সম্পাদকীয়
‘সত্য আর মিথ্যা এসে বিবাহে বসেছে একাসনে’
ভারতের ইতিহাস চর্চার এক অভাবনীয় পর্বের যবনিকা প্রতিদিন উন্মোচিত হচ্ছে। ভারতে প্রযুক্তিবিদ্যার সর্বশ্রেষ্ঠ মানের উচ্চশিক্ষার জন্য নির্মিত প্রতিষ্ঠান আজ এক বিচিত্র ইতিহাস চর্চা নিয়ে ব্যস্ত। প্রযুক্তিবিদ্যার পীঠস্থানের সেই ইতিহাস চর্চা থেকে বৈজ্ঞানিক যুক্তিবোধ অপসৃত হয়েছে গহন তমিস্রায়; অন্ধ বিশ্বাস আর ধর্মীয় বিদ্বেষ আছন্ন করেছে মনন। প্রচণ্ড প্রচারের মাধ্যমে ক্রমশ এক সম্মোহনী মায়ায় অস্বচ্ছ করে দেওয়া হচ্ছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অর্থ – ঔপনিবেশিক শাসনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করে দেশের পরাধীনতার কালপর্বকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এক সহস্রাব্দ পূর্বে। পরাধীনতার দিনগুলিতে বিদেশি শাসককুলের সঙ্গে তাদের দেশি সহযোগীদের গলাগলির ইতিহাসকে জনমানস থেকে মুছে দেবার জন্য এক বুদ্ধিদীপ্ত ভোজবাজির খেলা চলছে!
বিগত শতকে ভারতের ইতিহাসের চর্চার পথ চলতে হয়ত ভুল হয়েছে অনেকেরই – সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে জাতি ও ধর্মের প্রভাবকে যাঁরা এত দিন গুরুত্বহীন বলে উড়িয়ে দিতেন, তাঁরাও আজ অজ্ঞাত ইতিহাসকে নতুন করে খুঁজে দেখতে উত্সুক। ইতিহাসের আধুনিক বিদ্বানদের ভাবনাকে ক্রমশ বিদ্ধ করছে সেই প্রশ্ন – কী কারণে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও সব আলো শুধু সীমায়িত থেকে গেল মুষ্টিমেয় পরিবারের আঙিনায়, আর বহুজনের কুটির ছেয়ে রইল কেবল অন্ধকারে। এই প্রশ্নাবলি যে প্রতিনিয়ত ভারতের ইতিহাস চর্চার মনোদিগন্ত প্রসারিত করে চলেছে, তার প্রতিফলন আমরা দেখছি নতুন প্রকাশিত নিবন্ধে, গবেষণা কর্মে।
প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননের প্রেরণা যখন পুরাকথা, পাঠক্রম থেকে যখন মুছে যায় গণতন্ত্রের কথা, সেই দেশকালে আমাদের লক্ষ্য স্থির – সত্য আর মিথ্যার বিবাহবিচ্ছেদ। বিগত কয়েক মাস ধরে স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে প্রজা ও তন্ত্রের মধ্যে সম্পর্ক আর বিরোধ নিয়ে উপলব্ধির সংকলনের মাধ্যমে সমকালকে ব্যবচ্ছেদ করে দেখার প্রচেষ্টা চলছে ‘ইতিহাস আড্ডা’র পোর্টালে। খোলা চোখে অতীতকে দেখার, বোঝার প্রয়াসের অবিরত ধারা বহমান ‘ইতিহাস তথ্য ও তর্ক’ মুখপুস্তকের পাতায়। যে লেখকদের সর্জন উত্তরোত্তর আমাদের মঞ্চের এই বৌদ্ধিক পরিধি বিস্তার করে চলেছে, কথাশেষে তাঁদের জানাই অকুণ্ঠ কৃতজ্ঞতা।