সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

পুরনো সম্পাদকীয়

আজ বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনে ভারতীয় উপমহাদেশে বর্ষশুরুর দিনের ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে উনিশ শতকের শেষ দশকে গিরিশ চন্দ্র তর্কালঙ্কার ও প্রাণ নাথ সরস্বতীর লেখা ‘ক্রনোলজিক্যাল টেবলস’ আর রবার্ট সিওয়েল ও শংকর বালকৃষ্ণ দীক্ষিতের লেখা ‘দ্য ইন্ডিয়ান ক্যালেন্ডার’ গ্রন্থদুটি থেকে প্রাচীন ও মধ্যযুগ থেকে প্রচলিত বেশ কয়েকটি সনের নামের সন্ধান পাওয়া গেল। এদের মধ্যে কলিযুগ, সপ্তর্ষি সংবৎ বা লৌকিক অব্দ, শকাব্দ বা শালিবাহন অব্দ, মালব সংবৎ বা বিক্রম সংবৎ, বৃহস্পতি চক্র বা বার্হস্পত্য সংবৎ, বাংলা সন বা বঙ্গাব্দ, ফসলি সন, বিলায়তি সন, কোল্লম আণ্ডু, আমলি সন, নেওয়ার বা নেপাল সংবৎ, এবং মগী সন এই গ্রন্থদ্বয় প্রকাশের সময় প্রচলিত ছিল।

‘সত্য আর মিথ্যা এসে বিবাহে বসেছে একাসনে’

ভারতের ইতিহাস চর্চার এক অভাবনীয় পর্বের যবনিকা প্রতিদিন উন্মোচিত হচ্ছে। ভারতে প্রযুক্তিবিদ্যার সর্বশ্রেষ্ঠ মানের উচ্চশিক্ষার জন্য নির্মিত প্রতিষ্ঠান আজ এক বিচিত্র ইতিহাস চর্চা নিয়ে ব্যস্ত। প্রযুক্তিবিদ্যার পীঠস্থানের সেই ইতিহাস চর্চা থেকে বৈজ্ঞানিক যুক্তিবোধ অপসৃত হয়েছে গহন তমিস্রায়; অন্ধ বিশ্বাস আর ধর্মীয় বিদ্বেষ আছন্ন করেছে মনন। প্রচণ্ড প্রচারের মাধ্যমে ক্রমশ এক সম্মোহনী মায়ায় অস্বচ্ছ করে দেওয়া হচ্ছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অর্থ – ঔপনিবেশিক শাসনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করে দেশের পরাধীনতার কালপর্বকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এক সহস্রাব্দ পূর্বে। পরাধীনতার দিনগুলিতে বিদেশি শাসককুলের সঙ্গে তাদের দেশি সহযোগীদের গলাগলির ইতিহাসকে জনমানস থেকে মুছে দেবার জন্য এক বুদ্ধিদীপ্ত ভোজবাজির খেলা চলছে!

সেটা ১৮১৭ সালের কথা। স্কটল্যান্ডে বসে বসেই জেমস মিল লিখে ফেললেন তাঁর নিজের ভাবনার রসে জারিত তিন খণ্ডে ভারতের ইতিহাস ‘দ্য হিস্ট্রি অফ ব্রিটিশ ইন্ডিয়া’। মুখবন্ধে তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, তিনি ভারতে কখনও আসেন নি, ভারতের কোনও ভাষা সম্পর্কে তাঁর প্রাথমিক জ্ঞান নেই এবং তাঁর মতে ভারতের ইতিহাস রচনার জন্য এসব অপরিহার্যও নয়। আশ্চর্য ব্যাপার হলো, এহেন লেখকের ভারতের ইতিহাসের ত্রিযুগী বিভাগের ভাবনার প্রভাব থেকে আজও আমরা মুক্ত হতে পারিনি। সেই কারণেই আজ যখন স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর অমৃত মহোত্সবের আয়োজন চলছে, তখন বোধ হয় আরও বেশি করে ভাবনার প্রয়োজন আছে, কাদের ইতিহাস আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যাঁরা স্বাধীনতার অমৃতের স্বাদ পেয়ে ধন্য হলেন, না স্বাধীনতার ঊষাকালের মহামন্থন থেকে উঠে আসা হলাহল পান করে যাঁরা আজও নীলকণ্ঠ।
দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসের সম্ভবত এক যুগসন্ধিক্ষণের মধ্য দিয়ে আমরা চলেছি। অতিমারীর বর্তমান প্রকোপের যখন অবসান হবে, তখন এই উপমহাদেশের প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের আর্থিক অগ্রগতির পথের মধ্যে যে ভিন্নতা ও ব্যবধান ইতিমধ্যেই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে শুরু করেছে, তার প্রকৃত স্বরূপ হয়ত সম্পূর্ণ প্রকাশিত হবে। সমকালীন ইতিহাস নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁদের কাছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির অর্থনীতির অতি-সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলির ঐতিহাসিক পৃষ্ঠভূমি অন্বেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেই তথ্যই হদিস দেবে এই বিপুল ভূভাগের আসন্ন রাজনৈতিক আর সামাজিক পরিবর্তনের প্রকৃতির। ‘ইতিহাস আড্ডা’র মুখবই ও পোর্টালের পাতায় দক্ষিণ এশিয়ার, বিশেষত ভারত ও বাংলাদেশের, সাম্প্রতিকতম আর্থিক পরিবর্তনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে পাঠকদের সামনে নিয়মিতভাবে উপস্থিত করার জন্য আমরা প্রতিবদ্ধ থাকব।