সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

অসুর সম্প্রদায় ভারতের প্রথম মেটালার্জিস্ট – লোককথা ও ইতিহাস

অসুর সম্প্রদায় ভারতের প্রথম মেটালার্জিস্ট – লোককথা ও ইতিহাস

শর্মিষ্ঠা দাস

মার্চ ১৩, ২০২১ ৩২২৫ 24

গত আড়াই বছর ঝাড়খন্ডের রাঁচী শহর এক কুহকিনীর মায়ায় বেঁধেছিল। চোখ জুড়ানো মন ভুলানো ছোটনাগপুরের পাহাড় জঙ্গল তো আছেই। আর আছে নোমাডিক, সেমি নোমাডিক আদিম মানুষের চারণভূমি। খ্রীস্টপূর্ব দশ হাজার বছর বা তারও আগের মানুষের চিহ্ন ঝাড়খন্ড জুড়ে। যাদের কথা কেউ উচ্চারণ করতেও ভয় পায় – সেই “অসুর” তারা এখনো কিছু ঘর আছে ঝাড়খন্ডে – তবে বেশীদিন থাকবে না। তাদের কথা কিছু যে না জানলেই নয়।

হিনু রাঁচির সবচেয়ে পুরোনো বাঙালি পাড়া। ভাগলপুর, মধুপুরের মত হিনুর গায়েও লেগে আছে সেই একটা সাদা ধুতি পাঞ্জাবি পরা বাঙালিবাবুর গন্ধ। সতেরশো পঁয়ষট্টি সাল থেকে ভারতের স্বাধীনতা পর্যন্ত এক বিস্তৃত অঞ্চল ছিল ‘বেঙ্গল প্রেসিডেন্সী’। রাঁচিও সেই মুকুটের এক মণি। সেজন্য এখনো চোখে পড়ে – শ্যাওলাপড়া পাঁচিল ঘেরা পুরোনো ছাঁদের বাড়ি – জমির হাতায় মোটা মোটা কালো গুঁড়িওয়ালা আম কাঁঠালের গাছ। কোনো পাঁচিলের ওপাশ থেকে এ সময়ে টুপটাপ শিউলি ঝরে পড়ে পথের ধুলোয়। চরাচর জুড়ে ম’ম করে পুজো পুজো গন্ধ। গেটের পাশে ক্ষয়ে যাওয়া ফলকে মুখুজ্জে, বাড়ুয্যে, মিত্র, চৌধুরীদের নাম। একশো বছর আগের বাঙালি লেখকদের লেখায় হিনুর উল্লেখ পাই। রাঁচির দুর্গাবাটি আর হিনুর প্রাচীন দুর্গাপুজো মন্ডপে গেলে সব চেনা মুখের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। দু’হাজার বারো সালে হিনুর দুর্গাপুজো একশো বছর পেরোলো। স্থায়ী বাঁধানো মঞ্চ, ডাকের সাজের চোখ জুড়োনো প্রতিমা। উল্টো দিকে সাংস্কৃতিক মঞ্চ। প্রতি সন্ধ্যায় কলকাতার শিল্পী, স্থানীয় শিল্পীরা মাতিয়ে রাখেন। মন্ডপ জুড়ে চেয়ার পাতা থাকে। নানা বয়সী ঝলমলে আনন্দ ওড়াউড়ি করে। রোজ সন্ধ্যায় একবার ঢুঁ মারি, তেলেভাজা কিনে খাই আর গান শুনি। কাগজে পড়লাম এক অসুর ভাই মুমফালির দোকান দিয়েছে। খাঁটি মহিষাসুরের বংশধর। পরিহাস বটে। সিংহভাগ মানুষ যারা সারাবছর সিংহবাহিনীর পুজোর জন্য দিন গুনে বসে থাকে তারা জানে মহিষাসুর এক অশুভ শক্তি অথবা মার্কণ্ডেয় পুরাণের সেই নৃশংস দানব। কালোকোলো নিরীহ মানুষটাকে দেখে তাঁর পূর্ব ইতিহাস জানার লোভ হচ্ছিল।

তারও আগে ‘কালধ্বনি’ পত্রিকায় আমাদের মণিশঙ্করের লেখা দাঁসাই পরব মনে একটা পেরেক গেঁথে দিয়েছে। সত্যি কথা বলতে কি দুর্গাপুজোর জন্য আমিও দিন গুনি, ঠাকুর দেখি, সাজুগুজু ফুচকা চপ আড্ডা কিছুই কম ভোগ করিনা। কিন্তু মুখে ঘামতেলের গ্ল্যামার ঠিকরে পড়ছে, গা ভর্তি গয়নাগাঁটি, বেনারসি, কত অস্ত্রশস্ত্র, কত উঁচু মঞ্চ – বাপরে – মা দুর্গাকে আমার কখনো কাছের মানুষ মনে হয়নি। ফিল্মস্টার বা সেলেব্রিটিদের মত অধরা। বৃহত্তর বর্ণবৈষম্যের ইতিহাস জানার আগেই তার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সংস্করণের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল বৈকি। রবিঠাকুর তো দুর্গাপুজোয়, ধনীর দুয়ারে সেই কাঙালিনী মেয়েকে আজীবন দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। সুতরাং অমন মিষ্টি পানপাতা মুখ হলে কি হবে, তিনি পক্ষপাতিত্বের রানী। আজো দেখলাম,শনের নুড়ি চুল ছেঁড়া ফ্রকের এক মেয়ে কারো ফেলে দেওয়া রোলের কাগজ থেকে কি খুঁটে খাচ্ছে। এক চূড়ান্ত বর্ণবৈষম্যের চৌকাঠের ওপারে দাঁড়িয়ে তিনি মিটি মিটি হাসছেন। ঘাড়টা সেই থেকে ভয়ানক শক্ত হয়ে আছে আমার। দাঁসাই পরবটা বেশ ভাবাচ্ছে। এ যেন দুর্গাপুজোর অ্যান্টিথিসিস। তাকে আরেকটু কাছ থেকে জানা দরকার।

জ্ঞান হবার পর থেকেই মা দুর্গার পায়ের নীচে করুণ চোখে ছেতরে মরে পড়ে থাকা অসুরের জন্য আমার, আমার কিছু বন্ধুরও বেশ কষ্ট হত। আমরা বলতাম – আহা বেচারা। অত পেশী ফুলিয়েও লড়াই জিততে পারল না। একটু একটু জানতে পারছি। ঝাড়খন্ডে আছে – পৃথিবীর একমাত্র অসুর গ্রাম; সখুয়াপানি। রাঁচি থেকে নেতারহাটে যাবার পথ। সারাবছর ট্যুরিস্ট গাড়ী মাছির মতো ভনভন করে নেতার হাট পানে। পনেরো কিলোমিটার আগে আঁকা বাঁকা পথে গাড়ী ঘোরে না কারও। এখানেই কি যুদ্ধটা হয়েছিল। অ্যাকাডেমিক ইতিহাসের বই ভুরি ভুরি মিথ্যে কথা বলে আর পুরাণ তো কল্পগল্প।

প্রমাণিত সত্য – অসুররা ভারতের আদিম মেটালার্জিস্ট। একথা বললে কে বিশ্বাস করবে?

সখুয়াপানির লোকেদের শুধাও। প্রথমে কিছু বলবে না। টেরিয়ে টেরিয়ে দেখবে। ওরা যে কাউকেই বিশ্বাস করতে পারে না। একটু ভাবসাব হলে, বিশ্বাস জন্মালে বলবে – লোহাপাথর কুথায় পাওয়া যায় কে জানে? অসুর জানে। লোহাপাথর গরম করে কি করে? অসুর জানে। পাথর থেকে গরম লোহারস বেরোয় কেমনে? অসুর জানে। গর্ভবতী লোহাপাথরের শরীরের কোন খাঁজে লোহা থাকে সব অসুর জানে। অসুরপুরুষ লোহাপাথর কাটে। লোহাপাথর ছেনে লোহা বের করে। সে কি কম মেহনত। পারবে আর কেউ। অসুরমেয়ে সোহাগ চোখে দেখে আর মন পুরুষের কাজে সুর লাগায়। ওস্তাদ দাইয়ের মতো আনন্দে গান করে, পাথর গরম করে – হিমাটাইট থেকে লোহা বের করার কায়দা জানত ওরা। এমন লোহা যাতে হাজার বছরের রোদজলেও জং ধরে না। মগধের রাজা অশোকের কাছ থেকে চাহিদা আসত। মৌর্যযুগের মরচে না পড়া লোহা সব নাকি অসুরদের হাতে তৈরি। অনেক যুদ্ধজয়ের পেছনে নাকি অদৃশ্য হাত ছিল অসুরদের তৈরি লোহার অস্ত্রের। এসব নিয়ে গবেষণা বিশেষ হয়নি। গবেষণা হলে হয়তো – অর্থনীতি, ধর্ম ঘুরপাক খায় এমন কিছু মিথ মিথ্যে হয়ে যাবে।

হিনুর সেই বিরজা অসুরের মুমফালির দোকানে একটু গল্প শোনার লোভে রোজ যাই। কখনো ওর ছেলে থাকে। তুমহারে নাম কেয়া ভাই? ‘সঞ্জয় টোপ্পো’। টোপ্পো কেন? তোমার পিতাজি তো অসুর। মুমফালির গরম কড়ার নীচের আগুনের চাইতেও গরম চোখ দেখায় সঞ্জয় – “ইয়ে সব বকোয়াস বন্ধ কিজিয়ে। অসুর ফসুর কোই নেই হ্যায়। বুড়া আদমি ক্যা বোলতা হ্যায়, ছোড়িয়ে। মুমফালি কিতনা দ্যু?”

গরম মুমফালি কাগজে মুড়ে মন্ডপে এসে দেখি – আমি দিয়েছিলাম পঞ্চাশ টাকা, দশটাকার মুমফালি আর ফেরত দিয়েছে তিনটে কুড়ি টাকা। হায়রে! এই বুদ্ধি নিয়ে দোকান দিয়েছে। ছুটে যাই ফেরত দিতে। এবার বাবা বসেছে দোকানে-বিরজা অসুর। টাকাটা ফিরিয়ে দিতেই বলিরেখা ভরা মুখের কোটর থেকে স্নেহে তাকালেন – ‘জানতাম বিটি তু আসবি, টাকা ফিরিয়ে দিথে’ দোকান এখন একটু ফাঁকা। এদিকে ওদিকে তাকিয়ে বলেন – ‘উস টাইম তুম যো পুছ রহে থে – উসকা পিছে লম্বি কহানি হ্যয়। নয়ে জমানেকা লড়কালোক আভি ‘অসুর’ ইয়ে ছাপ্পাসে ভাগনে চাহতা হ্যয়।‘ এর মধ্যেই সঞ্জয় চলে এল আর সেই রাগী চোখ। পালিয়ে এলাম। কিন্তু গল্পের সুতোটা বিরজা চাচাজী এবার আমার চুলে চিউংগামের মতো চিটিয়ে দিয়েছে – তাকে ছাড়াতে যেতেই হবে। পরদিন দুপুরে আমার মুমফালি খিদে যদি পায় – আটকায় কে! পুজোমন্ডপে তখন অষ্টমীর অঞ্জলির ভীড়। নড়বড়ে দোকানের তক্তার নীচে ওদের শোওয়া থাকা। কালো হাঁড়িতে ভাত ফুটছে। চুট্টা ধরিয়ে বসে আছে বৃদ্ধ অসুর। ছেলে কাছে পিঠে নেই দেখে শুধোই – ‘কাল কি যেন বলছিলেন…’

-আপ ক্যা আকবর কা আদমি হ্যায়? ইতনি পিছে কিউ পড়তা হ্যয়?

-‘আপলোগোকা কহানী জাননা চাহ্তা হু ম্যয়।’- খানিকটা নাছোরবান্দা প্রচেষ্টা।

-‘সুনিয়ে –ও মাইকমে হোতা হ্যায়’ নিরুত্তাপ গলায় বলে বিরজা।

প্যান্ডেল জুড়ে তখন গমগম করে বাজছে আমাদের জন্মইস্তক হিপনোটাইজ করে রাখা ‘মহিষাসুর মর্দিনী’র কাহানি।

আমিও ছোড়বার লোক নোই। আমার বিচ্ছিরি হিন্দিতে বলি –‘উও কাহানি লিখা আপলোগোকা রাজা কো মারনেওয়ালা আদমি, আপলোগ ক্যা শোচতা হ্যায় উও তো বাতাইয়ে’

এর মধ্যেই কোথা থেকে ফিরে এল সঞ্জয়। আগের রাতের চেয়েও অনেক বেশী লাল চোখ। নেশা টেশা করে নাকি। দেখলাম নোংরা উড়নি দিয়ে নাক মুছছে ক্রমাগত। বিরজা চাচা বলল- ‘আমাকে যে এবার যেতে হবে –‘

-কোথায়?

-কাঁদতে।

সঞ্জয়ের লাল চোখের কারণ এতক্ষণ বোঝা গেল। দুর্গাপুজোর সময় ন’দিন ন’রাত ওরা কাঁদবে। বুক চাপড়ে কাঁদবে ঘরে দুয়োর এঁটে। ওদের মহান রাজা দয়ালু রাজা মহিষাসুরের জন্য কাঁদবে। সে কোন প্রাচীন কালের কথা। চৈচম্পা নামে এক দেশ। সে দেশের প্রজাদরদী রাজা মহিষাসুর। যে রাজা কখনো কোনো মহিলাকে অপমান করেন না, কোনো মহিলার গায়ে হাত তোলেন না। এদিকে শক্তিশালী ধাতু ‘লোহা’ যাদের হাতের কথা শোনে, তারাই তো দুনিয়ার মালিক। তাদের সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধলে সবাই হেরে ভূত। বিপদে পড়লে রাজা মহিষের রূপ ধরতে পারেন। প্রকৃতির লৌহভান্ডার কব্জা করতে হলে এই রাজাকে পরাস্ত করতে হবে। দুনিয়ার সব বুদ্ধিমান লোকেরা শলাপরামর্শ করে এক উপায় বের করল। পড়ালিখা জানা বুদ্ধিমান লোককে দেবতা মানে সবাই। এক পরমা সুন্দরী রমণীকে পাঠানো হল মহিষাসুরকে ভালোবাসার অভিনয়ে বশ করার উদ্দেশ্যে। লোহার মত শক্তি থাকলে কি হবে -বোকা সরল রাজা সেই ছলনাময়ীর ফন্দি একটুও আঁচ করতে পারল না। যা হবার তাই হল – ভালোবাসার ফাঁদে পা দিল রাজা। তারপর সুযোগ বুঝে তাকে মারতে গেল ছলনাময়ী নারী। কতরকম অস্ত্র দিয়ে যে আঘাত করল। মহিষাসুর স্ত্রীলোকের গায়ে হাত তুলবেন না বলে শুধু আত্মরক্ষা করে যেতে লাগলেন। ন’দিন ন’রাত ধরে যুদ্ধ শেষে আর আত্মরক্ষা হল না। মহিষাসুরমর্দিনী। অসুরদের ভার্সন। এখনো খাঁটি অসুররা মোষকে দেবতা মানে। মোষের দুধ খায় না। ন’দিন একটানা কান্নার পর করঞ্জ তেল লাগায় নাভিতে, বুকে আর নাকে – এই তিন জায়গা থেকে রক্তক্ষরণে মহিষাসুর মারা গিয়েছিল – তাঁর শুশ্রূষা হয় এতে। তারপর একটা শসা খায় – ‘মহান রাজা মহিষাসুর – যে তোমাকে মেরেছে তার প্রতিশোধ নিলাম, এই তার কলিজা খেলাম’ শসা হয়ে যায় সেই ছলনাময়ী নারীর কলিজার প্রতীক।

সঞ্জয় প্রায় হিসহিস করে বলল – ‘যা জানেন, মৎ বলিয়ে ইধার। হমলোগ সব সারনেম বদল কর লিয়া। ‘অসুর’ সারনেম নিয়ে কেউ স্কুলে যেতে পারে না। সবাই ঢেলা ছোঁড়ে – মার ডালো অসুরকো। রেশন দুকান, ক্ষেতি, হাটিয়া; হর জগামে আদমি আমাদের দুশমন সমঝে, দানো ভাবে – বাচ্চাদের দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় মায়েরা। এভাবে বাঁচা যায়? এক দু’ জেনারেশন পরে আর কোনো অসুর থাকবে না বলে দিলাম।‘

গুমলাতে আট ক্লাস পর্যন্ত পড়েছে সঞ্জয়। বোন কলেজে পড়ছে। বাপ ব্যাটা মেলায় মেলায় দোকান দেয়।

– তোমরা আর লোহা তৈরি কর না? জিজ্ঞাসা করলাম।

-হুঃ, ছোড়িয়ে উও সব।

মুমফালির সঙ্গে ঝাল নমক বানানোর জন্য হরা মিরচা থেঁতো করতে থাকে। একটু আগে লুকিয়ে কান্নার চিহ্ন এতক্ষণে মুছে ফেলেছে, কিন্তু এবার চোখের কোণে বয়লারের একটা আগুনের আভা লুকোতে পারে না।

দুনিয়ার কোনো খবরের কাগজের লোক নই আমি, কোনো পার্টির লোক নই, ধর্ম বিশ্বাসী নই, প্রতিবাদী নই – কেউ নই আমি। ভয় কি আমার। আবার জিজ্ঞেস করি – ‘কি, তোমাদের সখুয়াপানিতে কেউ আর লোহা বানায় না?’

কয়লার উনুনে ফুঁ দিচ্ছিল। আগুনটা এবার দপ করে জ্বলেই উঠল, ঠিকরে আমার দিকেও চলে এল উনুনের একটা জ্বলন্ত ছোট টুকরো। আমার চোখে চোখ রেখে সেই ভস্ম করে দেবে আগুন বলল –‘না। আমাদের কেউ আর পাথর থেকে লোহা ছানতে জানে না। লোহা গলাতে ভুলে গেছে সবাই। কবে থেকে জানেন? 1907 সাল থেকে। যেদিন থেকে টাটা স্টিল কোম্পানি খুলল।’ পরে আশ্চর্য হয়ে দেখব আধুনিক স্টিল কোম্পানি অসুরদের পদ্ধতি অনুসরণ করেই ব্লাস্ট ফার্নেসে লোহা তৈরি করে – তফাত শুধু কম খাটনি কম সময়ে প্রচুর উৎপাদন আর বেশী পরিবেশ দূষণ।

সঞ্জয় বলে – চাষাবাদ করতাম, জঙ্গলের ধারে অল্প জমি ছিল সবার – বক্সাইট খনি সব নিয়ে নিল। ঘরে খাবার নেই, মরদের কাজ নেই, মেয়ে বউদের মান নেই – আমাদের অর্ধেক লোক জলপাইগুড়ি চা বাগানে কুলি খাটতে চলে গেছে একশো বছর আগে – তারা সবাই অন্য জাত হয়ে গেছে, অসুর বংশ স্বীকার করে না। সখুয়াপানিতে, জভিপত গ্রামে এখনো ক’ঘর আছি। আর থাকব না।

-‘তোমরা তাহলে আর কাঁদবে না তোমাদের রাজার জন্য?’

-‘কান্না কি আর মানুষের জীবন থেকে যায়!’

‘এক কান্না যায় আর এক কান্না আসে।’ বিরজা চাচা বলতে থেকে – ‘কভি কৈ গোরি লড়কির সাথে লড়কার শাদি দিই না আমরা। সঞ্জয় স্কুলমে এক গোরি লড়কির সাথ বাতচিত সুরু কিয়া থা। ডান্ডা মেরে পড়া ছাড়িয়ে দিলাম। বক্সাইট খনিতে কাজে ঢুকল। বহুত খাটনির কাজ। আমাদের লড়কার কাজকামে কোনো ডর নেই। যিতনা মেহনতি কাম হো, লেকিন সবাই এত পিছে লাগা শুরু করল ‘অসুর অসুর’ বলে ও আর কাজে যেতে চাইল না। বউয়ের পেটে টিউমার হল – অপারেশন করাতে ধানি জমি থোরা যো থা বেচনা পঢ়া।’ মনে হল সখুয়াপানির কোনো অসুর নয় – বাংলার দূর গাঁয়ের থেকে শহরে চিকিৎসা করতে আসা কোনো চাষীভাইয়ের গলা শুনছি। দুজনে ওদের নিজের নিজের কান্নার গল্প করতে করতে ধুলো ওড়া পথের বাঁকে যাবে বলে তল্পি গুটোল। হয়তো কোনো ফাঁকা গাছতলায় বসে দুজনে কাঁদবে। একজন বলে – ‘এবার তো এত আলু হল – কেনার লোক নেই, হিমঘরে নিল না – ধার শোধ হল না। সব খেতেই পুড়িয়ে দিলাম, কুমড়ো লাগিয়ে বসে আছি…।’ অন্যজন বলে – ‘ইতনা ছোটা জমিন – ক্যা করু – মুমফালি ফলিয়েছি।’

-‘ও চাচা শোনো শোনো , এই গানটা শুনেছ –

হায়রে হায়রে

অকয় গুরু হোয় ধরায় আদা

সিঞ বীরদ হাঁসায় ডিগির

এহেল গেহেল

হায়রে হায়রে

ধরম গুরু দয় ধরাও আদা

সিঞ গুরু দয় ধরাও আদা

মান গুরু দয় ধরাও আদা

হায়রে হায়রে’

আবার বিরজার চোখে সেই অবিশ্বাসটা উঁকিঝুঁকি মারছে। রোগা হাতের শীর্ণ শিরা দেখিয়ে বলে কিনা – ‘এ গান কুথা পেলেন? মহিষাসুরের খাঁটি খুন শুধু আমাদের শরীরে।’

এখন দুঃখের সময়ে মণিশঙ্করের সাঁওতাল গ্রামে দাঁসাই পরবের কথাটা তোলা সমীচীন হবে না। আলগোছে বোঝা গেল একদিকে যেমন আর্য-অনার্য যুদ্ধ। তেমনি কে মহিষাসুরের আসল বংশধর তা নিয়েও একটা ধন্দ একটা যুদ্ধ আছে। এরা সবাই মুন্ডারি অস্ট্রো-এশিয়াটিক নৃগোষ্ঠী উদ্ভুত। সামাজিক নিয়ম কানুন, ভূত-প্রেত, ওঝা পরব – সব মোটামুটি এক, তবু নিজের পৃথক অস্তিত্বে সবাই বাঁচতে চায়। অসুরদের মধ্যেও আবার তিন ভাগ – বীর অসুর, আগারি অসুর আর বিরিজা অসুর। যুদ্ধ বোধহয় মানুষপ্রাণীর স্বভাব। মাটির জন্য যুদ্ধ, ধনসম্পদের জন্য যুদ্ধ, ধর্মের জন্য যুদ্ধ। একজন মানুষ যদি একটা দ্বীপে একদম একা থাকে – তখনও চলবে তার নিজের সঙ্গে যুদ্ধ।

সাঁওতালদের দাঁসাই পরবের লোককথাতেও মা দুর্গা ছলনাময়ী নারী। ওদের রাজা ছিলেন হুদুড়দুর্গা। হুদুড় মানে বহুগুণ সম্পন্ন। তার রাজ্যে কোনো দুখ নেই, সবাই সুখী সম্পন্ন প্রজা – সবার ক্ষেতে ফসল উপচে পড়ে, গাছভরা ফল, সমৃদ্ধ জঙ্গল। অন্য রাজ্যের লোকের খুব লোভ হুদুড়দুর্গার দেশের উপর। বাইরে থেকে যারা আসে তারাই দুখ বয়ে আনে। তাই বাইরের লোকদের ওরা বলে ‘দিকু’। এমন রাজা যাকে কেউ যুদ্ধে হারাতে পারে না। সবাই হেরে যায়। সেই রাজার আবার তাদের দেবতা মারাংবুরুর বর আছে – পৃথিবীর কোনো পুরুষ তাকে মারতে পারবে না। সব হেরো রাজারা মিলে ঠিক করল – এক সুন্দরী মেয়েকে পাঠাতে হবে। সারামাই ওদের শ্রেষ্ঠা সুন্দরী – তোমাকে তো যেতে হবে বাপু। ‘দেবী’ বানিয়ে দিলে সব মেয়েই একটু লাফ দিয়ে উপরে উঠে যায়। সুন্দরী সারামাই হুদুড়দুর্গার কাছে গিয়ে মিথ্যে করে ইনিয়ে বিনিয়ে তার কষ্টের কথা বলল। দয়ালু রাজা তাকে বিয়ে করল। কিন্তু মারাংবুরুর বরের সুরক্ষায় আছে রাজা – সারামাই তার জান নিতে আর পারে না। শেষে সারামাই এবার পালিয়ে মারাংবুরুকে বশ করল। বলে কিনা – আমি তো তোমাকেই সত্যি ভালোবাসি, রাজার সঙ্গে ছলনা করেছি। সরল রাজা এই প্রতারণা সইতে না পেরে ক্ষেপে গেলেন। মারাংবুরুকে হাত করে সুযোগ বুঝে রাজার বুকে শূল বিঁধিয়ে দিলেন সারামাই। সাঁওতালরাও দুর্গাপুজোর সময় ন’দিন কাঁদে। শেষদিন মেয়েদের মতো শাড়ি ব্লাউজ পরে কেঁদে ঘোরে। মেয়েদের পোশাক কেন? পেরথম কারণ হল – তারা অমন বীর রাজার বংশধর, তাদের কি কান্না শোভা পায়! তাদের রাজার শোকে কান্না যে পায় – সে চোখের জল সামলায় ক্যামনে। তাই মেয়েদের পোশাক পরে কাঁদে। আর এক কারণ বলে – মেয়েদের ছদ্মবেশে তারা ঘরে ঘরে খুঁজে বেড়ায়, কোথায় লুকিয়ে আছে সেই সুন্দরী ছলনাময়ী – খুঁজে পেলেই তাকে…

গানেও সেই কথা – কে ধরিয়ে দিল তাকে? ধরম গুরু, সিঞ গুরু, মান গুরুকে কে ধরিয়ে দিল? হায়রে…

কাঁদনশেষে দাঁসাইতে বেশ একটা নাচ হয় আগুন ঘিরে আর আগুনে মোরগ ঝলসায় – এরপর ভোজ আর হাঁড়িয়া। টাপুর টুপুর গল্পে গল্পে বেলা গেল।

একসময়ে সবচেয়ে শক্তিশালী লোহা গলানো জানা সেই মানুষদের নিয়ে, তাদের শক্তিকে কিভাবে খর্ব করা তা নিয়ে আর একটা ভার্সান লোককথা আছে নৃতত্ত্বের আকর শরৎচন্দ্র রায়ের একশো বছর আগের বইতে। সমকালে কারো মুখে তাকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আসলে লোককথা একের মুখ থেকে মুখে ঘুরে ফেরে। ঘুরতে ঘুরতে বদলে যায়, হারিয়ে যায়।

সেও এক কালোয় কালোয় যুদ্ধ, প্রতিপত্তি বজায়ের বর্বর কাহিনী। এ হল মুন্ডাদের লোককথা। বেশ লম্বা কাহিনী। মুন্ডারাজার অসুরবধের কাহিনী। পৃথিবীর কোন সেই আদ্যিকালে সবচেয়ে শক্তিমান রাজা সিঙ বোঙা। স্বর্গে সোনার সিংহাসনে বসে রাজার হঠাৎ মনে হল – এত গরম লাগছে কেন! মন্ত্রী সান্ত্রী সভাসদরা বলল – পৃথিবীতে অসুররা ফার্নেসে লোহা গলাচ্ছে। আর বলবেন না হুজুর, অসুরদের ফার্নেসের গরমে সব নদী নালা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল, পশুপাখি তেষ্টায় গলার ছাতি ফেটে মরে যাচ্ছে, গাছপালা নেতিয়ে পড়ছে – আমরা বাঁচব কেমনে!

সিঙ বোঙা সিংহাসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন – কি এতবড় আস্পর্ধা! এক্ষুনি যুদ্ধে যাব অসুরদের মারতে। সিঙ বোঙার রাণী বুঝিয়ে থামালেন রাজাকে – ‘আপনি নিজে যাবেন কেন? দূত পাঠান আগে’। শেষমেশ ঠিক হল রাজার দূত হয়ে যাবে দুই পাখি – ধেচুয়া আর কারকেটা। মুন্ডারি ভাষার ধেচুয়া আমাদের ফিঙে আর কারকেটা হল চড়ুই। দুজনে উড়ে এল পৃথিবীতে। অসুরদের বলল – সিঙ বোঙার নির্দেশ – তোমরা বাপু হয় রাতে অথবা দিনে ফার্নেসে লোহা গলাও। দিনরাত যদি ফার্নেসে এমন আগুন জ্বালো ধরিত্রী বাঁচে কেমনে! এ এক পরিবেশ চেতনার কথাও বটে। মনে হয় – আধুনিক লোহা কারখানার ফার্নেসও তো এমন করতে পারে।

অসুররা কোনো কথা শুনল না। দূতপাখিদের অপমান করল। ফিঙের পুরো শরীরে কয়লার গুঁড়ো আর চড়ুইয়ের গায়ে লোহার গুঁড়ো মাখিয়ে দিল। ওরা মুখচুন করে ফিরে গেল। সেই থেকে ফিঙের গায়ের রঙ কয়লার মতো কালো আর চড়ুইয়ের বাদামি।

এবার সিঙ বোঙা দূত হিসেবে পাঠালেন সোনালী শকুন সোনাদিদি আর রুপোলি শকুন রূপো দিদিকে। তারা এসে একই অনুরোধ করল অসুরদের। অসুররা কারো কথা শোনার পাত্র নয়। ঠাট্টা করে ওদের দুজনের গলাতে দুটো লোহার আংটা পরিয়ে দিল। আজো গলার নীচে সেই আংটা ঝুলে আছে।

সিঙ বোঙা দূত পাখি খুঁজে খুঁজে এবার পাঠালেন ছটফটে চাতক আর কাক। তারা এসে একই কথা বলল – হয় দিন নয় রাত, বারো ঘন্টার শিফটে ফার্নেস চালাও। অসুররা আবার কাকের গায়ে কয়লার গুঁড়ো আর চাতকের গায়ে লোহার গুঁড়ো ছুঁড়ে দিল। সেই থেকে ওদের রঙ কালো আর লোহার মতো।

সবার শেষে সিঙ বোঙা পাঠালেন খঞ্জনা আর ছোট্ট মুনিয়াকে। তারা রাজার আদেশ জানাল অসুরদের। অসুররা ওদের কথা তো শুনলই না, ছোট পাখিদের সঙ্গে ফাজলামো করে খঞ্জনার লেজ ধরে এমন টানল যে তার লেজের পালক চিরদিনের জন্য লম্বা হয়ে গেল। মুনিয়ার গায়ে ঢেলে দিল হলুদগোলা জল।

এবার সিঙ বোঙার ধৈর্যের বাঁধ গেল ভেঙে। সিংহাসন ছেড়ে হুঙ্কার দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। তাঁর ‘একাশিপিড়ি তেরাসবাড়ি’র রাজ্য ছেড়ে নেমে এলেন পৃথিবীতে। একজন খেতমজুর মাঠে কাজ করছিল – সিঙ বোঙা তার গায়ে ভয়ঙ্কর চুলকুনি বাঁধিয়ে দিলেন। তারপর তাকে মেরে, তার চুলের মুঠি ধরে চামড়াটা ছাড়িয়ে নিজের গায়ে পড়লেন।

দেবতারা কুপিত হলে এরকম কাজকর্ম হামেশাই করে থাকেন। সেই ভয়ঙ্কর চর্মরোগের চামড়া পরে এক বাচ্চা ছেলের রূপে সিঙ বোঙা অসুরদের দোরে দোরে ঘুরলেন – আমাকে কিছু কাজ দেবে গো? তোমাদের শস্য পাহারা দেব, মুরগি তাড়িয়ে দেব। ছোঁয়াচে অসুখের ভয়ে অসুররা কেউ কাজ দিল না। এবার পাশের গ্রামে গেল। সেখানেও কাজ দিল না। সহৃদয় একজন বলল – ওই গ্রামের বাইরে বুড়োবুড়ি মুন্ডাদম্পতি থাকে – লাটকুম হারাম আর লাটকুম বুড়িয়া, ওদেরও দেখাশোনা করার কেউ নেই, ওদের কাছে যাও। সিঙ বোঙা ওদের কুঁড়েতে গিয়ে বললেন – আমার নাম টোরো কোরা। একটু থাকতে আর খেতে দিলে তোমাদের সব কাজ করে দেব। তাই হল। বেশ কিছুদিন মন দিয়ে কাজ করে বুড়োবুড়ির মন জয় করে নিল টোরো কোরা। একদিন টোরো কোরা বুড়োবুড়িকে বলল – দাদা নানি, আমার চুলকুনির জন্য বড় কষ্ট, কিছুই মুখে ভালো লাগে না, বড় ইচ্ছে করছে ডিম খেতে। কটা ডিম এনে খাওয়াবে? দয়ালু লাটকুম হারাম লাটকুম বুড়িয়া ডিম এনে দিল, ভাতের মন্ড বানিয়ে দিল।

টোরো কোরা সেগুলো কোঁচড়ে নিয়ে চলল অসুর গ্রামে। অসুর ছেলেদের বলল – চল গোলি ঔর কাটি খেলি। অসুররা খুব রাজি। ওদের গুলি সব লোহার তৈরি। আর টোরো কোরা ডিম দিয়ে গোলি আর ভাতের মন্ডের কাটি বানিয়েছে। অসুর ছেলেরা হেসেই বাঁচেনা। কিন্তু খেলতে গিয়ে দেখা গেল ওই ডিমের গোলি ওদের লোহার গোলিকে কেটে দুখণ্ড করে দিচ্ছে। এতো বড় তাজ্জব কি বাত! সেদিন লাটকুম হারাম লাটকুম বুড়িয়া দেখে তাদের ফাঁকা ধানভানার গর্ত, ফাঁকা ধান শুকোতে দেবার মাদুর সব ধানে ভরা। অসুর ছেলেরাও বাড়িতে গিয়ে দেখে একই কাণ্ড। পরদিনও অসুর ছেলেদের সঙ্গে গোলি কাটি খেলল টোরো কোরা আর সবার ঘরের শূন্য ভাঁড়ার শস্যে ভরে উঠল। টোরো কোরাকে এবার সবাই একটু সম্ভ্রমের চোখে দেখতে শুরু করল।

সিঙ বোঙার কারসাজিতে হঠাৎ দেখা গেল অসুরদের ফার্নেসে লোহা তৈরি কমে যাচ্ছে। কোনো উপায়ে বাড়ছে না। অসুররা গিয়ে ধরল টোরো কোরাকে। টোরো কোরা বলল- সিঙ বোঙার নামে একটা সাদা মুরগি বলি দিতে। অসুররা সেই মত কাজ করতেই ফার্নেসে লোহা তৈরি হতে থাকল। আবার কিছু দিন পর লোহা উৎপাদন কমে গেল। আবার অসুররা এল টোরো কোরার কাছে। এবার সিঙ বোঙার দাবি সাদা ছাগল বলি। আবার গম গম করে লোহা। আবার কম কম উৎপাদন। এবার সিঙ বোঙাকে দিতে হবে সাদা ভেড়া। তাই হল। আবার কম লোহা। আবার টোরো কোরার কাছে অসুরদের দরবার। এবার সিঙ বোঙার দাবিটা ভয়ানক – বালক বলি। অসুররা এই নিদারুণ নিষ্ঠুর নিদানে একেবারেই রাজি হল না। তখন টোরো কোরা ওদের বলল – ‘শোনো, এই চর্মরোগে আমার এত কষ্ট যে আমার একটা দিন বাঁচাও খুব যন্ত্রণাদায়ক। তোমরা আমাকে তোমাদের ফার্নেসে ঢুকিয়ে দাও, পায়ে পড়ি।’

অসুররা ওর অনুনয় বিনয়ে রাজী হল। নিয়মাবলি টোরো কোরাই বাতলে দিল। টোরো কোরা ফার্নেসে ঢুকবে। সব মহিলারা তিনদিন উপোষ করে আমপল্লব দিয়ে মাটির ঘড়া থেকে জল নিয়ে তিনদিন ধরে ফার্নেসে জল ছিটাবে। তৃতীয় দিনে আগুন জ্বালাবে ফার্নেসে। সেইমত সব হল। তৃতীয় দিনে ফার্নেসে অগ্নিসংযোগ করতেই টোরো কোরা সেখান থেকে বেরিয়ে এল এক ঝকঝকে উজ্জ্বল নতুন ত্বক নিয়ে আর গায়ে মাথায় সোনা রুপোর অলঙ্কার। অসুররা তো হতবাক। লোভের ফাঁদেও পড়ল সবাই। সবাই শুধোয় – ‘ভাই, ফার্নেসে আরো সোনারুপো আছে নাকি?’ টোরো কোরা হাত উল্টে বলল – ‘অঢেল, এত আছে তোমরা নিয়ে শেষ করতে পারবে না’।

সবাই হুড়োহুড়ি শুরু করল ভিতরে যাবে বলে। টোরো কোরা বলল – ‘শোনো, শুধু পুরুষ অসুররাই ভেতরে যাবে। সবাইকে যেতে হবে একসঙ্গে। গ্রামের একজন পুরুষও যেন বাদ না পড়ে। ওখানে দেখবে সোনালী শকুন আর রুপোলি শকুনের ডানার নীচে আছে সব ধনসম্পদ। সবাই একসঙ্গে না গেলে ওদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না।’

টোরো কোরাকে এতটাই বিশ্বাস করে ফেলেছে অসুররা – গ্রামের সব পুরুষেরা ফার্নেসের মধ্যে প্রবেশ করল। এবার ফার্নেসের ঢাকনা বন্ধ করে দিয়ে, মেয়েদের টোরো কোরা বলল – আগুন জ্বেলে খুব জোরে জোরে হাপর টানতে। মেয়েরা তাই করল। কিছুক্ষণ পর বীভৎস আর্তনাদ ভেসে আসতে লাগল ফার্নেস থেকে। অসুর মেয়েরা ভয় পেয়ে গেল – ভিতরে তাদের বাবা ভাই স্বামী ছেলে! টোরো কোরা বলল – ‘টানো টানো হাপর টানো যত টানবে তত ধনরত্ন পাবে।’

মেয়েরা আতঙ্কে বলল – ‘ওদের কি হল? ওরা যে চীৎকার করছে’ টোরো কোরা হেসে বলল – ‘আরে – ওরা ধনরত্নের বখরা নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করছে। টানো টানো হাপর টানো।’

একসময়ে আর কোনো শব্দ এল না ফার্নেস থেকে। পৃথিবী অসুরপুরুষ শূন্য হল। তখন টোরো কোরা নিজের সিঙ বোঙার রূপ ধরলেন – ‘আমি যে অতবার দূত পাঠালাম, কথা শুনলে না কেন? এই তার শাস্তি!’

শাস্তিটা একটু বেশি হয়ে গেল কিনা শুধোবার মতো মনের অবস্থা কি আর ছিল তখন অসুর মেয়েদের। অসুরদমন সাঙ্গ হল। এবার সিঙ বোঙা নিজের সিংহাসনে ফিরে যাবার উপক্রম করতেই মেয়েরা তাঁকে ঘিরে ধরল – ‘আমাদের কি হবে? কি খাব, কোথায় যাব? কে আমাদের রক্ষা করবে?’

সিঙ বোঙা বললেন – ‘তোমরা হবে ছোট দেওতা’ তাদের নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিলেন উঁচু পাহাড়ে মালভূমিতে, ঝর্ণার জলে, গাছে, জঙ্গলে। বললেন – ‘তোমরা আমার নীচের স্তরে প্রকৃতির বিভিন্ন অঞ্চলের দেবী হয়ে থাকবে, অনন্তকাল ধরে পুজো পাবে মুন্ডাদের কাছ থেকে।’ তাই আদিম কাল থেকে মুন্ডারা শুধু প্রকৃতির উপাসক।

সেই থেকে পাহাড়ের ঈশ্বর বুরু বোঙা। নীল সবুজ ঢেউ খেলানো পাহাড়ের গায়ে কেউ আঘাত করলে তিনি কুপিত হন। গভীর জলে ইকির বোঙা – মাটির নীচের জলকে আগলে বসে থাকেন। নাগা বোঙা থাকেন মালভূমি আর পাহাড়ের ঢালে। দেসৌলি বোঙার অধিষ্ঠান সুন্দর দারুবৃক্ষের বনে – বনের গাছ কাটলে তার অভিশাপ নামবেই।

চন্দর ইকির বোঙা স্বচ্ছ ঝর্ণার জলে। চান্দি বোঙা সমতল চারণভূমি আর ছায়াময় ঝোপঝাড়ে। মায়া চাদরে জড়ানো প্রকৃতির সব ঐশ্বর্যকে রক্ষা করে আসছেন এই সব বোঙারা, ইতিহাস তাদের lesser God বলে ডাকে।

এইসব বিশ্বাস থেকে প্রকৃতি এক সুরক্ষা কবচের আওতায় ছিল চিরকাল। এক প্রজন্মের হাত বিশ্বাস তুলে দেয় অন্য হাতে – হাতে হাতে এগিয়ে চলে। কিছু ছলকে পড়ে কিছু বদলে যায় – রূপান্তরিত সংস্করণ তবু থেকে যায় -আবার তার রূপান্তর হয় – আসলটাকে একসময়ে খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে…

আসল খুঁজতে বাড়ি ফিরে ইন্টারনেট খুলে বসি। খুঁজে খুঁজে দুটো মাত্র অরিজিনাল রিসার্চ পেপার পাওয়া গেল ‘অসুর আর মেটালার্জি’ বিষয়ে – আন্তর্জাতিক রিসার্চ জার্নালে। গবেষণাস্থল ঝাড়খন্ডের গুমলা, লাতেহার, লোহারডাগা, পালামৌ জেলার কিছু অসুর গ্রাম। ২০১৫ সালে গবেষণাকালে সংখ্যায় অসুরদের অস্তিত্ব দেখছি ৭৭৮৩, জীবন যাপন, ধর্মীয় আচার বিবাহ ইত্যাদি সব স্টাডি করেছেন গবেষক। গবেষণা মাধ্যম ছিল – ব্যক্তিগত ইন্টারভিউ ও কথোপকথন, গ্রাম পরিদর্শন। অন্যকথা থাক। মার্কণ্ডেয় পুরাণ রচনাকাল ২২০ থেকে ৫৫০ সালের মধ্যে। তখন অসুরদের ক্ষমতা ও কাজের ডিমান্ড তুঙ্গে – সুতরাং যুদ্ধ একটা অবশ্যম্ভাবী। তবু পুরাণের সুরাসুর যুদ্ধের আবেগ একটু ভুলে পিছু ফিরে ‘ইতিহাস ও বিজ্ঞান’ এর সত্যিটা খুঁজি। তাদের কথা কেউ বলে না। গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে সেই প্রথম লোহা বানানো মানুষের কথা জেনে। আধুনিক স্টিল তৈরির আগে, লোহার, কর্মকার সম্প্রদায়ের আবির্ভাবের আগে, এমনকি ইতিহাস লেখার অক্ষর জন্মেরও আগে কিছু প্রোটো অস্ট্রলয়েড গোষ্ঠীর মানুষ ভারতে প্রথম লৌহযুগের উদ্বোধন করেছিল – ঝাড়খন্ডের মাটিতে। ঝাড়খন্ডেই কেন? এখানেই যে প্রকৃতির লৌহআকরের ভান্ডার – জামশেদজী টাটার বহু আগে সহজাত প্রবৃত্তিতে অসুররা বুঝেছিল এখানে লৌহআকর আছে।

ভারতে ঠিক কবে লৌহযুগ শুরু হয়েছিল তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। নতুন নতুন প্রাচীনতর নমুনা আবিষ্কারের সঙ্গে সালের হিসেবও বদলে যায়। ১২০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ভাবা হত। উত্তরপ্রদেশে গাঙ্গেয় উপত্যকায় রাকেশ তিওয়ারির গবেষণালব্ধ লোহার অস্ত্র রেডিও কার্বন ডেটিং করে দেখা গেল ১৮০০ খ্রিস্টপূর্ব …তাহলে বিশ্বে লোহা তৈরির ইতিহাসে ভারত অনেকটা এগিয়ে গেল।

এই লোহার কারিগররা ক্রমে পূবের দিকে চলে আসে। লৌহআকরের খনি যে এখানেই। কারা ছিল সেই কারিগর? হরপ্পা যুগের শেষে এই সময়েই শুরু হচ্ছে ভারতীয় মহাকাব্যের যুগ। লোহাজাতীয় ধাতুর উল্লেখ আছে বেদে – কিন্তু কারিগরদের সম্পর্কে এলিট পুঁথি নীরব। পুরো ঝাড়খন্ড জুড়ে যে অসুরদের লোহা তৈরির আদিম কারখানা ছিল তা প্রমাণ করেছেন অ্যাক্টিভিস্ট শিল্পী পদ্মশ্রী বুলু ইমাম, অসুরদের নিয়ে ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত K. K. Leuva র বই –‘The Asur – A study of Primitive Iron Smelters’।

অসুরদের আদিম লোহা তৈরির ফার্নেস। চিমনির নীচে যে ছিদ্র দেখা যাচ্ছে ওইখানে বাঁশের বায়ুনালিকা প্রবেশ করানো হত।

কেমন ছিল সেসব ফার্নেস? আশীষ কুমার সিনহার গবেষণা পত্রে খুব বিশদে আছে সে বর্ণনা – কারিগরি দৃষ্টিতে আধুনিক ব্লাস্ট ফার্নেসের মিনিয়েচার সংস্করণ। মাটি আর খড়ের মন্ড দিয়ে বানানো মত শক্তপোক্ত লম্বা ফার্নেস। বিভিন্ন উচ্চতা। কখনো কিছুটা ভূগর্ভস্থ, কখনো মাটির উপরে। ওপরের গর্ত দিয়ে ঢালা হত প্রথমে কাঠকয়লা, তারপরে লোহাআকর। কাঠকয়লা তৈরি হত মরা শালগাছ পুড়িয়ে। শালগাছে সালফার খুব কম আছে বলে আধুনিক জ্বালানি কোকের তুলনায় পরিবেশ দূষণ খুব কম হত। লোহাআকর হিসেবে তিনরকমের পাথর ব্যবহার করা হত -ম্যাগনেটাইট যাকে অসুরভাষায় বলে পোলা, হিমাটাইট হল বিচি, ল্যাটেরাইট – গোটা। মাটির উপরের স্তর থেকেই এগুলো সংগ্রহ করা হত। বর্তমানে এসব আকরকে নিম্নমানের ক্যাটাগরিতে ফেলা হয়। ফার্নেসের নীচে আর একটা গর্ত দিয়ে ঢুকত বায়ুনল – বাঁশের চোঙ দিয়ে তৈরি। বায়ুনলের একদিকের ফুটো দিয়ে বেরিয়ে আসত স্ল্যাগ। ফার্নেসে আগুন জ্বালিয়ে, বায়ুনলের মধ্যে দিয়ে চামড়ার হাপরে পা দিয়ে চেপে চেপে হাওয়া ঢোকানো হত ফার্নেসে। অনেক পরিশ্রমের পর নীচে একটা লোহার মন্ড পড়ে থাকত – তা গলিয়ে যা খুশি বানানো যায়। এই অমানুষিক শারীরিক ক্ষমতাকেই আজো ‘অসুরের মতো শক্তি’ আখ্যা দেওয়া হয়। আধুনিক পৃথিবীর রাক্ষুসে চাহিদার ‘হাঁ মুখ’ বন্ধ করার জন্য এই ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রচুর খাটনির পর প্রস্তুত অল্প পরিমাণ লোহা যথেষ্ট নয়। সুতরাং বড়মাপের কারখানা, লোহা তৈরির আধুনিকীকরণ অনিবার্য ছিলই। তাই বলে কি পুরোনো ইতিহাসকে একেবারে মুছে ফেলতে হয়?

দিল্লির লৌহমিনার, প্রাচীন তরবারি, কোনার্ক মন্দিরের বিম সম্ভবত অসুরদের তৈরি।

কী কী বানানো হয়েছে অসুরদের আমলে তার আন্দাজ পেলে চোখ কপালে উঠবেই উঠবে। দিল্লীর লৌহ মনুমেন্ট, মধ্যপ্রদেশের চুয়াল্লিশ ফুট লম্বা ধর লোহার বার, টিপু সুলতানের তরবারি, কোনার্ক মন্দিরের লোহার প্যানেল! বিখ্যাত দামাস্কাসের তলোয়ারের জন্য অসুররা লোহা সরবরাহ করত। অসুরদের বানানো লোহাতে কখনো মরচে ধরত না – আগেই বলা হয়েছে। কারণ অসুরদের লোহার রাসায়নিক পরিমাপ। আধুনিক লোহাতে ফসফরাসের পরিমাণ 0.0৫% এরও কম আর অসুরদের লোহাতে ফসফরাসের পরিমাণ ১% এর চাইতেও বেশি থাকত কাঠকয়লাকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের ফলে। ষোল’শ বছর আগে নির্মিত কুতুবমিনার চত্বরে সেই যে দিল্লীর লৌহমিনার! তাতে যে আজ পর্যন্ত ‘মরচে’ এতটুকু আঁচড় কাটতে পারেনি তার প্রমাণিত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন মেটালার্জির গবেষক। মিসাওয়ইট (misawite) নামে আয়রন, অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনের এক যৌগ। এই যৌগ ওই লোহা তৈরির তিনবছরের মধ্যে তার বাইরের স্তর এক মিহি আবরণে ঢেকে দিয়েছে। ওই আবরণ ভেদ করে জলীয়বাষ্প মরচে তৈরি করতেই পারে না। ষোল’শ বছর ধরে কিভাবে সুরক্ষা দিয়ে চলেছে মিসাওয়াইট – আশ্চর্য তার ক্ষমতা আর এত বছরে কী পরিমাণ বেড়েছে ওই মিসাওয়াইট যৌগ, সে এক আশ্চর্য পরিমাপ – এক মিলিমিটারের কুড়ি ভাগের এক ভাগ? গবেষক আশীষ সিনহা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন ওই মিনার অসুরদের তৈরি।

ভারতের প্রথম মেটালার্জিস্ট অসুরদের সম্পর্কে এক আকর বই K. K. Leuva লিখেছিলেন ১৯৬৩ সালে, আগেই বলেছি। তখনো কিছু প্রমাণ হয়তো ছিল। অসুরভাষায় একটা লোহা বানানোর গানের ইংরেজি অনুবাদ আছে তার বইতে –

“We are making hasa ( charcoal) on the hills

We are burning hasa

On the hills

Hasa ready

We make loha in a kothi

On the hills

We forge our tools

In the kothi on the hills

The sansikatasi in front

Hang the ghana(sledgehammer)

On your shoulder

Now let’s forge the pal (ploughshare)

Come on ,Hurry up.

খাঁটি অসুরি ভাষায় এসব আদিম অসুর গৌরবগাঁথা হারিয়ে গেছে, হারিয়ে যাচ্ছে। ঝাড়খন্ডে, গুমলার সুষমা অসুর নামে এক কলেজ পড়ুয়া মেয়ে, অসুর অ্যাক্টিভিস্ট ও অসুর ভাষার কবি, এই ভাষা ও সংস্কৃতির প্রাণ ফেরাতে চেষ্টা করছে।

প্যান্ডেলের লাউডস্পিকারে মহিষাসুরমর্দিনীর মন্ত্রে চাপা পড়ে যাবে প্রথম লৌহযুগের সেইসব মানুষদের কথা; দুর্গার পাশাপাশি তাঁরাও স্মরণে থাক, ইতিহাসের ধুলো ঝাড়া হোক।

তথ্যসূত্র

১) ব্যক্তিগত কথোপকথন।

২) Antiquarian Remains Of Jharkhand By Bulu Imam . Publisher–INTACH and Aryan Book International in 2014

৩) Photo Acknowledgment — International Journal of Research. ISSN-2455-1503 (NOV ’15)–Volume 1. Issue 1. Research paper of Ashish Kr Sinha..” Asur–An Ancient Iron Smelter can get global recognition “

৪) K K Leuva–“The Asur–A Study Of Primitive Iron Smelters ” .Publisher–Bharatiya Adimjati Sevak Sangha .1963 .

আন্তর্জাল তথ্য ব্যতীত বইটি বর্তমানে দুর্লভ ।

৫) The Mundas and their Country–Sarat Chandra Roy . Publisher–Gyan Publishing House. Delhi. First Published in 1912 .

৬) দাঁসাই পরব–মণিশঙ্কর । কালান্তর পত্রিকা . পুজোসংখ্যা 2015

মন্তব্য তালিকা - “অসুর সম্প্রদায় ভারতের প্রথম মেটালার্জিস্ট – লোককথা ও ইতিহাস”

  1. খুব ভালো প্রতিবেদন। অসুররা কোন সময় রাজ করেছেন এ সম্পর্কে আরোও জানার আগ্রহ র‌ইলো। ধন্যবাদ।

  2. অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে অত্যন্ত তথ‍্যবহুল অপূর্ব এক ভাষিক প্রকাশ।লেখাটির জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা রইল।হ

  3. অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে অত্যন্ত তথ‍্যবহুল অপূর্ব এক ভাষিক প্রকাশ।লেখাটির জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা রইল।

  4. পরবর্তী প্রজন্ম ভুলে যেতে বাধ্য হবে।
    আর এসব কথা বলা যাবে কি না সন্দেহ।
    আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে এঁদের সম্পর্কে।

    1. ধন্যবাদ । অসুর সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ এখনো আলিপুরদুয়ার মহকুমার বিভিন্ন অঞ্চলে আছেন পরিবর্তিত পেশায় –তাদের সাক্ষাত্কার নেওয়া হলে আরো তথ্য পাওয়া যেত । এটি আমার এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়ে ওঠেনি । যদি কারো সে অভিজ্ঞতা থাকে–সংযোজন করবেন । কৃতজ্ঞতা ।

  5. অপূর্ব! লেখককে ধন্যবাদ। প্রচুর তথ্যসমৃদ্ধ লেখা। আরো জানতে চাই। আমাদের পূর্বপুরুষদের এই গৌরবগাথা ভুলিয়ে দিতে তৎপর আর্যায়ণ প্রক্রিয়া। গবেষকদের কাছে প্রার্থনা, আমাদের ইতিহাসের গৌরব পুনরুদ্ধারে উদ্যোগ নিন। লেখককে আবারও ধন্যবাদ ও নমস্কার।

  6. গুরুত্বপূর্ণ লেখা। ধাতুশিল্পী মীরা মুখোপাধ্যায়ের ‘বিশ্বকর্মার সন্ধানে’ বইতে এমন বহু তথ্য পেয়েছি। ডোকরা শিল্পের গবেষণায় ভারতে বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সাথে কথা বলে তা লিপিবদ্ধ করে গেছেন। অধুনা বইটি আবার প্রকাশ করেছে ‘বইপত্তর’ প্রকাশনা

  7. প্রথমেই লেখিকাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। একটি link এ লেখাটি পেয়েছি । অনবদ‍্য এবং তথ‍্যবহুল লেখা। আমি বছর খানেক এই বিষয়টি নিয়ে একটু চর্চা বা পড়াশোনা শুরু করেছি সেইসঙ্গে একটি প্রবন্ধ লেখারও কাজ চলছে। অনেক তথ্য পেলাম। আমার প্রবন্ধকে যথেষ্ট আলোকিত করবে শর্মিষ্ঠারদির এই প্রবন্ধ। যদি কোনোভাবে দিদির কন্ট‍্যাক্ট নম্বর পেতাম খুব উপকার হত।

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।