সম্পাদকীয়
‘ভারতীয় জ্ঞান পদ্ধতি’ – ছদ্ম-বিজ্ঞান আর ছদ্ম-ইতিহাসের পাঠ্যক্রম
গত বছর আগস্ট মাসের শেষে ভারতের সংবাদপত্রগুলিতে প্রকাশিত একটি সংবাদ অনুযায়ী গুজরাত পুলিশ সুরাতে মিতুল ত্রিবেদী নামে এক ব্যক্তিকে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছিল। সম্ভবত বাণিজ্যের স্নাতক মিতুল ত্রিবেদী চন্দ্রযান-৩-এর সফল অভিযানের পর কয়েকটি সাক্ষাৎকারের সময় নাকি দাবি করছিলেন, তিনি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর বিজ্ঞানী এবং লুনার ল্যান্ডারটি তাঁরই পরিকল্পিত। তিনি আরও দাবি করছিলেন, তিনি ইসরোর প্রাচীন বিজ্ঞানের প্রয়োগ বিভাগে পারদ শক্তিচালিত মহাকাশযান নিয়ে কর্মরত গবেষকদের একজন। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার এই রকম কোনও বিভাগ বা গবেষণার অস্তিত্ব না থাকলেও মিতুল ত্রিবেদীকে একেবারে উড়িয়ে দিলে ভুল হবে। পুণে শহরে অবস্থিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম ‘ভীষ্ম স্কুল অফ ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেম’। ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরামর্শদাতা পুণের ডেকান কলেজের প্রাক্তন উপাচার্য প্রত্নতত্ত্ববিদ বসন্ত শিণ্ডে। এই ওয়েবসাইটের একটি বিজ্ঞাপনে মিতুল ত্রিবেদীর পরিচয় দেওয়া আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানী ও ইসরোর পরামর্শদাতা। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফেসবুকের পৃষ্ঠা থেকে জানা যায়, মিতুল ত্রিবেদী সেখানে ভারতীয় জ্ঞান পদ্ধতির অনুসারী বিমানবিদ্যা নামের একটি ৩ মাসের অন-লাইন পাঠক্রমে পড়িয়েছেন। এই পাঠক্রমে যেমন ‘বিমানশাস্ত্র’ গ্রন্থসমূহে উল্লিখিত প্রাচীন বিমান সম্পর্কে উল্লেখ আছে, তেমনই উল্লেখ রয়েছে মরুৎসখা নামের পৃথিবীর ‘প্রথম’ বিমানের। বৈদিক বিমানের নির্মাণ প্রকৌশল এবং মাধ্যাকর্ষণ-বিরোধী প্রযুক্তিও এই পাঠক্রমের অংশ। প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত মিতুল ত্রিবেদী ও কেন্দ্রীয় সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা স্বীকৃত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাঁর পড়ানো ছদ্ম-বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের ছদ্ম-ইতিহাসের পাঠক্রমের সঙ্গে যুক্ত ‘ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেম’ অর্থাৎ ‘ভারতীয় জ্ঞান পদ্ধতি’ কথাটি বোধ হয় এখনও ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেনি।
২০২০ সালের জুলাই মাসে ভারতের নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি কেন্দ্রীয় সরকারের ক্যাবিনেটের অনুমোদন লাভ করার পর, এই শিক্ষা নীতিতে যে বহু সংখ্যক পরিবর্তন দেখতে পাওয়া গেল, তার মধ্যে ‘ভারতীয় জ্ঞান পদ্ধতি’ শীর্ষক একটি অভিনব ধারণার প্রবর্তন অত্যন্ত উল্লেখনীয়। ভারত সরকার প্রকাশিত নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতির পুস্তিকায় বলা হয়েছে, “প্রাচীন ও সনাতন ভারতীয় জ্ঞান ও চিন্তার সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের আলোকে এই নীতি তৈরি করা হয়েছে।” ভারতীয় জ্ঞানের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে এই পুস্তিকায় বলা হয়েছে, “প্রাচীন ভারতে কেবল সাংসারিক জীবন অথবা বিদ্যালয়ের পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতির জন্য জ্ঞান অর্জন নয়, আত্মজ্ঞান ও মুক্তিকে শিক্ষার লক্ষ্য বলে মনে করা হতো।” এই পুস্তিকায় আরও বলা হয়েছে, “আদিবাসী জ্ঞান ও শিক্ষার স্বদেশী ও পারম্পরিক পদ্ধতিগুলি সমেত ভারতীয় জ্ঞান ব্যবস্থাসমূহ, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, দর্শন, যোগ, স্থাপত্যবিদ্যা, চিকিত্সাবিদ্যা, কৃষি, প্রযুক্তিবিদ্যা, ভাষাবিজ্ঞান, সাহিত্য, কৃষির সঙ্গে সঙ্গে শাসনব্যবস্থা, রাজনীতি ও পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।” অর্থাৎ, এক কথায়, শিক্ষার প্রায় সর্বক্ষেত্রে ‘প্রাচীন ও সনাতন’ ভারতীয় শিক্ষা পদ্ধতির প্রয়োগ করা হবে।
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ভারতীয় শিক্ষা পদ্ধতির পাঠক্রম কী রকম হবে, তার স্বরূপ আমরা প্রথম দেখতে পেয়েছিলাম ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত অখিল ভারতীয় কারিগরি শিক্ষা পরিষদের নতুন পাঠক্রমে। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে পরিকল্পিত এই নতুন পাঠক্রমে প্রযুক্তিবিদ্যার প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের ভারতীয় শিক্ষা ঐতিহ্যের সার’ শিক্ষার জন্য ‘ভারতীয় বিদ্যাসার-১’ ও ‘ভারতীয় বিদ্যাসার-২’ নামের দুটি ভাগে বিভক্ত একটি নতুন বাধ্যতামূলক বিষয়ের পাঠ্যক্রমের উল্লেখ করা হয়েছে। এই পাঠক্রমের রচয়িতাদের মতে, “আধুনিক সমাজে দ্রুত প্রাযুক্তিক অগ্রগতি ও সামাজিক বিঘ্ন-ব্যাঘাতের সাথে সাথে যোগ বিজ্ঞান ও সংস্কৃত সাহিত্যের প্রজ্ঞার বীজকোষসমূহ থেকে প্রাপ্ত সামগ্রিক জীবনশৈলীও গুরুত্বপূর্ণ” এবং সেই কারণে এই শিক্ষাক্রমের ঘোষিত লক্ষ্য “আধুনিক বৈজ্ঞানিক পরিপ্রেক্ষিত থেকে ভারতীয় ঐতিহ্যগত জ্ঞানের মূল বিষয়গুলিকে বোঝা, তার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা ও ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা” অর্জন। যে বিষয়গুলি এই শিক্ষাক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখনীয় বিষয় অষ্টাদশবিদ্যা – ৪ বেদ, ৪ উপবেদ (আয়ুর্বেদ, ধনুর্বেদ, গন্ধর্ববেদ ও স্থাপত্যবেদ) ৬ বেদাঙ্গ (শিক্ষা, কল্প, নিরুক্ত, ব্যাকরণ, জ্যোতিষ ও ছন্দ) এবং ৪ উপাঙ্গ (ধর্মশাস্ত্র, মীমাংসা, পুরাণ ও তর্কশাস্ত্র)।
অখিল ভারতীয় কারিগরি শিক্ষা পরিষদ ‘ভারতীয় বিদ্যাসার-১’ ও ‘ভারতীয় বিদ্যাসার-২’-এর শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠ্যপুস্তক রচনার দায়িত্ব ভারতীয় বিদ্যা ভবনকে দেওয়ার পর, সেখান থেকে এই দু’টি পাঠ্যপুস্তক প্রকাশিত হয়েছে। এই দুই পাঠ্যপুস্তক থেকে কয়েকটি উদাহরণ উদ্ধৃত করলে বোঝা যাবে কীভাবে প্রযুক্তিবিদ্যার শিক্ষার্থীদের ছদ্ম-বিজ্ঞান আর ছদ্ম-ইতিহাস শেখানোর আয়োজন করা হয়েছে।
ভারতীয় বিদ্যা ভবন থেকে ২০১৮ সালে প্রকাশিত ‘ভারতীয় বিদ্যাসার-১’-এর পাঠ্যপুস্তকে বেদান্ত ও বিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক বোঝাতে গিয়ে বলা হয়েছে, বিজ্ঞান চিনির মধ্যে কেবল কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের মতো জড় পদার্থের কথা বলে, কিন্তু চিনির মধ্যে এ ছাড়াও যে চৈতন্য রয়েছে সে কথা বলে না। বিজ্ঞানে চৈতন্য পদার্থের বিষয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে। বেদান্ত অনেক আগেই নির্ণয় করেছে, প্রত্যেক বস্তুতে চৈতন্য অবস্থান করে। অতএব, যেখানেই আমরা জড় পদার্থের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি, সেখানেই চৈতন্য পদার্থের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও আবশ্যক (পৃ. ৬৬)। অন্যত্র বলা হয়েছে, জৈন দর্শন হচ্ছে আত্মা ও পরমাণুর বিজ্ঞান, যাকে বর্তমান সময়ে কোয়ান্টাম ফিজিক্স বলে। স্পষ্টত, জৈন শ্রমণদের অ্যাটমিক ও মলিকিউলার ফিজিক্সেরও জ্ঞান ছিল (পৃ. ৭৫)। আরও লেখা হয়েছে, ১৯০৫ সালে আইনস্টাইন আবিষ্কৃত আপেক্ষিকতা তত্ত্ব ২৫০০ বছর পূর্বের জৈন দর্শনের সত্যাসত্য তত্ত্বের প্রতিলিপি মাত্র (পৃ. ৭৯)। শুধু তাই নয়, জৈন শ্রমণদের জীবের ক্রমবিকাশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত অনেক দিক থেকেই ডারউইনের বিবর্তনবাদ বা বর্তমান জেনেটিক সায়েন্সের সঙ্গে এক। তবে ডারউইনের সঙ্গে জৈন দর্শনের কেবল একটি মূল পার্থক্য – ডারউইনের মতে জীবের ক্রমবিকাশের মূল কারণ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জীবিত থাকার প্রয়াস আর জৈন দর্শনের মতে জীবের ক্রমবিকাশের মূল উদ্দেশ্য সর্বজ্ঞতা ও সিদ্ধিলাভের জন্য বিশুদ্ধ চেতনা প্রাপ্তি (পৃ. ৮৩-৮৪)।
‘ভারতীয় বিদ্যাসার-১’ বইটি জুড়ে প্রাচীন ভারতে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার নিয়ে কল্পকাহিনির ছড়াছড়ি। এই বইয়ের মতে, ব্রিটিশ বৈজ্ঞানিক জন ফ্রেডরিক ড্যানিয়েলকে ১৮৩৬ সালে বৈদ্যুতিক ব্যাটারির আবিষ্কার বা ১৭৫২ সালে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের বিদ্যুৎ আবিষ্কারের শ্রেয় দেওয়া ভুল, কারণ বৈদিক ঋষি মহর্ষি অগস্ত্য তাঁর ‘অগস্ত্য সংহিতা’ গ্রন্থে ব্যাটারি দিয়ে বিদ্যুৎ উত্পাদনের কথা লিখে গিয়েছেন (পৃ. ৯০)। কেবল তাই নয়, নিউটনের গতিবিদ্যার তিনটি সূত্র আসলে ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মহর্ষি কণাদ আবিষ্কার করেছেন (পৃ. ৯২) আর ‘সমরাঙ্গণসূত্রধার’ গ্রন্থে হাইড্রলিক মেশিন (টারবাইন) ব্যবহার করে জলের ধারা থেকে শক্তি উত্পাদনের কথা লেখা আছে (পৃ. ৯৪-৯৫)। ১৯০৩ সালে রাইট ভাইরা মোটেই প্রথম উড্ডয়নের মাধ্যমে বিমান প্রযুক্তির সূত্রপাত করেননি, বৈদিক কালে (আনুমানিক ৫০০০ বছর আগে) মহর্ষি ভারদ্বাজ রচিত ‘যন্ত্রসর্বস্ব’ নামের একটি গ্রন্থের অংশ ‘বৈমানিক শাস্ত্র’। এই গ্রন্থে, সত্য ও ত্রেতা যুগের ২৫ রকমের বিমান, দ্বাপর যুগের ৫৬ রকমের বিমান ও কলি যুগের ২৫ রকম বিমানের কথা উল্লিখিত হয়েছে। এই বিমান শাস্ত্রের ভিত্তিতেই ১৮৯৫ সালে শিবধর বাপুজি তালপড়ে বিমান উড়িয়ে দেখিয়েছিলেন (পৃ. ৯৫-৯৭)। এখানেই শেষ নয়, আরও আছে। সালোকসংশ্লেষ বৈদিক ঋষি পারাশর আবিষ্কার করেছেন (পৃ. ১০৬)। জীবকোষের আবিষ্কার রবার্ট হুক নয়, এও মহর্ষি পারাশরের আবিষ্কার; রবার্ট হুক ১৬৬৫ সালে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে জীবকোষ দেখতে পাওয়ার কয়েক হাজার বছর আগে মহর্ষি পারাশর যখন তাঁর ‘বৃক্ষ-আয়ুর্বেদ’ গ্রন্থে যখন উল্লেখ করেছেন, নিশ্চয়ই তখনও অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছিল (পৃ. ১০৬-১০৭)। মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব ১৬৬৬ সালে নিউটন আবিষ্কার করেছিলেন বলে তাঁকে কৃতিত্ব দেওয়া হলেও, কয়েক হাজার বছর পূর্বের ঋগ্বেদে মাধ্যাকর্ষণের উল্লেখ রয়েছে, এবং নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ সূত্রকে ভাস্করাচার্যের মাধ্যাকর্ষণ সূত্র বলা ঠিক হবে (পৃ. ১০৯-১১১)।
এবার, ভারতীয় বিদ্যা ভবন থেকে ২০১৮ সালেই প্রকাশিত ‘ভারতীয় বিদ্যাসার-২’ বইটি থেকে ছদ্ম-ইতিহাসের কিছু উদাহরণ দেখা যাক। এক স্থানে বলা হয়েছে, বুদ্ধের জন্মের পূর্বেই ভারতে ষড় দর্শন সংস্থাপিত হয়েছিল (পৃ. ১৩৫)। অন্যত্র বলা হয়েছে, সংস্কৃত সাহিত্যের দুটি ধারা – বৈদিক ও লৌকিক; বৈদিক ধারা অনাদি কাল থেকে বিদ্যমান (পৃ. ১৭৬)। আর এক স্থানে লেখা হয়েছে, কালিদাস মেঘদূতে মেঘের উৎপত্তির যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা থেকে বোঝা যায় তাঁর রসায়নশাস্ত্রে প্রভূত জ্ঞান ছিল (পৃ. ১৮৩)। এখানে সঙ্গীতের ইতিহাস প্রসঙ্গে ভারতের ইতিহাসের এক নতুন কাল বিভাজনের পরিচয় পাওয়া যায় – পৌরাণিক যুগ বা প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগ। পুরাণ কথাটির অর্থ প্রাচীন। পৌরাণিক যুগের অধ্যয়নের মাধ্যমেই কেবল ভারতের সভ্যতা, সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয়ে বাস্তবিক জ্ঞান লাভ হয়। সেই কারণে এ কথা মানা হয়, যে পুরাণের দ্বারাই ভারতের প্রাচীন ইতিহাসের তথ্য জানতে পারা যায় (পৃ. ১৯৭)। ‘ভারতীয় বিদ্যাসার-২’ বইটি থেকে ছদ্ম-বিজ্ঞানেরও একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। এই বইয়ের মতে, যে কোনও ব্যবসায় উন্নতির জন্য প্রয়োজন উত্পাদিত পণ্যের গুণমান, ক্রেতার প্রতি ব্যবহার, মালিকের ভাগ্য আর কার্যস্থলের বাস্তু। এখানে ব্যবসায় সাফল্যলাভের জন্য বিভিন্ন প্রকারের কার্যস্থলের বাস্তুসম্মত দিক নির্দেশ করা হয়েছে। যেমন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়, ধুরন্ধর ব্যবসায়ী ও চলচ্চিত্র অভিনেতার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে পূর্ব দিক। কিন্তু, এ কথাও বলে দেওয়া হয়েছে, ব্যবসার স্থলের উপর যদি কোনও উঁচু বাড়ি বা উড়ানপুলের ছায়া পড়ে, তাহলে সাফল্য আসবে না (পৃ. ২৮৮-২৮৯)।
ভারতীয় জ্ঞান পদ্ধতির শিক্ষার জন্য ভারত সরকারের শিক্ষা দপ্তরের একটি বিভাগ গঠন করা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত পাঠ্যক্রমের ৫% ভার’তীয় জ্ঞান পদ্ধতির শিক্ষার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে বরাদ্দ করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে। এই পাঠক্রম ভারতের তরুণ প্রজন্মের মধ্য থেকে বিজ্ঞান ও বিশ্বাস এবং ইতিহাস ও পুরাকথার মধ্যে পার্থক্য করার জন্য প্রয়োজনীয় যুক্তিবোধ সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে দিতে সক্ষম। শুধু তাই নয়, এই শিক্ষাক্রমের প্রচলনের মাধ্যমে মানব সভ্যতার অর্জিত জ্ঞানকে ভারতীয় ও বিদেশী, এই দুই অবাস্তব ভাগে বিভাজন করে যে কল্পিত বিরোধাভাসের জন্ম দেওয়া হয়েছে, এর ফলে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমস্ত যুক্তিপূর্ণ শিক্ষার প্রতিই প্রবল সংশয় সৃষ্টি হবে। ইতিহাস ও বিজ্ঞান সচেতন ভারতীয় নাগরিকদের ‘ভারতীয় জ্ঞান পদ্ধতি’র নামে ছদ্ম-বিজ্ঞান ও ছদ্ম-ইতিহাস প্রচারের এই উদ্যোগ সম্পর্কে অবিলম্বে অবহিত হওয়া দরকার।