আঁধার রাতে একলা পথে
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানালোচনার গোড়াপত্তন করেছিলেন ইউরোপীয়রা। সূচনাটি হয়েছিল ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে রবার্ট মে লিখিত গণিত গ্রন্থ থেকে। কিন্তু অধিকাংশ ইউরোপীয় লেখকদের ভাষা ছিল কৃত্রিম ও জটিল। ভাষার ওই কৃত্রিমতা দুর করে পাশ্চাত্য বিজ্ঞানকে দেশীয় সাজে সজ্জিত করলেন অক্ষয়কুমার দত্ত। অবশেষে বাঙলা সাময়িক-পত্রে প্রথম শ্রেণীর বৈজ্ঞানিক আলোচনা সর্বপ্রথম পাওয়া গেল ‘বিদ্যাদর্শন’ পত্রিকায়। ১৮৪২ সালের জুন মাসে। পত্রিকাটির অন্যতম পরিচালক ছিলেন অক্ষয়কুমার দত্ত, যাঁকে বলা যেতে পারে পাশ্চাত্য বিজ্ঞানকে দেশীয় সাজে সজ্জিত করবার পথিকৃৎ। প্রসন্নকুমার ঘোষের সহযোগিতায় তিনি এই মাসিক পত্রিকাটি প্রকাশ করা শুরু করলেন যার উদ্দেশ্য ছিল, “এমত সকল বিষয়ের আলোচনা হইবেক, যদ্দ্বারা বঙ্গভাষার লিপি বিদ্যার বর্তমান রীতি উত্তম হইয়া সহজে ভাবপ্রকাশের উপায় হইতে পারে। যত্নপূর্বক নীতি ও ইতিহাস, এবং বিজ্ঞান প্রভৃতি বহু বিদ্যার বৃদ্ধি নিমিত্ত নানা প্রকার গ্রন্থের অনুবাদ করা যাইবেক, এবং দেশীয় কুরীতির প্রতি বহুবিধ যুক্তি ও প্রমাণ দর্শাইয়া তাহার নিবৃত্তির চেষ্টা হইবেক।”১ বিদ্যাদর্শনের আয়ুষ্কাল মাত্র ছয়মাস। পত্রিকাটি বেশিদিন না চললেও তিনিই ছিলেন প্রথম বাঙালি যিনি বাংলা ভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞানকে জনসাধারণের মাঝে পৌঁছে দিলেন।
উনবিংশ শতাব্দীতে অক্ষয়কুমার তাঁর সুবিশাল সাহিত্য সাধনার মধ্যে দিয়ে সে যুগের বঙ্গবাসীর চিন্তাধারায় যে বিপ্লব এনে দিয়েছিলেন, এ যুগের বাঙালী তার বড় একটা সন্ধান রাখে না। তাই আজ তাঁকে জানা এবং চর্চা করা আমাদের অন্যতম পবিত্র কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। ১৮২০ সালের ১৫ জুলাই শনিবার নবদ্বীপের পাঁচ মাইল উত্তরে বর্ধমান জেলার চুপী গ্রামে অক্ষয়কুমারের জন্ম হয়। তাঁর বাবা পীতাম্বর দত্ত, মায়ের নাম দয়াময়ী দেবী। গুরুমশাইয়ের কাছে প্রাথমিক শিক্ষালাভের পর মুনশি আমিরউদ্দিন কাছে শেখেন ফারসি ও আরবি ভাষা। সেই সাথে পণ্ডিত দুর্গাদাস ন্যায়রত্ন ও গোপীনাথ তর্কালঙ্কারের কাছে শেখেন সংস্কৃত। এরপর অভিভাবকদের ঔদাসীন্যে ও অবহেলায় বিদ্যার্জনে ছেলেবেলার বেশ কয়েকটি বছর নষ্ট হলেও দশ বছর বয়সে কলিকাতার খিদিরপুরে আগমনের পর বাড়িতেই তিনি ইংরেজি শেখা শুরু করেন এবং দীর্ঘ জেদাজেদির পর গৌরমোহন আঢ্যের ‘ওরিয়েন্টাল সেমিনারি’ স্কুলে ভর্তি হন। তখন তাঁর বয়স ষোল বছর। অত্যন্ত মেধাবী অক্ষয়কুমার ওরিয়েন্টাল সেমিনারির শিক্ষকদের সকলেরই অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন। ওরিয়েন্টাল সেমিনারির ছাত্র থাকাকালেই তিনি সেখানকার শিক্ষক হার্ডম্যান জেফ্রয়ের সুনজরে পড়লেন। বহুভাষাবিদ পণ্ডিত জেফ্রয়ের কাছে তিনি গ্রীক, ফরাসি, লাতিন, জার্মান ও হিব্রু ভাষা শিখলেন। জানলেন প্রাচীন গ্রীক সভ্যতার কাহিনী। পরিচিত হলেন পদার্থবিদ্যা, উচ্চতর গণিত এবং ইউরোপের ক্লাসিক সাহিত্যের সঙ্গে। অক্ষয়কুমারের সামনে এক নূতন জগতের দরজা খুলে যায়।
ইতিমধ্যে পনেরো বছর বয়সে আগরপাড়া নিবাসী রামমোহন ঘোষের কন্যা নিমাইমণি, মতান্তরে শ্যামমণির সহিত অক্ষয়কুমারের বিবাহ হয়। কিন্তু তাঁর বিবাহিত জীবন একেবারেই সুখের ছিল না। কিছুদিন পরে বাবা পীতাম্বর দত্তের অকাল মৃত্যুতে সাংসারিক অভাব অনটনের ফলে অক্ষয়কুমার দত্তের প্রথাগত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনি বাড়িতেই পড়াশোনা করতে থাকেন। এমন সময় শোভাবাজারের রাজবাড়ির বিশাল লাইব্রেরীর দরজা তাঁর সামনে খুলে যায়। সেখানে তিনি গণিত, ভূগোল, পদার্থবিদ্যা, জ্যোতির্বিজ্ঞান, উদ্ভিদবিদ্যা ইত্যাদি নানা বিষয় অধ্যয়ন করেন।
দর্জ্জিটোলায় নরনারায়ণ দত্তের বাড়িতে একটি বাঙলা ভাষানুশীলনী সভা ছিল। সেখানেই ১৮৩৮ সালে তাঁর পরিচয় হয় ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকার সম্পাদক ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সঙ্গে। তিনি অক্ষয়কুমারকে সংবাদ প্রভাকরে প্রবন্ধ লিখতে উৎসাহিত করেন। এ পত্রিকায় নিয়মিত লেখার সুবাদেই অক্ষয়কুমার ধীরে ধীরে সুধীসমাজে পরিচিত হচ্ছিলেন। অক্ষয়কুমার ক্রমেই সংবাদ প্রভাকরের বিশিষ্ট লেখক হয়ে ওঠেন।
এইখানে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা সাথে অক্ষয়কুমার দত্তের সম্পর্কের কথা একটু আলোচনা করা আবশ্যক মনে করি। এই পত্রিকার অন্যতম প্রধান পরিচালক ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তত্ত্ববোধিনী যুগের মধ্যমণি যদি দেবেন্দ্রনাথকে বলা যায়, তাহলে অক্ষয়কুমার হবেন তার সর্বোজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। দেবেন্দ্রনাথের ‘তত্ত্ববোধিনী সভা’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৩৯ সালের ৬ অক্টোবর। সভা প্রতিষ্ঠার কয়েকমাস পরে অন্যতম সভ্য ঈশ্বর গুপ্তের সঙ্গে অক্ষয়কুমার এই সভা দেখতে গিয়ে দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে পরিচিত হন। এর কয়েকদিন পরে প্রধানত ঈশ্বর গুপ্তের প্রচেষ্টায় অক্ষয়কুমার তত্ত্ববোধিনী সভার সভ্য মনোনীত হন ২৬শে ডিসেম্বর। পরের বছরের গোড়াতেই সম্ভবত জানুয়ারি, ১৮৪০ তিনি তত্ত্ববোধিনী সভার সহকারী সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৮৪০ সালের ১৩ জুন কলকাতায় এই সভার উদ্যোগে ‘তত্ত্ববোধিনী পাঠশালা’ স্থাপিত হলে অক্ষয়কুমার এর শিক্ষক নিযুক্ত হন। মাইনে সাকুল্যে আট টাকা। তত্ত্ববোধিনী পাঠশালায় তিনি ভূগোল ও পদার্থবিদ্যা পড়াতেন। এই বিষয়ে বাংলা ভাষায় কোনও পাঠ্যগ্রন্থ না থাকায় ১৮৪১ সালে অক্ষয়কুমার প্রকাশ করলেন তাঁর প্রথম বিজ্ঞানগ্রন্থ ‘ভূগোল’। গ্রন্থখানিতে পৃথিবীর আকৃতি, পরিমাণ, গোলকত্ব, জল-স্থলের বিবরণ, বিভিন্ন মহাদেশের প্রাকৃতিক ও বাণিজ্যিক বিবরণ এবং অধিবাসীদের ধর্ম ও ভাষা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এই প্রসঙ্গে একটি উল্লেখযোগ্য তথ্য হল যে গ্রন্থেই বাংলাভাষায় প্রথম বিভিন্ন যতি চিহ্নের প্রয়োগ দেখা যায়। অক্ষয়কুমারের আন্তরিকতা দেখে পাঠশালার পারিতোষিক বিতরণের সময় দেবেন্দ্রনাথ তাঁর বক্তৃতায় বলেন, “এই পাঠশালার পরম সৌভাগ্য যে, এরূপ উপযুক্ত ও উৎসাহী শিক্ষক পাওয়া গিয়াছে।”২
১৮৫১ এবং ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে দুই খণ্ডে প্রকাশিত অক্ষয়কুমারের ‘বাহ্য বস্তুর সহিত মানবপ্রকৃতির সম্বন্ধবিচার’ গ্রন্থটিকে পুর্ণাঙ্গ বিজ্ঞানগ্রন্থ না বলা গেলেও এর মধ্যে জায়গায় জায়গায় বৈজ্ঞানিক তথ্যাদি আছে। এই গ্রন্থটিকে স্কটিশ বিজ্ঞান লেখক জর্জ কুম্বের Essay on the constitution of man and its relation to external object গ্রন্থের ভাবানুবাদ বলা যেতে পারে। ১৮৫২, ১৮৫৪ এবং ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে তিন খণ্ডে প্রকাশিত ‘চারুপাঠ’ গ্রন্থে উপদেশ ও নীতিকথামূলক প্রবন্ধের ফাঁকে ফাঁকে অক্ষয়কুমার প্রাণী ও উদ্ভিদবিজ্ঞান, ভূগোল, পদার্থবিজ্ঞান এবং জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ে আলোচনা করেন। অক্ষয়কুমারের সর্বশেষ বিজ্ঞানগ্রন্থ ‘পদার্থবিদ্যা’ ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। বাংলায় সুপরিকল্পিতভাবে পদার্থবিজ্ঞান রচনার প্রয়াস প্রথম এই গ্রন্থেই পাওয়া গেল। গ্রন্থ্টির আলোচ্য বিষয় ছিল – জড় ও জড়ের গুণ। এই বইটির অন্যতম বিশেষত্ব হল এতে অক্ষয়কুমার ইংরেজি বৈজ্ঞানিক শব্দগুলির প্রথমবার বাংলা পরিভাষা ব্যবহার করেন যা আজও পদার্থবিজ্ঞানের বইতে প্রচলিত। “এইরূপে অক্ষয়কুমার বাহ্যবস্তুর বিচার ও চারুপাঠের মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন বাংলা বিজ্ঞানসাহিত্যকে সরস ও জনপ্রিয় করে তুললেন, অপরদিকে তেমনি ভূগোল ও পদার্থবিদ্যায় পথ দেখালেন প্রাঞ্জল, সুপরিকল্পিত ও তথ্যনিষ্ঠ বিজ্ঞানগ্রন্থ রচনার।”৩ অক্ষয়কুমারের চারুপাঠ ও পদার্থবিদ্যা বই দুইটি দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে পাঠ্যগ্রন্থ হিসাবে পড়ানো হত। তবে সেই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, মিশনারিদের কিছু আপত্তি সত্ত্বেও সাধারণভাবে হিন্দুসমাজের কথা ভেবেই অক্ষয়কুমারকে এইসব বইতে করুণাময় পরমেশ্বরের কথা বারকয়েক বলতে হয়েছে। অবশ্য গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হওয়ার আগে প্রায় প্রতিটি প্রবন্ধই তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
ইতিমধ্যে ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে তত্ত্ববোধিনী পাঠশালা কলিকাতা থেকে হুগলী জেলার বাঁশবেড়িয়া গ্রামে উঠে যায়। অক্ষয়কুমারকে পাঠশালার প্রধান শিক্ষকের পদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হলেও তিনি কলিকাতা ছেড়ে যেতে অস্বীকৃত হন। এই সময়ে তত্ত্ববোধিনী সভার উদ্দেশ্য নিয়ে দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে অক্ষয়কুমারের একবার মতবিরোধ হয়। “আদি ব্রাহ্ম সমাজের ধারকবাহকদের মতো দেবেন্দ্রনাথ মনে করতেন, ‘বেদ অভ্রান্ত ও ঈশ্বর প্রণীত’, অক্ষয়কুমার দত্ত মহাশয় এই উভয়ের প্রতিবাদ করিয়া বিচার উপস্থিত করেন এবং ব্রাহ্ম সমাজ থেকে এই বক্তব্য তাঁর চেষ্টাতেই নাকচ হয়।”৪
তত্ত্ববোধিনী সভা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কিছুদিন পর দেবেন্দ্রনাথ সভার একটি মুখপত্র প্রচারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন। কোন ব্যক্তিকে এর সম্পাদকতার ভার অর্পণ করা যায় তা বিচার করবার জন্য দেবেন্দ্রনাথ একটি রচনা প্রতিযোগিতার আহ্বান করেন। রচনাটির বিষয় ছিল, ‘বেদান্ত ধর্মানুযায়ী সন্ন্যাস ধর্মের এবং সন্ন্যাসীদের প্রশংসাবাদ’। অক্ষয়কুমার দত্তের রচনার মুল ভাবের সঙ্গে পুরোপুরিভাবে সহমত না হলেও তাঁর হৃদয়গ্রাহী ও মধুর লেখনীতে দেবেন্দ্রনাথ মুগ্ধ হয়ে তাঁকে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক মনোনীত করেন। মাসিক বেতন ত্রিশ টাকা। নিজের আত্মজীবনীতে অক্ষয় দত্তের প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে দেবেন্দ্রনাথ বলেছেন, “আমি মনে করিলাম, যদি মতামতের জন্য নিজে সতর্ক থাকি, তাহা হইলে ইহার দ্বারা অবশ্যই পত্রিকা সম্পাদন করিতে পারিব।”৫ অবশেষে ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট তারিখে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হল।
১৮৪৩ সাল থেকে প্রকাশিত এই পত্রিকার পরিচালকবর্গের মুল উদ্দেশ্য ছিল ব্রাহ্মসমাজের আধ্যাত্মিক আদর্শ প্রচার। পত্রিকা প্রকাশের অল্প কয়েকমাস পর ১৮৪৩ সালের ২১শে ডিসেম্বর অক্ষয়কুমার আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু আগেই আমরা দেখেছি ব্রাহ্ম হলেও অক্ষয়কুমার ছিলেন ঘোর বস্তুবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক। “অক্ষয় দত্তের জীবনীকার লিখেছেন, তিনি প্রথমে ব্রাহ্ম ছিলেন কিন্তু প্রার্থনার আবশ্যকতা স্বীকার করিতেন না।”৬ এটা একদিনে হয় নি। ইংরেজ দার্শনিক বেকন ও মিলের বস্তুবাদী দর্শন, স্কটিশ চিন্তাবিদ কুম্ব ও ফরাসি প্রতক্ষ্যবাদী কোঁত-এর লেখাপত্র পড়ে এবং তাঁদের মতের প্রভাবে অক্ষয়কুমার বৈজ্ঞানিক বিচারপদ্ধতি ও দৃষ্টিভঙ্গি আয়ত্ত্ব করতে থাকেন এবং প্রার্থনা, উপাসনা ইত্যাদি অসারতা সম্বন্ধে সন্দিহান হয়ে ওঠেন।
রচনা উৎকর্ষে ও বিষয় গৌরবে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা সেকালের সর্বোৎকৃষ্ট সাময়িকপত্র রূপে পরিগণিত হয় মূলত অক্ষয়কুমারের জন্যই। পূর্বে বাংলা ভাষায় এরূপ প্রগাঢ় রচনাবিশিষ্ট পত্রিকা ছিল না। শোনা যায় তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার প্রথমদিকের কোনো সংখ্যা পাঠ করে ডিরোজিও শিষ্য বিখ্যাত বাগ্মী রামগোপাল ঘোষ সুবিখ্যাত শিক্ষাবিদ রামতনু লাহিড়ীকে সম্বোধন করে অতি বিস্ময়ের সঙ্গে বলেন, “রামতনু ! রামতনু ! বাঙ্গলা ভাষায় গম্ভীর ভাবের রচনা দেখেছো? – এই দেখো!”৭
তিনি তত্ত্ববোধিনীকে কেবল ধর্মতত্ত্বের রহস্য বিচারের পত্রিকা করতে চাননি, চেয়েছিলেন জ্ঞানবিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, সমাজবিদ্যা ইত্যাদি নানাবিধ বিষয় অনুশীলনের একটি উচ্চাঙ্গের পত্রিকা করতে। তত্ত্ববোধিনীর ৪৭ তম সংখ্যা থেকে এতে প্রথম শ্রেণীর বৈজ্ঞানিক রচনা একের পর এক প্রকাশ হতে লাগলো। তাদের বিষয়বৈচিত্রও ছিল বিপুল। পুরাতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, প্রাণীবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, মনস্তত্ত্ব ইত্যাদি বিজ্ঞান বিষয়ক রচনা ছাড়াও এতে প্রকাশিত হল, কৃষি, বাণিজ্য, ইতিহাস, অর্থনীতি ও রাজনীতি বিষয়ক প্রবন্ধ সমুহ। বঙ্কিমচন্দ্রের সমকালীন প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক রমেশ দত্ত লিখেছেন, “People all over Bengal awaited every issue of that paper with eagerness, and the silent and sick and indefatigable worker at his desk swayed for a number of years the thoughts and opinions of the thinking portion of the people of Bengal.”৮
সুতরাং যা হওয়ার তাই হল। পত্রিকার সম্পাদক অক্ষয়কুমারের সাথে পরিচালক দেবেন্দ্রনাথের বারংবার মতবিরোধ হতে লাগলো। দেবেন্দ্রনাথ আত্মজীবনীতে বলেছেন, “তিনি যাহা লিখিতেন, তাহাতে আমার মতবিরুদ্ধ কথা কাটিয়া দিতাম এবং আমার মতে তাঁহাকে আনিবার জন্য চেষ্টা করিতাম। কিন্তু তাহা আমার পক্ষে বড় সহজ ব্যাপার ছিল না।”৯ আসলে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা প্রকাশের উদ্দেশ্য ছিল ব্রহ্মজ্ঞানের অনুশীলন এবং উন্নতি সাধন ; দেবেন্দ্রনাথের ভাষায় -বেদ বেদান্ত ও পরমব্রহ্মের উপাসনা প্রচার।
এমতাবস্থায়, তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় প্রকাশিত রচনার গুণাগুণ নির্ণয়ের জন্য দেবেন্দ্রনাথ এশিয়াটিক সোসাইটির অনুকরণে ‘পেপার কমিটি’ বা প্রবন্ধ নির্বাচনী সভা স্থাপন করেন। এই কমিটির সদস্যদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রাজনারায়ণ বসু, রাজেন্দ্রলাল মিত্র এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।সম্পাদকীয় কর্তব্য পালনে তিনি যে চারিত্রিক দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছিলেন তা অতুলনীয়। বিশেষত বিদ্যাসাগরের অকুণ্ঠ উৎসাহ ও সমর্থন অক্ষয়কুমারকে আরও অনমনীয় করে তুলেছিল। বিদ্যাসাগর ও অক্ষয়কুমারের প্রভাবে ধর্মপ্রচারের মুল উদ্দেশ্যকে গৌণ করে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’ লোকহিতকর নানা আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষকতা করতে শুরু করেছিল। ফলে শিক্ষাবিস্তার, স্বজাত্যবোধ, স্ত্রীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা, বিধবা বিবাহ প্রচলন, সুরাপানের অপকারীতা, কৌলিন্যপ্রথা ও বহুবিবাহের বিরোধিতা, প্রাচীন হিন্দুদের সমুদ্রযাত্রা, পল্লীগ্রামস্থ প্রজাদের দুরবস্থা বর্ণন প্রভৃতি সমাজ-হিতকর নানা ব্যাপারের উপর নানাজনের সুচিন্তিত যুক্তিপূর্ণ প্রবন্ধাদি প্রকাশ করে এই পত্রিকা বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে নবজাগরণের এক প্রধান প্রেরণাস্থল হয়ে উঠেছিল। বিধবা বিবাহ প্রচলনের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে আলোচনা করতে গিয়ে ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে তত্ত্ববোধিনীর চৈত্র সংখ্যার পাতায় অক্ষয়কুমার একটি অসাধারণ মানবিক আবেদন রাখেন। তিনি সরাসরি প্রশ্ন তোলেন, “যাঁহার কিছুমাত্রও হিতাহিত বোধ আছে, ও যাঁহার অন্তঃকরণে কস্মিন্কালে কারুণ্য-রসের সঞ্চার হয়, তাঁহাকেই জিজ্ঞাসা করি, বিধবাবিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কি না? …. যিনি দেখিয়াছেন যে সাধ্বী রমণী মাসদ্বয় পূর্বে স্বামী সমাদরে মানিনী ও গৌরবিনী বলিয়া স্ত্রীজনের নিকট প্রসিদ্ধ ছিল, সেই স্ত্রী মাসদ্বয় পরে একান্ত অনাথা ও নিতান্ত সহায়হীনা হইয়া দীনভাবে, শীর্ণশরীরে, সাশ্রুনয়নে দিনপাত করিতেছে এবং স্বামী সম্বন্ধীয় রমণীগণ কর্তৃক নানাপ্রকার নিগৃহীত ও পরিবারস্থ দাসদাসিগণ কর্তৃক উপেক্ষিত ও অশ্রদ্ধিত হইয়া কাতর স্বরে প্রতিবেশীদিগের দয়ার্দ্র হৃদয় বিদীর্ণ করিতেছে, তাঁহাকেই জিজ্ঞাসা করি, বিধবাবিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কি না? …. কোন পতিবিহীনা পীড়িতা স্ত্রী তিথিবিশেষে পথ্যাভাবে নিতান্ত নির্জীব হইল, তথাপি কেহ কণামাত্র আহার সামগ্রী অর্পণ করিল না, জলতৃষ্ণায় তালু ও কণ্ঠ পরিশুষ্ক হইয়া দুইচক্ষু স্থিরীকৃত করিয়া প্রাণত্যাগ করিল, তথাপি কেহ জলবিন্দু প্রদান করিল না, এই হৃদয় বিদারক ব্যাপার যিনি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করিয়াছেন, তাঁহাকেই জিজ্ঞাসা করি, বিধবাবিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কি না?”১০ অর্থাৎ অক্ষয়কুমার বিধবাবিবাহকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক মানবতাসম্মত বলে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন। সমাজসংস্কারের ক্ষেত্রে এইপ্রকার মানবিক আবেদন সামাজিক ইতিহাসের এক নূতন ধারার সূচনা করেছিল। এক্ষেত্রে অক্ষয়কুমার ছিলেন বিদ্যাসাগরের বিশ্বস্ত সেনাপতি।
প্রকৃতপক্ষে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার ধর্মীয় দিকটি অপেক্ষা তার এই সামাজিক দিকটির জন্যেই তার প্রতি সে-যুগের শিক্ষিত সমাজ অধিকতর আকর্ষণ বোধ করতে শুরু করেছিল। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বলেছেন, তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা সমস্ত বাঙলায় ইউরোপীয় ভাব-প্রচারের মিশনারি ছিল। বাঙালির ছেলেদের মধ্যে ইংরেজির ভাব প্রবেশ করানো সর্বপ্রথম অক্ষয়কুমার দত্ত দ্বারা সাধিত হয়।”১১ বলা বাহুল্য, এটি মোটেই দেবেন্দ্রনাথের অভিষ্ঠ ছিল না। এর প্রতিক্রিয়া হিসাবে ‘তত্ত্ববোধিনী সভা’র অন্যান্য ব্রাহ্ম সদস্যদের মধ্যেও তাই নানারকম প্রশ্ন দেখা দিতে লাগলো। “ভাববাদী সাধক দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে বিশুদ্ধ জ্ঞানমার্গী পণ্ডিত অক্ষয়কুমারের পদে পদে সংঘর্ষ শুরু হল।”১২ ঘন ঘন সংঘর্ষ ও মতবিরোধের ফলে দেবেন্দ্রনাথ ক্রমেই তিতিবিরক্ত হয়ে পড়েন। আসলে বিদ্যাসাগর ও অক্ষয়কুমার দুজনেই ছিলেন উনবিংশ শতকের পরিপ্রেক্ষিতে ঘোর যুক্তিবাদী। অক্ষয়কুমার ‘বেদ অপৌরুষেয়, অতএব নিত্য এবং অভ্রান্ত’ এ মত মানতেন না। “অক্ষয়কুমার প্রায় বলতেন, কৃষকরা পরিশ্রম করে শস্য পায়, জগদীশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে কোনো কৃষাণের কস্মিনকালেও শস্য লাভ হয় নি। প্রার্থনার ফলাফল যে শূন্য, কিছু নয়, তা তিনি বীজগণিতের সমীকরণ প্রণালীতে এইভাবে বুঝিয়ে দিতেন,
পরিশ্রম = শস্য, পরিশ্রম + প্রার্থনা = শস্য, প্রার্থনা = শূন্য।”১৩ প্রকৃতপক্ষে হিন্দু কলেজের ছাত্ররা একদিন অক্ষয়কুমারকে প্রার্থনার কার্যকারিতা সম্বন্ধে প্রশ্ন করলে অক্ষয়কুমার উপরোক্ত সমীকরণটির মাধ্যমে তাদের কৌতূহল নিরসন করেন। একই সঙ্গে এটি হিন্দুদের পৌত্তলিক বিশ্বাস ও ব্রাহ্মদের নিরাকার ঈশ্বরে বিশ্বাস – এই দুই মতবাদকেই চরম আঘাত করে বসে। ব্রাহ্মদের মধ্যে অক্ষয়কুমার এ হেন মন্তব্য নিয়ে তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি হলে অক্ষয়কুমার প্রতিক্রিয়া দেন, “বিশুদ্ধ-বুদ্ধি বিজ্ঞানবিৎ লোকের পক্ষে যাহা অতি বোধসুলভ, তাহা এদেশীয় লোকদের নুতন বোধ হইল, এটি বড় দুঃখের বিষয়।”১৪ এক্ষেত্রে স্পষ্টই যে অক্ষয়কুমার বেকনের আরোহবাদী যুক্তিপ্রনালী এবং বিজ্ঞান-দর্শন চর্চার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। “তিনি ঘোষণা করেছিলেন, ভারতের এখন একজন বেকন প্রয়োজন।”১৫
বলা বাহুল্য, প্রার্থনার ক্ষেত্রেও অক্ষয়কুমারের এই বীজগণিতের সূত্র প্রয়োগ এবং ধর্মতত্ত্বের বদলে বিদ্যাসাগরের বিধবাবিবাহ নিয়ে আগ্রহ দেবেন্দ্রনাথ বরদাস্ত করতে পারতেন না। এই মতবিরোধ নিয়ে দেবেন্দ্রনাথ তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, “আমি কোথায়, আর তিনি কোথায়! আমি খুঁজিতেছি ঈশ্বরের সহিত আমার কি সম্বন্ধ, আর তিনি খুঁজিতেছেন, বাহ্য বস্তুর সহিত মানবপ্রকৃতির কি সম্বন্ধ। আকাশ পাতাল প্রভেদ।”১৬এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে ‘বাহ্যবস্তুর সহিত মানব প্রকৃতির সম্বন্ধ বিচার’ গ্রন্থের প্রথম ভাগে অক্ষয়কুমার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন, “সংস্কৃত শাস্ত্রোক্ত প্রমাণ ভিন্ন অন্য কোনো প্রমাণ গ্রাহ্য নহে, এবং সংস্কৃত শাস্ত্রকারেরা যে বিষয় যতদূর নিরূপণ করিয়াছেন, তাহার অধিক আর জানা যায় না, এই মহানর্থকর কুসংস্কার নিতান্ত ভ্রান্তিমূলক এবং অত্যন্ত হেয় ও অশ্রদ্ধেয়।”১৭
মতবিরোধের বিষয়টি খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন শক্তিসাধন বাবু। “প্রকৃতই দেবেন্দ্রনাথ ও অক্ষয় দত্ত ছিলেন দুই ভিন্ন মেরুর বাসিন্দা। একজন রাজমহর্ষি, অন্যজন সাত্ত্বিক জ্ঞানসাধক। একজন চাইতেন বিশ্বাস স্থাপন করতে, অন্যজন বিচার করতে। অক্ষয় দত্ত সম্বন্ধে তাই জীবনীকার লিখেছেন, ‘ইনি অতিশয় অনুসন্ধিৎসু ছিলেন। কোনো বিষয়ে যত তথ্য পাওয়া সম্ভব, সমস্ত অনুসন্ধান করিতেন। ইহার রচনার প্রতি পংক্তিতে ও আহ্নিক কার্য বিবরণে অনুসন্ধিৎসার ভুরি ভুরি প্রমাণ প্রাপ্ত হওয়া যায়।’ এই মানসিক সংবিধান আদৌ দেবেন্দ্রনাথ গোত্রীয় নয়,ডিরোজিও গোত্রীয়।”১৮ আসলে দেবেন্দ্রনাথ মূলত ছিলেন ভক্তিবাদী সাধক; পক্ষান্তরে অক্ষয়কুমার ছিলেন মুক্তচিন্তার পথিকৃৎ। দেবেন্দ্রনাথের চিত্ত ছিল ভক্তি-প্রবণ আর অক্ষয়কুমারের ছিল জ্ঞান-প্রবণ। “পারস্যের সুফি সাধকগণ ও উপনিষদের ঋষিগণ দেবেন্দ্রনাথের ভক্তি-পিপাসা চরিতার্থ করিত, আর পাশ্চাত্ত্যের জ্ঞান-বিজ্ঞান অক্ষয়কুমারের জ্ঞান-পিপাসা চরিতার্থ করিত।”১৯ বাস্তবিক অর্থেই অক্ষয়কুমার ও বিদ্যাসাগরকে সামলাতে না পেরে “দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর একসময় উত্তেজিত হয়ে ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে রাজনারায়ণ বসুকে চিঠিতে লেখেন, “কতকগুলান নাস্তিক গ্রন্থাধ্যক্ষ হইয়াছে, ইহাদিগকে এ পদ হইতে বহিষ্কৃত না করিয়া দিলে ব্রাহ্মধর্ম প্রচারের সুবিধা নাই।”২০ এক্ষেত্রে নাস্তিক বলতে বিদ্যাসাগর ও অক্ষয়কুমারকেই বোঝানো হয়েছে।
দীর্ঘ বারো বছর তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব নির্বাহ করবার পর ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে অক্ষয়কুমার তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক পদ ত্যাগ করেন। শোনা যায় তিনি দায়িত্ব ছাড়বার পর তত্ত্ববোধিনীর গ্রাহক সংখ্যা সাতশো থেকে নাকি দুশোতে নেমে এসেছিল ! “তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার যেমন দিন দিন অবনতি হইল, সেইরূপ ব্রাহ্মসমাজের মতেও নানাপ্রকার দোষ-স্পর্শ হইতে লাগিল। যেমন ; ঈশ্বরকে সাকার জ্ঞানে স্তব করা, অবতার-বাদ ও নরপূজা, ব্যক্তিবিশেষের সহিত ঈশ্বরের কথোপকথনে বিশ্বাস, খৃষ্ট, মহম্মদ, নানক প্রভৃতিকে অভ্রান্ত ও ঈশ্বর-প্রেরিত অলৌকিক শক্তি-সম্পন্ন বলিয়া প্রত্যয় করা ইত্যাদি জ্ঞান-সমুজ্জ্বল সময়ের অযোগ্য মত সকল সংঘটিত হইল !”২১
১৮৫৫ সালে শারীরিক পীড়া এবং মূলত দেবেন্দ্র-অক্ষয় সংঘাতের জেরে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদকের কাজ থেকে অক্ষয়কুমারকে বিদায় নিতে হলে বিদ্যাসাগরের সুপারিশে শিক্ষা বিভাগের অধ্যক্ষ তাঁকে নর্মাল স্কুলের প্রধানশিক্ষকের পদ গ্রহণ করবার প্রস্তাব দেন। ১৭ই জুলাই অক্ষয়কুমার প্রধানশিক্ষক রূপে কাজ শুরু করেন। কিন্তু প্রবল শিরোরোগে বারংবার পীড়িত হতে থাকায় অক্ষয়কুমার ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে ওই পদ থেকে ইস্তফা দেন। অক্ষয়কুমার দুরারোগ্য শিরোরোগে (সম্ভবত মাইগ্রেইন) অকর্মণ্য হয়ে পড়লেন এবং চিকিৎসা ও বায়ুপরিবর্তন ইত্যাদির জন্য তাঁর ব্যায় বৃদ্ধি হল। এই সময় তত্ত্ববোধিনী সভা মাসিক বৃত্তি নির্ধারণ করে তাঁর খানিকটা দুশ্চিন্তার লাঘব করে। তিনি বালিতে গঙ্গাতীরে এক বিঘা জমির উপর উদ্যান সমেত একটি গৃহ নির্মাণ করেন এবং বাগানের পরিচর্যা করেই শেষ কটি দিন কাটান। নাম রেখেছিলেন ‘শোভনোদ্যান’। “অক্ষয়কুমার রচিত তিন খণ্ড ‘চারুপাঠ’ ছাত্রমহলে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। তাই বিদ্যাসাগর এই উদ্যানের নাম দিয়েছিলেন ‘চারুপাঠ চতুর্থ ভাগ’।”২২ বাড়ির ভিতরেও তৈরি করেছিলেন একটি ভূতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা। সেখানে ছিল বিভিন্ন যুগের প্রস্তরখণ্ডের নমুনা, ফসিল। শোনা যায়, বালির বাড়িতে তাঁর পড়ার ঘরে রামমোহন রায়, আইজাক নিউটন, জন স্টুয়ার্ট মিল, চার্লস ডারউইন এবং টি এইচ হাক্সলির ছবি টাঙানো ছিল।
১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে অক্ষয়কুমারের ‘ধর্মনীতি’ পুস্তকটি প্রকাশিত হলে সমাজে প্রবল আন্দোলন উপস্থিত হয়। এই গ্রন্থে তিনি প্রচলিত দেশাচারের বিরুদ্ধে প্রায় বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। বাল্যবিবাহ এবং বহুবিবাহ প্রথাকে তীব্র আক্রমণ করে অক্ষয়কুমার প্রশ্ন তোলেন, “আর কতদিন আমরা এই বিষম দোষকর দেশাচারের দাস হইয়া সদাচারে বিরত থাকিব?”২৩ একই গ্রন্থে তিনি বিধবাবিবাহের সপক্ষেও যুক্তি সাজিয়েছিলেন। স্ত্রীশিক্ষার দাবী করে বলেছিলেন, “এক্ষণে আমাদের দেশ যেরূপ দুর্দশাগ্রস্ত, তাহাতে স্বামী স্বীয় পত্নীকে শিক্ষাদান না করিলে আর উপায় নাই।”২৪ সমকালীন বাঙালী যুবকদের অনেকেই গ্রন্থটির দ্বারা উদ্বুদ্ধ হন।
অসুস্থতা নিয়েই করেছেন ‘ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়’ বইটির কাজ যাতে হিন্দু ধর্মের নানা শাখাপ্রশাখা, নানান সম্প্রদায়, বিচিত্র আচরণ নিয়ে আলোচনা করেছেন। “এমনই ১৮২টা সম্প্রদায়কে নিয়ে দুই খণ্ডে প্রকাশিত এই বইয়ে তিনি প্রকাশ্যে ভাববাদী চিন্তাকে আক্রমণ করেছেন। কোনও কোনও সম্প্রদায়ের ধর্মাচরণকে মানসিক রোগ বলতেও ছাড়েননি।”২৫ এই গ্রন্থেরই দ্বিতীয় খণ্ডে অক্ষয়কুমার প্রকৃত জ্ঞান বলতে কি বোঝায় যার ব্যাখ্যা করে বলেন, “যে জ্ঞান শিখলে বুদ্ধি মার্জিত হয়, ভ্রম ও কুসংস্কার দূরীভুত হয়, এবং জগতের প্রকৃত নিয়ম-প্রণালী অবগত হয়ে কর্তব্য-অকর্তব্য নির্ণয় করা সম্ভব হয়, তা-ই প্রকৃত জ্ঞান।”২৬ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী যথার্থই বলেছিলেন – তিনিই বাঙালির প্রথম নীতি শিক্ষক।
অক্ষয়কুমারের ভয়াবহ অসুস্থতা তৎকালীন বিদ্যৎসমাজকে প্রবল আলোড়িত করেছিল। ম্যাক্সমুলারের মতো আন্তর্জাতিক পণ্ডিত তাঁর আরোগ্য কামনা করে চিঠি লেখেন। ১৮৭১ সালের ১৩ই ডিসেম্বরে ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ অক্ষয়কুমারের অসুখকে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ বলে অভিহিত করে। সম্ভবত উপযুক্ত চিকিৎসা ও পরিচর্যা পেলে তাঁর এই ভয়ঙ্কর অসুখের প্রকোপ কিছুটা কমানো যেত। অবশেষে ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের ২৮শে মে এই কর্মযোগী মহাপ্রাণ মানুষটির মৃত্যু হয়।
রামমোহন-বিদ্যাসাগরের মতো অক্ষয়কুমারও পাশ্চাত্য শিক্ষার অনুরাগী ছিলেন। এই প্রসঙ্গে অক্ষয়কুমার দত্তের একটি উদ্ধৃতি তুলে দেওয়ার লোভ সামলানো যাচ্ছে না। ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে লর্ড অ্যামহার্স্টকে লেখা রামমোহন রায়ের ইংরেজি শিক্ষা বিষয়ক বহুখ্যাত চিঠি, যাতে রামমোহন শঙ্করের মায়াবাদের বিরোধিতা করে সংস্কৃত কলেজ স্থাপনের বিরুদ্ধে এবং পাশ্চাত্য শিক্ষার সপক্ষে বক্তব্য রেখেছিলেন, সেই বিষয় আলোচনা করতে গিয়ে অক্ষয়কুমার মন্তব্য করেছিলেন, “ভাষা জ্ঞানরূপ ভাণ্ডারের দ্বার-স্বরূপ। সেই দ্বার উদঘাটন করিয়া জ্ঞানভাণ্ডারে প্রবেশ করিতে হয়। …যে ভাষা প্রকৃত জ্ঞানরূপ বিশুদ্ধ রত্নে পরিপূর্ণ, তাহাই সমধিক আদরণীয় ও সর্ব্বোতভাবে শিক্ষণীয়।”২৭ এইজন্যেই রামমোহন-অক্ষয়কুমার-বিদ্যাসাগর পাশ্চাত্য শিক্ষার উপর বারে বারে জোর দিয়েছেন। কেন, সেটাও বলে গেছেন অক্ষয়কুমার তাঁর ‘বাহ্যবস্তুর সহিত মানবপ্রকৃতির সম্বন্ধবিচার’ গ্রন্থের প্রথম ভাগে – “এক্ষণকার ইউরোপীয় পণ্ডিতেরা আপনাদিগের অসাধারণ বুদ্ধিবলে ঐ সকল বিদ্যার (জ্যোতির্বিজ্ঞান ইত্যাদি) যেরূপ উন্নতি করিয়াছেন, তাহার সহিত তুলনা করিয়া দেখিলে সংস্কৃত জ্যোতিষাদিকে অতি সামান্য বোধ হয়।”২৮ এই প্রসঙ্গে (জ্যোতির্বিজ্ঞান) মনে আসে ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় অক্ষয়কুমার মন্তব্য করেছিলেন, “সুগ্রহ কুগ্রহ এই দুই শব্দের অর্থ নিতান্ত অলীক। …… মঙ্গল, বুধ, শুক্র, শনি প্রভৃতি গ্রহসকল প্রস্তরাদির ন্যায় জড় পদার্থময়। বুদ্ধিমান জীবের ন্যায় তাহাদের সংকল্প বিকল্প, প্রবৃত্তি নিবৃত্তি, অনুগ্রহ নিগ্রহ থাকা কোনক্রমেই সম্ভাবিত নহে। আর যদি তাহাদের এই গুণ থাকিত, তাহা হইলেও মর্ত্যলোকস্থ মনুষ্যদিগের সহিত তাহার কি সম্বন্ধ? …… গ্রহের তুষ্টিরুষ্টিতে লোকের সুখদুঃখ উৎপন্ন হয়, একথা সদ্বিদ্যাশালী বিজ্ঞ লোকদিগের নিকট কহিলে হাস্যাস্পদ হইতে হয়।”২৯
রামমোহনের অত্যন্ত ভক্ত ছিলেন অক্ষয়কুমার। তবে রামমোহনের থেকে তিনি নিয়েছিলেন মানবতাবাদ ; ধর্মীয় চিন্তাটি তিনি গ্রহণ করেন নি। কলিকাতায় রামমোহনের মর্মর মূর্তি নির্মাণের জন্য তিনি অতি ব্যাগ্র ছিলেন। তাই বোধহয় ‘ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়’ গ্রন্থের দ্বিতীয়ভাগে তৎকালীন বঙ্গীয় বুদ্ধিজীবীদের প্রবল তিরস্কার করে অক্ষয়কুমার লেখেন, “অনেকে শৃগাল-প্রতিমা নির্মাণ করিয়া পূজা করিবেন, তথাচ সিংহ-প্রতিমূর্তি দর্শনে অনুরাগী ও উদযোগী হইবেন না। এ দেশে মানব-প্রকৃতির কি বিকৃতি ও বিপর্যয়ই ঘটিয়াছে।”৩০
অখণ্ড বন্ধুত্ব থাকলেও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে অক্ষয়কুমার দত্তের মানসিকতায় কিছু মূলগত প্রভেদ ছিল। অক্ষয়কুমার মূলত ছিলেন যুক্তিবাদী মননশীল বুদ্ধিজীবী আর বিদ্যাসাগর ছিলেন বাস্তবমুখী মানবতাবাদী সমাজসংস্কারক। অক্ষয়কুমারের আবেদন ছিল তাই বুদ্ধির কাছে আর বিদ্যাসাগরের আবেদন ছিল হৃদয়ের কাছে। “যে শাস্ত্রে কোনো বিশ্বাস নেই, নিজ মত প্রতিষ্ঠায় তার সাহায্য নিতে অক্ষয়কুমারের ছিল তীব্র আপত্তি, কিন্তু শাস্ত্রের উপর আস্থা না থাকলেও সাধারণ মানুষের কাছে নিজ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য বিদ্যাসাগর ছিলেন নির্বিচারে শাস্ত্র সাহায্য গ্রহণের পক্ষপাতী।”৩১
অক্ষয়কুমারের আর একটি অনবদ্য সৃষ্টি ‘পল্লীগ্রামস্থ প্রজাদের দুরবস্থা বর্ণন’ প্রবন্ধটি যা আমাদের বুঝিয়ে দেয় যে সমকালীন সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর সচেতনতা। এই প্রবন্ধে জমিদারদের তীব্র কশাঘাত করে তিনি বলেছেন, “যে রক্ষক সেই ভক্ষক’ এ প্রবাদ বুঝি বাঙ্গালার ভুস্বামীদিগের ব্যবহার দৃষ্টেই সূচিত হইয়া থাকিবেক।”৩২ প্রবন্ধটির প্রতিটি অনুচ্ছেদে গ্রামের গরীব কৃষক ও খেতমজুর প্রজাদের প্রতি বঙ্গীয় জমিদার, নায়েব এবং গোমস্তাদের অত্যাচারের নিরবিচ্ছিন্ন বর্ণনা। প্রবন্ধের শেষ লগ্নে পরম খেদের সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “হায় ! যাহারা যাবতীয় লোকের ভোজ্যবস্তু প্রস্তুত করে, যাহাদের পুষ্টিকারক, বলধায়ক, শ্রমোপযোগী দ্রব্য ভক্ষণ করা নিতান্ত আবশ্যক, তাহারা সুপ্রতুল রূপে কিম্বা সামান্য রূপেও জঠরানল নির্ব্বাণ করিতে পায় না!”৩৩
নিজের স্ত্রীর সাথে বৌদ্ধিক বনিবনা না হওয়ায় তা নিয়ে অক্ষয়কুমার দত্তের সারাজীবন আক্ষেপ ছিল। তাই হয়তো ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত অক্ষয়কুমারের ‘বাহ্য বস্তুর সহিত মানবপ্রকৃতির সম্বন্ধবিচার’ গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে তিনি দম্পতির সম্পর্ক নিয়ে সবিস্তারে আলোচনা করেছিলেন। “পরস্পর বিরুদ্ধ-স্বভাব, অসম-বুদ্ধি ও বিপরীত-মতাবলম্বী স্ত্রী-পুরুষের পাণিগ্রহণ হইলে উভয়কেই যাবজ্জীবন বিষম যন্ত্রণা ভোগ করিতে হয়। মানসিক ভাব ও বুদ্ধি চালনা বিষয়ে কিঞ্চিৎ বৈলক্ষণ থাকাতে কত কত দম্পতি মহা অসুখে কাল যাপন করিয়া থাকেন ; তাঁহারা আপনারাই আপনাদের অপ্রণয়ের কারণ বুঝিতে পারেন না।”৩৪ তাঁর মতে বিবাহের আগে সাবালক ও সাবালিকার উচিত পরস্পরের সঙ্গে ভালোমত আলাপ পরিচয় করে নেওয়া। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক রুচির মিল না থাকলে দাম্পত্যজীবন সুখের হয় না। “ফলতঃ বিদ্যাবান, উদার-স্বভাব, মহাশয় পুরুষের সহিত কোন বিদ্যাহীনা, কলহ-প্রিয়া, ক্ষুদ্রাশয়া রমণীর পাণিগ্রহণ হওয়া অশেষ ক্লেশের বিষয়।”৩৫ এবং সেক্ষেত্রে বিবাহবিচ্ছেদ নেওয়া কর্তব্য। এরপর অক্ষয়কুমার সওয়াল করেন, “এই সকল কারণে স্ত্রীলোকের বিদ্যাশিক্ষা যে কি পর্যন্ত আবশ্যক, তাহা বলা যায় না ; তৎপক্ষে যে শত শত যুক্তি আছে, তম্মধ্যে ইহাকেও এক অখণ্ডনীয় যুক্তি বলিয়া স্বীকার করিতে হইবে।”৩৬ আজ থেকে ১৭০ বছর আগে অক্ষয়কুমারের এ-জাতীয় চিন্তাধারা যে কতোটা বৈপ্লবিক ছিল তা নিয়ে বোধহয় আলোচনার প্রয়োজন নেই। সমকালীন বিদ্যাসাগর এবং আরও দশ বছর পরে জন্ম নেওয়া রবীন্দ্রনাথ সম্ভবত সারা জীবন ধরে তা অনুভব করে গিয়েছিলেন। অক্ষয়কুমারের চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সুকুমার রায়ের দাদামশাই দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের চল্লিশ-পঞ্চাশটি বিবাহের প্রথার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে কলিকাতায় এসে বসবার শুরু করেন।
গড়পড়তা শিক্ষিত বাঙালির কাছে অক্ষয়কুমার দত্ত আজ বিস্মৃত, তিনি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠতে পারেন নি। গবেষক আশীষ লাহিড়ীর মতে এর প্রধানত দুটি কারণ। এক, অক্ষয়কুমারের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক খুঁটি ছিল না। দুই, অক্ষয় দত্তর আবেদন ছিল বুদ্ধির কাছে, আবেগের কাছে নয়। “বেঁচে থাকতেই ভাববাদের উল্টো পথের এই একলা পথিক লিখেছিলেন: ‘যদি বা আমার কীর্ত্তি স্থায়ী হয়, কিন্তু আমি তো চিরস্থায়ী নই। …… মৃত্যুর পরে আমি সে কীর্ত্তি ঘোষণা শুনিতে আসিব না’।”৩৭ সবচেয়ে যেটা আশ্চর্যজনক লাগে তা হল,অক্ষয়কুমার সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথের অদ্ভুত নীরবতা। বিদ্যাসাগর সম্বন্ধে যে রবীন্দ্রনাথ পরম উচ্ছ্বসিত, তাঁর নিকটতম বৌদ্ধিক সঙ্গী অক্ষয়কুমারের বিষয় তিনি প্রায় নীরব। এর কারণ কি দেবেন্দ্র-অক্ষয় সংঘাত? নাকি শেষ জীবনে অক্ষয়কুমারের প্রায় নাস্তিক হয়ে যাওয়া? কারণ, অক্ষয়কুমারের জীবনে ব্রহ্ম নয়, “তাঁর জীবনের ধুয়োই ছিল : ব্রহ্মাণ্ড কী আশ্চর্য কাণ্ড!”৩৮
অক্ষয়কুমার সম্বন্ধে মন্তব্য করতে গিয়ে সর্বোৎকৃষ্ট সার্টিফিকেটটি দেন শিবনাথ শাস্ত্রী। তিনি লিখেছিলেন, “বঙ্গসাহিত্যের, বিশেষতঃ দেশীয় সংবাদপত্র সকলের অবস্থা কি ছিল, এবং অক্ষয়কুমার দত্ত সেই সাহিত্য-জগতে কি পরিবর্তন ঘটাইয়াছিলেন তাহা স্মরণ করিলে, তাঁহাকে দেশের মহোপকারী বন্ধু না বলিয়া থাকা যায় না।”৩৯
তথ্যসূত্র:
১) পৃষ্ঠা ২৩৪, উনিশ শতকের নবজাগরণ : স্বরুপ সন্ধান, অলোক রায়, অক্ষর প্রকাশনী
২) পৃষ্ঠা ৪৫, বাবু অক্ষয়কুমার দত্তের জীবন-বৃত্তান্ত, মহেন্দ্রনাথ রায়, সংস্কৃত পুস্তকালয়
৩) পৃষ্ঠা ৭৭, বঙ্গসাহিত্যে বিজ্ঞান, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষৎ
৪) পৃষ্ঠা ৭০, ডিরোজিও : রুটিন ভাঙা এক মাষ্টার, শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায়, পুনশ্চ
৫) পৃষ্ঠা ১৭, অক্ষয়কুমার দত্ত, ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ
৬) পৃষ্ঠা ৭০, ডিরোজিও : রুটিন ভাঙা এক মাষ্টার, শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায়, পুনশ্চ
৭) পৃষ্ঠা ২০০, রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ, শিবনাথ শাস্ত্রী, এস কে লাহিড়ী এ্যান্ড কোং
৮) পৃষ্ঠা ৩, বিজ্ঞানসাধক অক্ষয়কুমার দত্ত, অশোক মুখোপাধ্যায়, অনীশ সংস্কৃতি পরিষদ
৯) পৃষ্ঠা ১৮, অক্ষয়কুমার দত্ত, ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ
১০) পৃষ্ঠা ৩৪, উনিশ শতকের নারীমুক্তি আন্দোলন ও বাংলা সাহিত্য, রণজিৎ বন্দোপাধ্যায়, পুস্তক বিপণি
১১) পৃষ্ঠা ১৫৩, বাংলা সাহিত্যের রূপরেখা দ্বিতীয় খণ্ড, গোপাল হালদার, এ মুখার্জী এ্যান্ড কোং
১২) পৃষ্ঠা ৬, বাঙালীজীবনে বিদ্যাসাগর, সৌমেন্দ্রনাথ সরকার, সাহিত্যশ্রী
১৩) পৃষ্ঠা ২৭৫, বিদ্যাসাগর ও বাঙালি সমাজ দ্বিতীয় খণ্ড, বিনয় ঘোষ, বেঙ্গল পাবলিশার্স
১৪) পৃষ্ঠা ৯৪, বাবু অক্ষয়কুমার দত্তের জীবন-বৃত্তান্ত, মহেন্দ্রনাথ রায়, সংস্কৃত পুস্তকালয়
১৫) পৃষ্ঠা ৮৯, অক্ষয়কুমার দত্ত : আঁধার রাতে একলা পথিক, আশীষ লাহিড়ী, দে’জ পাবলিশিং
১৬) পৃষ্ঠা ১৮, অক্ষয়কুমার দত্ত, ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ
১৭) পৃষ্ঠা ৮, বাহ্যবস্তুর সহিত মানবপ্রকৃতির সম্বন্ধবিচার প্রথম ভাগ, অক্ষয়কুমার দত্ত, তত্ত্ববোধিনী মুদ্রাযন্ত্র
১৮) পৃষ্ঠা ৭১, ডিরোজিও : রুটিন ভাঙা এক মাষ্টার, শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায়, পুনশ্চ
১৯) পৃষ্ঠা ৬৫, উনিশ শতকের বাংলা সাহিত্য, ত্রিপুরাশঙ্কর সেন, পপুলার লাইব্রেরী
২০) পৃষ্ঠা ৬৭, উনবিংশ শতাব্দীতে বাঙ্গলার নবজাগরণ, সুশীলকুমার গুপ্ত, এ মুখার্জী এ্যান্ড কোং
২১) পৃষ্ঠা ১১০, বাবু অক্ষয়কুমার দত্তের জীবন-বৃত্তান্ত, মহেন্দ্রনাথ রায়, সংস্কৃত পুস্তকালয়
২২) ঈশ্বরের দর কষতেন বীজগণিত দিয়ে, শুভাশিস চক্রবর্তী, আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৪ জুলাই, ২০১৯
২৩) পৃষ্ঠা ৮৫, ধর্ম্মনীতি প্রথম ভাগ, অক্ষয়কুমার দত্ত, সংস্কৃত প্রেস
২৪) প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৯২
২৫) ঈশ্বরের দর কষতেন বীজগণিত দিয়ে, শুভাশিস চক্রবর্তী, আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৪ জুলাই, ২০১৯
২৬) পৃষ্ঠা ৩৯, অক্ষয়কুমার দত্ত : আঁধার রাতে একলা পথিক, আশীষ লাহিড়ী, দে’জ পাবলিশিং
২৭) প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৩৯
২৮) পৃষ্ঠা ৭, বাহ্যবস্তুর সহিত মানবপ্রকৃতির সম্বন্ধবিচার প্রথম ভাগ, অক্ষয়কুমার দত্ত, তত্ত্ববোধিনী মুদ্রাযন্ত্র
২৯) পৃষ্ঠা ৭, বিজ্ঞানসাধক অক্ষয়কুমার দত্ত, অশোক মুখোপাধ্যায়, অনীশ সংস্কৃতি পরিষদ
৩০) পৃষ্ঠা ৮৪, উনবিংশ শতাব্দীতে বাঙ্গলার নবজাগরণ, সুশীলকুমার গুপ্ত, এ মুখার্জী এ্যান্ড কোং
৩১) পৃষ্ঠা ৮, বাঙালী জীবনে বিদ্যাসাগর, সৌমেন্দ্রনাথ সরকার, সাহিত্যশ্রী
৩২) পৃষ্ঠা ৫, তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা, ৮১ সংখ্যা, বৈশাখ ১৭৭২ শকাব্দ
৩৩) প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১১
৩৪) পৃষ্ঠা ১৮৯, বাহ্য বস্তুর সহিত মানবপ্রকৃতির সম্বন্ধবিচার প্রথম ভাগ, অক্ষয়কুমার দত্ত, তত্ত্ববোধিনী মুদ্রাযন্ত্র
৩৫) প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১৯০,
৩৬) প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১৯৩,
৩৭) ঈশ্বরের দর কষতেন বীজগণিত দিয়ে, শুভাশিস চক্রবর্তী, আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৪ জুলাই, ২০১৯
৩৮) পৃষ্ঠা ২১, অক্ষয়কুমার দত্ত : আঁধার রাতে একলা পথিক, আশীষ লাহিড়ী, দে’জ পাবলিশিং
৩৯) পৃষ্ঠা ১৯৯, রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ, শিবনাথ শাস্ত্রী, এস কে লাহিড়ী এ্যান্ড কোং
(লেখাটি সেস্টাস থেকে ২০২০ সালে প্রকাশিত অশোক মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর অক্ষয়কুমার দত্ত দ্বিশতবর্ষ স্মারক গ্রন্থ’-তে জায়গা পেয়েছে।)