সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

শতাব্দীর সেরা দ্বৈরথ (ষষ্ঠ পর্ব)

শতাব্দীর সেরা দ্বৈরথ (ষষ্ঠ পর্ব)

আগস্ট ১২, ২০২০ ৮৪৮ 0

পূর্ববর্তী পর্বের লিংক : শতাব্দীর সেরা দ্বৈরথ (পঞ্চম পর্ব)

প্রথাগত দাবা খেলার তুলনায় এই ম্যাচটা ছিল অনেকটাই আলাদা। প্রাথমিক নিয়ম অনুযায়ী এটা ছিল অত্যন্ত দ্রুত গতির খেলা। তাই সাংবাদিকরা এর নাম দিয়েছিলেন ব্লিৎস গেম। ববি ফিশারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্তরে দীর্ঘ কুড়ি বছর বাদে এটাই ছিল প্রথম টুর্নামেন্ট। এমনিতেই ববি ফিশার কোনোদিনই চাল দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশি সময় নিতেন না কিন্তু দেখা গেলো এবারে তাঁর গতি যেন অনেক বেশি দ্রুত। তুলনায় বরিস স্প্যাসকি সামান্য বেশি সময় নিতেন। তবে তিনিও জিনিয়াস ছিলেন। মন্টিনিগ্রোতে আসার আগে দুমাস তিনি তাঁর সেকেন্ডসদের সাথে ক্রমাগত অনুশীলনের মাধ্যমে প্রস্তুত করে নিয়েছিলেন নিজেকে। প্রথম বাইশ চাল পর্যন্ত বরিস স্প্যাসকি তুল্যমূল্য লড়ে গেলেও তাঁর পরেই যেন জ্বলে উঠলেন ববি ফিশার। ঠিক একান্ন চালের মাথায় ববি ফিশারের সাথে হাত মিলিয়ে পরাস্ত বরিস স্প্যাসকি হল ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। সাংবাদিক আর টিভি ভাষ্যকারেরা আবিষ্কার করলেন ১৯৭২ সালের তুলনায় কুড়ি বছর বাদে ১৯৯২ সালের ববি ফিশার যেন আরো বেশি ক্ষুরধার।

যারা রেডিও বা টিভিতে দূরে বসে ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন তারা এই স্পিড গেমের সঙ্গে খুব বেশি পরিচিত ছিলেন না। তাই প্রথমদিকে খেলার গতির সাথে তাল রাখতে অসুবিধে হলেও ধীরে ধীরে মানিয়ে নিলেন তারা।

পরের দিন ৩-রা সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে তিনটের সময় দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম চাল দিলেন বরিস স্প্যাসকি। এদিন বিশেষ মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিলেন তিনি। কিন্তু ববি ফিশার লড়লেন সমানে সমানে। ঊনষাট চালের পর খেলা ড্র বলে মেনে নিলেন দু’জন। সাংবাদিকরা ম্যাচ রিপোর্টে লিখলেন বয়েস ববি ফিশারের সহজাত প্রতিভায় কোনো রকম ছাপ না ফেললেও স্ট্যামিনায় যেন সামান্য ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।

শনিবার ৫-ই সেপ্টেম্বর বাঁ দিক থেকে পাঁচ নম্বর বোড়ে দু’ঘর এগিয়ে দিয়ে খেলা শুরু করলেন ববি ফিশার। কিন্তু বরিস স্প্যাসকি সেদিন দুরন্ত ফর্মে ছিলেন। তাঁর নিজস্ব বাইশতম চালের পর মনে হলো তিনিই জিততে চলেছেন। কিন্তু কোনোরকমে সহজাত দক্ষতায় হার বাঁচালেন ফিশার। ঊনচল্লিশ চালের পর রাউন্ড ড্র হয়ে গেলো। ববি ফিশারকে স্পষ্টতই খানিকটা ক্লান্ত মনে হলো সেদিন।

সেপ্টেম্বরের ৬ তারিখ চতুর্থ রাউন্ডে বরিস স্প্যাসকির সামনে দাঁড়াতেই পারলেন না ববি ফিশার। ঠিক পঞ্চাশ চালের পর হার মেনে নিলেন তিনি। ৯ তারিখ পঞ্চম রাউন্ডেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো। ববি ফিশার সেদিন সম্পূর্ণ এলোমেলো আর বিধ্বস্ত। নিজের ৪৫-তম চালে কিস্তিমাত করে দিলেন স্প্যাসকি। মাথা নিচু করে হল ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন ফিশার। স্কোর কার্ডে লেখা হলো বরিস স্প্যাসকি দুই আর ববি ফিশার এক। উপস্থিত সাংবাদিক আর ধারাভাষ্যকারেরা একবাক্যে রায় দিলেন ববি ফিশার শুধু বুড়িয়েই যাননি, ফুরিয়েও গেছেন। সন্ধ্যাবেলায় বিভিন্ন দেশের টিভি চ্যানেলগুলোয় বিতর্কে অংশ নিলেন বিশেষজ্ঞরা। ববি ফিশার যে শেষ হয়ে গেছেন সেটা মেনে নিলেন বেশির ভাগ। নিজের হোটেলের ঘরে বসে কি কোনো চ্যানেলে সেই সব আলোচনা শুনেছিলেন ফিশার ?

১০ তারিখ বৃহস্পতিবার ষষ্ঠ রাউন্ডে বরিস স্প্যাসকি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠলেন। ববি ফিশারকে যথেষ্ট নার্ভাস দেখাচ্ছিল। টেবিলের থেকে একবারের জন্যেও মাথা তুললেন না তিনি। খেলা গড়ালো একষট্টি চাল পর্যন্ত। কোনো রকমে রাউন্ড ড্র রাখলেন ববি ফিশার।

উপস্থিত অতিথি অভ্যাগত সাংবাদিকরা ছাড়াও মোটামুটি এই ম্যাচের ভাগ্যলিপি বুঝে গেলেন বিশ্বের তামাম দাবা প্রেমী মানুষজন। বিস্ময় প্রতিভাও যে বয়সের সাথে সাথে ধারে ও ভারে কমে সেটা আবারও প্রমাণ হয়ে গেলো।

দীর্ঘ কুড়ি বছর খেলার মধ্যে না থাকলেও সেই সময়ও সারা বিশ্ব জুড়ে ববি ফিশারের গুণমুগ্ধ ভক্তের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। তখনও তিনি কিংবদন্তি। কিন্তু মনে কষ্ট হলেও ফিশার মিথ যে ভেঙে পড়ার মুখে সেটা মেনে নিলেন সবাই। ফিশার সাম্রাজ্যের পতন তখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

যাই হোক শনিবার ১২-ই সেপ্টেম্বর সপ্তম রাউন্ডে ববি ফিশার মুখোমুখি বসলেন স্প্যাসকির। সাংবাদিকরা লক্ষ্য করলেন ববি ফিশারের বডি ল্যাঙ্গোয়েজ যেন অনেকটা পাল্টে গেছে। যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে তাঁকে। বাঁ দিক থেকে পাঁচ নম্বর সাদা বোড়ে দু’ঘর এগিয়ে দিয়ে খেলা শুরু করলেন ফিশার। চুয়াল্লিশ চালের মাথায় কিস্তিমাত। বরিস স্প্যাসকি হার মেনে নিলেন। স্কোর কার্ডে দুজনেরই জয়ের সংখ্যা দাঁড়ালো দুই। ম্যাচ তখন সমান সমান।

পরের দিন রবিবার মানে ১৩-ই সেপ্টেম্বর অষ্টম রাউন্ড। কালো বোড়ে নিয়ে শুরু করেও ফিশার সেদিন অনেক বেশি আক্রমণাত্মক মেজাজে। ফিশারের ঠিক চল্লিশ চালের পর স্প্যাসকি উঠে দাঁড়িয়ে হার স্বীকার করে নিলেন। স্কোর দাঁড়ালো স্প্যাসকি দুই আর ফিশার তিন। টিভি আর রেডিওর চ্যানেলগুলোয় বিশেষজ্ঞরা তখন ঢোক গিলছেন।

কিন্তু ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটলো পরের বুধবার। দিনটা ছিল সেপ্টেম্বর মাসের ১৬ তারিখ। নবম রাউন্ডে মাত্র একুশ চালে বরিস স্প্যাসকিকে শেষ করে দিলেন ববি ফিশার। ঘটনাটা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কারণ, স্প্যাসকির সম্পূর্ণ প্রফেশনাল ক্যারিয়ারে এর আগে এত তাড়াতাড়ি কোনো গেম হারেননি তিনি। পরপর তিন রাউন্ড জিতে স্কোর কার্ডে ববি ফিশারের নামের পাশে লেখা হলো চার আর স্প্যাসকি দুই। সাংবাদিকরা লিখলেন ১৯৭২ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ানশিপের খেতাবি লড়াইয়ের পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে।

১৯ তারিখ শনিবার দশম রাউন্ড ড্র হয়ে গেলো। কিন্তু পরের দিন রবিবার ২০ তারিখ এগারোতম রাউন্ডে বরিস স্প্যাসকি আর ববি ফিশারের মধ্যে একটা হাডাহাড্ডি লড়াই দেখলো সমস্ত দুনিয়া। এই রাউন্ডটাই ছিল এযাবৎ এই ম্যাচের সেরা। একটা সময় পর্যন্ত স্প্যাসকি এগিয়ে থাকলেও ৪১ চালের পর শেষ হাসি হাসলেন ববি ফিশার। স্কোর ফিশার পাঁচ আর স্প্যাসকি সেই দুই।

পূর্ব নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী প্রথম পাঁচ রাউন্ড কোনো পক্ষ জিতে গেলে দশ দিনের বিরতির পর বাকি ম্যাচটা খেলা হওয়ার কথা সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে। তাই ১৯৯২ সালের ৩০-শে সেপ্টেম্বর বুধবার বারো নম্বর রাউন্ডে দুপুর ঠিক সাড়ে তিনটের সময় বেলগ্রেডের টাউন হলে প্রথম চালটা দিলেন বরিস স্প্যাসকি। এই রাউন্ডে কিন্তু সেই পুরোনো আত্মবিশ্বাসী স্প্যাসকি জ্বলে উঠলেন। ব্যক্তিগত ৫৪ চালের মাথায় ববি ফিশার হার মেনে নিলেন। ব্যবধান খানিকটা কমে এলো। তখন পর্যন্ত ফিশারের পক্ষে পাঁচটা আর স্প্যাসকির তিনটে জিৎ।

কিন্তু ববি ফিশারকে থামানো গেলো না। এরপর শুধু ২০ আর ২৬ নম্বর রাউন্ডে জিতেছিলেন বরিস স্প্যাসকি। খেলা ৩৬ রাউন্ডে পর্যন্ত গড়ালো না। ১৬, ১৭, ২১, ২৫ আর শেষে ১৯৯২ সালের ৫-ই নভেম্বর ৩০ নম্বর রাউন্ড জিতে ম্যাচ শেষ করে দিলেন ববি ফিশার। ফাইনাল স্কোর কার্ড দাঁড়ালো ববি ফিশার দশ আর বরিস স্প্যাসকি পাঁচ। মোট তিরিশ রাউন্ডের মধ্যে পনেরোটা ড্র।

১৯৯২ সালের পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে পাঁচই নভেম্বর এই ম্যাচ শেষ হওয়া পর্যন্ত মোট দশবার সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন ববি ফিশার আর বরিস স্প্যাসকি। চুক্তি অনুযায়ী ম্যাচে জয়ী হিসাবে ববি ফিশারের নামে ৩.৩৫ মিলিয়ান ডলার জমা করা হলো ইউনিয়ান ব্যাংক অফ সুইজারল্যান্ডে। আর বরিস স্প্যাসকির প্রাপ্য ১.৬৫ মিলিয়ান ডলার পাঠিয়ে দেওয়া হলো তাঁর প্যারিসের ব্যাংক একাউন্টে।

১৯৯২ সালের এই ম্যাচ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই মার্কিন প্রশাসন ববি ফিশারকে এরেস্ট করার জন্যে তোড়জোড় শুরু করে দিলো। কিন্তু তখনও সারা পৃথিবী জুড়ে ববি ফিশারের ভক্ত তথা শুভানুধ্যায়ীর সংখ্যা ছিল বিশাল। আমেরিকা বিরোধী বিভিন্ন দেশের অসংখ্য রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ফিশারের সাহায্যে এগিয়ে এলেন। গ্রেফতারি এড়ানোর জন্যে পালিয়ে বেড়ানো ছাড়া কোনো উপায় ছিল না ববি ফিশারের।  এই ব্যাপারেও কাজে এলেন সেই হাঙ্গেরিয়ান তরুণী চেস মাস্টার জিটা রাজ্যাক্স্যানি। তার পরামর্শে ববি ফিশার প্রথমে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্ট শহরে এসে আত্মগোপন করে থাকলেন কিছুদিন। ববি ফিশারের সাথে জিটা রাজ্যাক্স্যানির নাম জড়িয়ে বেশ কিছু মুখরোচক কাহিনী তখন আমেরিকা আর ইউরোপের বিভিন্ন ট্যাবলয়েডগুলোতে ছাপা হতে থাকে বেশ কিছুদিন। কিন্তু জিটা রাজ্যাক্স্যানি ছিলেন বয়সে ববি ফিশারের থেকে ২৯ বছরের ছোট। যেহেতু তাঁর কথাতেই দীর্ঘ কুড়ি বছর কোনো রকম প্রতিযোগিতামূলক দাবা খেলা থেকে দূরে থাকলেও ববি ফিশার ১৯৯২ সালে বরিস স্প্যাসকির সাথে ম্যাচ খেলতে রাজি হয়েছিলেন তাই অনেকেই তাদের সম্পর্কের মধ্যে একটা প্রেমের ছায়া খুঁজে পেলেন। কিন্তু পরে জিটা রাজ্যাক্স্যানি এই ধরনের কোনো সম্পর্কের কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। তিনি শুধু বলেছিলেন খুব ছোটবেলা থেকেই ববি ফিশার ছিলেন তাঁর স্বপ্নে দেখা আদর্শ পুরুষ। এর বেশি কিছু না। আর ববি ফিশার তো এই সমস্ত ব্যাপারে মুখই খুলতেন না।

এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও একটা বড়সড় রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়ে গেছে। ১৯৯৩ সালের ২০-শে জানুয়ারি আমেরিকার ৪২-তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে হোয়াইট হাউসে শপথ নিলেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির বিল ক্লিন্টন। তিনি তাঁর পূর্বসূরি জর্জ বুশের (সিনিয়ার) সই করা ববি ফিশারের এরেস্ট ওয়ারেন্ট নিয়ে খুব বেশি বাড়াবাড়ি করার পক্ষে ছিলেন না। ফলে ববি ফিশারের অবস্থান সম্বন্ধে ‘এফ বি আই’-এর কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য থাকলেও মার্কিন প্রশাসন বিশেষ মাথা ঘামালো না। এর পিছনেও সম্ভবত দুটো কারণ ছিল। প্রথমত রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ থাকলেও সারা আমেরিকায় জনমানসে ববি ফিশারের প্রতি তখনো একটা প্রচ্ছন্ন সহানুভূতি কাজ করছিলো। তাই ফিশারকে গ্রেফতার করলে ক্লিন্টন সরকারের উপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনার ছিল। দ্বিতীয়ত, সেই সময় হাঙ্গেরির সাথে আমেরিকার বন্দী প্রত্যার্পণ চুক্তি ছিল না।

যাই হো্‌ক, অবস্থা খানিকটা নিরাপদ বুঝে ববি ফিশার বুদাপেস্টে প্রকাশ্যে এলেন। দানিয়ুব নদীর তীরে মাঝে মাঝে তাঁকে পায়চারি করতে দেখেছিলেন অনেকে। এই সময় তিনি নতুন ধরনের কিছু চেস গেম যেমন ‘Chess960’  ইত্যাদি নিয়ে বেশ কিছু এক্সপেরিমেন্ট করেন। এই ‘Chess960’ খেলাটার আরেকটা নাম হলো ‘Fischer Random’। এরও একটা ইতিহাস আছে। ববি ফিশার মনে করতেন ক্রমাগত নির্দিষ্ট কিছু কপিবুক ওপেনিং আর বিপক্ষের ধরাবাঁধা পাল্টা স্ট্রাটেজির ব্যবহারে দাবা খেলার বৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। সেখানে খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত বুদ্ধিমত্তা আর তাৎক্ষণিক উদ্ভাবনী শক্তি প্রকাশের সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। ১৯৯৬ সালের মাঝামাঝি ববি ফিশার আর্জেন্টিনা যান। সেই বছর জুন মাসের ১৯ তারিখ আর্জেন্টিনা চেস ফেডারেশনের (FADA) উদ্যোগে ‘লা প্লাতা’-য় ববি ফিশার ‘Fischer Random’ খেলার উদ্বোধন করেন। এই স্টাইলে দাবার বোর্ডে গুটিগুলো প্রথাগত নিয়মে সাজানো থাকতো না। একটা বিশেষ নিয়ম মেনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হতো সেগুলো। এর ফলে কোনো নির্দিষ্ট গৎবাঁধা খেলার পরিবর্তে নিজেদের সহজাত প্রতিভার উপর নির্ভর করতে বাধ্য হতেন খেলোয়াড়েরা। সারা পৃথিবীতে প্রচণ্ড প্রশংসিত হয় এই নতুন পদ্ধতির দাবা খেলা। এর পর থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় এই নিয়মে বেসরকারি ভাবে বহু আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলা হলেও অফিসিয়াল স্তরে বহুদিন এর কোনো স্বীকৃতি ছিল না। অবশ্য অনেক পরে ববি ফিশারের উদ্ভাবিত দাবা খেলার এই অত্যন্ত জনপ্রিয় সংস্করণকে বিশ্ব দাবা নিয়ামক সংস্থা ‘এফ আই ডি ই’ অর্থাৎ ফিডে ২০০৮ সালে তাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। আন্তর্জাতিক স্তরে ২০১৯ সালে ফিডের তত্বাবধানে প্রথমবার World Fischer Random Chess Championship অনুষ্ঠিত হয় নরওয়েতে। চ্যাম্পিয়ান হয়েছিলেন ফিলিপিন্সের ওয়েসলি বার্বাসা সো। দাবা খেলার আরো কিছু নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করেছিলেন ববি ফিশার। যেমন ষড়কোণ বা ষড়ভুজাকার দাবার বোর্ড। এখানে প্রচিলিত সাদা আর কালোর পরিবর্তে বিভিন্ন রঙের গুটি নিয়ে একসাথে তিনজনের দাবা খেলার সুযোগ ছিল।

১৯৯৭ সালের ২৭-শে জুন ক্যালিফোর্নিয়ায় চুরাশি বছর বয়সে মারা গেলেন ফিশারের মা রেজিনা ওয়েন্ডার। বুদাপেস্টে বসেই মায়ের মৃত্যু সংবাদ পেলেও শেষ যাত্রায় যেতে পারলেন না ববি ফিশার। তবে আরো একটা স্বজন বিয়োগের কষ্ট পাওয়া বাকি ছিল। ১৯৯৮ সালের ২-রা জুন স্বামী আর দুই পুত্রকে রেখে ক্যালিফোর্নিয়ায় ষাট বছর বয়সে মারা গেলেন ফিশারের ভীষণ প্রিয় দিদি জোয়ান।

১৯৯৮-৯৯ সালে ববি ফিশার তরুণ হাঙ্গেরীয়ান গ্র্যান্ডমাস্টার পিটার লিকো-র বাড়িতে বেশ কিছু দিন অতিথি ও মেন্টর হিসাবে থেকেছিলেন। এই পিটার লিকো-র অন্য একটা বিশেষ পরিচয় ছিল। ১৯৯৪ সালে মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে তিনি ববি ফিশারের রেকর্ড ভেঙে পৃথিবীর কনিষ্টতম গ্র্যান্ডমাস্টার হিসাবে বিখ্যাত হন।

একই জায়গায় বহুদিন থাকার বিপদ বুঝতে পেরে ২০০০ সাল নাগাদ হাঙ্গেরি ছেড়ে ববি ফিশার গ্র্যান্ডমাস্টার ইউজিনিও তোরের প্রস্তাব মেনে ফিলিপিন্সের শৈল শহর বাগুইও সিটিতে এসে থাকতে আরম্ভ করলেন। ১৯৭৪ সালে মাত্র বাইশ বছর বয়সে এশিয়া মহাদেশ থেকে প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়া ছাড়াও ইউজিনিও তোরে ছিলেন ১৯৯২ সালে যুগোস্লাভিয়ায় বরিস স্প্যাসকির সাথে সেই বিতর্কিত ম্যাচে ববি ফিশারের সেকেন্ডস। খুব সম্ভবত এই সময়ে ইউজিনিও তোরের মাধ্যমেই মেরিলিন ইয়াং নামে বাইশ বছর বয়সী এক ফিলিপিন তরুণীর সান্নিধ্যে আসেন ববি ফিশার। ২০০১ সালের ২১-শে মে মেরিলিন এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিলেন। নাম রাখা হয় জিঙ্কি ইয়াং। অনেক পরে মেরিলিন দাবি করেছিলেন জিঙ্কির জন্মদাতা পিতা ছিলেন ববি ফিশার। দাবি ঠিক ছিল না ভুল সেই প্রসঙ্গে পরে আসবো।

এদিকে ২০০১ সালের ১১-ই সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ইসলামিক জঙ্গি সংগঠন ‘আল কায়দা’ স্থানীয় সময় সকাল আটটা বেজে ছেচল্লিশ মিনিট থেকে দশটা বেজে আঠাশ মিনিটের মধ্যে নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার সমেত মোট চার জায়গায় এরোপ্লেন আর মানব বোমা ব্যবহার করে অতর্কিতে ভয়ংকর আর ব্যাপক নাশকতা ঘটায়। আল কায়দার আত্মঘাতী বাহিনীর ১৯ জন সদস্য সমেত মোট ২৯৯৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। গুরুতর আহতের সংখ্যা ছিল পঁচিশ হাজারেরও বেশি। এক লহমায় এই বীভৎস কাহিনী ছড়িয়ে পড়ে সাড়া দুনিয়ায়। ভারতবর্ষ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এই নারকীয় ঘটনার তীব্র নিন্দা করে।

এই ঘটনার কিছুক্ষণ পরে ফিলিপিন্সের বোম্বো রেডিও-র সঞ্চালক পাবলো মার্কাডো ববি ফিশারের কাছে এই সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলেন। মারাত্মক জবাব দিলেন ফিশার। জঙ্গি হানাকে তিনি সমর্থন করে বসলেন। প্যালেস্টানীয়দের নির্বিচারে নির্মম হত্যাকাণ্ডের পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরায়েলের পররাষ্ট্রনীতির প্রচণ্ড সমালোচনা করা ছাড়াও ওই দুই দেশের মিলিত ষড়যন্ত্রের অভিযোগ সামনে আনলেন ফিশার। সেখানেই থামলেন না তিনি। জানালেন এশিয়া আর আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশের উপর আমেরিকার দাদাগিরির অবসানের জন্যে এই মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটা সামরিক অভ্যুত্থান ভীষণ জরুরি।

এই রেডিও সাক্ষাৎকারের বিবরণী পৌঁছালো খোদ আমেরিকায়। ‘ইউ এস এ চেস ফেডারেশন’ তৎক্ষণাৎ ববি ফিশারের প্রাথমিক সভ্যপদ বাতিল করে দিলো। এদিকে আমেরিকায় বিল ক্লিনটনের জমানা তখন শেষ হয়ে গেছে। ২০০১ সালের ২০-শে জানুয়ারি হোয়াইট হাউসে দেশের ৪৩-তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিয়েছেন রিপাবলিকান পার্টির জর্জ ডব্লিউ বুশ। তিনি এবার ১৯৯২ সালের  ২-রা সেপ্টেম্বর তারিখে তাঁর বাবার সই করা ববি ফিশারের এরেস্ট ওয়ারেন্ট কার্যকর করার জন্যে উঠে পড়ে লাগলেন। খুঁচিয়ে তোলা হলো ১৯৭৭ সালে ববি ফিশারের বিরুদ্ধে ট্যাক্স কম জমা দেওয়ার অভিযোগও। কর খেলাপের আইনি ধারায় নতুন করে মামলা রুজু করলো মার্কিন প্রশাসন।

আসলে ববি ফিশার বরাবরই ছিলেন স্পষ্টবক্তা। ২০০০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত এই দু‘বছরে ফিলিপিন্সে তিনি অন্তত পঞ্চাশটা সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন বিভিন্ন টিভি আর রেডিও চ্যানেলে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নানা প্রসঙ্গে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। কিন্তু দেশের প্রেসিডেন্টের কাছে ফিশারের এবারের বক্তব্য ছিল এক অমার্জনীয় অপরাধের সমতুল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ মানুষজনদের কাছেও ববি ফিশারের এই বক্তব্যের গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। রাতারাতি নায়ক থেকে তখন খলনায়কে পরিণত হলেন তিনি। নিজের দেশ থেকে ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হতে লাগলেন ববি ফিশার। ২০০২ সালের প্রথম দিকে পিটার নিকোলাস এবং ক্লেয়া বেনসন নামে ‘ফিলাডেলফিয়া ইনকোয়ারার’ পত্রিকার দু’জন সাংবাদিক একটা তদন্তমূলক প্রতিবেদন লিখে প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন যে কোনো ভাবেই ববি ফিশারের প্রকৃত পিতা জার্মান অধ্যাপক হ্যান্স গেরহার্ড ফিশার হতে পারেন না। প্রমাণ হিসাবে তাঁরা ‘এফ বি আই’-এর তৎকালীন প্রধান জন এডগার হুভারের সই করা একটা গোপন রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনলেন। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৩৯ সালে রেজিনা তাঁর মেয়ে জোয়ানকে নিয়ে মস্কো ছেড়ে আসার পর থেকে ১৯৪৫ সালে দুজনের মধ্যে ডিভোর্স হওয়ার আগে পর্যন্ত হ্যান্স গেরহার্ড আর কোনোদিনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসেননি। আসলে রেজিনার সোভিয়েত প্রীতি আর জার্মান কানেকশনের জন্যে তাঁদের পরিবারের উপর দীর্ঘদিন মার্কিন গোয়েন্দা দফতরের গোপন নজরদারি ছিল। প্রতিবেদনে বলা হলো ১৯৪২ সালে পল নিমেনেই নামে ইহুদি বংশজাত এক হাঙ্গেরীয় গণিতবিদের সংস্পর্শে আসেন রেজিনা ফিশার। এরপর দুজনের প্রেম আর তার ফলশ্রুতিতে ববি ফিশারের জন্ম। অতিরিক্ত প্রমাণ হিসাবে তাঁদের দুজনের নিজেদের মধ্যে লেখা ব্যক্তিগত বেশ কিছু চিঠিপত্র আর রেজিনার ব্যাংক একাউন্টের কিছু স্টেটমেন্ট প্রকাশ করা হলো। দেখানো হলো ববি ফিশারের জন্মের পর তাঁর ভরণপোষণ আর স্কুলিংয়ের জন্যে নিয়মিত টাকা পাঠাতেন পল নিমেনেই। এছাড়াও ওই দুই সাংবাদিক পল নিমেনেই-এর বড়ো ছেলে পিটার নিমেনেই-এর একটা চিঠি প্রকাশ্যে আনলেন। সেখানে দেখা যায় ববি ফিশারকে নিজের দাদা বলে উল্লেখ করেছেন পিটার। এই ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া জানালেন না ববি ফিশার।

ফিশার ভালোই বুঝতে পারছিলেন মার্কিন প্রশাসনের নির্দেশে যে কোনো মুহূর্তে তিনি গ্রেফতার হতে পারেন। জাপানের চারবারের জাতীয় মহিলা চেস চ্যাম্পিয়ান মিয়কো ওয়াতাই ছিলেন ফিশারের এক গুণমুগ্ধ ভক্ত। জাতীয় চ্যাম্পিয়ান হওয়া ছাড়াও সেই সময় জাপান চেস এসোসিয়েশনের চেয়ারপার্সন ছিলেন তিনি। এই মিয়কো ওয়াতাই-এর পরামর্শে ২০০২ সালের শেষ দিকে ববি ফিশার জাপানে গিয়ে থাকতে আরম্ভ করেন। তবে মাঝে মাঝে ঠিকানা বদল করে ফিলিপিন্সে এসেও আত্মগোপন করে থাকতেন তিনি। কয়েকবার জার্মানিতেও দেখা গেছে তাঁকে।  এদিকে মার্কিন প্রশাসন কিন্তু বসে ছিল না। তারাও সুযোগের অপেক্ষায় রইলো। অবশেষে সেই সুযোগ এসেও গেলো।

২০০৪ সালের ১৩-ই জুলাই ভোর বেলায় টোকিওর নারিতা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে আমেরিকার বুশ প্রশাসনের নির্দেশে জাপান সিকিউরিটি সার্ভিসের পুলিশ বাহিনী ববি ফিশারকে মেয়াদ উত্তীর্ণ ভিসা ব্যবহার করার অভিযোগে অতর্কিতে গ্রেফতার করে। ববি ফিশার তখন জাপান এয়ারলাইন্সের বিমানে ফিলিপিন্সের ম্যানিলায় যাওয়ার জন্যে এয়ারপোর্টে চেক ইন করছিলেন। ববি ফিশারের কাছে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী বার্ন শহরে মার্কিন এমব্যাসি থেকে ১৯৯৭ সালে ইস্যু করা বৈধ পাসপোর্ট ছিল। ২০০৩ সালে ভিসা রিনিউ করার জন্যে আবেদন করেছিলেন তিনি। তাঁর নথিও দেখান। কিন্তু জাপান পুলিশ কোনো কিছুই শুনলো না। কারণ হিসাবে বলা হলো ১৯৯২ সালে যুগোশ্লোভিয়ায় চেস ম্যাচে অংশগ্রহণ করার জন্যে তাঁর বিরুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যে এরেস্ট ওয়ারেন্ট জারি করেছিলেন তার জেরে ২০০৩ সালের নভেম্বর মাসে তাঁর পাসপোর্টটাই বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ববি ফিশারের কাছে এই ব্যাপারে কোনো খবর ছিল না। এই নিয়ে এয়ারপোর্টে ববি ফিশারের সাথে কয়েকজন পুলিশ অফিসারের প্রথমে তর্কাতর্কি আর পরে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। হাতাহাতিতে ফিশারের মুখে কয়েক জায়গায় কেটে রক্ত বেরোনো ছাড়াও সামনের দিকে একটা দাঁত ভেঙে যায়। এই অবস্থায় ফিশারকে টোকিও থেকে প্রায় আশি কিলোমিটার দূরে উশিকু নামে একটা ছোট শহরে ষোলো দিনের জন্যে ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক করে রাখে জাপান পুলিশ। পুলিশের হাতে এয়ারপোর্টে রক্তাক্ত ববি ফিশারের গ্রেফতার হওয়ার ছবি সমেত সমস্ত ঘটনা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে নিমেষের মধ্যে। প্রতিবাদের ঝড় ওঠে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে। প্রশ্ন ওঠে ফিশার কি কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল? সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে যুগোস্লাভিয়ায় ১৯৯২ সালে কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়াটা কি অপরাধের পর্যায়ে পড়ে? যদি সেটা অপরাধ হয় তাহলে একই অভিযোগে আমেরিকার বন্ধু দেশ ফ্রান্স বরিস স্প্যাসকির বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিলো না কেন?

টোকিওর নারিতা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে রক্তাক্ত ববি ফিশার।

এয়ারপোর্টে সমস্ত ঘটনাটার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন কানাডার আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন জার্নালিস্ট জন বসনিচ। ১৯৯২ সালে যুগোশ্লোভিয়ায় ববি ফিশার আর বরিস স্প্যাসকির সেই বিতর্কিত ম্যাচের পুরোটাই কভার করেছিলেন তিনি। জন বসনিচের উদ্যোগে তড়িঘড়ি জাপানের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে ‘কমিটি টু ফ্রি ববি ফিশার’ নামে একটা সংগঠন তৈরী হলো। ববি ফিশারকে সব রকম আইনি সহায়তা দিয়ে জেল থেকে ছাড়ানোর দায়িত্ব নিলো সেই কমিটি। আমেরিকার সাথে জাপান সরকারের কূটনৈতিক স্তরে বাধ্যবাধকতা থাকলেও দেশের বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে ফিশারের জন্যে প্রচ্ছন্ন সহানুভূতি ছিল। হিরোশিমা আর নাগাসাকির ক্ষত তখনও টাটকা। আমেরিকার দাদাগিরি বরদাস্ত করার মানসিকতা একেবারেই ছিলো না তাঁদের। আশ্চর্য ব্যাপারটা দেখুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বহুদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ জাপানের জনগণ উগরে দিলেন একজন আমেরিকানের জন্যে।

পরবর্তী পর্বের লিংক : শতাব্দীর সেরা দ্বৈরথ (সপ্তম পর্ব)

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।