিক ঐতিহাসিক ভাষাবিদ্যা ও ধর্মতত্ত্বের বাইবেলের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি।১ (ব্রক্কি এবং আহমেদ, ২০২৩)
মধ্যযুগ থেকেই রাষ্ট্র-পরিচালনায় যুক্ত হয়ে পড়ছে ধর্ম, ধর্মীয় সাম্রাজ্য গঠিত হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে। শুরু হয়েছে এক ধর্মের সাথে অন্য ধর্মের লড়াই। আবার প্রায় একই সময়ে বিশ্বে, বিশেষ করে ইউরোপে, জ্ঞান-বিজ্ঞান অতি দ্রুত বিকশিত হচ্ছে, যুক্তিবাদ ও বৈজ্ঞানিক চিন্তা সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই সব পরিবর্তনে ঈশ্বরের বা ধর্মের কোনো ভূমিকার উল্লেখ থাকছে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মনিরপেক্ষ (সেক্যুলার) শক্তি গোটা ইউরোপে দানা বাঁধছে। ধর্ম তার আলৌকিকতা, ম্যাজিক, পাপ-পুণ্য নির্ধারণের ক্ষমতা হারিয়ে দ্রুত পিছিয়ে যাচ্ছে।
বিংশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী বছরগুলিতে সাধারণভাবে ধরে নেওয়া হয়েছিল যে ধর্মনিরপেক্ষতা (সেক্যুলারিসম) এক অপরিবর্তনযোগ্য প্রবণতা। ধরে নেওয়া হয়েছিল যে, মানব জাতি আরও যৌক্তিক হয়ে উঠবে, তাদের আর ধর্মের প্রয়োজন হবে না বা ধর্মকে জীবনের ব্যক্তিগত চর্চায় সীমিত রেখে সন্তুষ্ট থাকবে। কিন্তু বিগত শতকের সত্তরের দশকের শেষের দিকে মৌলবাদীরা সেক্যুলার আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে, ধর্মকে তা প্রান্তিক অবস্থান থেকে মধ্যমঞ্চে তুলে নিয়ে আসে (আর্মস্ট্রং২,পৃ ১৯)। এই ধর্মীয় পুনর্জাগরণ বহু পর্যবেক্ষককে হতাশ করেছে। আজকে ধর্মকে কোনও সরকারই উপেক্ষা করতে পারছে না। এর পেছনের কারণগুলি বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। মৌলবাদ কীভাবে প্রসারিত হচ্ছে, টিকে থাকার স্বার্থে মানুষের পরিচিতি সত্তাকে কীভাবে মৌলবাদীরা আজকের দুনিয়াকে ব্যবহার করছে সেই বিষয়ে দৃষ্টিপাত করা দরকার। পরিচিতি সত্তার অন্দরে বিচিত্র দ্বন্দ্বও আলোচিত হবে।
বিগত এক শত বছর মানুষ কেবলমাত্র বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের অগ্রগতি দেখেনি, দেখেছে দু-দুটি বিশ্বযুদ্ধ, কোটি কোটি মানুষের মৃত্যু ও নারকীয় ধ্বংসলীলা – যার জন্য বিজ্ঞানের নানা চমকপ্রদ আবিষ্কারের অপপ্রয়োগও দায়ী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে উপনিবেশবাদ ভেঙ্গে পড়েছে, সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন স্বাধীন দেশ। একদিকে বিজ্ঞানের এই অপপ্রয়োগ মানুষের দার্শনিক স্তরে বিজ্ঞানের প্রতি যে তীব্র আকাঙ্ক্ষা, আশাবাদ তাকে আঘাত করেছে, অন্যদিকে নতুন রাষ্ট্রের সৃষ্টি সহ নানান সামাজিক শূন্যতা মানুষের পরিচিতি সত্তাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। ধর্মগুরুরা নতুন ব্যাখ্যা সামনে এনেছেন, আবার সামাজিক প্রশ্নগুলি আরও তীব্র হয়েছে।
মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট মৌলবাদীরা ব্যবহার করে
মৌলবাদ ব্যবহার করে মানুষের চরিত্রের একটি দিকসংগঠিত ঘৃণা, যা একটি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আরেকটি জনগোষ্ঠী পোষণ করে। এই বিষয়ে আধুনিককালের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি রিচার্ড হলোওয়ে কী বলেছেন দেখা যাক। হলওয়ে এডিনবরা এপিস্কপাল চার্চের বিশপ হিসেবে ৪০ বছর কাজের পর পদত্যাগ করেন। নিজের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরে বিশ্বাস তিনি হারিয়েছিলেন যদিও ধর্ম নিয়ে কোনও ক্ষোভ তিনি পুষে রাখেননি।বরং তিনি জীবনের জটিল সমস্যাগুলির সমাধানে প্রগতিশীল ভূমিকা পালন করে চলেছেন। তার লিখিত ২০১৪ সালে প্রকাশিত ‘আ লিটিল হিস্ট্রি অফ রিলিজিওন’৩ নামক জনপ্রিয় গ্রন্থে বিভিন্ন ধর্মের উৎপত্তি থেকে বর্তমান সময়ে তার পরিবর্তনের রূপ বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছেন। হলোওয়ে ধর্মের নামে সংঘটিত বিভিন্ন অন্যায়ের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছেন। যেমন বিভিন্ন ধর্মের নামে মনুষ্য সমাজে ঘৃণার পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাঁর মতে, আমাদের ইতিহাস থেকে স্পষ্ট যে পরস্পরকে ঘৃণা করার ব্যাপারে মানুষ খুবই দক্ষ। সাধারণত যারা আমাদের থেকে কোন না কোনভাবে ভিন্ন, তারাই আমাদের ঘৃণার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়। বর্ণ, শ্রেণি, রঙ, লিঙ্গ, রাজনীতি, এমনকি চুলের রঙও আমাদের ভেতরে শত্রতা; দ্বেষ উসকে দিতে পারে। ধর্মও সেটি করতে পারে। বাস্তবিকভাবে, ধর্মীয় ঘৃণা সম্ভবত এই ধরনের মানব অসুস্থতার সবচেয়ে প্রাণঘাতী রূপ, কারণ এটি মানুষের ঘৃণাকে ঐশ্বরিক যৌক্তিকতা দেয়। মানুষের ঘৃণা এক জিনিস, তবে তাকে (বিভিন্নতাগুলিকে) ঈশ্বরও ঘৃণা করেন — এই বিশ্বাস বিপজ্জনক। ধর্মের বিভিন্ন গোষ্ঠী সম্পর্কে তার পর্যবেক্ষণ হল — একই ধর্মের অনুসারীদের সহিংস মতানৈক্য ইতিহাসের সাধারণ ঘটনা।৩
এই বিষয়ে মার্টিন লুথার কিং (১৪৮৩ – ১৫৩৬) সম্পর্কে আলোচনা করছেন আর্মস্ট্রং২। তিনি লিখেছেন, লুথারের মত হল বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি পেতে পৃথিবীতে যত বেশি ভাল কাজ সম্ভব তা করে যেতে হবে। ভয়ংকর কর্মযজ্ঞ মেতে ওঠেন তিনি। আবার হৃদয়ে তাঁর ঘৃণাও ছিল — পোপ, ইহুদি, তুর্কি, নারী, বিদ্রোহী কৃষকদের উপর সেই ঘৃণার প্রকাশ হত। আর্মস্ট্রংয়ের মতে লুথারের ক্রোধ আমাদের কালের সংস্কারকদের অনুরূপ হয়ে দাঁড়াবে, যারা এমন এক ধর্ম বিকশিত করছেন যেখানে ঈশ্বরের প্রতি ভালবাসা প্রায়শই অন্য মানুষের প্রতি ঘৃণা দিয়ে ভারসাম্য লাভ করছে। (আর্মস্ট্রং২, পৃ ১০৯-১১০)
সমাজে মানুষের পরিচিতি
অমর্ত্য সেন তার ‘পরিচিতি ও হিংসা’ (২০১৮) গ্রন্থে৪ মানুষের সমাজে তার পরিচয়জ্ঞাপক প্রশ্নটি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন। বর্তমান জটিল দুনিয়ায় মানুষের একাধিক পরিচিতি থাকাটা অবশ্যম্ভাবী, তাও একটি – বিশেষ করে ধর্মীয় পরিচিতি দ্বারা মানুষকে বেঁধে ফেলার ক্ষতিকারক দিকগুলিও তাঁর বিশ্লেষণে ধরা পড়েছে। কয়েকটি অংশ তুলে ধরা যাক-
মানুষের পরিচিতি সত্তা মৌলবাদীরা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে
‘আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা নিজেদের অনেক সমষ্টির অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করি – আমরা প্রতিটিরই সদস্য। কোন বিরোধ ছাড়াই একজন হতে পারেন ভারতীয়, খ্রিস্টান, উদারনৈতিক, ক্রিকেটপ্রেমী, স্কুল শিক্ষক, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতপ্রেমী, পরিবেশরক্ষা কর্মী, বামপন্থী ইত্যাদি। একই ব্যক্তি একই সময়ে সমষ্টিগুলির প্রত্যেকটির অন্তর্ভুক্ত এবং প্রত্যেকটি তাঁকে একটি বিশিষ্ট পরিচয় দেয়। এর মধ্যে কোনটি তাঁর একমাত্র বা একক সদস্যভুক্তির বর্গতে ধরা যাবে না।
দুঃখের বিষয় হল আমাদের পরিচয় নির্বাচন করার স্বাধীনতা নেই – এই মতটি প্রবল। ফলে, আমরা আলোচনায় দেখব যে মৌলবাদীরা ব্যক্তির একটি মাত্র পরিচয়কে প্রাধান্য দিয়ে অন্য সবগুলি গৌণ মনে করে এবং সেই একক পরিচয়ের বর্গের সদস্য হিসেবে তাঁর উপর অনেক প্রত্যাশা বা কর্তব্য চাপিয়ে দেবার ধারণা সৃষ্টি করে (সেন৪, কথারম্ভ পরিচ্ছেদ)।’
গবেষক ব্রক্কি এবং আহমেদ তাঁদের প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর রির্সাচ অন এক্সট্রিমিসম’-এর প্রতিবেদনে মৌলবাদের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন।১ মৌলবাদের সাথে এক পর্যায়ে, বিশেষ করে পরাধীন রাষ্ট্রগুলিতে জাতীয়তাবাদের একটি মেলবন্ধন হয়েছিল যেটি তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য উঠে এসেছে। দেশপ্রেম তথা জাতীয়তাবাদ মানুষের একটি বড় পরিচয় হওয়ায় আমাদের সে দিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে।
খ্রিষ্টীয় মৌলবাদকে অন্য মৌলবাদ্গুলি থেকে পৃথক করে দেখা প্রয়োজন। ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদ বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল। ফলে এশিয়া এবং আফ্রিকার সেই সব দেশের শতাব্দী প্রাচীন প্রথাগত ধর্মীয় আইন ও বিচার ব্যবস্থা তাদের অবস্থান হারাচ্ছিল। নানান ধর্মের গড়ে তোলা শিক্ষা পদ্ধতি ও প্রতিষ্ঠানগুলি প্রান্তিক হয়ে পড়ছিল যা এতদিন ধর্মীয় অভিজাতদের মদত পাচ্ছিল। এই শূন্যস্থান পূরণ করতে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে উনবিংশ শতকের প্রথম ভাগ সময়কালে অনেক ধর্মেই মৌলবাদের উৎপত্তি হয়। উদাহরণস্বরূপ, ইসলামিক দুনিয়ায় ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’-এর প্রকাশ ১৯৩০ দশকে, একই রকম ঘটনা হল হিন্দু ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ’ বা আরএসএস। বেশীর ভাগ অ-খ্রিস্টীয় মৌলবাদ খ্রিস্ট ধর্মের আধুনিকতা-বিরোধী ধারণা গ্রহণ করেছিল, তার সঙ্গে মিশ্রণ ঘটেছিল পাশ্চাত্য-বিরোধী ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মনোভাব এবং নীতি সমূহ।
মৌলবাদ এবং (উগ্র) জাতীয়তাবাদের মধ্যে সমাপতনের বিভিন্ন মাত্রা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ইউরোপে উত্থাপিত উগ্র জাতীয়তাবাদী আন্দোলনগুলি কখনও কখনও জাতীয়তাবাদের সাথে খ্রিস্টধর্মের দিকগুলিকে একত্রিত করে। ভারতের কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী আন্দোলন যাকে সম্মিলিতভাবে সংঘ পরিবার বলা হয় তাতে এমন সংগঠন রয়েছে যা স্পষ্টতই একই সঙ্গে জাতীয়তাবাদী এবং মৌলবাদী, উভয়ই। ইসলামিক বিশ্বে, মৌলবাদী (অর্থাৎ কট্টর ইসলামবাদী) আন্দোলনগুলিকে ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদের প্রধান শত্রু হিসাবে দেখা হত, কিন্তু ১৯৯০-এর দশকের পরে, তুরস্ক এবং ইরানের মতো দেশে মৌলবাদ এবং উগ্র জাতীয়তাবাদ একত্রিত হয়ে যেতে থাকে।১
পরিচিতি সত্তা এবং তাঁদের অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্ব বিষয়ের তিনটি উদাহরণ উপস্থিত করা হচ্ছে।
ক) ইবন বতুতার অভিজ্ঞতা – একই ধর্মীয় পরিচিতির মধ্যে ভিন্ন দর্শন, জীবনচর্চা
ব্যক্তির ধর্ম তাঁর সম্পূর্ণ ও একান্ত পরিচয়বৃত্ত হবে এমন কোন কথা নেই। ইসলামের ধর্মীয় ভূমিকা মুসলমানদের জীবনে নানা ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল চয়নের পথ আটকে দেয় না, কাজের অগ্রাধিকার ও মূল্যবোধ সবই একই ধর্মীয় পরিচয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে এমন নয়। (সেন৪)
ইবন বতুতা (জন্ম ১৩০৪ সাল) আফ্রিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছিলেন — প্রায় ৩০ বছর ধরে এত পথ আর কেউ পার হননি। একজন ইসলামিক পণ্ডিত তথা ধর্মের কর্মকর্তা হিসেবে বিশেষ করে মুসলিম দেশ ও সমাজকে খুব খুঁটিয়ে দেখেছিলেন। ইসলামিক নীতিবোধ যাতে স্থানীয় অভ্যাসের দ্বারা কলুষিত না হয়, সে দিকে তাঁর সজাগ দৃষ্টি ছিল। ভ্রমণ শেষে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেছিলেন। বর্তমান মালি ও ঘানা দেশ দুটির মাঝামাঝি এক স্থানে তাঁর বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়। সেখানকার মুসলমান কাজির সাথে তাঁর বন্ধুত্ব হল, তাঁর গৃহে আমন্ত্রিত হয়ে তাঁর উপস্থিতিতেই এক মহিলাকে পুরুষ বন্ধুর সাথে ঠাট্টা তামাশা করতে দেখে তাঁর তীব্র বিতৃষ্ণা জন্মায়। (সেন৪, পৃ ৬২) আর এক ধর্মপ্রাণ মুসলমানের বাড়ি গিয়ে তাঁর স্ত্রীকে একজন পুরুষ বন্ধুর সাথে আলাপরত দেখেন। বতুতা তাঁর বন্ধুকে শারিয়া বিধি স্মরণ করিয়ে এই ব্যবহারের প্রতিবাদ করেন, বন্ধুটি তাঁকে নারী পুরুষের মেলামেশা ভদ্রতার অঙ্গ বলে জানান, এমন কি এই মহিলারা বতুতার দেশের মহিলাদের মত নয় — এমন দু কথা শুনিয়ে দেন। ইবন বতুতার বর্ণনায় একই ধর্মীয় পরিচিতির মধ্যে সঠিক জীবনচর্চা সম্পর্কে ভিন্ন সিদ্ধান্তের উদাহরণ পাওয়া যায়।
খ) বাংলা ভাষায় লিখিত উপন্যাস আনন্দমঠ (১৮৮২)
উপন্যাসটি বঙ্কিমচন্দ্র (১৮৩৮-১৮৯৪)৫ লিখেছিলেন যখন তিনি ছিলেন ইংরাজ সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী। সন্ন্যাসী বিদ্রোহ (১৭৭০-১৭৭৭)-এর দুঃখজনক স্মৃতি, টাটকা বাংলার মন্বন্তরের (১৭৭৬) বিভীষিকার পরিপ্রেক্ষিতে লেখকের এই কালজয়ী উপন্যাসটি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠেছিল। উপন্যাসটির রচনার আগেই দেশকে মাতৃকা কল্পনা করে তাঁর লিখিত ‘বন্দে মাতরম’ গানটি (১৯৫০ সালে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত, ‘জন গণ মন’এর সম-মর্যাদাপূর্ণ বলে ঘোষিত) আনন্দমঠে স্থান পায়। পরবর্তী সময়ে অসংখ্য স্বাধীনতা সংগ্রামী এই ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনিতে উজ্জীবিত হয়েছিলেন। ইংরাজ রাজকর্মচারী হিসেবে তাঁর বাধ্যবাধকতা থাকলেও বর্তমানে আলোচ্য হল কেবল পরিচিতি সত্তার আলোকে আনন্দমঠ উপন্যাসটি ফিরে দেখা, তাই তার কিয়দংশ তুলে ধরা হচ্ছে।
যেমন, নিম্নোক্ত অংশটি যেন কোন ধর্মীয় সংঘাতের বিবরণঃ ‘সেই রজনীতে হরিধ্বনিতে সে প্রদেশভূমি পরিপূর্ণ হইল। সন্তানরা দলে দলে উচ্চৈস্বঃরে ‘বন্দে মাতরম’, ‘জগদীশ হর’ বলে গাইয়া বেড়াইতে লাগিল। … গ্রাম্য লোকেরা মুসলমান দেখিলেই তাড়াইয়া মারিতে যায়। কেহ কেহ সেই রাত্রে দলবদ্ধ হইয়া মুসলমানদিগের পাড়ায় গিয়া তাহাদের ঘরে আগুন দিয়া সর্বস্ব লুঠিয়া যাইতে লাগিল। অনেক যবন নিহত হইল, অনেক মুসলমান দাড়ি ফেলিয়া গায়ে মৃত্তিকা মাখিয়া হরিনাম করিতে আরম্ভ করিল, জিজ্ঞেস করিলে বলিতে লাগিল ‘মুই হিঁদু’। (পৃ ৮৯)
সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে নয়, অন্য ধর্মকে আক্রমণের অভিমুখ করার উদাহরণঃ এর অনেক আগেই সন্তানদের নেতা সত্যানন্দ ‘সন্তানেরা কি উপাসক সম্প্রদায়মাত্র?’ এই প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন- ‘তাই। আমরা রাজ্য চাহি না- কেবল- মুসলমানেরা ভগবানের বিদ্বেষী বলিয়া তাহাদের সবংশে নিপাত করিতে চাই (পৃ ৫৮)। ইংরাজ ক্যাপ্টেন টমাস সাহেবকে সন্ন্যাসীবেশী শান্তি দ্বন্দ্বে পরাস্ত করেও ক্ষমা করে এই বলে যে ‘হিন্দু মুসলমানের মারামারি হইতেছে, তোমরা মাঝখানে কেন? আপনার ঘরে ফিরিয়া যাও। (পৃ ৬৮)
পরিচিতির সংঘাতে পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্তঃ উপন্যাসের শেষ অধ্যায়ে নেতা সত্যানন্দ আক্ষেপ করেন- যে মুহূর্তে যুদ্ধ জয় করে সনাতন ধর্মকে নিষ্কন্টক করলেন তখনই প্রত্যাখ্যানের আদেশ কেন। মুসলমান রাজ্য ধ্বংস হয়েছে- হিন্দু রাজ্য স্থাপন এখনও হয়নি। তাঁর জিজ্ঞাসা ‘হে প্রভু! যদি হিন্দু রাজ্য স্থাপিত হইবে না, তবে কে রাজা হইবে? আবার কি মুসলমান রাজা হইবে?’ তিনি উত্তর পেলেন-‘না-এখন ইংরাজ রাজা হইবে। ইংরেজ রাজা না হইলে সনাতন ধর্মের পুনরুত্থানের সম্ভবনা নাই। তেত্রিশ কোটি দেবতা পূজা সনাতন ধর্ম নহে, সে একটা লৌকিক অপকৃষ্ট ধর্ম।’ হতাশ সত্যানন্দ মাতৃরূপা জন্মভূমির প্রতিমার দিকে ফিরে কাতর হলেন, তিনি দেহত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করলে মহাপুরুষ হিমালয় শিখরে মাতৃমূর্তি দর্শন করালেন। (পৃ ১০২)
জাতীয়তাবাদের সাথে মৌলবাদের বিভিন্ন মাত্রায় সমাপতনের বিষয়ে ব্রক্কি এবং আহমেদের১ গবেষণা থেকে জেনেছি। আবার অমর্ত্য সেন তাঁর ‘পরিচিতি ও হিংসা’ গ্রন্থে২৩ মানুষের সমাজে তার পরিচয় জ্ঞাপক আলোচনায় দেখিয়েছেন একাধিক পরিচয় একইসাথে মানুষের থাকতে পারে। উপন্যাসে সত্যানন্দ তাই দেশপ্রেমিক, ‘সন্তানদের নেতা’, যোদ্ধা আবার হিন্দুধর্মের একনিষ্ঠ প্রচারক। কিন্তু তাঁর হিন্দুত্বের পরিচিতি মুখোমুখি দাঁড়ায় দেশপ্রেমিক পরিচিতির। এই দ্বন্দ্বে পরাজিত হয়ে সে দেহত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করলে বঙ্কিম তাকে উচ্চতর হিন্দু ধর্মের কক্ষপথে স্থাপন করে রেহাই দেন। তবে এই যুগের পাঠকের কাছে সদানন্দের পরিচিতির দ্বন্দ্ব থেকেই যায়। ব্যক্তির একটি মাত্র পরিচয়কে প্রাধান্য দিয়ে অন্য সবগুলি অগ্রাহ্য করার প্রতিফলনও স্পষ্ট।
গ) জাতীয়তাবোধ বনাম ধর্মীয় পরিচিতি- ইরান, বাংলাদেশ
ইরানের পহ্লভি বংশের শেষ রাজা মোহাম্মদ রেজা পহ্লভি, ইরানের ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর সিংহাসনচ্যুত হন। ১৯৭১ সালে পার্সি সাম্রাজ্যের ২,৫০০ বছর পূর্তির জন্য একটি বর্ণাঢ্য, প্রকৃত অর্থে আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেন যেখানে তিনি স্বয়ং একটি উপাধি গ্রহণ করলেন। এটি বিশেষ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে, কারণ উপাধিটি হল ‘আর্যমেহর’ অর্থাৎ আর্যদের আলো, মেহর কথাটি এসেছে মিত্রা বা মিথরা থেকে যিনি এক জরাথ্রুস্ত্রীয় দেবতা। প্রকৃতপক্ষে শাসকগোষ্ঠীর এবং ধর্মের পরিবর্তন সত্ত্বেও মেহর নামটি জড়িত হয়ে আছে ইরানের সংস্কৃতির সাথে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় রাজধানী তেহেরানের মেহরবাদ এয়ারপোর্ট।
ইসলামিক ধর্মানুসারে ইরানে পৌত্তলিকতার স্থান নেই, শাসকশ্রেণি মিথরা দর্শন ও নীতি মুছে দেবার প্রয়াস নিয়েছে তবুও ইরানে মিথরা টিকে আছেন। আজও সব ধর্মের মানুষ — পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে ইরানের জরাথ্রুস্টের সমাধি মন্দিরটি দর্শন করতে আসেন। এতে গান বাজে। মসজিদে প্রবেশের জন্য আবশ্যকীয় পোশাকবিধিও প্রযোজ্য নয় এখানে।৬
ইংরেজদের উপনিবেশকালে ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় ধর্মীয় পরিচিতির ভিত্তিতে দেশ ভাগের প্রস্তাব ওঠে। দুঃখজনক হলেও বাস্তবে সত্যিই তাই হয়- মুসলিম সংখ্যাগুরু বসবাসকারী এলাকাগুলিকে ভিত্তি করে পাকিস্তান এবং বাকি অংশ ভারত, দুটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়। মুসলিম জনসংখ্যার বাংলাভাষী অংশ ভারতে পূর্বদিকে, উর্দু ভাষী অংশ পশ্চিম দিকে বাস করতেন। বর্তমান আলোচনায় যেটি বিচার্য তা হল পাকিস্তানের দাবির স্বপক্ষের নেতৃত্ব ভাষাগত পরিচিতি অস্বীকার করে একমাত্র ধর্মীয় পরিচিতিকে স্বীকার করেছিলেন। পাকিস্তানের মধ্যে কুড়ি বছর ধরে এই পরিচিতির দ্বন্দ্ব তীব্রতর হতে শুরু করে। ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী নয় মাসের যুদ্ধ করে বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠিত হল, পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই যুদ্ধকালে ধর্মীয় পরিচয় গৌণ হয়ে গেল কারণ উভয় পক্ষই ছিল মুসলমান। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার অন্যতম নেতা, পরবর্তীকালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার শ্রেষ্ঠ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান (বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী) নিজের জীবনের অভিজ্ঞতায় বুঝেছিলেন এই দ্বন্দ্ব, লিখেছেন – আমাদের বাঙালিদের মধ্যে দুইটা দিক আছে। একটা হল ‘আমরা মুসলমান, আর একটা হল আমরা বাঙালি’ (পৃ ৪৭, অসমাপ্ত আত্মজীবনী৭)। ১৯৪৭ এর পরে লিখিত হওয়ায় এখানে বাঙালি বলতে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশের অধিবাসীদের বোঝান হয়েছে।
কারেন আর্মস্ট্রং তাঁর ‘আ হিস্ট্রি অফ গড’ গ্রন্থে (২০১৩)৮ মোগল সম্রাটদের মধ্যেও এই বিভিন্নতা দেখিয়েছেন। আকবর (রাজত্বকাল ১৫৬০-১৬০৫) ১৫৭৫ সালে একটি উপাসনা গৃহ স্থাপন করেছিলেন যেখানে সকল ধর্মমতের পণ্ডিতগণ ঈশ্বর সংক্রান্ত আলোচনার জন্য সমবেত হতে পারতেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘স্বর্গীয় একেশ্বরবাদ’ বিশ্বাস করত সঠিকভাবে পরিচালিত যে কোন ধর্মে ঈশ্বর নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন। মুঘলরা যতদিন শক্তিশালী অবস্থানে ছিল ততদিন কেবল তার সহিষ্ণুতার নীতি স্থায়িত্ব পেয়েছে। ক্ষমতার অবনতি ঘটতে শুরু করলে মুঘল শাসকদের বিভিন্ন দল বা গোষ্ঠী বিদ্রোহ ঘোষণা শুরু করে। ফলে মুসলিম, হিন্দু ও শিখদের মাঝে দাঙ্গা হাঙ্গামা বেড়ে ওঠে। সম্রাট ঔরঙ্গজেব (১৬১৮-১৭০৭) হয়ত ভেবেছিলেন মুসলিম শিবিরে অধিকতর শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে ঐক্য ফিরিয়ে আনা যাবে; তাই মদ্যপানের মত বিভিন্ন শৈথিল্যের বিরুদ্ধে তিনি আইন জারি করেন। হিন্দুদের সাথে মেলামেশা অসম্ভব করে তোলেন, হিন্দুদের উৎসব-অনুষ্ঠানের সংখ্যা হ্রাস করেন এবং হিন্দু বণিকদের উপর করের হার দ্বিগুণ করে দেন। তাঁর সাম্প্রদায়িক নীতির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রকাশ ছিল হিন্দুদের মন্দির ধ্বংস করা। (আর্মস্ট্রং২ পৃ ৩৩৯)। অর্থাৎ, মোগল সম্রাটদের পরিচিতি একই ধর্মমতভুক্ত হলেও বিরাট ব্যবধান ছিল নিজের ও পরধর্মের সহিষ্ণুতার প্রশ্নে।
উপসংহার
আমরা দেখালাম যে একমাত্র একটি পরিচয় দিয়ে মানুষকে ব্যাখ্যা করার প্রচেষ্টা ভ্রান্ত। মৌলবাদীরা মানুষের কেবল ধর্মীয় পরিচয় বড় করে দেখে; অস্বীকার করে অন্য সব পরিচয়। আমাদের দেখান উদাহরণে পরিচিতি সত্তার মধ্যকার বিরোধ ও দ্বন্দ্ব ফুটে উঠেছে যা তারা অস্বীকার করে। অথচ এই বিভিন্নতার সপক্ষে আরও অজস্র উদাহরণ দেওয়া যায়। কিন্তু পরিচিতির এই সংকীর্ণ সংজ্ঞাকে ভিত্তি করে বিষাক্ত প্রচারে সবথেকে বেশি ক্ষতি হয় সেই সব দেশে যেখানে একাধিক ধর্মের মানুষ কয়েকশত বছর সহাবস্থান করছেন। সেই সব দেশে সংখ্যালঘু ধর্মীয় জনগোষ্ঠী সম্পর্কে অসত্য প্রচার করা হয়, বড় বড় নানা ধরণের সংবাদ সংস্থা, প্রচার মাধ্যম এই কাজে ব্যবহৃত হয়। কেবলমাত্র ধর্মীয় পরিচয় অনুসারে মানুষকে দেখা হয়, সৃষ্টি হয় এক গোষ্ঠীর প্রতি অপর গোষ্ঠীর ঘৃণার পরিবেশ। মানুষের একাধিক পরিচয় আজকের দুনিয়ার বাস্তবতা, তাই সেটা মেনে নিতেই হবে, যার জন্য ধর্মীয় পরিচয়কে একমাত্র ও অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া বন্ধ করা দরকার।
তথ্যসূত্র
১) ট্রকেল ব্রক্কি এবং উজির আহমেদ, হোয়াট ইস ফান্ডামেন্টালিসম? C-REX – Center for Research on Extremism, সর্বশেষ সংস্করণ মার্চ, ২০২১। https://www.sv.uio.no/c-rex/english
২) কারেন আর্মস্ট্রং, দি ব্যাটেল ফর গড, (স্রষ্টার জন্যে লড়াই- মৌলবাদের ইতিহাস বাংলা অনুবাদ শওকত হোসেন), র্যান্ডম হাউস, ইউ এস, ২০০০।
৩) রিচার্ড হলোওয়ে, ‘আ লিটিল হিস্ট্রি অফ রিলিজিওন’, ধর্মের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, অনুবাদক কাজী মাহাবুব হাসান, দিব্য প্রকাশ, ঢাকা, ২০২০।
৪) অমর্ত্য সেন, পরিচিতি ও হিংসা, ‘আইডেন্টিটি এন্ড ভায়লেন্স-দি ইল্যুসান অফ ডেস্টিনি’র বঙ্গানুবাদ, আনন্দ, কলকাতা, ২০১৮
৫) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, আনন্দমঠ, প্রথম প্রকাশ বঙ্গদর্শন পত্রিকায়, ধারাবাহিক পর্বে চৈত্র, ১২৮৭ থাকে ১২৮৯ বঙ্গাব্দ (১৮৮২ সাল), বর্তমান গ্রন্থটির প্রকাশ- বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র প্রকাশ, ঢাকা, ২০১৭।
৬) পল ক্রিসবাসজেক, ‘ইন সার্চ অফ জরাথ্রুস্থ’, অনুবাদক মোস্তফা আরিফ, রোদেলা প্রকাশনী, ঢাকা, ২০১৩।
৭) শেখ মুজিবর রহমান, অসমাপ্ত আত্মজীবনী, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ঢাকা, জানুয়ারি, ২০২০)।
৮) কারেন আর্মস্ট্রং, আ হিস্ট্রি অফ গড- ফ্রম আব্রাহাম টু দি প্রেসেন্টঃ দি ৪০০০ ইয়ার কোয়েস্ট ফর গড, অনুবাদক শওকত হোসেন, রদেলা প্রকাশনী, স্রষ্টার ইতিবৃত্ত- ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের স্রষ্টা সন্ধানের ৪০০০ বছরের ইতিহাস, পৃ ৩৩৯-৩৪০, ১৯৯৩)।
কি দুর্দান্ত লেখা!! যেমন বিষয় চয়ন তেমনি সুচিন্তিত গবেষণাধর্মী এবং তেমনই সুলিখিত।
ইংরেজিতে একটা কথা আছে Awestruck! আমার অবস্থা ঠিক সেই।
একজন বিজ্ঞান শাখার ব্যক্তির কাছ থেকে সমাজতত্ত্ব সম্পর্কে এমন গভীর ভাবনা আশাই করা যায় না !
কিন্তু ঠিক এই কথাটা মাথায় আসার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ এটাও বুঝলাম আমরা সকলেই কেমনভাবে মনের মধ্যে সুপ্ত মৌলবাদ লালন করি।
একজন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে ফেলেছি তাঁর প্রথাগত শিক্ষার ভিত্তিতে। এই মৌলবাদী ভাবনাটা যে আমার মনের মধ্যে ছিল তা বুঝিয়ে দেওয়া অর্থাৎ এ ব্যাপারে সচেতন করে দেওয়ার মতো এই অসাধারণ রচনাটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
খুব ভালো লেখা। সমৃদ্ধ হলাম। একজন মানুষের মধ্যে বিভিন্ন স্বত্তা আছে। কিন্তু জন্ম পরিচয়েকেই মৌলবাদ সক্রইয় করে তোলে। দরকার কর্মসত্বার উজ্জীবন।
সময়োপযোগী এক অসাধারণ প্রতিবেদন।