ডুয়ার্সের পথে পথে: রেশম পথ, বাণিজ্য ও হাটের উৎস সন্ধানে
ইউরোপ থেকে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে, উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম গিরিবর্ত্মগুলি পেরিয়ে ভারতের সমভূমি হয়ে, তিব্বত ও চীন দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য যিশুখ্রিস্টের জন্মেরও আগে থেকে পরিচিত ছিল সিল্করুট। ডুয়ার্সের বিভিন্ন পথের মধ্য দিয়ে সংযোজিত এই সিল্করুট যুগ যুগ ধরে ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যকে পল্লবিত করেছে। মিনহাজের লেখা তবাকাত-ই-নাসিরী১ থেকে আমরা মোট ৩৫টি দুয়ারের কথা জানতে পারি, যেগুলির মধ্যে অনেকগুলি আজ হারিয়ে গেছে বিস্মৃতির অতলে। তাঁর ভুটান সংক্রান্ত রিপোর্টে (১৮৩৮), পেম্বরটন২ পশ্চিম ডুয়ার্সের এগারোটি পথের উল্লেখ করেছেন যা আজকের আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলার মধ্যে বিস্তৃত। পশ্চিম ডুয়ার্সের তিস্তা এবং মানস নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল জুড়ে এই এগারটি পথ হল ডালিমকোটদুয়ার, জুমুরকোটদুয়ার, চামুর্চিদুয়ার (ভুটানে সামচি), লক্ষ্মীদুয়ার, বক্সাদুয়ার (পাশাখা), ভুলকাদুয়ার, বড়দুয়ার, গুমারদুয়ার, রিপুদুয়ার, চেরাং বা সিডলিদুয়ার এবং বিজনিদুয়ার। আলিপুরদুয়ারের পূর্বে আসামের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় আরও যে দুয়ারগুলির উল্লেখ পাওয়া যায়, সেগুলি হল দরঙ্গের মধ্যে দিয়ে বুড়ি-গুমাদুয়ার ও কালিংদুয়ার এবং দক্ষিণ কামরূপের মধ্যে দিয়ে গড়খোলাদুয়ার, বাঁশকাদুয়ার, চাপাগুড়িদুয়ার, চাপাখামারদুয়ার ও বড় বিজনীদুয়ার। বুড়ীগুমাদুয়ার এবং কালিংদুয়ারের পূর্বে আরও একটি দুয়ারের নাম তিনি উল্লেখ করেছেন- কুড়িপাড়াদুয়ার । এই দুয়ারের আরো পূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদের ধার ঘেঁষে চলেছে চারদুয়ার এবং নাওদুয়ার। সন্ডার্স৩ এবং সার্জেন্ট রেনির রিপোর্ট৪ থেকে জানা যায় ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার শেষ সীমান্তকেন্দ্র সাদিয়া থেকে তিব্বত ও চিনে প্রবেশের পাঁচটি পথের হদিস দিয়েছেন জন ম্যাক্স (১৮৩৭)। এই পথগুলি হল দিবং গিরিপথ, মিশমী গিরিপথ, ফুগন গিরিপথ হয়ে চিন, মনিপুর হয়ে ইরাবতী এবং পাটকাই গিরিপথে ইরাবতীর তীরে ভামো পথ। এই পথগুলি জুড়েই তিব্বত ও চীনের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য চলতো। প্রাচীন প্রাগজ্যোতিষপুরের রেশমবস্ত্রের উল্লেখ রয়েছে বৈদিক সাহিত্য ও বিভিন্ন সংস্কৃত গ্রন্থগুলিতে। সেখানে রেশম বস্ত্রকে ‘কৌষেয়’, ‘ঊর্ণ’, ‘ক্ষম’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। এন্ডি বা মুগাজাতীয় বস্ত্রকে ‘পত্রোর্ণ’ বলা হত। এই পত্রোর্ণ জাতীয় বস্ত্র ছিল তিনটি ভৌগোলিক অঞ্চলের পৃথক বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। মগধ অঞ্চলের বস্ত্র মাগধিকা, পৌন্দ্রো অঞ্চলের বস্ত্র পৌন্দ্রিকা এবং কামরূপ বা সুবর্ণকুড্যক অঞ্চলের রেশমবস্ত্র পরিচিত ছিল সৌবর্ণকুড্যকা৫ নামে। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে ‘দুকূল’ নামে খুব সূক্ষ্ম রেশম বস্ত্রের কথা জানা যায়। কৌটিল্য লিখেছেন, কামরূপ দেশের দুকূলের রঙ ছিল নবোদিত সূর্যের মতো। আজকের ডুয়ার্স, প্রাচীনকালের কামতা- কোচবিহার রাজ্যে রেশম চাষ হতো এবং এই শিল্পের ভালো বাজার ছিল তিব্বত, ভোট- তিব্বত, চীন, ভারতবর্ষ, বঙ্গদেশ, করমণ্ডল এবং মালাবার উপকূল হয়ে ইউরোপের প্রসিদ্ধ বাণিজ্য কেন্দ্রগুলিতে।
পশ্চিমদিকে মূলত এগারোটি দুয়ার পথে ভুটিয়ারা কোচ-অহম রাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্য করতে নেমে আসতো। ব্রিটিশদের অধিকারের পর, ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাৎসরিক কর হিসেবে ইয়াকের লেজ, টাট্টু ঘোড়া, কস্তুরী, স্বর্ণরেণু এবং পশমবস্ত্র ইত্যাদি প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দিলে কিছু পথের ওপর কর্তৃত্ব ভুটানিরা ফিরে পায়। রালফ ফিচ -এর বর্ণনা, পেম্বরটন রিপোর্ট থেকে জানা যায়, পূর্বদেশ থেকে চিনের ও উত্তরদেশের মস্কো এবং তাতার থেকে বণিকরা ভুটান দেশে বাণিজ্য করতে আসত। ভুটিয়ারা ডুয়ার্সের কোচ- কামরূপ অঞ্চলে নেমে আসতো কস্তুরী, কম্বল, আগ্যেট পাথর, গোলমরিচ, পারস্যের জাফরান এবং অবশ্যই সিল্ক নিয়ে।
রালফ ফিচের আলিপুরদুয়ার ভ্রমণ ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠন:
এবার আপনাদের শোনাবো এমন এক রোমহর্ষক অভিযাত্রীর কথা যার জীবন রূপোলি পর্দার নাটকীয়তাকেও হার মানায়। সময়টা আজ থেকে প্রায় পাঁচশো বছর আগে। ১৫৮৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, টাইগার নামক জাহাজে করে লন্ডন বন্দর ছাড়লেন একদল অভিযাত্রী। যাদের হাতে স্বয়ং রানী এলিজাবেথ তুলে দিয়েছেন সম্রাট আকবরকে দেবার জন্য চিঠি ও উপহার সামগ্রী। এই প্রথমবার ইংল্যান্ডের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য যোগাযোগ স্থাপিত হতে চলেছে। এই দলেই রয়েছেন বছর তিরিশের দুঃসাহসী অভিযাত্রী রালফ ফিচ। কিন্তু যাত্রাপথে, নভেম্বর মাসে অভিযাত্রীরা বন্দী হন প্রতিদ্বন্দ্বী পর্তুগিজ শাসকদের হাতে। তাদের বন্দি করে আনা হয় গোয়ার জেলখানায়। ভালো ব্যবহারের বিনিময়ে বন্দীদের খোলা প্রান্তরে হেঁটে বেড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়। দিনের-পর-দিন হাঁটতে-হাঁটতে তারা পরিকল্পনা করেন কড়া নজরদারি এড়িয়ে পালানোর। শেষে প্রায় বছরখানেক এর চেষ্টার পর তারা সুযোগ পান। পালিয়ে, জঙ্গল পাহাড় ডিঙিয়ে উপস্থিত হন পাশের রাজ্য বিজাপুর। সেখান থেকে বর্ষাকালের বিপদসংকুল নদীগুলিকে পেরিয়ে ১৫৮৪ সালের এপ্রিল মাসে, শেষ পর্যন্ত তারা হাজির হন সম্রাট আকবরের দপ্তরে। এলিজাবেথ ও আকবর এর মধ্যে দৌত্যকার্য সম্পাদিত হয়। দুঃসাহসী অভিযাত্রী ফিচ এরপর গঙ্গা নদী হয়ে বিরাট নৌবহর নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বাংলার উদ্দেশ্যে। তিস্তা পেরিয়ে হাজির হন এমন সীমান্তে, যেখানে হাত ধরাধরি করে রয়েছে চিন -ভুটান -মায়ানমার প্রভৃতি দেশগুলি। যেখানে হাত ধরাধরি করে আছে বড় বড় নদী, পাহাড় আর সমতল, হাজির হন আজকের আলিপুরদুয়ার জেলার চেচাখেতাগড়ে। তখন সেখানে কোচরাজা শুক্লধ্বজ (মতান্তরে চিলারায়)। দীর্ঘদিন ধরে তিনি সেখানে বাণিজ্য-সম্ভাবনা বিচার বিশ্লেষণ করেন। সবশেষে ১৫৯১ সালের ২৯ এপ্রিল দীর্ঘদিন বাদে ইংল্যান্ডে পৌঁছন। ডুয়ার্সের অসীম বাণিজ্য সম্ভাবনার কথা ইংল্যান্ডের বণিকসভায় বিবৃত করেন। অভিনন্দনের বন্যা বয়ে যায়, ফিচকে দেওয়া হয় ‘স্যার’ উপাধি। মূলত তারই পরামর্শেই গড়ে ওঠে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি৬। এভাবেই প্রাচীন বাংলার প্রান্তসীমার হাট ও বাণিজ্য নীরবে প্রেরণা জুগিয়েছে সেই কোম্পানি গঠনের যা গোটা মহাদেশকে শাসন করেছে প্রায় দু’ শতাব্দী।
সোসাইটি অফ ট্রেড ও বাণিজ্যপথ সন্ধান:
মিনহাজের তবাকাত-ই-নাসিরী গ্রন্থ অনুসারে একটি প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে কর্ম্মবাটনের উল্লেখ রয়েছে, যা সে সময়ে অত্যন্ত পরিচিত ছিল। প্রতিদিন ভোরবেলায় কর্ম্মবাটনে দেড় হাজার টাঙ্গন ঘোড়া বিক্রি করা হতো। উনিশ শতকের শেষ দিকে চুনাভাটিতে ভুটানের সাথে ব্যবসা অনেকটাই দখল করে নেয় মাড়োয়ারি ব্যবসাদার (কাইয়া)-রা। বক্সার পথে ভুটিয়ারা নিয়ে আসতেন হাতির দাঁত, মোম, পশম, মৃগনাভি, গন্ডারের খড়্গ, কম্বল, মধু, লবণ, চা পাতা এবং অবশ্যই এন্ডি রেশমবস্ত্র ও সুতিবস্ত্র। পাহাড় থেকে নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গেই মাড়োয়ারি ব্যবসায়ীরা সেগুলি কিনে নিত অথবা সেগুলির পরিবর্তে সুপারি, চাল, তামাক ও অন্যান্য বস্তু বিনিময় করত। এই বস্তুগুলি নিয়ে যাওয়া হতো আলিপুরদুয়ার হয়ে স্থলপথে অথবা চেচাখাতা পর্যন্ত জলপথে।
১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ক্লাইভ আসামের সঙ্গে লবণের ব্যবসা উদ্দেশ্যে গঠন করেন ‘সোসাইটি অফ ট্রেড’। এই সোসাইটি কিছু বছরের মধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেলেও ইংরেজদের কর্মপ্রচেষ্টা নতুন উদ্যমে বাড়তে থাকে। স্বপন কুমার রায়ের ‘প্রাচীন কোচবিহারের আর্থসামাজিক ইতিহাস’ গ্রন্থ থেকে এই অঞ্চলে বাণিজ্যের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে বহু মূল্যবান তথ্য লাভ করা যায়, একই সঙ্গে আলিপুরদুয়ারের অবস্থানগত গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি।৭ তিনি লিখেছেন: ‘কোচবিহার রাজ্যের পশ্চিম প্রান্তে তিস্তা নদী এবং পূর্ব প্রান্তে নদীপথে নৌকা যোগে ভুটানের বাণিজ্য আদান-প্রদান হত ব্রিটিশ বাংলার সাথে এবং এই নৌযান চলাচলের জন্য কোচবিহার রাজ্যকে তারা দীর্ঘকাল ধরে কর প্রদান করত। ইংরেজ বণিকরা সংগ্রহ করত মুগা, ধুতি, লাক্ষা, তুলো, গোলমরিচ এবং গজদন্ত’ ( পৃষ্ঠা- ৪৫)।
মিলিগান৮ এবং গ্রুনিং৯ প্রমুখের রিপোর্ট গুলি থেকে এই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে উপনিবেশিক শাসকদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টা সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে তিশু লামার সাথে মিত্রতা স্থাপনের সুযোগে ইংরেজ কোম্পানি ভুটান, তিব্বত, কাশ্মীর এবং চিন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্বন্ধ স্থাপনের পরিকল্পনা করতে থাকে। এই উদ্দেশ্যে সে বছরই ১৩ই মে জর্জ বগলে নামে একজন সিভিলিয়ানের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দলকে বাণিজ্য অনুসন্ধানে তিব্বত অভিমুখে প্রেরণ করা হয়। বগলের ভ্রমণ সঙ্গী ছিলেন একজন কাশ্মীরি মুসলমান এবং ডাক্তার হ্যামিলটন। তাঁর বিবরণ থেকে জানা যায় বঙ্গদেশ, বেনারস, করমণ্ডল, কাশ্মীর ও নেপালে কাশ্মীরি ব্যবসায়ীদের স্থায়ী প্রতিনিধিরা থাকতো, যারা ভারতের বিভিন্ন বাজার থেকে পণ্যসামগ্রী ক্রয় করে তিব্বতের রাজধানী লাসায় পাঠিয়ে দিতো। চীনের সঙ্গে ব্যবসা হতো লাসা বাজারের মাধ্যমে তিব্বতের অধিবাসী ও লামাদের মারফত। তিব্বতীয় ব্যবসায়ীরা ভুটানের পারো পর্যন্ত বাণিজ্য করতে নেমে আসতো, সঙ্গে আনতো পাহাড়ি লবণ ও পশম। পরিবর্তে তারা ভুটান থেকে সংগ্রহ করত চাল। আলিপুরদুয়ারের বক্সা হয়ে ভুটানের পথে তিব্বত দেশের সাথে বাণিজ্য পথই ছিল সর্বাধিক প্রচলিত, তাই চিন সম্রাটের অনুমতি বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয় ছিল। জর্জ বগল মুর্শিদাবাদ, দিনাজপুর এবং রংপুরের পথ ধরে ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দের মে মাসের শেষের দিকে কোচবিহারে পৌঁছান এবং সেখানে কয়েকদিন কাটিয়ে চেচাখেতা ও আলিপুরদুয়ারের বক্সা হয়ে ভুটানের রাজধানীতে যান। কিন্তু চীন সম্রাটের অনুমতি না থাকায় তিনি লাসায় প্রবেশ করতে পারেননি। ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে বগল দ্বিতীয়বার ইংরেজ সরকারের দূত হিসেবে তিব্বতের পথে গমন করেন কিন্তু এই সময় তিসু লামার মৃত্যু হওয়ায় তার তিব্বত-চীন যাত্রা সফল হয়নি। এরপর ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে স্যামুয়েল টার্নারকে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনের দূত হিসেবে তিব্বতে প্রেরণ করেন। টার্নারও রাজধানী লাসায় প্রবেশ করতে পারেননি। তিনি ভুটানের রাজধানী তাসিসুদন থেকে আলিপুরদুয়ার দিয়ে কোচবিহারের পথে বঙ্গদেশে ফিরে আসেন। ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে টমাস ম্যানিং এবং তার আগে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে অভিযান করেন কৃষ্ণকান্ত বসু। একজন বাঙালি হিসেবে, ঔপনিবেশিক যুগের এই দুঃসাহসিক অভিযাত্রীকে নিয়ে আমাদের কিছুটা বাড়তি আগ্রহ জন্মায় বৈকি। Ashley Eden সম্পাদিত ‘Bibliothica Himalaya’ গ্রন্থের অন্তর্গত Political Missions to Bootan (1865), থেকে জানা যায়১০ তৎকালীন ভুটান রাজা চিতা তুণ্ড তাঁর প্রতিনিধিকে পাঠান রংপুরে রাজা রামমোহন রায়ের কাছে। ১৮১৫ সালে ডুয়ার্স যখন ভুটানের হাতে, রাজা রামমোহন রায় তখন রংপুরে কর্মরত। ভুটানরাজ রামমোহন রায়কে অনুরোধ করেন তাঁর দেশে একটি সুষ্ঠু জরিপব্যবস্থা প্রবর্তন করতে এবং ‘বাঁশ বন্দী’ জরিপের দায়িত্বভার গ্রহণ করতে। ভুটানের অনুরোধে রামমোহন রায়, তাঁর মিত্র ও তৎকালীন আধিকারিক কৃষ্ণকান্ত বসুকে ভুটানে পাঠান। বাবু কৃষ্ণকান্ত বসু তার যাত্রাপথের বিবরণ, ভুটান রাজার প্রশাসনিক ব্যবস্থা, রাজ্যের আর্থিক ও সামাজিক বিষয় নিয়ে একটি তথ্যনির্ভর আকর গ্রন্থ রচনা করেন। কৃষ্ণকান্ত বসুর লেখাটি তৎকালীন ভুটানের আর্থসামাজিক ইতিহাস বিশ্লেষণে এক অমূল্য দলিল। রংপুর থেকে ভুটান যাত্রাপথের এক অসাধারণ বর্ণনাও তার লেখা থেকে আমরা পাই। লেখাটি ‘Account of Bootan’ নামে পরবর্তীকালে ইংরেজি অনুবাদ করেন ক্যাপ্টেন ডি. স্কট।
এরপর, ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে ক্যাপ্টেন পেম্বেরটন এবং ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ইডেন নানাভাবে তিব্বতে প্রবেশের চেষ্টা করলেও তারা বরাবরই বিফল হয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। দশকের পর দশক ধরে বিভিন্ন দুয়ারগুলি দিয়ে ভুটান হয়ে চিনের সঙ্গে বাণিজ্য-সম্পর্ক স্থাপনে ইংরেজদের এই আগ্রহ স্বাভাবিকভাবেই প্রকাশ করে প্রাচীন এই বাণিজ্যপথের গুরুত্ব। পেম্বারটন তাঁর রিপোর্টে (১৮৩৮) বাণিজ্য ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোচবিহার হয়ে আলিপুরদুয়ারের বক্সাদুয়ার পথের গিরিপথটিকেই মুখ্য পথ বলে ব্যাখ্যা করেছেন- ‘The route by which the (Turner) mission travelled was the one pursued by Mr. Bogle; and it appears to be generally regarded as the principal entrance into Bootan and Thibate from the plains of Bengal’.১১
এম. রসবি১২, জে. সি হোয়াইট১৩ এবং ফ্রাঙ্ক অ্যান্ড গ্রিল১৪ প্রমুখের অসাধারণ গবেষণা ও লেখনি, প্রাচীন সিল্ক রুটের স্বরূপ উন্মোচনে এবং এই অঞ্চলে প্রাচীনকালে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি প্রকৃতি সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে অসাধারণ তথ্য সমৃদ্ধ আকর বিশেষ। এগুলি থেকে জানা যায় ভুটিয়ারা এই সময় প্রতিবছর পাহাড় থেকে সারি সারি টাট্টু ঘোড়া করে নিচে নেমে আসতো সঙ্গে নিয়ে আসতো পশুচর্ম, কম্বল, তুলা, সুতিবস্ত্র, মৃগনাভি, স্বর্ণরেণু এবং ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা মূল্যের কয়েকশো পাহাড়ি টাট্টু ঘোড়া। বদলে এদেশ থেকে তারা নিয়ে যেত শীতবস্ত্র, লোম ছাড়ানো চামড়া, তামা, সীসা, মশলা। একেবারে তারা প্রায় এক লক্ষ টাকার উপরে বাণিজ্য করতো।
ব্যবসা-বাণিজ্য ও হাট ব্যবস্থার সম্প্রসারণ:
ইংরেজরা যখন ডুয়ার্সের এই অঞ্চল দিয়ে তিব্বত-চিনের সঙ্গে গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের চেষ্টায় উদগ্রীব, সেই সময় ব্যবসা-বাণিজ্যের উজ্জ্বল সম্ভাবনা লক্ষ্য করে ভারতের অন্যান্য অঞ্চল থেকেও প্রচুর ব্যবসায়ীরা আলিপুরদুয়ার-কোচবিহার অঞ্চলে ভিড় জমাতে থাকেন। রাজস্থান থেকে আগত মাড়োয়ারি এবং বিহার থেকে আগত ব্যবসায়ীদের সংখ্যা এবং প্রতিপত্তি ছিল এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি। মালপত্র পরিবহন এবং স্থলপথের মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়ার কাজ প্রধানত নিয়ন্ত্রণ করত মাড়োয়ারিরা। রাজ্যে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিস্থিতি থাকবার কারণে অন্তর্দেশীয় বাণিজ্যের পরিমাণও ক্রমশ বাড়তে থাকে। বিভিন্ন বন্দরকে কেন্দ্র করে, মালপত্র আনার পথের ধারে ধারে গড়ে উঠতে থাকে দেশীয় হাটগুলি। প্রচুর পরিমাণে পণ্য এই দেশীয় হাটগুলি থেকে স্থানীয় মানুষের কাছে পৌঁছে থাকে। চাহিদা বাড়তে থাকে; অন্তর্দেশীয় বাজার ফুলে-ফেঁপে ওঠার কারণে একের পর এক গড়ে উঠতে থাকে হাট। ‘প্রাচীন কোচবিহারের আর্থসামাজিক ইতিহাস’১৫ গ্রন্থ থেকে এই হাটগুলির গড়ে উঠবার একটি সময় তালিকা আমরা পাই- “১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে দিনহাটার গুদরিবাজার, গোবরছড়া হাট, ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে চৌধুরীর হাট, মাথাভাঙ্গা হাট, ডোডিয়ার হাট, ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে বলরামপুর হাট, ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে খোচাবাড়ি হাট, চওড়াহাট, মেখলিগঞ্জ হাট, মেখলিগঞ্জ এর রানীরহাট, ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে জামালদহ হাট, 1852 খ্রিস্টাব্দে মহিষকুচিতে সাহেবগঞ্জ হাট, ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে চিলাখানা হাট, ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে লালকুঠিতে বকশীগঞ্জের হাট, ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে দিনহাটায় পেটলাহাট, ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে বার্থারহাট, ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে ফুলবাড়ির রানিরহাট, দিনহাটা পরগনায় সিতাইহাট, মাথাভাঙ্গা পরগনায় সারেয়াডাঙ্গা হাট ও তারাগঞ্জের হাট, ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে দিনহাটার বড়ডাঙ্গা হাট, ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে কালিরঘাটের হাট, মহিষবাথান হাট, নটকাবাড়ী হাট, ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে পুরনো তুফানগঞ্জ হাট, ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে দিনহাটা পরগনায় নগরহাট ধীরে ধীরে গড়ে উঠতে থাকে” ( পৃষ্ঠা- ৬৭)।
রেলযোগাযোগ ব্যবস্থার পত্তন ও হাটের আধুনিকীকরণ:
বহির্দেশীয় বাণিজ্যের গুরুত্ব ও অন্তর্দেশীয় বাজারের সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গেই প্রয়োজন অনুভূত হয় আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার। শুধুমাত্র কৃষিজপণ্য নয়, ডুয়ার্সের পূর্ব অংশে বর্তমান আলিপুরদুয়ার জেলার বক্সা-জয়ন্তী অঞ্চলের বিপুল খনিজদ্রব্য আহরণের বিষয়টিও ক্রমশ গুরুত্ব পেতে থাকে। অতএব প্রয়োজন পড়ে আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার। সূত্রপাত ঘটে রেল যোগাযোগের। ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে ইঙ্গ-ভুটান যুদ্ধের পর পশ্চিম ডুয়ার্স জেলায় পরিণত হয়। ময়নাগুড়ি হয় সেই জেলার সদর মহকুমার হেডকোয়ার্টার্স। কোচবিহার রাজ্যের সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের সম্পর্ক আরও গভীর হয়ে উঠতে থাকে এবং দুয়ারগুলিতে ব্রিটিশ সরকারের আধিপত্য সুনিশ্চিত হয়। ফলে ডুয়ার্স অঞ্চলের খনিজ, বনজ, পশুজাত, কুটিরশিল্পজাত পণ্য ও কৃষিপণ্যসমূহ পরিবহনের জন্য রেলযোগাযোগ ব্যবস্থা এক নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। তৎকালীন কমিশনার E.E. Lowis১৬ এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন: “A great change has been wrought by the opening of Northern Bengal state railway for traffic in the beginning of 1878.”
নর্দান বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ে জলপাইগুড়ি জেলায় ১৮৭৮ সালে স্থাপিত হয়। ১৯ জানুয়ারি ১৮৭৮ সালে প্রভাদহ থেকে ভেড়ামারা ঘাট এবং সরাঘাট থেকে আটারী পর্যন্ত লাইনের উদ্বোধন হয়, যা শিলিগুড়ি পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয় ১০ জুন ১৮৭৮। ১৮৯১ সালে ভারতের সেক্রেটারি অফ স্টেট এবং লন্ডনের Octavius Steel and Co.-এর মধ্যে একটি চুক্তির মাধ্যমে বেঙ্গল ডুয়ার্স রেলওয়ে (B. D. R.) রেলপথ স্থাপনের কাজ শুরু করে।
১৮৯২ সালে ভারত সরকারের সচিব, কোচবিহার স্টেট রেলওয়েকে রেলপথ নির্মাণের জন্য ৮ লক্ষ টাকা ঋণদান অনুমোদন করেন। স্থির হয় চকলাজাত অঞ্চলের সম্পত্তি থেকে এই ঋণের মূল এবং সুদ পরিশোধ করা হবে। রেললাইন বসানোর কাজ সমাপ্ত হলে মালবাহী গাড়ি যাত্রা শুরু করে ১৮৯৩ সালের পনেরোই সেপ্টেম্বর, যাত্রীবাহী ট্রেন চালু হয় পরের বছর পয়লা মার্চ থেকে। ১৮৯৭ সালে, বর্তমান আলিপুরদুয়ার -কোচবিহার জেলার সীমানায় অবস্থিত, খোলটার কাছে কালজানি নদী পর্যন্ত লাইন বসানোর জন্য কোচবিহার সরকার আড়াই লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেন। অন্যদিকে কালজানি নদীর উপরে রেলসেতু নির্মিত হয়, ৬৬,৫১৯ টাকা বহন করে বাংলার ইংরেজ সরকার। এই লাইনটি খুলে দেওয়া হয় ১৮৯৯ সালের ১৫ এপ্রিল। পরের বছরই আলিপুরদুয়ার রেলস্টেশন অব্দি রেললাইন বসানোর কাজ শেষ করা হয়।
১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে জয়ন্তী অব্দি রেললাইন বিস্তারের কাজ শুরু করা হয়। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে জয়ন্তী পর্যন্ত রেল চলাচল শুরু হয়। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে রেললাইনটিকে ন্যারোগেজ লাইন থেকে মিটারগেজ লাইনে পরিণত করা হয়। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ইস্টার্ন বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ে এই লাইনের পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করে। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে এই রেলপথের রাজাভাতখাওয়া স্টেশন থেকে, হাসিমারা হয়ে দলসিংপারা পর্যন্ত রেললাইনের বিস্তৃতি ঘটে। রেলপথ সম্প্রসারণের জন্য আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল এই অঞ্চলের চা বাগিচা এবং পণ্য পরিবহন। বাগিচা নির্মাণের জন্য যন্ত্রপাতি পরিবহন এবং চা পাতার দ্রুত পরিবহনের জন্য রেলপথ নির্মাণে ‘টি প্লান্টারস্ অ্যাসোসিয়েশন’ থেকে ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল। ফলে চা বাগিচা এবং জয়ন্তী অঞ্চলের খনিজদ্রব্য অধ্যুষিত অঞ্চল পর্যন্ত রেলপথের দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটে। চা বাগিচা কিভাবে রেলপথের সম্প্রসারণে প্রভাব বিস্তার করেছিল তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হ্যামিল্টনগঞ্জ রেলস্টেশন। ১৯১৪ সালে কালচিনি অঞ্চলে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবার পর, হ্যামিল্টনগঞ্জ বাগিচাতে এই স্টেশন থেকেই পরিবহন করা হতো। ১৯২১ সালে এই অঞ্চলে চা বাগানের ম্যানেজার হয়ে আসেন হ্যামিল্টন নামে এক ইংরেজ। কালচিনি বাগানের সঙ্গে রেষারেষি ও তার ঐকান্তিক আগ্রহে হ্যামিল্টনগঞ্জে প্রথমে একটি হল্ট স্টেশন ও পরে সম্পূর্ণ রেলওয়ে স্টেশন নির্মিত হয়।১৭ এভাবেই আজকের আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি, হ্যামিলটনগঞ্জ, দলগাও, জয়ন্তী প্রভৃতি স্থানগুলি রেলপথ দ্বারা সংযুক্ত হয়। বিপুল পরিমাণ খনিজ, বনজ ও কৃষিজ পণ্য পরিবাহিত হতে থাকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়, আজকের দিনেও ২০১৭-১৮ সালের তথ্যানুসারে, আলিপুরদুয়ার রেলওয়ে ডিভিশন পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে গোটা ভারতের সবথেকে বেশি আয় করা রেলডিভিশনগুলির মধ্যে অন্যতম।
শেষ নয় শুরুর কথা:
এতক্ষণ ধরে আমরা ডুয়ার্সের সুপ্রাচীন যে পথগুলির কথা আলোচনা করলাম, সেগুলির মধ্যে প্রায় সবকটি আজ কমবেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় সুপ্রাচীন এই পথগুলি আজ ভুলেছে তার অতীতের ঐতিহ্য, হারিয়েছে অতীতকালের গৌরব। সিল্করুটের অস্তিত্ব আজ আর প্রায় নেই। বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি গিরিপথ ব্যবহার করে প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে বটে কিন্তু তা কখনোই স্পর্শ করতে পারছে না ফেলে আসা অতীতের গৌরবোজ্জ্বল সেই দিনগুলিকে। কোচ রাজাদের আমলে কোচবিহারকে কেন্দ্র করে১৮ ও প্রাচীন কোচ কামতাপুরের ব্যবসা-বাণিজ্যে যে সমৃদ্ধ ইতিহাস ছিল১৯ সেই গৌরব-সূর্য আজ অস্তমিত। যোগাযোগ ব্যবস্থার বিবর্তনের সঙ্গে, পথের সঙ্গেই বদল ঘটেছে গন্তব্যগুলির। ডুয়ার্সের হাটগুলির অতীতের সেই গৌরব আজ আর নেই। হাটগুলোতে প্রাচীন পণ্যের বৈচিত্র্য কমেছে, বদল ঘটেছে হাটগুলির প্রকৃতির। আগে ডুয়ার্সের হাটগুলি ছিল ছড়িয়ে পড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু, সমৃদ্ধির পীঠস্থান। আর বর্তমানে সেগুলি প্রান্তিক জীবনধারণের শর্ত পালনেই ব্যস্ত। ডুয়ার্সের গ্রামগঞ্জের হাটগুলি আর ব্যবসা-বাণিজ্য চালাবার অপরিহার্য ভরকেন্দ্র নয়, এগুলোর বেশিরভাগই আজ স্থানীয় গ্রামীণ জনগণের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা চালাবার ফরমায়েশি কেন্দ্রে পরিণত। বেচাকেনা মূলত সীমাবদ্ধ হয়েছে ঘর-গেরস্থালির জিনিসেই। হিমালয়ের জঙ্গল উজিয়ে আনা বনজ উপাদান, বক্সা-জয়ন্তী থেকে খনিজ উপাদান, তিব্বতের মৃগনাভি আজ শুধুই স্মৃতি।
সহায়ক গ্রন্থসূচি:
১. Tabaqat – I- Nasiri by Minhazuddin, translated by Raverty, retrieved from https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.82765
২. R. Boileu Pemberton, (1838), ‘Report on Bootan’, Bengal Military Press, Calcutta.
৩. D H.E. Sunder, (1911), ‘Survey and Settlement of Western Duars in the district of Jalpaiguri, 1889- 95’, Regional Secretariat Press, Calcutta.
৪. David Field Rennie, (1970, reprint), ‘Bhotan and the Story of the Doar War’, Manjusri Publishing House, New Delhi.
৫. স্বপন কুমার রায়, (২০০৮), ‘প্রাচীন কোচবিহারের আর্থ – সামাজিক ইতিহাস’, বইওয়ালা, কলকাতা।
৬. J. Horton Ryley, (1839), ‘RALPH FITCH, England’s Pioneer to India’, Cornell University Library, New York.
৭. স্বপন কুমার রায়, পূর্বোক্ত।
৮. J.A. Milligan, (1919), ‘Final Report on the Survey and Settlement operations in the Jalpaiguri district’, 1906-07’, Bengal Secretariate Book Dept., Calcutta.
৯. John F. Gruning, (1911), ‘Jalpaiguri Eastern Bengal and Assam District Gazetteers’, The Pioneer Press, Allahabad.
১০. ‘Account of Bootan’ লেখাটি বাবু কৃষ্ণকান্ত বসুর লেখা, অনুবাদ করেন ডি. স্কট। আগ্রহীরা সন্ধান করতে পারেন ‘Political Mission to Bootan’ (1865-1972), Bibliothica Himalaya গ্রন্থের অন্তর্গত Ashley Eden সম্পাদিত, Manjushree Publication, New Delhi থেকে ১৯৭২ সালে পুনমুদ্রিত।
১১. Pemberton, Ibid.
১২. Morris Rossabi, (1990), (ed.), ‘The Decline of the Central Asian Caravan Trade’, Ecology and Empire, Vol. I, Nomads in the Cultural Evolution of the Old World, G. Seaman Ethnographics, Los Angeles.
১৩. J. Claude White, (1971), ‘ Sikkim and Bhutan Twenty one years on the North – East Frontier 1887-1908’, Vivek Publishing House, Delhi.
১৪. A.G. Frank and B.K. Gills, (ed.), (1992), ‘The World System: Five Thousand years’, Routledge, New York.
১৫. স্বপন কুমার রায়, পূর্বোক্ত।
১৬. তদেব।
১৭. ড. রূপন সরকার, (2020), ‘স্মৃতিকথায় হামিল্টনগঞ্জ’, সোপান, কলকাতা।
১৮. আমানুতুল্লা খাঁ চৌধুরী, (২০০৮, পুনর্মুদ্রণ), ‘কোচবিহারের ইতিহাস’, প্রথম খণ্ড, মডার্ন বুক এজেন্সি প্রা. লি., কলকাতা। ১৯. ড. মলয় শঙ্কর ভট্টাচার্য, (২০১২), ‘কোচ – কামতাপুরের ইতিকথা’, ব
অসাধারণ লেখা। দারুণ আনন্দ পেলাম এবং কিছু অজানা জিনিস জানলাম।
একটা জায়গায় র্যালফ ফিচের মুঘল দরবারে পৌঁছনোর সাল 1984 হয়ে গেছে। ওটা বোধহয় 1584 হবে।
আরেকটা প্রশ্ন ছিল। এখানে উল্লিখিত পথগুলো ছাড়াও ভারতের উত্তর পশ্চিমে আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে তাকলামাকান মরুভূমির মধ্যে তারিম নদীর ধার ধরেও একটা বাণিজ্য পথ ছিল না? সেটাও তো রেশম সড়কই নাম ছিল? যে পথ ধরে ফা হিয়েন, হিউয়েন সাং রা এসেছিলেন? শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মরু ও সঙ্ঘ গল্পে যার উল্লেখ আছে?
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ইতিহাস জনমানসে এসেছে এই লেখার মাধ্যমে। যত বেশি পুরনো দিনের ব্যবসায়িক ভ্রমণ ও প্রাচীন আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক সম্পর্ক গুলোর দিকে নজর দিই মনে হয় প্রাচীন কালে মানুষ অনেক বেশি আন্তর্জাতিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিল। কিসের আধুনিকতা পেলাম আমরা, প্রযুক্তি গত উন্নতি হল, কিন্তু মানসিক চেতনায় মানুষ কি ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে উঠছে?