আমেরিকার প্রথম ‘ইমিগ্র্যান্ট’
স্কুল-কলেজ জীবনের অনেক বন্ধুই আজ আমেরিকাতে সেটলড্। কেউ কেউ ‘জিআরই’ দিয়ে ‘হায়ার স্ট্যাডিজ’ করতে গিয়ে ওখানেই থেকে গিয়েছে। কেউ কেউ আবার চাকরিসূত্রে চলে গিয়েছে মার্কিন মুলুকে। হোয়াটসঅ্যাপ’এর কল্যাণে এই সব প্রবাসী বন্ধুদের সাথে ভালোই যোগাযোগ আছে। হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট, হোয়াটসঅ্যাপ কল, হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও কল সবই তো ‘ফ্রি’। অতএব প্রবাসী বন্ধুবান্ধবদের ভালোমন্দের খোঁজ রাখতে অসুবিধে কি। তা বেশ ভালোই আছে মার্কিন মুলুকের ‘দেশি’ বন্ধুরা।
আচ্ছা, ‘ক্যারিয়ার’ বানানোর জন্য আমেরিকায় পাড়ি দেওয়ার এই ট্রেন্ড কবে থেকে শুরু হয়েছিল? কয়েক বছর আগে পর্যন্ত আমার ধারণা ছিল কলম্বাসের সময় থেকে। কলম্বাস ভারত ভ্রমে আমেরিকাকে খুঁজে বার করলেন আর তারপরই প্রথমে ইউরোপ থেকে এবং তারপর এশিয়া আর আফ্রিকা থেকে মানুষ কাতারে কাতারে যেতে শুরু করলেন আমেরিকাতে নিজেদের ভাগ্য ফেরানোর জন্য।
এখন অবশ্য জানি যে আগের ধারণাটা ভুল ছিল। কারণ ‘ফর বেটার প্রসপেক্ট’ আমেরিকাতে যাওয়ার চল শুরু হয়েছিল কলম্বাসের সময় থেকে নয়, তারও প্রায় ১৪-১৫ হাজার বছর আগে থেকে। আফ্রিকা থেকে আগত একদল মানুষ সাইবেরিয়া থেকে আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছিলেন নিজেদের ভাগ্যান্বেষণে। তাঁরা আমেরিকা পৌঁছেছিলেন কি করে? সে যুগে তো ‘ডেল্টা’ বা ‘ক্যাথে প্যাসিফিক’ ছিল না। নিশ্চই জলপথে পৌঁছেছিলেন ? উঁহু, মোটেই নয়। তাঁরা পায়ে হেঁটে পৌঁছেছিলেন আমেরিকাতে। পায়ে হেঁটে? কি করে? আমেরিকাতো চারিদিকে জল দিয়ে ঘেরা। তা ঠিকই। কিন্তু ওনারা আমেরিকায় গিয়ে হাজির হয়েছিলেন শেষ তুষারযুগের শেষের দিকে। তখন সমুদ্রের জল জমে বরফ হয়ে যাওয়ায় জলতল গিয়েছিল নেমে। ফলে সাইবেরিয়ার উত্তর পূর্ব কোণা আর আলাস্কার পশ্চিম অংশের মধ্যে তৈরী হয়েছিল পায়ে চলার এক রাস্তা যার নাম হল ‘বেরিঙ্গিয়া ল্যান্ড ব্রিজ’। সেই রাস্তা দিয়ে টুক টুক করে হেঁটে আলাস্কায় পা রেখেছিলেন আমেরিকার সর্বপ্রথম ‘ইমিগ্র্যান্ট’রা। তুষারযুগের শেষ পর্যায় বলে তখন আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে জমা বরফের পরিমান তখন একটু কমে এসেছিল, মধ্য কানাডায় তৈরী হয়েছিল এক ‘আইস ফ্রি করিডোর’। সেই ‘করিডোর’ দিয়ে পুরো মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। গড়ে তুলেছিলেন ‘ক্লোভিস’ সংস্কৃতি।
এখন মনে হচ্ছে যে এই দ্বিতীয় ধারণাকেও ত্যাগ দেওয়ার সময় এসে গিয়েছে। কারণ কিছু বিশেষজ্ঞ দাবি করা শুরু করেছেন যে ১৪-১৫ হাজার বছর আগে নয়, তারও বেশ কয়েক হাজার বছর আগেই নাকি সাইবেরিয়া থেকে ‘বেরিঙ্গিয়া ল্যান্ড ব্রিজ’ দিয়ে আলাস্কাতে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন আমেরিকার সর্বপ্রথম অভিবাসীরা। তখনও মূল ভূখণ্ড ভরপুর বরফে ডুবেছিল আর কোন ‘আইস ফ্রি করিডোর’ তৈরী হয়নি। তাই প্রশান্ত মহাসাগরের কূল ধরে ধরে পুরো আমেরিকাতে ছড়িয়ে পড়েছিলেন তাঁরা।
এই দাবির ভিত্তি কি?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ দিকের এক রাজ্য হল ‘নিউ মেক্সিকো’। সেই রাজ্যের দক্ষিণভাগে আছে ‘হোয়াইট স্যান্ড ন্যাশনাল পার্ক’। এই ন্যাশনাল পার্কে কয়েক’শ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে আছে খড়ি রংয়ের বালিয়াড়ি। সেই বালিয়াড়িতে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে কিছু কিশোর কিশোরীর পায়ের ছাপ যেগুলোর বয়স না কি ২১ থেকে ২৩ হাজার বছর! হুম!! তা বালিয়াড়িতে কি করতে গিয়েছিল ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা? আজকের বালিয়াড়ি তো তখন বালিয়াড়ি ছিল না, ছিল তুষার যুগের জলে ভেজা কাদায় ভরা এক সবুজ মাঠ। কাদা মাঠে হুটোপাটি, দৌড়ঝাঁপ করতে কোন বাচ্চার ভালো না লাগে বলুন? আর কাদায় তো পায়ের ছাপ পড়বেই।
এই ‘গেম চেঞ্জার’ দাবি নিয়ে কি আরও জানতে ইচ্ছে করছে? তাহলে যে একটু খাটতে হবে। পড়তে হবে ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি আর্টিকেল যার লিংক দেওয়া রইলো নিচে।
– শান্তনু ভৌমিক
Good to know.