সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

মহাবোধি মন্দিরের বিবর্তন- অনুসন্ধানীর চোখে

মহাবোধি মন্দিরের বিবর্তন- অনুসন্ধানীর চোখে

সুদীপ্ত পাল

জানুয়ারি ২৯, ২০২২ ১১৯৪ 3

আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগে যখন মানুষ ছবি তুলত না তখন দূর দূরান্তের মানুষ কীভাবে দেখত সে যুগের বিখ্যাত সৌধগুলোকে? প্রতিকৃতির মাধ্যমে। আর যখন একটা সৌধ কোন যুগের বিশ্ববিখ্যাত একজন মানুষকে নিয়ে, তাকে ঘিরে দেশ-বিদেশের লোকের আগ্ৰহ থাকবেই। মহাবোধি মন্দির চিরদিনই দেশ-বিদেশের বৌদ্ধদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বুদ্ধগয়ার সেই পিপুলগাছ, যার নিচে বুদ্ধর নির্বাণলাভ, তাকে ঘিরেই এই মন্দির।

এই প্রতিকৃতি বা রেপ্লিকাগুলো শুধু অন্য জায়গার মানুষকে নয়, আমাদের মত অন্য সময়ের মানুষকেও সেই যুগের সৌধগুলিকে দেখতে সাহায্য করে। গয়ার উপকণ্ঠে উরুবেল গ্ৰাম, যা আজ বুদ্ধগয়া নামে পরিচিত, সেখানেই মহাবোধি মন্দির সম্ভবত রাজা প্রসেনজিতের সময়কালে তৈরি হয়। এটি কাঠের মন্দির ছিল বলে অনুমিত। সম্রাট অশোকের সময়ে ইটের বা পাথরের মন্দির তৈরি হয়। তারপর একাধিক বার পুনর্নির্মাণ হয়েছে। একদম শুরুতে এটি যেরকম দেখতে ছিল, তা বর্তমান রূপের থেকে পুরোপুরি আলাদা। তাহলে মহাবোধির পুরোনো রূপগুলো খুঁজে বার করার কোনো উপায় আছে? আছে, আর সেই নিয়েই এই প্রবন্ধ।

কিন্তু মহাবোধি নিয়ে এত অনুসন্ধিৎসার কারণ কী? এক, এর ধর্মীয় গুরুত্ব – এটি বুদ্ধের নির্বাণলাভ স্থল। বৌদ্ধদের কাছে এটি পৃথিবীর নাভিকেন্দ্র। দুই, এর রাজনৈতিক গুরুত্ব – মহাবোধি মন্দির অতীতেও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল, এখনও আছে – আর আমরা এই লেখায়ও দেখতে পাব আন্তর্জাতিক পরিসরে এটির গুরুত্ব কতখানি ছিল। তিন, ভারতে ষষ্ঠ শতকের আগের ফ্রি-স্ট্যান্ডিং মন্দির (অর্থাৎ অজন্তার মত গুহাস্থাপত্য বা সাঁচীর মত স্তূপ নয়) খুব বেশি টিকে নেই। গুপ্তযুগের ভিতরগাঁও ও দেওগড় দশাবতার মন্দিরের মত অল্প কিছু নিদর্শন টিকে আছে। অতএব ভারতের মন্দিরশিল্পের প্রারম্ভিক যুগকে বুঝতেও সাহায্য করে মহাবোধির পুরোনো রেপ্লিকাগুলো।

আমাদের অনুসন্ধানের জন্য সবার প্রথমে যেতে হবে কলকাতার ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে। সেখানে আছে মধ্যপ্রদেশের ভরহুতের স্তূপের অবশেষ। ভরহুতের বড় বড় দেয়াল ও থাম তুলে এনে বসানো হয়েছে কলকাতার এই মিউজিয়ামে। মহাবোধির প্রথম রূপটি আছে এরকমই একটি থামে। এটি শুঙ্গযুগের- দ্বিতীয় সাধারণ পূর্ব শতক। ভাল করে দেখলে বুঝতে পারবেন মন্দিরটি গোল বা আয়তবৃত্তাকার ছিল, এখনকার মত পিরামিড আকারের শিখর নয়। এই প্রতিকৃতিটিতে curvilinear perspective ব্যবহার করা হয়েছে, অর্থাৎ দ্বিমাত্রিক দেয়ালেই একটা গোলের অনুভূতি আনা হয়েছে।

এখনকার মহাবোধি মন্দির এরকম গোল বা আয়তবৃত্তাকার আকারের নয়, তবে এটা মহাবোধি মন্দির সেই বিষয়ে সন্দেহ নেই। কেন? ছবিতে একটা পিপুল গাছ মন্দিরের মাথা ফুড়ে বেরিয়ে গেছে, আর বজ্রাসন আছে- যাকে ঘিরে ভক্তরা উপাসনা করছে। এই দুটি বৈশিষ্ট্য থেকেই মহাবোধি চেনা যায়।

এটি ছিল মহাবোধি মন্দিরের ভেতরের রূপ। তাহলে মহাবোধি মন্দিরের বাইরের রূপ কেমন ছিল? উত্তর আছে ভারতের অন্য প্রান্তে। কর্ণাটকের সন্নতি গ্ৰামের কাছে কনগনহল্লি স্তূপে! এই স্তূপ সাতবাহন যুগের- আনুমানিক প্রথম সাধারণ পূর্ব শতকের – ভরহুতের তুলনায় একটু অর্বাচীন। খুবই সাম্প্রতিক কালে ১৯৮০র দশকে এটি আবিষ্কৃত। এখানেও একটি মহাবোধির প্রতিকৃতি পাওয়া গেছে। কীভাবে বোঝা যায় এটি মহাবোধি? একই উত্তর- পিপুল গাছ মন্দিরের মাথা ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে, আর আছে বজ্রাসন। এখানে কিন্তু মন্দিরের বাইরের রূপটা দেখা যায়। একই মন্দির- তার ভিতর আর বাইরের রূপ দুই জায়গায় খোদিত। একটা যেন অন্যটার পরিপূরক।

দুই ক্ষেত্রেই আমরা দেখি, আর্চগুলো একটু পরের যুগের অজন্তা বা একটু আগের যুগের লোমশ ঋষি গুহার প্রবেশদ্বারের তোরণের মত। কনগনহল্লিতেও আমরা দেখি গোল বা আয়তবৃত্তাকার আকারের মহাবোধি মন্দির, তবে এটা কিছুটা ত্রিমাত্রিক ভাস্কর্য, তাই curvilinear perspectiveএর অতটা প্রয়োজন হয়নি যেটা ভরহুতের দ্বিমাত্রিক ঘেঁষা প্রতিকৃতিতে প্রয়োজন ছিল।

খৃষ্টপূর্ব যুগের কোনো ভারতীয় ফ্রী স্ট্যান্ডিং (অর্থাৎ গুহা বাদ দিলে) মন্দিরের চেহারা দেখার কোনো সুযোগ যদি আমাদের কাছে থাকে, তা হল এইই একমাত্র!

ছবি: ভরহুতের প্রাচীরগাত্রে মহাবোধি, ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম, কলকাতা।

ছবি: কনগনহল্লি স্তূপে মহাবোধি, সন্নতি, কর্ণাটক।

প্রথমদিকে গোল বা আয়তবৃত্তাকার (apsidal) মন্দিরের চল বেশি ছিল, হয়তো কোনো কেন্দ্রীয় বস্তুকে (যেমন ছোটখাটো স্তূপ, বজ্রাসন ইত্যাদি) ঘিরে পরিক্রমা করতে সুবিধা হত বলে। পরে মূর্তিশিল্পের বিকাশ হওয়াতে আয়তাকার মন্দিরের প্রচলন বেশি হয়- কারণ মূর্তিকে মুখোমুখি দেখা প্রয়োজন। আয়তাকার মন্দিরে বৌদ্ধ ও হিন্দুরা বাইরে দিয়ে পরিক্রমা করে। মহাবোধি মন্দির বর্তমানে আয়তাকার এবং পিরামিড আকৃতির শিখরবিশিষ্ট।

মহাবোধি মন্দির তার বর্তমান রূপ পায় ষষ্ঠ শতকে,‌ পরে পালযুগে অনেক সংযোজন হয়, এবং ঊনবিংশ শতাব্দীতে বড় আকারে সংস্কার হয়। কিন্তু ষষ্ঠ শতকের কিছু আগেও মহাবোধি সম্ভবত অনেকটা একইরকম দেখতে ছিল, অর্থাৎ পিরামিড আকারের শিখর ছিল। কীভাবে জানা যায়? কুম্রহার ফলক  (Kumrhar Plaque) থেকে।

পাটনার কাছে কুম্রহার। এটিই অতীতের পাটলিপুত্র নগরী। এখানে মৌর্যযুগের সভাকক্ষও পাওয়া গেছে। এখানে একটি পোড়ামাটির ফলক পাওয়া গেছে। খোদিত খরোষ্ঠী লিপি থেকে অনুমিত এটি দ্বিতীয় বা তৃতীয় শতকের। তাতে দেখা যাচ্ছে মহাবোধি মন্দির এখনকার মত পিরামিড আকৃতির। পরবর্তীকালে এই পিরামিড আকৃতির শিখর ধীরে ধীরে দ্রাবিড় শৈলীর মন্দিরের গোপুরম আর নাগর শৈলীর মন্দিরের শিখরের অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়।

কুম্রহারের মৃৎফলকটি এখন পাটনার বিহার মিউজিয়ামে আছে। তবে কুম্রহার মহাবোধিরই রেপ্লিকা কিনা সেই নিয়ে কিছু সন্দেহ থেকে যায়। তবে এটি দ্বিতীয়-তৃতীয় শতকের কোনো বৌদ্ধ মন্দিরেরই রেপ্লিকা সেই বিষয়ে সন্দেহ নেই। কারণ এটিতে “সংঘদাসস কিতি” কথাটা খোদিত আছে (কোনো সংঘদাসের দান), আর ধ্যানী মূর্তি আছে, যা বুদ্ধের বলেই অনুমিত। যে মন্দিরই হোক, পিরামিড আকৃতির মন্দিরশিখরের আদিতম ভারতীয় উদাহরণ এটিই।

ছবি: কুম্রহার ফলক।

এই প্রসঙ্গে বলি, সমুদ্রগুপ্ত মহাবোধি মন্দির ও তার আশপাশের এলাকা তুলে দিয়েছিলেন সিংহলের রাজা সিরি মেঘবর্মার হাতে – সেখানে বৌদ্ধ তীর্থের বিকাশ করার জন্য – যা আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও মৈত্রীর ভাল উদাহরণ। ধর্মীয় সহিষ্ণুতারও। সমুদ্রগুপ্ত নিজেও বোধিবৃক্ষের জন্য সোনার রেলিং দান করেন। দেড় হাজার বছর পর স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু যখন থাইল্যান্ড সহ এশিয়ার বিভিন্ন বৌদ্ধ প্রধান দেশগুলিকে আমন্ত্রণ করেছিলেন বুদ্ধগয়ায়, বৌদ্ধ তীর্থের উৎকর্ষের জন্য তিনিও হয়তো সমুদ্রগুপ্তর সেই ভাবনারই নূতন করে প্রতিফলন ঘটিয়েছিলেন। ঠিক যেমন অশোকচক্র ও অশোকস্তম্ভকে রাষ্ট্রীয় প্রতীক বানিয়ে তিনি চেয়েছিলেন ভারতবর্ষ অশোকের ভাবনার বিশালতাকে স্পর্শ করুক।

মহাবোধিতে বিদেশি বিনিয়োগের আরো দৃষ্টান্ত আছে। শুঙ্গযুগে সিংহলীদের অনুদানের নিদর্শন মহাবোধি মন্দিরে আছে। ভবিষ্যতে একাদশ-দ্বাদশ শতকে পালযুগে মায়ানমারের রাজারা উদ্যোগ নেন মন্দিরের সংস্কারকার্যে। এই সময়কার বর্মী ভাষায় অনেক অভিলেখ মন্দিরে পাওয়া যায়। ঊনবিংশ শতকেও মন্দিরের সংস্কারে এগিয়ে আসেন মায়ানমারের রাজা। চীনা তীর্থযাত্রীদের লেখা অভিলেখ আছে সপ্তম ও একাদশ শতকের।

ষষ্ঠ শতকে মহাবোধি মন্দির যে রূপ পায়- যার বিবরণ হিউয়েন সাঙ দিয়েছেন- সেটিই মোটামুটি এখনকার রূপ- যদিও একাধিক সংস্কার এর মধ্যে হয়েছে। ঐ সময়ে এটি পৃথিবীর দুটি উচ্চতম অট্টালিকার মধ্যে একটি ছিল (অন্যটি কনস্টান্টিনোপোলের আয়াসোফিয়া)। এই রূপটির রেপ্লিকা এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে পাওয়া গেছে- তিব্বত, মায়ানমার, নেপাল ইত্যাদিতে। এখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পৃথিবীর বিভিন্ন মিউজিয়ামে। রেপ্লিকাগুলোর আন্তর্জাতিক উপস্থিতি থেকে বোঝা যায় পালযুগে কতখানি আন্তর্জাতিক গুরুত্ব এই মন্দিরের ছিল। এই রেপ্লিকাগুলো তীর্থযাত্রীরা বুদ্ধগয়া থেকে নিয়ে যেত। এখনকার তাজমহল বা আইফেল টাওয়ারের স্মারকের মত। রাজারা কূটনৈতিক উপহার হিসেবেও পাঠাতেন।

আরেক ধরনের রেপ্লিকা আছে। মায়ানমার সহ অনেক দেশে মহাবোধির অনুকরণে তৈরি বৌদ্ধ মন্দির পাওয়া যায়। মায়ানমারের বাগান শহরের ত্রয়োদশ শতকে নির্মিত মহাবোধি মন্দির এগুলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। মনে রাখতে হবে একাদশ শতকে মায়ানমার থেকে পৃষ্ঠপোষকতা এসেছিল মহাবোধি মন্দিরের সংস্কারের জন্য। মায়ানমারের রাজপ্রতিনিধি ধর্মরাজগুরু দেয়ালগুলোর সংস্কার করেন এবং একটি তামার ছাতা এই সময়ে যোগ হয়, যাতে তাঁর নাম খোদিত আছে। মায়ানমারের পৃষ্ঠপোষকতা হলেও কারিগররা বাঙালি ছিলেন, অনেকের নামও খোদিত আছে বাংলায়। অনেক পুরোনো বাংলা লেখ এই মন্দিরে পাওয়া গেছে। সেনযুগে ১১৫৭ সাল নাগাদ অশোকবল্লদেব নামে এক বাঙালি রাজা এই মন্দিরকে অনেক অনুদান দেন, এবং বাংলা হরফে তাঁর দানের কথা খোদিত আছে।

ঐসময়ে মায়ানমারের সঙ্গে বুদ্ধগয়ার যে যোগাযোগ স্থাপিত হয়, কিছুটা সেটাকে ভিত্তি করেই মায়ানমারের বাগানের মহাবোধি মন্দিরটি গড়ে ওঠে, শিল্পীরা মূল মহাবোধি মন্দিরের খুঁটিনাটি বিশদ নথিবদ্ধ করে নিয়ে যান মায়ানমারে। পঞ্চদশ শতক অবধি মায়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। সুলতানি যুগে বৌদ্ধ ধর্মের প্রায় বিলোপ ঘটে, শত্রুর আক্রমণের ভয়ে ধর্মরাজগুরুর তামার ছাতা সহ অনেক সম্পদ মাটিতে চাপা দিয়ে দেয়া হয়, মন্দিরে বিদেশি তীর্থযাত্রীর সংখ্যা কমতে থাকে, আর মায়ানমারের সাথে যোগাযোগও ক্ষীণ হতে থাকে। তবে পঞ্চদশ শতকে মায়ানমারের রাজা ধম্মজেদি নূতন করে যোগস্থাপন করেন এবং তিনি বুদ্ধগয়ায় অনুদান পাঠিয়েছিলেন, তার প্রমাণ আছে। তাঁর পরবর্তী সময়ে মন্দিরটি শৈব ও বৈষ্ণবদের নিয়ন্ত্রণে আসে, আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে জরাজীর্ণ হতে থাকে।

ঊনবিংশ শতকে আলেকজান্ডার কানিংহাম যখন মন্দিরটির ‘পুনরাবিষ্কার’ করেন তখন এটি গিরি সম্প্রদায়ের শৈব মঠ ছিল- অষ্টাদশ শতকে এক বৈরাগী গভীর জঙ্গলে এই পরিত্যক্ত মন্দিরটি খুঁজে পেয়ে সেখানে একটি ছোটখাটো আখড়া গড়ে তোলেন। শৈব মঠ হলেও এখানে গয়াওয়াল সম্প্রদায়ের বৈষ্ণবরাই তীর্থযাত্রা করতে বেশি আসত – সম্ভবত গয়ার বিখ্যাত বিষ্ণুপদ মন্দিরের নৈকট্যের জন্য। উল্লেখ্য যে মহাবোধি মন্দিরে চতুর্দশ শতকের একটি পাথরের বিষ্ণুপদ আছে, আর বিষ্ণুপদ মন্দিরে মহাবোধির কিছু পাঁচিল পুনর্ব্যবহৃত হয়েছে।

নিচের ছবিগুলিতে যে স্মারকগুলো আছে সবই পালযুগের- দশম থেকে দ্বাদশ শতকের- বাংলা বা বিহারে এদের উৎস। ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রাখা মহাবোধিটির দ্বাদশ শতকের পূর্বভারতে উৎস, পাওয়া গেছে তিব্বতে। এছাড়া ছবিতে দেখবেন মেট মিউজিয়াম, বস্টন মিউজিয়াম, রুবিন মিউজিয়াম এই তিন মিউজিয়ামে রাখা পাথরের রেপ্লিকা। এগুলিতে লক্ষণীয় পঞ্চায়তন শৈলী যা পরবর্তীকালে অনেক হিন্দু মন্দিরে দেখা যায়। পঞ্চায়তন মানে মূল শিখরের চারকোণে চারটি ছোট শিখর।

ছবি: ব্রিটিশ মিউজিয়ামে মহাবোধি

ছবি: মেট মিউজিয়ামে মহাবোধি

ছবি: বস্টন মিউজিয়ামে মহাবোধি

ছবি: রুবিন মিউজিয়ামে মহাবোধি

ছবি: রুবিন মিউজিয়ামে মহাবোধি (অন্যদিক থেকে)

এইধরনের মহাবোধি মেমেন্টোগুলোর বিশাল একটা ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। ব্রিটিশ আমলে যখন নূতন করে মন্দিরটি বৌদ্ধ মন্দির হিসেবে আবিষ্কৃত হয়, ততদিনে এটি ভালোমতই ভেঙেচুরে গেছে, যদিও হিন্দু মঠ হিসেবে এটি  ব্যবহার হচ্ছিল। মায়ানমারের রাজা বিশেষভাবে উদ্যোগ নেন এই মন্দিরের সংস্কারে, তৎকালীন হিন্দুমঠের মহন্তও এই কাজে সহায়তা করেন। সঙ্গে ব্রিটিশ উদ্যোগ তো ছিলই। স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম অনেক কাজ করে গেছেন এই মন্দির নিয়ে – এই মন্দিরের চীনা, বর্মী, সংস্কৃত, পালি ও বাংলা ভাষার বিভিন্ন অভিলেখ নিয়ে। কিছুটা মায়ানমারের বাগানের মন্দিরটি দেখে, কিছু পুরোনো রেপ্লিকা দেখে দেখে, পুরোনো মন্দিরের অবশেষ আর কিছু নূতন মেটিরিয়াল যোগ করে আবার দাঁড় করানো হয় ঐতিহাসিক মন্দিরটিকে। এর থেকে বোঝা যায় এই রেপ্লিকাদের গুরুত্ব কতখানি। এরা শুধু দূরদেশে নয় দূর ভবিষ্যতের মানুষের কাছেও পৌঁছে দিয়েছে মহাবোধি মন্দিরকে।

ছবি: মায়ানমারের বাগান শহরের মহাবোধি

ছবি: ঊনবিংশ শতাব্দীর সংস্কারের আগে মহাবোধি

তথ্যসূত্র:

১. K.T.S. Sarao, The History of Mahabodhi Temple at Bodh Gaya, Springer Singapore, 2020.

২. Nikhil Joshi, The Mahabodhi Temple at Bodhgaya Constructing Sacred Placeness, Deconstructing the ‘Great Case’ of 1895, Taylor & Francis, 2019.

৩. Major-General Sir A. CUNNINGHAM, K.E., K.C.I.E., C.S.L, Mahabodhi OR THE GREAT BUDDHIST TEMPLE UNDER THE BODHI TREE AT BUDDHA-GAYA

৪. https://www.britishmuseum.org/collection/object/A_1922-1215-7

মন্তব্য তালিকা - “মহাবোধি মন্দিরের বিবর্তন- অনুসন্ধানীর চোখে”

  1. অসাধারণ গবেষণামূলক প্রবন্ধ। সঙ্গে উপরি পাওনা ছবিগুলো। দারুণ একটা মানসভ্রমণ হয়ে গেল। শুধু স্থানেই নয় বরং কালেও।
    একটা প্রশ্ন ছিল, এটি কি ভারতের প্রাচীনতম মন্দির? মানে এখনকার রূপে নয়। প্রাচীন যে মন্দিরটি ছিল সেটি।

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।