সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির ইতিহাস

আর্থার সি ক্লার্কের সেই দুর্দান্ত গল্পটা বোধহয় আপনার পড়া আছে, তাই না - ‘দ্য নাইন বিলিয়ন নেমস অফ গড’? সেই যে, সত্যজিৎ রায় যার এক অনবদ্য বাংলা অনুবাদ করেছিলেন, তার নাম ছিল - ‘ঈশ্বরের ন’ লক্ষ কোটি নাম’? মনে পড়ছে না? আচ্ছা, একটু ধরিয়ে দিচ্ছি। তিব্বতের এক বৌদ্ধ গুম্ফার প্রাজ্ঞ সন্ন্যাসীরা এক পশ্চিমা কোম্পানির কাছে একটি মস্ত কম্পিউটারের বরাত দিয়েছেন। তাঁদের বিশ্বাস, তাঁদের আরাধ্য ঈশ্বরের আছে নয় লক্ষ কোটি নাম, এবং সেই সব কটি নাম যদি তাঁদের ভাষায় সম্পূর্ণভাবে লিখে ফেলা যায়, তাহলেই জগতের সমাপ্তি। জগতের অস্তিত্ব তো ঈশ্বরের নাম জপ করার জন্যেই, কাজেই সে কাজ একবার সমাধা হলে আর জগতের দরকার কি?
সুলতানি যুগের সূচনার ফলে ভারতের বাস্তুশিল্পে অনেক প্রযুক্তিগত পরিবর্তন হয়। ভারতে বড় আকারের সেতু নির্মাণ শুরু হয়। তার আগে ম্যাসনরি ব্রিজের উদাহরণ ভারতে খুব বেশি টিকে নেই। ম্যাসনরি ব্রিজ মানে ইট, পাথর দিয়ে গাঁথুনি দিয়ে তৈরি সেতু। একেবারে টিকে নেই তা নয়, একটা রয়েছে - আর সেখান থেকে অনুমান করা যায় এরকম সেতু একাধিক ছিল, কিন্তু হিন্দু শিল্পে সেতু নির্মাণ যেহেতু প্রকৃত খিলান বা ট্রু আর্চ (true arch) ব্যবহার করে হত না তাই তাদের স্থায়িত্ব প্রকৃত খিলানের সেতুর তুলনায় কম হত - তাই খুব বেশি টিকে নেই। ভারতবর্ষে সুলতানি যুগের আগে ট্রু আর্চের প্রযুক্তি ছিল না। প্রাচীন ও আদিমধ্য যুগের হিন্দু মন্দিরে যে আর্চ জাতীয় তোরণ বা প্রবেশদ্বার আমরা দেখি সেগুলো প্রকৃত খিলান বা ট্রু আর্চ নয়। সেগুলো কর্বেল আর্চ (corbel arch)। কর্বেল আর্চের ইটগুলো আনুভূমিক হয়, ট্রু আর্চের ইটগুলো অর্ধচন্দ্রাকারে সাজানো - এমনভাবে যাতে ইটগুলি থেকে সরলরেখা টানলে তারা একটি বিন্দুতে এসে মিলিত হয়।
প্রথম নজরে চার্লস ডারউইনকে কোনোদিক থেকেই এক বিপ্লবীর ভাবমূর্তির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো যায় না। তাঁর চাইতে ন’বছরের ছোট কার্ল মার্ক্সের সঙ্গে তুলনা করলে ডারউইনকে নেহাতই ছাপোষা, তদানীন্তন ইউরোপীয় উচ্চবিত্ত পরিবারের এক সাধারণ সদস্য বলে মনে হবার কথা। যৌবনেও তাঁকে আর পাঁচজনের চাইতে অন্যরকম বা প্রতিভাবান বলেও মনে হয়নি। ডারউইনের বাবা ভাবতেন ছেলেটা কুঁড়ের হদ্দ, তার ওপরে জীবনে কোনও লক্ষ্য নেই। প্রথমে ডাক্তারি পড়ার বৃথা চেষ্টা করার পরে পাদ্রী হবার জন্য কিছুদিন পড়াশুনা করেন ডারউইন, তারপর সে পাঠও ছেড়ে দেন। ছোটবেলা থেকে ডারউইনের প্রকৃতি নিয়ে আগ্রহ ছিল বটে, কিন্তু সেটা তখনকার ইংল্যান্ডের অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলেদের নেশা ছিল।