সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

পুরনো সম্পাদকীয়

ধর্মের ইতিহাস নিয়ে চর্চার সময় সবাই লক্ষ্য করেছেন যে পৃথিবীর সব ধর্মীয় বিশ্বাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সৃষ্টিতত্ত্ব। প্রাচীন কাল থেকে দর্শন চর্চারও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ সৃষ্টির রহস্য সন্ধান। ধর্মীয় বিশ্বাসের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে সৃষ্টির রহস্য সন্ধানে যুক্তির ধারার অনুসারী প্রাচীন দার্শনিকদের পথ ধরেই বহু কাল যাবৎ বৈজ্ঞানিকরা পরীক্ষা আর প্রমাণের মাধ্যমে খুঁজে চলেছেন সেই প্রশ্নের উত্তর – ‘এলেম আমি কোথা থেকে?’ এককোষী প্রাণের উদ্ভব থেকে বহুকোষের জটিল সমন্বয়ে গঠিত জীবের উৎপত্তি আর প্রাণী জগতের বিবর্তনের ধারায় প্রাচীন মানব থেকে আধুনিক মানব পর্যন্ত বিবর্তনের ইতিহাস খুঁজে বার করা বিগত কয়েক শতকে বিজ্ঞানচিন্তার অগ্রগতির অন্যতম উল্লেখনীয় ফসল আর এই বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের পথে এক উজ্জ্বল মাইলফলক ডারউইনের ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব’।
আজকে বাংলাদেশে পালিত হবে পয়লা বৈশাখ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ। আবার আগামীকাল পশ্চিমবঙ্গে আড়ম্বরের সঙ্গে নববর্ষের সূচনা হবে। এদিকের বাঙালি পেট পুজো করবেন মাছ, মাংস মিষ্টি দিয়ে। অবধারিতভাবে বাংলাদেশেও মানুষের পাতে থাকবে ভাতের সঙ্গে মাছ, বিশেষ করে শুঁটকি দিয়ে পান্তা ভাত। ৪০o সেলসিয়াসে এই খাবারের বিকল্প নেই। অবশ্য কড়ি গুনতে পারলে আকালের ইলিশ মাছও থাকতে পারে পান্তা ভাতের সঙ্গে। এসব ছোটোখাটো পার্থক্য থাকুক, তবে বৈশাখ মাসে পয়লা বৈশাখ এবং ২৫শে বৈশাখ হল বাঙালির প্রাণের উৎসব। ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব, তাতে যোগ দেবেন সব ধর্মের সব অঞ্চলের বেবাক মানুষ। বাংলা নববর্ষের আগে আসে চৈত্র সংক্রান্তি। চলে বিভিন্ন দোকান ও শিল্পশালা ধোয়া মোছা, পুরানো জিনিসপত্র স্বল্পমূল্যে বিক্রিবাটা। চৈত্র সংক্রান্তির দিন গাজন উৎসব উপলক্ষ্যে চড়ক পূজা হয় গ্রামে গ্রামান্তরে। তারপরে নতুন বছরের প্রথম দিনে বিভিন্ন ব্যবসায়ী শুরু করেন হালখাতা খোলা, কোলাকুলি, মিষ্টি বিতরণ। চলে আনন্দ, মেলা, যাত্রা, শোভাযাত্রা।
বাংলার প্রাচীন বা মধ্যযুগের ইতিহাস নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁদের কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যা নদী আর মাটি। প্রাচীন কাল থেকে বাংলার নদীগুলি ক্রমাগত প্রবাহপথ পরিবর্তন করে চলেছে, আজ নদী যে খাত ধরে ভীমবেগে প্রবাহিত, কাল সেই খাত পরিত্যক্ত, বিস্মৃত। প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলার জনপদ আর ধর্মীয় সৌধমালার উত্থান-পতনের সঙ্গে বাংলা থেকে নদীপথ হয়ে সমুদ্রে বাণিজ্যযাত্রা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আজ যখন প্রত্নতাত্ত্বিক মাটির গভীর থেকে বাংলার ইতিহাসকে সূর্যের আলোকে নিয়ে আসতে উত্সুক হন, তখন পলিমাটির গভীর থেকে সেই সত্যকে উদ্ধার করতে গিয়ে তাঁকে প্রথমে জানতে হয় বাংলার ভূতত্ত্বের সেই ইতিবৃত্ত – নদী আর মাটির কথা। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় ভূতত্ত্বের জ্ঞানের প্রয়োজন আজ বিশ্বজনীন, আর সেই কারণে বিকশিত হচ্ছে এক নতুন শাস্ত্র – ভূপ্রত্নতত্ত্ব। ইতিমধ্যেই বাংলার বেশ কয়েকজন তরুণ গবেষক এই নতুন পথে চলতে শুরু করেছেন। কে বলতে পারে, অদূর ভবিষ্যতে হয়তো ভূতত্ত্বকে বাদ দিয়ে প্রত্নতত্ত্বের শিক্ষাকে অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হবে।