সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

পুরনো সম্পাদকীয়

পৃথিবীর প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতির ইতিহাস অনুসন্ধান করলে ভৌগোলিক ও সামাজিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে একটি বিশিষ্ট খাদ্যাভ্যাসের ধারা লক্ষ করা যাবে। বিগত কয়েক হাজার বছর ধরে বাংলার অধিবাসীদেরও মধ্যেও এমন এক বিশিষ্ট খাদ্যাভ্যাস গড়ে উঠেছে, যার সঙ্গে উপমহাদেশের বাকি অংশের সঙ্গে মিল থাকলেও অপ্রতিমতাও লক্ষণীয়। পাহাড় থেকে সাগর, নদী আর হাওর দিয়ে ঘেরা বাংলার সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত খাবারের মধ্যে যেমন আছে বহুবিধ মাছ, মাংস, শাক, সব্জির সমারোহ, তেমনই আছে মিষ্টান্নের অভিনবত্ব। বাংলার জনমানসের সৃষ্টিশীলতা প্রতিফলিত হয়েছে বাংলার মিষ্টিতে; শিল্পীর হাতের ছোঁয়া আর বুদ্ধিমত্তার প্রভাবে বাংলার মিষ্টির নান্দনিকতা ও ঔৎকর্ষ আজ সারা দক্ষিণ এশিয়ায় সমাদৃত, বিশ্বে প্রতিভাত। দীর্ঘদিন ধরে বাংলার কারিগরদের যে অনলস মেহনত ও বুদ্ধিদীপ্ত আবিষ্কারের ফলে এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে, সেই ইতিহাস নিয়ে বিদ্বৎসমাজে এখনও পর্যন্ত খুব কমই চর্চা হয়েছে। বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের এই দিকটি নিয়ে এখনও বিশেষ গবেষণার সন্ধান পাওয়া যায়নি।
বিগত কয়েক দশক ধরে ‘বৈদিক গণিত’ নামে একটি বিষয়ের উদ্ভব ও প্রচলন ঘটেছে, যার সঙ্গে বেদ বা গণিত কারও কোনও সম্পর্ক নেই। ‘বৈদিক গণিত’ বিষয়ক যে বইগুলি দেখতে পাওয়া যায়, তা পাঠ করলে একে দ্রুত সংখ্যাগণনা পদ্ধতি ছাড়া আর কিছু বলা সম্ভব নয়। যাঁরা বৈদিক সাহিত্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, তাঁরা জানেন এর সঙ্গে বৈদিক ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত গণিত বিষয়ক রচনার দূরতম মিল নেই। তবে, ভারতের গণিত চর্চার প্রকৃত ইতিহাস সম্বন্ধে সাধারণ মানুষের জ্ঞানের অপ্রতুলতার কারণে, তাঁদের বিভ্রান্ত করে ‘বৈদিক গণিত’-এর শিক্ষাক্রমগুলি যথেষ্ট বাণিজ্যিক সাফল্য অর্জন করেছে। এই বিভ্রান্তি দূর করতে হলে ভারতীয় উপমহাদেশে গণিত চর্চার দীর্ঘ ও গৌরবময় ইতিহাসকে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া দরকার। ডিসেম্বর মাস আধুনিক ভারতের বরেণ্য গণিতবিদ শ্রীনিবাস রামানুজনের জন্মের মাস, তাই গণিত চর্চায় ভারতের অবদানকে স্মরণ করারও উপযুক্ত সময়।