সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

লেখক: লিপিকা ঘোষ

লিপিকা ঘোষ
পেশা শিক্ষকতা। সাহিত্য ও ইতিহাস নিয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশুনো করেছেন। ধ্রুপদী নৃত্য চর্চা করছেন ছোটবেলা থেকেই। ভালোবাসেন অভিনয় ও লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত থাকতে। গ্রুপ থিয়েটার, টেলিফিল্ম ও দূরদর্শনের পর্দায় অভিনয় করেছেন। লিখেছেন সানন্দা সহ বিভিন্ন পত্রিকায়। গল্প, কবিতার পাশাপাশি লোকসাহিত্য নিয়ে লেখালেখিতে বিশেষ আগ্রহী।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মৈমনসিংহ গীতিকার প্রকাশ এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। দীনেশচন্দ্র সেন সম্পাদিত শতবর্ষ পুরোনো মৈমনসিংহ গীতিকা প্রকাশিত হয়েছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এই সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের সম্পর্ক ছিল নিবিড়, যা ছিল ঐতিহাসিকও। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তার বছর চল্লিশের ‘শৈশবকালে’ আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের মতো অভিভাবকের হাতে এসে পড়েছিল। তাঁর বুদ্ধিমত্তা, কর্মোদ্যম, শিক্ষাসচেতনতা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে অতি দ্রুত দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্মান এনে দিয়েছিল। প্রচলিত ধারণাকে নস্যাৎ করে দেওয়ার মতো বাংলা সমাজ জীবনের দলিল মৈমনসিংহ গীতিকার প্রকাশ আর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা স্নাতকোত্তর বিভাগের ঐতিহাসিক দ্বারোদ্ঘাটন প্রায় সমসাময়িক ঘটনা।
ভারতের আটটি শাস্ত্রীয় নৃত্যের অন্যতম হল মণিপুরি নৃত্য। মণিপুরি নৃত্যের জন্মস্থান উত্তর-ভারতের মণিপুর রাজ্যে যা কুয়াশাচ্ছন্ন পর্বতমালা, পাহাড় থেকে ঝরে পড়া ঝর্ণাধারা, সুবিস্তৃত সবুজ জঙ্গলে ভরা অণুপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সজ্জিত। যে মণিপুর ১৮২৮ সালে রাজা গম্ভীর সিং-এর আমলে বর্মার আক্রমণ থেকে রেহাই পেতে ব্রিটিশ শাসিত ভারতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল— সেই মণিপুরকে পরে দেশ স্বাধীন হলে ১৯৪৭ সালে রাজা বোধচন্দ্র সিং তাঁর রাজ্যকে স্বাধীন হিসাবে ঘোষণা করেন। অবশ্য দু’ বছর পর ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসাবে মণিপুরকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। ১৯৫৬ সালে কেন্দ্রশাসিত রাজ্য এবং তারও পরে ১৯৭২ সালে পূর্ণরাজ্যের অধিকার পেয়েছিল।
বিশ্বসংস্কৃতির আঙ্গিনায় ভারতীয় সংস্কৃতি এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। প্রাচীনকাল থেকেই এই ভারতীয় সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় সম্পদ যে সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা, নৃ্ত্যকলা তা আর আলাদা করে উল্লেখের আপেক্ষা রাখে না। তবে এসবের মধ্যে নৃত্যকলাকেই সংস্কৃতির প্রাচীন ধারা হিসাবে মেনে নেওয়া হয়। এই নৃ্ত্যকলা প্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় জনজীবনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে এসেছে। ভরতনাট্যম, কত্থক, কুচিপুড়ি, মণিপুরি, ওড়িশি, মোহিনীঅট্টম, কথাকলি — এই সাতটি শাস্ত্রীয় নৃ্ত্য ছাড়াও বর্তমানে অসমের সত্রীয়া নৃ্ত্যকেও শাস্ত্রীয় নৃ্ত্যের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। ভারতের এই সাতটি শাস্ত্রীয় নৃ্ত্যই আজ বিশ্বের দরবারে প্রশংসিত। আর ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃ্ত্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত যে কত্থক নৃ্ত্যকলা তাতে সন্দেহ নেই। ভারতীয় সংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক কত্থক তার আপন তালের ঝংকারে আপন ঠাটের মহিমায় সদা উজ্জ্বল!