সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

বইয়ের খবর

২০২০ সালে ডোনাল্ড ব্লক্সহামের দুটো বই প্রকাশ হয়, যার একটি বেশ বিতর্ক তৈরি করে।১ ‘হোয়াই হিস্ট্রি? আ হিস্ট্রি’ গ্রন্থে তিনি দেখাতে চেয়েছেন একবিংশ শতকে আমাদের সাধারণের ইতিহাসের আলোচনার দিকগুলি কিভাবে ধীরে ধীরে পাল্টে যাচ্ছে। এই পাল্টে যাওয়াকে আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন ড্যানিয়েল উলফের মত বিখ্যাত ঐতিহাসিকরা।২ আমরা যারা অপেশাদার ইতিহাসচর্চা করি, তারা অতীতকে নির্দিষ্টভাবে দেখার বা বর্ণনা করার যে সমস্ত দিকগুলিতে আগ্রহ পাই তা ধীরে ধীরে পেশাদার ঐতিহাসিকের বিষয় নির্বাচনে কতটা প্রভাব বিস্তার করবে - তা অবশ্যই একটি গবেষণার বিষয়। আগামী সময়ের যে ধরনের আগাম লক্ষণ দেখা যায়, তাতে মনে হয় ইতিহাস একটা মৌলিক পরিবর্তনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। উলফ আমাদের সেসব পছন্দের বিষয়গুলোকে আট ভাগ করে উল্লেখ করেছেন। এগুলি হল- বিনোদন, স্মৃতিচারণ, নৈতিক (জাতীয়তাবাদী) শিক্ষা, অনুমানমূলক দর্শন, ভ্রমণ, আলাপচারিতা, মেথড বা পদ্ধতি এবং পরিচিতি।
সাঁওতাল বিদ্রোহ। ভারতের আদিবাসী বিদ্রোহগুলির মধ্যেকার এক মহাবিস্ফোরণ। সাঁওতাল বিদ্রোহের নাম শোনেননি এমন লোক মেলা ভার। ১৮৫৫ সালে সিধু কানুর নেতৃত্বে ভাগনাডিহির মাঠে সাঁওতাল বিদ্রোহের ডাক দেওয়া হয়েছিল, ইংরেজরা এই বিদ্রোহ কঠোর হাতে দমন করেছিল ইত্যাদি সাধারণ তথ্যগুলো আমরা সবাই জানি। তাহলে এ বিষয়ে একটা নতুন বই আবার কষ্ট করে পড়তে যাব কেন? এই বইটার পাঠপ্রতিক্রিয়া দিতে যখন বসেছি, তা তো নিশ্চয়ই বলব, তবে তার আগে বইটার নাম, প্রকাশক, বিপণন ও মুদ্রণ শিল্পীর নামগুলোর দিকে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। পন্ডিত রঘুনাথ মুর্মু আরশালবাতি ওয়েলফেয়ার সোসাইটি নামে এক অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যখন এমন এক গবেষণালব্ধ বইয়ের বিপণনের দায়িত্ব নিয়েছে যার লভ্যাংশ সাঁওতাল সমাজের জনসেবামূলক কাজে লাগানো হবে তা সর্বাংশে ব্যতিক্রমী বইকি!
রাজকুমার সিদ্ধার্থ তাঁর স্ত্রী, পুত্র ও রাজৈশ্বর্য পরিত্যাগ করে সন্ন্যাসী হয়েছিলেন জরা, ব্যাধি, মৃত্যু ও দুঃখ থেকে মুক্তির পথ(মার্গ) খুঁজতে। কঠিন সাধনার পর বোধিপ্রাপ্ত হয়ে তিনিই হয়ে উঠেছিলেন তথাগত বুদ্ধ- এই গল্পটা আমাদের সকলেরই জানা। তাঁর প্রথম জীবনের এই গল্প অত্যন্ত জনপ্রিয়ও বটে। তবে তাঁর মহাভিনিষ্ক্রমণের পরবর্তী জীবন, দুর্গম তপস্যার পথ, তাঁর বোধিপ্রাপ্ত হওয়া, নতুন পথের সঙ্গী পাওয়া, তাঁর উপদেশ সমূহ নিয়ে সাধারণের মনে আগ্রহ তুলনামূলক কম। তথাগত বুদ্ধের জীবনকে দুটি ভাগে অনায়াসে ভাগ করা যায়। প্রথমটি বোধিপ্রাপ্ত হওয়ার আগের জীবন আর দ্বিতীয়টি বোধিপ্রাপ্তের পরের জীবন। তথাগত বুদ্ধের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ জীবনের দ্বিতীয় ভাগের পূর্ণাঙ্গ আলোচনা ‘নমো তস্স’ বইয়ের মূল বিষয়। এই বইটিতে রাজপুত্র সিদ্ধার্থকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ২২৩ পাতা জুড়ে আছেন শুধুই তথাগত বুদ্ধ। আলোর উদ্দেশে ভগবান বুদ্ধের কঠিন যাত্রাপথ গল্পাকারে বর্ণিত।