সম্পাদকীয়
বই মেলা – আ মরি বাংলা ভাষা
চকোলেট ডে, হাগ্ ডে, ভ্যালেন্টাইন্স ডে, ক্রিসমাস ডে, পুজোর সময় আনন্দমেলা, খাদ্য মেলা, শিল্প মেলা, এসবের মধ্যে গুঁজে আছে সপ্তাহভর বই মেলা – চলুক। আরও যা সব ‘ডে’, মেলা, খেলা, হপ্তা আছে সব চলুক। বাঙালির বারো মাসে তের পার্বণ। অথবা হুজুগে বাঙালি। অথবা বাজারের রমরমা। এই মেলাই দেয় মাঝারি ও ছোটো প্রকাশকদের আশ্বাস। বড় প্রকাশকদের প্রচার। বই মেলা চাই। বই মেলা হয়ে উঠুক আনন্দ মেলা, তবে তাতে বিক্রি বাটাও যে চাই। শুধু খাবার নয়, বইয়ের, লিটিল ম্যাগাজিনের- সব ধরনের প্রকাশনা সংস্থার বইয়ের বিক্রি চাই।
বই মেলাতে চলুক – বাংলা বই কেনার দু’চার দিন, পাঠ্যক্রমের বাইরের বই পড়ার কিছুদিন। সজোরে কবিতার পড়ার ভালোদিন। বাংলা ভাষাকে ভালোবাসার প্রতিদিন।
কঠিন। বড্ড কঠিন। পেরে উঠি না।
একদিকে আছে কেঠো অর্থনীতি। ইংরেজি ও হিন্দি শিখতে হয়। নইলে পিছিয়ে পড়তে হয়। অন্যদিকটা হল আবেগ, ভালোবাসা। আমাদের অর্থনীতির ক্রমাবনতি, বাবা মায়েদের বাংলা সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব এই যুগের ছেলেমেয়েদের আবেগহীন করে দিয়েছে। যে ইংরেজিতে লিখতে পারে সে বাংলায় লেখে না, যে হিন্দি বলতে পারে সে বাংলা বলে না।
এসব সত্ত্বেও কিন্তু আমরা বাংলা ভাষাকে বাঁচাতে পারি। পেরে উঠতে পারি। ইংরেজি, হিন্দি শিখেও বাংলা ভাষাকে বাঁচান যায়।
- যদি আমরা ঠিক করি নিজেরা বছরে তিন-চারটি বাংলা বই কিনব, বছরে বাংলা বই কেনার বাজেটে রাখব কয়েক হাজার টাকা।
- যদি ঠিক করি ছেলেমেয়েকে বাংলা বই উপহার দেব।
- যদি রাতের বেলায় সন্তানকে পাগলা দাশু পড়ে শোনাই, কিশোর সন্তানের হাতে তুলে দিই খগেন্দ্রনাথ মিত্রের বাংলার ডাকাত বা দীনেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দুরন্ত ঈগল।
- তাদের জানতে দিই গোয়েন্দা গল্পের বাইরেও বিভিন্ন বয়সের ছেলেমেয়েদের বাংলা বই আছে।
- যদি গ্রন্থাগারগুলির খোলনলচে ধরে একটু টানাটানি করা হয়।
- যদি সরকার ছোট ও মাঝারি প্রকাশনা সংস্থার ভালো বাংলা বইগুলিও সরকারি গ্রন্থাগারে রাখে।
- যদি গ্রন্থাগারমন্ত্রী মাঝে মধ্যে অনুদানপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারগুলির খোঁজ নেন।
যেতে পারি বই মেলায়, যেতে পারি কলেজ স্ট্রিটে, কিনতে পারি অনলাইনে, আসল কথা বাংলা বই কেনা, বাংলা বই পড়া। বাংলায় বৌদ্ধিক চর্চা করা।
মেলা থেকে ফেরার পথে হাতে দুই-একটা বাংলা বই থাকবে তো?
সহমত পোষণ করছি।