সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

শতাব্দীর সেরা দ্বৈরথ (চতুর্থ পর্ব)

শতাব্দীর সেরা দ্বৈরথ (চতুর্থ পর্ব)

আগস্ট ১২, ২০২০ ৮৮০ 1

পূর্ববর্তী পর্বের লিংক : শতাব্দীর সেরা দ্বৈরথ (তৃতীয় পর্ব)

১৯৭২ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ানের খেতাব জয়ের পর থেকে ববি ফিশার বাস্তবিক অর্থে কোনো অফিসিয়াল চেস টুর্নামেন্টে অংশ নিলেন না। ১৯৭৫ সালে খেতাব রক্ষার লড়াইয়ে ওয়ার্ল্ড চেস ফেডারেশন তাঁর খেতাব বাজেয়াপ্ত করলেও তিনি লিখিত ভাবে কোনো প্রতিবাদ জানাননি।  ১৯৭৭ সালে তিনি একবার ম্যাসাচুসেটস গিয়েছিলেন। সেখানে ‘ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’-র বিখ্যাত কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ রিচার্ড গ্রিনব্ল্যাট কৃত্রিম মেধার সাহায্যে এক বিশেষ ধরণের চেস খেলার প্রোগ্রামিং তৈরী করে ববি ফিশারকে খেলতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। গ্রিনব্ল্যাটের দাবি ছিল যে তার কম্পিউটার পৃথিবীর যে কোনো গ্র্যান্ডমাস্টারকে রুখে দিতে সক্ষম। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হলো তিনবার খেলে তিনবারই জিতলেন ফিশার। এরপর তিনি লস এঞ্জেলসে গিয়ে কিছুদিন ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড চার্চ অফ গড’-এর বেশ কিছু সেবামূলক কাজকর্মের সাথে নিজেকে যুক্ত রাখেন। সত্যি কথা বলতে গেলে তিনি ১৯৭২ সালের চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচ থেকে পাওয়া প্রাইজ মানির বেশির ভাগটাই এই সংস্থার মাধ্যমে খরচ করে ফেলেন। ১৯৮১ সালের প্রথমদিকে তিনি কয়েকদিনের জন্যে ক্যালিফোর্নিয়ায় গ্রান্ডমাস্টার পিটার বিয়িসাস-এর আমন্ত্রণে তাঁর বাড়িতে চার মাস অথিতি হিসাবে ছিলেন। এই পিটার বিয়িসাস ১৯৭২ আর ১৯৭৭ সালে কানাডার দাবায় জাতীয় চ্যাম্পিয়ান হওয়া ছাড়াও চারবার আন্তর্জাতিক চেস অলিম্পিয়াড আর দুবার ইন্টারজোনাল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অনেক পরে ‘স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড’ ম্যাগাজিনে রিপোর্টার উইলিয়াম ন্যাকের সাথে এক ইন্টারভিউতে পিটার বিয়িসাস স্বীকার করেছিলেন যে তাঁর বাড়িতে থাকার সময় ববি ফিশারের সাথে সতেরো সিরিজের চেস স্পিড ম্যাচ খেলে সবকটাতেই বিচ্ছিরি ভাবে হারেন তিনি। ফিশারের বিদ্যুৎ গতি চালের সামনে প্রত্যেকবারই তিনি উড়ে যান।

কিন্তু কালের নিয়মে প্রচারের আলো থেকে ববি ফিশার ধীরে ধীরে সরে যেতে লাগলেন। এর পিছনে একটা অন্য কারণও ছিল। খুব ছোটবেলা থেকেই ববি ফিশার ছিলেন জার্মানির ফুয়েরার এডলফ হিটলারের প্রচণ্ড ভক্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষিতে ইতিহাসবিদ উইলিয়াম শাইরারের লেখা ‘দ্য রাইজ এন্ড ফল অফ থার্ড রাইখ’ খুব মন দিয়ে পড়েছিলেন তিনি। ১৯২৫ সালে জার্মানিতে প্রকাশিত এডলফ হিটলারের আত্মজীবনীমূলক ‘মাইন কাম্ফ’ বইটা সবসময় কাছে থাকতো তাঁর। এডলফ হিটলারের উপর লেখা যে কোনো বই বা লেখা পেলেই তিনি খুব মন দিয়ে পড়তেন। ব্যক্তিগত ভাবে তিনি হিটলারের অনাড়ম্বর জীবনযাত্রায় এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে তাঁর অনুকরণে মদ্যপান বা ধূমপান করা থেকে নিজেকে শতহস্ত দূরে রাখতেন ববি ফিশার। পৈতৃক সূত্রে ধমনীতে জার্মান রক্ত থাকার কারণে নিজেকে একজন আমেরিকান ভাবার চাইতে জার্মান ভাবতে ভালোবাসতেন তিনি। সম্ভবত এই অত্যধিক হিটলার-প্রীতির জন্যেই মাঝে মধ্যে ববি ফিশার ইহুদিদের বিরুদ্ধে অবাঞ্ছিত মন্তব্য করে বসতেন। অথচ ববি ফিশারের মা রেজিনা কিন্তু ইহুদি বংশজাত ছিলেন। আশ্চর্য ব্যাপার হলো ফিশার মায়ের এই পরিচয়টাকে কোনো গুরুত্বই দিতেন না। তাছাড়া ১৯৬১ সালে সিরিল পুস্তান নামে নিজের থেকে প্রায় ষোলো বছরের ছোট এক ইংরেজ যুবককে বিয়ে করেছিলেন রেজিনা ফিশার। এই নিয়ে ববি ফিশারের সঙ্গে তাঁর মায়ের সম্পর্কের যথেষ্ট টানাপোড়েন ছিল। ১৯৭৭ সালের ৮-ই সেপ্টেম্বর মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়সে সিরিল পুস্তান মারা যাওয়ার পরও মায়ের সঙ্গে ফিশারের সম্পর্ক কোনোদিনই আর স্বাভাবিক হয়নি। তবুও দিদি জোয়ানের বিয়ের পর থেকে নিজে একা আলাদা থাকলেও মায়ের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন ববি ফিশার।

মা রেজিনা ফিশারের সাথে ছেলেবেলায় ববি ফিশার

মাঝে মাঝে হঠাৎ করে বিভিন্ন কারণে খবরের শিরোনামে চলে এলেও মাঝে মধ্যে এই ইহুদি-বিদ্বেষী মন্তব্যের জন্যে আমেরিকায় ববি ফিশারের জনপ্রিয়তার গ্রাফ তখন নিম্নমুখী। যেমন একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। ববি ফিশার ভীষণ অনাড়ম্বর জীবন যাপন করতেন। সেই সময় অর্থের অভাবে তিনি লস এঞ্জেলসের কাছে পাসাডেনা বলে একটা ছোট শহরতলিতে খুব সস্তার হোটেলে ঘর ভাড়া নিয়ে একাই থাকছেন। আয় বলতে তাঁর লেখা বইগুলোর রয়ালটি বাবদ পাওয়া সামান্য অর্থ্য। সেটাও আবার অনিয়মিত। তবে মা জোয়ান মাঝে মধ্যে ছেলেকে তাঁর পেনশন থেকে কিছু অর্থ সাহায্য করতেন। ১৯৮১ সালের ২৬-শে মে সেই পাসাডেনা শহরে একদিন বিকেলে রাস্তায় হাঁটার সময় ভ্রাম্যমান পুলিশের একটা দল আচমকা ববি ফিশারকে গ্রেফতার করে বসে। কাছেই কোনো ডাকাতির ঘটনায় যুক্ত কোনো দাগী ক্রিমিনালের সাথে চেহারার সাদৃশ্যের জন্যেই নাকি এই ভুল হয়েছিল বলে পরে ক্ষমাও চায় পুলিশ। কিন্তু এই ঘটনায় প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত ফিশার ‘আই ওয়াজ টর্চার্ড ইন পাসাডেনা জেলহাউস’ নাম দিয়ে চোদ্দ পাতার প্যামফ্লেট ছাপিয়ে  বিলি করেন। অভিযোগ করেন তাকে দুদিন ধরে হেনস্থা করেছে পুলিশ। এমনকি জামিনে ছাড়া পাওয়ার জন্যে তাকে নাকি এক হাজার ডলার খেসারত দিতে হয়েছিল। এই ঘটনার পিছনে সরকারের কোনো ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলে অভিযোগ আনেন তিনি।

এদিকে বরিস স্প্যাসকি কিন্তু দাবা খেলার জগতে তখনও বিচরণ করে চলেছেন। এর মধ্যে ১৯৭৮ সালে সোভিয়েত রাশিয়া ছেড়ে ফ্রান্সের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন তিনি। কিন্তু এতো দেশ থাকতে হঠাৎ ফ্রান্স কেন ?

এর পিছনে অবশ্য দুটো কারণ ছিল। প্রথমটা ছিল নিতান্তই তাঁর পরিবার সংক্রান্ত। বরিস স্প্যাসকি ১৯৫৯ সালে নাদেজডা কনস্টান্টিনোভা নামে স্বদেশীয় এক তরুণীকে বিয়ে করেছিলেন। ১৯৬০ সালে তাঁদের প্রথম কন্যা সন্তান তাতিয়ানা জন্ম গ্রহণ করে। কিন্তু তাঁদের এই দাম্পত্য জীবন খুব সুখের হয়নি। মাত্র দু’বছর বাদে ১৯৬১ সালে তাঁরা আলাদা হয়ে যান। এরপর বরিস স্প্যাসকি সোভিয়েত রাশিয়ার জাতীয় সাঁতারু লারিসা জাকারোভনা সোলভিওভাকে বিয়ে করেন। তাঁদের এক মাত্র পুত্র ভ্যাসিল সোলভিওভ স্প্যাসকির জন্ম হয় ১৯৬৭ সালে। ১৯৭২ সালে ববি ফিশারের সাথে সেই ঐতিহাসিক ম্যাচের সময় স্প্যাসকির সাথে লারিসা আইসল্যান্ডের রাজধানী রেইকিয়াভিক শহরে গিয়েছিলেন। স্বামীর সাথে ম্যাচ শেষ হওয়া পর্যন্ত ছিলেন সেখানে। কিন্তু বরিস স্প্যাসকির এই বিয়েটাও শেষ পর্যন্ত টেকেনি। সম্ভবত ১৯৭৪ সালের মাঝামাঝি কোনো সময়ে দুজনের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়। ১৯৭৫ সালে মারিনা ইউরিয়েভনা শ্চের্বাচভা নামে রাশিয়ায় ফরাসি দূতাবাসের সেক্রেটারি একজন ফ্রেঞ্চ যুবতীকে বিয়ে করেন বরিস স্প্যাসকি। এই বিয়েটা সোভিয়েত সরকার ভালো চোখে দেখেনি। তাঁরা ইউরিয়েভনাকে রাশিয়া ছেড়ে ফ্রান্সে চলে যেতে বলে। এই নিয়ে স্প্যাসকি কোনো ঝামেলা চাননি। তাই তিনি স্ত্রীকে নিয়ে ১৯৭৮ সালে ফ্রান্সে গিয়ে প্যারিস শহরের উপকণ্ঠে একটা এপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়ে থাকতে আরম্ভ করেন। ১৯৮০ সালে ইউরিয়েভনা প্যারিসেই এক পুত্রের জন্ম দিলেন। বরিস স্প্যাসকি জুনিয়র।

দ্বিতীয় কারণটা ছিল অন্য। ১৯৭৪ সালে লেনিনগ্রাদে অনুষ্ঠিত ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টের  কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে বরিস স্প্যাসকি মুখোমুখি হয়েছিলেন তাঁর থেকে চোদ্দ বছরের ছোট আনাতোলি কারপভের। এই টুর্নামেন্টে যিনি জিতবেন তাকেই ১৯৭৫ সালের ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের চ্যালেঞ্জার হিসাবে মনোনীত করা হবে। তাই নিজের হারানো খেতাব পুনরুদ্ধার করার জন্যে বরিস স্প্যাসকির কাছে এই টুর্নামেন্টের প্রত্যেকটা রাউন্ড জেতা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এর আগে আনাতোলি কারপভকে বেশ কয়েকবার হারিয়েছিলেন তিনি। তাই স্প্যাসকির পক্ষে এই ম্যাচটা জেতা খুব কঠিন ব্যাপার ছিল না। কিন্তু সোভিয়েত চেস ফেডারেশন সম্ভবত ১৯৭৫ সালের খেতাবি লড়াইতে ববি ফিশারের চ্যালেঞ্জার হিসাবে বর্ষীয়ান বরিস স্প্যাসকিকে দেখতে চাইছিলো না। কম্যুনিস্ট রাশিয়ায় একবার হেরে যাওয়া মানুষকে দ্বিতীয়বার সুযোগ দেওয়ার নিয়ম নেই। তাই তাঁরা ববি ফিশারের প্রতিপক্ষ হিসাবে তরুণ আনাতোলি কারপভকে তুলে ধরতে চাইলেন| এমনিতে কারপভের সেকেন্ডস বা সহকারী হিসাবে বেশ কয়েকজন বিখ্যাত রুশ গ্র্যান্ডমাস্টারকে নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু ম্যাচের ঠিক আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে বরিস স্প্যাসকির দীর্ঘ দিনের সহকারী এফিম গেলার যোগ দিলেন বিপক্ষ শিবিরে। ফলে স্প্যাসকির সমস্ত সম্ভাব্য স্ট্রাটেজি ফাঁস হয়ে গেলো কারপভের কাছে। ফলে সেই কোয়ার্টার ফাইনালে আনাতোলি কারপভের কাছে খুব দৃষ্টিকটু ভাবে হেরে গেলেন বরিস স্প্যাসকি। এই ঘটনাটা স্প্যাসকি তাঁর বিরুদ্ধে চেস ফেডারেশনের একটা চক্রান্ত হিসাবেই দেখলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে সোভিয়েত রাশিয়ায় থেকে তিনি কোনোদিনই খেতাব ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে জিতে আসতে পারবেন না। তাই ক্ষুব্ধ বরিস স্প্যাসকির ফ্রান্সের নাগরিকত্ব নেওয়ার পিছনে এটাও একটা কারণ ছিল।

এরপর বিভিন্ন চেস অলিম্পিয়াডে ফ্রান্সের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে লাগলেন স্প্যাসকি। ১৯৮৫ সালে ফ্রান্সের মন্টপেলিয়ার শহরে আয়োজিত ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টে শেষবারের মতো খেলে বিশ্ব খেতাব ফিরে পাওয়ার চেষ্টা ছেড়ে দিলেও ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর নানা প্রান্তে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশ নিয়েছেন তিনি। এছাড়াও বরিস স্প্যাসকি হলেন দাবার দুনিয়ায় বিরলতম সেই ব্যক্তি যিনি অন্তত ছয় জন অবিসংবাদী বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান ভ্যাসিলি সিমিস্লভ, মিখাইল তাল, টাইগ্রেন পেট্রোসিয়ান, ববি ফিশার, আনাতোলি কারপভ আর গ্যারি কাসপারভকে তাঁদের একেবারে শিখরে অবস্থানকালে না হলেও কোনো না কোনো সময় অন্তত পক্ষে দু’বার হারিয়েছিলেন। তাঁর খেলার খুঁটিনাটি নিয়ে প্রচুর বই লেখা হয়েছে। যার বেশির ভাগই ছিল সমসাময়িক তথা ভবিষ্যতের বিখ্যাত দাবাড়ুদের কাছে বাইবেলের মতো। ববি ফিশারও কিন্তু ১৯৭২ সালের সেই ঐতিহাসিক দ্বৈরথের সময় বরিস স্প্যাসকির আগের একশোটা বিখ্যাত খেলার স্কোর কার্ড বিশ্লেযণ করে লেখা একটা বই সবসময় সাথে রাখতেন। কিন্তু ববি ফিশার আর বরিস স্প্যাসকির মধ্যে কে বেশি প্রতিভাধর তা নিয়ে বিভিন্ন দেশের এক্সপার্ট আর সমালোচকদের মধ্যে নিরন্তর বিতর্ক চলতে থাকলেও সর্বকালের শ্রেষ্ঠ এই দুই দাবাড়ু যেন সামান্য অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়লেন আনাতোলি কারপভ আর গ্যারি কাসপারভদের রাজত্বে।

১৯৮৮ সালের শেষদিকে ববি ফিশার আরেকবার প্রচারের আলোয় চলে এলেন। সেটা অবশ্য অন্য একটা কারণে| দাবার জগতের সাথে তার কোনো রকম সম্পর্কই নেই। আশ্চর্য ব্যাপার হলো সেই ঘটনার সাথে বরিস স্প্যাসকির একটা সামান্য যোগাযোগ ছিল। ১৯৮৮ সালের মাঝামাঝি স্প্যাসকি পশ্চিম জার্মানির সিহেইম শহরে বুন্দেশলিগা চেস টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে পেত্রা স্টেডলার নামে এক জার্মান তরুণীর সংস্পর্শে আসেন। কয়েকদিনের কথাবার্তায় তিনি বুঝতে পারেন মেয়েটা ববি ফিশারের প্রচণ্ড অনুরাগিণী আর অন্ধ ভক্ত। বয়সে অনেক ছোট মেয়েটার উপর বরিসের একটা পিতৃসুলভ স্নেহ জন্মায়। অনেকবার অনুরোধের পর পেত্রা স্টেডলারকে তিনি লস এঞ্জেলসে ববি ফিশারের ঠিকানা দিয়ে দিলেন। সাথে এটাও বলে দিলেন প্রথমে ববি ফিশারের কাছে নিজের একটা ছবি শুদ্ধ চিঠি পাঠিয়ে দেখতে যে কোনো উত্তর আসে কিনা। স্প্যাসকি নিশ্চিন্ত ছিলেন ফিশার এই সব পাত্তাই দেবেন না। এরপর পেত্রা স্টেডলার নিজের ব্যক্তিগত ফোন নম্বর উল্লেখ করে একটা পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গিন ছবি সমেত চিঠি পাঠান লস এঞ্জেলসে। খুব সম্ভবত স্টেডলার কোনো উত্তর পাবেন বলে আশাও করেননি। কিন্তু অবাক হওয়ার কিছু বাকি ছিল। সুদূর ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ববি ফিশার ফোন করলেন পেত্রা স্টেডলারকে। কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলার পর লস এঞ্জেলসে এসে দেখা করার জন্যে ফিশার আমন্ত্রণ জানান জার্মান তরুণীকে।

সেই বছরই শেষের দিকে পেত্রা স্টেডলার লস এঞ্জেলসে এসে একটা হোটেলে উঠলেন। সেই সময় ববি ফিশারের সাথে বেশ কয়েকবার দেখা করেন পেত্রা। এরপর কয়েক সপ্তাহ সেখানে কাটিয়ে জার্মান তরুণী ফিরে গেলেন তাঁর নিজের দেশ জার্মানির সিহেইম শহরে। সমস্ত ব্যাপারটা কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ার বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের চোখে পড়ে যায়। তাঁরা এর মধ্যে একটা রোমান্সের গন্ধ খুঁজে পান। কিছু কল্পনার মিশেল জুড়ে জম্পেস কিছু রসালো গল্প চাউর হতে তাই বেশি সময় লাগলো না। এখানে একটা কথা বলার আছে। ঘটনাটা তো খুব সাধারণ| এটাকে এত গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশন করা হলো কেন ? এর কারণ মেজাজ আর খামখেয়ালিপনা নিয়ে যতই অভিযোগ থাকুক না কেন,  এর আগে পর্যন্ত কোনো নারীর প্রতি ববি ফিশার দুর্বলতা দেখিয়েছেন এরকম কোনো ঘটনা কেউ শোনেননি। কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে বা পার্টিতে ববি ফিশারের সাথে কখনোই কোনো মহিলাকে দেখা যেত না। এমনকি নিজের মা বা দিদিকেও নয়।  খ্যাতির শীর্ষে থাকাকালীন একটা টিভি শোতে সঞ্চালক তাঁর কোনো বান্ধবী আছে কিনা জানতে চাওয়ায় ববি ফিশারের সপ্রতিভ উত্তর ছিল ‘গার্লস আর ওনলি ওয়েস্ট অফ টাইম’।  তাই মার্কিন মুলুকে ববি ফিশার ছিলেন সম্পূর্ণ ভাবে নারী বিবর্জিত এক চরিত্র। এহেন ফিশারের সাথে পেত্রা স্টেডলারের রোমান্টিক কাহিনী মানুষ লুফে নিলো। বাস্তবে দুজনের মধ্যে কোনো রোমান্টিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল কিনা জানা না গেলেও এতে কোনো সন্দেহ নেই পেত্রা স্টেডলারের সাথে কথাবার্তায় ববি ফিশার প্রভাবিত হয়েছিলেন। যাই হোক, ইচ্ছা থাকলেও ববি ফিশার পেত্রার সাথে জার্মানিতে আসতে পারলেন না। কারণ, সেই সময় ববি ফিশার বেশ আর্থিক দুরবস্থায় দিন গুজরান করছিলেন। সম্বল বলতে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা আইনে মায়ের সামান্য পেনশনের একটা অংশ আর চেস নিয়ে তাঁর নিজের লেখা বেশ কিছু বইয়ের থেকে অনিয়মিত ভাবে পাওয়া নিতান্তই সামান্য রয়্যালটি।

কিন্তু বছর দেড়েক বাদে সুযোগ একটা এলো। ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি ডাচ ব্যবসায়ী বেসেল ককের আমন্ত্রণে চেকোস্লোভাকিয়ার রাজধানী প্রাগে এসেছিলেন ববি ফিশার। একজন ধনী বিজনেসম্যান হওয়ার পাশাপাশি বেসেল কক ছিলেন চেক প্রজাতন্ত্রের চেস ফেডারেশনের একজন বিশিষ্ট কর্মকর্তা। তিনি ববি ফিশারের জন্যে কিছুদিন ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর আর্থিক দায়দায়িত্ব নিয়ে সমস্ত বন্দোবস্ত করে দিলেন। সেই সময় ববি ফিশার জার্মানির সিহেইম শহরে এসে বেশ কয়েক মাস থেকেছিলেন। খোদ আমেরিকায় খানিকটা ভাটা পড়লেও ইউরোপে কিন্তু তখনও ববি ফিশারের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। তিনি যেখানেই যেতেন সাংবাদিকরা ছেঁকে ধরতেন তাঁকে। তাই রিপোর্টারদের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্যে তিনি শহরের খানিকটা বাইরে ক্রমাগত এক হোটেল থেকে অন্য হোটেলে থাকতে আরম্ভ করেন। এই সময়টায় পেত্রা স্টেডলারের সাথে বহুবার দেখা করেন ফিশার। কিন্তু চেষ্টা করেও পাপারাৎজিদের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেলেন না দুজনে। সারা ইউরোপেও তাঁদের প্রেম-কাহিনী প্রচার হতে বেশি সময় লাগেনি। বছর খানেক বাদে ববি ফিশার লস এঞ্জেলসে ফিরে গেলেন।

এরপর দুজনের মধ্যে সম্পর্কের কি হয়েছিল জানা যায়নি কিন্তু ১৯৯২ সালে পেত্রা স্টেডলার রুস্তেম দাউতভ নামে একজন রুশ গ্র্যান্ডমাস্টারকে বিয়ে করে বসেন। এর বছর তিনেক বাদে ১৯৯৫ সালের প্রথম দিকে ‘ববি ফিশার- এস হি রিয়েলি ইজ-এ ইয়ার উইথ চেস জিনিয়াস’ নামে একটা বই লেখেন স্টেডলার। ওই একটা বই লিখে পেত্রা স্টেডলার রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান। প্রচুর অর্থও রোজগার করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই বইয়ে তিনি ফিশার সম্পর্কে বেশ কিছু মারাত্মক অভিযোগ তোলেন। ববি ফিশারকে খানিকটা মানসিক ভারসাম্যহীন বলে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা ছাড়াও ১৯৮৮ সালে তাঁর সাথে ফিশারের প্রথম টেলিফোনে কথোপকথনের উল্লেখ ছিল তাঁর লেখায়। ববি ফিশার প্রথমেই নাকি পেত্রার কাছে জানতে চেয়েছিলেন সে আর্য কিনা। উত্তরে স্টেডলার বলেন ‘আই থিঙ্ক সো’। এই কথাবার্তা কতদূর সত্যি তা প্রমাণ করার কোনো উপায় না থাকায় ববি ফিশারের বিরুদ্ধে জাতিগত বৈষম্যে বিশ্বাস রাখার অভিযোগ ওঠে বিভিন্ন মহলে। বরিস স্প্যাসকির হাতেও বইয়ের একটা কপি এলো। সবটা পড়ে তিনি প্রচণ্ড মর্মাহত হন। কারণ, ববি ফিশারের সাথে পেত্রা স্টেডলারের পরিচয়ের মূলে স্প্যাসকির একটা বিশেষ ভূমিকা ছিল। ১৯৯৫ সালের ২৩-শে মার্চ বরিস স্প্যাসকি ক্ষমা চেয়ে ববি ফিশারকে একটা চিঠি লেখেন। ববি ফিশার এই ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া জানালেন না। সম্পূর্ণ নিস্পৃহ ছিলেন তিনি। তবে এই ঘটনা প্রমাণ করে যে জিনিয়াস হলেও মানুষ চিনতে ভুল করেছিলেন ববি ফিশার।

ওয়ার্ল্ড চেস ফেডারেশনের (FIDE) সদর দফতর সুইজারল্যান্ডে হলেও তার বেশির ভাগ কর্মকর্তা ছিলেন রাশিয়ান। নামে আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ নিয়ামক সংস্থা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তার নিয়ন্ত্রণ ছিল সোভিয়েত চেস ফেডারেশনের হাতে। ফলে বিভিন্ন সময়ে ফিডের সিদ্ধান্তের সাথে অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিরা একমত হতে পারতেন না। উদাহরণ হিসাবে কয়েকটা ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে।

যেমন ১৯৭৫ সালে ববি ফিশারের সাথে সামনাসামনি আলোচনায় না বসে একতরফা ভাবে তাঁর খেতাব বাজেয়াপ্ত করা। এর পেছনে অনেকেই একটা রাশিয়ান ষড়যন্ত্রের আভাস পেয়েছিলেন। অনেকেরই আশঙ্কা ছিল ববি ফিশারের কাছে আনাতোলি কারপভ-এর পরাস্ত হওয়ার আশঙ্কায় সোভিয়েত চেস ফেডারেশনের চাপে ফিডে তড়িঘড়ি এই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিল।

ফিডের পরিচালনায় ১৯৭৬ সালের বিশ্ব চেস অলিম্পিয়াড ইসরায়েলে অনুষ্ঠিত হলেও সোভিয়েত দাবা ফেডারেশনের চাপে রাশিয়া, যুগোস্লাভিয়া আর হাঙ্গেরি থেকে কোনো দাবাড়ু তাতে অংশ নিলেন না। কারণ, তখনও পর্যন্ত সোভিয়েত রাশিয়া ইসরায়েলকে আলাদা কোনো রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি।

আনাতোলি কারপভ ছিলেন সোভিয়েত চেস ফেডারেশনের বরপুত্রের মতো। ১৯৭৮ আর ১৯৮১ সালের চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচে ভিক্টর করশনয়ের বিরুদ্ধে আনাতোলি কারপভের জয়লাভের পিছনে ফিডের পক্ষপাতমূলক আচরণ ছিল স্পষ্ট। আসলে ভিক্টর করশনয় সোভিয়েত ইউনিয়নের নাগরিক হলেও ঠিক রাশিয়ান ছিলেন না। তিনি ছিলেন জাতিতে আর্মেনিয়ান। তাই সোভিয়েত রাশিয়ায় তাঁকে বরাবরই রুশদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের শিকার হতে হয়েছে। বাধ্য হয়ে ১৯৭৬ সালে তিনি প্রথমে নেদারল্যান্ডস আর পরে ১৯৮০ সালে সুইজারল্যান্ডের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। ফলে সোভিয়েত চেস ফেডারেশনের চক্ষুশূল হয়ে পড়েছিলেন করশনয়। ১৯৬২ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দশবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের জন্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ছাড়াও চারবার সোভিয়েত রাশিয়ার চ্যাম্পিয়ান হওয়া সত্ত্বেও প্রচণ্ড প্রতিভাবান ভিক্টর করশনয় কোনো অজানা কারণে কিছুতেই বিশ্বজয়ীর খেতাব লাভ করতে পারেননি। দাবা খেলা নিয়ে প্রচুর বই লিখেছিলেন তিনি। ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত ‘চেস ইজ মাই লাইফ’ নামে আত্মজীবনীমূলক বইতে তাঁর প্রতি রুশ বৈষম্যের মারাত্মক কিছু ঘটনার কথা তিনি তুলে ধরেন। উল্লেখ করেছিলেন ১৯৭৪ সালের ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টর ফাইনালে আনাতোলি কারপভের সাথে তাঁর খেলার প্রসঙ্গ। সেই ম্যাচের সময় মস্কো ইউনিভার্সিটির প্রচুর ছাত্রকে দর্শক হিসাবে পাঠানো হতো খেলার হলে। করশনয় চাল দেওয়ার সময় সমস্বরে চিৎকার করে ক্রমাগত মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটিয়ে চলতো তারা। অথচ কারপভের বেলায় তাদের আচরণ ছিল একেবারে উল্টো। তখন সবাই চুপ। মেঝেতে পিন পড়লেও যেন শব্দ শোনা যেত। টিভিতে সম্প্রচারের সময়ও নাকি বেশ কিছু দৃশ্য এডিট করা হতো। যেমন প্রত্যেক রাউন্ডের শেষে দুই পক্ষ করমর্দন করার সময় পর্দায় শুধু আনাতোলি কারপভের হাসি মুখটাই ভেসে উঠতে দেখতেন দর্শকেরা। আর পেছন থেকে ক্যামেরাবন্দী করা হতো হল ছেড়ে ভিক্টর করশনয়ের বেরিয়ে যাওয়ার দৃশ্য। এই সবই ছিল করশনয়কে বদমেজাজি আর রাগী বলে প্রতিপন্ন করার হীন কৌশল।

১৯৮৪ সালের খেতাবি লড়াইয়ে আনাতোলি কারপভ মুখোমুখি হয়েছিলেন স্বদেশীয় চ্যালেঞ্জার গ্যারি কাসপারভের। এই ম্যাচটায় রাউন্ডের সংখ্যা নির্দিষ্ট ছিল না। ঠিক ছিল প্রথমে যিনি ছটা রাউন্ড জিতবেন তাকেই জয়ী ঘোষণা করা হবে। প্রথম দিকে পিছিয়ে পড়লেও পরের দিকে কাসপারভ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেন কারপভকে। অবস্থা বেগতিক বুঝে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে দেখিয়ে ম্যাচ বাতিল করে দুজনকেই যুগ্ম চ্যাম্পিয়ান হিসাবে ঘোষণা করে দেওয়া হয়। এই বেনজির ঘটনার প্রতিবাদে  ফিডের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন গ্যারি কাসপারভ। অবস্থা বেগতিক বুঝে ১৯৮৬ সালে ফিরতি ম্যাচের আয়োজন করে ফিডে। সেই ম্যাচে গ্যারি কাসপারভ উড়িয়ে দিলেন কারপভকে। এর পরেও ১৯৮৬, ১৯৮৭ আর ১৯৯০ সালে গ্যারি কাসপারভের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জার হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন আনাতোলি কারপভ। ফল সেই একই। তিনবারই খেতাব রক্ষায় সমর্থ হন কাসপারভ। এরপরেই এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কাসপারভের উদ্যোগে ওয়ার্ল্ড চেস ফেডারেশন ভেঙে প্রফেশনাল চেস ফেডারেশন নামে আরেকটা আন্তর্জাতিক সংস্থা আলাদা ভাবে দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন করতে উঠে পড়ে লাগে। যেহেতু এই নতুন সংস্থার চ্যাম্পিয়ান হিসাবে গ্যারি কাসপারভকে বেছে নেওয়া হয় তাই ফিডে আনাতোলি কারপভকেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হিসাবে নাম ঘোষণা করে দেয়। যেহেতু দুটো সংস্থাই সরকারি ভাবে স্বীকৃত ছিল তাই ১৯৯১ সালের পর থেকে অন্তত ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত দাবার জগতে একসাথে দু’জন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ানকে প্রত্যক্ষ করেছে দুনিয়া। এগুলো অবশ্য অন্য প্রসঙ্গ।

কিন্তু ১৯৯২ সালে একটা আশ্চর্য ঘটনা ঘটলো। রাশিয়ান গ্র্যান্ডমাস্টার আনাতোলি কারপভ আর গ্যারি কাসপারভের ক্লান্তিকর দীর্ঘস্থায়ী ড্র ম্যাচ দেখতে দেখতে সারা পৃথিবীর দাবাপ্রেমী মানুষ যখন বীতশ্রদ্ধ হয়ে খেলাটার উপর উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন ঠিক তখনি সংবাদ মাধ্যমে খবরটা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তে দেরি হলো না। চমকে উঠলেন সারা পৃথিবীর দাবাপ্রেমী মানুষ।

পরবর্তী পর্বের লিংক : শতাব্দীর সেরা দ্বৈরথ (পঞ্চম পর্ব)

মন্তব্য তালিকা - “শতাব্দীর সেরা দ্বৈরথ (চতুর্থ পর্ব)”

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।