সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

বিবিধ

প্রথমেই বলে রাখি—যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আমার কাছে অত্যন্ত আপন। আমার জন্মের বহু আগে, ব্রিটিশ রাজ যখন আমাদের দেশকে লৌহশৃঙ্খলে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে, তখনই এর প্রথম বীজ রোপিত হয়েছিল, জাতীয় শিক্ষা পরিষদ-এর (National Council of Education) মাধ্যমে। ১৯০৬ সালের ১১ই মার্চ এই প্রতিষ্ঠানের সূত্রপাত হয়, সে সময়ের যত জ্ঞানীগুণী ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি ছিলেন সবাই এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ছিলেন। এসব কাহিনী আগে এক সময় বলেছি। এই বিদ্বজ্জনের মধ্যে আমার প্রপিতামহ মহারাজা সূর্য্যকান্ত আচার্য্যও ছিলেন। তিনি বড়ো রকমের অর্থসাহায্যও করেছিলেন। প্রসঙ্গত বলি, রাজা সুবোধচন্দ্র মল্লিক এবং আমার প্রপিতামহ—এই দুজনের জমি নিয়ে এখনকার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্যাম্পাস তৈরি হয়েছিল। বিশেষত এই কারণেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার নাড়ির যোগ।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, বিশেষ করে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় ইসলামের ব্যাপক প্রসারের পরেও হিন্দু তথা ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাব টিকে আছে। ইসলামের জন্মের বহু পূর্বে এই অঞ্চলে ভারত থেকে হিন্দুদের সঙ্গে এসেছিল হিন্দু ধর্ম, পৌরাণিক কাহিনী মায় সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য৷ প্রসারের মাত্রা ও গভীরতায় পার্থক্য থাকলেও ভারতীয় হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্ম কেন সাধারণ মানুষের মধ্যে গৃহীত হল সেটা আমরা এই আলোচনায় বুঝতে চাই। বিভিন্ন গবেষক-পণ্ডিতদের বিশ্লেষণ এখানে তুলে ধরা হবে, তবে একটি বিষয় মনে রাখা দরকার— তা হল গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি। ঘটনাকে অনেকে নিজের মতো করে গেঁথেছেন এবং একটি সত্য ‘আবিষ্কার’-এর ছলে উপস্থাপন করেছেন।
“আমি পরমেশ্বরী, পিতৃসূত্রে চিনা ঐতিহ্যের অধিকারী— চিনের ক্যান্টনের মানুষ। আমার পিতা জোহর রাজ্যের শাসক, প্রয়াত সুলতান ইস্কান্দার। আমি বর্তমান জোহর শাসক সুলতান ইব্রাহিম ইবনি আলমারহুম সুলতান ইস্কান্দারের বোন। আমার মা হাজা খালসম আব্দুল্লা একজন ব্রিটিশ মহিলা— যার পূর্বে নাম ছিল যোসেফাইন ট্রেভরো।” জাতি, ধর্ম সংমিশ্রণের প্রকৃতিটি কি সঠিক ভাবে ধরা পরলো? আরও শুনুন— ইস্কান্দার নামটি এসেছে আলেকজান্ডার (দ্য গ্রেট) থেকে। সপ্তদশ শতকের সেজারাহ মেলায়ু (রাজাদের বংশতালিকা) বা ‘মালয় অ্যানালস’ শুরু হয়েছে ম্যাসেডোনিয়ার আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট (ইস্কান্দার শাহ বা সেকেন্দার যালকারনাইন নামেও পরিচিত) দিয়ে। অনেকের মতে শাহ কথাটি এসেছে ইরানের রাজকীয় ফার্সি উপাধি থেকে।
'একদা যাহার বিজয় সেনানী হেলায় লঙ্কা করিল জয় একদা যাহার অর্ণবপোত ভ্রমিল ভারত সাগরময়।' ছেলেবেলায় দুলে দুলে যখন এই দুই ছত্র মুখস্ত করতাম, তখন তার ইতিহাস-ভূগোল নিয়ে প্রশ্ন করার বয়স হয়নি। মনেই আসেনি কে বিজয়, আর অর্ণবপোতই বা কী। পরিণত বয়সে তত্ত্ব তল্লাশ করে জানলাম খ্রিস্ট জন্মের প্রায় পাঁচশো বছর আগের বাংলার (নামকরণ নিয়ে প্রশ্ন থাকবে— ভৌগোলিক সীমারেখার আন্দাজ দিতে নামটি ‘বাংলা’ লিখলাম) রাঢ় অঞ্চলের অধিপতি সিংহবাহু আর তার আপন বোন সিংহসিবলির দাম্পত্যজাত বত্রিশ পুত্রের সবচেয়ে বড়োটির নাম ছিল বিজয় সিংহ। তার জন্মের পর বাকি একত্রিশটি সন্তানের উৎপাদনে ব্যস্ত বাবা মা বিজয়ের কোনো দেখভাল করতে না পারায় এক নিখুঁত লম্পট হয়ে ওঠে সে। তার সপারিষদ উৎপাতে অতিষ্ঠ প্রজাদের উপর্যুপরি অভিযোগে বিরক্ত হয়ে একসময় সিংহবাহু তাকে দেশান্তরী হবার আদেশ দেন।