সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

লেখক: লিপিকা ঘোষ

লিপিকা ঘোষ
পেশা শিক্ষকতা। সাহিত্য ও ইতিহাস নিয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশুনো করেছেন। ধ্রুপদী নৃত্য চর্চা করছেন ছোটবেলা থেকেই। ভালোবাসেন অভিনয় ও লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত থাকতে। গ্রুপ থিয়েটার, টেলিফিল্ম ও দূরদর্শনের পর্দায় অভিনয় করেছেন। লিখেছেন সানন্দা সহ বিভিন্ন পত্রিকায়। গল্প, কবিতার পাশাপাশি লোকসাহিত্য নিয়ে লেখালেখিতে বিশেষ আগ্রহী।
গত শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের শেষে স্থাপিত প্যারিসের সিনে ক্লাবগুলি দেশের জনসাধারণের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্রের শিল্পের পরিচয় করাতে চেয়েছিল। উদ্দেশ্য সফল হওয়া এই ক্লাবগুলি ফ্রান্সের সমাজজীবনে বিশেষ প্রভাব বিস্তারও করেছিল। এই ক্লাব থেকেই উঠে এসেছিল সমালোচক আঁন্দ্রে বাজাঁ, উঠে এসেছিল ফরাসি মাসিক চলচ্চিত্র পত্রিকা ‘Cahiers du Cinema’ ও ‘positive’। উঠে এসেছিল গদার, ক্রুফো, রোমার, রিভেত এর মত বিখ্যাত সমালোচক ও পরিচালক। এই সিনে ক্লাবগুলি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন কলকাতার কিছু শিক্ষিত যুবক। তাঁরা কেউ সাংবাদিক, কেউ বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্মী, কেউ আর্ট ডিরেক্টর তো কেউ সাহিত্যিক ছিলেন। সাহিত্য, থিয়েটার ও অন্যান্য চারুকলার পাশে চলচ্চিত্রকে স্থান দিতে চলচ্চিত্র নিয়ে মননশীল চর্চার প্রয়োজন অনুভব করলেন। বিনোদন ও বাণিজ্যিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে সুস্থ সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে এই যুবকরা ফিল্ম সোসাইটি স্থাপন করার কথা ভাবলেন। আর ভারত স্বাধীন হবার একমাস কুড়িদিন পর ১৯৪৭ সালের ৫ অক্টোবর খোদ কলকাতাতেই স্থাপন করলেন ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি।
রাজকুমার সিদ্ধার্থ তাঁর স্ত্রী, পুত্র ও রাজৈশ্বর্য পরিত্যাগ করে সন্ন্যাসী হয়েছিলেন জরা, ব্যাধি, মৃত্যু ও দুঃখ থেকে মুক্তির পথ(মার্গ) খুঁজতে। কঠিন সাধনার পর বোধিপ্রাপ্ত হয়ে তিনিই হয়ে উঠেছিলেন তথাগত বুদ্ধ- এই গল্পটা আমাদের সকলেরই জানা। তাঁর প্রথম জীবনের এই গল্প অত্যন্ত জনপ্রিয়ও বটে। তবে তাঁর মহাভিনিষ্ক্রমণের পরবর্তী জীবন, দুর্গম তপস্যার পথ, তাঁর বোধিপ্রাপ্ত হওয়া, নতুন পথের সঙ্গী পাওয়া, তাঁর উপদেশ সমূহ নিয়ে সাধারণের মনে আগ্রহ তুলনামূলক কম। তথাগত বুদ্ধের জীবনকে দুটি ভাগে অনায়াসে ভাগ করা যায়। প্রথমটি বোধিপ্রাপ্ত হওয়ার আগের জীবন আর দ্বিতীয়টি বোধিপ্রাপ্তের পরের জীবন। তথাগত বুদ্ধের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ জীবনের দ্বিতীয় ভাগের পূর্ণাঙ্গ আলোচনা ‘নমো তস্স’ বইয়ের মূল বিষয়। এই বইটিতে রাজপুত্র সিদ্ধার্থকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ২২৩ পাতা জুড়ে আছেন শুধুই তথাগত বুদ্ধ। আলোর উদ্দেশে ভগবান বুদ্ধের কঠিন যাত্রাপথ গল্পাকারে বর্ণিত।
নীল কমিশনের সামনে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে নদীয়ার চাষি হাজি মোল্লা বলেছিলেন- ‘ভিক্ষা করে খাব তবু নীল বুনব নি’। দিনু মণ্ডল বলেছিলেন- ‘আমার গলা কেটে ফেললেও নীল বুনব না’। নীলকর সাহেবদের মধ্যে এই নদীয়ার নিরক্ষর, সহজ, সরল চাষিদের ঠকানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল সেই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই। নীল বিদ্রোহের সময় জেলার হিন্দু মুসলমান চাষিরা একজোট হয়ে সিপাহী বিদ্রোহের নিভে যাওয়া মশাল নতুন করে জ্বালিয়েছিলেন। জেলার মালিয়াপোতার খ্রিস্টান চাষিরাও একজোট হয়েছিল নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে। ১৮০০ থেকে ১৮৬০ এর মধ্যে মোট তিনটি ধাপে বিদ্রোহ করে সারা বাংলার নীলচাষীদের জাগিয়ে তুলেছিল। জেলার গ্রাম্য নিরক্ষর চাষিরা দেখিয়ে দিয়েছিল তারা ইতিহাস পড়তে না জানলেও ইতিহাস গড়তে জানে। পরাধীন ভারতের অবিভক্ত বাংলার কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, রানাঘাট, কৃষ্ণনগর মহকুমা নিয়ে তখন বিরাট নদীয়া জেলা।১