সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

বাংলার ইতিহাস

১৯৪৪-এর অক্টোবর মাসে বিজন ভট্টাচার্যের ‘নবান্ন’ নাটক প্রথম মঞ্চস্থ হয় কলকাতার শ্রীরঙ্গম থিয়েটারে। তারপর গণনাট্য সংঘের এই নাটকটি ভারতের নানা জায়গায় ‘ভয়েস অফ বেঙ্গল’-এর অঙ্গ হিসেবে মঞ্চস্থ হয়ে কীভাবে সাড়া ফেলে দিয়েছিল, সে কথা ইতিহাসে লেখা আছে উজ্জ্বল অক্ষরে। কিন্তু যা হয়তো সেভাবে লেখা নেই, তা হলো ‘নবান্ন’ নাটকের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মনে পঞ্চাশের মন্বন্তরের অভিঘাত। যেমন ধরুন, সে সময়ে আশুতোষ কলেজের ছাত্রী ১৮/১৯ বছরের তৃপ্তি মিত্র কীভাবে দেখেছিলেন মন্বন্তরকে, ‘নবান্ন’-এ ছোট বউ বিনোদিনীর ভূমিকায় অভিনয়ের সময় কীভাবে উৎসারিত হতো তাঁর সেই দেখা—এগুলোর কথা আমাদের অজানাই রয়ে গেছে অনেকাংশে।
অনেক উচ্চাশা এবং স্বপ্ন নিয়ে ইংরেজ বণিক জব চার্নক এদেশে আসেন ১৬৫৮ সালে, ছোটবেলায় ইতিহাস বইয়ে একথা আমরা সবাই পড়েছিলাম। বহুদিন তিনি ভারতের মাটি কামড়ে পড়ে রইলেন, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক সাধারণ কর্মচারী হিসাবে। ১৬৮৬/৯০ সালে শুরু হয় কোম্পানির সঙ্গে মুঘলদের ধুন্ধুমার লড়াই। প্রাণ হাতে নিয়ে কোম্পানির লোকজন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি তে পলায়ন করে। কিন্তু হাল ছেড়ে দেওয়া তো ইংরেজদের রক্তে নেই। তাই ইতিহাসে দেখতে পাই আবার সেই মুঘলদেরই খুশি করে কোম্পানির কুঠি তৈরি হয় সুতানুটিতে ১৬৯০ সালের ২৪ শে আগস্ট। চার্নক তখন কোম্পানির সর্বেসর্বা। তবে ব্যক্তিগত ভাবে চার্নক আদৌ খারাপ লোক ছিলেন না। নইলে কি সতীদাহের চিতা থেকে এদেশীয় মেয়েকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন, নিজেরও তো প্রাণ সংশয় হতে পারত, ধর্ম- উন্মাদ ব্যক্তিদের হাতে। শুধু উদ্ধার করাই নয়, হিন্দুরা যখন সেই মেয়েকে ঘরে নিয়ে যেতে অস্বীকার করে তখন তাকে খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত করে নাম দেন 'মারিয়া', এবং একেই বিয়ে করেন। এতবড় ঔদার্য তখন দেখানো সহজ কথা ছিল না।
দুর্গাপূজার শুরু ঠিক কবে থেকে, তাঁর নিশ্চিত মীমাংসা করা খুব কঠিন। চতুর্থ শতকের মার্কণ্ডেয় পুরাণ-এর অংশই শ্রী শ্রী চণ্ডী বা সপ্তশতী চণ্ডীতে বলা হয়েছে, মেধা মুনির নির্দেশে ভিল রাজা সুরত প্রথম কাত্যায়নী দেবীর পূজা করেন। পৌরাণিক এই কাহিনীর কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া সম্ভব নয়। আবার, পঞ্চদশ শতাব্দীর কৃত্তিবাস ওঝার রামায়ণ বলছে, বনবাসকালে রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে বিজয় কামনায় রামচন্দ্র দুর্গার প্রচলিত কাহিনী, সেখানে একটি নীলপদ্ম কম পড়ায় রামচন্দ্র নিজের চোখ উৎসর্গ করতে চান, ইত্যাদি। কিন্তু, রামের দুর্গাপূজার কাহিনী কেবলই বাঙলা রামায়ণেই। সংস্কৃত, হিন্দি বা অন্য কোনও ভাষার রামায়ণেই তার উল্লেখ নেই।