স্বাধীনোত্তর ভারতে সাম্প্রদায়িকতার উত্থান ও নির্বাচনী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি (১৯৪৭-১৯৯০)
১৯৪৭-এর দেশভাগ ও তার সহগামী বর্বর ও ভয়ঙ্কর দাঙ্গা সত্ত্বেও ভারতের মানুষ সংবিধানে প্রতিষ্ঠিত ধর্মনিরপেক্ষতাকে মৌলিক মূল্য রূপে গ্রহণ করে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ও সমাজ স্থাপনের পথে যাত্রা শুরু করেছিল। গান্ধিজির আত্মবলিদান, ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি নেহরুর অখণ্ড আনুগত্য এবং মুক্তিসংগ্রামের ঐতিহ্যের প্রভাবে ১৯৫০–এর দশকে সাম্প্রদায়িকতা সুপ্ত শয়ানে ছিল; কিন্তু সাম্প্রদায়িক তাত্ত্বিকরা তাদের কাজ করে যাচ্ছিল১। ভারতে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়ক একটি রাষ্ট্রিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা স্থাপিত হওয়ার পর ও নানা কারণে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্মীয় গণ্ডিকে কেন্দ্র করে সম্প্রদায়গত স্বাতন্ত্র্যবোধকে প্রকট করে তুলেছে, তাতে অসহিষ্ণুতা ক্রমবর্ধমান হয়ে কোন কোন স্থানে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের রূপ ধারণ করেছে, সংবিধানের মৌল আদর্শ বিপর্যস্ত হচ্ছে২। পঞ্চাশের দশকের শেষ দিক থেকে সাম্প্রদায়িক, আঞ্চলিক, ভাষাগত ও জাতভিত্তিক দাঙ্গা বার বার দেশকে নাড়া দিয়েছে। উপরন্তু, নির্বাচনী এবং নির্বাচন-বহির্ভূত রাজনৈতিক গণ-জমায়েতের জন্য ব্যাপকভাবে সাম্প্রদায়িক ও জাতভিত্তিক আন্দোলনকে কাজে লাগানো হচ্ছে৩। জাতীয় ঐক্য ও সংহতি ভেঙে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কেন বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের সুরটি ভেঙে যাচ্ছে? এই প্রশ্ন সংবেদনশীল প্রতিটি মানুষের। আলোচ্য নিবন্ধে সংক্ষেপে তারই উত্তর খোঁজার প্রয়াস।
ভারতীয় জীবন ধারায় ধর্মের যথেষ্ট প্রভাব থাকায় ধর্মকে অবলম্বন করে নানা ধর্ম তত্ত্ব ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটে। তার ফলে একদিকে যেমন ধর্মীয় মৌলবাদ ধর্মান্ধতার উন্মেষ ঘটায়, অন্যদিকে তেমনি ধর্ম নির্ভর ঔদার্যবোধের ক্ষেত্রও রচিত হয়। ভারতের বিভিন্ন জন গোষ্ঠীর ধর্মতত্ত্বে তার প্রকাশ পাওয়া যায়৪। আর তার মাধ্যমেই জনমানস গঠিত হয়। তাই নানা ধর্মের জনগোষ্ঠীতে বিভক্ত ভারতে সাম্প্রদায়িকতাবাদ সমাজের অগ্রগতির পথে মস্ত বড়ো অন্তরায় হিসেবে দেখা দিয়েছে। ভারতে ধর্মান্ধ মৌলবাদীরা নানা বৃত্তে বিভক্ত; যথা– হিন্দু, মুসলিম, শিখ ইত্যাদি। আবার প্রতিটি সম্প্রদায়গত বৃত্তের উপবৃত্তও আছে।
জন সমষ্টির সংখ্যাগুরু অংশের হিন্দু মৌলবাদী বৃত্তটি ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ গঠনের কথা বলে। স্বাধীন ভারতে হিন্দু মৌলবাদী বৃত্তটি হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের তত্ত্বটি কার্যকর করার জন্য বিভিন্ন সংগঠন গড়ে তোলে, তাদের পত্র পত্রিকার মাধ্যমে এই তত্ত্ব প্রচার করা হয়। এই তত্ত্বের পক্ষে যে সব হিন্দু মৌলবাদী দল ক্রমশ গড়ে ওঠে তার কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হল – জনসংঘ (১৯৫১), বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (১৯৬৪), শিব সেনা (১৯৬৬) ও ভারতীয় জনতা পার্টি (১৯৮০)৫। হিন্দু মৌলবাদীরা ছাত্র, যুবক ও শ্রমিকদেরও সংগঠিত করে। ১৯৫৫ সালে গঠিত হয় ‘ভারতীয় মজদুর সংঘ’। ১৯৭১ সালে স্থাপন করা হয় ‘ভারতীয় রায়ত সংঘ’৬। হিন্দু মৌলবাদীরা সংসদীয় প্রথাতেও অংশ গ্রহণ করে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আর এস এস) সঙ্গে এই সব দলগুলির সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ ।
অন্যদিকে, ১৯৪৫ সালে পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে আলেম ও মওলানারা নিখিল ভারত ‘জামিয়াত-ই- উলেমা’ নামক সংগঠন স্থাপন করে। তখন থেকেই লিগ নেতৃত্ব প্রভাবশালী মুসলমান ধর্মতত্ত্ববিদদের সক্রিয় সহযোগিতা লাভ করেন, আর তাঁদের মাধ্যমে ব্যাপক মুসলমান জনসাধারণের মধ্যে লিগের প্রভাব বৃদ্ধি করতে সক্ষম হন। ধর্ম ও রাজনীতির সংমিশ্রণে মুসলিম মনন গঠনে মুসলিম বৃত্তটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল৭। ভারত বিভাগের পর অবস্থার পরিবর্তন ঘটলেও স্বাধীন ভারতে মুসলিম মৌলবাদী বৃত্তটি ক্রমশ সংগঠিত হতে থাকে। পাকিস্তান রাষ্ট্র স্থাপনের পর মওলানা মওদুদী সেখানে ‘জামাত–ই-ইসলামি’ দল পরিচালনা করেন। তাঁরই রচিত পুস্তিকা ও ভাষণে মুসলিম স্বাতন্ত্র্যবোধ সজীব থাকে এবং ভারতেও এই সংগঠনের কাজকর্ম নতুন করে শুরু হয়৮। ১৯৪৮ সাল থেকেই এই সংগঠন যে স্লোগান উত্থাপন করে তাতে বলা হল মুসলমানরা কেবলমাত্র ‘হুকুমত–ই-ইল্লাহিয়া’র প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করতে পারে অর্থাৎ যে রাষ্ট্র আল্লাহকে বিশ্বাস করে সেই রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকতে পারে। প্রতিটি মুসলমানের প্রধান কর্তব্য হল এই ধরনের রাষ্ট্র স্থাপন করা। আল্লাহতে বিশ্বাস নেই এমন শাসন হল ‘অপবিত্র শাসন’৯। অসংখ্য পুস্তিকার মাধ্যমে ‘জামাত-ই-ইসলামি’ ধর্মনিরপেক্ষ শাসন ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা ও বিচার ব্যবস্থাকে ‘শয়তানি প্রতিষ্ঠান’ বলে নিন্দা করে এবং এই ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থাকে মেনে নেওয়া অপবিত্র কাজ এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসহীনতা বলে মত প্রকাশ করে। তখন থেকেই সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজকে এক প্রকট স্বাতন্ত্র্যবোধে উদ্বুদ্ধ করার সচেতন প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়১০। দিল্লি থেকে প্রকাশিত জামাত-ই-ইসলামি সংস্থার মুখপত্র দৈনিক ‘দাওয়াত’ ও ‘মার্গদীপ’ এবং সাপ্তাহিক ‘র্যাডিয়ান্স’ কাগজে নিয়মিত স্বাতন্ত্র্য বোধের ধারাটিকে উজ্জীবিত করা হয়১১। ১৯৪৮ সালেই ‘ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ’ নামক রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব হয়। আরও কয়েকটি সংগঠন ক্রমশ স্থাপিত হয়, যথা, ‘তামির-ই-মিল্লাত’ (১৯৬০), ‘মুসলিম-মজলিশ-ই-মুশাওয়ারত’ (১৯৬৪), ‘মুসলিম মজলিশ’ (১৯৬৮), ‘মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল-মুসলিমিন’ (১৯৬৮) প্রভৃতি১২। এই সব সংস্থা ইসলামি রাষ্ট্রের তত্ত্ব প্রচার করে। তারা এই কথাও বলে, ভারতে ইসলাম বিপন্ন। ১৯৬৭ সাল থেকেই স্বাতন্ত্র্যবাদী মুসলিম সংগঠনগুলোর তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। ১৯৬৭-১৯৬৮ সালে এইসব সংস্থার পরিচালনায় যে সব আলোচনা সভা হয় তাতে শরিয়তের বিধানের পক্ষে মত ব্যক্ত হয়। এই সব বিধান অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য সংগঠনগত প্রয়াসও চলে। ধর্মীয় রাজনৈতিক সংস্থা গুলির তৎপরতা বৃদ্ধি পায়১৩।
লক্ষণীয় যে, আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের হিন্দুত্ব এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদী তত্ত্ব ও ধারণার সঙ্গে মুসলিম লিগ প্রচারিত মুসলমানত্ব এবং মুসলিম জাতীয়তাবাদের তত্ত্ব ও ধারণার কোন পার্থক্য নেই। বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনগুলি ‘ইসলাম বিপন্ন’ এই ধুয়া তুলে মুসলমানদের ধর্মীয় উন্মাদনার ভিত্তিতে সংগঠিত করতে চেয়েছিল হিন্দুদের বিরুদ্ধে। ঠিক অনুরূপভাবে, হিন্দুরা সংখ্যাগুরু হওয়া সত্ত্বেও হিন্দু ধর্ম ‘বিপন্ন’ হচ্ছে এবং সংখ্যাগুরুদের মধ্যে ধর্ম উন্মাদনা এবং মুসলিম বিদ্বেষ সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে১৪।
সাম্প্রদায়িকতার উত্থান:
দুর্ভাগ্যবশত ভারতের আর্থসামাজিক ব্যবস্থা আজও সাম্প্রদায়িকতার অনুকূলে রয়ে গিয়েছে। ভারতের অর্থনীতি বিকশিত হয়েছে। কিন্তু এতই নিচু হারে সে বেড়েছে যে দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং অসাম্যের সমস্যা ও বৃদ্ধি পেয়ে মানুষের মনে হতাশা ও সামাজিক উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। তার পরিণতি হয়েছে অপ্রতুল অর্থনৈতিক সুযোগ ও সংস্থানের জন্য তাদের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা। বিশেষ করে মধ্যবিত্তদের ক্ষেত্রে ১৯৫০-এর দশকে বিশাল সুযোগ উন্মুক্ত হয়ে পরবর্তী দশকগুলিতে লুপ্ত হয়। অন্যদিকে কৃষকদের ভেতর শিক্ষার বিস্তারের ফলে মধ্যবিত্ত কর্মপ্রার্থীর সংখ্যা বিপুল বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সমাজ বিজ্ঞানী ড. এ. আর. দেশাই তাঁর লেখা ‘ভারত ব্যবচ্ছেদের পর ভারতীয় ইউনিয়নে জাতপাতের ও সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থে বলেছেন, ঔপনিবেশিক দাসত্ব থেকে ভারত মুক্তি পেয়েছে বটে কিন্তু বোঝার মতো এদেশের সর্বাঙ্গে এঁটে রয়েছে ঔপনিবেশিক যুগের সেই পুরোনো শোষণকারী রাষ্ট্রকাঠামোটি। স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রের আধিপত্য ছিল সামন্তশ্রেণি ও ধনপতিদের। মন্থর গতিতে অর্থনৈতিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ধনপতিদের প্রাধান্য বাড়তে থাকে, কিন্তু সমাজের সামন্ত যুগের আধিপত্য লুপ্ত হয় না। পুরোনো দিনের মতই থেকেই যায়। সেগুলিকেই ব্যবহার করছিল (এবং করছে) ভেদপন্থী শক্তি সমূহ। ড. দেশাই তথ্য ও যুক্তি দিয়ে দেখান যে শুধু বিজেপি বা আরএসএসই নয়, সমগ্র বুর্জোয়া শাসক শ্রেণিই ধর্ম, জাতপাতের প্রশ্ন ও ভাষাকে ব্যবহার করে চলেছেন ভেদপন্থা ও উগ্র জাতীয়তাবাদকে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে। যে কংগ্রেস দল দাবি করে যে তারা ধর্মনিরপেক্ষ, তারাও এই অপরাধে অপরাধী১৫।
‘ভারতে সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্প্রদায়িক হিংসাশ্রয়ী ঘটনাবলি’ নামক প্রবন্ধে অধ্যাপক জোয়া হাসান আলোচনা করেছেন সাম্প্রদায়িকতার আর্থসামাজিক ভিত্তি ও রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে। তিনি লিখেছেন, আমাদের অর্থনৈতিক –সামাজিক বিকাশ ঘটেছে খণ্ডিত ভাবে। ধনতন্ত্রের বিকৃত বিকাশ সমাজকে পশ্চাৎপদই করে রেখেছে। আর এই সব কিছুই সাহায্য করেছে সাম্প্রদায়িকতার প্রসার। অর্থনৈতিক বন্ধ্যা পরিস্থিতির দরুণ সঙ্কুচিত বাজারে চাকরি, ভরতুকি ও নানান সুযোগ সুবিধার জন্য বিভিন্ন সম্প্রদায় ও গোষ্ঠী পরস্পরকে প্রতিপক্ষ মনে করে। বিশেষত হিন্দু- মুসলমানদের মধ্যে নানান ধরণের বিরোধ ও চাপ একটা মারাত্মক চেহারা ধারণ করেছে এবং বুর্জোয়া দলের সেই সব বিরোধকে বহু ক্ষেত্রেই প্রবাহিত করেছে সাম্প্রদায়িক খাতে, যদিও সেগুলি আসলে ছিল শ্রেণিবিরোধের নতুন চেহারা। আর এইভাবে কায়েমি স্বার্থ সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষকে ব্যবহার করে নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থ সিদ্ধি করতে।
১৯৫০ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে দেশে যে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ যে কম হয়েছে তার একটি কারণ নিশ্চয়ই ১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত দাঙ্গার রক্তাক্ত ক্লান্তি, কিন্তু তার আরও একটি কারণ, প্রথম ও দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ফলে ভারতীয় জনসাধারণের প্রথম অর্থনৈতিক স্ফূর্তি। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সারা দেশে প্রায় চরম পর্যায়ের আর্থিক সঙ্কট দেখা দিল, বিশেষত খাদ্য সঙ্কট। সেই সঙ্কটের ফলে রাজনৈতিক দলগুলির অভ্যন্তরে শক্তি বিন্যাসে পরিবর্তন সূচিত হল। শাসক দল হিসেবে কংগ্রেস চটজলদি কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনসমর্থন রক্ষার চেষ্টা করল। ১৯৬২ সালে চৈনিক আক্রমণে ও ১৯৬৫ সালের পাকিস্তান যুদ্ধে প্রতিরক্ষার ব্যয় বহু গুণ বেড়ে গিয়েছিল। কংগ্রেস তার জনসমর্থন রক্ষার জন্যে তখনই কখনও কখন ও সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গেও বোঝাপড়া শুরু করে দিয়েছিল। যে নেহরুবাদকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য রাজনৈতিক দল হিসেবে জনসাধারণের বৃহৎদংশের আস্থা অর্জন করেছিল, সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে সেই নেহরুবাদ কার্যত ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকেই ‘কংগ্রেস কৌশল’ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে১৬। ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনৈতিক দর্শন বা বিশ্বাস থেকে কংগ্রেস তখনই সরে আসতে আরম্ভ করেছে।
স্বাধীনতার পরে সত্তরের দশক থেকে যে নতুন ধরনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেখা দেয়, তার কারণ ভিন্ন। তখন মুসলমানরা লোকসভায় বা বিধানসভায় তাঁদের জন্যে আসন সংরক্ষণের দাবি তোলেনি বা সরকারি চাকুরিতেও সংরক্ষণের দাবি জানাননি। সুতরাং রাষ্ট্র ক্ষমতা নিয়ে হিন্দু–মুসলমানদের মধ্যে কোন বিরোধ ছিল না। সত্তরের দশক থেকে স্থানীয় কারণে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ অনেক বেশি হতে লাগল। স্থানীয় কারণগুলি বিচিত্র ও জটিল। কখনও সামাজিক, কখনও অর্থনৈতিক। এই স্থানীয় সংঘর্ষগুলি বেশিরভাগ সময়ই সেই বিশেষ শহরের মধ্যে ,বা বিশেষ শহরের বিশেষ অঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। অন্য কোন শহরে এই দাঙ্গার প্রতিক্রিয়ায় দাঙ্গা বাধেনি। এমনকি একই শহরের অন্য এলাকাতেও সবসময় এই প্রতিক্রিয়া ঘটেনি।
নির্বাচনিক সাম্প্রদায়িক রাজনীতি:
নির্বাচনের দ্বারা ক্ষমতা পাওয়ার রাজনীতি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কেন্দ্রস্থানীয়। তাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতি সমস্ত নাগরিকদের রাজনীতিতে টেনে আনে, এই হল তার বিশেষত্ব। ভোট ব্যাংক গড়ে তোলার জন্য স্বার্থ সম্পর্কিত সংগঠন করাটাও গণতান্ত্রিক রাজনীতির অনিবার্য, গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গবিশেষ। ক্ষমতা সাধনের রাজনীতি করতে গিয়ে সমাজ ও দেশের হিতের জন্য কি কি শর্ত মানতে হয়, কোথায় নিয়ন্ত্রণ রাখতে হয়, কি আয়ত্তে রাখতে হয়, এসব ব্যাপারে অবহেলা করার ফলে সংকটজনক পরিস্থিতি উপস্থিত হয়েছে১৭।
রাজনৈতিক প্রশ্নের মীমাংসা ও রাজনৈতিক কর্মসূচির বদলে সম্প্রদায় বিশেষের দৈনন্দিন বেঁচে থাকার সমস্যা যখন নির্বাচনের একটা নিয়ন্তা শক্তি হয়ে দাঁড়ায়, তখনই শুরু হয়ে যায় নির্বাচনী রাজনীতির গোপন সাম্প্রদায়িকতা। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা জনসাধারণের মনে এমন বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে যে সংখ্যালঘুরাও এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতার ভয়ে ভোট দেন। ভারতের বহু আসনে সংঘবদ্ধ সংখ্যালঘুরা ভোটপ্রার্থীকে জিতিয়ে বা হারিয়ে দিতে পারেন। সংখ্যালঘু ভোটের সঙ্গে দলিত ভোট মেলালে এ রকম আসনের সংখ্যা অনেক বেশি দাঁড়ায়। কংগ্রেস দল নির্বাচনে জয় সুনিশ্চিত করতে মুসলমান–দলিত ভোটকে যত্নের সঙ্গে লালন করেছেন, রক্ষা করেছেন। কংগ্রেস সংখ্যালঘুদের এ রকম বোঝাতে সফল হয় যে এক কংগ্রেসই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। ইন্দিরা গান্ধির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা হয়ে উঠল – কংগ্রেস বলতে এক ইন্দিরা গান্ধিই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি।
সংখ্যাগুরু সাম্প্রদায়িকতার প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধির জন্য একমাত্র ভারতীয় জনতা পার্টি বা সংঘ পরিবার দায়ী নয়। আমরা জানি, সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ইন্ধন জোগাতে এবং ভোটের সময় সাম্প্রদায়িক তাস খেলতে প্রায় সব দলই অভ্যস্ত। ১৯৪৮ সালে গান্ধি হত্যার দায়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) কে নিষিদ্ধ করা হলেও কংগ্রেস সরকার দেড় বছরের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এর ক্ষেত্র প্রস্তুত করে ঘনশ্যাম দাস বিড়লার মধ্যস্থতা আর নেহরু ও প্যাটেলের কাছে বন্দি গোলওয়ালকরের পত্রগুচ্ছ, যাতে ছিল ‘কমিউনিজমের বিপদ’ রুখতে সহযোগিতার প্রস্তাব১৮। ভারত-চিন সম্পর্কের পটভূমিকায় ১৯৬৩ সালে রাজধানীতে প্রজাতন্ত্র দিবসের শোভাযাত্রায় আরএসএসকে নিজস্ব ব্যানার নিয়ে অংশ গ্রহণের ব্যবস্থা করে দেন জওহরলাল নেহরু। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যুদ্ধের পরে ‘এশিয়ার মুক্তিসূর্য’ ইন্দিরাকে আরএসএস অভিনন্দন করে দেবীরূপে, ভারতমাতার অবতার রূপে। ইন্দিরা গান্ধির রাজত্বের আট বছরের ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত শুধু দু’ হাজার সাতান্নটি হিন্দু-মুসলিম ধর্মীয় দাঙ্গার ফলেই এক হাজার একশো তিনজন মানুষ নিহত হয় বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সে সময়ের বাৎসরিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। জনতা সরকারের আমলেও ১৯৭৭ ও ১৯৭৮ সালে যথাক্রমে ১০৮ ও ২৩০টি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়১৯। শ্রীমতী গান্ধির রাজত্ব কালে বিচ্ছিন্নতাবাদী উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়। ফলে সারা দেশের জাতীয় ঐক্যের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ নেমে আসতে দেখা যায়। ১৯৮১ সালে মীনাক্ষীপুরম ধর্মান্তরকরণের পর বিশ্ব হিন্দু পরিষদ দেশ জুড়ে যে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে তার শরিক হন কংগ্রেস নেতারাও। ‘হিন্দু একাত্মতা যজ্ঞে’ অংশ গ্রহণ করে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী আওয়াজ তোলেন – ‘আজ হিন্দু বিপন্ন, হিন্দুত্ব বিপন্ন’২০। পাঞ্জাবে অকালি দলকে কোণঠাসা করতে খলিস্থানি উগ্রপন্থাকে পরোক্ষ মদত দেন ইন্দিরা গান্ধি। কিন্তু তা যখন শেষ পর্যন্ত তাঁরই প্রাণ কেড়ে নিল তখন শিখ বিরোধী দাঙ্গায় নামল কংগ্রেস, আরও বাড়ল তার মধ্যে হিন্দু সাম্প্রদায়িক ঝোঁক।
এরই সূত্র ধরে ইন্দিরা গান্ধির পুত্র তথা ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধির ১৯৮৬ সালে বিতর্কিত বাবরি মসজিদের তালা খোলার নির্দেশনামা, অযোধ্যায় রামের পূজার আয়োজন এবং ‘মুসলিম মহিলা আইন’ প্রণয়নের মাধ্যমে কংগ্রেসের তৎকালীন নেতৃত্ব হিন্দু–মুসলমান উভয়ই সম্প্রদায়কেই সন্তুষ্ট করতে চেয়েছিল নির্বাচনী কৌশল হিসেবেই। আর আডবানিজির ‘রথযাত্রা’ বা ‘গৌরব যাত্রা’ আয়োজনের পিছনে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বা ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ প্রচারের ভাবনা কাজ করে না তা বলাই বাহুল্য। অবশ্য এই রথযাত্রার ফলে ভারতীয় জনতা পার্টির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অনেকাংশে সফল হয়েছিল।
আর্থিক নীতির প্রশ্নে যে দল জনতার শত্রু, সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে সেই দলই জনতার বন্ধু – এভাবে দুটো বিষয়কে বিচ্ছিন্ন করে দেখলে আসলে জনতাকে শাসক শ্রেণির সুচতুর কৌশলেরই শিকার হতে হয়। ১৯৮৯-এর ভোটের আগে ও ১৯৯০-এর নভেম্বর–ডিসেম্বরের দাঙ্গায় হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ভারতীয় রাজনীতিকে বিষিয়ে দিয়েছিল। সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠের সাম্প্রদায়িক আক্রমণ গণতন্ত্রকে মিথ্যে করে দেয়, দিচ্ছেও। কিন্তু তৎসত্ত্বেও এ কথা বিশেষ করে বলা দরকার যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা আসলে দলিতদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা ও শিখদের বিরুদ্ধে দাঙ্গারই সমগ্রতার একটা অংশ। ১৯৮৪–এর শিখবিরোধী দাঙ্গার নেতারা যখন এমনকি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার ও কংগ্রেস সংগঠনের সদস্য ও নেতা হতে পারেন, বারবার বলা সত্ত্বেও শিখবিরোধী দাঙ্গার অপরাধীরা যখন শাস্তি পান না – তখন বুঝতে হবে সাম্প্রদায়িকতা এখন একটা রাজনৈতিক নীতি হিসেবেই গৃহীত হতে চলেছে; গোপনে, হয়তো অচেতনেই, কখনও নিশ্চয়ই সজ্ঞানে। কিন্তু, এই অচেতন বা সচেতন গোপন নীতির ফলে যখন একজন দলিত বা শিখ বা মুসলমান মারা যান, তখন তাঁদের মৃত্যু ভারতীয় গণতন্ত্রেরই মৃত্যু ঘটায়, প্রকাশ্য মৃত্যু।
পাদটীকা:
১. বিপান চন্দ্র, “সমসাময়িক ভারত বিষয়ক নিবন্ধ”, কলকাতা: কে পি বাগচি অ্যান্ড কোম্পানি, ২০০৯, পৃ. ১০৭।
২. অমলেন্দু দে, “ধর্মীয় মৌলবাদ ও ধর্ম নিরপেক্ষতা”, কলকাতা: প্রতিভাস, ২০১৪, পৃ. ১৩।
৩. বিপান চন্দ্র, “আধুনিক ভারত ও সাম্প্রদায়িকতাবাদ”, কলকাতা: কে পি বাগচি অ্যান্ড কোম্পানি, ১৯৮৯, পৃ. ২৬।
৪. ইরফান হাবিব, রোমিলা থাপার, সীতারাম ইয়েচুরি ও হরবংশ মুখিয়া, “ভারত ভাবনা ও ধর্মনিরপেক্ষতা” কলকাতা: ন্যাশনাল বুক এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড, ২০১৬, পৃ. ২৭।
৫. Craig Baxter, “The Jana Sangh: A Biography of An Indian Political Party”, Bombay, 1971 (first published in USA in 1969), pp-68-70. ১৯৫১ সালের ১৬ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সক্রিয় সদস্যরা ও অন্যান্যরা নতুন দিল্লিতে মিলিত হয়ে একটি নতুন দল গঠনের সিদ্ধান্ত করেন। ৫ মে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি কলকাতায় জনসংঘ প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন। ১৯৬৪ সালের আগস্ট মাসে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের নেতা গোলওয়ালকর হিন্দু সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে কয়েকজন ধর্মীয় নেতাকে বোম্বাইয়ে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ করেন। এই সভাতেই ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ’ গঠিত হয়। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রচারক শিবরাজ শঙ্কর আপ্তে হলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। ১৯৬৬ সালে বাল ঠাকরে নামে এক তরুণ মারাঠি শিবাজির নামের সঙ্গে যোগসূত্র রেখে ‘শিব সেনা’ নামে সংগঠন গড়ে তোলেন। আঞ্চলিক স্বার্থকে অবলম্বন করে মহারাষ্ট্রে এক রাজনৈতিক দল স্থাপিত হয়। ১৯৭৭ সালে ভারতীয় জনসংঘ নতুন শাসক দল ‘জনতা পার্টি’র সঙ্গে মিশে যায়; তারপর ১৯৮০ সালের ৫ এপ্রিল ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’ গঠিত হয়। নতুন নামে পুরনো জনসংঘের প্রতিষ্ঠা হয়। ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃস্থানীয় সকলেরই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সঙ্গে যোগ রয়েছে, তারা সকলেই আরএসএস-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং নিজেদের একই পরিবারভুক্ত মনে করেন।
৬. Craig Baxter, “The Jana Sangh: A Biography of An Indian Political Party”, Bombay, 1971, pp-129-130. ১৯৭১ সালে মজদুর সংঘই ‘ভারতীয় রায়ত সংঘ’ নামে কৃষকদের সংগঠন স্থাপন করে । ১৯৭৯ সালের ৪ মার্চ ‘ভারতীয় কিষান সংঘ’ নামে কৃষকদের একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। ১৪টি রাজ্যে এর সদস্য সংখ্যা ছিল ২১৫,০০০ জন।
৭. Amalendu De, “Islam in Modern India”, Calcutta, 1982, pp. 214-229. এই গ্রন্থের একটি অধ্যায়ে মুসলিম লিগের সমর্থক উলেমাদের ভূমিকার বিস্তৃত আলোচনা রয়েছে।
৮. মওলানা আউয়াল লিখিত ও কবির সম্পাদিত গ্রন্থ দ্রষ্টব্য। ১৯৫১ সালের জানুয়ারি মাসে মওলানা মওদুদী ও তাঁর দলের উদ্যোগে পাকিস্তানে নানা মতের ৩৩ জন আলেমের যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ‘তাতে ইসলামিক রাষ্ট্রের ২২টি মৌলিক নীতি প্রণীত হয়’। পরবর্তীকালে উল্লিখিত ‘নীতিমালাকে জামাত-ই-ইসলামি আটদফা দাবিতে রূপান্তরিত করে’। তারা ইসলামিক শাসনতন্ত্রের স্লোগান তোলে। পাকিস্তানে পশ্চিম ও পূর্ব অংশেই জামাত-ই-ইসলামি তাদের দাবির ভিত্তিতে আন্দোলন পুস্তিকা দ্রষ্টব্য সংগঠিত করে। মওদুদী কাদিয়ানীদের ‘অমুসলিম সংখ্যালঘু’ বলে গণ্য করার দাবি উত্থাপন করেন। তারই পরিণতি হল ১৯৫৩ সালের লাহোরে কাদিয়ানী দাঙ্গা ( মওলানা মওদুদীর কাদিয়ানী সম্পর্কিত উর্দু ও ইংরেজি রচনা)।
৯. Maulana Ikhlaq Hussain Qasmi, “Jamaat–e-Islami and Secularism”, New Delhi: Sampradayikta Virodhi Committee, Delhi, pp. 2-3. এই পুস্তিকায় কাসমি লেখেন, “Jamaat–e-Islami raised the slogan that the Muslim can owe allegiance only to a state believing in Allah (Hakumat–e-Illahia); that it is the foremost duty of every Muslim to set up such a state; that any system of government other than the regime believing in Allah is an unholy regime” (Ibid, p. 2). কাসমি আরও লেখেন, “Hundreds of books, in every language, were published by the Jamaat–e–Islami preaching that the Secular education, secular system of government and the secular judiciary all are satanic institutions and being loyal to them is an unholy act and is against the faithfulness to Allah’’(Ibid,pp. 2-3).
১০. প্রাগুক্ত. ভারতে গণতান্ত্রিক বিধি–ব্যবস্থার সমর্থক মুসলমানদের বিরুদ্ধে জামাত–ই-ইসলামি তীব্র আক্রমণ চালায় (Ibid,p.3)।
১১. বোর্ড অফ ইসলামিক পাবলিকেশন-এর পক্ষ থেকে দিল্লি থেকে ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘র্যাডিয়ান্স’ প্রকাশিত হত।
১২. “Dawat” vol.14,no.131, 27 August,1965; Maulana Ikhlaq Hussin Qasmi, op. cit; Rafiq Ahmad, “Majlis–e-Musha-varat A Realistic Appraisal”, New Delhi: Sampradayikta Virodhi Committee, pp. 1-12; “Radiance”, February 23, 1969, pp. 3,13; “Radiance”, April 20, 1969, p. 16 বিভিন্ন রাজ্যে আরও কয়েকটি মুসলিম সংগঠন স্থাপিত হয়, যথা, ‘ইমারত শরিয়া বিহার’, অন্ধ্র প্রদেশের ‘মজলিশ-ই-তামির-ই-মিল্লাত’ এবং উত্তর প্রদেশের ‘মুসলিম মজলিশ’। এই সব সংগঠন ‘মুসলিম মজলিশ–ই-মুশা–ওয়ারত’–এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গড়ে তোলে, তার প্রধান অফিস ছিল দিল্লিতে। ‘ইসলামি রাষ্ট্র’ স্থাপন করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। প্রথমে ড. ফরিদি মুশা ওয়ারত এর নেতা ছিলেন। ১৯৬৯ সালে মৌলানা মুফতি আতিকুর রহমান ছিলেন ‘সারা ভারত মুসলিম মজলিশ-ই-মুশা-ওয়ারত’-এর প্রেসিডেন্ট। এই সময়ে ‘জামাত–ই-ইসলামি’–র নেতা ছিলেন মৌলানা সৈয়দ হামিদ হোসেন। আর ‘মুসলিম মজলিশ’–এর সভাপতি ছিলেন এম. জুলফিকরুল্লাহ। পাকিস্তানে চলে গেলেও মওলানা মওদুদী রচিত প্রবন্ধ ও পুস্তিকাসমূহ ভারতের ‘জামাত ই ইসলামি’ প্রচার করতে থাকে। মওলানা মওদুদীর প্রশংসা তাদের পুস্তিকায় ও পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। মওলানা মওদুদীকে বলা হত ‘মিল্লাত-ই-ইসলামি’ নেতা। দৃষ্টান্ত হিসেবে ‘মক্তব-ই-জামাত-ই-ইসলাম’ প্রকাশিত ‘দ্য ডায়মন্ড নেকলেস’ গ্রন্থের উল্লেখ করা যায় ( দ্র. Maulana Ikhlaq Hussain Qasmi. op.cit. p. 5)। উল্লেখ্য এই, ১৯৬৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যা অঞ্চলের ‘আমির জামাত–ই-ইসলামি’ ছিলেন মওলানা আবদুল ফাত্তাহ (দ্র. Radiance, April 6, 1969, p. 13)। অবশ্য ১৯৪৮ সাল থেকেই পশ্চিমবঙ্গে জামাত–ই-ইসলামির কার্যাবলি শুরু হয়।
১৩. ‘Radiance’, September 29, 1968 and October 27, 1968.
১৪. প্রবীর সরকার, ‘ভারতে বহুত্ববাদ’, কলকাতা: একুশ শতক, ২০১৯, পৃ. ১৩১।
১৫. অভ্র ঘোষ সম্পাদিত ‘বিতর্কিকাপত্রিকা’, কলকাতা: জয়শ্রী প্রেস, ১৯৯৮, পৃ. ২৮।
১৬. সুজিত সেন সম্পাদিত ‘বিষয় সাম্প্রদায়িকতা ফিরে দেখা’, কলকাতা: মিত্রম, ২০০৮, পৃ. ১১১।
১৭. স্বরাজ সেনগুপ্ত সম্পাদিত ‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বিবিধ কণ্ঠস্বর’, কলকাতা: রেডিয়্যান্স, ২০১৮, পৃ. ১৪৫।
১৮. সুজিত সেন সম্পাদিত ‘বিষয় সাম্প্রদায়িকতা ফিরে দেখা’, কলকাতা: মিত্রম, ২০০৮, পৃ. ১৩৪।
১৯. কমল চৌধুরী, ‘স্বাধীনতা ৫০ পেরিয়ে’, কলকাতা: দে’জ পাবলিশিং, ১৯৯৯, পৃ. ১৯৬।
২০. সুজিত সেন সম্পাদিত ‘বিষয় সাম্প্রদায়িকতা ফিরে দেখা’, কলকাতা: মিত্রম, ২০০৮, পৃ. ১৩৫।
খুব ভালো। কয়েকটি নতুন তথ্য পেলাম এবং খুব উপকৃত হলাম।