সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

কুষাণ রসেটা স্টোন

কুষাণ রসেটা স্টোন

সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৪ ২৫৯ 0

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকাবাবু সিরিজের প্রথম গ্রন্থ ভয়ংকর সুন্দর মনে আছে? সেই যে কুষাণ রাজা কণিষ্কের মুণ্ডু পেয়েও হারালেন? আর এই বংশের আরও দুই রাজার নাম পড়েছি ইতিহাস বইতে—ভীম কডফিস ও কুজুল কডফিস। এরা ছিলেন বৌদ্ধ। আবার জরথ্রুস্টিয় কিছু উপাদানও তাঁদের সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল।

আফগানিস্তান অঞ্চলে অনেক গবেষক এক লিপির সন্ধান জানতেন, তবে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে তার পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এই প্রাচীন লিখন পদ্ধতি প্রায় ২০০ সাধারণপূর্বাব্দে মধ্য এশিয়ার কিছু অংশে ব্যবহৃত হয়েছিল। গত বছরেই গবেষকরা সেই প্রাচীন লিপির কিছুটা পাঠোদ্ধার করতে পেরেছেন।

এই লিপির সঙ্গে ভারতেরও সম্পর্ক ছিল। এটি ইউরেশীয় স্তেপ-এর যাযাবর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিল, যেমন ইউজি (Yuèzhī), আর তাদের এক শাসক রাজবংশ, কুষাণ। এরা তখন উজবেকিস্তান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং উত্তর ভারতের বেশিরভাগ অংশ নিয়ে এক বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। বিজ্ঞানীদের একটি দল বর্ণনা করেছেন, কীভাবে তারা আংশিকভাবে ‘অজানা’ কুষাণ লিপির পাঠোদ্ধার করেছেন।

আফগানিস্তানের লিপি

কুষাণ সাম্রাজ্য পূর্ব এশিয়ায় বৌদ্ধধর্মের প্রসারে ভূমিকা নিয়েছিল—এদের স্থাপত্য ও শিল্পকর্ম ছিল উল্লেখযোগ্য।

এই কুষাণ লিপি ১৯৫০-এর দশক থেকে পরিচিত কিন্তু এর পাঠোদ্ধার করা হয়নি। কুষাণ লিপিতে লিখিত বেশ কয়েক ডজন ছোটো শিলালিপি পাওয়া গেছে, বেশিরভাগই তাজিকিস্তান, আফগানিস্তান এবং উজবেকিস্তানের থেকে।

আবার ১৯৬০-এর দশকে, কাবুলের প্রায় ৬০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে মাউন্ট কারাবায়ুতে, ১৪ হাজার ফুটেরও বেশি উচ্চতায় অবস্থিত একটি পাথরে আফগানিস্তানের ফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিকরা আরও দুটি পরিচিত প্রাচীন ভাষার পাশাপাশি লেখা একটি দীর্ঘ শিলালিপি আবিষ্কার করেছিলেন।

তাজিকিস্তানের লিপি

২০২২ সালে উত্তর-পশ্চিম তাজিকিস্তানের আলমোসি গর্জে একটি পাথরের মুখে খোদাই করা একটি ছোটো শিলালিপি পাওয়া গেছে যা ইতিমধ্যেই জানা ব্যাক্ট্রিয়ান ভাষার পাশাপাশি অজানা এক লিপিতেও লেখা ছিল। এই রহস্যময় কুষাণ লিপির পাঠোদ্ধার করার জন্য আবার কয়েকজন গবেষক উদ্বুদ্ধ হন। এবারে জার্মানির কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিদরা তাজিক প্রত্নতাত্ত্বিক বোবোমুল্লোর সহযোগিতায় লেখার আংশিক পাঠোদ্ধার করতে সফল হন।

রসেটা স্টোন মনে আছে তো—যেখানে মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক প্রাচীন গ্রিক থেকে পাঠোদ্ধার করা হয়েছিল? ওই পাথরে তিনটি প্রাচীন ভাষায় একই বক্তব্য লেখা ছিল। সেখানে জানা লিপি ও ভাষার সাহায্যে অজানা লিপি ও ভাষা পাঠ করা সম্ভব হয়। একই পদ্ধতি ব্যবহার করে তাজিকিস্তানের লিপির পাঠ উদ্ধার করবার পরে আফগানিস্তানের সেই ৬০ এর দশকের দীর্ঘ লিপির পাঠোদ্ধার করা হয়। এখনও পর্যন্ত যে অংশের পাঠোদ্ধার করতে পারা গেছে তাতে কুষাণদের রাজা ভেমা তখতু-র একটি রাজকীয় ভাষণ আছে। তিনি নিজেকে বলেছেন, রাজাদের রাজা।

গবেষকরা বলেছেন, অজানা ভাষাটি ব্যাক্ট্রিয়ান, মধ্য ইন্দো-আর্য এবং সংস্কৃতের পাশাপাশি কুষাণ সাম্রাজ্যের অন্যতম সরকারী ভাষা হিসাবে কাজ করেছে বলে মনে হচ্ছে। তাঁরা এটিকে ‘ইটিও-টোকারিয়ান’ প্রাথমিক নাম দিয়েছে।

পুরো কাজ এখনও শেষ হয়নি। বাকি কথা পরে হবে।

নিচের লিংক-এ গিয়ে পুরো খবরটা পড়তে পারেন।

https://www.history.com/news/ancient-kushan-script-decoded

–মধুশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ চিত্র পরিচিতিঃ শিলালিপিগুলির সাইট

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।