আগের দু’পর্বে আমরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান কলেজ, এবং পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রাকস্বাধীনতা যুগ নিয়ে কিছু কথা বলেছি। বিভাগের প্রথম তিরিশ বছরকে যদি মোটামুটি সমান দু ভাগে ভাগ করি, তার প্রথমার্ধকে (১৯৩৩ পর্যন্ত) রামন যুগ নাম দিলে অন্যায় হয় না। এই সময়ে সত্যেন্দ্রনাথ, মেঘনাদ, দেবেন্দ্রমোহন, শিশির মিত্র সকলেই পড়িয়েছেন, ভারতে বিজ্ঞানের ইতিহাসে এঁদের প্রত্যেকের নামই নিজের প্রতিভায় ভাস্বর, কিন্তু তা হলেও বিভাগের মূল চালিকাশক্তি ছিলেন রামন। আগেই বলেছি, রামন ১৯১৪ সালেই পালিত অধ্যাপক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন, কিন্তু সরকারী চাকরি ছেড়ে যোগ দিতে দিতে ১৯১৭ হয়ে গিয়েছিল। ১৯৩৩ সালে কলকাতা ছেড়ে রামন বাঙ্গালোর চলে যান, ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্সের অধিকর্তা হয়ে। এই ষোলো বছর রামন পালিত অধ্যাপক এবং সেই সুবাদে বিভাগীয় প্রধান ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর কালটিভেশন অফ সায়েন্সে নিজের চারদিকে তরুণ গবেষকদের গোষ্ঠী গড়ে তুলেছিলেন, এবং নিয়মিত প্রথম শ্রেণীর পত্রিকায় প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন। ১৯৩০ সালে তিনি এশিয়ার প্রথম বিজ্ঞানী হিসেবে নোবেল পুরস্কার পান, ভারতে রবীন্দ্রনাথের পর দ্বিতীয়।
আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের দেশে এসেছে পশ্চিমি দুনিয়া থেকে, আজও দেশের মাটিতে তার শিকড় খুব দৃঢ় নয়। তাই ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে তার ইতিহাস সাধারণত কয়েকজন বিজ্ঞানীর জীবন ও কাজ এবং বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের বর্ণনার মধ্যে সীমাবদ্ধ। জগদীশচন্দ্র বসু, সি ভি রামন, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা, হোমি ভাবার মতো শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীদের উপর লিখিত বইয়ের সংখ্যা কম নয়। আধুনিক যুগে বিস্মৃতপ্রায় হলেও নিজেদের সময়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সুপরিচিত বিজ্ঞানীদের নিয়েও কাজ শুরু হয়েছে, এঁদের মধ্যে পড়বেন কে এস কৃষ্ণন, দেবেন্দ্রমোহন বসু, শিশিরকুমার মিত্র, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, ডি ডি কোসাম্বি, প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের মতো বিজ্ঞানীরা। এঁরা সবাই কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, অনেকেই আবার নিজের প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিলেন।