সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

পুরনো সম্পাদকীয়

ইংরেজিতে একটা কথা আছে কর্ণারস্টোন (Cornerstone)। বাংলা ভাষায় এর কাছাকাছি শব্দ হলো, ভিত্তিপ্রস্তর। যেকোনো বৃহৎ সৌধ বা ইমারতের মূল ভিত্তি রচিত হয় সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ যে প্রস্তরটির ওপরে, তাকে বলে ভিত্তিপ্রস্তর। ধরা যাক সৌধটি হলো একটি রাষ্ট্র। বলা যায়, রাষ্ট্র হলো এক বৃহৎ সামাজিক সংগঠন যেখানে জনগণের একটি সমষ্টিগত পরিচয় আছে। তবে তার সঙ্গে ব্যবহারিক জীবনের সম্পর্ক জটিল এবং মনে হয় যেন অন্তর্লীন— দেশ বলতে বিভিন্ন মানুষের মনে বিভিন্ন রকমের ভাবনার উদয় হয়, আর তাই এই বিমূর্ত সৌধের ভিত্তিপ্রস্তর বোঝা সহজ কাজ নয়। এই জন্য প্রতিটি রাষ্ট্রের মূল অঙ্গীকার ও সুপারিশগুলির রূপরেখা নির্ধারণকারী একটি দলিল থাকে যার ভিত্তিতে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষমতার অংশীদারিত্ব ও ক্ষমতা বন্টনের চুক্তি এবং সুপারিশগুলো থাকে। গ্র্যানভিল সেওয়ার্ড অস্টিন ছিলেন ভারতীয় সংবিধানের একজন আমেরিকান ঐতিহাসিক। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন 'Constitution: Cornerstone of a Nation' বা সংবিধান হলো একটি দেশের ভিত্তিপ্রস্তর।
জুন মাস পলাশীর যুদ্ধের মাস, তাই পরাধীন ভারতে স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ের ইতিহাস চর্চা সম্বন্ধে কিছু ভাবনা-চিন্তা করার উপযুক্ত কাল। সম্প্রতি ‘হীরামণ্ডি’ নামের একটি জনপ্রিয় আন্তর্জাল মাধ্যমের ধারাবাহিকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে লাহোরের তওয়াইফদের ভূমিকাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখানো হয়েছে। এই বছরই প্রকাশিত ‘ড্যান্স টু ফ্রীডম’ বইটিতেও এই একই ইতিহাস চর্চিত হয়েছে। তওয়াইফদের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণের ইতিহাস নিয়ে এই যে চিন্তন শুরু হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের প্রান্তিক মানুষদের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ সংক্রান্ত দু’টি বৃহত্তর বিষয় নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে। প্রথমত, ভারতের প্রাক-ঔপনিবেশিক অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার ফলে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা সমাজের কোন অংশগুলিকে অর্থনীতির মূল ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন করে প্রান্তিক জীবনযাপনে বাধ্য করেছিল, আর দ্বিতীয়ত, ব্রিটিশ ভারতের প্রান্তিক মানুষেরা কবে ও কীভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন।