সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

সাংস্কৃতিক ইতিহাস

সুদূর প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের ধর্ম-সংস্কৃতি, পৌরাণিক সাহিত্য ও শিল্পকলায় মনুষ্যরূপী সর্পের উপস্থিতি ও কার্যকলাপের একটি প্রাণবন্ত ইতিহাস রয়েছে। আদিতে সর্প উপাসনার মূলে ছিল মানুষের ভীতি। পরবর্তীকালে উর্বরাশক্তির সঙ্গে সংযুক্ত হলে সর্পপূজা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। মনে রাখা দরকার, সাপ মানুষের শত্রু নয়। বস্তুতপক্ষে এই অদ্ভুতদেহী সরীসৃপ প্রাণীটি একাধারে বাস্তুতন্ত্র, কৃষিক্ষেত্র ও মানব সমাজের লোককাহিনির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত। হিন্দু, জৈন ও বৌদ্ধ—এই তিন ধর্মাবলম্বীর মানুষই যে অতীতে নাগোপাসনা করতেন তার উল্লেখ প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য ও শিল্পকলায় পাওয়া যায়।
বাংলা ভাষা সাহিত্যের ইতিহাসে মধ্যযুগের দীর্ঘ সময়টাকে আমরা দুটো বড়ো উপবিভাগে বিভক্ত করে থাকি। প্রথম অংশটাকে বলি আদি-মধ্যযুগ আর পরের অংশটাকে অন্ত-মধ্যযুগ। এই দুই যুগের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন মধ্যযুগের বাংলার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব শ্রীচৈতন্যদেব। চৈতন্যদেবের জন্ম ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দে আর প্রয়াণ ১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দে। সাধারণভাবে ১৩৫০ থেকে ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে আমরা আদি-মধ্যযুগ এবং ১৫০০ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে অন্ত-মধ্যযুগ বলে থাকি। ১২০০ থেকে ১৩৫০ – এই সময়কালের বাংলা ভাষা বা সাহিত্যের তেমন কোনও নিদর্শন আমাদের কাছে নেই। ফলে বাংলা ভাষা সাহিত্যের আদিযুগ যখন ১২০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ শেষ হয়ে গেল, তখনই আদি-মধ্যযুগের শুরু এমনটা বললেন না ভাষা সাহিত্যের ইতিহাসকাররা। তাঁদের মনে হল ১২০০ – ১৩৫০ কে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে মতো আকর বা আলো যখন পাওয়া যাচ্ছে না, তখন একে অন্ধকার যুগ হিসেবেই আপাতত চিহ্নিত করা বাঞ্ছনীয়। এই ধরনের যুগবিভাগ অবশ্যই পালটে যেতে পারে যদি এই পর্বে লেখা ভাষা সাহিত্যের কোনও গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন আমরা খুঁজে পাই।