সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং স্থান

অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় (১৮৫১-১৯১৫)। জন্মেছিলেন ঢাকা বিক্রমপুরের লোহাজাং থানার ব্রাহ্মণগা গ্রামে। বিক্রমপুর ছিল ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান। বিক্রমপুর-এ জন্মেছেন পণ্ডিত শীলভদ্র, অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান, জগদীশ চন্দ্র বসু, চিত্তরঞ্জন দাশ, বিনয় - বাদল - দীনেশ প্রমুখ। অঘোরনাথের পিতা রামচরণ চট্টোপাধ্যায় সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে সুপণ্ডিত ছিলেন। ছেলেবেলায় পড়াশুনা ঢাকার পোগোজ স্কুলে, সেখান থেকে পাশ করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। এখানে সাড়ে তিন বছর পড়েছিলেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াকালীন প্রচুর পড়াশুনা করে গিলক্রাইস্ট বৃত্তি লাভ করেন এবং স্কটল্যান্ড-এর এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বি এস সি ক্লাসে ভর্তি হন। বি এস সি পরীক্ষায় তিনি শীর্ষস্থান অধিকার করেন। এর পর ১৮৭৫-এ ডি এস সি ডিগ্রি পান। গবেষনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য পেয়েছিলেন হোপ পুরস্কার এবং Baxter scholarship।
“ইউফ্রেটিস নদীর পাড়ের শহর আজ়ুপিরানু। সেখানে আমার মা ছিলেন মন্দিরের উচ্চস্তরের পুরোহিত। বাবার কথা আমার জানা নেই। বাবার জ্ঞাতিগোষ্ঠীরা পাহাড়কেই বেশি পছন্দ করত। মা আমাকে গোপনে তাঁর গর্ভে ধারণ করেছিলেন। লুকোনো অবস্থায় আমার জন্ম দেন। মা জলনিরোধক ঘন আলকাতরা মাখা নলখাগড়ার এক ঝুড়িতে আমাকে রেখে, ঢাকনা বন্ধ করে, সে ঝুড়ি ভাসিয়ে দেন নদীতে। নদীর জল ঝুড়িতে ঢোকেনি। নদীর জলে ভেসে ভেসে আমি চলে আসি আক্কির কাছে। জল সেচ করার কর্মী আক্কি আমাকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে নিজের ছেলের মত করে বড়ো করেন। তারপরে আমাকে বাগানের মালির কাজে লাগিয়ে দেন। বাগানে কাজ করতে করতে আমি দেবী ইশতারের আশীর্বাদ ধন্য হই। আর তারপরে আমি চার ও ... বৎসর রাজত্ব করতে থাকি।...” সম্রাটের রাজকীয় মোহর লাগানো, মাটির তালে, কিউনিফর্ম লিপিতে লেখা, ভাঙা টুকরোর এই অংশের মুল অনুবাদ করেছেন ইতিহাসবেত্তা সুসান বাওয়ার।
ইতিহাসের যদি কোনো ঈশ্বর থাকেন তবে তাঁর রাজত্বে তাঁর কিছু নিজস্ব নিয়মকানুন, রীতিনীতিও আছে। সে নিয়মানুসারে এক সম্রাট যদি আর এক সম্রাটের সাম্রাজ্য দখল করতে মনস্থ করেন তবে তিনি প্রথম পাঠান তাঁর সেনাবাহিনীকে। সামরিক শক্তিতে প্রাথমিক বাধা অতিক্রম করে বিজয়ী সম্রাটের জন্য লাল কার্পেট পেতে দেবার দায়িত্ব তাদেরই। তারপর আসেন রাজপুরুষের দল। প্রশাসনিক স্তরে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে তারা তৎপর হন। সব শেষে আসে সাধারণ মানুষ, অর্থাৎ জনগণ। প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতার বিনিময়ে সম্পর্ক স্থাপন হয় বিজিত জনগণের সঙ্গে। যদিও এ দখলদারি সাময়িক — অদূর বা সুদূর ভবিষ্যতে দেশের মাটি দেশের মানুষের একদিন প্রতিদিনের সীমানাতেই বাধা পড়ে। তবে অল্প কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে ঈশ্বর তাঁর নিয়মের ব্যতয় ঘটান — যেমন কিনা আলাস্কার বেলায়। ঘোড়ার আগে গাড়ি জুতে দেবার নিয়মে রাশিয়ার আলাস্কা অধিকারের প্রক্রিয়ায় সেখানে প্রথম যায় তার সাধারণ মানুষ, তারপর রাজপুরুষ বা তার প্রতিনিধিস্থানীয় মানুষ, বহু পড়ে নিয়মরক্ষার্থে এক ছোট্ট সেনাদল আর সম্রাট বা জার কখনই না।
সবে তখন বহুল প্রচারিত দৈনিক সংবাদপত্রের দফতরে চাকরিতে গেছেন। নিয়মিত কার্টুন ছাপা হচ্ছে কাগজে। বরানগরের একটা অনুষ্ঠান থেকে আমন্ত্রণ এল। গুণীজন সংবর্ধনা। গাড়ি করে সভায় নিয়ে গেলেন আয়োজকরা। তাঁর সঙ্গেই সংবর্ধনা পাবেন অভিনেতা বিকাশ রায়, ফুটবলার শৈলেন মান্না, সাঁতারু আরতি সাহা প্রমুখ বিখ্যাত মানুষেরাও। যথারীতি ফুল-মানপত্র ইত্যাদি প্রদানের পর ভাষণ শুরু হল অনুষ্ঠানের সভাপতি যুগান্তর প্রত্রিকার সম্পাদক বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়ের। সে ভাষণ আর থামে না। বিকাশ রায় আড়ালে ডেকে নিয়ে বললেন, “বাড়ি ফেরার ইচ্ছে আছে? তা হলে চলুন আমার সঙ্গে। নইলে অনেক রাতে পায়ে হেঁটে ফিরতে হবে।” তিনি তো অবাক। উদ্যোক্তাদেরই তো গাড়ি করে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা। হাসলেন বিকাশ রায়, “আপনি সবে গুণীজন হয়েছেন। নতুন এ লাইনে। এরা অনুষ্ঠানের আগে গাড়ি করে নিয়ে আসে। ফেরার দায়িত্ব কেউ নেয় না।” হতভম্ব তিনি সেদিন বিকাশ রায়ের গাড়িতে চুপি চুপি অনুষ্ঠান থেকে কাটলেন। এর পর দেখা হলেই বিকাশ রায় তাঁকে ‘কাঁচা গুণী’ বলে ডাকতেন।
'Swallowed by the great land' - আলাস্কাকে বিষয় করে লেখা সেথ কাঁতনার-এর একটা বইয়ের নাম। একটি বাক্যে প্রতিটা শব্দ কি অমোঘভাবে অর্থবহ হয়ে উঠে এক বৈপ্লবিক 'স্টেটমেন্ট'-এর জন্ম দেয়, তার সার্থক উদাহরণ হতে পারে এই বাক্যটি। ভূমি যে মহান তাতে তো সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু ভূমিপুত্রের জন্মবৃত্তান্ত, পারিপার্শ্বিক প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে তাদের আন্তঃসম্পর্ক, তাদের জীবনযাপনের লড়াই, সে লড়াইতে তথাকথিত সভ্য জগতের দখলদারির গল্পের ঘূর্ণাবর্তে যে একবার পড়েছে, তার আর নিস্তার নেই। আলাস্কার ইতিহাসে বড় মায়া। সে নিশিডাকে একবার যে সাড়া দিয়েছে, তাকে অক্টোপাসের আলিঙ্গনে গিলে নিয়েছে আলাস্কা — কাঁতনার-এর ভাষায় swallowed.